রিয়ার কথা শোনার পর আমি অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালাম , মেয়েটা রেগে গেলে কি বলে সে নিজেও জানে না,
“প্রত্যুৎপন্নমতি ! এটা আবার কি?”
“ও তুমি আবার জানবে কি করে? তুমি কোন কিছুর খোজ রাখনা তাহলে এটা সম্পর্কে জানবে কি করে?”
“ও… আমি যখন জানি না ,তুমি বলে দেখি এটার দ্বারা কি বুঝালে?”
“তুমি তো কিছুই জানোনা শুধু পারো খাওয়া আর ঘুমানো…. “
“আমি কি পারি আর না পারি সেটা তোমার না দেখলেও চলবে।”
“ আমার না দেখলে চলবে” কথাটা ব্যাঙ্গ করে বলল রিয়া।
“তুমি এত বড় হয়ে গেলে তবুও তোমার বুদ্ধি হয়নি হ্যা”
“আমার বুদ্ধির কোথাই কম দেখলে?”
“যে মানুষ খাওয়ার পর যে তরকারির বাটি গুলো ঢাকতে হয় এটা জানে না তার আবার বুদ্ধি”
“তুমি ছিলে বলেই তো ঢাকি নি..”
“আমি কোথাই ছিলাম”
“কেন তুমি ছিলে না “
“আমি গোসলে ঢুকে ছিলাম”
“বলে যাবে না… এখন শুধু আমার উপর চিল্লাছ”
“বাথরুমে যাবার্ আগে কতবার করে আপনকে বলে যাওয়া হল’
“কখন বললে?”
“কখন বললাম তাইনা …. তুমি আমার কথা ঠিক ভাবে কখন শোন যে শোনতে পারবে”
‘শুনিত”
“আমার মাথা শোন’
“তোমার মাথা শোনা যায় নাকি’
“তোমাকে সাধেই গাধা বলি ….. “
“….”
.
“ আর তোমাকে বিছানা গোছাতে বলেছি তাতো খুব ভালভাবে গোছিয়েছ দেখছি”
“এইখন গোছাতাম তার আগেই তুমি চলে এসেছ”
“জানা আছে আপনি কত গোছাতেন….”
রিয়া এখন আমাকে বকছে আর বিছানা গোছাচ্ছে। মেয়েটার রাগ প্রচন্ড । যতক্ষণ পযর্ন্ত তার রাগ যাবে না ততক্ষণ আমাকে বিভিন্ন কাজের অছিলায় কথা শোনাবে। কখন কখন মনে হয় আমাকে কথা শোনিয়ে সে বড্ড বেশি মজা পাই”
.
.
“কি দেখছ এগুলো “
“টিভি দেখছি”
“আমি দেখতে পাচ্ছি তুমি টিভি দেখছ । টিভিতে এগুলা কি দেখছ”
“কেন… তুমি দেখতে পাচ্ছনা কি দেখছি”
“খবদার কথা পেচাবে না … তুমি মানুষ হ্যা .. এগুলা তোমাকে দেখতে কতবার নিষেধ করেছি”
“আরে এই মুভি টা ভাল”
“আমি জানি ওর্যেসটান মুভি গুলো কত ভাল… আর পুরুষ মানুষের চোখ গুলা যে কত ভাল তা আমার খুব ভাল জানা আছে”
কথা গুলো দাত পিষে আমাকে বলছে রিয়া,
“আমি যে তোমাকে এসব মুভি দেখতে নিষেধ করেছি কানে যায় না …… বন্ধ কর টিবি…. এখন পযর্ন্ত বন্ধ করে নি”
“ একটু মুভিই দেখছি নাকি…. একটু বিনোদনের দরকার নেই’
“আমি কি বলেছি বিনোদনের দরকার নেই , এগুলা বাদে বিভিন্ন বাঙ্গালি চ্যানেল আছে, কতরকমের বই আছে…. ও…. আপনি লাটসাহেবের বই পড়তে মন যাই না বিরক্ত লাগে”
“আমি বই পড়ি না কে বলল তোমায়… তাছাড়া এখন আমার বই পড়ার সময় আছে নাকি…বই পড়ার সময সেই চাকরি পাবার পর থে …..”
“পর থেকে শেষ হয়ে গেছে তাইনা …. তিুমি লোকটা আসলেই খারাপ….. শুধু পড়া লেখারি বই আছে আর কোন বই নাই নাকি…. না জীবনে পড়া লেখারর সময় চুকে গেছে বই পড়ারর আর লাগবেনা”
‘তা না..’
তা নাতে…কি বল?’
“তোমার না হাতে কাজ…. কাজ কখন করবে … .’
“এখন একটা কাজ করছি”
“কই … আমি তোমাকে শুধই বকতেই দেখছি”
“এই বকা দেওযা টাই একটা কাজ করছি…… তোমাকে বাকা থেকে সোজা করছি….. বুঝলে”
সত্যি আমাকে বকা দেওয়া মেয়েটার কাজ বটে।
.
.
.
২
.
.
“বাবাই ..বাবাই”
“বল মামনি”
“বাবাই প্রিয়ংবদা মানে কি”
“ দাড়াও একটু ভেবে বলি”
এর মাঝে রিয়া কোথাই থেকে জুড়ে এসে বলতে শুরু করে দিল,
“তোমার বাবাই এর মানে খুজে পাবে নাকি পারে তো শুধু …“
রিয়া কথাটা বলতে বলতে আমার দিকে এমন ভাবে তাকাল যে পুরো কতাটা বুঝতে আমার কোন অসুবিধাই হয়নি। মা মেয়ে একরকম হয়েছে মেয়ের মা প্যারা দেয়ই সাথে মেয়েটাও কতক সময প্যারা দিতে বাদ রাখে না ।
“ আচ্ছা আমি যখন পারি না তুমিই বল মানে কি?”
রিয়া আমার কথাটা শুনে মুখে তাচ্ছির হাসি এনে মেয়ের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসি এনে বলল,
“মামনি তোমার বাবাই কে তুমি মানে টা বলে দেও”
“বাবাই তুমি এর মানে জানো না”
“তুমি এর মানে জান!”
“হুম এর অর্থ হল যে নারী সুন্দর কথা বলে”
“তুমি এর অর্থ জানতে আমাকে জিঙ্গেস করলে কেন”
“এমনিতেই”
“মেয়ে আর মেযের মা দুজনেই এক.. দুজনেই”
“ কি বললে তুমি?”
“বললাম মেয়েটা একদম তোমার মত হয়েছে”
“ ভাল হয়েছে , তোমার মত তো আর হয়নি তাহলে পুরোদমে গবেট হয়ে যেত”
“এই তুমি সবসময় এরকম মেজাজ নিয়ে কথা বল কেন …. ভাল ভাবে কথা বলতে পার না “
“তুমি কাজ গুলো কর মেজাজ গরম করার “
“একটু রোমান্টিক হত পার না একটু… প্রিয়ংবদা হতে পার না”
“ হুহ … তুমি যেমন কাজ কর তেমন ব্যাবহার পাও , কাজগুলা আগে ভাল কর বুঝলে”
কথাটি বলে মেয়েটা চলে গেল তার পিছ পিছ রিয়ার ডুবলিকেটাও।
মা আর মেয়ে একই রকম রিযা তো বকা দেই আর মেয়েটা এমন কাজ করে যেন রিয়টা আরও বকা দেওযার সুযোগ পাই । সবে মাত্র ৭ তে পা পরেছে মৌ এর…. এরই মধ্যে অনেক দুষ্ট হয়েছে।
“শোনছ”
“বল”
“নিচে যাও তো”
“নিচে!…. এত রাতে নিচে কেন যাব?”
“লবণ ফুরিয়ে গেছে এনে দাও”
“এখন লবন দিয়ে করবে কি? তাছাড়া রান্নাও হয়েছে…তাহলে এখন আবার লবণ লাগবে কেন ?”
“এত বেশি বুঝ কেন .. তোমাকে যা বলা হল তা কর”
“এত রাতে নিচে যাওয়া যায় …কালকে এনে দিব”
“সবে নয়টা বাজে… সকালেই লবণ লাগবে”
“ সকালের টা সকালে দেখা যাবে”
“তুমি যাবে কি না তাই বল আর ভোর সকালে তোমার জন্য দোকান খোলা রাখবে ।”
“পাশের বাসার ভাবির কাছ থেকেও তো আনতে পার নাকি”
“ এখন তুমি কি করবে…. এই এইটুকু কাজ করতে পারবে না …. আর খাওযার পর একু হাটা চলা-ফেরা কর না । মুটিয়ে যাচ্ছ তুমি… এখন সুন্দর ভাবে নিচে যাবে তুমি ….ব্যায়মও হবে লবন ও আনা হবে।”
“কি আর করা যাচ্ছি”
“হুম”
“চাবি টা কই”
“ এই নেও”
রিযা মেযেটা আসলেই বদ…. সবসময একটা না একটা কাজের অছিলায় প্যারা আমাকে দেবেই । কতক সময়ই মনে হয় বিয়েটা করেই ভুল করেছি আবার কতক সময় মনে হয আমার মত সুখি মানুষ আর একটাও নাই । যখন ছোট্ট মৌ টা বাবাই বাবাই করে এসে জড়িয়ে ধরে কোলে উঠে আর বদ রিযটার একটু ভালবাসা পেলে তখন যেন মনে হয় আমার মত সুখি বোধ হয় পৃথিবীতে একটাও নাই কিন্তু বদ রিয়া টা সবসময় ভালবাসার বদলে প্যারার উপরেই রাখে…. ।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা