হ্যাঁ পায়েলের সাথে আজকে ব্রেকাপ করে আসলাম। মেয়েটা আমাকে অতিরিক্ত অবিশ্বাস করে। আর যেখানে বিশ্বাস নেই সেখানে সম্পর্ক বলে কিছু থাকে না।
—–
বাবা ফোন করেছে মাত্র। মায়ের ফোন নষ্ট তাই আমার ফোন দিয়েই মা কথা বলছে। এক ঘণ্টারও বেশি সময় হয়ে গিয়েছে। কথা বলার পরে মা ফোনটা দিয়ে যায়।তখনই পায়েলের ফোন। রিসিভ করতেই সে রীতিমতো ঝাড়ি দিয়ে বললোঃ-
– এতক্ষণ কার সাথে কথা বলছিলা?
– আমার আরেকটা জিএফ এর সাথে।
– আমি জানি তো। তোমার আসলে চরিত্রে সমস্যা।
– কথা শেষ?
– না। তুমি আমাকে আর কখনো ফোন দিবানা।
– আচ্ছা।
বলেই ফোন কেটে দিলাম। সে ধরেই নিয়েছে আমি অন্য আরেকটা মেয়ের সাথে কথা বলছি। তাই আর সত্যিটা বলেই কী হবে? সমস্যা হলো আমার বাবার সাথে পায়েল আবার কথা বলে। কীভাবে বাবাকে পটাইছে আমি জানি না। সম্ভবত বাবার সাথে সে কথা বলে জেনেছে বাবার সাথেই মা কথা বলছিলো। ফোন দিয়ে বললোঃ-
– সরি জান। এবারের মতো মাফ করে দাও।
– হুম।
– হুম কী?
– হুম মানে মাফ করে দিছি।
– এভাবে কেউ মাফ করে?
– তাহলে কীভাবে করে?
– তুমি জানো না কীভাবে করে? অহ এখন মনে হয় নতুন আরেকটা বালিকা পাইছো তাই আর আমার সাথে কথা বলার ইন্টারেস্ট নাই।
– হ্যাঁ।
– মানে কী? যাহ তোর সাথে আর কোনো সম্পর্ক নাই আমার।
বলেই টুট টুট টুট। পায়েল আমাকে এক ফোটাও বিশ্বাস করে না। আমাকে সত্যিই ভালবাসে আমি জানি। কিন্তু বিশ্বাস ছাড়া ভালবাসা কচু পাতার পানির মতো। কথায় কথায় অবিশ্বাস আর তারপর ঝগড়া। সকাল হলো। রোজ সকালে উঠে পায়েলকে একটা শুভ সকাল বলে মেসেজ দিতেই হয়। যতো ঝগড়াই থাকুক।
– শুভ সকাল, আনিকা।
লিখে মেসেজ দিলাম। আমি জানি আনিকা পায়েলের নাম না। আসলে আমার প্রতি তাঁর সত্যিই কিরকম বিশ্বাস তা বুঝার জন্য দিলাম।
সঙ্গে সঙ্গেই ফোন দিয়ে বললোঃ-
– তুমি আমাকে মেসেজ দিলা কেনো?
– আমার ইচ্ছা।
– তোমার ইচ্ছা দিয়া তুমি আলুর পাস্তা বানিয়ে খাও। আমাকে মেসেজ দিয়ো না।
– আচ্ছা।
– আচ্ছা মানে কী? আনিকা কে? সত্যি করে বলো তো।
– বলবো ক্যান? তুমি না বলছো আমার সাথে তোমার কোনো সম্পর্ক নাই।
বলেই কেটে দিলাম।
এবার জ্বলে পুড়ে মরুক। শুধু শুধু আমাকে অবিশ্বাস করে। পায়েল ব্রেকাপ করলে তা এক দিনের বেশি স্থায়ী হয় না। আর আমি এখনো ব্রেকাপ করি নি।
আবির আমার বন্ধু।
আবির তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে বেড়িয়েছে। রাস্তার মাঝে হঠাৎ দেখা। কথাবার্তার মাঝে ইচ্ছে হলো ভাবীর সাথে একটা ছবি তুলবো।
কাপল পোজে দুটো ছবি তুললাম। তারপর তাঁরা চলে গেলো।
কোন শয়তান জানি ছবি তোলার সময় সেও ছবি তুলে পায়েলকে দিলো। উক্ত ব্যক্তি পায়েলের পিছনে ঘুরে।
তাই আমাদের মধ্যে ফাটল ধরানোর জন্য কাজটা করেছে। আর পায়েল তো এমনিতেই আমাকে বিশ্বাস করে না।
তার উপর এই ছবিগুলো দেখে মনে করেছে সত্যিই আমার আরেকটা জিএফ আছে।
হঠাৎ দুপুরে দেখা করতে বললো।
আমি গেলাম।
আমাকে সে যা-তা বলে বলে যাচ্ছে ছবিটা দেখিয়ে। আমি রীতিমতো অবাক। পায়েল আমাকে তাঁর জুটো জোড়া দেখিয়ে বললোঃ-
– তুই আমার জুতোর যোগ্যও না।
আমি এতোটা খারাপ ব্যবহার পায়েলের কাছ থেকে আশা করি নি।
চোখে পানি এসে গেলো। মুছে বললামঃ-
– আসলে ঠিকই বলছো। আমি তোমার পায়ের জুতো জোড়ার যোগ্যও না। বিশ্বাসটা অর্জনের ব্যাপার তো। আমি মনে হয় পারি নি। তবে আজ থেকে কথা দিলাম কোনোদিন তোমার সামনে আসবো না। কোনো ভাবেও কন্টাক্ট করবো না। ভালো থেকো।
বলেই চলে আসতে লাগলাম। ফাইনালি আমি ব্রেকাপ করলাম।
—–
পৃথিবীটা অন্ধকার লাগছে। ভাবতাম আমাকে একটু হলেও বিশ্বাস এবং বুঝে পায়েল।
কিন্তু না, আমি ভুল ভাবি।
পায়েল যেনো আমার কাছে না ফিরে আসতে পারে আর সেজন্য ফেসবুকে অন্য আরেকটা মেয়ের সাথে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দিলাম। অন্য আরেকটা মেয়ে বললে ভুল হবে। আমারই ফেইক আইডি সেটা।
কিছুদিন পার হয়ে গেলো। আমি স্বাভাবিক হয়ে গেলাম। যে আমাকে নিজের জুতোর যোগ্যও মনে করে নি। তাঁকে নিয়ে ভাবা বাদ দিয়েছি।
একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি পায়েল আমার পায়ে মাথা ঠেকিয়ে কান্না করছে। অবাক হলাম। পা সরিয়ে এনে বললামঃ-
– তুমি! কোন সাহসে আমাদের বাড়ি আসছো?
– প্লীজ আমার কথাটুকু শুনো।
– রাখো তোমার কথা। তুমি আমাদের বাড়িতে আসলা কেনো?
– আমি তোমাকে না দেখে থাকতে পারছিলাম না। বিশ্বাস করো। তাই আংকেলের সাথে দেখা করার নাম করে চলে এসেছি।
– আচ্ছা থাকো তুমি। আমি যাই।
আমি বাইরে যেতে চাইলাম। পায়েল পথ আটকিয়ে বললোঃ-
– আমি তোমাকে ভুল বুঝেছি। জানো তোমাকে হারিয়ে প্রতিদিন আমি কেঁদেছি। আমার ঠিক করে খাওয়া হয় নি। পড়তে পারি নি। ঘুম আসে না। যেদিকে তাকাই শুধু তোমার অস্তিত্ব খুঁজে পাই। প্লীজ আমাকে শেষ বারের মতো মাফ করো।
– বারবার একই ভুল আমি করতে পারবো না।
পায়েল কান্না করেই যাচ্ছে।
বললোঃ-
– আমি নাহয় ভুল করেছিলাম। কিন্তু তুমি এতোটা নিষ্ঠুর কেনো? ব্রেকাপ হওয়ার সাথে সাথে অন্য আরেকটা মেয়ের সাথে রিলেশনে গেলে। কিন্তু আমি পারবো না।
– আমি নিজেকে খুব কষ্টে সামলে রেখেছি। এই কথাগুলো বলার রাইট তোমার আছে? আমার পথ ছাড়ো নাহলে…..।
– নাহলে কী? মারবা? মারো না। যতো ইচ্ছা গালাগালি করো, যতো ইচ্ছা মারো। কিন্তু তবুও আমাকে শেষ বারের মতো ফিরিয়ে নাও। তুমি ছাড়া আমার বেঁচে থাকা মূল্যহীন।
মেয়েটার কান্না আমার একদম সহ্য হচ্ছে না। আমি যে তাঁকে ভালবাসি।
বিছানায় চুপ করে বসলাম।
পায়েল বললোঃ-
– দেখো, আমি আর তোমাকে অবিশ্বাস করবো না। আমার শিক্ষা হয়ে গেছে। তুমি যা বলবা আমি তাই করবো। তুমি যেভাবে বলবা সেভাবেই চলবো। তবুও প্লীজ প্লীজ প্লীজ আমাকে ক্ষমা করো।
পায়েলের চোখ থেকে পানি গাল বেয়ে নিচে পরছে। আর সহ্য হচ্ছে না। পায়েলের চোখে হাত দিলাম পানি মুছার জন্য। তখনি পায়েল জড়িয়ে ধরে বললোঃ-
– আমি জানতাম তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিতে পারবা না।
– হ্যাঁ, আরেকবার বলবা আমি তোমার নখের যোগ্যও না।
এটা বলতেই সে আরো জোরে কান্না আরম্ভ করে দিলো।
ধুর ছাই।
কাঁদুক ইচ্ছামতো। পায়েল আবার বললোঃ-
– সরি তো। বলো না মাফ করছো?
– হুম।
কথাটা বলার পর এক মিনিটও যায় নি। সে আবার জেরা করতে আরম্ভ করলো। বললোঃ-
– আচ্ছা, কার সাথে তুমি রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দিলা।
– আমার ফেইক আইডির সাথে।
– ফোন দাও, চেক করি। তোমার কোনো বিশ্বাস নাই।
– আল্লাহ্…….
অনেক ঝগড়া এই সামান্য শুভ সকাল বার্তাতেই ইতি ঘটে। অবশ্য আমি কোনো ভুল করি নি।