রুপালীর কথা

রুপালীর কথা

আমি বাসায় আসলাম। এসেই দেখি রুপালী খুব রাগ করে বসে আছে। আমি ভাবলাম রুপালী হয়তো ঘুমিয়ে থাকবে। কারণ রুপালী ঘুমিয়ে থাকতে খুব পছন্দ করে। অনেক সময় দেখা যায় রান্নাঘরে রান্না করতে গিয়ে ঝিমাচ্ছে। এইটা রুপালীর খুব বাজে অভ্যাস। কিন্তু রুপালী খুব রাগি মেয়ে। সব কিছুতেই আমার উপর দিয়ে ঝড় তুলে। তাতে আমি কিছু মনে করি না।
আজ যখন এসে দেখি রুপালী বসে আছে। তখন ভাবলাম টিভির রুমে গিয়ে কিছু সময় টিভি দেখি। কিন্তু তা আর হলো কোথায়।
” তুমি আমাকে আমার বাবার বাসায় দিয়ে আসো। আমার এখানে থাকতে ভালো লাগছে না। সারাদিন একা বাসায় শুধু আমি একা থাকি।” এ কথা বলে রুপালী আবার চলে যেতে লাগলো। আমি তো খুবই অবাক হলাম। রুপালী কে এই মাত্র দেখলাম বসে আছে। আবার এই মাত্র আমার কাছে এসে আবার চলে যেতে লাগলো। এই মেয়ে কি রোবট নাকি। সব কিছুতেই প্রথম হয়।
আমি একটু মজা করার জন্য বললাম ” বাসার মধ্যে যদি একটা পুতুল থাকতো তাইলে পুতুলের সাথে বসে বসে টিভি দেখতাম।”
রুপালীর কোনো পাত্তা নাই। কিন্তু রান্নাঘরে ঠাস ঠাস শব্দ হচ্ছে। আমি বুঝতে পাড়ছি। রান্নাঘরে কি হতে চলেছে। বাসনের উপর দিয়ে ঝড় যাচ্ছে। টিভি দেখতে লাগলাম হঠাৎ দেখি একটা ছেলে একটা মেয়ের পিছন পিছন যাচ্ছে। আমি একটু মনযোগী হলাম। দৃশ্য টা দেখার জন্য। তার আগেই রুপালী এসে
বলে” পিকনিক করতে যাব। এ ফ্ল্যাটের সবাই পিকনিক করতে যাবে। আমিও যাব।”
আমি রুপালীর কথার কোনো পাত্তা দিলাম না। দেখতেই লাগলাম। ছেলেটি দেখি গালে হাত দিয়ে আবার পিছনের দিকে চলে আসলো। আমি সাথে সাথে রুপালীর দিকে তাকালাম। আরে আমি রুপালীর দিকে থাকিয়েছি বলে ভাববেন না রুপালী কে আমি ভয় পাই। রুপালী আমাকে একটু বেশি ভালবাসে বলে একটু বেশি আবদার করে। আর মেয়েটা তো বেশি রাগি।
আমি এবার বসা থেকে সোজা হতে হতে বললাম” ওদের শখ বেশি। এতো শখ থাকা ভালো না।”
রুপালীর কন্ঠটা পালটে যায়। ” ও। আমার তো কোনো শখ নাই।”
আমি আর নিজে কে ধরে রাখতে পারলাম না। ” ঠিক আছে নিয়ে যাব।”
এবার রুপালীর মুখে হাসি ফুঠে উঠে।
” সত্যি বলছ নিয়ে যাবে?”
আমি হাঁটতে হাঁটতে বললাম “আরে বাবা বললাম তো নিয়ে যাব।” রুপালী একটা দৌড় দিল। কিন্তু দৌড় দিয়ে কোথায় গেল। আমি বুঝতে পারি নি। আমি পানি খাওয়ার জন্য রান্নাঘরে গেলাম। রান্নাঘরে যাওয়ার পর দেখলাম সব সবজি সারারান্না ঘরে এলোমেলো ভাবে পড়ে আছে। তার মানে আজ রুপালীর রাগের পরিমাণ ১০০ এর উপরে ছিল। সে রাগ আমার উপর না দেখিয়ে সবজির উপরে দেখাল।
আমি শার্টটা খুলে আলমারির মধ্যে রাখতে যাব ঠিক তখনি রুপালী এসে আমাকে বলে ” আমার একটা শাড়ী লাগবে।”
আমি রুপালীর দিকে তাকালাম। একটু ভালো করে রুপালী কে দেখতে লাগলাম।
>> তা আর নতুন কি। (হিমু)
>> তুমি কি বলতে যাচ্ছ? ( রুপালী)
.
এ কথা বলে রুপালী অভিমান করে চলে যেতে লাগল। আমি রুপালী কে খুশি করার জন্য বললাম ” ৫০০০ হাজার হলে চলবে তো ?”
রুপালীর মুখে মুহূর্তে হাসি ফুঠে উঠলো।
আমার কাছে এসে আমার চুলটা নাড়িয়ে নাড়িয়ে বলে “এখন দেও।”
>> এখন না দিলে হয় না? (হিমু)
>> এখনি দেও। আমি মার্কেটে যাব । পরে তো অনেক রাত হয়ে যাবে।
>> তারা পিকনিকে যাবে কোনদিন?
>> কাল যাবে। সাথে তুমিও যাবে। তোমার জন্য কিছু কিনবে না?
>> আমি মেয়েদের সাথে গিয়ে কি করব? আমি কি কিনবো আবার?
>> ও মা। শুধু মেয়েরা কোথায়। সবাই তাদের স্বামী নিয়ে যাবে।
>> জন্টু কি যাবে?
>> জন্টু ভাই না গেলে কি মজা হবে?
.
আমি এবার বুঝে গেলাম। সব নষ্টর মূল এই জন্টু। জন্টু কে আমি দু’চোখে দেখতে পারি না। ফাজিল একটা লোক। সব কিছুতে মজা করে। এতো উদাস মানুষ আমি কোনো দিন দেখে নি।
“কি হলো এতো চিন্তা করছ কি?”
এ কথা বলে বিছানা টা ঠিক করতে লাগলো।
>> আচ্ছা কোথায় যাবে?
>> কক্সবাজার।
>> ও। এক কাজ করো। ইউটিউব থেকে কক্সবাজারের সব কিছু টাউনলোড কিরে পেলো । তারপর বাসায় বসে দেখতে থাকো।
.
রুপালী কোমরে হাত দিয়ে আমার দিকে চেয়ে বলে ” তুমি একটা অসহ্য লোক হচ্ছ দিন দিন। তোমাকে নিয়ে আমি সারাজীবন থাকবো কিভাবে? ”
আমি জানি রুপালী এ কথা মন থেকে বলে নি। এর আগেও অনেকবার এ কথা বলেছে । তারপর তার বাবার বাসায় চলে গিয়ে আবার নিজে নিজে আমার কাছে চলে এসেছে। আমি একটু মজা করার জন্য বললাম ” তুমি গেলে সমস্যা নাই। একটা পুতুল কিনে আনবো। তারপর তার সাথে সংসার করবো।”
” আমি চলে গেলে তো তুমি খুশি ওই হবে। তুমি তো চাও আমি চলে যাই।” এ কথা বলে চোখ থেকে পানি মুছতে লাগলো। আমি ড্যাবড্যাব করে থাকিয়ে রইলাম। রুপালীর চোখের পানি নাক দিয়ে পড়ছে। হয়তো রুপালী আমার কথায় বেশি কষ্ট পেয়েছে। কিন্তু আমি তো জানি কষ্ট দেওয়ার জন্য আমি এ কথা গুলো বলে নি।
মজা করার জন্য বললাম।
আমি রুপালীর কাছে গিয়ে গালে হাত দিয়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে বললাম ” তোমার যা খুশি তা করো।”
রুপালী এবার মন খুলে একটা হাসি দিল।
সেই হাসিটা আমিও একদিন দিয়েছিলাম যখন বাংলাদেশ বনাম সাউথ আফ্রিকার খেলা ছিল। কারেন্ট ছিল না। কিন্তু হঠাৎ কারেন্ট আসতেই আমি হাসি টা দিয়েছিলাম।
রুপালী কে ৫০০০ হাজার টাকা দিলাম। রুপালী নিজের ইচ্ছা মতো একটা শাড়ী যেন কিনে আনতে পারে । ৫০০০ টাকার শাড়ী আবার কি রকম হবে বুঝতেই পারছেন। তবুও রুপালী কে দিলাম। একটা চাকরী করি। কোনো মতে আমাদের দু’জনের সংসার টা চলে যায়।
রাত বাজে ১০ টা। আমি একটা গল্পের বই পড়ছিলাম। রুপালী তো শাড়ী কিনতে মার্কেটে গেছে। আমি গল্পের বই পড়ছি আর কফি খাচ্ছি। কিছু সময় পর দেখতে পেলাম রুপালী আমাকে দরজা খুলার জন্য ডাকছে। আমি দরজা খুলতেই আমাকে তার হাতের ব্যাগটা দিয়ে দেয়। আমি ব্যাগ নিয়ে এসে দেখি আমার জন্য একটা পাঞ্জাবী আর তার জন্য একটা শাড়ী কিনল। আমি বুঝতে পারছি শাড়ী টা বেশি দাম দিয়ে কিনে আনে নি। দাম দিয়ে কিনে আনলে আমার জন্য আর ১০০০ – ১৫০০০ দিয়ে পাঞ্জাবী কিনে আনতে পারত না।
যাই হোক আমি অনেক খুশি হলাম। আমাকে ভালবাসা দেখিয়ে যে আমার জন্য ছোট একটা গিপ্ট কিনে আনলো।
রুপালী দেখি ফ্রেস হয়ে এসে বলে ” আমার অনেক ক্লান্তি লাগছে আমি ঘুমিয়ে পড়ি। তুমিও ঘুমাতে আসো।”
আমিও কোনো দিকে নজর না দিয়ে ঘুমাতে চলে গেলাম।
.
আজ আমরা কক্সবাজার যাচ্ছি। একটা বাসে আমরা ৪০ জন্য যাত্রি যাচ্ছি। সবাই তাদের পরিবার নিয়ে যাচ্ছে। আমি আর রুপালী জাপান ৩-৪ সীটে উঠেছি। আমাদের বামপাশে উঠেছে জন্টুর পরিবার। জন্টু আর তার স্ত্রী কি যেন বলছে। আমি বুঝতে পারছি। জন্টুর একটা সমস্যা হলো জন্টু বেশি জার্নি করতে পারে না। আমি রুপালী কে বললাম ” তুমি এই পাশে আসো।”
রুপালী বলল ” আমি জানালার ধারে বসতে পারব না।”
আমি রাগ দেখিয়ে বলি ” তাইলে জন্টুর জালাতন সহ্য করতে পারবে?”
জন্টু দেখি রুপালীর দিকে থাকিয়ে হাসি মুখে বলে ” ভাবী হিমু ভাইয়ের কথা শুনবেন না। আপনাকে জানালার ধারে বসিয়ে অন্য দিকে মজা করবেন।” আমার তখন ইচ্ছা হলো জন্টু কে গাড়ী থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেই। শালা বলে কি?
আবার রুপালীর কানের কাছে এসে বলে। সাহস কত দেখছেন?
জন্টুর সাথে জোর দিলেন বন্টুর স্ত্রী। বল্টু মানুষটা খুব ভালো। কিন্তু তার স্ত্রী একটা রাক্ষুসী। সারাদিন শুধু সাজসজ্জা করতে ভালবাসে। এতো সাজার কি আছে?
রাত শেষ হলেই তো হাড়ি-পাতিল পরিষ্কার করতে হয়। বল্টুর স্ত্রী রুপালী কে শুনিয়ে শুনিয়ে বলে ” ভাবী দেখেন তো আমাকে কেমন লাগছে?”
রুপালী কিছু না বলে যেখানে বসেছিল ঠিক সেই জায়গায় ওই একটু আরাম করে বসলো। আমার দিকে একবার তাকাল। আমি কিছু আর বললাম না । যখন জন্টু কে অসহ্য লাগবে। তখন নিজে নিজে ওই জানালার ধার থেকে আমাকে আসতে বলবে। রুপালী দেখি মাথা টা পিছনের দিকে নিল। মাথা টা পিছনের দিকে নিয়ে বন্টুর স্ত্রী কে বলে ” ভাবি চোখে কাজল হলে আপনাকে অনেক বেবি লাগতো।”
আমি আর নিজের হাসি টা আটকাতে পারলাম না । হাহাহাহাহাহা।
সবাই আমার দিকে চেয়ে আছে। রুপালী আমার দিকে চেয়ে মিনমিন করে বলে ” হচ্ছে টা কি?”
আমি কিছু সময় চুপচাপ থাকলাম। একটা জিনিস আমি লক্ষ্য করলাম। বল্টুর স্ত্রী মনে হয় লজ্জা পেয়েছে কিছু বলছে না। কিছু বললে তো আমি শুনতে পেতাম। কিন্তু আমার সম্পূর্ণ ধারণা ভুল হলো। বন্টুর স্ত্রী চোখে কাজল দিয়ে এসে বলে ” ভাবি এখন আমাকে কেমন লাগছে?”
রুপালী আঙুল দিয়ে হাসি মুখে বলল” ভাবি অনেক কিউট লাগছে তোমাকে।”
বল্টুর স্ত্রী তো লজ্জায় আর মাথা তুলল না। মাথা নিচু করে তার সীটে গিয়ে বসে পড়ল। সবাই অনেক মজার মজার কথা বলল। সারা বাস হাসি-তামাশায় এগিয়ে যেতে লাগলো। এক সময় সবাই নিরব হয়ে যায়। সবার মনে হয় খুব ঘুম পাচ্ছে।
আমিও ঘুমাতে চেয়েছিলাম তার আর হলো কোথায়? বললাম না জন্টুর জালাতন রুপালী সহ্য করতে পারবে না। জন্টু তো আরামে ঘুমাচ্ছে সাথে আরেকজনের ঘুম টা নষ্ট করছে। জন্টুর নাক ডাকটা একটু বেশি। রুপালীর খুব অসহ্য লাগছে। রুপালী জন্টুর দিকে বিরক্তিভাব নিয়ে আমাকে বলে ” তুমি এ দিকে আসো।” আমি কিছু বললাম না।
রুপালী কে আমার সীটে বসিয়ে আমি তার সীটে বসে পড়ি।
আমার মাথায় এক সময় একটা শয়তানী বুদ্ধি আসে। দেখি পিছনের সীটের লস্কর ভাই কি করছেন। আমি এই সুযোগে জন্টুর মাথায় একটা চড় মারি। আবার ঘুমানোর ভাণ ধরে চোখ মুঝে ফেলি। জন্টু চোখ মেলে চারদিকে থাকাল। কাউকে দেখতে পায় নি। সবাই ঘুমিয়ে আছে। শুধু দেখতে পায় লস্কর ভাই কি করছে। এমন সময় জন্টু বলে “লস্কর ভাই আপনার স্ত্রী থাকতে আপনি কেন আমার মাথায় থাপ্পড় দিলেন ?”
লস্কর ভাই আমাকে দেখে নি আমি যে জন্টুর মাথায় থাপ্পড় দিয়েছিলাম।
তাই লস্কর ভাই একটু বিরক্তিভাব নিয়ে বলে ” আরে বেডা আপনার নাক ডাকার জন্য গাড়িতে মশা পর্যন্ত থাকছে না। আর মানুষ থাকবে কিভাবে?”
জন্টু রাগে কটমট করে বলে ” আমি আমার নাক ডাকছি। তাতে আপনার সমস্যা কোথায়?”
লস্কর ভাই কিছু বললেন না। লস্কর ভাই খুব ভালো একজন মানুষ। আমার খুব পছন্দের মানুষ। আমি অনেক কথা উনার সাথে শেয়ার করি। এইতো কিছু দিন আগে রুপালী আমার উপর অভিমান করে আমার সাথে তিন দিন কথা বলে নি। আমি অনেক চেষ্টা করলাম কথা বলতে কিন্তু রুপালী কথা বলে নি। আমি লস্কর ভাই কে সব কিছু খুলে বললাম। তিনি আমাকে যুক্তি দিলেন-
“মেয়েরা যখন অভিমান করে তখন তাদের রাগ ভাঙানো কাদের দায়িত্ব?”
আমি বললাম ” কার আবার। আমাদের।” তিনি তখন মুচকি হাসি দিয়ে বললেন ” আর যখন স্বামীরা অভিমান করে তখন কে অভিমান ভাঙাবে?”
আমি কিছু বললাম না। নিরবে দাঁড়িয়ে থাকলাম। লস্কর ভাই পানি খাওয়ার জন্য ভিতরে গেলেন। পানি খেয়ে এসে বলেন। আমি পানি খাওয়ার জন্য ভিতরে গেলাম। আর এই পানিও আমি অভিমান করে দু’দিন খাই নি। আমি একটু মনযোগী হয়ে তাকে বললাম “কেন?”
তিনি আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে থাকিয়ে থেকে বললেন ” আরে বোকা। আমি যেহেতু কিছু খাই নি তাইলে আমার শরীর তো কিছু টা অসুস্থ হবে। আর সেটা আমার বউ দেখতে পাবে।”
আমি না হেসে পারলাম না। লস্কর ভাই কে কিছু না বলে সেখান থেকে চলে আসলাম। এখন আমি বুঝে গেলাম। আমাকে এখন কি করতে হবে। আমি তিনদিন পানি পর্যন্ত খাই নি। পরে অসুস্থ হয়ে পড়লাম। রুপালী অভিমান করে আর থাকতে পারে নি। পরে আমার সেবাযত্ন করতে করতে সে অনেক দিন না ঘুমিয়ে থেকে আমার পাশে বসে আমার মাথা বুলিয়ে দিত। আমার অনেক ভালো লাগতো।
.
রুপালী দেখি আমার এক হাতে ধরে ঘুমিয়ে আছে। একদম নিশ্চুপ। বাস তার আপন গতিতে ছুঁটছে। সবার দিকে একবার তাকালাম। সবাই ঘুমিয়ে আছে। আমিও ঘুমিয়ে থাকলাম। একা একা আর ভালো লাগছে না।
যখন ঘুম ভাঙল তখন দেখি আমরা পৌঁছে গেছি। সবাই বাস থেকে নেমে হাঁটতে থাকলো। আমি আর রুপালী বাস থেকে নেমে হাঁটতে লাগলাম।
জন্টুর স্ত্রী বলে” হিমু ভাই বউকে কি নিজের সাথে বেধে রেখেছেন?”
আমি উদাস মনে বললাম ” গলার মধ্যে বেধে রাখব। দরকার হলে বউ কে কফি মানিয়ে খাব। আপনার কোনো সমস্যা?”
জন্টুর বউ আর কিছু বলল না। বুঝে গেছে। পরে আমার মুখ থেকে কি বের হবে। আমি রুপালীর দিকে তাকালাম। দেখি রুপালী মুচকি মুচকি হাসছে।
সবাই হেঁটে হেঁটে নিজেদের রুমে যেতে লাগলো। আমি আর রুপালীও আমাদের ভাড়া করা রুমে গেলাম। রুমে যাওয়ার পর একটু আরামবোধ করছি। দেখি রুপালী তার শরীর থেকে গয়না খুলছে। আমি বুঝতে পারলাম না। মেয়েরা এতো গয়না পড়ে হাঁটাহাঁটি করে কিভাবে?
আমি দেয়ালের দিকে তাকালাম। দেখি একটা বাঘ একটা একটা হরিণ কে দৌঁড়াচ্ছে। আমার অনেক কষ্ট হলো।
ইশ! আমি যদি হরিণ কে রক্ষা করতে পারতাম। এসব ভাবছি। হঠাৎ রুপালী এসে আমাকে বলে-
>> আমার জন্য আইসক্রিম নিয়ে আসো।
>> এখন আইসক্রিম?
>> আমি আইসক্রিম খাব। প্লিজ আমার জন্য নিয়ে আসো।
.
আমি একটু নিচের দিকে তাকালাম। একটা কথা স্মরণ করার জন্য চেষ্টা করলাম। কিন্তু কথা টা কি কিছুতেই স্মরণ হচ্ছে না। হ্যা। মনে পড়েছে।
সব সময় বউদের কথা রাখতে নেই। নইলে বউ এমন সময় এমন কথা বলবে টয়লেটে না গিয়ে বউয়ের কথা রাখতে হবে। বুঝলেন।
আমি দেখতে পেলাম আমাদের রুমে টিভি আছে। আমি টিভি ছাড়তে ছাড়তে বললাম ” রুপালী আমার জন্য পানি নিয়ে আসো।”
>> আমি তোমাকে কি বললাম তোমার কানে যায় নি?
>> গেছে তো। কিন্তু এখন আনতে পারব না। এখন একটু টিভি দেখব। তারপর তুমি রান্না করবে। আমি পেট বড়ে খাব।
>> হ্যা। খাবেই তো। খেতে খেতে তো পেটের ভুঁড়ি টা অনেক মোটা করে ফেলছ।
>> ইশ! বিরক্ত কর নাতো। দেখতে পাচ্ছ না গোপাল ভাড় দিচ্ছে। একটু দেখতে দাও।
>> তুমি কি বুঝতে পারছ তুমি নিজে গোপাল হয়ে যাচ্চ?
>> হলে তো ভালোই হবে। গোপালের মতো মাথা টা আমার হবে।
.
রুপালী রাগে চটপট করতে করতে হনহন করে চলে যেতে লাগলো। আমি একটু হাসলাম। যে অবশেষে বউ আমার কাছে পরাজিত হলো। দেখি রুপালী পানি নিয়ে আমার কাছে আসলো।
একহাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে” এই নেও পানি।”
আমি হাত বাড়িয়ে তার কাছ থেকে পানি আনলাম। পানি নিয়ে এসে সব কিছু পানি খেয়ে ফেললাম। আমি রুপালী কে বললাম “এবার একটা কাজ করবে?
আমার ঘাড় টা টিপ দিয়ে দিতে পারবে?
ঘাড় টা ব্যথা করছে।”
>> তা পারব না কেন? তুমি তো আমার কথা টা ওই শুনলে না।
>> কোন কথা টা?
>> ভুলে গেলে। ও ভুলে যাবেই তো।
.
আমি এবার মাথা টা সোজা নাড়িয়ে নাড়িয়ে বললাম ” একটা কাজ করি। তুমি আমার ঘাড় টা টিপ দিয়ে দিতে হবে না। আর আমিও তোমার জন্য আইসক্রিম নিয়ে আনতে পারব না।”
“ও এখন আমি বুঝতে পারছি। সারাদিন কেন গোপাল ভাড় দেখো।” এ কথা বলে আমার দিকে চেয়ে রইল।
আমি একটু হাসলাম। যে গোপাল ভাড়ের বুদ্ধি কিছু টা আমার মাথায় এসেছে।
রুপালী একটু সময় দাঁড়িয়ে থেকে চলে গেল। আমার আর একা রুমে বসে থাকতে ভালো লাগছে না। তাই কিছু টা হাঁটাহাঁটি করার জন্য বাহিরে গেলাম। বাহিরে যেতেই আমি দেখতে পেলাম বল্টুর বউ মেকাপ করতে আয়নার সামনে বসে আছে। বাহির থেকে বল্টুর বউয়ের রুম টা একদম পরিষ্কার ভাবে দেখা যায়। তাই দেখতে আমার এতো টা সমস্যা হয় নি। জন্টু কেও দেখতে পেলাম একটা ব্যাগ নিয়ে তার রুমে ঢুকছে। আমি কিছু বললাম না। যদি কিছু বলি তাইলে কি হয়তে কি বলবে আমার রাগ উঠে যাবে। একা একা কিছু সময় হেঁটে রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লাম।
রুপালী দেখি রাগে সাপের মতো করে ফুঁসছে। আমি মিনমিন করে বললাম ” তুমি কি সাপের অভিনয় করছ?”
রুপালী এক লাফে আমার কাছে এসে আমার নাকে ধরে বলে “মশা তো মশারি কিনে আনো।”
আমিও সাথে সাথে একশো গালি দিলাম হোটেলের মালিক কে । যে বেডা এতো কষ্ট করে সিলেট থেকে আসলাম এখানে কিছু দিন ঘুরাঘুরি করার জন্য। ঘুরাঘুরি করব দূরের কথা বউ এর আবদার ওই পূরণ করতে পাড়ছি না।
আমি একটু চিন্তা করলাম যে কি করা যায়। এখন তো মশারি কিনে আনতে পারব না। তো এক কাজ করলে কি হয় রুপালী কে বললাম “ফ্যানের স্পিড টা বাড়িয়ে দেও। তে মশা আমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে পারবে না।”
রুপালী কোমরে হাত দিয়ে আমাকে বলতে লাগলো-
>> কেন পারবে না?
>> কারণ টা হলো মশার শক্তি বেশি না কারেন্টের শক্তি বেশি?
>> কারেন্টের শক্তি বেশি।
>> তাইলে বোকা মেয়ে। অবশ্যই কারেন্ট ওই জয়ী হবে।
>> তোমার এমন অদ্ভুত কথা শুনলে যে কেউ লুঙী ডেন্স দিবে।
>> তুমি তো শুনতে পারছ। তুমি দেও।
>> আমার বয়ে গেছে।
.
রুপালী আমার উপর বিরক্ত হয়ে শুয়ে পড়ল। আমিও কিছু বুঝতে পারলাম না। আমার কি হয়েছে। এমন অদ্ভুত অদ্ভুত কথা বলে। কেন রুপালী কে রাগিয়ে দেই। থাক এসব কথা বাদ দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।
.
আমি আর রুপালী একটু ঘুরাঘুরি করার জন্য রাস্তায় আসলাম। কক্সবাজারের পরিবেশ টা অনেক সুন্দর। দেখতে কেমন কেমন মায়া মায়া ভাব। আসল কথা হলো মানুষ নিজে ওই এই পরিবেশ টা কে সুন্দর করে ফেলছে। রুপালী আমার দিকে থাকাল। আমার চুলটা হাত দিয়ে নাড়িয়ে দিয়ে একটা দৌড় দিল। আমি বুঝতে পাড়ছি। রুপালী আমার সাথে কিছু সময় স্মৃতি করে রাখতে চায়। আমি এসব পছন্দ করি না। তবুও রুপালীর মন টা আনন্দে বড়ে দেওয়ার জন্য একটা দৌড় দিলাম। রুপালীর পিছন পিছন দৌড় দিলাম। রুপালী তার সমস্ত শক্তি দিয়ে দৌড় দিতে লাগলো। আর খিলখিল করে হাসতে লাগলো। কিন্তু বোকা মেয়ে কিছুতেই বুঝতে পাড়ছে না। যে আমি যদি আমার দৌড়ের গতিটা কিছু মাত্র বাড়িয়ে দেই তাইলে রুপালীর কাছ থেকে ১০ হাত দূরে চলে যাব। কিন্তু তাতে খেলার মজাটাই থাকবে না। তাই আমি তা করলাম না।
এক সময় রুপালীকে ধরে ফেললাম। রুপালী আমার কাছ থেকে নিজে কে ছুটাইতে আমাকে খেতখুতি দিতে লাগলো। আমার অনেক হাসি পাচ্ছে। তাই রুপালী কে ছেড়ে দিলাম।
রুপালী আবার দৌড় দিতে লাগল। কিন্তু বেশি দূর যেতে পারে নি। বসে পড়ল। আমি কাছে যেতেই আমাকে বলে ” আমাকে কোলে করে ছায়ায় নিয়ে যাও।”
এমন ভাবে বলল যে আমি তার কথা ফেলতে পারি নি। আমি রুপালী কে আমার কোলে তুলে ছায়ায় নিয়ে যেতে লাগলাম। এক ভালো লাগা কাজ করছে আমার মাঝে। খুব ভালবাসি রুপালী কে। কিন্তু মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে একটু কষ্ট দেই। যেন তার মায়াবড়া মুখটার মধ্যে একটু মনমরা চেহারা দেখতে পাই।
আসলে ভালবাসার মানুষকে জ্বালাতে খুব ভালো লাগে। সে ভালো লাগা টা কাজে লাগে যখন ভালবাসার মানুষ বুঝতে পারে। সমস্ত ধৈর্য্য দিয়ে সে জালাতন সহ্য করে।
হ্যা। রুপালী তাই করে। কারণ রুপালী জানে আমি শুধু তার ভালবাসার মানুষ।
রুপালীর সাথে আমি যদি অভিমান না করি। তার সাথে ঝগড়া না করি। তাইলে কার সাথে এসব করব। তাইতো খুব ভালবাসে রুপালী আমাকে।
রুপালীর ভালবাসার মর্যাদা দিতে যা যা করা লাগে আমি তাই করব। রুপালী কে কোলে করে এক নির্জন ছায়ায় বসলাম।
” ও গো অনেক কষ্ট হচ্ছে আমার।” এ কথা বলে রুপালী হাঁপাতে লাগলো।”
আমি একটা মুচকি হাসি দিয়ে রুপালী কে আমার কোলে মাথা রাখতে দিলাম।
রুপালীর মাথা বুলিয়ে দিতে লাগলাম।
এখানে কিছু সময় থেকে চলে আসতে লাগলাম। কিন্তু হঠাৎ রুপালী চোখ টা খুলে আমার দিকে থাকায়। আমাকে রুপালী বলে-
>> আমাকে এতো ভালবাসো কেন?
>> এইটা এক টা কথা হলো।
>> বলো না?
>> কারণ তুমি আমার ডানাকাটা প্রজাপতি। তুমি আমার চাঁদনি রাতের জোনাকিপোকা।
>> এতো কিছু?
>> হ্যা রে পাগলী।
>> আচ্ছা আমি যদি মরে যাই তুমি কি করবে?
.
আমি কিছু বললাম না। এখান থেকে উঠে চলে যেতে লাগলাম। সব কিছু অন্ধকার হয়ে গেছে। খুব অভিমান করলাম রুপালী উপর। কেন সে এ কথা বলল।
রুপালী বুঝতে পাড়ছে। এ কথা টা তার বলা ঠিক হয় নি। আমার কাছে এসে আমাকে দুঃখিত বলল। আমি কিছু বললাম না। আকাশের দিকে থাকিয়ে থাকলাম। জানি এই পৃথিবী টা খুব মায়াময়। মানুষ এই পৃথিবীকে খুব ভালবাসে। কিন্তু পৃথিবী টা মানুষ কে মাঝে মাঝে কষ্ট দেয়। আবার ভালবাসা দেয়। হ্যা। পৃথিবী টা আমাকে ভালবাসা দিয়েছে। আবার বুকভরা কষ্টও দিয়েছে।
রুপালী খুব করুণা হয়ে বলে “বললাম তো দুঃখিত।”
আমি রুপালী কে বললাম ” কোনো দিন একা করে চলে যাবে নাতো?
রুপালী কান্না করতে থাকলো। তার তো বলার ভাষা নাই। সে কি বলবে?
একদিন সবাই কে চলে যেতে হবে। আমরা সবাই মরণশীল।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত