বেশ সাজিয়েছে শ্বশুড়পক্ষ তাদের মেয়েকে! নখে নেল পালিশ- পায়ে আলতা, মুখে এক কেজি ময়দা মাখিয়ে সূৎসিত ( সুন্দর আর কূৎসিতের মিলনে যা হয় আর কি!) সাজিয়ে দিয়েছে। ইচ্ছে হচ্ছে গালে একটা থাপ্পর লাগিয়ে দেই। অমন সুন্দর মুখখানা এই বিশ্রী আটা ময়দা দিয়ে কে ঢাকতে বলেছে? অমন সুন্দর নখ রঙে রাঙিয়ে বিশ্রী করে তোলার মানেটাই বা কি? প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্য রেখাকে কৃত্রিমতার মোড়কে ঢেকে কি যে আনন্দ পায় মানুষ?
– বিছানা হতে নেমে আসো।
আমার গলার স্বর আমার কাছেই রুক্ষ শোনালো । আমার রুক্ষ স্বরের আদেশ শুনে চোখ বড় করে বিষ্ময় নিয়ে মৌমিতা তাকালো আমার দিকে। কিন্তু সেই তাকানো পর্যন্তই, ঠায় বসে রইলো, নড়লো না। এ মেয়ে দেখি তো সাংঘাতিক, বিয়ে হওয়ার কয়েক ঘন্টাই পেরুইনি এখনো, তাতেই বরের কথা শোনে না! আরো তো বাকীটা জীবন সামনে পড়ে আছে ! তখন শুনবে তো!
– কি হলো নেমে আসো।
না তবু নামলো না সে । তাকিয়েই রইলো। কথাও বললো না। ওর ময়দা মাখা মুখ দেখে বুঝতে পারতেছি না ও কি ভাবছে? মুখে আটা ময়দা আর নখে নেল পালিশ দেখেই রাগ হওয়ার কথা ছিল, রাগ করিনি। কিন্তু এবারে রাগ হলো। দুই দুইবার বললাম একটা কথা, অথচ কোন রেসপন্স নেই! নামতে বলেছি, নামলে নামো, না নামলে অন্তত মুখে তো বলবি, না নামবো না! না কি শ্বশুড় মশাই বোবা মেয়ে আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিল। তা কি করে হয়! মৌমিতার সাথে কথা তো নিজেই বলেছি ওদের বাড়িতে ! আচ্ছা মৌমিতা’র কোন যমজ বোন ছিল না কি? তাকে…
– থাপরাইয়া নামাতে হবে না কি?
এবার রেগে বললাম। কাজ হলো। মৌমিতা কেঁপে চমকে উঠলো। তার পর দ্রুত বিছানা হতে নেমে নিচে দাড়ালো। ভয় পেয়েছে নিশ্চই! বাসর রাতেই যে বর থাপ্পর দিতে চায় তাকে ভয় পাওয়াই উচিৎ হয়তো!
– তুমি তোমার নখ হতে যেভাবে পারো এই রঙচঙ তুলে ফেলবা এখনই। মুখ ধুয়ে আসবা। আর মনে রাখবা, কখনো মুখে ময়দা মেখে বেশি সুন্দরী সাজার চেষ্টা করবে না, তুমি এমনিতেই অনেক সুন্দর। ময়দা মেখে সাদা পেত্নি সাজার কোন মানে হয়? রঙ মেখে সুন্দর নখ গুলোও কখনো অমন বিশ্রী করবা না বলে দিলাম।
বিছানা হতে নেমে দাড়ানোর সাথেই সংসার জীবনের প্রথম পাঠ দিলাম মৌমিতাকে। বিয়ের প্রথম রাতে স্ত্রীকে অমন অনেক পাঠই না কি দিতে হয়! দুলাভাই ভাবীরা সে বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞান দিয়েই পাঠিয়েছে আমাকে মৌমিতার কাছে ।
– এগুলো আদেশ না অনুরোধ?
এই প্রথম মেয়ের মুখে বুলি ফুটেছে – যেন কয়েক যুগ পরে, কিন্তু তার সেই বুলিতে যে বীষাক্ত তীর ছুড়েছে তা ভয়াবহ! বিষের কৌটা থাকলে নির্ঘাত এক গ্রাম বিশ গিলে ফেলতাম এই মহুর্তে। অবশ্য ওর কথা শুনে আমার শরীরে যে বীষক্রিয়া শুরু হয়েছে তাতে সে বীষ কাজ করতো কি না সন্দেহ! এতক্ষন আমি মৌমিতার উপর কর্তৃত্বের বেলুন ফোলাচ্ছিলাম, মৌমিতার একটা প্রশ্নেই তা চুপসে গেল।
– আদেশ।
– তাহলে মানতে পারবো না।
ভেবেছিলুম সাদাসিধা মেয়ে! কিন্তু আমার ভাবনায় ভুল ছিল বুঝতেই পারছি। এ মেয়ে যে সে নয়, যে বিয়ের প্রথম রাতে স্বামীকে বলে মানতে পারবো না সে আর যাই হোক সাদাসিধা মোটেই নয়। এতক্ষন কন্ঠে রুক্ষতা থাকলেও এবার একটু নমনীয় হলো পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে।
– যদি বলি অনুরোধ!
– তাহলেও না।
আমি অনুরোধ করবো তাও সে মানবে না! বুঝতেছি না ঘটনা কি? তাহলে কি হাত পা ধরে বলতে হবে বউ – আমার আটা ময়দা নেল পালিশ ভাল্লাগে না, তোমার স্রষ্টার দেয়া রুপটাই আমার প্রিয়, তুমি ওসব ব্যবহার কইরো না! না কি বাবার বাড়ি হতে পণ করেই এসেছে যে স্বামীর কোন কথাই শুনবে না!
– তাহলে কি করতে হবে?
– আপনি আমার মালিক নন যে আদেশ দিবেন , আর আমি আপনার চেয়ে বড় কেউ নই যে অনুরোধ করবেন! আমি আপনার সহধর্মিণী, আদেশ অনুরোধ কোনটাই না করে মধুর ভাবে বলতে পারেন আপনি এই বাড়তি সজ্জা পছন্দ করেন না। তাহলেই হবে। আর একটা কথা আমাকে থাপ্পরের ভয় দেখাবেন না, আমিও কিন্তু খামছি দিতে পারি!
বিয়ের আগে কি স্বামী স্ত্রীর দায়িত্ব ও কর্তব্যের কোন বই পড়েছে না কি! বেশ গুছিয়ে যা বোঝালো তাতে তো তাই মনে হয়! তা না হলে ভাবতে হয় আমার কপাল ভালো, কপাল গুনে গুনবতী স্ত্রী পেয়েছি। অমন করে কজন মেয়ে বলতে পারে বা ভাবতে পারে?
– খামছি দিবে মানে! তুমি কি পেত্নি?
– আপনি কি ভূত?
– না তো!
– তাহলে আমিও পেত্নি না। আপনার স্ত্রী।
না চুপ করে থাকাটাই বেটার হবে এই সময়ের জন্য। এমন পরিস্থিতিতে বধূকে আপদ মনে করলে সে বিপদের রুপ নিয়ে ঘাড়ে চেপে ঘাড় মটকাবে! আর যদি তাকে মিষ্টি কথায় তুষ্ট করা যায়, প্রেম সাগরের জলে ডুবিয়ে তবেই ছাড়বে পরবর্তী স্টেপে যাওয়ার আগ মহুর্ত পর্যন্ত। নারীকে প্রেম দাও, বিনিময়ে প্রেম পাবে তা চক্রোবৃদ্ধি হারে।
– বাদ দাও, এখন কি সারা রাত তর্ক করবো না কি ঘুমাতেও হবে?
– ঘুমাবেন?
– না থাক তর্কই করি!
– আমি কি আপনাকে সে কথা বলেছি?
– না বলো নি। এখন তুমি ফ্রেশ হয়ে এলে আমি খুশি হই । নখের বিশ্রী রঙ আগামীকাল তুললেও চলবে। এ কিন্তু আদেশও না অনুরোধও না।
– খোচাচ্ছেন।
– না। ফ্রেস হয়ে এসো ।
মৌমিতা বাইরে যেতেই বসে পরলাম কাঠের চেয়ারটাতে। সেই দাদার আমলের চেয়ার, ওর কোলে বসার প্রতিবাদে সেটি বেশ জোড়েই শব্দ করে উঠলো। চেয়ারটার প্রতি বেশ মায়া আমার, না হলে এত দিনে এর স্থানে আরএফএল এর চেয়ার স্থান পেতো।
আমার সব বন্ধুরাই চাকরি করছে। উত্তমের ব্যবসা, নুর মোহাম্মদ আর মোবাঈদ সেনাবাহিনীতে, মশিউর একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে, সুমন্ত কলেজের লেকচারাল – সবাই কিছু না কিছু করছে। শুধু আমিই বেকার। অথচ ওদের সবার আগেই বিয়ে করে ফেললাম। ওদের কে দাওয়াত দিয়েছিলাম বিয়েতে, ব্যাস্ততার কারনে আসতে পারে নি কেউই। জীবনের নিষ্ঠুর সময়টা শুরু হয় কর্মজীবন শুরু হলে । কি বন্ধু, কি স্বজন – খুব সময়ই হয়তো পাওয়া যায় তাদের জন্য। বুঝতেছি, তবু কেন যেন ওদের প্রতি আজ অভিমান হচ্ছে খুব।
না বিয়ে যখন করলাম, এবার কিছু একটা করতে হবে। বেকার হয়ে বাবার হোটেলে বউ নিয়ে থাকা হয়তো যায়, কিন্তু এতে ভবিষ্যৎ অনিশ্চিৎ হয়ে যাবে। কি করতে পারি? এক সময় সপ্ন ছিল শিক্ষক হবো, হতে পারলাম না – কারন সে চেষ্টাই করি নি। বাবা বলতো সেনাবাহিনীতে লোক নিচ্ছে, পুলিশে লোক নিচ্ছে চেষ্টা করে দেখ, অনেকেরই তো চাকরি হচ্ছে। তবু চেষ্টা করি নি। চাকরি সে আমার দ্বারা হবে না। নিয়ম বাধা অন্যের অধিনে জীবন আমার জন্য নয়।
গরুর খামার দিতে পারি। সেই সাথে মুরগির। পছন্দ হলো আইডিয়াটা। অনেকে অনেক কিছুই বলতে পারে, কিন্তু এটাই স্বাবলম্বী করে তুলবে আমাকে এবং তা আমার নিয়মে। কারো অধিনে নয়।
– সিনথিয়া কে?
ভাবনায় মগ্ন ছিলাম, চমকে উঠলাম। ফ্রেস হয়ে ফিরে এসেছে মৌমিতা। কিন্তু ও কোন সিনথিয়ার কথা জিজ্ঞেস করছে? সিনথিয়ার কথা জানলো কি করে? জান্নাতি বলেছে? বলতেও পারে, ডাইনিটা তো আবার মৌমিতার ভাই বউ হয়। জীবন দেখছি নরক হতে দেরি নাই।
– কোন সিনথিয়া?
– আপনি কজন সিনথিয়াকে জানেন?
– একজন।
– আমি আপনার কাছে তার কথাই জানতে চেয়েছি।
বাসর রাতে স্ত্রী যে তার স্বামীর কাছে স্বামীর প্রাক্তন প্রেমিকা সম্পর্কে জানতে চায় এটা জানতাম না, জানলে জবাবটা আগে হতেই তৈরি করে রাখতাম। এখন তো এ মহা বিপদ আমার জন্য! হয়তো মৌমিতাও প্রশ্ন করতো না, ওর আমার অতীত জানার কথা নয়! যদি না জান্নাতি’র কাছ হতে কিছু জেনে থাকে! জেনে থাকে কি, জেনেছে নিশ্চই, তা না হলে সে সিনথিয়া নামটা জানবে কেমন করে? এখন মিথ্যা বলতে চাইলো মিথ্যা বলতে পারবো না। যখন নাম জানে তখন কাহিনীটাও জানা! তাহলে সত্যটাই বলা বরং নিরাপদ।
– ও আমার প্রেমিকা ছিল কোন এক সময়।
– এখন?
– ব্রেকআপ হয়ে গেছে।
– কেন?
এখন কি বিশ্লেষন করে বলতে হবে। হঠাৎ বুঝলাম এই এর পিছনে বড় কোন একটা কারন আছে? আচ্ছা জান্নাতির অভ্যাসটা তাহলে যায় নি, এত খারাপ মেয়ে মানুষ হয়? কি দরকার ছিল মৌমিতাকে সিনথিয়া আর আমার সম্পর্কের কথাটা বলার? সম্পর্কের কথাটা বলেছে যখন তখন রটে যাওয়া মিথ্যাচারটাও নিশ্চই বলতে বাকী রাখে নি?
শুনে এসেছি এতদিন, মেয়ে যেমনই হোক অন্তত বাসর ঘরে সে তার স্বামীর কাছে জবাবদিহি করে না, কিন্তু এখন বুঝছি বাসর রাতে অনেক কিছুই হয়! সেজন্যই তো দেখি বিয়ের পরেই পুরুষ গুলো কেমন বদলে যায়! মৌমিতা রীতিমতো আমাকে আদালতের আইনজীবীর মতো প্রশ্ন করছে, যেন আমি অপরাধী, বাসর ঘরটা বিচারালয়, অবশ্য বিচারক নেই!
– আচ্ছা অতীতের প্রসঙ্গ টেনে এ রাতের সুন্দর মহুর্ততাকে কি নষ্ট না করলেই নয়!
বললাম আমি। সিনথিয়া’র প্রসঙ্গ টা মোটেই ভালো লাগছে না আমার। ভুলেই গিয়েছিলাম মেয়েটাকে, ভাবি নি যে ওর সম্পর্কে কখনো কাউকে কিছু বলতে হবে আমার। তা আবাব এমন পরিস্থিতে- বিবাহিত জীবনের প্রথম রাতেই স্ত্রীর প্রশ্নের জবাবে!
– তাহলে কিভাবে এ রাতের সুন্দর মহুর্তটা উপভোগ করতে পারি বলেন?
– বাসর রাতে আর সবাই যা করে।
– কি করে?
কি জবাব দিবো, কিছুটা বিব্রত বোধ করলাম। কি করে নব বিবাহিত দম্পতি তাদের প্রথম রাতে? মৌমিতার কি তা অজানা? জানে নিশ্চই, তাহলে অমন করে জানতে চাচ্ছে কেন?
– তুমি জানো না?
– জানি, তো তাদের মতো আপনারো ইচ্ছে হচ্ছে আমাকে বাহুতে নিয়ে আপনার বুভুক্ষু চাহিদা মেটাতে! আপনার সে চাহিদা মেটাতেই তো আমাদের বিবাহ হয়েছে তাই না! ওয়েষ্টার্ন গল্প পড়েছেন কখনো? প্রতিটা গল্পেই ঘোড়া একটা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। কারন ঘোড়া ছাড়া ওয়েষ্টার্ন হয় না। সে সময়ের জীবনটাই ঘোড়া নির্ভর। তো আপনারা পুরুষেরা ভাবেন মেয়েরা সেই ওয়েষ্টার্নের ঘোড়া। তাকে যখনই বিয়ে করে আনেন মানে ঘোড়াতে নিজের ব্রান্ড বসিয়ে দেওয়া শেষ। আর দেরি কেন? এখন ঘোড়ার পিঠে সাওয়ার হতে পারলেই ঘোড়াটা আপনার বশে। তাই অস্থির হয়ে ওঠেন কতোক্ষনে ঘোড়ার পিঠে সাওয়ার হওয়া যায়!
এই পর্যন্ত বলে সে থেমে গেল। আমি ভিতরে ভিতরে দগ্ধ হচ্ছি এখন। এ কোন মেয়েকে বিয়ে করলাম। এভাবে কেউ প্রথম রাতে স্বামীকে ধোলাই করে! আমি কি পাঠ দিবো এ মেয়েকে, এ তো আমাকেই পাঠ দিচ্ছে! বাসর রাতের যে সপ্ন এঁকেছিলাম হৃদয়ে সেটাকে মহাকাশের কৃষ্ন গহ্বরে পাঠিয়ে দিলাম, সপ্ন গুলো ওখানেই হারিয়ে যাক! আমার ভিতরে যেটুকু বাসনা হয়েছিল ওকে ছুয়ে, ওকে কাছে টেনে আদর দেয়ার সেটা ভুলে গেলাম, রীতিমতো আমাকে ঘোড়সওয়ার বা সহিস বানিয়ে দিয়েছে আমাকে! অবশ্য কথা গুলো মিথ্যা বলছে না। বাস্তবতা আছে। এ মেয়ে প্রচুর বই পড়ে নিশ্চই। একটু থেমে আবার বলা শুরু করলো,
– মেয়েরা ঘোড়া নয়! বিয়ের রাতেই তাই স্ত্রীর দেহটাকে ঘোড়া মনে করে তাতে সাওয়ার হলে, হয়তো ভাবলেন আপনার আপন হয়ে গেল। সে আপনাকে ভালোবাসতে শুরু করবে! কিন্তু সত্য কি জানেন? মেয়াটার মনে তীব্র একটা ঘৃনার সৃষ্টি হয় সে মহুর্তে । কিন্তু সেটা প্রকাশ করে না। ঘৃনাটা ভালোবাসায় রুপ নিতে অনেক সময় নেয়। কিন্তু আপনি একটু সংযত হয়ে স্ত্রীকে সময় দেন, গল্প করেন। যাক দু একটা রাত, নিজেদের মাঝে জানাশোনা হোক কিছুটা, তার পর না হয়….
কিছু বললাম না। তাছাড়া এখানে কিছু বলার নেই। বিছানায় উঠে শুয়ে পড়লাম। সত্য বলুক আর ওর কথা গুলো যত বাস্তবিকই হোক না কেন, কথাগুলো সে আমাকে বলেছে, কিছুটা আঘাত করেছে কথাগুলো আমাকে । আমি পুরুষ তো! সহজে হজম হবে না কথা গুলো। যা বললো ভুলে যেতে হবে, না হলে আমার রুক্ষ মেজাজ আরো রুক্ষতা পাবে। বিছানায় উঠে কাছু না বলে শুয়ে পড়লাম।
– কি হলো আপনার?
– ঘুমাবো।
– মন খারাপ করলেন? আমি কিন্তু বলতে চাই নি, আপনাকে আঘাত দেয়ার জন্য বলি নি। মাফ চাচ্ছি। আসলে আমার এক বান্ধবীর অমন হয়েছিল। ও বলেছিল ওর স্বামী নাকি জোর করে….! ও কিন্তু আজো ওর স্বামীকে ভালোবাসতে পারে নি, অথচ সংসার করছে! কি অদ্ভুত না, সত্যি বলতে কি আমি আপনাকে ভালোবাসতে চাই।
তা মেয়েরা পারে বটে! আবার উঠে বসলাম। এই যে ভালোবাসতে চাই শব্দ দুটিই আমাকে টেনে তুলেছে।
– না মন খারাপ করি নি। শুধু বুঝলাম তোমার বান্ধবীর ঘটনা জানার পর তোমার ভিতরে একটা ক্রোধ জমা হয়েছিল! সেটা প্রকাশ করতে পারো নি এতদিন, আজ সুযোগের সৎ ব্যবহার করলে। এখন সারা রাত এভাবে বসে থাকবে না ঘুমাবে? অন্য কিছু তো হবে না! আগে জানাশোনাই হোক আমাদের মাঝে, তুমি চাচ্ছো, এখন আমিও চাচ্ছি।
– আর আমি সে চেষ্টাই তো করছি। আপনাকে জানতে চাচ্ছি । আপনি কেমন? কি পছন্দ করেন? এই সব। সেজন্য আপনার অতীত আমাকে জানতে হবে, তাহলে অল্প হলেও কিছুটা বিশ্লেষন করতে পারবো আপনাকে। তাছাড়া গল্প করা মানে তো আমাদের দুজন দুজন কে অতীতের কথাই শোনানো তাই না?
হেঁসে বললো মৌমিতা। এতক্ষনে প্রথম ওর মুখে হাঁসি দেখলাম। কি সূন্দর হাঁসি। আমাকে আহব্বান করছে, টানছে ওর দিকে কোন এক আলাদা শক্তি, যা ঐ হাঁসিটা কয়েক গুন বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু নিজেকে সংযতই রাখলাম।
– অতীত নিয়ে কাউকে বিশ্লেষন করতে চাইলে সেটা ভূল। কারন সময়ের সাথে অনেক ক্ষেত্রে মানুষদের পরিবর্তন আসে।
– সেটাই স্বাভাবিক। তবে কিছু কিছু অতীত আছে যেগুলো বর্তমানে কিংবা ভবিষ্যতে হঠাৎ বিষফোঁড়া হয়ে ওঠে জীবনের পথে। এই যে, আপনার অতীতের ঘটনাটা জানার পর আপনার প্রতি কিন্তু আমার একটা দ্বন্দ কাজ করছে ভিতরে । এই দ্বন্দটাকে কি বলে…. বলতে পারবো না ।
– ঘৃনা বলে হয়তো!
– না ঘৃনা নয়।
– ঠিক আছে ঘৃনা নয়, কিন্তু আমার অতীতের একটা ঘটনা জানার পর যদি আমার প্রতি তোমার মনে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েই থাকে, তাহলে আমাকে বিয়ে না করলেই পারতে?
– কিন্তু ঘটনাটা বিশ্বাস করি নি।
– তাহলে যে বলছো যে…..
– যদি বিশ্বাস করতাম তাহলে আপনাকে ঘৃনাই করতাম। আর বিয়ে, বললেন না সময়ের সাথে মানুষ বদলে যায়, আপনি বদলে গেছেন। তাই অমত করি নি। তাছাড়া যে ঘটনাটা বলেছে তাকে তেমন বিশ্বাস করি না। তার মিথ্যা বলার স্বভাব। আপনার বিয়ে নিয়ে যা বলেছিল, পরে কি হলো! প্রমান হলো সেটা সত্য নয়! এখন আমি আপনার কাছ হতে জানতে চাচ্ছি সত্য ঘটনা কি? আপনি কি সত্যিই সিনথিয়া নামের মেয়েটির পেটের বাচ্চাটার পিতা ছিলেন?
প্রেমালাপ না করে, বাসর ঘরে আলাপ করতে হচ্ছে আমার প্রাক্তন কে নিয়ে! নব বধূকে সুমিষ্ট বাক্যালাপে আকৃষ্ট করবো কি এখন তাকে নিজ মুখে বলতে হবে আমার প্রাক্তন প্রেমিকার সাথে সম্পর্ক চলা কালীন সময়ে তার গর্ভে যে বাচ্চা এসেছিল তার পিতা আমি ছিলাম কি না? যেহেতু প্রেমিক আমিই ছিলাম, সুতরাং পিতা যে আমিই তা একটা পাগলেও বলবে। সে সময় সকলেই সে কথাই বলেছিল। অনেক সময় মিথ্যেটাও যুক্তি আর লোক মুখে ছড়ানোর কারনে সত্য বলে প্রকাশ পায় লোক সমাজে! আমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল।
তাহলে মৌমিতা বিশ্বাস করেনি বললো যে! ওর বিশ্বাস না করার কারন কি? এর পিছনে কি কোন যুক্তি আছে ওর? থাকলেও থাকতে পারে। এখন আমি যদি সত্য বলি তা কি বিশ্বাস করবে? অবশ্য এত বছর পর যেখানে ঘটনাটা হারিয়ে গেছে লোকমুখ হতে, সেখানে কি সত্য কি মিথ্যা তাতে কিছু যায় আসে না! তাছাড়া মৌমিতা আমাকে বিয়ের পূর্বেই জেনেছে ঘটনাটা। তার পরেও সে আমাকে বিয়ে করেছে। তার মানে সে অতীত নিয়ে আমাকে বিশ্লেষন করার যে কথা বলেছে তা আসলে সত্য নয়! ও শুধু ওর মনের যে সংশয় তৈরি হয়েছে, সত্য না মিথ্যা, তা হতে মুক্তি পেতে চাচ্ছে ।
“আমি যা বলবো তা কি বিশ্বাস করবে?” মৌমিতার কাছে জানকে চাইলাম আমি।
“প্রত্যেক স্ত্রীর তার স্বামীর প্রতি আর স্বামীর তার স্ত্রীর প্রতি বিশ্বাসই কিন্তু বৈবাহিক জীবন সুন্দর ও বৈবাহিক সম্পর্কটাকে সারা জীবন টিকিয়ে রাখার মূল চাবিকাঠি। সে জন্য আপনি যা বলবেন তা আমি বিশ্বাস করবো মনে প্রানে। আপনিও আমাকে বিশ্বাস করবেন। তবে আমি যদি কখনো বুঝতে পারি যে আমার বিশ্বাস করাটা বা বিশ্বাসটা ঠিক নয়, বিশ্বাসে ভাঙন সৃষ্টি হলে তখন কি হবে আপনার তা না বোঝার কথা নয়। তাই জানি আপনি মিথ্যে বলবেন না, এবং এটা আপনার স্ত্রীর দৃঢ় বিশ্বাস।” মৌমিতা বললো।
” তাহলে বলি শোনো”
” না থাক পরে শুনি। আগে আপনাকে আমার জীবনের একটা ঘটনা বলি। যেটা আপনাকে বলা উচিৎ । কারন সেটা আমার মুখে আপনাকে বললে আমার প্রতি আপনার বিশ্বাসটা দৃঢ় হবে বলে মনে করি। হয়তো শুনে খারাপ লাগতে পারে, যেমনটা আমি উপলব্ধি করছি। কিন্তু অন্য কেউ যদি কখনো সেটা আপনাকে জানায় আমার সম্পর্কে তাতে আমার প্রতি আপনার একটা অবিশ্বাসের সৃষ্টি হবে হয়তো! তবে তা হোক চাই না আমি। আমি একটা ছেলেকে ভালোবাসতাম। তখন”
” কিন্তু আমি শুনতে চাই না” মৌমিতার সবে শুরু করেছে তখনই আমি মানা করলাম ওকে । মৌমিতা কি বলবে অনুমান করতে পারি, কিন্তু তা করতে চাই না আমি। আর ওর অতীতও জানতে চাই না। হয়তো তা শোনার পর ওর প্রতি ঘৃনার সৃষ্টি হতে পারে। ওর মতো আমি উদার মনা নই। নারীরা পুরুষের অনেক দোষ ক্ষমা করতে পারে খুব সহজেই, পুরুষ তা পারে না। তা অতীত কিংবা বর্তমান যে কালেরই হোক না কেন!
” কিন্তু আপনাকে শুনতেই হবে। ”
” কিন্তু আমি চাই না ”
” শোনেন আমি আপনার অতীত নিয়ে ঘাটছি, জানতে চাচ্ছি, আমারটাও আপনার জানা উচিৎ। তো এখন আমি বলছি মন দিয়ে শুনুন। আর শোনার পর কিন্তু আমার ভূল গুলো ক্ষমা করতে হবে, কারন এসব অতীত। তার পর আপনার কাছে সিনথিয়া’র কথা শুনবো, আপনার প্রাক্তন প্রেমিকার গল্প শুনতে আমার ভালোই লাগবে” মৌমিতা বললো।
আমি আর কি বলতে পারি। বলতে চাইছে বলুক। শুনতেই হবে। বাসর রাতে আর কিছু হোক না হোক দুজনের অতীত স্মৃতিচারণ তো হচ্ছে!
“যা বলছিলাম। আমি একটা ছেলেকে ভালোবাসতাম। ছেলেটাও বাসতো হয়তো! তখন সবে কলেজে নবম শ্রেনীতে । বেশ আমার মধ্যে ভালোবাসার প্রজাপতি হয়ে ডানা মেলে উড়ে বেড়ার সপ্ন! একদিন হলো কি, ও আমাকে ফাকা ক্লাসে একা পেয়ে হঠাৎ জরিয়ে ধরে আমার ঠোট মেশাতে আপ্রান চেষ্টা করলো, বুকে হাত দেয়ার চেষ্টা করেছিল।” এই পর্যন্ত বলে মৌমিতা নিশ্চুপ হয়ে গেল।
” তার পর কি হলো?” জানতে চাইলাম আমি। কেন যেন জানার ইচ্ছে হচ্ছে খুব । অথচ একটু আগে বলছিলাম শুনতে চাই না। এই জানার আগ্রহটা কেন হচ্ছে? যা হয়েছিল তা কি খারাপ কিছু? হঠাৎ উপলব্ধি করলাম আমার ভিতর একটা ঢেউ আসছে, মৌমিতা কি তাহলে….!
” তার পর কি হলো? নিজেকে কোন রকম জোড় করে ছাড়িয়ে নিলাম ওর কাছ হতে। ওকে সজোরে একটা থাপ্পড় দিয়ে সে ভালোবাসার ইতি সেখানেই টেনেছিলাম। এর পর একটা বিশ্বাস জন্মেছিল সব ছেলেরাই অমন বুভুক্ষু হয়ে বুঝি শরীরটার জন্যই মেয়েদের সাথে প্রেমের নাটকে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে! তার পর আর কখনো নিজেকে অমন ভালোবাসার সম্পর্কে জড়াই নি, কেমন ঘৃনা হয় অমন সম্পর্কের প্রতি “। মৌমিতা বলা শেষ করলো।
আমার ভিতরে যে ঢেউ এসেছিল, মহুর্তের জন্য সেটা থমকে তার পর হারিয়ে গেল অজানায়। মৌমিতার জন্য তীব্র….. না ফিলিংস টা বোঝাতে পারবো না।
” তুমি বললে ছেলেরা ভালোবাসে মেয়েদের শরীরের জন্য ! এবং তুমি তা বিশ্বাসও করো। কিন্তু তুমি যাকে বিয়ে করলে, সেও তার প্রেমিকার সাথে সেটাই করেছে বলে শুনেছো। এবং এটাও শুনেছো যে সে তার প্রেমিকার গর্ভের সন্তানের পিতা হওয়া সত্বেও প্রেমিকাকে মেনে নেয় নি! এতটা জানার পরেও তাকে ঘৃনা না করে বিয়ে করলে কেন এখন সেটা বুঝতে পারছি না! ” আমি বললাম ।
মৌমিতা আমার দিকে তাকালো। দেখতে পেলাম ওর ঠোট জোড়া হাঁসছে। এত কিছুর মাঝেও তার ঠোটের কোনে হাঁসির কারন খুজে পাওয়াটা আমার কাজ নয়। জীবনে বাসর রাতটা এভাবে অস্থিরতায় কাটাতে হবে কল্পনাও করি নি।
” ভাবীর মুখে যখন শুনলাম সিনথিয়া আর আপনার প্রেম কাহিনী সেটা বিশ্বাস করছি। এখনকার সময়ে একটা ছেলে একটা মেয়েকে ভালোবাসতেই পারে স্বাভাবিক। কিন্তু যখন বললো যে আপনি সিনথিয়ার সাথে প্রতারনা করেছেন তখন প্রথমে বিশ্বাস করলেও পরে পুরো ঘটনা ভেবে দেখার পর বিশ্বাসটা টিকলো না।” মৌমিতা জবাব দিলো।
” কি এমন খুজে পেলে যে যার কারনে অবিশ্বাস হলো তোমার কাছে? আমিই ছিলাম তখন ওর প্রেমিক, আর ওর পেটে বাচ্চা। তাহলে তোমার অবিশ্বাস করার প্রশ্নই ওঠে না”
যেখানে সবার বিশ্বাস করেছিল আমিই সে বাচ্চার পিতা। আর মৌমিতা কিনা ঘটনা শুনেই অবিশ্বাস করলো? কিভাবে? না কি সিনথিয়ার সাথে পরিচয় আছে ওর! তা কি কর হয়? সিনথিয়ারা স্বপরিবারে এলাকা ছেড়ে সেই ঘটনার পর পরই চলে গেছে ভিটে মাটি বিক্রি করে । কোথায় গেছে জানা যায় নি।
” অনেক ফাঁক আছে। তার মধ্যে সে আপনাকে বিয়ে করতে চায় নি। এবং আপনিও চান নি। কিন্তু সত্যিই যদি আপনি তার পেটের বাচ্চার পিতা হতেন তাহলে সে আপনাকে যে কোন মূল্যেই বিয়ে করতে চাইতো। অথচ চায় নি ”
” তার মানে বোঝাতে চাচ্ছো সে সন্তানের পিতা অন্য কেউ?” প্রশ্নটা করলাম। আমি জানি সত্য এটাই ছিল।
” হ্যা, এবং তা আপনিও জানেন। তবে সে যা হোক আমি কিন্তু এ ঘটনার বিশ্লেষনে আপনাকে বিয়ে করি নি?”
” তাহলে? ”
” আমি বিশ্বাস করি আমি যেমন, আমার স্বামীও তেমন হবে। আমি নিজেকে হেফাজত করেছি, আমার স্বামী যে হবে সেও নিজেকে হেফাজতকারীই হবে। এটা আমার পরম বিশ্বাস। কারন এটা আল্লাহর ওয়াদা। যা মিথ্যা হয় না। ”
” তাহলে কেন শুনতে চাচ্ছো আমার কাছ হতে সে ঘটনা? যখন এতটা বিশ্বাস তোমার মাঝে! ”
” শুনতে চাচ্ছি এ জন্যই যে আমার বিশ্বাসটা আরো দৃঢ় হবে। আরো বেশি দৃঢ়। এখন বলেন শুনি। লোক মুখে রটানো নয়, যা সত্য তাই শুনতে চাই আমি”।
” শুনতে যখন চাও, তাহলে বলি। কিন্তু কোথা হতে শুরু করবো? ” জিজ্ঞেস করলাম মৌমিতাকে।
” কোথা হতে শুরু করবেন আপনিই ভালো জানেন। তবে সংক্ষেপে বলেন, সত্য আসলে কি? ”
” কলেজে তখন সবে ভর্তি হয়েছি। সেই সময় বেশ কজনের সাথে বন্ধুত্ব হলো। তাদের মাঝে সিনথিয়াও ছিল। একই গ্রুপের ছিলাম, তাই দিনের প্রায় সময় এক সঙ্গেই কাটতো আমাদের- কোচিং, কলেজ, একই স্যারের কাছে পড়তে যাওয়া, আড্ডাবাজিতে। এক সময় উপলব্ধি করলাম ওকে খুব পছন্দ আমার। সে কথাটা ওকে জানালাম। ও তখন বলেছিল সেও নাকি পছন্দ করে আমাকে। তার পর শুরু হলো দুজনার প্রেম। প্রেম বলতে রাত জেগে ফোনে কথা বলা আর এসএমএস চ্যাটিং। আমাদের সম্পর্কের কথাটা কলেজ বন্ধুদের সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়লো।
দেড় বছর চললো এ কথা বলা আর এসএমএস চ্যাটিং নামক প্রেম। এইসএসসি পরীক্ষা দু মাস পূর্বে, হঠাৎ সিনথিয়া আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিল। কলেজে যাওয়া হয় না তাই দেখাও হয় না। অস্থির হয়ে উঠলাম। কিছুই ভালো লাগে না। একদিন এক বন্ধু বললো, দোস্ত মিষ্টি খাওয়া, সিনথিয়া তো প্রেগন্যান্ট। তুই বাপ হবি। তোমাকে বোঝাতে পারবো না কি অবস্থা হয়েছিল আমার কথাটা শোনার পর। মাথায় হঠাৎ বজ্রাঘাত হলেও অমন অবস্থা হতো না আমার! অবিশ্বাশ্য, সিনথিয়া প্রেগন্যান্ট হয় কি ভাবে?
কথাটা দুদিনের মধ্যেই আমাদের বন্ধু মহলে সবারই আড্ডার টপিক হয়ে গেলো। ছড়িয়ে পড়লো সবার মাঝে। সবার মুখে মুখে তখন শুনি, আমি না কি বাবা হবো! আমার পাগল হবার দশা! সিনথিয়ার প্রেমিক আমি, ওকে ভালোবাসি, তার মনে এ নয় ওকে…….! বিশ্বাস করো দেড় বছরের প্রেম, অথচ দু একবার দুজন দুজনার হাত ধরে বসে থাকা ছাড়া কখনো স্পর্শ করি নি ওর শরীর। অথচ সে প্রেগন্যান্ট হয়ে গেল! একটা মেয়ের হাত স্পর্শ করলেই কি সে প্রেগন্যান্ট হয়ে যায়?
বন্ধুদের উপর ভিষন ক্ষেপে গেলাম। কয়েকজন কে গালিও দিলাম। কারন তখনো যোগাযোগ করতে পারি নি সিনথিয়ার সাথে, কথার সত্যতা জানতে। ও প্রেগন্যান্ট কি না ওর কাছে না শুনে বিশ্বাস করতে চাই নি। এর মধ্যেই ওর বাবা এসে হাজির আমাদের বাসায়। সিনথিয়াকে বিয়ে করতে হবে আমার, না হলে মামলা করবে থানায়। এর পর আর অবিশ্বাস করার মতো কিছুই থাকলো না। সত্যিই সত্যিই সিনথিয়া প্রেগন্যান্ট। ওর পেটে বাচ্চা! বলতে পারো কি রকম পরিস্থিতি তখন?
একটা মেয়ে তখনই প্রেগন্যান্ট হবে যখন কোন পুরুষের সাথে তার দেহের মিলন হবে। আমি হতে পারি সিনথিয়ার প্রেমিক, আমি তো ওর সাথে দৈহিক সম্পর্কে জড়াই নি। তাহলে সে প্রেগন্যান্ট হলো কিভাবে? নিশ্চই অন্যকারো সাথে সম্পর্ক আছে ওর! ভাবনাটা ভাবতেই প্রবল ঘৃনা অনুভব হলো ওর প্রতি।
বাড়িতে আমার উপর সবাই ভীষন ক্ষ্যাপা, বাবা পারলে ত্যাজ্যপুত্র করে। কোন মতেই তারা ও মেয়েকে বউ করে আনবে না বলে দিলো । আমিও বললাম বিয়ে করবো না। কিন্তু ওর বাবা মা নালিশ বসালো। শেষে সকলকে বললাম, আমি সিনথিয়ার সাথে কথা বলতে চাই। কারন সত্যতা সিনথিয়াই জানতো যে কে ওর সন্তানের পিতা।
অথচ সিনথিয়ার সাথে কথা বলা হয় নি আর। হঠাৎ করেই শুনলাম বিষ খেয়েছে সে। আমাদের পূরো পরিবার তখন ভয়ে আধামরা। এই বুঝি মামলা হয়। জেলের ভাত খেতে হয়! ও মারা গেলেই আমরা ফেঁসে যাবো!
না ও বেঁচে গেলো । কিন্তু ওর পেটের বাচ্চাটা নষ্ট হয়ে গেল। সিনথিয়া সুস্থ হবার পর মামলা আর জেলের ভয়ে বাবা অবশ্য রাজি হয়েছিল ওকে বউ করে আনার জন্য আমার মতামত না নিয়েই। কারন আমাকে বিশ্বাস করে নি তারা ততটা। অথচ তখ
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা