অবহেলার অবজ্ঞা

অবহেলার অবজ্ঞা

কিছুক্ষনের মধ্যে পিচধালা রাস্তা পেরিয়ে স্কুলে প্রবেশ করবে নিরু।
নিরুর স্কুল গেটের ডান দিকে হাত পনের দুরে একটা কৃষ্ণচুড়া ফুল গাছ। গাছের নিচে দাড়িয়ে একটা ফুচকার দোকান। দোকান পেরিয়ে একটা চায়ের দোকান।
সেখানেই অপেক্ষা করছে মাহির। পাচ মিনিট পর ঘিয়া কালারের স্কু্ল ব্যাগ কাধে, সুন্দর পরিপাটি ড্রেসে স্কুলের দিকে এগিয়ে এলো নিরু।
ইতি মধ্যে, মাহিরের হাতের চায়ের কাপ টা নিজের অজান্তে মুখের কাছ থেকে নিচে নেমে এলো, হার্টবিট বেরে গেলো, মাহিরের বুজতে আর বাকি রইলো না, নিরু তাকে অতিক্রম করে পেরিয়ে যাচ্ছে ।
চায়ের কাপ টা হাত থেকে টেবিলে রেখে ঘুড়ে দাড়াল মাহির। নিরুর অপলক দৃষ্টি রেখা তাকিয়ে আছে পিচধালা রাস্তার উপর। নিরু জানে কেউ একজন তার দিকে তাকিয়ে আছে ট্রি স্টলের ভিতর থেকে।
মন টানে তার বার বার কে সেই ছেলে যে তাকে দেখার জন্য দাড়িয়ে থাকে প্রতিদিন তাকে দেখতে , কিন্তু পিছুটানে তাকাই নি কখনো। ভালবাসা সম্পর্কে নিরুর একমাত্র ধারনা ছেলে রা ভালবাসার নামে শুধু প্রতারনা করে ।
যেমন প্রতারিত হয়েছিলো তার বড় বোন।
তার বড় বোন আজ পৃথিবী তে নেই। আত্নহত্যা করেছে যখন নিরুর বয়স ১০।
সেই থেকে নিরুর মনে জন্ম নেওয়া ক্রোধ ক্রমশ বৃদ্দি পাচ্ছে। চোখ নিচু করে স্কুল গেটে পৌছে গেলো নিরু। মাহিরকে কখনো দেখে নি সে কিন্তু তার সম্পুর্ণ রুপের বর্ননা তার মুখুস্ত। এই কাজ টুকু করেছে তার বান্ধবী জেইন।
প্রতিদিন চা স্টল পেরিয়ে আসার সময় জেইন নিরুকে বলবে দেখ, ছেলেটা আজও দাড়িয়ে আছে , কি সুন্দর দেখতে, কেনো যে তুই ওকে পাত্তা দিস না বুঝি না, যদি আমায় ফলো করতো কবে ওর সাথে সম্পর্কে চলে যেতাম।
প্রত্যেক টা লাইন নিরুর মুখস্থ।
কারন প্রতিটা দিন এই সেইম কথা গুলো বলে জেইন।
.
মাহির নিস্তব্ধ দাড়িয়ে আছে চায়ের দোকানে, চা টা আজও সে খেতে পারবে না। নিরুকে একবার দেখলে তার, শরীরের পার্সপাতির কার্যক্রম এলোমেলো হয়ে যায়। সাবধানে কাপ টা রেখে দাম দিয়ে বেরিয়ে এলো মাহির দোকান থেকে।
.
আজ প্রায় এক টা মাস হয়ে গেলো নিরুর জন্য অপেক্ষা করে সে, কিন্তু কোনো দিন তার দিকে ফিরে তাকালো না নিরু। কেন তার এই অবহেলা।
মাহির নিজেও বুজতে পারছে না নিরু কি তাকে পছন্দ করে নাকি করে না, নাকি সে জানেই না কেউ তাকে এক মাস ধরে ফলো করে।
দিধাদন্দ বাদ দিয়ে বাসায় চলে গেলো মাহির।
এভাবে আরো দুই মাস পার হয়ে গেলো কিন্তু কোনো পাত্তা পাওয়া গেলো না নিরুর।
কি করবে ভেবে পায় না মাহির। চিন্তা ভাবনা করে মাহির একটা উপায় বের করলো।
.
রাত জেগে নিরুর স্কুলের সামনের রাস্তায় লিখে ফেললো,
.
আমার দোষটা কি, কেনো তাকাও না আমার দিকে,
.
পরের দিন মাহির চায়ের দোকানে বসে চিন্তা করছে নিরু যখন লেখাটা দেখবে তখন নিরুর রিয়াকশন টা কেমন হবে,
হয়তো চমকে উঠবে আর মনে মনে বলবে ছেলেটা পাগল নিশ্চয়, নয়তো রেগে এসে একটা থাপ্পর ও মারতে পারে।
চায়ের কাপ টা হাত থেকে নামিয়ে সামনে তাকিযে দেখে নিরুর লেখার উপর দাড়িয়ে আছে, কি যেনো কি চিন্তা করলো তার পর ২ পা পিছিয়ে লেখাটা মনোযোগ দিয়ে পড়লো।
পড়া শেষে একবার মাহিরের দিকে তাকাতে গিয়েও চোখ টা নামিয়ে নিলো নিরু। হাটতে শুরু করলো। তাড়াফুড়া করে ক্লাসে ঢুকে পড়লো।
বেন্ঝে বসে ব্যাগের উপর হেলান দিয়ে অনেক্ষন চিন্তা করলো নিরু। চিন্তা শেষে জেইন কে বললো, জেইন একটা কাজ করে দিতে পারবি
জেইন উৎসাহের সাথে বললো, পারবো বল কি করতে হবে,
নিরু চিন্তিত মুখে বললো, কাল বলবো নি।
জেইন, ঠিক আছে
অন্য দিকে মাহির চায়ের দোকানে বসে চিন্তা করছে কি হলো এত কষ্ট করে লেখা গুলো লেখে, কোনো রিয়েক্শন নেই,
মনে সামান্য কষ্ট নিয়ে চায়ের বিল মিটিয়ে কলেজ চলে গেলো মাহির।
রাতে নিরু একটা ডায়েরী হাতে বসে পড়লো। লেখার মতো অনেক কথা আছে তার কাছে কিন্তু কিছুই গুছিয়ে নিতে পারছে না।
সব কিছু কেমন যেনো ঘোলাটে লাগে। আসলে কি ছেলেরা শুধু প্রতারনা করে নাকি ভালোও বাসে।
কতটা ভালবাসে এটা কি পরিমাপ অযোগ্য নাকি তিল পরিমান, যা শুধু দেখানোর জন্য। আচ্ছা মাহির নামের ছেলেটা কি আমায় সত্যি অনেক ভালবাসে নাকি শুধু আমায় ফাদে ফেলার ধান্দা।
প্রতারনা হয়তো এই ছেলেকে দিয়ে হবে না, আজ প্রায় তিন মাস পার হয়ে কখনো ওর মুখের দিকে তাকাই নি তার পর ও অবহেলা মনে করে কখনো পিছু হটে নি। প্রতিদিন দাড়িয়ে থাকে শুধু আমায় একপলক দেখার জন্য।
কিন্তু বিশ্বাস তো দিদিও করেছিলো, সে তো তার বিশ্বাসের মর্যাদা পায় নি, আমি যে পাবো তার নিশ্চয়তা কই।
ছেলেদের বিশ্বাস নেই তারা যেকোনো সময় পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে।
.
নিজে নিজে চিন্তা করলো নিরু, আর নিজেকে সান্তনা দিলো।
.
ছোট একটা চিরকুট লিখলো পরেরদিন মাহিরকে দেবে বলে।
.
সকালে মাহির দাড়িয়ে ছিলো দায়ের দোকানে, নিরু জেইন কে দিয়ে মাহিরের কাছে চিরকুট টা পৌছে দেয়।

মাহির অবাক চোখে কিছুটা আনন্দের ছাপ। কিন্তু চিঠি টা পড়ে ফ্যাকাশে হয়ে গেলো মাহিরের মুখটা। চিঠিটা এমন ছিলো,
তোমায় ছোট একটা কথা বলি আশা করি বুজতে পারবে, আমি চাই না তুমি আমায় আর ফলো করো, তাছাড়া আমার পক্ষে তোমাকে ভালবাসা সম্ভব না , শুধু তোমাকে কেনো কাউকেই ভালোবাসা সম্ভব না।
তাই তুমি প্লিজ আমায় আর ফলো করো না।
.
মাহিরের কেনো যেনো নিজেকে অসহায় অসহায় লাগছে। কেনো যে নিরু এমন টা করলো সেটা সে বুঝতে পারছে না।
তবে একটা বিষয় সত্য যে নিরুর ফ্যামিলি তে কেনো প্রব্লেম আছে যার জন্য নিরুর এমন করে লেখছে যে তোমায় কেন আমার পক্ষে কাউকে ভালবাসা সম্ভব না।
মাহির তাই সিদ্ধান্ত নিলো নিরুর সমস্যা টা সে খুজে বের করবে সে তারপর যা হবার হবে।
মাহির চায়ের দাম দিয়ে কলেজ চলে গেলো, অন্যদিকে নিরুর মনের মধ্যে সামান্য ঝড় বইছে।
আসলেই কি ছেলেটা চিঠিটা পড়ে আমায় আর দেখতে আসবে না, অবশ্য না আসার জন্য জন্যই তো এই চিঠি। তবুও কেনো যেনো তার মন মানছে না। সরাসরি না করে হয়তো ভুল হয়ছে। হয় হবে। যা হয় ভালোর জন্যই হই। তাছাড়া আমি কেনো ছেলে টাকে নিয়ে চিন্তা করি।
নিজের মনের সাথে যুদ্ধ টা থামাতে পারছে না নিরু। এমন ভাবেই চলছে ছোট খাটো যুদ্ধ।
নিজেকে সান্তনা দিয়ে ক্লাস করতে লাগলো নিরু
.
পরেরদিন ও মাহির অপেক্ষা করছে মাহির।
যে ভাবেই হোক তার জানতে হবে কেনো নিরু এমন ভাবে তাকে ফলো করতে না করলে, কি সমস্যা। কিন্তু কিভাবে, আইডিয়া। হুম আইডিয়া পেয়ে গেলো মাহির।
কিছুক্ষন পর চায়ের দোকানের সামনে এসে দাড়ালো নিরু, ছেলেটা যে চলে যাই নি এমনটা তার মন বলছে, তাকিয়ে দেখবে, না থাক তাকিয়ে দেখার কি দরকার, তার বান্ধবীকে জিগ্ঞাসা করলো, জেইন শুধু মাথা ঝাকিয়ে হুম বললো ।
নিরুর আর কিছু বললো না সোজা স্কুলের দিকে রওয়ানা হলো, জেইন গেলো না নিরুর সাথে, নিরুর জেইনের দিকে খেয়াল করলো না।
জেইন চায়ের দোকানে ঢুকে গেলো।
মাহির আর জেইন মুখোমুখি বসলো।
জেইন আগ্রহ করে বললো, বলো ডাকলে কেন ?
একটা ইনফরমেশন দরকার ছিলো
কি
তুমি একটু নিরুর কাছ থেকে যেনে নেবে সে কেনো কোনো ছেলেকে ভালবাসতে পারবে না
আমি পারবো না
তোমাকেই পারবে হবে, প্লিজ। প্লিজ হেল্প মি
ওকে দেখছি
দ্রুত দোকান থেকে বের হয়ে স্কুলে গেলো জেইন। নিরুর পাশে বসলো সে। কিন্তু নিরুর সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ ই নেই। চুপচাপ ব্যাগের উপর হেলান দিয়ে আছে।
কতো চিন্তা তার মাথায়, সোজা সুজি বলে তো মাহির তার পিছু ছাড়বে না, এটা নিরু আগেই বুঝতে পেরেছিলো। কিন্তু যাই হোক নতুন কোনো প্লান করতে হবে। হঠাৎ জেইনের ডাকে চিন্তার অবসান হলে তার।
জেইন বললো, কি হয়ছে
নিরু মাথা টা সোজা করে বসলো আর বললো, না কিছু না
জেইন : কাল তুই ছেলেটাকে চিঠিতে কি লিখেছিলি
নিরু : কেনো
জেইন : আজ যে জানতে চাইলি ছেলেটা দোকান থেকে চলে গেছে কিনা
নিরু : হুম ও যেনো আমাই আর ফলো না করে তার জন্যই চিঠি টা দিয়ে ছিলাম।
জেইন : তোর কি মনে হয় সামান্য একটা চিঠি পেয়ে চলে যাবে ও
নিরু : সেটা তো আমারও সন্দেহ হয়েছিলে, আর তাই হলো।
জেইন : তুই নাকি কাউকে ভালবাসতে পারবি না, কেনো রে
নিরু মনে সন্দেহ হলো এই কথাটা তো জেইনের জানার কথা ছিলো না তাহলে জানলো কিভাবে।
নিরুর দেরি করে ক্লাসে প্রবেশ করার কাহিনি টা বুজতে পারলো নিরু।
জেইন : কিরে বল
নিরু : ক্লাস শেষে বলবো
ক্লাস শেষে সব কিছু খুলে বললো জেইন কে নিরু। কারন এই একটা সহজ উপায় মাহির কে দুরে সরানোর। যেটা সে সরাসরি বলতে না পারলেও জেইন সেই কাজ টা করে দেবে।
জেইনও পরের দিন সব কিছু খুলে বললো মাহিরকে।

সব কিছু শুনে চিন্তায় পড়ে গেলো মাহির। এখন কি করবে সে, কি করে বুঝাবে সে নিরু কে। নিরুর মনের ভ্রান্ত ধারনাকে দুর করার কেনো রাস্তা তার কাছে নেই।

নিরুকে ফলো করা বাদ দিলো না মাহির। ফলো সে করবেই, ভালবাসা তো ছেলে খেলা না যে সামান্য একটা খটকাই দুরুত্ব বেরে যাবে।

পরের দুই দিন আগের মতো করেই ফলো করলো মাহির, জেইনও আগের মতো করে ক্লাস করতে লাগলে।

বাস্তবিক লাইফে কেনো পরিবর্তন না দেখা গেলেও প্রব্লেম টা ছিলো দুজনের মনে। নিরুর মনে ঝড় বইছে কিভাবে মাহির কে লাইফ থেকে দুর করা যায় আর মাহিরের মনে ঝড় বইছে কিভাবে নিরুকে কাছে টানা যায়।
নিরুর উপায় বের করতে সময় লাগলো না, কিন্তু মাহির ভেবে পেলো না কিভাবে নিরুর ভ্রান্ত ধারনা দুর করবে

পরেরদিন,

চায়ের দোকানে বসে আছে মাহির, কিভাবে কি করা যায় চিন্তা করছে। হঠাৎ হার্টবিট বেরে যাওয়ায় সামনে তাকায় মাহির।
নিরু কানে কানে কি যেনো বলছে জেইন কে। কথা শেষে নিরু স্কুলের দিকে রওয়ানা হলো আর জেইন এগিয়ে আসলো মাহিরের দিকে।
চায়ের কাপটা টেবিলে রেখে হাত বারিয়ে জেইনের হাত থেকে চিরকুট টা নিলো। জেইন চলে গেলো স্কুলে।
চিরকুট টা খুললো মাহির —
আমি আপনাকে বলেছিলাম আমাকে প্লিজ ফলো কইরেন না।
কিন্তু আপনি তো কথা শোনার মানুষ না, শেষ বাবের মত বলছি আমায় ফলো করা বাদ দিন তা না হলে কিন্তু আমি আর স্কুলে আসবো না।

চিঠি টা পড়ে মাথায় বাজ পরার মতো অবস্থা হলো মাহিরের, কি করবে এখন, একদিকে নিরুর ভ্রান্ত ধারনা দুর করার কোনো উপায় খুজে পাচ্ছে না সে, অন্যদিকে নিরু তাকে আর দেখতে চাইছে না তার আশে পাশে। কেমনে কি। চিন্তায় মাহিরের কপালে ভাজ পরে গেলো।

যেহেতু নিরু আর আমায় দেখতে চাচ্ছে না, সেহেতু দেখা না করাই ভালো। আর দেখা করেই লাভ কি ভ্রান্ত ধারনা দুর না করলে সারাজিবন নিরুর পিছনে ঘুড়লেও ও কোনো গুরুত্ব দেবে না।
আগে নিরুর বোনের সম্পর্কে সব খোজ খবর বের করতে হবে তার পরে নিরুর সাথে দেখা করতে হবে। চিন্তা ভাবনা করে চায়ের বিল দিয়ে চলে গেলো কলেজে মাহির।
শুরু হলো তার লাইফের সংক্ষিপ্ত একটা যুদ্ধ।
জিততে হবে তাকে।
পরেরদিন স্কুলের পথে চায়ের দোকানের সামনে দাড়িয়ে নিরু। আজ কেনো যেনো মনে হচ্ছে ছেলেটা আজ আসে নি তাকে দেখতে।
না আসার জন্যই তো কঠিন করে না করে দিয়েছে সে, কিন্তু না কেন যেনো তার মনে বলছে কাজ টা ঠিক হয়নি, ছেলে টা তো তাকে ভালবাসতো, নিজের সারাজিবনের বাধা পেরিয়ে চায়ের দোকানের দিকে তাকালো নিরু।
না কোথাও নেই মাহির। মনের মধ্যে সামান্য একটা ঝড় উঠলো তার, কিন্তু সামাল দিতে পারলো না সে। সোজা দৌড়ে স্কুলে চলে গেলো নিরু।
সিটে বসে পড়লো তখনই জেইন বললো, ভালোই হয়েছে ছেলেটা চলে গেছে, তুই তো এটাই চেয়েছিলি, তো এখন কেনো অস্থির হচ্ছিস।
নিরু কাপা গলায় বললো, আমি কি করবো এছাড়া আমার তো কেনো পথ ছিলো না।
জেইন কিছু বললো না।

নিরুর মনের ভিতর টা সামাল দিতে হিমসিম খাচ্ছে, ছেলেটাকে এতো দিনে সে পছন্দ করে ফেলেছে। কিন্তু কথা টা বুজতে দেরী হয়ে গেলো তার, তবুও প্রতারনার থেকে ভালো ছোটো খাটো কষ্টে নিজেকে স্থায়ী রাখা। নিজেকে সান্তনা দিয়েও সান্ত করতে পারছে না নিরু। কোনো ভাবে ক্লাস শেষ করলো নিরু।
অন্যদিকে মাহির শুরু করছে তার জিবনের অন্যতম শেষ্ঠ যুদ্ধ। এ এমন এক যুদ্ধ যেখানে তাকে জিততে হবেই।

দেখতে দেখতে আরো একটা মাস কেটে গেলো। মাহির তার যুদ্ধে সফল। কিন্তু নিরু পারে নি নিজেকে সান্ত করতে। নিজেকে তার অপরাধির মতো মনে হয়।
মাহির থাকতে কোনো দিন তাকায় নি তার দিকেই, কিন্তু তাড়িয়ে দেওয়া সেই মাহিরকে দেখতে প্রতিদিন স্কুলে যেতে তাকিযে থাকে চায়ের দোকানের ভিতরে। হয়তো দেখা হবে, কিন্তু হয নি, পুরো একটা মাসের একটা দিনেও আসে নি মাহির ।
নিরুর মনের একমাত্র চাওয়া এখন একবার হলেও মাহিরকে দেখা। কিন্তু ভাগ্য সেটা চায় না হয়তো।
মাস পেরিয়ে একটা চিঠি লিখলো নিরুর জন্য মাহির। এই চিঠিই পারে তাদের মধ্যের দুরুত্ব সারাজিবনের জন্য ঘোচাতে।
আনন্দে আটখানা মাহির। কেনো যেনো নিরু কে দেখতে মন চাইছে মাহিরের। কিন্তু তার সামনে তো যাওয়া নিষেধ। লুকিয়ে দেখবে সে। চিটি টা পকেটে ঢুকিয়ে রাখলো। দুপুরের পরপর বের হলো মাহির। কারন এখনই ছুটি দেবে নিরুর স্কুল। মাহির গিয়ে দাড়ালো পাকা রাস্তার ধারে। কিছুক্ষন পর রাস্তার পাশ ঘেষে এগিয়ে এলো নিরু। আড়ালে চলে গেলো মাহির। আজ পারতো চিঠি টা নিরুকে দিতে। কিন্তু আজ তাকে দেবে না দেবে কাল, সেই চায়ের দোকানেই দাড়িয়ে।
চিন্তা করতে করতেই সামনে তাকিযে দেখে নিরু রাস্তা পার হচ্ছে। আড়াল থেকে বেরিয়ে এলো মাহির।
রাস্তার পাশে গিয়ে দাড়ালো সে।
কতো দিন পরে দেখতে পেলো সে নিরু কে। ভাবতেই আনন্দ হচ্চে তার।
কিন্তু কাহিনী টা তখনো ও বাদ আছে।
কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হচ্ছে নিরু, খেয়ালই করে নি উল্টে সাইট দিয়ে আসা গাড়িটাকে। দৌড়ে গিয়ে নিরু আর জেইকে ধাক্কা দিলো মাহির। ধাক্কা খেয়ে দুরে ছিটকে পড়লো নিরু আর জেইন ।
কিছু বুঝে উঠার আগেই চিৎকার চেচামেচিতে ভরে গেলো এলাকা । একটা প্যাডো গাড়ি গতি বাড়িয়ে ছুটে চলেছে দ্রুত গতিতে। কিছু লোক থামানোর চেষ্টা করছে গাড়িকে। আর কিছু লোক ভীর জমিয়েছে রাস্তার মাঝে। ভীর ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করলো নিরু।
সামনে তাকিয়েই বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো নিরু। মাহির মাহির করে চিৎকার করছে সে। কিন্তু তার চিৎকার আর পৌছাবে না মাহিরের কাছে। মাহিরের পকেটে হাত দিয়ে একটা লোক মোবাইল, মানি ব্যাগ আর একটা চিরকুট বের করলো। লোক টার হাত থেকে টান দিয়ে নিজের হাতে নিরো নিরু। তার পরের কিছু মনে নেই তার।

আবছা আলোতে সুয়ে আছে সে। কোথায় আমি, কোথায় আমি করতে গিয়ে নিরু বুঝতে পারলো সে হাসপাতালে। মাহির মাহিরের কথা মনে পড়তেই চিৎকার করে উঠলো নিরু।
মাহির মাহির কোথায়। কোথায় মাহির। হটাৎ নার্স আর ডাক্টর রা কোথায় থেকে যেনো ছুটে এলো। নার্স রা নিরুকে শক্ত করে ধরে আছে আর ডাক্টর একটা ঘুমের ঔষধ পুষ করে দিলো নিরুর হাতে। মাহির মাহির করতে করতেই ঘুমিয়ে গেলো নিরু।
মাঝে মাঝে ঘুমের মধ্যেও মাহিরের নাম নেই নিরু।

একদিন পর নিরুর সাথে দেখা করতে আসে জেইন। জেইন কে দেখে কান্না জড়িত কন্ঠে নিরু বলে, মাহির কি রে মাহির কই
জেইন কোনো কথা বলে না, তার চোখ দিয়েও টপ টপ করে পানি পড়ছে। হাত বাড়িয়ে চিঠি টা এগিয়ে দিলো নিরুর দিকে। নিরু চিঠি টা হাতে নিলো,

প্রিয় নিরু,

আমি মাহির, যে তোমার কথা অমান্য করে তোমার পিছনে ঘুড়েছি বেহায়ার মতো, কি করবো বলো, তোমায় যে নিজের থেকেও বেশি ভালবাসি আমি। তার জন্যই তোমার কথা অমান্য করে তোমায় প্রতিদিন দেখতে আসতাম। শেষ যখন তুমি বললে তোমায় ফলো করলে তুমি আর স্কুলে আসবে না, তখন আর কোনো উপায় খুজে পায়নি তোমায় ফলো করার, তবে হে একটা উপায় ছিলো, সেটা হলো তোমার মনের ভ্রান্ত ধারনা দুর করা। তা জন্যই তোমার বোনের সম্পর্কে খোজ নিলাম। তোমার বোন যাকে ভালবাসতো, তার সাথে একদিন ঘুড়তে যায়। জায়গা টা ছিলো শহরের বাইরে আর অনেক টা জন মানব শুন্য। বিপর্যয় টা ঘটে সেখানেই, কয়েক জন পিচাস শ্রেণী মানুষ তোমার বোন কে তুলে নিয়ে যায় আর ছেলে টাকে মেরে সেখানেই ফেলে রেখে যায়,
তোমার বনের সাথে হয় শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার, আর ছেলেটা র সাথে হয়েছে শুধু মানসিক অত্যাচার।

নিজের সাথে হওয়া কাহিনি কে ভুলার জন্যই আত্নহত্যা করে তোমার বোন আর ছেলেটা, তার কোনো খোজ তখন পাওয়া যায় নি। ফলে তোমার ফ্যামিলি দোষ দেয় ছেলে টাকে কিন্তু আমি খোজ নিয়ে জানতে পারলাম ছেলে টা পাগলা গারদে, যে এখন ও তোমার বোনের নাম জবে।
.
কিন্তু দেখো তুমিও সেই ভ্রান্ত ধারনা নিয়ে আছো।
আশা করি চিটি টা পড়ার পড়ে আমার প্রতি কোনো ক্ষোভ তোমার থাকবে না।

শেষ বাক্য টি পড়ার আগেই চোখের কয়েক ফোটা জল এসে পড়লো চিঠি টার উপর । অবাক দৃষ্টি তার চিঠি তে, চিৎকার করে বলতে চাচ্ছে সে মাহির কে Sorry মাহির কিন্তু কথা বের হচ্ছে না গলা দিয়ে, শুধু চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ছে।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত