একটি ছেলে আর একটয় মেয়ে দুজন দুজনকে ভীষন ভালবাসতো। ছেলেটির নাম ছিল শাওন আর মেয়েটির নাম ছিল মৃন্ময়ী। দুজন দুজনকে ভালবাসলেও দুজনের ভালবাসার ধরনটা ছিল সম্পূর্ন আলাদা। শাওন শুধু কাছাকাছি আসতে চায়।অনেকটা কাছাকাছি।কিন্তু মৃন্ময়ী শুধু মন থেকে মনের মধ্যে থাকা ভালবাসার ফিলিংসটাকে উপলব্ধি করতে চায়। শাওনের যে নেগেটিভ দিকগুলোর প্রতি আকর্ষন তা কিন্তু না। তবুও মৃন্ময়ীর বারন গুলো শাওনের খুব বিরক্ত লাগতো।কিন্তু তারপরও তেমন কিছু বলতো না। এভাবেই চলতেছিল শাওন আর মৃন্ময়ীর সম্পর্ক।
— হ্যালো (শাওন)
— হ্যা বলো!!(মৃন্ময়ী)
— তোমাকে অনেক মিস করি বাবু!!
— এই পাগল,এত মিস করো কেন হুম??
— জানিনা। কি ইচ্ছে করে জানো??
— কি গো??
–তোমাকে শুধু পাগলের মত ভালবাসতে। আর কোনো এক পরন্ত বিকেলে পার্কে পাশাপাশি বসে কাধে মাথা রেখে সুখ দুঃখের কথা বলতে অথবা কোনো এক সন্ধ্যায় নদীর পাড়ে হাতে হাত রেখে একটু হাটতে।হয়তো তুমি হাতটা একটু জড়িয়ে ধরবে।তারপর দুজনে মিলে সূর্যাস্তের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করবো। অথবা কোন এক চাঁদনী রাতে তুমি আমার কাধে মাথা রাখবে।তারপর দুজনে মিলে আকাশের চাঁদনী উপভোগ করবো। অথবা কোনো এক এক বৃষ্টির দিনে দুজনে একসাথে বৃষ্টিবিলাশ করবো একসাথে বৃষ্টিতে ভিজবো।বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে তোমার ভেজা চুলগুলোয় এতটু হাত বুলিয়ে দেবো। হয়তো কোনো এক সময় তোমার মিষ্টি ঠোটদুটোয় আমার ঠোটের আলতো পরশ বুলিয়ে দিবো হয়তো একটু জড়িয়ে ধরে আমার বুকের হার্টবিট শোনাবো।(শাওন)
–দেখো শাওন।এগুলো কখনোই ভালবাসার প্রকাশ হতে পারেনা।ভালবাসা মানে দুটি মনের মিলন তাও ঠিক আছে।কিন্তু কাছাকাছি আসার কি দরকার। এগুলোর জন্য বিয়ের পর অনেক সময় আছে।এগুলো তো তখনো করা যায়।এখন কি দরকার।তাহলে তো আর বিষয়টা ভালবাসায় সীমাবদ্ধ রইলো না।(মৃন্ময়ী)
–তাহলে কি করবো??
— মন থেকে ভালবাসাটাকে ফিল করবা।ফিল করবা তুমি আমাকে কতটা ভালোবাসো।ফিল করবা আরো কতটা ভালবাসতে পারবা। ফিল করবা আমার জন্য তোমার মনে কতটা ফিলিংস কাজ করে।
— এগুলো ফিল করলেই তো তোমাকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা করে।তখন তো তুমি তা ধরতে দিবা না।
— শাওন!!
— হ্যা বলো…
— মনে করো আমি মরে গেলাম বা আমার অন্য কোথাও বিয়ে হয়ে গেল।তখন তুমি কি করবা??(মৃন্ময়ী)
— এই একদম বাজে কথা বলবা না।তুমি কেন মরবা হুম?? আর তোমার অন্য কোথাও কেন বিয়ে হবে হ্যা?? তুমি শুধু আমাকে বিয়ে করবে।আর কাউকে না।তুমি শুধুই আমার।আর কারো না।আর কারো যদি হতে যাও না?? তাহলে আমি তোমাকে মেরে তারপর আমি নিজে মরে যাবো।তবুও তোমাকে অন্যকারো হতে দিবো না। একদমই দিবো না।দেখো!! (শাওন)
— এই পাগল তুমি বাচ্চদের মত কান্না করে দিছো কেন। আমি কি সত্যি সত্যি চলে যাচ্ছি নাকি?? শুধু ভাবতে বলেছি।(মৃন্ময়ী)
— আমি পারব না।দম বন্ধ হয়ে মরে যাবো।
— কেন মরে যাবে??
— কারন তোমাকে আমার লাগবেই।তোমাকে আমার আপন করে চাই ই চাই।
— ভালবাসা মানেই কি কাছাকাছি আসা?? আপন করে পাওয়া?? দূর থেকে কি ভালবাসা যায় না??
— দূর থেকে আবার ভালবাসা যায় নাকি??
— যায় দূর থেকেও ভালবাসা যায়।সেটাই প্রকৃত ভালবাসা। কাছে আসার নামই ভালবাসা নয়।বুঝলে!! শাওন আর কিছু বলে না।ও মনে মনে ভাবে হয়তো মৃন্ময়ীর কথাই ঠিক। কিন্তু কিভাবে যে দূর থেকে ভালবাসে তা শাওনের আজও মাথায় ঢুকলো না। এভাবেই এগিয়ে যায় ওদের ভালবাসা। কয়েকমাস পর মৃন্ময়ী একটা দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। মারা যাওয়ার দুই দিন আগে শাওনকে মৃন্ময়ী বলেছিল….
— শাওন।লক্ষীটি আমার।আমি চলে গেলে একদম পাগলামী করবা না।একদম ভেঙ্গে পরবা না।ভেব না যে আমি নেই মানে তোমার জিবনের অস্তিত্ব নেই।আমি ছিলাম তোমার জিবনের একটা অংশ।এর জন্য তোমার সুন্দর জীবনটাকে নষ্ট করো না যেন।এরকম তো অনেক আছে।যারা তাদের ভালবাসার মানুষকে পায়নি। ভালবাসলেই যে আপন করে পেতে হবে এরকমতো না। দূর থেকেও তো ভালবাসা যায়।তাই না??তুমি আমাকে দূর থেকেই ভালবাসবে…. কেমন?? শাওন কোনো কথা বলতে পারেনি।শেষমেষ শক্তকরে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মত কান্না করেছিল। আজ মৃন্ময়ী আর বাধা দেয়নি। মৃন্ময়ীও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বলেছিল…
— শাওন আমি মরে যাচ্ছি তারমানে এই নয় যে আমি হারিয়ে যাচ্ছি।আমি যেমন তোমার ছিলাম।তোমারই আছি।তেমনই তোমারই থাকবো। আমি তোমার মাঝেই বেচে থাকবো!!! দেখে নিও!!!(মৃন্ময়ী)
মৃন্ময়ী মারা যাবার পর শাওনের কানে শুধু মৃন্ময়ীর একটা কথাই বাজে!! “শাওন আমি তোমার মাঝেই বেচে থাকবো,তুমি দেখে নিও” প্রথম প্রথম শাওন খুবই ভেঙ্গে পরেছিল।কিন্তু এখন মৃন্ময়ী নেই তবুও শাওন স্বাভাবিকভাবে আছে। কারন,চোখ বন্ধ করলেই এখন শাওন মৃন্ময়ীকে ফিল করতে পারে। মৃন্ময়ীর প্রতি জমানো ভালবাসাগুলো যখন হৃদয়ের মাঝে তোলপার করে।তখন শাওন ফিল করে মৃন্ময়ী ওর পাশেই ওর হাতদুটো জড়িয়ে ধরে আছে। যখন রাতের আকাধের চাঁদ দেখে মৃন্ময়ীকে মিস করে তখন চোখ বন্ধ করলেই মনে হয় মৃন্ময়ী ওর কাধে মাথা রেখে বসে আছে। যখন সূর্যাস্তের সময় মৃন্ময়ীর কথাটা ভিষন মনে পরে তখন ফিল করে শাওনের পাশে ওর মৃন্ময়ী দাড়িয়ে আছে।ওকে জানান দিচ্ছে যে,ও একা নয়।ওর পাশে ওর মৃন্ময়ী আছে।ওকে প্রতিটা মুহুর্তে বুঝিয়ে দিচ্ছে মৃন্ময়ী হারিয়ে যায়নি।মৃন্ময়ী বেচে আছে শাওনের মাঝে। আজ মৃন্ময়ীকে মৃত্যু কেড়ে নিয়েছে।কিন্তু শাওনের মন থেকে এখনও কেড়ে নিতে পারেনি। মৃন্ময়ীকে শাওন কাছাকাছি আপন করে পায়নি।অথচ প্রতিটা মুহূর্তে মৃন্ময়ী শাওনের মনের মাঝে এখনো অতি আপনের মত জড়িয়ে আছে। আজ মৃন্ময়ী কাছে নেই।আছে দূরে। অনেক দূরে। তবুও আজ শাওনের মনে মৃন্ময়ীর প্রতি ভালবাসাটা ঠিক আগের মতই আছে। আজ শাওন বুঝতে পেরেছে… মৃন্ময়ীর কথাই ঠিক ছিল….. ” ভালবাসা মানে কাছাকাছি থেকে আপন করে পাওয়া নয়।চাইলে দূর থেকেও ভালবাসা যায়। “
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা