” তুই রাফিকে কেন মারছত?” মা এ কথা বলে আমার কাছে আসলেন। আমি নিচু সুরে বললাম ” ওই ছেলেটা খারাপ মা।”
মা এবার রাগি মুখ নিয়ে অন্যদিকে থাকিয়ে পরে আমার দিকে থাকিয়ে বলেন” ছেলেটা খারাপ ঠিক আছে। কিন্তু তার দায়িত্ব কি তার মা-বাবা তোর উপর দিয়েছে?”
আমি মায়ের কথার কোনো পাত্তা না দিয়ে বলি ” ও কে আমি একেবারে মেরে ফেলবো। ও যদি আবার অধরা কে কোনো ধরণেত ডিস্টার্ব করে।” তারপর মা কে এখানে রেখে আমি আমার রুমে চলে আসলাম। আমি জানি মা আমাকে নিয়ে অনেক চিন্তা করেন। আমি একটু বদমেজাজি। সব কিছুতেই রাগ উঠে যায়। কিন্তু দু’জন্যের সামনে আমি একদম নিশ্চুপ থাকি। এক মা আর দ্বিতীয় অধরা।
অধরার পরিবার আমাদের এলাকায় থাকে। অধরা এবার অনার্স ২য় বর্ষে পড়ে। আমিও একি ক্লাসে পড়ি। একি ভার্সিটি। শুধু বিভাগ টা আলাদা।
.
আমি ছেলেটিকে মারলাম কারণ ছেলেটি অধরা কে বলে “এই মেয়ে এ দিকে আসতো।” আমি অধরার পিছনে ছিলাম। আমি যখন শুনলাম তখন আমার পায়ের রক্ত মাথা দিয়ে উঠে গিয়েছিল। অধরা তখন মাথা নিচু করে যেতে চাইল। তখন রাফি অধরার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। অধরা দাঁড়িয়ে থাকলো। রাফি এসে অধরা কে বলে” এই অধরা তোকে ডাকলাম তুই আমার কথা শুনিস কেন?”
আমি আর নিজে কে কন্ট্রোল রাখতে পারি নি। আমি অধরা কে কত সম্মান করি। আর রাফি অধরাকে তুই করে কথা বলে। আমি বইগুলো একটা গাছের নিচে রাখলাম। তারপর শার্ট টা কনুই পযর্ন্ত তুলে অধরার সামনে গেলাম। দেখি অধরা আমার দিকে একবার থাকিয়ে নিচের দিকে চেয়ে রইল। আমি বুঝতে পারছি। অধরা লজ্জায় পড়ে গেল। আমি অধরা কে বললাম ” তুমি যাও।”
কিন্তু রাফি আমাকে বলে “তুই বলার কে রে?”
আমি অধরার দিকে চেয়ে রাফি কে ঠাস করে একটা চড় মেরে বলি “একদম মেরে ফেলবো।”
আমি জানি অধরা আমাকে খারাপ ছেলে ভাববে। কারণ অধরা মারামারি পছন্দ করে না। সে সব সময় চায় নিরব থাকতে।
একা একা থাকতে। স্বাধীন মতো করে চলতে।
রাফি আমার কাছ থেকে নিজে কে রক্ষা করে একটা দৌড় দিয়ে চলে যেতে লাগলো। আমি এখন অধরার সামনে দাঁড়িয়ে থাকলাম। আমি জানি অধরা কিছু বলবে না। অধরা কে ডিস্টার্ব করার কোনো ইচ্ছা নেই আমার । তাই কিছু বললাম না। তবুও মন টা মানছে না। অধরার কথা শুনতে চায়। আমি অধরা কে বললাম ” একটা রিক্সা ডেকে দেই?”
অধরা মাথা নাড়িয়ে রাজি হলো। আমি একটু হেঁটে হেঁটে রিক্সা আছে কিনা দেখলাম। দেখি একটা রিক্সা আসছে। আমি রিক্সা ডেকে নিয়ে এসে অধরার সামনে নিয়ে আসি। অধরাকে বললাম “তুমি এবার যেতে পারো।”
অধরা কোনো কথা না বলে বসে রইল। আমি ভাবছিলাম অধরা হয়তো রিক্সাওয়ালাকে বলবে মামা চলেন। কিন্তু অধরা ১ মিনিট হয়ে গেল। কোনো কিছু বলছে না। আবার কথাও বলছে না।
তাই আমি বললাম” মামা যান। দেখেশুনে যাবেন।”
আমি রিক্সার পিছনের দিকে চেয়ে রইলাম। কিন্তু রিক্সার পিছনের দিকে আমি দেখি একটা কি যেন ঝুলে আছে। আমি একটু চিন্তা করার জন্য আঙুলের নখটা মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে কামড় দিয়ে ভাবতে লাগলাম। আমি পেয়ে গেছি। এইটা হলো অধরার উড়নো। আমি এক দুই না ভেবে হুসাইন বোল্ট এর মতো দৌড় দিলাম। রিক্সা অনেক গতিতে চলে যাচ্ছে। তবুও আমি রিক্সা কে ধরে ফেললাম।
আমি মামা কে দাঁড়াতে বলি। অধরা কে বলি ” তোমার উড়নো টা ঠিক করো।
অধরা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। পরে হাত দিয়ে উড়নো টা ঠিক করে। আমার কপালে ঘাম চলে আসছে। আমি হাত দিতেই দেখি পানি। আমার একটু ইচ্ছা হলো যদি অধরা আমার কপালটার ঘাম মুছে দিত।
ইশ! আমিও মাঝে মাঝে রোমান্টিক হয়ে যায়। একটা মুচকি হাসি দিয়ে সেখান থেকে চলে আসলাম। আমি ভাবলাম অধরা আমাকে ডাক দিয়ে ধন্যবাদ দিবে। কিন্তু ধন্যবাদ দিবে দূরের কথা ডাকও দেয় নি। তাতে আমার মন খারাপ হয় নি।
.
সারা সিলেট আজ যেমন আনন্দে ভরে উঠেছে। আমার মনটাও আজ একটু খুশি খুশি। তো আমি বুঝতে পারি নি খুশি হওয়ার কারণ টা কি?
এসব ভেবে ভেবে ছাদে গেলাম। গিয়ে দেখি আজ সূর্যের আলোর মধ্যে অন্য রকম পরিবেশ। এখন বুঝতে পারছি কেন সারা সিলেট আনন্দে ভরে উঠেছে। আসলে যদি প্রকৃতির মধ্যে আনন্দ নেমে উঠে তাইলে মাঝে মাঝে সকল মানুষের মনেও আনন্দ নেমে আসে।
ছাদ থেকে নেমে বাহিরের যাওয়ার জন্য আমি দরজার সামনে গেলাম। দরজা থেকে বের হতেই দেখি পাশের বাসার আন্টি মাকে কি যেন বলছেন। মা আমার দিকে একবার থাকিয়ে অন্য দিকে চোখ টা নিয়ে নিলেন। আমি কিছু না বলে চলে আসতে যাব। ঠিক তখনি মা বলেন ” হিমু আজ একটু তাড়াতাড়ি বাসায় আসিস।”
তোর করিম চাচার বাসায় আজ আমাদের দাওয়াত আছে। আমিও মাকে আসবো বলে চলে যাই ।
প্রকৃতি যেমন বিভিন্ন রঙ ধরেছে। তাই আমিও আমার মনটাকে রাঙাতে কানের মধ্যে হেডফোন টা লাগাতে লাগলাম। ভালো একটা গান লাগালাম। দেখি মন টা বিভিন্ন দিকে ছুটছে। তাও আবার রোমান্টিক ভাব আছে মনটার মধ্যে। তো ভাবলাম ভালো একটা জায়গায় যাই। সিলেটের জিরো পয়েন্টের যাওয়ার জন্য একটা রিক্সা ডাকলাম। রিক্সার মধ্যে উঠে চারদিকে তাকালাম। খুব ভালো লাগছে। কিছু দূর যাওয়ার পর দেখলাম। অধরা সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আমি জানি এখন রিক্সা পাওয়া যাবে না। কারণ এই সময় রিক্সা পাওয়া যায় না। সবাই রিক্সা নিয়ে ঘুরতে চলে যায়। আমি পেয়ে গেছি আমার কপাল টা ভালো বলে। আমি রিক্সা মামা কে বললাম ” মামা এই মেয়েটার কাছে যাও।”
মামা সেখানে গিয়ে রিক্সা থামাতেই আমি অধরা কে উদ্দেশ্য করে বললাম ” এলাকার মেয়ে হয়েও এখানে দাঁড়িয়ে আছ। জানো না এখন রিক্সা পাওয়া যাবে না।”
অধরা নিচের দিকে থাকিয়ে বলে
” দরকারি একটা কাজ ছিল। তাই দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি।” আমার একটু রাগ হলো। নিচের দিকে থাকিয়ে কেন কথা বলছে। আমার দিকে থাকালে এমন কি হয়। আমি রিক্সার মামার দিকে লক্ষ্য করে বললাম” মা অধরা যে জায়গায় যেতে চায় তাকে নিয়ে যাও।”
অধরা আমার দিকে থাকাল। প্রথম কিছু বলতে চায় নি। আমি তার ঠোঁট থেকে বুঝতে পারছি। কিন্তু পরে কি ভেবে আমাকে বলল ” তুমি যাবে কি করে।”
আমি একটু হতাশা হয়ে বলি ” তা তোমাকে ভাবতে হবে না। তুমি যাও।”
অধরা কিছু না বলে রিক্সায় উঠে গেল।
আমি মোবাইল টা বের করে হাঁটতে যাব ঠিক তখনি অধরা বলে-
>> তুমি আমার জন্য রিক্সা থেকে নেমে গেলে কেন?
আমি তো অবাক হয়ে গেলাম । মেয়েটি বলে কি? যে মেয়ে আমার সাথে কথা বলতে ১০ বার নিচের দিকে থাকায়। আর সে মেয়ে আমাকে এ কথা বলে।
তখন আমি একটু হেসে হেসে বলি ” পছন্দের মানুষ দাঁড়িয়ে থাকবে তা কি করে হয়।”
অধরা আর কিছু বলল না। চলে যেতে লাগলো। আমি অধরা কে মনে মনে বললাম যদি অধরা আমাকে সাথে করে নিয়ে যেত।
জিরো পয়েন্টে এসে দেখি অধরা বসে আছে। আমি অধরার সামনে গেলাম।
অধরার সামনে যেতেই দেখি একটা শিশু আমাকে বলে “ভাইয়া ফুল কিনবেন?”
আমি পকেটে হাত দিলাম দেখি ভাংতি ২০ টাকা আছে। আমি একটা ফুল নিয়ে শিশুটিকে ২০ টাকা দিয়ে দিলাম।
আমি দেখতে পেলাম অধরা আমার দিকে চেয়ে আছে। আমিও অধরার দিকে একবার থাকিয়ে চোখ টা অন্য দিকে সরিয়ে নিলাম।
“এই হিমু।” আমি চমকে উঠলাম। আমাকে কে ডাকছে। তা দেখার জন্য পিছনের দিকে তাকালাম। দেখি আমার বন্ধু তাসিম। তাসিম আমাকে বলে
“বন্ধু তুই তো এই সময়ে এখানে থাকার কথা না। কি মনে করে এখানে? ”
আমি চুলটা ঠিক করে বললাম ” একজন কে দেখে এখানে আসলাম। তো তুই কেন এখানে?”
তাসিম দাঁত বের করে হাসি দিল। এই হাসি টা আমার কাছে অসহ্য লাগে। আমার চোখের দিকে থাকিয়ে বলে “মিমু এখানে এসেছে। আর আমাকে এখানে আসতে বলেছে।”
সাথে সাথে একটা গাড়ি হরণ দিল। আমার খুব বিরক্ত লাগলো। আমি যখন কারো সাথে কথা বলি তখন কেউ বিরক্ত করলে আমার খুব বিরক্ত লাগে। আমার সহ্য হয় না। কিন্তু এই টা তো গাড়ি। তাই কিছু বললাম না । আমি তাসিমের কাঁধে হাত দিয়ে বললাম ” মিমুর জন্য কিছু নিয়ে যাবি না?”
>> না। আজ আর কিছু নিব না।
>> সে রাগ করবে না?
>> রাগ করার কি আছে? প্রতি দিন তো কিছু না কিছু দেই।
>> আরে বেডা। মিমু খুব ভালো মেয়ে। মিমু তোর গফ। বল তোর ভাগ্য ভালো।
নইলে তোর কপালে গফ থাকবে। অসম্ভব।
এ কথা বলে আমি অধরার দিকে তাকালাম। অধরা যে জায়গায় ছিল ঠিক সে জায়গায় ওই দাঁড়িয়ে আছে।
আমি একটু চিন্তা করলাম। এখানে এতো সময় ধরে কেন দাঁড়িয়ে আছে। আমি তা জানার জন্য অধরার কাছে গেলাম। অধরা প্রথম আমাকে দেখতে পায় নি। আমি অধরার পিছনে গেলাম। যেতে যেতে ভাবলাম আমি অধরা কে গিয়ে কি বলব। তা ভাবতে লাগলাম। না থাক। যা বলার তা কাছে গিয়ে ওই বলবো।
>> অধরা তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছ কেন?
অধরা কপালটার চামড়া বাঁজ করে বলে ” এমনি দাঁড়িয়ে আছি। বাসায় যেতে ভালো লাগছে না।” এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গাড়ি দেখছি।
আমারমনে দেখি টঙ করে একটা শব্দ হলো। মানে গণ্ডি বেজে উঠলো। অধরা এখানে দাঁড়িয়ে গাড়ি দেখবে কেন?
আমি নিজে কে প্রশ্ন করলাম। আমার মন টা উত্তর দেয় আমার জন্য নাকি অধরা দাঁড়িয়ে আছে। আমার তখন একটা জিনিস মনে হলো। মনের মধ্যে যখন রোমান্টিক ভাব ফুটে উঠে। তখন বলে ফেলতে হয়।
এখন তো আমার মনে রোমান্টিক ভাব আছে। আমি কি অধরা কে বলে দিব আমার ভালবাসার কথা।
>> অধরা আইসক্রিম খাবে?
অধরা কি ভেবে বলল ” কেউ যদি কিছু খেতে দেয় তাইলে খেয়ে নিতে হয়।”
আমি খুবই অবাক হলাম। এই মেয়ে অনেক কথাই জানে। এই মেয়ের সাথে আমি পারব না। মেয়েটা দেখতে যত টা চুপচাপ ততটা মনে হয় চঞ্চল। দেখতে বুঝা যায় না।
.
আমি দু’টা আইসক্রিম কিনে আনলাম। তারপর অধরাকে একটা দিলাম আরেকটা আমি খেতে লাগলাম। আমি খেতে শুরু করে দিয়েছি। কিন্তু অধরা খাওয়া শুরু করে নি। আমি খেতে খেতে বললাম “খাচ্ছ না কেন?”
অধরা বলল “এইটা লাল কেন?”
আমি আইসক্রিম এর দিকে তাকালাম। দেখি আইসক্রিম লাল ঠিক আছে। কিন্তু না খাওয়ার উদ্দেশ্য আমি বুঝতে পারলাম না। আমি আইসক্রিম এর দিকে থাকিয়ে বলি ” আইসক্রিম তো ঠিক আছে। কিন্তু তুমি খাবে না কেন?”
অধরা আইসক্রিম এর দিকে থাকিয়ে আমাকে বলে “অন্য একটা আমার জন্য নিয়ে আসো।”
আমি সাথে সাথে আইসক্রিমের গাড়ির দিকে তাকালাম। দেখি গাড়ি টা চলে যাচ্ছে। আমি দৌড় দিয়ে গাড়ির কাছে গেলাম। একটু করুণা হয়ে বললাম ” ভাই এইটা রেখে দেন। অন্য একটা আইসক্রিম দেন।
ছেলেটা মাথার খামচা ঠিক করতে করতে বলে ” ভাই তা তো হবে না। ”
আমি তার দিকে চেয়ে বলি ” কেন ভাই হবে না?
“গলে গেছে।” মুখ টা কালো করে বলল।
আমি বললাম “সমস্যা নাই।”
আমি তোমাকে নতুন টার টাকা দিব। তারপর আইসক্রিম টা নিয়ে অধরার কাছে গেলাম। অধরা আবার আমাকে বলল খাবে না। আমি একটু শান্ত গলায় বললাম ” এইটার আবার কি সমস্যা।”
সে বলল “খাব না মানে খাব না।”
আমি আকাশের দিকে তাকালাম। দেখি আকাশের নিচের দিক দিয়ে পাখি উড়ে যাচ্ছে। একপাল পাখি। তাও আবার কিচিরমিচির করে যাচ্ছে। আমি ভাবতে লাগলাম পাখিরা কেন কিচিরমিচির করছে। পরে তার সমাধান পেলাম। কারণ তাদের বৈশিষ্ট্য কিচিরমিচির করা।
পাখির সাথে তুলনা করে আরেকটা আইসক্রিম নিয়ে আসলাম। পরে অধরা খেতে শুরু করল।
অধরা আমার কাছে এসে বলে “বাসায় যাব। আমার জন্য একটা রিক্সা ডেকে আনো।”
একটা পথশিশু আমাকে এসে বলে ” ভাইয়া কিছু খাই নি আমাকে কিছু টাকা দেন। আমি কিছু খাব।”
আমি কিছু না ভেবে ওই ছেলেটাকে ২০ টাকা দিয়ে দেই। সাথে সাথে দেখি অধরাও ৫০ টাকা দিল।
অধরা আমার দিকে চেয়ে একটা মিষ্টি হাসি দিল। আমার মনটা আনন্দে ভরে গেল। যে অধরা আমার দিকে চেয়ে একটা মিষ্টি হাসি দিছে। আমি একটা রিক্সা ডেকে এনে অধরা কে তুলে দেই।
অধরা খুব শান্ত গলায় বলল ” বাসায় ঠিক সময়ে চলে যাবে। বেশি রাত করে ঘুমাবে না। চুল সুন্দর করে কেটে রাখবে।”
আমিও খুব গভীর গলায় বললাম ” ঠিক আছে।”
আমাকে বাসায় তাড়াতাড়ি যেতে হবে। মা বলছে করিম চাচাদের বাসায় আমাদের দাওয়াত আছে। আমি কোনো দিকে না থাকিয়ে একটা সিএনজি ডাকলাম। সিএনজি তে উঠে বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। অধরার মুখ টা আমার চোখের সামনে চলে আসলো। কি সুন্দর হাসে মেয়েটা। কত সুন্দর করে কথা বলে।
আচ্ছা অধরা কি আমাকে ভালবাসে?
নিজেকে এ কথা বলে মোবাইলের দিকে তাকালাম। দেখি মা ফোন করেছেন।
“হ্যালো।” মা এ কথা বলতেই আমি ফোন টা রেখে দিলাম। কারণ মা আমাকে এখন ইচ্ছা মতো বকবেন। মা হ্যালো বলতেই আমি বুঝে গেলাম। মা রেগে আছেন। মা আমার উপর রেগে গেলে গলার সুর পালটে যায়। আমি বাসায় পৌছে গেলাম।
বাসার ভিতরে যেতেই দেখি অধরা আমাদের বাসায়। আমি খুবই অবাক হলাম। অধরা কেন আমাদের বাসায়। অধরা তো মায়ের আত্নীয় হয় না। তাইলে কি করিম চাচাদের আত্নীয় হয়। দেখি অধরার সাথে করিম চাচার ছোট ছেলে।
সে আমার কাছে এসে আমাকে একটা চিমটি দিল। সে আমাকে দেখলেই চিমটি দেয়। আমি আর রাগ দেখালাম না। এমনিতেই মা আমার উপর রেগে আছেন।
আমি ফ্রেস হতে চলে গেলাম। ফ্রেস হয়ে এসে দেখি অধরা আমার রুম টা ভালো করে দেখছে। অধরা আমার খাটে বসে বলে ” তুমি এতো অগোছালো কেন? তারপর আমার রুমের বিছানা টা ঠিক করতে থাকলো। আমি তো অধরার সামনে একটু নিরব থাকি। তাই নিরব গলায় বললাম ” আমি তো ব্যাচেলর। অধরা ঘাড় ঘুরিয়ে আমার দিকে থাকিয়ে আমাকে দেখে নেয়। আমি তখন দু’ চোখ দিয়ে অধরা কে ভালো করে দেখে নেই।
অধরা তো মায়ের মতো বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রুপ ধারণ করতে পারে। এইতো এখনি দেখলাম কত ভালো করে মায়ের সাথে কথা বলছে। আর এখন আমার দিকে কেমন রাক্ষুসির মতো করে চেয়ে আছে। মনে হচ্ছে আমি বন থেকে ছুটে এসেছি। আর অধরা আমাকে ধরার জন্য দাঁড়িয়ে আছে।
অধরা আমাকে বলতে লাগলো-
>> তুমি আমাকে প্রতিদিন ফলো করো কেন?
>> কই নাতো।
>> মিথ্যা বল কেন? সত্য কথা বললে তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে।
>> কিসের সারপ্রাইজ আগে বলো।
>> শুনো এতো কথা আমি বলতে পারব না। আমি করিম চাচাদের বাসায় যাচ্ছি। উনারা আমাদের দাওয়াত দিয়েছেন।
.
আমি কিছু বললাম না। এখন বুঝতে পাড়ছি। অধরা করিম চাচাদের আত্নীয় হয়। আমি ফ্রেস হয়ে আমার বন্ধু সিয়াম কে ফোন দিলাম। সিয়াম একটু সময় পড়েই আমার কাছে চলে আসে। আমি আর সিয়াম মিলে করিম চাচাদের বাসায় গেলাম। সেখানে যাওয়ার পর আমি দেখতে পেলাম। অধরা খুব সেজেছে। সারা বাসার মধ্যে লাইট জ্বালানো হয়েছে।
আজ নাকি করিম চাচার নাতির জন্মদিন। তার জন্য এতো কিছু। অধরার কাছে যেতে আমি একটু চেষ্টা করলাম। আর পৌঁছেও গেলাম। অধরার চুলগুলো বাতাসের তালে উড়ছে। খুব ভালো লাগছে অধরা কে। অধরা আজ যেমন এই লাল সবুজ বাতির মাঝে নিজে কে এক অপ্সরী করে রেখেছে। আমি অধরার পিছনে গেলাম। অধরার সাথে কথা বলতে মন টা প্রায় পাগল হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কি করে কথা বলি তা কিছুতেই বুঝতে পাড়ছি না। এক সময় অধরা আমাকে দেখে পেলে। কিন্তু অধরা আমাকে পাত্তা না দিয়ে সেখানের একটা ছেলের সাথে কথা বলতে লাগলো। আমি আর কিছু বললাম না। ছেলেটা দেখতে অনেক সুন্দর। ছেলেটার তুলনায় আমি কিছুই না। ছেলেটার কাছে গেলে আমি একেবারে অসহায়। ছেলেটা যেন সব সৌন্দর্য নিয়ে অধরার কাছে আসলো। আমার আর সেখানে থাকতে ভালো লাগছে না। তাই চলে আসতে লাগলাম। সিয়াম কে আসার জন্য বললাম। কিন্তু সিয়াম বলছে আসবে না। সে অনুষ্ঠান শেষ করে আসবে। আমি আর সেখানে থাকলাম না চলে আসলাম।
.
সেদিনের পর থেকে আমি আর অধরার সামনে যাই নি। গিয়ে কি লাব। সে তো ভালো আছে। আমি যে তাকে ভালবাসি সে কথা তো আমি তাকে বলে নি। আর কোনো দিন বলবও না। তাইলে সে জানতে পাড়বে না। আমি ঢঙ দোকানে বসে এক কাপ চা খেতে লাগলাম। চা খাচ্ছি আর অধরার মুখ টা কল্পনা করছি। কি সুন্দর মুখ। সব মায়া যেন অধরার মুখে পড়ে আছে।
“রাফি প্লিজ আমাকে বিরক্ত কর না।” এ কথা টা আমি শুনতে পেলাম। আমি চারদিকে তাকালাম। কাউকে দেখছি না। এই গলা টা আমার চেনা। অধরার গলা। আমি কিছু বুঝলাম না। এই আওয়াজ টা কোথায় থেকে আসছে। আমি ঢং দোকান থেকে বের হলাম। একটু চিন্তিত হয়ে আবার চারদিকে তাকালাম। কোথায় থেকে আওয়াজ টা আসলো বুঝতে পাড়লাম না। কিন্তু আমার পিছনে কে এসে দৌড় দিয়ে দাঁড়াল?
আমি পিছনের দিকে তাকালাম। দেখি অধরা দাঁড়িয়ে আছে। আর তার পিছনে দৌঁড় দিয়ে রাফি আসছে। অধরার চোখে ভয়ের চাপ। আমি রেগে গিয়ে রাফি কে ইচ্ছামতো মাড়লাম। মেরে মেরে তার হাত টা ভেঙে দিলাম যেন অধরা কে আর ডিস্টার্ব না করে। অধরা দাঁড়িয়ে আছে। আমি দেখতে পেলাম। অধরা একদম অসহায়। এখন আমি যদি তাকে আমার ভালবাসার কথা বলি তাইলে অধরা কিছু টা আমাকে ভয় পেয়ে রাজী হয়ে যাবে। কিন্তু অধরা মনে মনে কষ্ট পাবে। আমি এসব ভাবতে লাগলাম। যাইহোক আমি কিছু বললাম না। অধরা কে বললাম ” বাসায় যাও।” এ কথা বলে আমিও হেঁটে হেঁটে চলে আসতে লাগলাম।
রাতে শুয়ে আছি। দেখি বাসায় পুলিশ এসেছে। মা-বাবা অবাক হয়ে যান। পুলিশ
আমাকে বলে ” রাফি কে মারার অপরাধে তোমাকে থানায় যেতে হবে।
মা-বাবা অনেক চিন্তায় পড়ে গেলেন। আমাকে ধরে তারা অনেক কান্না করলেন। আমার গাল মুখ হাতিয়ে আমাকে বুকে জড়িয়ে নেন। আমি নিরুপায়। আমি কিছু বললাম না।
থানায় আসার পর আমাকে কোর্টে নেওয়া হয়। সেখানে আমার শাস্তি হয় ২ বছর। আমি বুঝলাম না হাত ভাঙার জন্য দুই বছর জেলখানায় থাকতে হবে। পরে বুঝলাম নানা ষড়যন্ত্র করে আমাকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
.
আজ আমার দুই বছর পূর্ণ হলো। আমি জানি আমার জন্য কেউ অপেক্ষা করবে না। কেউ আমাকে দেখতে আসে নি। বাবা একবার এসেছিলেন। কি যে কান্না। তারপর বাবা কে বলেছিলাম ” আমাকে আর দেখতে আসতে হবে না।”
বাবা চোখের পানি মুছতে মুছতে বলেছিলেন ” তোর মা তোকে দেখতে চায়।”
আমি বাবাকে জেলখানার রডে ধরে বলেছিলাম ” বাবা মা আমাকে এই অবস্থায় দেখলে অনেক
দুর্বল হয়ে যাবেন। তার চাইতে তুমি মা কে বলো আমি সুস্থ আছি।”
বাবা শার্ট দিয়ে চোখের পানি মুছে চলে গিয়েছিলেন। জেলখানা থেকে বের হয়ে আসলাম। কাউকে দেখতে পাচ্ছি না। আর থাকার কথাও না। মা-বাবা হয়তো বাসায় আছেন। একবার অধরার কথা মনে হলো। আচ্ছা অধরা কি আমাকে নেওয়ার জন্য আসবে?
নিজে কে প্রশ্ন করলাম। ধ্যাত অধরা আমার কে হয়। এসব চিন্তা বাদ দিয়ে রেস্টুরেন্টে গেলাম। কিছু খেতে হবে। কিন্তু আমার কাছে টাকা নাই। আচ্ছা মালিক কে বুঝিয়ে বললে আমাকে খেতে দিবে।
রেস্টুরেন্টে যাওয়ার পর আমি দেখতে পেলাম একটা মেয়ে মাথা নিচু করে বসে আছে। আমি ভাবলাম একবার মেয়েটার কাছে গিয়ে বসবো। আরেকবার নিজে কে বললাম ” মেয়েটা বিরক্ত হবে।”
পরে আর সেখানে বসে নি। অন্য এক চেয়ারে বসলাম। কর্মচারী কে ডাক দিয়ে খাবার নিয়ে আসতে আদেশ দিলাম।
মেয়েটা দেখি মাথা তুলে তাকাল। আমি চমকে গেলাম। আরে এই মেয়েটা তো অধরা। অধরা এখানে কি করে।
অধরার চোখে বৃষ্টির মতো পানি এসে জমা হলো। অধরার আমার কাছে এসে বলতে লাগলো ” আমার কথা তোমার একটিবারও কি মনে পড়ে নি?”
আমি বুঝলাম না। এ কথা টা আমার বলা উচিৎ ছিল। কিন্তু অধরা বলছে কেন?
আমি আমতা আমতা করে বললাম ” তুমি তো এখন অন্য কারো। মনে পড়ে কি লাব?”
>> আমি এখন অন্য কারো। এ কথা বললে তোমার গাল টা লাল করে দিব।
তোমার জন্য আমি দুই টা বছর অপেক্ষা করে আছি।
>> কেন? আর ওই ছেলে টা কে ছিল?
>> কোন ছেলে টা?
>> ওই যে করিম চাচার নাতির জন্মদিনের ছেলেটা?
>> ও আমাকে প্রপোজ করে ছিল। কিন্তু আমি রাজি হই নি। আমি কি দুই জন্য কে ভালবাসবো নাকি?
>> আরেক জন্য কে?
>> সেটা তুমি বুঝবে কেন?
তুমি তো শিশু। কিছু বুঝ না।
>> তুমি না বললে আমি বুঝবো কি করে?
>> সেটা তুমি। এখন বুঝলে?
>> হিহিহি। করুণা করছ?
>> এক থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিব। দুই বছর তো আমার থেকে দূরে ছিল। এখনও চাও। তুমি আমার থেকে দূরে থাকবে। তা কিছুতেই আমি হতে দিব না।
>> আমাকে জেলখানায় দেখতে যাও নি কেন?
>> আমার অনেক কষ্ট হবে ভেবে যাই নি। শুধু তোমার জন্য অপেক্ষা করে আছি।
তুমি কবে আসবে। আর আমার মনের কথা তোমাকে বলতে পারব।
>> জানো অধরা। তোমাকে আমি খুব ভালবাসি। শুধু বলতে পারি নি।
>> এখন বলো।
>> সব কথা সব সময় বলতে হয় না
বুঝে নিতে হয়।
>> পাগল একটা।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা