সকালে চোখ খুলতে ই দেখি আমার হাত পা বাঁধা! কারণ কী? বাবা বললো আমাকে না কী প্রত্যেকদিন পরী এসে নিয়ে যায়! এজন্য আমাকে ঘুমানোর পরে হাত পা বেঁধে রাখছে! কথা টা মোটে ও সত্যি না।
কারণ কালকে নীহা বলেছে যেভাবে ই হোক আমাকে হাত পা বেঁধে রাখবে! এই নিয়ে দুই হাজার টাকার বাজি ছিলো। কিন্তু নীহা যে সত্যি ই এই কাজ টা করে ফেলবে তা আমার বোধগম্য ছিলো নাহ!
ভেবেছিলাম দুই হাজার টাকা দিয়ে একটা ফোন কিনবো, কিন্তু তা আর হলো না! কিন্তু নীহা আমাদের বাড়িতে রাতে আসলো কীভাবে? খুব বড় প্রশ্ন! আমি জিজ্ঞেস ও করতে পারছি না যে নীহা এই কাজ করেছে কী না!
বললে ই ধরা খেয়ে যাবো। হাত পা খুলে দেয়ার পরে নীহার সাথে দেখা করতে গেলাম। কথা ছিলো নীহা দশটার আগে আসবে কিন্তু ওর কোনো খোঁজ ই নেই! নীহাকে ফোন দিলাম, কই তুমি?
নীহা মড়মড় কণ্ঠে বললো, রান্নাঘরে, আর কই?
মেজাজ টা কেমন লাগে? আমাকে বসিয়ে রেখে সে রান্নাঘরে! বললাম, রান্নাঘরে কী করো? আমি কখন থেকে অপেক্ষা করছি তোমার জন্য।
নীহা আবারো মড়মড় কণ্ঠে বললো, আরে রান্নাঘরে বসে টিভি দেখছি, জানো আজকে রান্নাঘরে টিভি আনছি। টিভি দেখবো আর রান্না করবো, হিহিহি হা হু।
মেয়েটার মাথায় সমস্যা আছে! রেগে বললাম, তুমি কাল আমার বাসায় গিয়েছিলে কেনো?
বাসার কথা বলাতে নীহার বাজির কথা মনে হলো! তাড়াহুড়ো করে বললো, আরেহ আমি তো বাজিতে জিতছি! তুমি টাকা নিয়া বইসা আছো না? দশ মিনিট দাঁড়াও আমি এক ঘণ্টার ভিতরে আসছি।
তিন ঘণ্টা যাওয়ার পর ওর দশ মিনিট শেষ হয়েছে! আমি রেগে ফুলে আছি আর নীহা এসে ই বললো, স্যরি স্যরি। রান্নাঘরে আজকে একটা চৌকি নিছি বুঝছো? রেডি হয়ে একটু গা ছেড়ে দেখলাম কেমন লাগবে ঘুমাতে, আর তাতে ই ঘুমিয়ে গেছি। আচ্ছা এখন আমার বাজির টাকা দাও।
আমার মনে হচ্ছে নীহাকে ধরে একটু পানিতে চুবাই! ঝারি দিয়ে বললাম, তিন ঘণ্টা বসিয়ে রেখে আবার টাকা চাও?
নীহা নাকমুখ লাল করে বললো, আগে আমার টাকা দাও। তারপর দেরি করে আসার জন্য শাস্তি দিয়ো।
আমি নীহার হাতে দুই হাজার টাকা দিয়ে উঠে চলে আসলাম। সন্ধায় ফোন করে বললো, একটা লজ্জার কথা বলবো, আমাকে বকবে না তো?
এই কথা টা শুনলে ই আমি ভয় পাই। কারণ যতবার ই এই কথা টা বলেছে, তার আগে একটা অকাজ করা শেষ! বললাম, একদম বকবো না। তা বলেন আপনি আবার কী করছেন?
নীহা অসহায় কণ্ঠে বললো, জানো দুই হাজার টাকা দিয়া না তোমার জন্য একটা প্যান্ট কিনছিলাম।
এটুকু বলে থেমে গেলো। বললাম, কিনছো তো?
নীহা সেই মড়মড় কণ্ঠে বললো, তুমি তো জানো ই তোমার জন্য যা কিনি তা আমি আগে পরি? বলো জানো না?
আমি অবাক হয়ে বললাম, ওয়েট, তুমি প্যান্ট পরছো না কী? আচ্ছা পরছো এখন খুলে রেখে দাও।
নীহা কিঞ্চিৎ কেঁদে দিয়ে বললো, আরে খুলবো কীভাবে? চেইন তো আটকে গেছে! ওটা ই তো লজ্জার কথা। এখন কী করি বলো তো? আম্মা বা আব্বা যদি কেউ জানে তাহলে আমাকে মেরে ই ফেলবে। প্লীজ কিছু একটা করো!
আমি লাফিয়ে উঠে বললাম, এটা ই করার বাকী ছিলো তোমার না? এখন আমি কী করবো? হাসপাতালে ফোন দিয়ে বলো তোমাকে উদ্ধার করতে।
নীহা কাঁদো কাঁদো স্বরে আবার বললো, তা পারলে কী তোমাকে ফোন দিতাম? প্লীজ আসো না। না না ঠিকাছে তুমি আইসো না।
বলে কেটে দিলো! আমি কী করবো সেটা ই বুঝতে পারছি না! ওর মাকে ফোন দিয়ে বললাম, আন্টি আপনার মেয়ে আত্মহত্যা করতে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি গিয়ে আটকান।
বলে ই ফোন কেটে দিলাম। আর যাই হোক এই কথা শুনার পর কোনো মা বসে থাকবে না। সারারাত নীহার চিন্তায় ঘুম আসলো না।
সকাল হলো।
আর সাথে সাথে ফোনে ম্যাসেজ আসলো, তুমি আমাকে বদদোয়া দিছো না? এজন্য ই আমি হাসপাতালে। মনে থাকবে আমার।
এরপরে যে আমি কতো ম্যাসেজ দিলাম, কিন্তু একটা ও ফিরতি বার্তা আসলো না! নীহার মা আবার আমাকে দেখতে পারে না। একবার নীহাদের বাড়িতে জাম্বুরা চুরি করতে গিয়ে ধরা খেয়েছিলাম!
মুখ টা স্পষ্ট দেখেনি, কিন্তু তবু ও চিনে ফেলেছে! কী যে করি এখন। কোন হাসপাতালে আছে তা ও জানি না। ওর বাবাকে ফোন দিলাম, আংকেল আমি নীহার বান্ধবীর দুলাভাইয়ের চাচাতো মামার শ্বশুরের একমাত্র জামাইয়ের তৃতীয় খালুর শেষ পূত্রের তিন নাম্বার বন্ধুর ভাগ্নে বলছি। আপনার মেয়ে কোন হাসপাতালে আছে?
ওর বাবা বললো, সদর হাসপাতালে। কিন্তু তুমি কে বাবা তা ই তো বুঝলাম না।
মনে মনে বললাম, আর কিছু বুঝার দরকার নেই।
ওর জন্য কী নিবো বুঝতে পারছি না। শেষমেশ ওর জন্য একটা ডালিম কিনে হাসপাতালে দেখতে গেলাম। কিন্তু কেভিনের বাইরে ওর মা বসে আছে! কিছুক্ষণ পরপর আড় চোখে তাকাচ্ছে।
আমি ডরভয় ভেঙ্গে গিয়ে বললাম, আমি ডাক্তার শব্দ আহমেদ।
বলার সাথে সাথে ই উনি বললেন, প্লীজ বাবা আমার মেয়েটা যেনো কষ্ট না পায়!
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললাম, একদম না।
বলে ভিতরে ঢুকলাম। নীহার চিকিৎসা ইতিমধ্যে হয়ে গিয়েছে মনে হয়। বললাম, ডালিম আনছি তোমার জন্য।
নীহা চোখ কপালে তুলে বললো, তুমি আসলা কীভাবে? বাইরে না আম্মু বসে আছে? তাড়াতাড়ি চলে যাও। আম্মু দেখলে জাম্বুরা চোরির রস মজাবে তোমার।
আমি নীহার হাতে ডালিম দিয়ে বললাম, আর কোনোদিন যদি আমার জন্য কিছু কিনছো তাহলে তোমার খবর আছে।
নীহা গালগোল ফুলিয়ে বললো, আজকে কমপক্ষে আমার সাথে একটু ভালো করে কথা বলো।
আমি মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বুঝলাম আমি একটা রোগীর সাথে খারাপ ব্যবহার করছি। যখন ই নীহার হাত টা ধরতে গেলাম তখন ই ও লাফ দিয়ে উঠে বসে পরলো! সে কী! ওর না চেইন আটকে গিয়েছে!
বললাম, কী করছো? ব্যথা পাবে তো।
ও ডালিম ভেঙ্গে মুখে দিয়ে বললো, চেইন আমি ই খুলে ফেলছি। এতক্ষণ শুয়ে ছিলাম তোমার অপেক্ষায়।
কথা টা শুনার সাথে সাথে ই ওর গালে একটা থাপ্পড় দিয়ে বেরিয়ে পরলাম।
দুদিন গেলো।
মেয়েটার ফোন আসে না, ম্যাসেজ আসে না। আমার ঘুম ও আসে না। যাই ই করে ভালো লাগে না। ওর মিষ্টি চেহারা আর বোকা বোকা হাসি চোখের সামনে ভেসে উঠে। তিন দিনের মাথায় ও ফোন দিয়ে বললো, আমাদের কী ব্রেকাপ হয়ে গেছে?
আমি কী বলবো বুঝে উঠার আগে ই আবার বললো, টিভি চালিয়ে নিউজ ওয়ান চ্যানেল টা ধরাও। দেখো আমাকে দেখাচ্ছে।
বলে ই ফোন কেটে দিলো! নীহাকে টিভিতে দেখাবে কেনো? না জানি আবার কী করেছে আল্লাহ্ জানে! টিভি চালিয়ে দেখি সে বক্তব্য দিচ্ছে, ভাইয়েরা দূরে থাকুন, বোনেরা আমার। আমি বলতে চাই একটা কথা। কথা টা হলো আমি কোনো কথা বলতে চাই না। কিন্তু তবু ও কেনো আমাকে এই ষ্টেজে আনা হলো? চ্যানেল ওয়ানের লোকদের কী মাথা খারাপ?
ব্যাস এটুকু ই দেখতে পারলাম। তারপর চ্যানেল উধাও। কিছুক্ষণ পর খবর পেলাম নীহাকে থানায় বন্দী করেছে, চ্যানেলের লোকদের অপমান করার জন্য! তাড়াহুড়ো করে আমি থানায় গেলাম।
গিয়ে দেখি সে জেলের ভিতরে কাঁদতে কাঁদতে শেষ! অনেক চেষ্টা করার পরে ও পুলিশ নীহাকে ছাড়ছে না! শেষমেশ নীহা বললো, বাংলা সিনেমায় দেখো নাই যে কীভাবে নাইকার কাছে আসতে হয়?
কথা টা বলার সাথে সাথে ই আমি গিয়ে এস আই’এর গালে থাপ্পড় মারলাম! কিন্তু এ কী হলো? আমাকে এস আই নীহার সাথে বন্দী না করে অন্য জায়গায় বন্দী করলো! অবশেষে জীবনের প্রথম একরাত জেল কাটতে হলো।
সকালে আমাদেরকে ছাড়লো কথা মতো।
থানা থেকে বেরিয়ে ই নীহা বললো, চলো তোমাকে আই ফোন কিনে দিবো।
আমার মাথায় হাত। নীহা এতো টাকা কোথায় পেলো? বললাম, আবার কী করছো?
নীহা আমার থেকে একটু দূরে সরে গিয়ে বললো, বকবে না কিন্তু হুম? আব্বুর সাথে বাজি ধরছিলাম তোমাকে একদিন জেলের ভাত খাওয়াবো।
আমি হাসবো না কাঁদবো জানি না। দ্বিতীয়বারের মতো ওর গালে থাপ্পড় দিয়ে বললাম, আমার আই ফোন লাগবে তা তোমাকে কে বলেছে? আজ সত্যি সত্যি ই ব্রেকাপ করলাম যা।
নীহা হা হা হা করে হেসে বললো, স্যরি শব্দ ভাইয়া। আপনার সাথে প্রেম করা টা ও একটা বাজি ছিলো! আলাদা করে ব্রেকাপ করতে হবে না। আপনি আপনার রাস্তা দেখেন, আমি আমার রাস্তা দেখি।
বলে ও হনহন করে চলে গেলো! মাথাতে ই ঢুকলো না কী যে বললো! আমার সাথে প্রেম করা টা ও না কী বাজি ছিলো! আমার বিশ্বাস হলো না।
একদিন।
দুইদিন তিনদিন করে এভাবে চার মাস পার হয়ে গেলো কিন্তু নীহার কোনো খোঁজ নেই! ওর সব বান্ধবীদের কাছ থেকে জানতে পারলাম পরে যে আমি নীহার বারো নাম্বার প্রেমিক! এর আগে এগারো টা ছেলের সাথে বাজি ধরে প্রেম করেছে!
আজকে আমার বয়স তেতাল্লিশ! নীহার দুই ছেলে, দুই মেয়ে আছে। আর আমি অবিবাহিত! পারিনি কোনো মেয়েকে মনে নীহার জায়গা টা দিতে।
বেটিং গার্ল।?
—–…………………………….(সমাপ্ত)………………………………—–