কলিংবেল বাজাতেই
-৩কেজি আটা,২কেজি চিনি,২ লিটার সয়াবিন তেল,পিঁয়াজ ২ কেজি,রসুন ১কেজি,আর দেশি মুরগি ২টা।
কি মনে থাকবে তো?মনে না থাকলে লিস্ট করে নাও।
এই মেয়ে পাগল না আমি পাগল, বুঝতেছি না।এই বাসার চিলেকোঠায় থাকি আমি।ভাড়া দিতে এসেছিলাম আর এই মেয়ে এসব বলে কি?
-আসলে আমি….
-কিরে শুভ্রা কি হইছে?(সালমা ভাবী)
– বাজার থেকে কি কি আনতে হবে বোঝায় দিচ্ছি।(শুভ্রা)
-মানে?কাকে বোঝায় দিচ্ছিস?শাকিল তো ছুটি নিয়ে গ্রামের বাড়ি গেছে।
সালমা ভাবী দরজায় এলেন, আমাকে দেখে বললেন।
– তুমি?কেমন আছো?
-জ্বি-ভাল।আপনি?
-ভাল। এ শুভ্রা,আমার বোন।ও আসলে তোমাকে শাকিল ভেবে….
-আপা,ইনি শাকিল নন?(শুভ্রা)
-না,আমাদের চিলিকোঠায় নতুন ভাড়াটিয়া,রাজু।(ভাবী)
-আমি আসলে সরি।আপনাকে শাকিল ভেবে,ঐ সব বলেছি।শাকিলকে দেখিনাই তো।
-ইট’স ওকে।আর ভাবী,,, ভাড়ার টাকাটা দিতে আসছিলাম।
-ভিতরে আসো,বসো,চা খাও।
-না এখন খাব না।আগে আপনাদের বাজার গুলো নিয়ে আসি।
-আরে না না তোমাকে অযথা কষ্ট করতে হবে না।
-ভাবী আজকে শুক্রবার, তারমধ্যে শাকিল নেই।আমার কোন সমস্যা হবে না।আমি বাজারে যাচ্ছি।
-আচ্ছা,,,,।
-এই রাজু….(ভাবী)
-জ্বি, বলেন।
-শুভ্রা ও বাজারে যেতে চায়…ওকে একটু সাথে নিয়ে যাবে?
-আচ্ছা,ঠিক আছে আসতে বলুন।
রিকশায় যাচ্ছি,আমার কেমন জানি অসস্থিকর লাগছে।এই প্রথম কোন মেয়ে মানুষ আর আমি এক রিকশায়।নিশি আমার ছোট্ট বেলার বন্ধু অথচ ওর সাথে ও কখনো পাশাপাশি সিটে বসিনি।অথচ আজ অপরিচিত একজনের সাথে রিকশায় যাচ্ছি।তাও আবার সুন্দরী।সত্যিই শুভ্রা অনেক সুন্দর।
-আপনি এভাবে বসেছেন কেন?(শুভ্রা)
-কিভাবে বসেছি?
-একটু অস্বাভাবিক,স্বাভাবিক হয়ে বসুন।
শুভ্রার কথা শুনে একটু স্বাভাবিক হয়ে বসলাম।
-আপনি কিসে পড়েন?(শুভ্রা)
-ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার আর আপনি?
-ফাস্ট ইয়ার।আমি এবারই প্রথম ঢাকায় আর প্রথম আপাদের এই বাসায় আসছি।
কাজের ছেলেটাকে দেখিনি তো,সেজন্য তখন মিসটেক হইছে।আমি খুবই লজ্জ্বিত।
-লজ্জ্বিত হওয়ার কি আছে?এটা তো খুবই সামান্য ব্যাপার।
বাজার করা শেষ।
-এই যে দাঁড়ান… চলেন চটপটি খাই।আমার খুব ভাল লাগে।(শুভ্রা)
-অবিরত চিৎকার করা এই মুরগি গুলো সাথে রেখে আপনার চটপটি খেতে ইচ্ছে হল?আজ নয়,,, অন্য একদিন।
-সেদিন আপনি সাথে আসবেন তো?একা চটপটি খেতে ভাল লাগে না।
-আচ্ছা,,,আসবো।
বাসায় গিয়ে দেখি ভাবী নাই।দরজায় তালা লাগানো।শুভ্রা ভাবীকে ফোন দিল।ভাবী বলল যে, শীতলকে স্কুল থেকে আনতে গিয়ে জ্যামে আটকা পড়েছে, আসতে দেরি হবে।
-বাহ্,,,আপনার ঘরটা তো সুন্দর করে সাজিয়েছেন।
-অল্প জিনিস,,,, অগোছালো হওয়ার সুযোগই নাই।সুন্দর তো লাগবেই।
-আপনি কতদিন হল,এখানে আছেন?
-প্রায় ৫ মাস।
-রান্না বান্না করে দেয় কে?
-একটা খালা রাখছি,ওনি রান্না করে দিয়ে যান।
-বেশ ভাল।আচ্ছা,আপনার প্রিয় খাবার কি?
-শীতকালে চটপটি,আর গরমে আইসক্রিম।
-ওয়াও… আমারো।
-নুডুলস খেতে ও খুব ভাল লাগে।
-তাই?
-এই শুভ্রা,,,,,আয় নিচে আয়।
ভাবীর ডাকে শুভ্রা চলে গেল।
বেশ মিষ্টি মেয়ে।
-আপনি কই ছিলেন সারাদিন।
আমি কতবার আসছি, জানেন?(শুভ্রা)
-কেন?
– অাপা ডেকেছিল।
-খুব কি জরুরি দরকার ছিল?
-জানিনা।
-শুধু কি আপা ডেকেছিল বলেই বারবার এসেছিলেন?
একটু তোতলাতে তোতলাতে শুভ্রা হ্যা বলেই চলে গেল।
-আসসালামু আলাইকুম, ভাবী।কেমন আছেন?
-আলহামদুলিল্লাহ,ভাল।তুমি?
-জ্বি,ভাল।
-যদি কিছু মনে না করো,একটা কথা বলতাম।
-বলেন….
-তুমি জানোই তো,তোমার ভাই,খুবই ব্যস্ত মানুষ।
শুভ্রা এসে থেকে ঘরে বসে আছে।তুমি যদি ওকে বাহিরে থেকে ঘুরে নিয়ে আসতে….
-আচ্ছা,ঠিক আছে।ভাবী আজ উঠি?
-আচ্ছা।
অবিরবত দরজা ধাক্কাতেই আছে।মনে হয় দুধওয়ালা।কতবার বলেছি,দুধের বোতল দরজার পাশে রেখেই চলে যেতে কিন্তু তারপরেও দরজা ধাক্বানো…!আজকে দুধওয়ালার খবর আছে বলে দরজা খুলতেই দেখি,,,শুভ্রা।
-আরে আপনি?এত সকালে?
-আপনি কি এখনো ঘুমুচ্ছোছিলেন?
-না মানে হ্যাঁ….
-ঘড়িতে কত বাজে দেখেছেন?
-দেখিনি,কত বাজে?
-১১টা।ভিতরে আসতে বলবেন না?
-কেন নয়…!আসুন,,,,প্লিজ।বলুন কি খাবেন?
-আপনার প্রিয় যেকোন একটি খাবার….
-আমার প্রিয় খাবার যদি আপনার ভাল না লাগে?
-আমার খারাপ লাগতে পারে এমন খাবার আপনার প্রিয় হতে পারে বলে আমার মনে হয় না।
-ঠিক আছে…তুমি বসো।আমি জাস্ট ১৫ মিনিটের মধ্যে নিয়ে আসতেছি।
নুডুলস বানিয়ে নিয়ে আসলাম।
শুভ্রা আর আমি খাচ্ছি।
আমার কাছে খারাপ লাগছে না,জানিনা শুভ্রার কাছে কেমন লাগছে।
-কেমন হইছে?চলবে?
-সত্যিই, অসাধারণ।
-ধন্যবাদ।
-আপনি কবিতা লেখেন,জানতাম না তো।
-কই না তো….
-ডায়েরীতে দেখলাম যে,,,
-ওহ,,,ঐসব আমার লেখা না।বিভিন্ন কবিতার অংশ।যা আমার খুব ভাল লাগে,সেজন্য টুকে টুকে রাখছি।আমি লিখতে পারি না।
-তাই….?
-জ্বি।
-বিকালে কি করছেন?
-ঘুরতে যাব একজনকে নিয়ে…
-কাকে?
-আপনাকে..
-আমাকে?সত্যি???
-জ্বি, গতকালকে ভাবী বলেছিল।
-ওহ তারমানে ভাবী বলেছিল বলে নিয়ে যাবেন,আর ভাবী না বললে নিয়ে যাবেন না।
-বিষয়টা ঠিক সেরকম নয়।আপনি বললে ও নিয়ে যেতাম।আমি নিজে থেকে ও আর বলতে পারিনা।
-আচ্ছা,,,কোথায় যাব আমরা?
-আগে রাস্তায় বের হই….
সেদিন বিকালে শুভ্রাকে নিয়ে অনেক জায়গায় ঘুরলাম।
ওর সাথে কাটানো প্রতিটা মুহূর্তকে খুব মিস করছিলাম।
তাকে বলতে ইচ্ছে হচ্ছিল যে, আমি তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি।ভালবাসি তোমাকে।কিন্তু সাহস হচ্ছিলো না।
রাত প্রায় ১২টা বেজে গেছিল।ঘুম আসছিল না,ছাদে পায়চারি করছি…আকাশের অবস্থা ভাল না।যেকোন সময় অঝরে বৃষ্টি নামতে পারে।
-কি ব্যাপার আপনি এখনো ঘুমান নি?
-না মানে ঘুম আসছিল না, তাই একটু একটু হাটাহাটি করছি।কিন্তু আপনি এত রাতে ছাদে…?
-আমার ও ঘুম আসছিল না।তাই আর কি….
-যেকোন সময় বৃষ্টি আসতে পারে, আপনি নিচে যান।বৃষ্টিতে ভিজলে অসুস্থ হয়ে যাবেন।
-বৃষ্টি আসলে তো ভালই হয়।রাতের আকাশের বৃষ্টি দেখিনি কখনো তাও আবার মধ্যরাতে।
দু-এক ফোঁটায় বৃষ্টি পড়ছিল।শুভ্রাকে আবার বললাম কিন্তু গেল না।
-জানেন,প্রিয় মানুষের সাথে বৃষ্টিতে ভেজার মজায় আলাদা।
-কিন্তু আফসোস, আপনার প্রিয় মানুষ এখানে নেই।
-কে বলেছে নেই,এইতো আমার সামনে……..
শুভ্রার কথা শেষ না হতেই খুব জোরে বিদ্যুৎ চমকাল।শুভ্রা ভয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরল।অঝরে বৃষ্টি পড়তেছে।
শুভ্রা বলতেছে….
প্লিজ,কখনো আমাকে ছেঁড়ে দিয়ো না।আজীবন এভাবে শক্ত করে ধরে রেখ।
Love u,love u so much.
আমি তো পুরাই হতভম্ব।কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না।
-ঐ এবার তুমি বল?
-আমি কি বলবো?
-ভালবাসি।
-পারব না।
-মানে কি?তুমি আমাকে ভালবাস না?তাহলে আমি কি চলে যাব?
শুভ্রা চলে যাওয়ার মিছে চেষ্ঠা করল।হাতটা টেনে ধরে বুকে টেনে নিলাম।
আর বললাম-আমিও তোমাকে ভালবাসি।