অন্তহীন ভালোবাসা

অন্তহীন ভালোবাসা

খালাতো ভাই অনিকের বিয়েতে ইনভাইট শুভ। ইনভাইটেশন কার্ড পাওয়ার পর খুবই উল্লাসিত সে।
ইশ!কত দিন থেকে বিয়ের মজা অনুভব করি নি (মনে মনে
ভাবলো শুভ)।
নির্দিষ্ট দিনের ১দিন আগেই বিয়ে বাড়িতে উপস্থিত শুভ। খালার বাড়িতে এসেই শুনলো হবু বউ নাকি দেখতে খুবই সুন্দর। অবশ্য শুভ আর অনিক সমবয়সী। সম্পর্কে খালাতো ভাই ছাড়াও অনেক ভালো বন্ধু তারা। নির্দিষ্ট সময়ে বিয়ে বাড়িতে হাজির বর পক্ষ। গাড়ি থেকে নেমে গেটে সেই গ্রাম বাংলার চিরাচরিত সম্ভাষন। কনের কয়েকজন বোন গেট ফিতা দিয়ে আটকে রেখেছে। উদ্দেশ্য নতুন দুলাভাই এর কাছ থেকে কিছু আদায় করা।

অনিকের পাশেই শুভ। পকেট থেকে কিছু বের করে তাদের হাতে ধরিয়ে দিলো সে। তারপর সেখান থেকে মুক্তি পেল তারা। কিন্তু হঠাৎ কি হলো শুভর। সবকিছু আনন্দ যেন তার
কাছে মাটি হয়ে গেল। কিন্তু কেন?
ওই যে গেটে নতুন ভাবীর কয়েকজন বোন! তাদের একজন কে মনে ধরেছে তার। পরে খবর নিয়ে জানতে পারলো
মেয়েটার নাম আখি। নতুন ভাবীর চাচাতো বোন।
….
এখন সে অনিকের পাশে না থেকে আখির পেছনে ছুটছে। উদ্দেশ্য একটা সুযোগ। যদি তা পেয়ে যায় তাহলে আজকেই তাকে প্রস্তাব দিবে। আপনি কি ভাবছেন প্রেমের প্রস্তাব? আরে না সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব। এর আগে
কখনো প্রেমের সাথে নিজেকে জড়ায়নি। হঠাৎ একটা সুযোগ সে পেয়ে গেল। আখি কে দেখলো একটা গাছের
নিচে দাঁড়িয়ে থাকতে। একবার অবশ্য দুজন একে অপরের চোখাচোখি হয়েছিলো। এতে সে শুভর মুখখানা দেখে আলতো হাসি হেসেছিলো।
..
সেখানে গিয়ে আখির পেছনে দাঁড়ালো শুভ এবং গলা খাকড় দিলো। আখি পেছনে ফিরে তাকিয়ে,
–একি আপনি?
–আমি শুভ, আপনার নতুন দুলাভাই এর খালাতো ভাই।
–ও আচ্ছা, আমি আখি। আপনার নতুন ভাবীর চাচাতো বোন। তা হঠাৎ এখানে?
–না মানে,একটু বাতাস খাওয়ার জন্য বের হলাম। আর এসেই আপনাকে এখানে পেলাম।
–তাই বুঝি? কিন্তু আমি তো অনেকক্ষণ ধরে দেখছি আপনি আমাকে ফলো করছেন।
— ধরেই যখন ফেলেছেন এখন আর মিথ্যা বলে কি লাভ??আসলে আপনাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে।
— হা হা হা।প্রথম দেখেই?
— হুম, তবে আপনার হাসিটা খুব সুন্দর।
— তাই বুঝি?
— হুম, আমি আপনার বাবার কাছে আমার বাবাকে আমার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে পাঠাবো। সত্যি বলতে কি আমি আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি।যদিও এ সম্পর্কে আমার
অভিজ্ঞতা নেই।
— আপনি একটা বেলাজুক ছেলে। আপনার মুখে কিছুই আটকায় না।
..
এই কথা বলে মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেল আখি। তার মানে সে রাজি? কিছুটা স্বস্তি অনুভব করলো শুভ।
বিয়ের সব ঝামেলা মিটে যাওয়ার পর শুভ তার বাবা মাকে তার পছন্দের কথা জানালো। বাবা শুভর কথামতো তাদের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আখিদের বাড়িতে যায় এবং তারাও
কোন আপত্তি করে নি। বিয়ের দিন ধার্জও করা হয়।
..
কিন্তু হঠাৎ দেশে গোলযোগ সৃষ্টি হয়। পাকিস্তানি হানাদাররা ঢাকায় হত্যাকান্ড চালিয়েছে। বঙ্গ বন্ধুর আদেশে জিয়াউর রহমান বাংলার মানুষদের কে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহবার জানান।
..
তারপর শুভ একদিন আখিদের বাড়িতে এসে উপস্থিত হয়। সে আখির সাথে কিছু কথা বলার অনুমতি চাইলো। যখন
তাকে অনুমতি দেয়া হলো তখন সে বলতে শুরু করলো,
-দেখ আখি আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। আমাদের বিয়ের তারিখও ঠিক হয়ে গেছে। কিন্তু আমি এখন বিয়েটা করতে পারবো না। কারণ এখন দেশে স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ চলে যেতে হবে আমাকে। আর আমরা এখন বিয়ে করলে শান্তিতে থাকতে পারবো না। তাই আমি যুদ্ধে যাব। দেশকে শক্র মুক্ত করবো ইনশাআল্লাহ। তাই যুদ্ধে যাওয়ার আগে তোমাকে একনজর দেখতে আসলাম।
.
— যাও তুমি যুদ্ধে যাও। আমি তোমাকে বাধা দেব না।তবে আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করবো। দরকার হলে চিরটাকাল। আমার এই অন্তরে থাকবে শুধু তুমি।
.
অতঃপর আখির কাছে বিদায় নিয়ে শুভ চলে যাচ্ছে। আখি শুভর দিকে তাকিয়ে আছে। আখির চোখে-মুখে স্মিত হাসি। শুভকে দেখা অবধি দাঁড়িয়ে রইলো এবং মনে মনে ভাবলো, ‘দোয়া করি, একটা স্বাধীন মানচিত্র নিয়ে আমার কাছে ফেরত এসো।’

………………………………………..(সমাপ্ত)……………………………………..

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত