এরই নাম কি ভালোবাসা

এরই নাম কি ভালোবাসা

ছেলে: এই যে শুনছেন।
মেয়ে: জি আমাকে বলছেন?
ছেলে: জি আপনাকে বলছি।
মেয়ে : জি বলুন কেন আমাকে ডেকেছেন?
ছেলে: আসলে যে জন্য ডেকেছি তা যে কি করে বলি?
মেয়ে: না বললে ডেকেছেন কেনো?
ছেলে: আপনার নাম টা যেন কি?
মেয়ে ও এই জন্য ডেকেছেন?
ছেলে: না না আপনার ফোন নাম্বার টা পাওয়া যাবে?
মেয়ে: কেন? না দিতে পারবো না। আমার সমস্যা হবে।
ছেলে:আমি বিরক্ত করবো না।অনেক দিন ধরে আপনাকে একটা কথা বলতে চাচ্ছি। কিন্তু বলতে পারছিনা তাই নাম্বার টা নেয়া।একবার কল করে বলে আর কখনোও কল করবো না।
মেয়ে: ওকে নিন।০১৭………………..o
যাদের মাঝে কথা হচ্ছে তারা হল নিয়ন আর নাবিলা।নিয়ন আর নাবিলা একই কলেজের স্টুডেন্ট। নিয়ন অনার্স ৪ র্থ বর্ষের ছাএ। আর নাবিলা অনার্স ২য় বর্ষের ছাএী।
নিয়ন নাবিলার ফোন নাম্বার নিয়ে সেদিন রাতে কল দিল। কিং কিং কিং রিং হচ্ছে।নাবিলা ফোন টা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বলে উঠলো । ছেলে: হ্যালো আমি নিয়ন বলছি। চিন্তে পারছেন? মেয়ে : জি।
নিয়ন : শুধু জি নামটা তো বলেন।
মেয়ে: আমি নাবিলা। এবার বলেন ফোন করেছেন কেন?
নিয়ন: তোমার কথা জানতে আর আমার কথা তোমাকে জানাতে।নাবিলা তো কি জানতে চান আর কি জানাতে চান বলুন। নিয়ন: আমি তোমাকে আমাদের নবীন বরন অনুষ্ঠানে প্রথম দেখেছি।আমি তখন অনার্স ৩ য় বর্ষে। সেই প্রথম দেখাতেই আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলি কিন্তু এতো দিন বলতে পারি নি। ১ টা বছর ধরে চেষ্টা করতে করতে আজ বলেই দিলাম।।এবার তুমি বলো আমাকে ফিরিয়ে দিবে নাতো।নাবিলা: সরি আমি আপনাকে ভালোবাসতে পারবো না।নিয়ন: কেন পারবেনা। আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি।তুমি ছাড়া আমি অস্মপু র্ন। নাবিলা আর কথা না বারিয়ে ফোন টা কেটে দেয়। পরের দিন কলেজ ক্যাম্পাসে ঢুকতেই দেখে নিয়ন কৃষ্ঞচুরা গাছের নিচে দারিয়ে আছে
নাবিলা কে আসতে দেখেই নিয়ন নাবিলার কাছে এগিয়ে আসল।নিয়ন: নাবিলা কেন তুমি আমাকে ভালোবাসতে পারবেনা? তোমার কি কারো সাথে রিলেশন আছে থাকলে প্লিজ আমাকে বল। আমি সরে যাব তোমার জীবন থেকে।নাবিলা: এমন কেউ নেই। কিন্তু আমার পক্ষে তা রিলেশনে যাওয়া সম্ভব না। কারন আমি প্রেম ও প্রেমিক কোনটাই বিশ্বাস করিনা। নিয়ন: আমি অন্যদের মতো না। প্লিজ নিজকে প্রমান করার জন্য একটা সুযোগ দাও।নাবিলা: সরি সম্ভব না।এই বলে চলে যায়।কিন্তু নিয়ন তার পিছু ছাড়েনা।সে বার বার ভালোবাসার কথা বলে আর নাবিলা বার বার ফিরিয়ে দেয়।তাই নিয়নের সব সময়ই মন খারাপ থাকে।কিছুদিন পর নিয়নের ছোট বেলার বন্ধু তমা আসে।
তমা আর নিয়ন খুব ভালো বন্ধু ছিলো। তমার বাবার চাকরির জন্য ওরা ৭ বছর আগে পাবনা শহর ছেড়ে ঢাকা চলে যায়।৭ বছর পর তমা আবার পাবনা আসে।তমা নিয়নের মন খারাপের কারন জানতে চায়।নিয়ন তমাকে সব খুলে বলে। তারপর তমা তাকে বলে আমার কথা মত চলতে পারলে তোর নাবিলা কে তুই পাবি।
কিন্তু কথা দিতে হবে আমার সব কথা শুনতে হবে।নিয়ন: আমি নাবিলার ভালোভাসা পাওয়ার জন্য সব করতে পারি। তমা: ওকে এবার বলো দেখি প্রেম পাগল রোজ কি কি পাগলামো কর? নিয়ন: আমি প্রতিদিন বাইক নিয়ে বাস স্টান্ডে দাঁড়িয়ে থাকি আর ও বাসে চলে যায়।তমা: হুম কাল ও দাঁড়িয়ে থাকবে কিন্তু ওর জন্য না আমার জন্য।আমি কাল থেকে তোর কলেজে যাব।নিয়ন: তোর সাথে প্রেম করতে চাচ্ছি না যে তোকে নিয়ে ঘুরবো।আর এটা নাবিলা দেখলে আর আমার সাথে কথা বলবে না।তমা : আমি যা বলছি তা না করলে যা তোর মতো তুই থাক। নিয়ন: এই না না ওকে তোর কথা শুনবো। পরের দিন সকালে নিয়ন বাইক নিয়ে দারিয়ে আছে, নাবিলা দাঁড়িয়ে আছে বাসের জন্য।
হঠাৎ তমা নাবিলার সামনে দিয়ে এসে নিয়ন এর বাইকে উঠে ওর সামনে দিয়ে কলেজে এলো।
নাবিলা তো রেগে মেগে আগুন হয়ে গেছে। নাবিলা কলেজে ঢুকতে না ঢুকতেই দেখে নিয়ন আর তমা পাশাপাশি বসে হেসে হেসে গল্প করছে।
তারপর নিয়ন পকেট পায়েল বের করে তমার পায়ে পরিয়ে দিল নাবিলার সামনে।এবার রাগটা কন্টোল না করতে পেরে সোজা ক্লাসে চলে গেল।এভাবে রোজ নিয়ন নাবিলাকে রাগাতে লাগলো। কাল ১৪ ফেব্রুয়ারি। কাল নাকি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস।কাল আবার আমার রাগি পাগলিটাকে প্রোপস করবো নিয়ন মনে মনে ঠিক করে।ওদিকে নাবিলাও ভাবছে কাল কে নিয়ন কে বলেই দিবে যে আমি ও ওকে অনেক ভালোবাসি।না হলে হয়তো একদিন হারিয়ে ফেলবো। তাই আর দেরি করা ঠিক হবে না।অন্যদিকে তমাও আজ তার ছোট বেলার সাথীকে ফিরে পেতে চাচ্ছে।আর চাইবেই বা না কেন মেয়েটা সেই ছোট বেলা থেকে নিয়ন কে ভালোবাসে।তার জন্য এতো দূর থেকে ছুটে এসেছে। তমা আজ নিয়ন কে বলবে নিয়ন ঐই মেয়েতো তোমাকে ভালোবাসে না তুমি ওকে ভুলে যাও।আমি তোমাকে সেই ছোট বেলা থেকে ভালোবাসি।প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দিও না।তিন জনের তিন কোনে রাত টা কাটলো।তমা আজ নীল শাড়ী পরেছে নীল চুরি পরেছে চুলে সুর্য মুখি ফুল লাগিয়েছে। দেখে এক নীল পরি মনে হচ্ছে।আর নাবিলা লাল শাড়ী লাল চুরি আর লাল টিপে লাল পরি সেজেছে।আজ ক্যাম্পাস টা যেন লাল নীল পরি তে ভোরে ওঠেছে।নিয়ন একগুচ্ছ লাল গোলাপ নিয়ে তমার সামনে হাটু গেরে ফিল্মি স্টাইলে আই লাভ ইউ বলছে আর এটা নাবিলা এসে ফেলে। নাবিলা কোনো কথা না বলে বাসায় চলে যায়। আর ব্লেড দিয়ে হাতের শিরা কেটে দেয়।এদিকে তমা তো আজ মহা খুশি নিয়ন আজ ওকে প্রোপস করেছে।কিন্তু একটু পরি তমার কাছ থেকে ফুল গুলো নিয়ে নিয়ন বলে এভাবে নাবিলাকে প্রোপস করবো। দেখবি ও আজকে আমাকে ফেরাতে পারবেনা।আর যদি ও আজকে আমাকে ফিরিয়ে দেয় তাহলে আমি আমার এ জীবন আর রাখবোনা।তমা মুখ লুকিয়ে চোখের জল মুছে হাসি মুখে বলে দেখিস আজ সত্যি তোর নাবিলা তোকে ফেড়াতে পারবেনা।আর তখন নয়ন এসে নিয়ন কে বলে জানায় নাবিলা সোসাইট করতে গেছিলো এখন হাসপাতালে। একথা শুনে নিয়ন পাগলের মতো ছুটতে থাকে রাস্তা দিয়ে। হঠাৎ একটা ট্রাকের সাথে নিয়নের ধাক্কা লেগে যায়।প্রচুর ব্লাডিং হয়।হাসপাতালে নিলে ডাক্তার জানায় ২০ মিনিটের মধ্যে ৩ ব্যাগ রক্ত না দিতে পারলে নিয়ন কে আর বাচানো যাবেনা।তমা আর নিয়নের রক্তের গ্রুপ একক তাই তমাই দিতে চায়।কিন্তু ডাক্তার একজনের শরীর থেকে ৩ ব্যাগ রক্ত নিতে রাজি হয়না। অনেক রিকুয়েস্ট করে তমা ২ ব্যাগ রক্ত দেয়।আর এক ব্যাগ হাসপাতাল থেকে দেওয়া হয়।২ ব্যাগ রক্ত দেওয়ার পর তমা অসুস্থ হয়ে পরে।নিয়ন নাবিলা সবাই বেচে যায়।সুসথ হলে ওদের দিয়ের দিন ঠিক করা হয়।নাবিলা বিয়ের আগের দিন নিয়নের এক বন্ধুর কাছে জানতে পারে তমা নিয়ন কে ছোট বেলা থেকে ভালোবাসে।তাই নাবিলা নিয়ন কে বলে তমা বিয়ে তে থাকলে ও বিয়ে করবে না।নিয়ন আর নাবিলা এ নিয়ে যখন কথা বলছিলো তমা তখন ওদের কথা শুনে ফেলে।তাই কাউকে কিছু না বলে তমা রাতে একা বাসা থেকে বেরিয়ে আসে।গায়ে তখন ১০৪ জ্বর। রাস্তার খোলা বাতাসে তা তরতর করে বেরে ১০৬ এ পৌচ্ছে।তমা জ্ঞান হারিয়ে রাস্তায় পরে যায়।একজন দেখে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করে।তমা হাসপাতালের বেডের সাথে মৃত্যুর সাথে পানজা লড়তে থাকে আর এদিকে নিয়ন ও নাবিলার বিয়ে হতে থাকে।বিয়ের দিন সকাল ৫ টায় তমা শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে।সে এই পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চলে যায় না ফেরার দেশে।ডাক্তার রা তার ব্যাগে একটা ডাইরি পায় তাতে তার পুরো জীবনী লেখা দেখতে পায়।সেখানে নিয়নের বাসার ঠিকানা থাকে।সেই ঠিকানায় তমার লাশ আর ডাইরিটা পাঠিয়ে দেওয়া হয়।নাবিলা বৌ সাজে আর তমা সাদা কাফনে নিয়নের বাড়িতে ঢোকে। পুরো বিয়ে বাড়ি স্তব্ধ হয়ে যায়।নিয়ন লাশের কাছে গিয়ে মুখটা সরিয়ে দেখেই অজ্ঞান হয়ে যায়। ঘন্টা খানেক পর নিয়নের জ্ঞান ফিরলে তমার ডাইরিটা এক নার্স নিয়ন কে দেয়।নিয়ন ডাইরিটা দেখেই চিনতে পারে।এটা নিয়নই দিয়েছিলো তমারা ঢাকা চলে যায়।বলেছিলো যখন আমাকে খুব মনে পরে আমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করবে তখন যেন সব কথা তমা এই ডাইরিতে লিখে রাখবি।আমি একদিন গিয়ে হুট করে ডাইরিটা চেয়ে বসবো আর দেখবো কতটা মিস করেছিস আমাকে।অশ্রুসিক্ত নয়নে নিয়ন ডাইরিটা খোলে।আর দেখে সে শুধু নিয়নকে ভালোবাসার কথা বলতেই এতো দূরে ছুটে এসেছিল।আর দেখে সেই নিয়নকে রক্ত দিয়ে বাঁচিয়েছে।আর তার আরর নাবিলার সুখের কথা ভেবেই গায়ে জ্বর এত জ্বর নিয়ে বেরিয়ে যায়।ডাইরিটা পড়ে নিয়ন সথীর হয়ে যায়
তারপর ৪ বছর কেটে গেছে নিয়ন একটা কথাও বলেনি কারো সাথে।নাবিলা নিয়নের পায়ে পরে ক্ষমা চেয়েছে তবুও একটা কথা বলেনি।নিয়ন স্থীর আর নাবিলা তার একটি ভুলের মাসুল দিয়ে চলছে এই স্থীর মানুষটির পাশে থেকে তাকে সেবা করে।আসলে নাবিলার ভুলের পরিমানটা এতো বেশি ছিলোনা যে এভাবে তিনটি জীবন শেষ হয়ে যাবে।তবুও নিয়তি কে কি করে হারাবে।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত