আজ আমার বিয়ে। কোনো আয়োজন ছাড়াই সাদা মাটা ভাবেই বিয়েটা হলো। কিন্তু এই বিয়ে নিয়ে ছোট বেলা থেকেই আমার অনেক স্বপ্ন ছিলো। অনেক আশা ছিলো। আমি ভাবতাম আমার বিয়ে হবে ধুমধাম করে। অনেক মানুষকে দাওয়াত দেয়া হবে। আমার বিয়েতে সবাই আনন্দ করবে। মোট কথা বিয়ে বলতে আমরা যেমন বুঝি। কিন্তু তেমন কিছুই হলো না। আজকে যে আমার বিয়ে, আমি তো সেটাও জানতাম না। সন্ধ্যায় রুমে বসে আছি, মা এসে বললো, ইফতি রেডি হয়ে নে। আজ তোর বিয়ে। বিয়ের কথা শুনে আমি তো আকাশ থেকে পড়লাম। মানে কি, বিয়ে? আমার বিয়ে? আর সেটা আমি জানিনা? পরে জানতে পারলাম বিয়েটা হচ্ছে নীলার সাথে। নীলা আমার ভাবি। আমার ভাইয়ার স্ত্রী। ভাইয়া একটা রোড এ্যাকসিডেন্টে মারা গেছে। ভাইয়া মারা যাবার খবর শুনে ভাবী একদম পাথর হয়ে যায়। অনেক কান্না করেছিলো সেদিন। আর আমাদের পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া। ভাবী অনেক ভালো একটা মানুষ। আব্বা মাকে অনেক ভালোবাসে। ভাইয়া মারা যাবার পর ভাবির বাবা মা অনেক বার নিতে আসে ভাবীকে। কিন্তু আব্বা মা ভাবিকে তাদের সাথে দেয়নি। দেয়নি বললে ভুল হবে। ভাবীকে এক প্রকার আটকিয়ে রেখেছে, যেতে দেয়নি। আর ভাবীও জোর করে যাইনি। ভাবিকে না পাঠানোর অবশ্য কারন আছে। আব্বা মার ভয় ছিলো ভাবী বাবার বাড়ি যেয়ে যদি আর না আসে। কারন ভাইয়া বেঁচে নেই। ভাবীর কোনো ছেলে মেয়েও হয়নি। এমন অবস্থায় কোন আশায় আমাদের বাড়িতে আবার ফিরে আসবে? বা ওর বাবা মা আসতে দিবেই বা কেনো? যদি জোর করে অন্য জাগায় বিয়ে দিয়ে দেয় ভাবীকে? এই ভয়েই আমার সাথে ভাবিকে বিয়ে দিয়ে দিলো। ভাবীকে সারা জীবনের জন্য এই বাড়ির বউ করে রাখার জন্য। আমার আর কি করা? আব্বা মার মুখের উপর কথা বলতে পারিনি। তাই ইচ্ছা না থাকা সত্তেও বিয়েটা করে ফেলতে হলো। বিয়ে যখন পড়ানো হয় তখন আড় চোখে একবার ভাবীর দিকে তাকিয়েছিলাম। দেখেছিলাম ভাবী চুপচাপ বসে আছে যেনো পাথরের মূর্তি। চোখ দুটোও ছল ছল করছে। ভাবীও হয়তো অনেক কিছু ভাবছে। অনেক সৃতি মনে পড়ছে ভাবীর মনে। আর পড়াটাই স্বাভাবিক। বেশি সময় তাকিয়ে থাকতে পারিনি। চোখ ফিরিয়ে নিয়েছিলাম।
.
বেলকোনিতে দাড়িয়ে এই সব ভাবছি। আর ভাবি রুমে বসে আছে একা। আমি কেনো যানি রুমে যেতে পারছি না। কেমন যেনো সংকোচবোধ হচ্ছে। আচ্ছা আমি সেই থেকে ভাবী ভাবী বলছি কেনো? এখন তো নীলা আমার বউ। তাহলে কি বলে ডাকবো ওকে? নীলা বলে? কিন্তু ও তো আমার বড়। আগে তো ভাবী বলে ডাকতাম। কিন্তু এখন যেহেতু নীলা আমার বউ সেহেতু ভাবী বলে ডাকা যাবে না। তাহলে কি বলে ডাকবো? নীলা বলে? হ্যাঁ নীলা বলেই ডাকবো।
.
নাহ আর দাড়িয়ে থাকা যাবেনা। এবার রুমে যেতে হবে। নীলার ভয়টা অনেক বেশি। একা থাকতে পারেনা। তাই এখানে দাড়িয়ে থাকলে চলবে না। আমি রুমে ঢুকলাম। রুমে যেয়ে দেখি নীলা শুয়ে আছে। আমি দরজা লক করে ওর কাছে গেলাম। ওর পাশে যেয়ে খাটের উপরে বসলাম। তখন বুঝতে পারলাম, নীলা শুয়ে শুয়ে ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাঁদছে। আমার খুব ইচ্ছা করলো ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে বলি, নীলা কাঁদছো কেনো? আমার খুব ইচ্ছা করলো ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দেই। হাতটা মাথার কাছে নিয়েও আবার ফিরিয়ে আনলাম। কেনো যানি পারলাম না ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে। পারলাম না ওর চোখের পানি মুছে দিতে। উঠে চলে আসলাম খাট থেকে। সোফার উপর এসে শুয়ে পড়লাম। শুয়ে শুয়ে ভাবছি। আজ আমার বাসর রাত। আর এই রাতটা নিয়েও আমার অনেক স্বপ্ন ছিলো। অনেক কিছু ভাবতাম এই রাতটা নিয়ে। ভাবতাম আমার বাসর ঘরটা ফুলে ফুলে সাজানো থাকবে। আর তার ভিতর একটা লাল টুকটুকে শাড়ি পড়ে বসে থাকবে একটা অচেনা মেয়ে। অপেক্ষা করবে আমার জন্য। আমি দুরু দুরু বুকে এগিয়ে যাবো ওর কাছে। গিয়ে বসবো ওর পাশে। তারপর ওর ভীত লজ্জ্বা মাখা মুখের দিকে তাকিয়ে থাকবো। কেউ কোনো কথা বলবে না। এক সাথে লজ্জ্বা আর ভয় দুটোই থাকবে দুজনের মনে।
.
তারপর দুজনার ভিতর থেকে কেউ একজন নিরবতা ভাংবে। কিন্তু তেমন কিছুই হলো না। এমন কি আমাদের বাসরটাও হলো না। . দেখলাম নীলা কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে গেছে। আমিও ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম যানিনা। সকালে যখন ঘুম ভাংলো, তাকিয়ে দেখি নীলা নেই। অনেক সকালেই উঠে যায় ও। আব্বা মাকে ডেকে দেয় নামাজ পড়তে। তারপর নিজে নামাজ পড়ে, সবার জন্য নাস্তা বানাতে যায়। এটা প্রতিদিনের রুটিন ওর। হঠাত মনে হলো, কে যেনো রুমে ঢুকলো। তাকিয়ে দেখি নীলা। আমার কাছ থেকে নিদৃষ্ট দুরত্ব বজায় রেখে দাড়ালো। তারপর বললো,
– টেবিলে নাস্তা দিয়েছি খাবে এসো? আম্মা তাড়াতাড়ি আসতে বললো।
.
এটা বলেই চলে গেলো নীলা। আমাদের বিয়ের পর এটাই আমার সাথে ওর প্রথম কথা বলা। নীলা যখন আমার ভাবী ছিলো। তখন তো পাগল করে ফেলতো আমাকে জ্বালিয়ে। সকালে ঘুম থেকে রিতিমত টেনে হিচড়ে উঠাতো আমাকে। আমি না উঠতে চাইলে তো নীলা মাঝে মাঝে পানি ঢেলে দিতো। কিন্তু এখন যেনো আমাকে এড়িয়ে চলছে। কিন্তু কেনো? ভয়ে? নাকি লজ্জ্বায়? যানিনা কিসে।
.
আমি ফ্রেশ হয়ে নাস্তার করার জন্য নাস্তার টেবিলে গিয়ে বসলাম। আমার সামনের চেয়ারটাতে নীলা বসেছে। আর দুই পাশে আব্বা মা। নীলার দিকে তাকালাম। দেখলাম ও তেমন খাচ্ছে না। শুধু হাত দিয়ে নাড়াচাড়া করছে। কিছু সময় পর মা কথা বলে উঠলো। বললো,
– ইফতি?
– হ্যাঁ মা বলো।
– আজকে নীলাকে নিয়ে একবার ডাক্তারের কাছে যাবি।
.
ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবার কথা শুনে, আমার বুকের ভিতর কেমন করে উঠলো। নীলার কি শরীর খারাপ? ও কি অনেক বেশি অসুস্থ? কিন্তু ওকে দেখে তো মনে হচ্ছে না ওর শরীর খারাপ? দেখে তো মনে হচ্ছে ও সুস্থ আছে। তাহলে ডাক্তারের কাছে নিতে হবে কেনো? খুব জানতে করলো ডাক্তারের কাছে নিতে হবে কেনো? ওর কি হয়েছে? কিন্তু কাউকে কিছু বলতে পারলাম না। না মার কাছে না নীলার কাছে। শুধু মাকে বললাম, হ্যাঁ মা নিয়ে যাবো।
.
নীলাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে আসলাম। তখন আমি জানতে পারলাম, ডাক্তারের কাছে নিয়ে আসার কারন। জানতে পারলাম নীলা চার মাসের অন্তসত্তা। আমি আগে জানতাম না বা আমার জানার কথাও না। নীলা প্রেগনেন্ট এটা শুনে আমি অখুশি হইনি। বরং আমি অনেক খুশি। খুশিতে আমার নাচতে ইচ্ছা করছে। আমার ভাইয়ার একটা সৃতি তো আমাদের মাঝে থাকছে। এর থেকে বড় পাওয়া আর কি হতে পারে? নীলার প্রেগনেন্ট এই কথাটা শুধু আমি জানিনা। তাছাড়া সবাই জানে। আর এই কারনে মা নীলাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে আসতে বলেছিলো। চেকাপের জন্য। আমি যখন এটা জানতে পারলাম নীলা প্রেগনেন্ট, তখন একবার নীলার দিকে তাকিয়েছিলাম। নীলাও আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো। দুজনার চোখাচোখি হতেই নীলা মাথা নিচু করে ফেললো। নীলার মুখে লজ্জ্বা আর ভয় আমি পরিষ্কার দেখতে পেলাম।
.
নীলাকে নিয়ে রিকসায় করে বাড়ি ফিরছি। কিন্তু ও রিকসার এক পাশে গুটিসুটি মেরে বসে আছে। অনেকটা দুরত্ব আমাদের দুজনার মাঝে। মনে হচ্ছে আমরা কেউ কাউকে চিনানা। অপরিচিত মানুষ একই রিকসায় করে যাচ্ছি।
.
বাড়িতে চলে আসলাম। নীলা আর আমি রুমে বসে আছি। আমার খুব ইচ্ছা করলো নীলাকে জড়িয়ে ধরে বলি, নীলা, আমাদের ছেলে হবে নাকি মেয়ে? আমার কিন্তু মেয়ে বাবু অনেক পছন্দ। তোমার কোনটা পছন্দ? কিন্তু না, আমি বলতে পারলাম না। কেনো যে পারলাম না আমি জানিনা।
.
এই ভাবেই চলছে আমাদের বিবাহিত জীবন। নীলা তেমন একটা কথা বলে না আমার সাথে। খুব প্রয়োজন ছাড়া বলে না। সারাক্ষন চুপচাপ থাকে।আর কি যেনো ভাবে। নীলার পেটে বাবু। এই সময় নীলার কোনটা ভালো হবে। কি খেতে হবে। আমি সব কিছু এনে রাখি। যেনো ওর কোনো অসুবিধা না হয়। আলাদা একটা কেয়ার করি কিন্তু ওর অগোচরে। ওকে বুঝতে দেইনা। আমাদের বাড়িতে তেমন কোন কাজ নেই। কিন্তু যেটা আছে সেটাও ওকে করতে দেয় না মা। তবুও নীলা জোর করে কাজ করে।
.
আমি নীলাকে দুর থেকে দেখি। ওর সামনে যাইনা।
দুর থেকে এক প্রকার লুকিয়ে লুকিয়েই ওকে দেখি। আর নিজে নিজে হাসি। নীলা নিজেও আমার সামনে আসে না। এই ভাবেই চলছে আমাদের সংসার।
.
আমি রুমে যাচ্ছি। এমন মা আমাকে ডাক দিলো। আমার হাতে এক গ্লাস দুধ দিয়ে বললো, দুধটা নীলাকে খেয়ে শুতে বলতে। আমি গ্লাসটা নিয়ে রুমে ঢুকলাম। রুমে যেয়ে দেখি নীলা বসে আছে। আমি দুধের গ্লাসটা ওর সামনে রেখে বললাম, দুধটা খেয়ে নাও। ও মাথা নেড়ে বললো, খাবে না। খেতে ইচ্ছা করছেনা।
.
আমার বলতে ইচ্ছা করলো, কেনো ইচ্ছা করছে না? কেনো খাবে না তুমি? তুমি না খেলে বাবু ভালো থাকবে কি করে? খুব ইচ্ছা করলো নিজের হাতে খাইয়ে দিতে। কিন্তু না পারলাম না আমি। আমি কেনো পারিনা সেটা জানিনা। তবে ভয়ও হয়। যদি নীলা রেগে যাই? যদি রেগে গিয়ে বকা দেই? আগে অবশ্য অনেক বকতো। আদরও করতো অনেক। নীলাকে বললাম, মা দুধটা খেয়ে ঘুমাতে বললো। নীলা কি যেনো একটা ভাবলো। তারপর দুধটা খেয়ে শুয়ে পড়লো। আমিও সোফার উপর চলে গেলাম শুতে। এখনো পর্যন্ত নীলার পাশে ঘুমাইনি আমি। ও খাটে ঘুমায় আর আমি সোফায়। সোফার উপর শুয়ে চোখটা বুজলাম কেবলো। তখনই নীলার মিষ্টি কন্ঠাটা শুনলাম। ও বললো,
– ইফতি আমার খুব ভয় করছে। আমার পাশে ঘুমাবে?
.
নীলা আমাকে ডাকছে ওর পাশে শোয়ার জন্য। আমি যেনো নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিনা। আমার মনে হচ্ছে আমি ভুল শুনেছি। কিন্তু না নীলা আমাকে ডেকেছে। আমার যে কি আনন্দ লাগছে সেটা ভাষায় প্রকাশ করার মত না। আমার নীলাকে বলতে খুব ইচ্ছা করছে, নীলা আরো আগে কেনো ডাকোনি? কিন্তু সেটাও বলতে পারলাম না। খুশিতে আমার নাচতে ইচ্ছা করছে। আমি যথা সম্ভব নিজেকে শান্ত রেখে নীলার পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লো। আমি যে অনেক খুশি হয়েছি সেটা নীলাকে বুঝতে দেইনি।
.
নীলা আর আমি পাশাপাশি শুয়েছি ঠিকই কিন্তু আমাদের মধ্যে দুরত্বটা প্রায় এক হাত মত। আমি লাইট অফ করে দিলাম। নীলা ঘুমিয়ে গেছে। কিন্তু আমার চোখে ঘুম নেই। আমি ডিম লাইটের আলোয় নীলাকে দেখছি। আমাদের বিয়ের পর থেকে, এতো কাছ থেকে আমি নীলাকে কখনো দেখিনি। ঘুমিয়ে থাকলে যে কাউকে এতো সুন্দর লাগে। এতো মায়াবী লাগে সেটা জানতাম না। আমার ইচ্ছা করছে এই ভাবে সারা রাত নীলাকে দেখি। ইচ্ছা করছে ওর কপালে আলতো করে একটা চুমু একে দিয়ে বলি ভালোবাসি। কিন্তু পারলাম না। আমিও শুয়ে আছি। সবে মাত্র দুচোখ বুজেছি। তন্দ্রা তন্দ্রা ভাব এসেছে আমার। তখনই মনে হলো, কে যেনো আমাকে জড়িয়ে ধরলো। জড়িয়ে ধরে আমার বুকে মাথা রাখলো। তাকিয়ে দেখি নীলা।
.
আমাকে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মত ঘুমিয়ে আছে আমার বুকে মাথা রেখে। আচ্ছা নীলা তো নিজের অজান্তে আমাকে জড়িয়ে ধরেছে। আমার বুকে মাথা রেখেছে। এখন যদি ও জেগে যায় আর দেখে ও আমার বুকে। তাহলে কি এভাবে থাকবে? নাকি দুরে সরে যাবে? কি করবে ও? এই সব হাবিজাবি ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম জানিনা। সকালে ঘুম ভাংলে আর নীলাকে দেখিনি। আমি উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে বাইরে গেলাম। নীলা সকালে আর আমার সামনে আসেনি। বিকালে আমার বন্ধু নাহিদের সাথে বাজারে গেলাম। ও আমাকে জোর করে নিয়ে গেলো। ওদের কালকে বিবাহ বার্ষিকী তাই ওর বউয়ের জন্য কিছু কেনাকাটা করবে। তখন আমারো মনে হলো, আচ্ছা আমারো তো বউ আছে। আমি তো ওকে কখনো কিছু দিতে পারিনি। তাহলে ওর জন্য একটা কিছু কিনলে কেমন হয়? একটা শাড়ি আমার খুব পছন্দ হলো। নীল শাড়ি। শাড়িটাতে নীলাকে খুব মানাবে। আমি নীলার জন্য শাড়িটা কিনলাম আর সাথে কিছু রেশমি চুড়ি। বাড়ি চলে আসলাম। শাড়ি আর চুড়ি খাটের উপর রেখে দিলাম। যেনো নীলা দেখতে পাই। আমার খুব ইচ্ছা করছিলো নীলার হাতে শাড়ি আর চুড়ি দিয়ে বলি, নীলা শাড়িটা পরো। শাড়িটাতে আমার বউকে কেমন লাগে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে। ইচ্ছা করছে চুড়ি গুলো ওর হাতে পরিয়ে দেই। কিন্তু আমি পারলাম না।
.
আচ্ছা আমি পারিনা কেনো? কিসের এতো সংকোচ আমার? নীলা তো আমার বউ। তবুও কেনো পারিনা আমি? ভালো লাগছে না কিছু। বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলাম। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে বাড়ি ফিরলাম একটু রাত করে। বাড়িতে এসে রুমে ঢুকে তো আমি অবাক। আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না নীলা আমার কিনে আনা শাড়িটা পরেছে। আবার চুড়ি গুলোও হাতে দিয়েছে। অসম্ভব রকমের সুন্দর লাগছে ওকে। নীলা আমার দিকে একবার তাকিয়ে মায়ের রুমে চলে গেলো।
.
এভাবেই চলছে নীলার সাথে আমার জীবন। আর আস্তে আস্তে নীলার ডেলিভারির ডেটও চলে আসতেছে।
.
আমি বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছি। এমন সময় মা ফোন দিছে। নীলার নাকি শরীর খারাপ। ওর ডেলিভারির পেইন উঠেছে। হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে ওকে। আমি তাড়াতাড়ি বাড়িতে চলে আসলাম। তারপর নীলাকে নিয়ে হাসপাতালে চলে গেলাম।
.
আমি হাসপাতালের বারান্দায় দাড়িয়ে আছি। চিন্তা হচ্ছে খুব। অনেক সময় পর একটা নার্স আসলো। বললো, রোগীর স্বামী কে? আমি এগিয়ে গেলাম। তারপর বললো, আপনার স্ত্রীর মেয়ে হয়েছে। মা মেয়ে দুজনই ভালো আছে। আমি এটা শুনে খুশিতে আত্তহারা হয়ে গেলাম। আমি দৌড়ে চলে গেলাম নীলার কেবিনে। যেয়ে দেখি নীলা শুয়ে আছে। আমি আস্তে আস্তে ওর কাছে গেলাম। পাশে মেয়েটাকে দেখতে পেলাম।
.
পরীর মত একটা মেয়ে হয়েছে। আমি মেয়েটাকে কোলে নিয়ে নীলার পাশে বসে বললাম,
– নীলা দেখো আমার মেয়েটা আমার মতই দেখতে হয়েছে না?
.
এটা শুনে নীলা কান্না করে দিলো। বুঝলাম না ওর কান্নার কারনটা কি। আমি কি ভুল কিছু বললাম?
.
এক সপ্তাহ পরে নীলাকে বাড়িতে নিয়ে আসলাম। নীলা এখন অনেকটা সুস্থ।
.
আমার মেয়ের বয়স এখন এক মাস। আজ বাজার থেকে এক গুচ্ছো লাল টকটকে গোলাপ কিনে আনছি নীলার জন্য। নীলা রুমে কি যেনো করছে। নীলা আজকেও সেই নীল শাড়িটা পরেছে। আমি ওর কাছে গিয়ে ওর হাতে ফুল দিয়ে বললাম,
– নীলা ভালোবাসি তোমাকে। অনেক বেশি ভালোবাসি।
.
নীলা আমাকে জড়িয়ে ধরলো। এই প্রথম আমি ওকে স্পর্স করলাম। নীলা কাঁদছে। কাঁদতে কাঁদতে আমাকে বললো,
– কখনো হারিয়ে যাবে না তো? এই ভাবে সারা জীবন আগলে রাখবে তোমার বুকে?
.
আমি নীলার চোখের পানি মুছে দিয়ে। কপালে একটা চুমু দিয়ে, শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললাম,
– কখনো হারিয়ে যাবো না। এই ভাবেই আমার বুকের মাঝে, সারা জীবন আগলে রাখবো আমার বউকে। আমার নীলাকে।
………………………………………………সমাপ্ত…………………………………………..