ক্লাস ছুটির পর হলের উদ্দেশ্যে হাটা শুরু করি, হাঁটতে হাঁটতে কিছুক্ষণ পরেই খেয়াল করি একটা মেয়ে পনের ফুট চওড়া রাস্তার অন্য পাশে ঠিক আমার বরাবর হাঁটছে। মেয়টার সাদা জামার উপরে লাল পাতলা জর্জেট কাপড়ের ওড়না, চাদের মত মত মুখমণ্ডল, উজ্জল গাড় কালো চোখ, রেশমের সুতার মত ঘন কাল চুল হালকা স্লাইটলি লাল করা, চুলগুলো সাদা পাথর খচিত একটা চিকন হেয়ার বেন দিয়ে আটকানো, মেয়েটাকে দেখতে সত্যিই অনেক সুন্দর লাগছে। এর উপমা এমন, যেন আমাবস্যার আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ।
মেয়েটার পাশে হাঁটতে আমার খুবি আনকমফরট ফিল হচ্ছে, তাই হাটার গতি কমিয়ে দিয়ে একটু পিছে এসে পরি। হাঁটতে হাঁটতে হলের সামনে এসে পরি আর মেয়েটা হলের পাশের ভবনে ঢুকে পরে।
বিকালে ঘুম থেকে উঠে এক লিটারের একটা বোতলে করে পানি খেতে-খেতে হাঁটতে হাঁটতে বারান্দায় যাই, গিয়ে দেখি দুপুরে দেখা হওয়া সেই মেয়েটা পাশের বাড়ির আমার ঠিক অপজিট এর বারান্দায় দাড়িয়ে আছে, ডান হাতে একটা নোট আর বাম হাতে একটা কলম হাতে নিয়ে কামড়াচ্ছে। মনে হয় এই বাসার নতুন ভাড়াটিয়া। আমি কিছুক্ষণ বারান্দায় দাড়িয়ে থাকার জন্য এসেছিলাম কিন্তু এখন আর আমার পক্ষে বারান্দায় দাড়িয়ে থাকা সম্ভব না, তাই বোতলের সবটুকু পানি ফুল গাছে ঢেলে রুমে ফেরত আসি।
পরের দিন
বিকালে আমি আবার বারান্দায় যাই, গিয়ে দেখি আবারো সেই মেয়েটা, তবে আজকের দৃশ্য একটু ভিন্ন। মেয়েটা ওর বারান্দা থেকে আমার বারান্দার ফুল গাছের ছবি তুলছে। আমাকে দেখেই জিজ্ঞেস করে
= ঐ ফুলের নাম নাম কি?
= নাম দিয়ে কাজ কি?
= নাম বললে কি কোন সমস্যা হবে?
= আমি বললাম “গোলাপ”
= মেয়েটা বলল “ গোলাপ ফুল আমি চিনি, আমি ঐ নীল রঙের ফুলের কথা জিজ্ঞেস করছি।“
= forget me not
= আপনাকে কি খুব কঠিন প্রশ্ন করছি, যে ফুলের নাম না বলে উল্টাপাল্টা কথা বলছেন।
= বিশ্বাস না হইলে গুগলে গিয়া সার্চ কর, এই ফুলের নাম “forget me not”
= আপনারা মাদরাসার ছাত্ররা একটু বেশি ফাজিল, আপনাদের টুপির নিচে সত্তুর টা করে শয়তান থাকে।
এই কথা বলেই ও ওর রুমে চলে যায়। আর আমার মেজাজ টাও প্রচণ্ড খারাপ হয়ে যায়, হুট করে মেজাজ খারাপ হওয়ার জন্য এই ধরণের দুই-একটা বাক্যই যথেষ্ট। কেমন চায়ের দোকানে আকিজ বিড়ি খাওয়া বুইরাদের মত কমেন্ট করল, যাদের হৃদয় টাকে নিংড়াইলে গাড়ির পোড়া মবিলের মত কালো কালো দূষিত রক্ত আর পয়জন ছাড়া কিছুই পাওয়া যাবেনা। মন চাইতাসে মেয়েটার গালে একটা ঘুষি মারি।
পরের দিন
বারান্দায় চেয়ারে বসে সার্ফ এক্সেলে কাপড় ভিজাইতাসি এমন সময় আমার সামনের বারান্দায় সেই মেয়েটা এসে হাজির। আমাকে বলল
= এই যে শুনছেন
= কি?
= গতকালকের জন্য সরি
= সরি কেন?
= গতকাল আপনার কথা বিশ্বাস না করে আপনাকে ফাজিল বলেছি আবার আপনার সাথে খারাপ ব্যাবহারও করেছি, এই কারণে
= সমস্যা নাই,…. তোমার নাম কি?
= রিতা
= পুরা নাম?
= আফসানা ইসলাম রিতা
= নাইস নেইম
= আপনার নাম কি?
= ভেম্পায়ার কিং
= ফাইজলামি না
= রবিন
এমন সময় কেউ ভিতর থেকে ওর নাম ধরে ডাক দেয়, “এই রিতা ”
= আমি এখন যাই, ভাইয়া ডাকতেসে
মাগরিবের পর বারান্দায় বসে বসে হটস্টার এ নাটক দেখতেসিলাম, এমন সময় সামনের বারান্দায় রিতা এসে হাজির। আমাকে জিজ্ঞেস করল “আপনার ফেইসবুইক আইডি আছে?”
আমি= ফেইসবুক আইডি আবার কার না থাকে
রিতা = আপনার ইমেইল টা বলেন
আমি আমার ইমেইল টা বললাম, রিতা সার্চ বারে আমার ইমেইল টা লিখে সার্চ দিল
রিতা = রিকুয়েস্ট সেন্ট হইয়া গেসে, তারাতারি একসেপ্ট করেন, প্রোফাইল পিকচারে একটা নীল রঙের ফুলের ছবি।
আমি= ঠিক আছে, পরে একসেপ্ট করব।
রিতা = পরে না, এখন।
আমি= ওকে
কিছুক্ষণ পর ফেইসবুক থেকে দুইটা নোটিফিকেশন আসে-
আফসানা আক্তার রিতা like your photo
আফসানা আক্তার রিতা commented your photo
দ্বিতীয় নোটিফিকেশন টা ওপেন করে দেখি রিতার কমেন্ট “বাহ! হাসিটা তো খুব সুন্দর, পুরাই সাবিক খান” সাথে একটা উইংকেল ইমজি দেয়া।
এভাবে আস্তে আস্তে রিতার সাথে আমার ভালো একটা ফ্রেন্ডলি সম্পর্ক তৈরি হয়। এই কয় দিনে আমিও অনেক চেঞ্জ হয়ে গেসি, কেমন জানি সারাদিন রিতা কে নিয়ে ভাবতে ভালো লাগে, ওর কথা মনে করে হাসতেও ভালো লাগে, পৃথিবীটাকে কেমন জানি রঙিন রঙ্গিন লাগে, মনে হয় পুরো পৃথিবীটাকে কেউ ফ্রেশ আর হ্যাপি কালার দিয়ে রঙ করে দিছে। মাঝে মাঝে যখন রিতার কথা মনে করে যখন হাসি আসে পাশের লোকজন আমাকে জিজ্ঞেস করে “কিরে রবিন একা একা হাসছ কেন?” তখন দেয়ার মত কোন উত্তর ভেবে পাই না। ভাবার দরকারও নাই, কারণ আমার ছোট্ট ভাবনার জগতে এখন একজনেরই বিচরণ, তাকে ছাড়া উন্য কিছু ভাবতেও চাইনা।
সেইদিন রিতার সাথে বারান্দায় দাঁড়াইয়া দাঁড়াইয়া কথা ব্লছিলাম
রিতা = আমার একটা বান্ধবি আছে, নাম মিথিলা
আমি= তো কি আমি এখন নাচবো?
রিতা = আপনাকে নাচতে বলছি, আমার কথাটা শুনেন
আমি= বল
রিতা = মিথিলা এই বছর মাত্র একটা বড়ই খাইসে তাও আবার অর্ধেক
আমি= কেন? রাস্তা থেকে টোকাইয়া খাইসে নাকি
রিতা = ধুরু, আপনে না একেবারে আনরোম্যান্টিক, মিথিলা আর ওর বয়ফ্রেন্ড অর্ধেক অর্ধেক করে খাইসে
আমি= কিভাবে, ঐ যে পাখিরা যেইভাবে খায় সেইভাবে খাইসে? তাহলে তো মনে হয় একটু বেশিই টেঁসটি হইসে।
রিতা = আপনি তো খুব ফাজিল, মুখে কোন কথা আটকায় না। যাই, কথা বলার মুড টাই খারাপ করে দিসেন আপনি।
পরের দিন মাদরাসা থেকে আসার সময় রাস্তার পাশে একটা চটপটির দোকানের সামনে রিতার সাথে দেখা হয়, রিতা আর ওর একটা বান্ধবি দাঁড়াইয়া দাঁড়াইয়া ফুচকা খাইতাসে। আমি দেখেও না দেখার ভান করে হাঁটতে থাকি। এমন সময় রিতা আমাকে ডাক দেয়
রিতা = এইযে…… এইদিকে, মিঃ রবিন, আমাকে কি আপনার চোখে পরে না? নাকি দেইখাও না দেখার ভান করেন? জানিত, যাতে করে ফুচকার বিল না দেয়া লাগে এই কারণে আমার দিকে তাকান না, আপনারা ছেলেরা মেয়েদেরকে কি মনে করেন, যে মেয়েরা ছেলেদের টাকা খরচ করতে পছন্দ করে না? বুঝিত!
আমি= আরে না, তুমি তোমার বান্ধবির সাথে ভালো একটা সময় স্পেনট করছ। তাই ভাবলাম তোমাকে ডিস্টার্ব করা ঠিক হবে না…
রিতা = থাক আর বলা লাগবেনা, আপনাকে বলেছিলাম না আমার বান্ধবি মিথিলার কথা
আমি= হুম
রিতা = ও হচ্ছে মিথিলা
আমি= তোমার নাম মিথিলা! শোনো তোমাকে একটা ফ্রী এডভাইস দেই। তোমার বয়ফ্রেন্ড রে বড়ই না খাওয়াইয়া প্রতিদিন একটা করে আপেল আর এক গ্লাস গরম দুধ খাওয়াইবা। বুচ্ছ, আপেল আর দুধে অনেক এনার্জি, অনেক পুষ্টি।
মিথিলা= আপনাকে দেখতে তো ভালই মনে হয়, কিন্তু ভিতরে ভিতরে শয়তানের হাড্ডি। শুনলাম আপনি নাকি খুব ভালো মেয়ে পটাইতে পারেন?
আমি= কে বলছে তোমাকে, আমি একটা ইনোসেন্ট ছেলে
মিথিলা= আহারে, কত ইনোসেন্ট। রিতা দোস্ত তুইত গেলি।
দূরে একজন মাদরাসার শিক্ষক কে দেখা যাচ্ছে, ঢোলের মত পেট, মাথা ভরা বাবরী চুল, নুরানি দাড়ি, খুবি মিষ্টভাষী লোক, সবাই তাকে আমুলিয়া হুজুর বলেই ডাকে। উনি আবার ফাজিল কামিলের ক্লাস নেয়, ইন্টার, দাখিলের ছাত্রদেরকে অত একটা চিনেনা। উনাকে দেইখাই আমি দৌড়, এক দৌড়ে মাদরাসা এরিয়া পার।
এই, ঐ ছেলেটা তোমাদের সাথে কি কথা বলছে?
রিতা = জি না, আমাদের সাথে কোন কথা বলে নাই।
হুজুর= তাহলে দৌড় দিল কেন?
রিতা = আপনাকে দেখে দৌড় দিছে।
হুজুর= ঐ ছেলেটার নাম কি জানো ?
রিতা = জি না
হুজুর= ছেলেটা এতক্ষণ এইখানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কি করছিল?
রিতা = চটপটি খাইতেছিল।
হুজুর= এই দোকানদার, এই দিকে আসো, এতক্ষণ যে এইখানে একটা ছেলে দাড়িয়ে ছিল, সে কত টাকার চটপটি খাইছে?
দোকানদার= জি না হুজুর, সে কোন কিছু খায় নাই, শুধু এইখানে দাঁড়াইয়া দাঁড়াইয়া মেয়েদের সাথে কথা বলছে।
এইবার তো রিতা আর মিথিলা ধরা খাইছে, হুজুর ওদেরকে আবার জেরা করা শুরু করব এর আগেই ওরা দুইজনে দৌড়। আজকের দিনটা মনে হয় সবার দৌড়ের উপরে যাইব।
সন্ধ্যা বেলা রিতার সাথে যখন দেখা হয়, সে আবার দুপুরবেলার ঘটনা বলতে শুরু করে।
রিতা = আজকে দুপুর বেলা কিন্তু অনেক মজা হইসে
আমি= হুম, তোমার মজা আমার সাজা, একটুর জন্য ধরা খাইনাই। আচ্ছা কি কি জিজ্ঞেস করছে?
রিতা = আপনার ব্যাপারে অনেক কিছুই জিজ্ঞেস করছে, আমি মিথ্যা বলে ধরা খেয়ে গেছিলাম, পরে একটা দৌড় দিয়া পালাইয়া আসছি।
আমি= তুমিও দৌড় দিছ?
রিতা = হুম। মিথিলা নাকি এই ঘটনা ফেইসবুকে পোস্ট করব।
আমি= তোমার বান্ধবিত একটা অকাল পক্ক, অল্প বয়সে পাকছে।
দুইদিন পর বাসায় যেতে হবে, কাজিনের বিয়ে তাই আগামি কয় একদিনের পড়া কভার করার চেষ্টা করতেছি, মাগরিবের পর রুমে বসে বসে পড়ছিলাম, রিতার সাথে সারাদিনে একবারও দেখা বা কথা কোনটাই হয়নাই। হঠাৎ মোবাইলের রিংটন বেজে উঠে, হাতে নিয়ে দেখি রিতার ফোন
রিতা = একটু নিচে আসেন তো
আমি= কেন? কি দরকার?
রিতা = আগে আসেন, পরে বলছি
আমি কথা না বাড়িয়ে নিচে যাই,
আমি= নিচে ডাকলে কেন?
ও কোন কথা না বলে রঙ্গিন কাগজে মোড়ানো একটা প্যাকেট আমার দিকে বাড়িয়ে দেয়। আমি প্যাকেটটা হাতে নিয়ে জিজ্ঞেস করি
কি আছে এটাতে?
রিতা = খুলে দেখেন
তারাতারি করে প্যাকেটটা খুলি, দেখি একটা বই, বইইয়ের নাম দাঁ ভেম্পায়ার ডাইরি রিটার্ন নাইটফল। আমার ফেভারিট বুক, বইটা হাতে পেয়ে আমি খুবি খুশি। আর আমাকে খুশি হতে দেখে রিতা আরও বেশি খুশি, ওর চোখে মুখে বিজয়ের হাসি। আসলে মানুষকে খুশি করতে পারার মধ্যেও একটা আনন্দ আছে, আর বিশেষ মানুষকে খুশি করার মধ্যে আরও বেশি আনন্দ।
=তুমি কিভাবে জানলে যে এই বইটা আমার পছন্দের।
রিতা = আপনার ফেইসবুক প্রোফাইল এ দেখসি।
“ভেম্পায়ার ডাইরি” বইটা আমার অনেক পছন্দের কিন্তু সমস্যা হইল বইটার দাম একটু বেশি, এর আগেও আমি ভেম্পায়ার ডাইরি সিরিজের ছয়টা বই পড়ছি, সব গুলার দাম আটশ টাকার উপরে। আসলে ভেম্পায়ার সম্পর্কে আমার আগ্রহ একটু বেশিই, এই কারণে সব খবর রাখি। ইদানিং তো ভেম্পায়ার কিং নামে একটা ফেইসবুক প্রোফাইলও খুলসি। যাক ও সব বাদ, রিতা কে জিজ্ঞেস করলাম
=বইটার দাম কত ?
রিতা = দেড়শ টাকা
আমি= মিথ্যা কথা বললা কেন? এই বইটার দাম একহাজার পঞ্চাশ টাকা।
রিতা = আপনে কিভাবে জানলেন?
আমি= আমি জানি, টাকা তো ফেমিলির কারো কাছ থেকে নেও নাই, নিশ্চয়ই হাত খরচের টাকা থেকে কিনছ।
রিতা = আপনে রাগ করবেন এই কারণে মিথ্যা বলছি।
আমি= আর কখন এই ধরণের কাজ করবা না। তবে থ্যাংকস, বইটার জন্য, এত ভালো গিফট এর আগে কেউ কখন আমাকে দেয় নাই। এখন বাসায় যাও
রিতা = আপনে আগে যান
আমি= কথা না বাড়াইয়া যাও তুমি, তুমি গেলেই আমি যামু।
মেয়েরা যখন সত্যিকার অর্থে কাউকে ভালোবাসে, তখন তাকে খুশি করার উপলক্ষ খুজতে থাকে, তাকে খুশি করতে পারলেই খুশি। রিতা আমাকে ভালোবাসে এর অনেক গুলা সাইন দিছে, কিন্তু আমি এখনও রিতা কে প্রপজ করলাম না। আসলে আমি একটা গবেট।
দুইদিন যাবত আমি খালার বাসায়, কাজিনের বিয়ে বলে কথা, সবাই আনন্দ-ফুর্তি, বিয়ের বিভন্ন কাজে ব্যস্ত, শুধু ব্যস্ততা নাই আমার। প্রত্যেকটা সেকেন্ড রিতা কে প্রচণ্ড মিস করতেছি। আসার সময় রিতা র সাথে একবার দেখাও করি নাই। বসে বসে শুধু রিতার কথাই ভাবছি, এমন সময় রিতার ফোন, মনে হয় মেয়েটা আমার মন বুঝে, ফোনটা রিসিভ করতেই-
= কোথায় আপনি?
আমি= খালার বাসায়, কাজিনের বিয়ে তো।
রিতা = সবাইকে বলে আসবেন না?
আমি= সবাইকে বলেই তো আসছি।
রিতা = ও…
রিতা = তো সামনেই তো আপনার পরীক্ষা। কাজিনের বিয়ে কি পড়ালেখার চেয়ে বেশি ইম্পরট্যান্ট?
আমি= আরে পরীক্ষার এখনো দুই মাস বাকি।
রিতা = তা কতদিন থাকবেন?
আমি= আরও এক সপ্তাহ
রিতা = এক সপ্তাহ! ( কথাটা এমন ভাবে বলল যেন এক সপ্তাহ এক বছরের সমান)
রিতা = বিয়ে কি আপনার না আপনার কাজিনের?
আমি= বিয়ে তো আমার কাজিনেরই, তবে এইখানে অনেক সুন্দরী সুন্দরী মেয়ে আছে, দেখতে ভালোই লাগতাছে।
রিতা = আপনে না মাদরাসায় পরেন? আবার অন্য মেয়েদের দিকে তাকান।
আমি= অন্য মেয়ে! সমস্যা নাই গুনা হইলে আমার হইব তোমার কি?
এই বার রিতা চুপ হয়ে গেসে, মনে হয় আমি ওর হৃদয়ে আঘাত করছি। প্রায় অনেকক্ষণ যাবত ও কোন কথা বলছে না। ওর নীরবতা আমাকে আরও বেশি কষ্ট দিচ্ছে। আমি আবারো বললাম
= কি কোন সমস্যা?
রিতা = অবশ্যই সমস্যা, আপনি শুধু আমার দিকে তাকাবেন, অন্য কোনো মেয়ের দিকে তাকাবেন না, ভুলেও না, GET THAT?
আমি= আমি ভয়ে ভয়ে বললাম- YES, I GOT IT.
ও মোবাইল টা রেখে দিল, ওর ঝারি খাইয়া আমার কান পরিষ্কার হয়ে গেছে, মনে হইল কেউ কানের ভিতর গরম সীসা ঢেলে দিছে। খুবি খারাপ লাগতাছে, রিতা কে অনেক ঘুরাইসি, ধ্যাত অনেক হইসে ইগো ইগো খেলা, আর না। এবার হোস্টেলে যাইয়া প্রথমেই রিতা কে প্রপস করমু।
কাজিনের বিয়ের সমস্ত আয়োজন শেষ করে দুইদিন পরেই হস্টেলে চলে আসি, আসতে আসতে প্রায় রাত নয়টা, রুমে ঢুকেই রায়হান ভাইয়ের সাথে দেখা
রায়হান= তুমি এইখান দিয়া বিয়া খাইতে গেছ, আর এ দিক দিয়া তোমার পাখির বিয়া হইয়া গেছে।
আমি= ধুরু মিয়া তুমি খালি টেনশন দেও।
আমি বারান্দার ফুলের টপ থেকে দুইটা “forget me not” ফুল ছিঁড়ি। তারপর সেগুলা নিয়া সোজা হলের গেটের সামনে যাই। তারপর রিতা কে ফোন দেই
= একটু নিচে আস
রিতা = আপনে এখন কোথায়?
আমি= বাসার নিচে, তুমি তারাতারি আস।
রিতা = কখন আসছেন?
আমি= এইমাত্র
রিতা = কি জন্য ডাকলেন?
আমি= তোমার সাথে একটা কথা ছিল
রিতা = কি কথা
আমি= কিভাবে বলব বুঝতে পারতাছি না।
রিতা = বলেন, কোন সমস্যা নাই
আমি= দেখ আমি ঘুরায়া ফিরায়া কথা বলতে পারিনা।
রিতা = জানি, আপনি বলেন
আমি= আমাকে কখন ভুলনা
রিতা = মানে?
আমি নীল রঙের ফুলগুলো রিতা র সামনে দিয়ে বলি
= FORGET ME NOT, না মানে I LOVE YOU
= আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি।
রিতা = এই কথাটা বলতে এতদিন লাগলো। এই কথা বলেই ও আমার বুকে একটা স্লাইটলি ঘুষি দেয়। যাক এতদিনে কিসসা কমপ্লিট। আজকে রাত্রে মনে হয় আনন্দে ঘুম আসবো না।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা