ভাল লাগার মানুষটি যখন বলে তোর ভাল থাকা আমার উপর নির্ভর করে তাই না???
 :আজ আমি ভাল নাই..!
 :আমি বললাম কেন???
 :ভাল থাকতে হলে একটা ভাল রাখার মানুষ তো দরকার তাই না?
 আমার ভাল রাখার মানুষটি হারিয়ে গেছে ক্লাস সেভেন এ থাকতে..।
 কিন্তু আমি আজও তার জন্য অপেক্ষা…
 :কর অপেক্ষা।
 : আচ্ছা চল ক্লাস শুরু হয়ে গেছে, যাবি না?
 : চল
 : ক্লাস শেষে নিলান্তি আর শুভ বাসায় ফিরতেছে এমন সময় মনে হল তাদের কে যেন ফলো করতেছে……
 শুভ বলল দেখ তোকে তোর পাগল ফলো করতেছে..
 : মানে কি শুভ? ওহ আমার পাগল হতে যাবে কেন? ওহ তো এমনিতেই পাগল
 : হা হা হা
 শুভ: তোর বাসা তো চলে আসছে…
 নিলান্তি: হুম, বাই। কাল ক্লাসে যাবি না??
 শুভ: হুম…যাবো….ওকে বাই
 পরের দিন ক্লাসে এসে তারা দেখে সেই ছেলেটিকে…..যে কিনা তাদের নতুন ক্লাস টিচার….
 :আমি আবির….আমি এখন থেকে তোমাদের ফিজিক্স পড়াবো..তোমরা একে একে তোমাদের নাম আর গ্রামের বাড়ী কোথায় বলো..
 : স্যার গ্রামের বাড়ীর কথা ?
 :হুম, গ্রামের প্রতি আমি একটু ইন্টারেস্ট বেশী
 নাম: নীলান্তি
 গ্রাম: মনপুরা
 আমি যখন বললাম স্যার এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেন তিনি আমাকে চেনে….
 তার পর একে একে সবার পরিচয় নিলো…
 স্যার পড়াতে শুরু করল…..
 আর কালকের জন্য পড়া দিল E=mc২
 :স্যার তো দেখি খু্ব ভালই পড়াচ্ছে…. তাই নারে শুভ??
 :হুম
 : স্যারের নাম্বার টা নিয়ে দিতে পারবি???
 :কিরে পছন্দ হয়ে গেছে নাকি?? মামা
 :তুই তো জানস, আমি ফিজিক্স এ কাঁচা …তাই মাঝেমধ্যে একটু ফোন করে হেল্প নিতাম আরকি
 : ওহ আচ্ছা, নিয়ে দিবো.. তোর জন্য আমি সব করতে পারি
 :তাই নাকি?
 : হুম তাই । থ্যাংকস দোস্ত
 ক্লাস শেষে স্যার থেকে শুভ নাম্বারটা নিয়ে নিলান্তি কে দিল…
 পড়তে বসেছে নিলান্তি…
 e=mc২
 uffs…..আমার মাথায় কিচ্ছু ডুকতেছে না,
 কেন যে সাইন্স নিয়ে পড়তে গেলাম…??
 ভাবছিলাম একটু ভাব নেওয়া যাবে….
 আর এখন ভাব যাচ্ছে আমার মাথার উপর দিয়ে….ভাবতে অভাগ লাগে এই এপ্রিল এ নাকি আমার ফাইনাল পরীক্ষা…
 কয়টা বাজে?
 ৭.২৮, uffs ঘুম পাচ্ছে ঘুমাবো…..
 :দেখছো মেয়েটার কান্ড বই বুকে নিয়ে ঘুমাইয়ে পড়েছে! কে জানে কবে ঘুমাইছে
 : এই মা, উঠ না…. রাত ১১.২৮ হয়ে গেছে..খাবি না?
 :কি মা কয়টা??
 :১১.২৯
 :তুমি আমাকে আর একটু আগে ডাকনি কেন…??
 : আমি ভাবছিলাম তুই ম্যাথ করতেছিস… আর এসে দেখি তুই ঘুমে।
 : ufffs মা কাল আমি পড়া কিভাবে দিব টিচার্সকে। আচ্ছা যাও…. খাবার নিয়ে আস। খুব ক্ষুধা লাগছে। তুমি নিজ হাতে আমাকে খাবার খাওয়ে দিবে।
 : মেয়েটার জ্বলায় আর বাঁচলাম না….
 দাঁড়া খাবার নিয়ে আসতেছি…ঘুমাবি না কিন্তু এই বলে দিলাম….
 : দেখ তো মেয়ের কান্ড মেয়েটা আবার ঘুমিয়ে পড়েছে….এই মা, উঠ নে হা.. কর!
 : নে., হা কর!
 : এটা কিন্তু লাস্ট, আমি আর নিব না,
 আমার প্রচুর ঘুম পাচ্ছে
 : আচ্ছা নে….
 : আর একটা দিই আমার লক্ষী মেয়ে না তুই
 : না আম্মি শেষ বলছি শেষ..। গুড নাইড
 : আচ্ছা ঘুমা গুড নাইট… সকালে কলেজ যেতে হবে তো আবার
 সময়: সকাল ১০.৩০
 :শুভ এখনো আসতেছে না, কি যে করি?
 আজ আসুক, ইচ্ছা মতো বকা আর শাস্তি দিব। ঐ দিকে ক্লাস শুরু হয়ে গেছে…
 কেন যে প্রমিজ করতে গেলাম? না হয় আমি দাঁড়াতাম না….শালা আর প্রমিজ ই করবো না….
 ঐ যে কে যেন দোঁড়াতে দোঁড়াতে আসতেছে…..হুম শুভই তো
 : sorry, sorry , sorry
 : তুই এখন ২ বার কানে ধরে উঠা বসা কর, আর ৯৮ বার বাসায় করবি…এখন করতে বলতাম ক্লাসে দেরি হয়ে যাচ্ছে তাই বলি নাই
 : কি???
 : শুনতে পাস নি তুরে কি বলছি
 : আচ্ছা, আচ্ছা করতেছে
 :হয়েছে দোঁড়া এবার
 : আমি আমার বাসা থেকে দোঁড়াইয়ে আসছি, আর পারতেছি নারে, আর তুই দেখিস স্যার এখনো আসে নাই যে…
 : আচ্ছা দেখি
 : গিয়ে সত্যি সত্যিই দেখি স্যার আসেনি…আহরে শুধু শুধু এত দৌড়াইলাম..
 ক্লাসের আর বাকী আছে ৫ মিনিট, এমন সময় দেখি স্যার আসতেছে….
 Sorry Sorry আজ একটা মিটিং এর কারণে তোমাদের ক্লাসে আসতে পারি নাই…
 তোমাদের পড়া E=mc২ আবার থাকবে।
 সব গুলা ক্লাস শেষে শুভ আর নিলান্তি বাসায় ফিরিতেছে..
 শুভ: দোস্ত তুই প্রমিজ কর কালও দাঁড়াইবি তো?
 নিলান্তি: দুর, তোর প্রমিজ এর কাঁথারে পুরিতাম….
 শুভ: আচ্ছা করিস না…. বাই, কাল দেখা হচ্ছে, প্লীজ ১০ টার পর ৫/১০ মিনিট হলেও ওয়েট করিস
 নিলান্তি: আচ্ছা করবো….বাই
 সন্ধ্যে ৬.১০
 আবার নিলান্তি প্রমাণ করতে বসেছে… E=mc২
 : কি যে করি??? অর্ধেক বুঝেছি
 বাকি অর্ধেক কোন রকমই বুঝতেছি না…
 স্যার কে কল করবো??
 : আচ্ছা করি,
 (দুঃখিত এই কলটি করার জন্য আপনার একাউন্ট এ যথেষ্ট পরিমাণ ব্যালেন্স নেই অনুগ্রহ করে রিচার্জ করুণ)
 :কি যে করি?
 :আচ্ছা আমার তো এমবি আছে,
 স্যার এর নাম্বার দিয়ে ফেসবুকে চার্চ দিয়ে দেখি স্যারের ফেসবুক একাউন্ট আছে কিনা?
 :এই যে একটা আইডি আসলো
 নাম দেখে তো আমি অভাগ “দুঃখ বিলাসী”
 :যে কয়টি পোস্ট আছে সব তো দেখি রোমান্টিক..কিন্তু স্যারের তো একটা ফটোও নাই, যেহেতু স্যারের নাম্বার দিয়ে আইডি টা আসছে তাহলে এটা অবিশ্যই স্যারের আইডি
 : স্যার কে কি মেসেজ দিব?
 না থাক মেসেজ দিব না?
 দুর… পড়ালেখা বাদ….
 পড়ালেখা করে যে গাড়ী ঘোড়ায় চড়ে সে,
 আমি পড়বো না, আমি চড়বো ও না
 আমি রিক্সাতে চড়বো….রিক্সা ভাল লাগে আমার
 : মন বসে না, পড়ার টেবিল এ
 : দুর পড়ার টেবিল এ বসলে কত রকমের চিন্তা যে আসে…..যেমন আমার মাথায় এখন আসছে নতুন একটা একাউন্ট খুলবো…স্যার এর সাথে মজা করার জন্য।
 : একাউন্ট এর নাম কি দেওয়া যায়?
 : হুম খুঁজে পাইছি, দুঃখ বিলাসী, তাহলে আমি দিব, আমি দিব বৃষ্টি বিলাসী
 ব্যস একাউন্ট is done !
 ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট দিব?
 না আমি দিবো না……একটা মেসেজ দিয়ে রাখি….
 9.23pm
 আপনি নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পছন্দ করেন তাই না???
 delivered
 ঠিক ১০.১২ এর দিকে মেসেজ আসলো নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পছন্দ করি তাই তো লুকিয়ে থাকি ।
 : কে অাপনি?
 : আমি ইট, পাথরের নই তো কোন বস্তু! আমি তোমাদের মত একটা মানুষ।
 : কোথায় আপনার বাস?
 : কুঁড়ে ঘরে আমার বাস।
 : দুর,আপনার মিথ্যে কথা শুনতে আমি ইচ্ছুক নই,আমি এখন ঘুমাবো
 : গুড নাইট।
 .
 এই বলে স্যার থেকে বিদায় নিয়ে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম।
 ৪
 পরের দিন ক্লাস শেষে স্যার আমার সাথে দেখা করতে বললো……
 আমি ভাবলাম স্যার আমারকে ধরে ফেলছে, আমি যে লুকিয়ে লুকিয়ে তার সাথে কথা বলছি যে….
 .
 তুমি সন্ধ্যে কখন ফ্রি আছো?
 : আমি বললাম কেন?
 : না তোমার বাবা আজ সকালে এসে বললো তোমাকে পড়াতে যেতে….
 : ওহ,বাবার জ্বলাই আর বাঁচি না…
 আসেন ৭ টার দিকে।
 :আমরা সামনে আর পিছনে স্যার,
 মনে হচ্ছে আমাকে রীতিমত ফলো করে যাচ্ছে। স্যারের মতলবটা কি আসলে…???
 .
 :কি করেন???
 :কে আমাকে মেসেজ দিচ্ছে?
 :বৃষ্টি বিলাসী আপনাকে মেসেজ দিচ্ছে।
 :নাম তো আছে নাকি??
 :নাম আপাতত এটা ভেবে নেন।
 :ওহ। আপনার নাম কি মিনিটে মিনিটে চেন্জ হয় নাকি?
 :হুম
 আচ্ছা স্যার এত মজার মানুষ দেখে তো বুঝা যায় না….
 ঠিক একটু পর সন্ধ্যা নেমে আসলো
 এমন সময় স্যার আসলো আমাদের বাসায়।
 : স্যার আসসালামু-আলাইকুম
 :ওয়ালাইকুম সালাম,
 : এই কি স্যার আমার সাথে পথে হেঁটে হেঁটে চ্যাট করে নাকি??? আমি এটা মনে মনে ভাবলাম
 :বস
 :পড়ালেখা কম কর মনে হচ্ছে???
 :না স্যার, আমি তো পড়িই
 শুধু কিচ্ছু মনে থাকে না আরকি
 .
 :ওহ আচ্ছা, তোমার মন ছোট তো তাই আরকি কিচ্ছু মনে রাখতে পারো না…. সমস্যা নাই এখন আমি আছি তো তোমার মনকে বড় করার দায়িত্ব আমার।
 এই বলে স্যারে হাসলো….
 .
 : ধন্যবাদ স্যার।
 : তো শুধু কথা বলবো?? ফিজিক্স বই বের কর।
 : স্যার এই নেন আমাকে আগে E=mc২ এটা বুঝিয়ে দেন।
 : এই কি স্যারের লেখা, আর আমার অাদির লেখা একই?? ৭ বছরে একটা মানুষ এত পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে।
 আর নাম ও চেহারার সাথে আমি তো কোন মিলও খুঁজে পাচ্ছি না….
 :এবার বুঝেছ তো
 : জ্বি স্যার
 :তো আজ এই এপর্যন্ত, আজ তাহলে যাই
 : যায় না স্যার আসি হবে।
 : তুমি একটু বেশী কথা বলো বলে স্যার আবারও হাসলো।
 .
 .
 রাত ৯.৫০ মিনিট
 সব কিছু ঠিক মতো চলছে তো?
 এই মিশন যাতে সময়ের আগে শেষ করতে পারো….
 নো, টেনশন বস !
 .রাত ১০ টা
 শুভ নিলান্তিকে কল করে বললো….
 :ওই কাল কলেজে যাবি না?
 : যাব তো…তুই
 : আমার প্রিয়তমা গেলে আমিও যাবো
 : ঢ়ং করা বন্ধ করবি? আমি ফোন রাখলাম
 :আচ্ছা ঢং বন্ধ রং করা শুরু
 :মানে কি
 :মানে আমি তোর একটা ছবি আঁকতেছি তো সেটা এখন রং করি
 : মিথ্যা কথা নাহ???
 :হুম
 :দুর তোর সাথে কথা বলাটাই আমার ভুল হয়েছে।
 :ভুল থেকে তো শুরু
 ;কি শুরু?
 :ভাল লাগা?
 :তুই তো দিশাতে নাই
 কথা একটা শাঁক থেকে বলস আর একটা মাছ থেকে
 :তুইও তো
 :আচ্ছা রাখছি বাই।
 :ওকে বাই
 ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭
 ক্লাস হচ্ছে না,
 শুভ ও আজ কলেজে আসে নি….
 ক্লাসে যে যার মতো, আমার থেকে কিচ্ছু ভাল লাগতেছে না……
 হঠাৎ দেখলাম স্যার এক ব্যক্তির সাথে কথা বলতেছে….যাকে আমি চিনি, এটা তো আদির বাবা, স্যারের সাথে যখন কথা বলা শেষ হল, আমি দৌড়ে তার কাছে গেলাম, আংকেল আপনি এখানে?
 আমাকে চিনতে পারছেন? না তো, আমি মনপুরা গ্রামের জামাল সাহেবের মেয়ে,ওহ আচ্ছা জামাল কেমন আছে?, জ্বি ভাল। আংকেল আদি ভাইয়া কোথায়??তার আসল নাম তো আবির।
 তুমি জানো না কি হয়েছে?
 না আংকেল, ওহ আচ্ছা না জানলে বাদ দাও। না আংকেল প্লীজ আমাকে বলেন কি হয়েছে ??
 প্লীজ কাওকে বলিও না মা, আচ্ছা আংকেল,
 আমার ছেলে গ্রামের একটা ঝগড়া থামাতে গিয়ে ঘটনা ক্রমে এক লোক তাকে এসিড মেরে দেয়, তাকে সাথে সাথে তার বন্ধুরা আমাদের বাসায় নিয়ে আসে,অবস্থা বেশী খারাপ দেখে আমি তাকে ঢাকাতে নিয়ে আসি, তাকে প্লাস্টিক সার্জারি করি, পরে শুনি ঐ ঘটনায় এক ব্যক্তি খুন হয়, এতে আমার ছেলের নামেও মামলা হয়।গ্রামের পুলিশ তাকে খুঁজতেছে। তাই আমরা সবার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে এখানে একে বারে চলে আসি….।
 ।
 মা, আমার একটা কাজ আছে,
 পরে কথা হবে।
 আচ্ছা আংকেল ভাল থাকবেন।
 :তুমিও
 :
 এই নিলান্তি,
 চল মাঠে বসে আড্ডা দিই
 :নারে সুমি,নাদিয়া,শারমিন আমার কিছু ভাল লাগতেছে না
 :আরে আই তো
 :আচ্ছা চল
 :তারা গল্পের মধ্যে ডুবে আছে আর আমি ভাবনাই।
 মানুষটা এত কাছে থেকেও আমি চিনতে পারি নাই।
 এমন সময় দেখলাম স্যার কলেজ থেকে বাহির হচ্ছে আজ আমি তাঁকে ফলো করবো….
 স্যার তো দেখি আমার বাসার…..দিকেও না যাচ্ছে….তার মানে স্যারের বাসা এই দিকে, আর বাবার সাথে এই পথে মনে হয় স্যারের সাথে দেখা হয়। পরে বাবা কলেজে গিয়ে আমাকে পড়াতে বলে আসে।
 স্যার আমার বাসার সামনে যখন ঠিক তখনই আমি ডাকলাম স্যার।
 স্যার আপনি কই যান?
 আমাদের নতুন বাসা তো এই দিকে ৪০৪ নাম্বার বাসা, ?
 ওহ! তাই নাকি? জানতাম না তো।
 তো এতক্ষণ আমাকে ফলো করছিলা কেন?
 আপনি আমাকে দেখেছেন?
 হুম….।
 স্যার আপনি যে আদি ভাইয়া আমাকে এত দিন বলেন নাই কেন?
 দেখতে চেয়েছিলাম তুমি আমাকে চিন কিনা?
 :ওহ। আসেন বাসায় খেয়ে যাবেন দুপুরে।
 :নাহ, যাও তুমি, অন্য একদিন খাবো
 :আচ্ছা
 দুপুর গরিয়ে বিকেল আসতে চললো…..বারান্দার দখিনা হাওয়া
 আমার মনটাকে উতালা করিতে লাগিল।
 এমন সময় শুভর ফোন।
 :কিরে কলেজ এ আচস নাই কেন?
 :ভাল লাগে নাই যে তাই।
 :ঐ জানিস আজ একটা খুঁশির খবর আছে
 :বলে পেল শুনে ফেলি
 :আমার আদিকে খুঁজে পাইছি…
 :কি?
 :হুম,আমাদের আবির স্যার আছে যে, ও ই হচ্ছে আমার আদি। দেখা হলে সব বলবো
 :বাই, বলে শুভ ফোন কেটে দিল।
 ৫ মিনিট পর একটা মেসেজ স্যারের নাম্বার থেকে
 আচ্ছা,বেদনার রঙ কি?
 আমি বললাম নীল।
 আর ভালোবাসার?
 আমি বলালাম লাল।
 লাল আর নীল মিশে কি হয়?
 আমি বললাম জীবন।
 : কিন্তু আমার কাছে তো সব নীল রং।
 : কেউ একজন আছে তার কাছে হয়ত আপনার লাল রং। যেগুলাকে আপনার নীল রঙের
 সাথে মিসালে সুন্দর একটা জীবন হয়ে গড়ে উঠবে।
 :পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দূরত্ব কোনটি
 জানো ?
 :আমি বললাম ‘জীবন থেকে মৃত্যু
 পর্যন্ত’,
 :উত্তরটা সঠিক নয়।
 :তো সঠিক উত্তর টা কি?
 : সবচেয়ে বড়
 দূরত্ব হলো যখন আমি তোমার … সামনে
 থাকি, কিন্তু তুমি জানো না যে আমি
 তোমাকে কতটা ভালোবাসি?
 : আপনি এই গুলা আমাকে বলেন কেন?
 :এমনি, মন খারাপ হলে আমি এভাবে কথা বলি, যাকে পায় তাকে বলি বুঝেছেন??
 :আপনার মন খারাপ কেন জানতে পারি?
 :ঐ যে দূরত্ব।
 ইউর ব্যাটারি ইজ লো
 প্লীজ কানেক্ট ইউর চার্জার।
 শালা এমন টাইম এ আমার মোবাইল এর চার্জ শেষ হতে বলছে।
 আমি এখন চাদে….ইজি চেয়ারটা খুব ইজি ভাবে আমাকে দোল খাওয়াচ্ছে…আর
 বেলা শেষের সূর্যটা আস্তে আস্তে আমার কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছে, এসময়টা খুব প্রিয় আমার। তুমি পছন্দ করো তো??
 আমার ভাবনা গুলোতে এখন শুধু তুমি তুমি আর তুমি।
 সে কি আমাকে বলতে পারতেছে না সে আমাকে পছন্দ করে যে….উফ! সে এত হাবলা টাইপের কেন?
 যাই হোক আমি আর অপেক্ষা করতে পারবো না, অপেক্ষা খুবই খারাপ একটা জিনিস আমার কাছে মনে হয়। আমি আজই চিরকুটে সব বলে দিবো আমি যে কতোটা তাকে ভালবাসি।
 :এই মা রাত হয়ে যাচ্ছে তো একটু পর তোর টিচার আসবে, নিচে নেমে আই।
 .
 আম্মু আমার ভাবনা গুলোকে এখানে থামিয়ে রাখতে বাধ্য করলো। আমি দৌড়ে নিচে নেমে গেলাম এবং আমার মনের বাক্স থেকে কয়েকটা শব্দ নিয়ে তার জন্য চিরকুট লিখতে বসে গেলাম….
 চিরকুটে লিখে দিলাম
 প্রিয়
 আদি ওরফে আবির
 “সব কথা মুখে বলা যাই না কিছু কথা বুঝে নিতে হয়”
 আমি তোমাকে ভালবাসি
 গাঁদা একটা এই কথাটা এত দিনেও বুঝতে পারে নাই।
 ইতি
 নিলান্তি
 টিং টিং……
 এই তো তিনি চলে এসেছে….চিঠিটা একটু ঠিক মতো লেখার জন্যও টাইম দেয় নাই।
 এই বলে দারজা খুলিলাম
 .
 বাহ! আদিকে তো পাঞ্জাবি পরলে খুব ভাল লাগে….আমি এটা মনে মনে বললাম।
 .
 : ভাইয়া কেমন আছেন?
 :এই তো ভাল ….. তুমি?
 :আমিও ভাল…. বইটা নাও তাড়াতাড়ি !
 আমার একটু কাজ আছে….
 :আচ্ছা ভাইয়া আজ আমারও পড়তে ভাল লাগতেছে না…আপনি চলে যান।
 :আচ্ছা ঠিক আছে, ১২০ পৃষ্ঠার ম্যাথ গুলা করে পেলবা… আর না পারলে আমার লাস্ট এ ৩৯ নাম্বার টা আছে না তোমার কাছে?
 :জ্বি, আছে
 :ঐ নাম্বারে কল দিও
 :আচ্ছা
 :তো আমি আসি
 :আচ্ছা, ওহ আচ্ছা এই নেন আপনার একটা চিঠি এসেছে আমার কাছে, সে বলেছে আপনাকে বলতে যেন আমার সামনে আপনি চিঠিটা নে খুলেন, বাসায় গিয়ে নিরিবিলি চিঠিটা পড়তে…..।
 :কে মানুষটি?
 :ভিতরে ঠিকানা লিখা আছে….দেখিয়েন
 ;আচ্ছা বাই।
 .
 .
 .
 হ্যালো বস ৫০% কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে !
 . গুড বেরি গুড
 .
পরের দিন সকালে আমি কলেজ এ যায়…
 রসায়ন ঘন্টার পর ১ ঘন্টার জন্য ব্রেক।
 আমি আর শুভ ক্যান্টিনে যায়।
 শুভ আমার সব কথা শুনছে….
 তারপর শুভ হঠাৎ করে বলে :
 “তোর প্রেমতে অন্ধ
 তোর প্রেমের চোর
 তোর প্রেমের ডাকাত
 কি করবি ?? মেরে ফেলবি….
 তোর প্রেমের খুনি হবি”….
 .
 :তোর মাথাটা মনে হচ্ছে পুরাপুরি ভাবে গেছে, আমি বুঝে গেছি তোকে যে পাবনা পাঠাতে হবে।
 :আচ্ছা পাঠাইচ, চল এখন ক্লাসে চল
 :চল
 :আমার তো অনেক লজ্জা করতেছে এখন ফিজিক্স ক্লাস….
 :ওলে আমার লজ্জাবতী রে
 :আচ্ছা চল, যা হওয়ার হবে।
 ক্লাসে গিয়ে দেখি, নতুন একটা স্যার।
 স্যার, আবির স্যার কোথায়?
 উনি আজকে ছুটিতে, তাই আমি আসছি।
 .ক্লাস শেষে আমি বাড়ীতে যায়,
 এবং রীতিমত আশ্চর্য হয়ে যায়….
 দেখতেছি আদিকে ও তার বাবাকে আমাদের বাসায়…টেবিলের উপরে চিঠিটা।
 আমি তাদের সালাম দিয়ে ভিতরে যায়।
 আব্বু ও ভেতর রুমে আসছে
 আম্মু আমাকে বলে কথা গুলো কি সত্যি?
 তুই আদিকে ভালবাসিস, আমিও ভয় না পেয়ে বলে দিলাম……..আলহামদুলিল্লাহ। আব্বু আম্মু মেনে নিছে তাই আমি অনেক খুশি। আব্বু আম্মু কখনো আমার কথা ফেলে দেয় না আসলে আমি এক বাপের এক মেয়ে তো তাই।
 আদির বাবা আমার বাবার মধ্যে অনেক্ষণ কথা বললো…..
 আম্মু একটু আদিকে ডেকে দিবে?
 ওহ। তো চলে গেছে মা,
 তারপর আদির আব্বুকে আমার আব্বু বিদায় দিয়ে আসছে……
 তারপর আব্বু আম্মু আমাকে বলে ১৬ ই ফেব্রুয়ারি তোর বিয়ে….
 :কি আম্মু এত তাড়াতাড়ি কেন??
 :আদি বিদেশে চলে যাবে পড়ালেখা করার জন্য ১৮ তারিখ, তারপর তোর HSC পরীক্ষা শেষ হলে তোকেও নিয়ে যাবে ততদিন তুই আমাদের কাছে থাকবি……
 :আর সে বিদেশে যাইতে ২০ লক্ষ টাকা লাগবে এই মূহুর্তে তাদের কাছে এত টাকা নাই…তাই আমাদের মনপুরার জায়গুলো বিক্রি করে তাকে টাকা দিবো
 :প্লীজ বাবা দিয়ে দাও।
 সে টাকা এই গুলা না দিলে আমি দিবো যাও
 :দিতে হবে নারে মা তুই তো আমাদের সব কিছু
 :আর তুই তোর বন্ধুবান্ধবকে কাল দাওয়াত দিয়ে দিস আমরা বেশী আয়োজন করবো না…
 :আচ্ছা বাবা, এখন আমাদের একটু টাকা পয়সার সমস্যা আছি তো
 :পরে আমরা অনেক বড় করে অনুষ্ঠান করবো ঠিক আছে তো মা?
 :আচ্ছা
 :চল এখন খাবি তারপর ঘুমাবি….
 : আম্মু খুশিতে তো আমার খাওনি আসবে না
 :ওলে আমার লক্ষিটা….আসবে…আসবে
 :আসলে চলো
 ১৪ ফেব্রুয়ারি
 আমি কলেজে যায়
 শুভ প্রথমে আমাকে দেখে লাল গোলাপ হাতে নিয়ে হাটু গেরে বসে সিনামা স্টাইলে
 আমাকে বলে, নিলান্তি আমি গুছিয়ে সুন্দর করে কথা বলতে পারি না,
 আমার তোর সামনে এলে আমার স্বপ্ন গুলা কেমন জানি গুলিয়ে যায়
 বাট, কেন জানি মনে হয় আজ তোকে এই কথা গুলা বলা খুবই প্রয়োজন।
 আমার তোর সাথে থাকতে ভাল লাগে, তোর সাথে কথা বলতে ভাল লাগে।
 তুই হাসলে আমার বুকের ভিতর কেমন জানি অদ্ভুত একটা আনন্দ পাই,
 তুই কষ্ট পেলে, আমার কেমন জানি কষ্ট হয় So, i LOVE you, I want to enjoy every sunrise with you until the last sunrise of my life, so will you live with me forever???
 .
 আমি তার হাত থেকে গোলাপ টা নিয়ে,
 সামনের দিকে চলে গেলাম, তারপরও ও একটা ইয়েস বলে চিৎকার দিছে….
 তার মানে সে আমাকে সত্যি সত্যিই প্রপোজ করেছে… তাই আমি আবার বেক করে বললাম, স্যরি শুভ আমি ভাবছিলাম, তুই আমার সাথে ফান করছিলি…..
 এই বলে আমি তাকে গোলাপটা দিয়ে আবার চলে আসলাম।
 .
 সবাইকে দাওয়াত দিয়ে আমি বাসায় আসছি…
 এমন সময় একটা ৩৯ নাম্বার থেকে কল আসে,
 কল রিসিভ করে দেখি আদি কল করেছে
 বলে আজ সন্ধ্যে নাকি তাকে ২০ লক্ষ টাকা দিয়ে দিতে হবে। আমি বাবাকে বললাম, বাবা সবার থেকে ধার নিয়ে আমাকে ২০ লক্ষ টাকা এনে দিল আর বলে যাও এখনি দিয়ে আস…
 আমি আদিদের বাসায় গেলাম কিন্তু তাদের দরজা তালা মারা দেখলাম…
 সাথে সাথে আদিকে কল দিলাম…
 আদি বলে ২২০ টাকা সিএনজি নিবে আমাদের নতুন বাসায় আসতে….আমি ঠিকানা মেসেজ করে দিয়ে দিচ্ছি, আচ্ছা দাও। আমি টাকা নিয়ে আদিদের বাসায় গেছি….আদি আর আদির আব্বু বসে আছে…আমি সালাম দিলাম তাদের, তারা বলে আসতে এত দেরি হল কেন? রোড এ জ্যাম ছিল….
 আংকেল ওয়াস রুমটা কোন দিকে…এই তো সামনেই….যখন ওয়াসরুম এ ডুকলাম সাথে সাথে আদির মুখে শুনতে পেলাম…
 বস্ আপনি কোথায় মেয়ে তো চলে আসছে, আমরা আমাদের টাকা অর্ধেক পেয়ে গেছি, এইবার আপনি মেয়েটিকে নিয়ে আরো ২০ লাখ টাকা দিবেন আমাদের….
 আমার পুরা শরীর, কাঁপতেছে, চোখ দিয়ে পানি পরতেছে….মুখের ভাষা হারিয়ে পেলছি
 কি করবো আমি কিছু খুঁজে পাচ্ছি না,
 এমন সময় মনে পরলো ৯৯৯ এ কল করলে সব রকমের নাকি সেবা পাওয়া যায়? কিন্তু আমি কিভাবে কথা বলবো, তারপর আমি পানির কল বারিয়ে দিয়ে ৯৯৯ এ কল দিই…বলি আমার লোকেশন ট্যাগ করেন প্লীজ আমি খুব বিপদে,
 বস্ চলে এসেছে, ওয়াস রুম এর দরজা ভাঙা ভাঙা অবস্থা এমন সময় আমিমোবাইল টা লুকিয়ে বাহির হলাম
 .
 .আমি শুধু আদিকে বললাম তুমি এমন করতে পারলে?
 আদি আমাকে বললো that’s my job.
 এমন সময় পুলিশ এসে তাদের ধরে পেলল। আমি কল্পনা ও করি নাই, এই সার্ভিস টা এত তাড়াতাড়ি কাজ করবে….
 তাদের বাসায় একটা ডায়রি পেলাম…
 আমি ডায়রিটা আর টাকা নিয়ে বাসায় ফিরিলাম…আব্বু আম্মুকে জড়িয়ে ধরে ইচ্ছা মতো কান্না করেছি….
 রাতে আদির ডায়রি থেকে জানতে পারলাম এসিড মেরেছে সে,
 পরে তাকেও মেরে দিছে….খুনের সাথেও সে জড়িত, টাকার লোভে গ্রাম থেকে তারা শহরে এসেছে,তারা গ্রাম থেকে আমাকে টার্গেট করে এসেছে।তারা আমাকে তার বস এর কাছে বিক্রি করে দিত এবং তার বস্ আমাকে বিদেশে পাচার করে দিত …..তবে প্রথমে যখন সে আমাকে পড়াত তখন সে আমার প্রেমে পরে গেছিল।
 পরের দিন সকালে শারমিন এসে আমাকে বলে….
 আমি নোটের জন্য শুভর বাসায় গেছিলাম, সে শুধু কান্না করতেছে, খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিছে। সে খুব কষ্ট পাইছে তোর কারণে।
 তারপর আমি তার ডায়রি থেকে জানলাম….
 সে সত্যিই তোকে অনেক ভালবাসে,
 তাই তো সে স্যারের নাম্বার তোকে না দিয়ে সে স্যারের সাথে লাস্ট নাম্বার মিল রেখে তোকে তার একটা নতুন নাম্বার দিছে যে নাম্বারটা কারো কাছে নাই।
 আর তুই স্যার ভেবে তার সাথে চ্যাট করতি….এটা তুই বুঝিস নাই।
 :তারপর আমি বাবাকে সব খুলে বললাম
 এবং শুভর মায়ের সাথে বাবাকে ফোনে ধরিয়ে দিছি….
 :বাবা শুভর মায়ের সাথে দেখা করে
 এসে আমাকে বলল তুর বিয়ে ১৬ তারিখেই হবে।
 ।
 :আমি শুভর আম্মুকে ফোন করে বললাম আন্টি এখনই শুভকে আমার সাথে দেখা করতে বলেন…আমাদের বাসার সামনে আসতে বলেন
 :আমি বাসার বাহিরে তার জন্য অপেক্ষা করতেছি
 :এই তো শুভ আসতেছে
 :কেমন আসিস?
 আমি বললাম নিজেকে খুব চালাক ভাবিস তাই নারে??
 :কই না তো
 :তাহলে গতকাল বলিস নাই কেন নাম্বার টা তোর।
 :এই বলে আমি তার হাত টা ধরলাম।
 পাশে ক্লোজআপের গান কাছে এসো, কাছে এসো কাছে এসো না….. বাজলে মন্দ হতো না।
 :যা বাসায় যা এখন কাল তো তোর বিয়ে
 :তোরও তো
 :বিয়ের দিন তাদের বাবা বলছে কাল থেকে তোমরা একজনের সাথে অন্যজন পরীক্ষার ভিতরে আর দেখা করতে পারবে না
 :আচ্ছা, আমরা রাজি।
 .
 আজ আমাদের HSC পরীক্ষা
 ভাগ্যের কি লিখন
 আমাদের সিট পাশাপাশি পরেছে,
 সে দিক দিয়ে আমি ভাগ্যবতী আর ও ভাগ্যবান
 .
 আজ আমাদেন HSC পরীক্ষা শেষ।
 আমরা হল থেকে বাহির হলাম
 আকাশে অনেক মেঘ,
 বৃষ্টি আসবে আসবে মনে হচ্ছে,
 বৃষ্টি এসেই পড়েছে….
 আমি আর ও হাতে হাত রেখে বৃষ্টিতে হাটতেছি…. আর এভাবে শেষ হল একজন বৃষ্টি বিলাসী আর একজন দুঃখ বিলাসীর গল্প।
 .
 ……………………………………………..THE END…………………………………………….
 
  
 Loading...
Loading...













