__> হ্যালো অনুরাধা.-( আমি )
__> হা বলুন.-( অনুরাধা )
__> তোমাদের বাড়ির অবস্থা এখন কিরকম ?
__> ভালোই, দিদিকে সাজানো হয়ে গেছে, কিছুক্ষণের মধ্যে বর চলে আসবে.
__> কাজের গতি কতদূর এগোলে ?
__> আমার কাজ শেষ, আপনাদের.
__> আমাদের কাজও শেষ, বাহিরে গাড়ি দাড়িয়ে আছে ।
__> ওহ্, আপনাদের কেউ কি বাসার ভিতরে ডুকেছে.
__> হা, আমার বন্ধু ডুকেছে. আমি গেলে তো তোমার বাবা আমায় চিনে ফেলবে. আর হে শুন, সব প্ল্যান মোতাবেক করবে, বর আসার সাথে সাথেই বোরকা পড়িয়ে তোমার বান্ধবি বলে বাহিরে নিয়ে আসবে.
__> আচ্ছা আমি করতেছি, এখন রাখি বর মনে হয় এসে গেছে.
__> হুমমম – আমি গাড়িতে আছি.
__> হুমমম -( বলেই কল কেটে দিলো অনুরাধা )
এতক্ষণ যার সাথে কথা বলছি, তিনি হলেন আমার হবু শালিকা. নাম অনুরাধা. উনার দিদির সাথে আমার ৩ বছরের রিলেশন,. আমার প্রেমিকার নাম বর্ষা. আমাদের রিলেশনের কথা আমাদের দুই পরিবার জানে.
কিন্তু সমস্য হলো আমার কাছে বর্ষাকে বিয়ে দিবেনা. তাই হবু শালিকার সাথে সন্ধি করে বর্ষাকে নিয়ে পালিয়ে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত.
আমি গাড়ির পাশে দাড়িয়ে বর্ষার অপেক্ষা করছি.
হঠাৎ করেই আমার বোনের চেহার আমার চোখের সামনে ভেসে উঠল.
যদি আমার বোনকে কেউ এভাবে বিয়ের মঞ্চ থেকে উঠিয়ে নিয়ে যায়, তখন আমার পরিবারের কেমন লাগবে. আমার মা বাবা মুখ দেখাবে কি করে. আমার কি বর্ষাকে নিয়ে পালিয়ে বিয়ে করা ঠিক হচ্ছে.
আমার মা বাবা যেমন সমাজে মুখ দেখাতে পারবে না,তেমনি বর্ষার মা বাবাও সমাজে মুখ দেখাতে পারবে না.
এসব চিন্তা মাথায় মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে.
__> কি ব্যাপার এখানে দাড়িয়ে আছো কেন.-( বর্ষা )
__> হুমম-( বর্ষার কথায় আমার ঘুর কাটলো, বর্ষা বোরকা পরে আছে. কখন যে বর্ষা এলো বুঝতেই পারিনি )
__> কি হলো গাড়িতে উঠো.
__> না.
__> মানে-( এতটা অবাক হয়েছে, বললে বুঝানো যাবে না )
__> মানে তোমাকে আবার তোমার বাড়ীতে ফিরে যেতে হবে.
__> কি বলছ এসব.
__> ঠিক বলছি, আমার তোমাকে এভাবে এখানে আনা ঠিক হয় নি.
__> কেন-( কান্না করে )
__> আমি চিন্তা করলাম, তোমাকে নিয়ে যদি আমি পালিয়ে যাই,তখন তোমার মা বাবার কি অবস্থা হবে একবার ভােবেছ. তারা সমাজে মুখ দেখাবে কেমন করে.
__> এটা তুমি আগে চিন্তা করলে না কেন.
__> তখন তো আমি তোমাকে না পাবার চিন্তায় বিভোর ছিলাম, তাই এই ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছি.
__> এখন আমি কি করবো রাজ. তোমার জন্য আমি ঘর ছেড়ে এলাম। আমার পরিবারকে বিসর্জন দিলাম,আর এখন তুমি বলছ সিদ্ধান্ত ভুল.
__> দেখো বর্ষা আামদের কপালে যা আছে তাই হবে, আর আমরা গুরুজনের আশীর্বাদ ছাড়া কখনও সুখি হতে পারবো না.
তার থেকে ভালো তুমি তোমার মা বাবার পছন্দের ছেলেকেই বিয়ে করো.
__> আর তুমি কি করবে.
__> আমি তোমাকে না পাবার শোকে কিছুদিন পাগলামী করবো, তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে-( কথাটা বলতে আমার বুকে তীরের মতো বিধলো, নিজের প্রেমিকাকে অন্যের হাতে তোলে দেওয়ার কি কষ্ট তা কেউ উপলব্ধি করতে পাররবে না. সব কিছু সমালে রেখে নরমাল হয়ে কথাগুলো বলছি. যদি আমি দূর্বল হয়ে পরি তবে সে আরো দূর্বল হয়ে পরবে.)
__> তোমাকে আমার ভালবাসা ভুল হয়েছে, আর এখন তোমার কথায় ঘর থেকে পালিয়ে আসা আরো বড় ভুল হয়েছে-( বলেই রাগে কান্না করতে করতে এখন থেকে চলে গেলো )
আমি এখানেই বসে পরলাম,কি আর করা, বন্ধুরা সবাই আমায় গালি দিচ্ছে.
এমন কি অনুরাধাও গালি দিচ্ছে.
এটাই হয়তো আমার ভাগ্যে ছিলো, আজ আমি বর্ষাকে নিয়ে পালিয়ে যেতে পরতাম. কিন্তু কাল কেউ আমার বোনকে নিয়ে পালিয়ে যাবে না,তার কি কোনো গ্যারান্টি আছে.
মাথায় হাত দিয়ে এভাবে বসে আছি. কতক্ষণ বসে আছি তার কোনো হিসাব নাই.খুব মনে পড়ছে বর্ষার সাথে কাটানো সময়গুলো.
মনে পড়ছে আর বুকে তীরের মতো বিধছে.
হঠাৎ কাউকে আমার পাশে অনুভব করলাম. ঘাড় ফিরিয়ে যা দেখলাম আমি অবাক হয়ে গেলাম.
__> কি ব্যাপার বর্ষা তুমি এখানে কেন-( আমি )
__> আমার ঠিকানে যেখানে আমি তো সেখানেই তাকবো-( বর্ষা )
__> মানে-( একটু অবাক হয়ে গেলাম )
__> মানে আমার ঐই ছেলের সাথে বিয়ে হয়নি,তেমার সাথে হবে বলে.
__> কেনো বিয়ে হয়নি-( এবার রীতিমতো আরো বেশী অবাক হয়ে গেলাম- আবার মনে খুশির বন্যা বয়ে যাচ্ছে,প্রিয় মানুষকে আপন করে পাবো বলে )
__> কারন হচ্ছে,তুমি যে কথাগুলো বলে কিছুক্ষণ আগে আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলে সেগুলো বাবা শুনছেন.
__> কি বলো,তোমার বাবা জেনে গেছেন যে তুমি কিছুক্ষণ আগে বিয়ের মঞ্চ থেকে পালিয়ে এসেছিলে.
__> হুমমমমমম.
__> সর্বনাশ, তাহলে আমি পালাই, নয়তে তোমার বাবা আমার গুল্লি করে মারবেন.
__> ধুর এখানেই বসো,আগে তো আমার কথা শুনো.
__> আরে আমি পালাই, তোমার বাবা আসবে তো.-( বলেই উঠতে যাচ্ছি বসা থেকে )
__> না বাবা আসবে না.
__> কেন-( বারবার কথাগুলো শুনে অবাক হয়ে যাচ্ছি )
__> কারন বাবাই বিয়ে ভেঙে দিয়েছেন.
__> মানে.
__> মানে হলো,বাবা আমাদের কথাগুলো শুনেছেন, যখন আমি পালিয়ে আসি বাবা, মা তারা বিষয়টা বুঝতে পেরেছেন,আর তারা খুঁজতে বেড়িয়েছেন. তখন বাবা আড়াল থেকে আমাদের সব কথা শুনেছেন.
তাই তিনি আমার সুখের কথা ভেবে বিয়ে ভেঙে দিয়েছেন.
আর বলেছেন যে ছেলে আমাদের কথা ভেবে আমাদের মেয়েকে ফিরিয়ে দিয়েছে,সে ছেলে আর যাই হোক খারাপ না,
তাই তিনি তোমার সাথে আমার বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন.
__> যাক বাবা অবশেষে ভালবাসার মানুষটিকে নিজের করে পেলাম.
__> এখনও পাও নি,তাড়াতাড়ি বিয়ের পাঞ্জাবি পরে নাও, আর আমার শশুড় শাশুড়িকে খবর দাও আসার জন্য.
__> হুমমম -( বলেই মা বাবাকে কল দিলাম, তাদেরকে সবকিছু খুলে বললাম , বাবা কিছুক্ষণের মধ্যেই আসবে )
__> হুমম এবার চলো.
__> আচ্ছা যে ছেলে তোমাকে বিয়ে করতে এলো,তার কি হবে.
__> তার আবার কি হবে, সে অনুরাধাকে বিয়ে করবে.ছেলেটাও ভালো সে সব বুঝতে পেরেছে এবং অনুরাধাকে বিয়ে করতে রাজী হয়েছে.
__> যাক বাবা, অবশেষে দুটো বিয়ে একসাথে খেতে পারবো.
__> সারাদিন শুধু খাওয়া আর খাওয়া রাক্ষস কোথাকার, আর একটু হলেই তোমাকে সারাজীবনের জন্য হারিয়ে ফেলতাম.
__> ঈশ্বর যা করেন মঙ্গলের জন্যই করেন, আর সত্য ভালবাসা কখনও মরে না.
__> হুমমম -( বলেই বর্ষা আমায় জড়িয়ে ধরলো )
অবশেষে শেষ লগ্নে আমাদের বিয়েটা হয়ে গেলো.
ভালবাসার প্রতি শ্রদ্ধা তাকলে, ভালবাসার মানুষকে নিজের করে পাওয়ার সম্ভবনা ৯০% আর বাকীটা ভাগ্য.
ভালো থাকুক ভালবাসা, ভালো থাকুক ভালবাসার মানুষগুলো…
.
……………………………………… ((সমাপ্ত)) ………………………………………