রাত ১০ টা , আর দুইঘন্টা পর আমার জন্মদিন, আমি হাইওয়ে তে হাটছি, বলা যেতে পারে বিনা কারণেই
হাটছি, কারণ যে একেবারে নেই তা না, কারো কাছ থেকে “Fake wish” পেতে ইচ্ছে করছেনা, মোবাইলটাও বাসার ড্রয়ার এ রেখে এসছি, সিধান্ত নিয়েছি আজ রাত আমি আকাশের সাথে কাটাবো।
আমি একাই হাটছি, আকাশ অন্ধকার, কে যেন বলেছিল আজ নাকি পূর্ণিমা, হাটার জন্য রাস্তার পাশের সোডিয়াম লাইটগুলোই আমার ভরসা। ঝিরঝিরি হাওয়ার সাথে ফোটা ফোটা বৃষ্টি,— বৃষ্টি বাড়ছেনা , আবার কমছেওনা, শুনশান নীরবতা, আমি উদ্দেশ্যহীনভাবে হাটছি, কোণ পুলিশ দেখলে হয়তো ধরেও নিয়ে যেতে পারে,সব মিলে নীরবে কিছুক্ষণ হাটার জন্য অস্থির পরিবেশ, আমি হাটছি আবার মাঝে মাঝে দাঁড়িয়ে যাচ্ছি, নিজের ছায়াকে দেখার চেষ্টা করছি, ,কানে হেডফোন নেই, তবুও কানের পাশে কে যেন গাইছে—
“আমার রাতজাগা তারা
তোমার আকাশ ছোয়া বাড়ি
আমি পাইনা ছুতে তোমায়
আমার একলা লাগে ভারি”
একা অনেক ক্ষণ পর পর এক এক টা বাস এসে নীরবতা ভেঙ্গেদিচ্ছে, নিজেকে রাস্তার রাজা মনে হচ্ছে।
কারণরাস্তায় আমি ছাড়া আর কেউ নেই।
হয়ত ভাবতে পারেন আমি একলা কেন হাটছি, হয়ত আমার মন খারাপ !!, আবার নাও হতে পারে, আসলে বিশেষ কিছু দিন যেমন ঈদ, জন্মদিন, পহেলা বৈশাখ এসব দিনে কোন এক অজানা কারণেই আমারমন খারাপ থাকে, আমার জন্মদিন কালকে, তাই মন খারাপ কাল হবার কথা, কিন্তু আজকে কেন হল সেটা মাথায় আসছেনা, অবশ্য আসতে দিতেও চাচ্ছিনা, কারণ আমার হাটতে এখন ভালো লাগছে, আমার উপড় বৃষ্টি পড়ছে, কিন্তু আমি তাকে আমার গায়ে জড়াতে পারছিনা, আমার পায়ে ছোয়াতে পারছিনা, আমার মুখে বুলাতে পারছিনা, আমার মনের উঠান কে ভিজাতে পারছিনা……মনে হল আমি অনেক বড় একটা সুযোগ হারাচ্ছি, তাই শার্ট আর জুতা খুলে হাতে নিয়ে নিলাম, কি জানি কেন বৃষ্টি তখন জোড়ে পড়তে শুরু করলো, এখন আর গান শুনতে পাচ্ছিনা, শুধুই ঝুমঝুম ঝুম ঝুমঝুম……
কি জন্য যেন মনে হল বৃষ্টির মাসের একটা নাম আছে, কি যেন সেটা !????? হুম শ্রাবণ। ব্যাপার টা মনে পড়তেই মনটা খুব বেশী খারাপ হয়ে গেল, কারণ আমার “শ্রাবনী” র কথা খুব মনে পড়ছে, বৃষ্টি হলেই ও আমাকে ফোন করে বলতো, “চলেন ভিজি”, আমি কখনো “না” করতাম না, আমরা দুজনেই নিজেদের বারান্দায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টির ছিটাতে ভিজতাম, বৃষ্টি গায়ে না মেখে মনে মাখতাম।
কিন্তু এখন বৃষ্টি ভালো লাগছেনা, মনে হচ্ছে আকাশটাকে কোন চাদর দিয়ে ঢেকে দিতে পারতাম !!!!!
আমাদের পরিচয় হয় ফেইসবুকের মাধ্যমে, হঠাৎ একদিন knock করলাম,উত্তর আসলো, “কেমন আছেন ??”
আমি বলেছিলাম “ভালো আছি”, এটুকুর বেশী এখন কিছুই মনে পড়ছে না, কিন্তু এরকম কেন হচ্ছে বুঝতে পারছিনা, আরো অনেক কিছু মনেপড়ার কথা!!!
বৃষ্টি এখনো অনেক জোড়েই পড়ছে, —- আমি ই প্রথম ওর নাম্বার চেয়েছিলাম, অন্যান্যমেয়েদের মত “ Problem আছে” না বলে ও বলেছিল, “ আমিকিন্তু খুব কম কথা বলি, আপনাকেই সব কথা বলতে হবে “
কথা বলতে বলতেই ওর প্রতি আমার একটা ভালোলাগা জন্মে যায়, ওর নাম ছিল “ শ্রাবনী” , কথা বলার সময় কি ভেবে যেন ফোন ধরেই বলেছিলাম, “ শ্রাবণ ঝরা শ্রাবনী” !!!
ওর নাম টা খুব পছন্দ হল, নিজের ফেইসবুক আইডি র নাম চেঞ্জ করে ““ শ্রাবণ ঝরা শ্রাবনী” রাখলো।
ওর কিছু কথা আমার কানে এখন ভাসছে, গানটা আরশুনতে পাচ্ছিনা, কিছু হলেই ও বলতো, “ খারাপ খারাপ কি খারাপ কি খারাপ কি খারাপ !!!”, আর তখন আমি বলতাম ,“UP”, আর ও বলতো “ Down !!”
আমি ওকে “ শ্রাবণ “বলে ডাকতাম। কথা বলার বেশ কিছুদিন পর জানতে পারি মেয়েটি হিন্দু। মনে হয়েছিল তাতে কি , আমি তো ওর সাথে প্রেম করতে যাচ্ছিনা।কিন্তু এই নির্ভাবনাই যে পরে গলার কাটা হবে সেটা জানা ছিলনা।
আমি ওকে কখন ও দেখিনি, তাই ওকে মনের ক্যানভাসেই একে নিয়েছিলাম, প্রতিদিন কথা হত আর আমি এক একটি করে অংগ প্রত্যংগ আকতাম, কোন দিন চোখ, কোন দিন চুল……নিজেকে নতুন করে কেমন যেন আবিষ্কার করছিলাম, শ্রাবনের আমি ছাড়া কথা বলার আর কেঊ ছিলনা, ওর সব দুঃখ কষ্ট হাসি কান্না সব আমার সাথে শেয়ার করত,এমন ও অনেক রাত গেছে যখন পুরো রাতআমি ওর অশ্রুগল্পের মুগ্ধ শ্রোতা ছিলাম, আমি যেন না শুনতে পাই সে জন্য খুব চেপে কান্না করার চেষ্টা করতো, কিন্তু আমি যেন কিভবে বুঝতে পারতাম ,শ্রাবণ ঝরছে ……
শ্রাবন ই বেশীর ভাগ সময় ফোন দিত, আমি ফোনধরেই বলতাম
“ শ্রাবণ “ !!!
আর ও বলতো “ জী ইইইইইইইইইইইইইইই” … বলেই অনেক্ষন টান দিয়ে ধরে রাখতো।
আমি এখন ও রাস্তায় হাটছি, রাস্তার বাতিগুলো এখনো জ্বলছে, রাতের কালো, সোডিয়াম লাইটের হলুদ, আর আমার নীল সব মিলে একাকার —– হঠাৎ ই মনে হল আমি কাঁদছি , কেন কাঁদছি জানিনা, বৃষ্টির জলের জন্য আমি আমার চোখের জলকে চিনতে পারছিনা, হয়তো আকাশ এর ও আজ মন খারাপ। সেও আমার সাথে কাঁদছে , শ্রাবণ বলত “ ছেলেরা আবার কাঁদে নাকি !!!”
শ্রাবণ কে আমি অনেক পছন্দ করতাম। না দেখে কিভাবে ভালোবাসতে হয় তা হয়ত ওই আমাকে শিখিয়েছে।
একদিন রাতে হঠাৎ ই ও আমাকে ফোন করে বললো, “ আপনি কি আমাকে ভালোবাসবেন ??, আমি কখনো কোন দাবি করবোনা, অভিযোগ করবোনা, শুধুই আপনাকে ভালোবাসবো !!!” বলেই সে কেদে ফেললো। জীবনে প্রথম আমি কেমন যেন স্তম্ভিত হয়ে গেলাম, কিছুই বলতে পারিনি, শ্রাবন আঝরে কাঁদছে, মনে হচ্ছিলো অর কাছে ছুটে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে বলি, “I love you too, Srabon “
কোন উত্তর দিতে পারিনি, বুঝতেই পারছিলাম না, ওর কান্না থামাবো নাকি“আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি “ বলবো…… আমার নীরবতা কে ও হয়তো আমার “না” ভেবে নিয়েছিলো, এটাই আমার সাথেওর শেষ কথা। ও কেন কাঁদছিল সেটা আমি আজ ও জানিনা !!!
ক্যামেরা কিনতে ঢাকায় আসার কথা ছিল আমার,সেখানেই দেখা করার কথা ওর সাথে , ও Marks Dental College এ পড়তো, ওর কোন বান্ধবী বা বাসার কোন নাম্বার আমার কাছে ছিলনা, তাই যে ৩ দিন আমি ঢাকাতে ছিলাম, আমি ওদের কলেজের সামনে এসে দাঁড়িয়ে থাকতাম, আর ওকে খুজতাম, ও সিম অফ করে দিয়েছিল,যদিও আমি ওকে কখনো দেখিনি তাই সামনা সামনি দেখলেও চেনার কথা না, কিন্তু মন থেকে কে যেন শুধু বলতো , শ্রাবন আমাকে দেখলেই দৌড়ে এসে বলবে “খারাপ খারাপ কি খারাপ কি খারাপ কি খারাপ !!!!”
এখন আর জোড়ে বৃষ্টি পড়ছেনা, হাতে ঘড়িনেই, তাই বুঝতেও পারছিনা কয়টা বাজে, মনে হচ্ছে আরোকিছুক্ষণ যদি শ্রাবণ ঝরতো !!!! আর কিছুক্ষন যদি ওকেগায়ে জড়াতে পারতাম !!! আমি একটা লাইট পোস্ট এর নিছে বসে আছি , মনে হল বাসায় যাওয়া উচিত, মাথার চুলগুলো শুকিয়ে গেছে, শরীর সাদা হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে , মনে হয় জ্বর আসবে, বাসায় এসেই খুব অস্থির লাগছিলো, কি ভেবেই যেন খুব জলদি ড্রয়ার খুললাম, দেখি অনেকগুলো মিস কল আর এস এম এস, সব পরিচিত মানুষগুলো আমাকে উইস করেছে, সব গুলোর মাঝে একটাই অজানা নাম্বার থেকে এস এম এস, খুলতেই দেখি তাতে লেখা—-
“ খারাপ খারাপ কি খারাপ কি খারাপ কি খারাপ কি খারাপ………”
বৃষ্টির জল শুকিয়ে গিয়ে মনে যেন মরূভুমির সৃষ্টি হয়েছিলো তাতে কে যেন এক দুনিয়া পানি ঢেলে দিল, যা গড়িয়ে পড়ার জন্য আমার চোখ কেই আশ্রয় হিসবে গ্রহণ করলো !!!!
আমি জানি এটা শ্রাবণের নাম্বার, ও আমার জন্মদিন কখনই ভুলবেনা,
ওকে এখনই কল করতেহবে, এক অজানা চাপা আনন্দে মন খুব অস্থির, আজ ওকে বলে দেব ” শ্রাবণ , i love you”
ডায়াল হচ্ছে …………………… মনে মনে ভাবছি ফোন ধরেই বলবো “ শ্রাবণ “ !!!!
ও বলবে “ জী ইইইইইইইই”—— !!!
……………………………………………..সমাপ্ত……………………………………….