শোনো না
–চুপ।কিচ্ছু শুনব না এখন
–আরে ফোনটা রেখো না
–কি বলবা জলদি বল….???
–আই লাভ ইউ
–আবার….??? তুমি না বলছ ফোন রাখার সময় এইটা আর কখনও বলবা না….???
–কবে বললাম….???
–গতকাল না বললা
–মনে নাই
–আচ্ছা আমি রাখছি।আম্মু যখন তখন রুমে চলে আসতে পারে। দেখলে সমস্যা হবে
–এই শোনো না একটু প্লিজ
–উফফফফ আবার কি……???
–একটা কথা বলার ছিল
–জলদি বলবা
–বলব…..???
–হ্যাঁ বল জলদি
–সত্যি বলব….???
–ধ্যাত আমি ফোন রাখছি।বাই
–এই এই রেখো না প্লিজ। আমি বলছি
–জলদি বল
–ভালোবাসি।অনেক ভালোবাসি তোমাকে
–উফফফ আল্লাহ এই কথা……!! ইচ্ছে করছে তোমাকে মাইর দিতে
–দাও মাইর দাও পারলে
–বিকালবেলা মাঠে আসো সত্যি তোমাকে মাইর দিব হুহ
–তোমার যেই সাহস……!!! সামান্য তেলাপোকা দেখলেই ভয়ে পালাও আবার তুমি কিনা মারবা আমাকে……!!! হাহাহা
–কিহহহ….??? এত্তবড় অপমান আমাকে….??? আমি তেলাপোকা ভয় পাই……???
–হ্যাঁ ভয় পাও ই তো
–তুমি আর আমাকে ফোন দিবা না।যদি দাও তাহলে তোমার খবর আছে বলে দিলাম।বাই
.
রাগের স্বরে কথাটা বলেই জারা ফোনটা কেটে দিয়েছে।আসলে জারাকে রাগিয়ে দিতে কেন জানি আমার খুব ভালো লাগে।যদিও রাগিয়ে দেয়ার পর রাগ ভাঙানোর দায়িত্বটা আমাকেই নিতে হয়।
জারা এইবার ক্লাস নাইন পড়ছে।আমার একমাত্র ফিউচার বউ।আর আমি নীল। ইন্টার fast ইয়ারে আছি।
আমাদের বাসা থেকে জারাদের বাসা মাত্র ৫ মিনিটের দূরত্ব।মানে পাশাপাশি গ্রাম।জারাদের বাসার পাশেই বড় একটা খেলার মাঠ আছে।তাই রোজ বিকেলে সেখানে খেলার বাহানা করে জারাকে দেখতে যাই।আমি যতক্ষন মাঠে থাকি জারা ততক্ষন তাদের ছাদের উপরে দাঁড়িয়ে থাকে।অবশ্য তখনও আমাদের মধ্যে হোয়াটস এপে চ্যাটিং হতেই থাকে।
.
মহারাণীকে তো রাগিয়ে দিলাম।এইবার তো রাগ ভাঙাতে হবে।দিলাম কল…..!!!
দুই তিনবার বাজার পর জারা ফোনটা রিসিভ করল
.
–হ্যালো জারা
–ফোন দিয়েছ কেন….??? তোমাকে না মানা করছি আমাকে ফোন দিবা না…..???
–কখন মানা করছ তুমি…..???
–একটু আগে না মানা করলাম
–তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে।তুমি তো তখন ব্রেকফাস্ট করার জন্য ফোন রেখে দিলে
–চুপ একদম চুপ।আমাকে বোকা বানানো হচ্ছে তাই না……???
–না মানে আমি কি তোমাকে বোকা বানাতে পারি বল…..!!! তুমি তো আমার একমাত্র বাবুনী
–বাবুনী না ছাই……!!
–তুমি ছাই হতে যাবা কেন…..??? তুমি তো আমার বাবুনী
–ফোন রাখ
–স্যরি স্যরি স্যরি
–নাহ কোনো স্যরিতেই কাজ হবে না এখন
–আচ্ছা একটু হোয়াটস এপে আসবা…..???
–না পারব না
–একটু আসো প্লিজ
–উফফফ বললাম তো পারব না
–আচ্ছা থাক
–ফোন রাখছি বাই
.
রাগের মাত্রা দেখা যাচ্ছে খুবই তীব্র।আল্লাহই জানে কি হয়……!!!
কিছুক্ষন পরেই ফোনটা কেঁপে উঠল।পকেট থেকে ফোনটা বের করে দেখি জারা……!!
.
–হ্যালো
–নীল
–কি….???
–তুমি না আসলেই একটা পাগল
–কেন…???
–আমি কি তোমাকে বলেছি কানে ধরে পিক দিতে…..???
–না বল নি
–তাহলে কেন দিলে….???
–এমনি দিলাম যাতে তোমার রাগ কমে যায়
–আমার একটুও রাগ নেই
–সত্যি…..???
–হ্যাঁ সত্যি
–জারা…..???
–কি…???
–তোমাদের বাসার নিচ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম।একটু বারান্দায় আসবা….??? তোমাকে একটু দেখে যাই…..!!
–হায়রে…….!!! রোজ এতবার দেখে তারপরেও উনার মন ভরে না
–একটু আসো না প্লিজ
–তুমি একটু আস্তে হাঁট আমি আসছি
–হু
.
ফোনটা কেটে জারাদেে বাসার বারান্দার দিকে তাকালাম।দেখতে পেলাম সেখানে জারা দাঁড়িয়ে আছে।খুব সুন্দর লাগছে জারাকে।যদিও জারা তৃতীয় তলায় ছিল।ভালমতো কিছুই দেখা যাচ্ছিল না।তবুও কিছুটা হলেও দেখতে পাচ্ছিলাম।কারন চোখে চশমা ছিল।জারা হাতে ইশারা করে কি যেন বুঝাতে চাচ্ছিল আমাকে।আমি ভাবলাম হয়ত বলছে কোথায় যাচ্ছি কিমবা রাস্তা ঠিকমত দেখে যেও।কিন্তু কিছুক্ষন পরেই টের পেলাম জারা আসলে আমাকে কি বুঝাতে চেয়েছিল।
.
–আউউউউউউউ
বলেই খানিকটা জোরে চিল্লানী দিয়ে উঠলাম।আমার সামনে যে একটা ডাব গাছ ছিল আমি তো সেটা খেয়ালই করি নি।আর খেয়াল করবই বা কিভাবে……!!! জারার দিকে যে তাকিয়ে ছিলাম তো ছিলামই।সামনে বা পিছনে কি হচ্ছে সেটা তো মাথাতেই নেই।যার জন্য ডাব গাছে গিয়ে মাথায় বারি খেয়েছি।
কপালে হাত দিয়ে দেখতে পেলাম জায়গাটা আলুর মত হয়ে গেছে।এখন রাগে নিজেই নিজেকে বলতেছি ”দেখ আরো বেশি কইরা দেখ জারারে”
সেখানে আর এক মিনিটও দেড়ি করলাম না সোজা বাসায় চলে আসলাম।বাসায় আসার পরেই জারার ফোন……
.
–নীল খুব লেগেছে তোমার তাই না…..??? স্যরি প্লিজ। আসলে আমার জন্যই এমনটা হয়েছে তোমার। প্লিজ স্যরি
–আরে তুমি শুধু শুধু নিজেকে দোষারোপ করছ।তোমার কোনোই দোষ নেই
–খুব লেগেছে তাই না….???
–নাহ তেমন একটা লাগে নি।সামান্যই
–খুব ব্যাথা করছে…..???
–নাহ ব্যাথা কমে গেছে
–আচ্ছা একটু রেস্ট নাও তুমি।পরে কথা বলব।আগে তোমার ব্যাথাটা কমুক।
–আচ্ছা ঠিকাছে
–লাভ ইউ
–হাহাহা লাভ ইউ টু পাগলী
.
মাঝেমাঝে নিজেই অবাক হয়ে যাই।আসলেই জারা আমাকে অনেক ভালোবাসে।অনেক বেশিই ভালোবাসে।আমার কিছু হলেই ও পাগলের মত হয়ে যায়।বারবার ফোন দেয়।কেমন আছি, সুস্থ হয়েছি কিনা জিজ্ঞাসা করে।ওর এই রাগটা শুধুই উপরে উপরে কিন্তু ভিতর থেকে জারা আমাকে অনেক ভালোবাসে যেমনটা আমি ওকে ভালোবাসি।
.
পরেরদিন সকালে…….
.
–নীল জানো আজকে না দারুণ একটা স্বপ্ন দেখছি
–কি দেখছ…..???
–সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা স্বপ্ন।এই প্রথম আমি এমন একটা স্বপ্ন দেখছি
–আরে বাবা কি স্বপ্ন দেখছ সেইটা তো বলবা
–দেখলাম আমার সাথে একটা ছেলে…..
ও আমাকে নিয়া ঘুরল রিকশাতে……তারপর আমাকে একটা অর্নামেন্টস এর দোকানে নিয়া গেল……তারপর হাতের রিং,কানের দুল,গলার হার এগুলা পছন্দ করে কিনে দিল……পড়ায় দিল……ব্যাপারটা খুব রোমান্টিক ছিল কেমন জানি……ঠিক স্বামী-স্ত্রীর মত ফিলিংস হয়েছে আমার
–কিহহহ….????
–হ্যাঁ
–ছেলেটা আমি ছিলাম সিউর
–নাহ তুমি না।অন্যকেউ ছিল
–কি বললা তুমি…?? আমি ছিলাম না…??? অন্যকেউ ছিল……???
–হ্যাঁ তুমি ছিলে না এইটা সিউর
–আচ্ছা ফোন রাখছি
–কেন ফোন রাখবা কেন….??
–এমনি ভালো লাগছ না।পরে কথা হবে। বাই
–নীল শোনো
.
জারার শেষ কথাটা আর শুনি নি।ফোনটা কেটেই দিয়েছি।কেটে দেয়ার পর ফোনের সুইচডটা অফ করে বিছানার এক পাশে রেখে দিয়েছি।
জারার কথা শুনে খানিকটা খারাপ লেগেছে।মানলাম স্বপ্নে না হয় অন্য কোনো ছেলেই ছিল।কিন্তু তাই বলে সেটা আমাকেও বলতে হবে….??? বললেই হত স্বপ্নের সেই ছেলেটা আমিই ছিলাম……!!!
.
রাতে ভালো ঘুম হয় নি। সারারাত মশার কামড় খেয়েছি।মশারী না টানিয়ে ঘুমালে যা হয় কি…….!!! তাই কম্বলের নিচে গিয়ে দিলাম এক ঘুম।এক ঘুমে একেবারে দুপুর ২:০০ টা
.
বালিশের নিচ থেকে ফোনটা বের করে সুইচড অন করলাম।সেই সকাল থেকে ফোনটা অফ।নিশ্চয় এতক্ষনে অরিত্রা অনেকবার কল দিয়েছে।আচ্ছা দেখি ফোনটা চালু করে।
মোবাইলটা চালু করতেই দেখি অরিত্রার ৩৮ টা ম্যাসেজ।আল্লাহ এত্তগুলা ম্যাসেজ দিয়েছে জারা……??? আল্লাহই জানে না জানি কতবার ফোন দিয়েছে……!!!
”নীল মোবাইল খোলো,স্যরি আর এমন করব না,প্লিজ রাগ করে থেকো না” ইত্যাদি ইত্যাদি।ম্যাসেজগুলা দেখে আমি হাসছি।মেয়েটা আসলেই পাগল।
.
জারাকে কল করলাম।কল দেয়ার সাথে সাথেই ফোনটা রিসিভ করে ফেলেছে।নিশ্চয় ফোনটা হাতে নিয়েই বসে ছিল
.
–হ্যালো নীল…… তোমার ফোনের সুইচড অফ ছিল কেন….?? খুব রাগ করেছ আমার উপর তাই না….??? আসলে আমি তো তোমার সাথে মজা করেছি।দেখলাম তুমি কি বল।কিন্তু তুমি তো খুব রাগ করে আছো।স্যরি আর কখনও এমন করব না আমি। সত্যি করব না। কখনও করব না।প্লিজ স্যরি স্যরি স্যরি
.
এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলল জারা।কথাগুলো বলার সময় জারা সামান্য কান্না করছিল সেটা আমি স্পষ্ট বুঝতে পেরেছি।আসলে ভুলটা আমারই।ধ্যাত কেন যে তখন ফোনটা অফ করে রেখেছিলাম……!!!
.
–জারা তুমি কান্না করছ…..???
–কান্না করব না তো কি করব….???
–প্লিজ কেঁদো না
–তুমি রাগ করে আছো তাই না…..???
–নাহ মোটেই না।আমি একটুও রাগ করে নেই।তখন ফোনের চার্জ ছিল না।তোমাকে বলার সময়টাও পাই নি।ফোন অফ হয়ে গিয়েছে
–সত্যি ফোনের চার্জ ছিল না……????
–হ্যাঁ সত্যি
–আমি তো ভাবলাম তুমি রাগ করে ফোনটা বন্ধ করে রেখেছ
–আরে নাহ।আচ্ছা এইবার তো কান্না থামাও
–হু
–এত ভালোবাসো কেন আমাকে….???
–কে বলছে ভালোবাসি…..??? একটুও ভালোবাসি না তোমাকে
–সত্যি তাই…..???
–হ্যাঁ সত্যি তাই।একটুও ভালোবাসি না তোমাকে একটুও না
–তাহলে আমার ফোন বন্ধ ছিল বলে এখন কান্না করছ কেন…..???
–জানি না
–তোমার এই ভালোবাসার কাছে মাঝেমাঝে নিজেও পরাজিত হয়ে যাই জারা
–ঘোড়ার ডিম
–সত্যি অনেক ভালোবাসি জারা ।অনেক বেশিই ভালোবাসি
–ভালোবাসো না ছাই।সেজন্যই তো এত কষ্ট দাও
–কিহহহ….??? আমি তোমাকে কষ্ট দেই…..???
–জানি না
–আই লাভ ইউ জারা
–আই হেট ইউ
–মাঝেমাঝে ”আই হেট ইউ” এই কথাটার মধ্যেও কিন্তু অনেক ভালোবাসা লুকায়িত থাকে
–ইশ……!!! তোমার মাথা
–কত্তগুলা ভালোবাসি আমার পাগলীটাকে
–নীল….
–হুম
–অনেক ভালোবাসি তোমাকে অনেকগুলা
–আমিও এত্তগুলা
–হুহ……..আমি একটুও ভালোবাসি না তোমাকে
–মাত্রই না বললা অনেকগুলা ভালোবাসো
–না ভালোবাসি না
–তাহলে আমিও ভালোবাসি না (হায় হায় কি বললাম এইটা)
–কি বললা তুমি…..???
–না ভালোবাসি তো (ভয়ে)
–তুমি আমাকে ভালোবাসো না…..???
–বাসি তো। সত্যি ভালোবাসি
–তাহলে বললা কেন ভালোবাসো না……???
–ভুলে বলে ফেলেছি।আমি তো তোমাকে ভালোবাসি
–চুপ।আর ফোন দিবা না আমাকে।দিলে তোমার খবর আছে
–কয়টার খবর গো বাবুনী…..???
–তোমার মাথা।বাই
–কই যাও……???
–রাগ করছি হুহহহ।একটু পর ফোন দিয়ে রাগ ভাঙাবা তারপর কথা বলব হুহহহ
–হাহাহাহা তুমি না আসলেই……..
–তোমার বাবুনী।এখন রাখছি।একটু পর ফোন দিয়ে রাগ ভাঙাবা হুহহহ বলে দিলাম
–হাহাহা আচ্ছা বাবা আচ্ছা যাও
.
জারা ফোন রেখে দিল।বলতে গেলে রাগ করে ফোন রাখে নি।একটু মজা করেছে।একটু পর ফোন দিয়ে দুই একটা রোমান্টিক কথা বললেই উনির রাগ নিমিষেই শেষ হয়ে যাবে।আসলেই মেয়েটা আমাকে অনেক ভালোবাসে।বলতে হবে জারার মত একটা মেয়েকে নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে পাওয়া সত্যিই ভাগ্যর ব্যাপার।
.
.
শুধু কাছাকাছি থাকলেই ভালোবাসা হয় না।জড়িয়ে ধরা কিমবা চুমু দিলেই যে ভালোবাসা হয়ে যায় সেটাও কিন্তু না।ভালোবাসা তো সেটা,অনেক দূরে থাকা সত্ত্বেও একজন অন্যজনকে মিস করে,ভয়েস শোনার জন্য দুইজনই ব্যাকুল হয়ে উঠে,প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে তাকে কল্পনা করেই ঘুমুতে যায়।এটাই তো ভালোবাসা।
.
হৃদয়ের টান থাকলে পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুক না কেন অপরজন,ভালোবাসা অটুট থাকবেই।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা