আমি জীবন। রাজশাহী পলিটেকনিক এ পড়ি। ফারিয়া আমার প্রানের বন্ধু। সেই ছোটো বেলা থেকে বন্ধুত্বের সম্পর্ক আমাদের । আমরা একই কলেজে একই ডিপার্টমেন্টে পড়ি।আমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব ছাড়া আর কোনো রিলেশন নেই পরিবারও সেটাই জানে। আর ফারিয়া আমা কে খুব ভালো বন্ধু ভাবে। আমিও তাই। ফারিয়া দেখতে ঠিক যেনো কোনো ডানা কাটা পরী ছিল। গল্পটির শুরু এখানে,,,,
~
-হ্যালো জীবন তুই কোথায় রে?
-এই তো আসতেছি।
-তাড়া তাড়ি আয়।
-কিন্তু কেনো?
-আরে আয়ই না প্লিজ লক্ষীটি।
-আচ্ছা আসতেছি।
(আধ ঘন্টা পর ওর কাছে গেলাম। শুরু হয়ে গেল ফারিয়াার শাসন)
-এত সময় লাগে তোর আসতে?
-সরি দোস্ত।
-আচ্ছা ঠিক আছে। আচ্ছা আমাকে দেখতে কেমন লাগে রে?
-একদম পেত্নীর মত।
-দেখ প্লিজ আমি সিরিয়াস।
-(এক বার টাকালাম ওর দিকে কি মায়া ওর চোখ দুটিতে, আজকে নীল রংয়ের জামা পড়েছে, ফারিয়া যদিও খুব সুন্দর তবে আজ আপ্সরীদের মত লাগছে)
-কী হল জীবন তুই কি আবার আমার প্রেমে পড়লি নাকি?
-হুম হা হা হা।
-ধুর এবার বলনা প্লিজ।
-খুব খুব সুন্দর লাগছে তোকে। মনে হচ্ছে যেনো প্রেমে পড়ে যাই।
-হে হে হে।।তোকে তো বলিনি। আজ আমাকে একটা ছেলে প্রপোজ করেছে। জানিস কে? সে আমাদের ক্লাসেরই পারভেজ।।
-(কথাটা শুনে বুকটার ভেতর কেমন একটা ব্যাথা অনুভব করলাম । যদিও কখনও ফারিয়া কে বন্ধু ছাড়া অন্য নজরে দেখে নি তবুও আজ কেমন যেনো লাগছে )
-কি হলো, আচ্ছা ঠিক আছে তোর ভাল না লাগলে আমি কারো সাথে রিলেশন করবো না।
-হুম ভালো।
-তাহলে কি ওকে হ্যা বলে দিবো?
-জানিনা।আমি গেলাম।
ঐ দাড়া (পেছন থেকে ফারিয়া ডাকছে তবুও শুনছি না, একটা রিক্সা করে চলে গেলামম)
.
বাসায় চলে আসার পর খুব কান্না করতে লাগলাম ওর জন্য। আমি জানি না কেনো সে এমন করলো, কেনো ফারিয়া যখন বলল সে অন্য কারো হবে তখন বুকের ভেতর টা এমন লাগল কেনো। এইসবের মানে কি। আমি তা খুজে পেলাম না। আম্মুওও সকাল থেকে লক্ষ করছে তার ছেলে কলেজ থেকে আসার পর এখনও ঘরের ভেতর রয়েছে।
আম্মু রুমে আসলো তখন শুয়ে আছি। মাথার বালিশ টা কিছু টা ভেজা ছিল চখের পানিতে ভিজে গেছিলো।
আম্মু ডাক দিল। ঘুরে তার আম্মুর দিকে তাকালামম
আর তখনই আম্মু জিগ্গাসা করলো,,,
~
-তোর কি হয়েছেরে বাবা?
-কিছুনা আম্মু।
-চোখ দুটো এরকম লাল কেনো, কান্না করছিস কিন্তু কার জন্যে? (আলভির মা রিতি মত বুঝেছে যে ছেলে তার হয়ত কোনো মেয়ের প্রেমে পড়েছে)
-কিছুনা আম্মু।( চোখ মুছে মুছে)
-কাউকে ভালোবাসিস বাবা?
-নাহ আম্মু।
-সত্তি করে বল আমাকে।
-(সেদিনের ঘটনা টা বললাম)
-আমার বাবা টা কত বড় হয়েছে, বাবা তুই ফারিয়ার প্রেমে পড়ে গেছিস। ওকে বলে দে।
-নাহ আম্মু ও তো আমাকে খুব ভালো বন্ধু জানে।
-বোকা ছেলে আমার,,, তাতে কি হইছে।
-ঠিক আছে কাল একবার চেষ্টা করবো। (বলেই এতক্ষন পর মুখে হাসি ফিরে এলো)
– আম্মু ছেলের খুশি দেখে তার নিজের কাছে ভাল লাগলো।
.
এর পরের দিন কলেজে গেলাম। ফারিয়া কে দেখতে পেয়ে পাশে একটা পার্কে নিয়ে গেলাম।
-কিরে জীবন দোস্ত তুই এখানে আনলি কেনো?
-তোকে কিছু বলবো তাই।
-কিছু বলার জন্য এখানে আসতে হয় নাকি। ঠিক আছে বল?
-আমি তোকে ভালো বাসি।
-কি বললি আবার বল?
-তোকে ভালো বাসি।
-এইসবের মানে কি তোকে আমি খুব ভালো বন্ধু জানি আর তুই কি না আমাকে।
-হুম তোকে ভালবাসি।
.
অতপর একটি থাপ্পর খেয়ে বেচারা চুপ করে দাড়িয়ে আছি। আর ফারিয়া চলে গেলো। গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে ফ্লাস বেক এ গেলাম । তখন বার বার আম্মুর প্রতি রাগ হচ্ছিল । আর চোখ দিয়ে জল পড়তে লাগলো। ফারিয়া কে বার বার ফোন দিচ্ছি কিন্তু ধরছে না। বরং ফেসবুকে ব্লক ফোন নাম্বার ব্লাক লিস্টে ফেলেছে । আর কিছু দিন কলেজেও আসে নি ফারিয়া
হটাৎ একদিন কলেজে এলো তবে আমার র সাথে কথা বললো না। দেখে না দেখার মত করে চলে গেলো। তখন খুব কষ্ট হচ্ছিল। এভাবেই দু সপ্তাহ কেটে গেলো। আর ভালো লাগছে না। কারন ফারিয়া আমার সাথে কথাই বলছে না।তাই মাকে বললাম যে এই কলেজে লেখা পড়া ঠিক মত হচ্ছে না। অন্য কোথাও দুরে ভালো কোনো কলেজে ট্রান্সফার হবে। মা সব বুঝতে পেরেছে। তাই ব্যবস্থা করলো। হোস্টেলে থেকেই লেখা পড়া করবো তাই চলে গেলাম।
.
এদিকে ফারিয়া আমাকে না দেখতে পেয়ে টেনশনে পড়ে গেলো। কারন কিছু দিন ধরে আসতেছেনা। তাই অামার বন্ধু অজয়কে জিগ্গাসা করলো। আর জানতে পারল আমি অন্য কোথাও চলে গেছি । সেখানে থেকেই লেখা পড়া করছি । তখনই ফারিয়ার চোখে ক্ষানিকটা জল চলে এলো।কারন তার জন্যই আমি তার থেকে খুব দুরে চলে গেলো। এদিকে আমার র নাম্বারও বন্ধ। কারন পুরোনো সিম চেন্জ করেছি।
এভাবেই কেটে গেলো কিছু বছর। আমার সাথে ফারিয়ার কোনো দেখা নেই। তাছাড়া আমাদের পরিবার এখন আগের জায় গায় নেই। বাসা পরিবর্তন করেছি
.
এখন আমি খুব ভালো একজন ব্যবসায়ী। বাড়ি গাড়ি সব হয়েছে । কিন্তু তবুও আম্মু আমার মুখে সেই আগের হাসিটি খুজে পায় না। তাই আমার বিয়ে দেয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। এদিকে আবার মেয়ে পছন্দও হয়েছে। মেয়ে টার ছবি নিয়ে এল। ছবি দেখে কি করবো না দেখে বাইরে চলে গেলাম।
তাই যথা রিতি বিয়েও দিয়ে দিল। বিয়েতে আমার কোনো মত ছিলো না যদিও শুধু মায়ের জন্য বিয়ে করতে হয়েছে।
.
অবশেষে বাসর ঘরের উদ্দেশ্য রওনা হলাম।
দেখতে পেলাম খাটের উপরে লাল শাড়ি পরে আমার বউ বসে আছে। বউ এসে সালাম করলো। এবার বললাম আমি বিয়েটা ইচ্ছা করে করি নি। আমার মায়ের জোড়া জোড়ির জন্য বিয়ে করতে হয়েছে আর আমি অন্য কাওকে ভালোবাসি ।
এদিকে বউ বলে উঠলো। “আজ আমাদের বাসর রাত তাই না?? আমি তোকে খুব খুব মারবো একটুও ভালো বাসবো না, আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছিস তুই”। কথাটি শুনেই অবাক হয়ে গেলাম
.
ঘোমটা খুললো মেয়েটিকে প্রথমে ঠিক মত অনুমান করতে পারলাম না।।পরে দেখলাম ফারিয়াই তার বউ।
আমি তো রিতি মতো অার একবার অবাক হলাম ।
-তুমি এখানে কেনো ( রাগান্বিত ভাবে) ?
-আমি থাকব না তো কে থাকবে?
-আমার বউ থাকবে।
-আরে বোকা আমিই তোর বউ, তুই সেই আগের গাধাই রয়ে গেলি।
-ধুর মায়ের সাথে কথা বলতে হবে।
-আন্টির সাথে এখন কিসের কথা? এখন গেলে আন্টি কি মনে করবে, যেতে হবে না এখন আমি কি একা একা থাকবো নাকি তোকে ছাড়া।
-আগেও তো আমাকে ছেড়ে বেশ ছিলি।
-(ফারিয়া কান্না করে দিল)
-আরে কান্না করছিস কেনো?
-তো কি করব, তুই তো আমাকে একদম ই বুঝিস না। একা রেখে চলে এসে ছিলি। তোকে ছাড়া যে কলেজে একদম ই ভালো লাগত না।
-হুম সে জন্যই তো দেখে না দেখার মত করে চলে যে তি।
-সে টা তোকে ইচ্ছা করে করেছি যেনো ভালোবাসা টা আরো গভীর হয়। আর তুই আমাকে বুঝতে পারিস যে আমি তোর জীবনে কি। কিন্তু তুই তো গাধার মত চলে এসেছিস।
-(আমার আর কোনো উওর নেই)
-এখন চুপ করে আছিস কেন, জানিস আমি তোকে কত খুজেছি। আর ফেসবুকে একবার গিয়ে দেখলি না যে তোকে কত মেসেজ দিয়েছি।
-তুই আমাকে ব্লক দেয়ার পর আর যাওয়া হয়নি ফেসবুকে আজ অনেক বছর ধরে ফেসবুকে যাওয়া হয় না।
-আর দরকার নেই ও যাওয়ার।(ফারিয়া বলল)
-কেনো, কাল থেকে রোজ ফেসবুকে যাবো। অনেক সময় একা থেকেছি। এখন তো গার্লফ্রেন্ড বানাতে হবে।
-কি বললি (ও কান্না করে দিল)
-এই থাক আর কাদতে হবে না। আয় বুকে আয়।
-না তোর বুকে যাবো না।
-ঠিক আছে তাহলে গার্লফ্রেন্ড খুজতে গেলাম।
-এই না। এই তো এসেছি।।
-আজ থেকে আর তুই নয়।
-জ্বি প্রান প্রিয় স্বামী, আপনি করে বলব।
-না আপনি নয়, তুমি।
-ঠিক আছে তুমি তুমি তুমি
-আই লাভ ইউ জান।
-আই লাভ ইউ টু বাবু।।।
একটা আদরের চুম্মা দিয়ে দিলাম। বাকিটা ইতিহাস
এই ভাবে আমাদের নতুন জীবন শুরু হলো।( বাস্তবের সাথে মিল নেই)
ভালবাসা এমনই সবশেষে শুধু সুখ আর সুখ। ভালবাসা পেতে হলে ধর্য্য থাকতে হবে কষ্ট করতে হরেত াহলে ভালবাসা সারাজীবন থাকবে।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা