পরীক্ষা শেষ! বেশ কয়েকদিন ছুটি। বাসায় যাওয়া দরকার। অনেকদিন হলো বাসায় যাওয়া হয় নি।
ম্যাসে থেকে পড়াশোনা করা।
পরিবার থেকে সম্পুর্ন আলাদা একটা ব্যাপার। যা একাকিত্বটাকে বেশ খানিকটা বাড়িয়ে দেই।
.
বাড়ি যাচ্ছি।বাড়িতে অবশ্য জানিয়ে দিয়েছি আজ আসছি।
বাড়িতে পৌছে সিড়ি দিয়ে উঠতে যাবো এমন সময় একটা মেয়ে সামনে এসে দাড়িয়ে পড়লো।
মনে হয় ও একটা লালা লা…. গানের টিউন বলতে বলতে আসছিলো।
আমাকে দেখে চোখ বড় বড় করে তাঁকালো। মনে হচ্ছে ভুত টুত দেখছে।
আমিও তাঁকালাম চোখ বড় বড় করে। দুজন দুজনকে দেখছি। আর ভাবছি আমার বাড়ি থুক্কু আমার বাপের বাড়িতে এত সুন্দর রমনীর আবির্ভাব ঘটলো কিভাবে?
মেয়েটি এবার পাশ কাটিয়ে আমাদের নিচ তলার ফ্লাটে ঢুকে গেল। তারপর মুখটা বাকিয়ে, খুব জড়ে দরজাটা লাগিয়ে দিল। এটা কি হল?
ভিতরে ঢুকে আমার সেই চিরচেনা রুমটাই আগে গেলাম।তারপর ফ্রেশ হয়ে
মা কিছু খাবার দিল, খেলাম।
দেহখানা কেমন জানি ম্যাজম্যাজ করছে। তাই শুয়ে পড়লাম।
.
বিকাল চারটা
ঘুম থেকে উঠে দৌড়ে ছাদে গেলাম।
কারণ ছাদে অনেক সখ করে ফুলের চাষ করেছি। এখন সেটা ফুল বাগানে পরিনত হয়েছে। এত দিন না থাকায় হয়তো, সেবা যত্নের অভাবে গাছগুলো শেষ হয়ে গেছে।
কিন্তু না গিয়ে দেখি গাছগুলো আগের তুলনায় অনেক ভালো হয়েছে আর ফুলও ফুটেছে অনেক গাছে। খুশিতে মনটা ভরে গেল।
পিছনে ঘুরে দেখি সেই সিড়ির মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে। হাত দুয়েক দুরে হবে।
— খুব সুন্দর ফুল বাগান তো আপনার
— হুম কিন্তু কে আপনি?
— আমি তো একজন
— তো কি চাই? আপনি এখানে কেন? জানেননা ছাদে ওঠা নিষেধ। (আমি)
— কই কোথায় লিখা আছে দেখি? কই লিখা নাইতো(উকিঝুকি মেরে)
— লিখা নাইতো কি হয়েছে! আপনি নামুন।
— আপনি এমন কেন?
–কেমন?
— কেমন কেমন যেন!যতটা ভাল মনে করেছিলাম ততটাও না। মুখে রসকষ বলতে তো কিছুই নেই
— মানে?
— কিছুনা হুহ
মুখ বাকিয়ে মেয়েটা নেমে গেল।
উফপ মেজাজটা গরম করে দিলো। যে সে এসে ছাদে উঠবে আর আমার সাধের গাছগুলোর বারটা বাজাবে।
.
পরের দিন সকালে
রুমে বসে গিটারের একটা নতুন টিউন তুলছিলাম।
*কেন তুমি এমন বারে বারে ডাকো
না জানা সে স্বপন চলোনা
যেন তুমি আছো,কেন তুমি গেছো।
শোন কান পেতে ছলনা, শোননা….
এমন সময় কানে এলো পাশের ঘরে থেকে কয়েকজনের কথা। মা তো একা, বাবা বাড়িতে নেই। তাহলে কার সাথে কথা বলছে মা।
উঠে গিয়ে রুমে ঢুকলাম।
গিয়ে দেখি ওই মেয়েটা আর সাথে আর একটা মেয়ে বসে আছে। আমার এন্টেনাতে বলছে ওটা ওর মা হবে।
আমাকে দেখে মেয়েটি খিলখিল করে হেসে উঠলো। আজব তো, হাসির কি হলো রে বাবা?।
–ভিতরে আয়!
পরিচয় করিয়ে দেই।
এ হলো আমাদের নিচ তলার ভাড়াটে।
শিফা মামনি আর ওর মা। (মা)
ও তারমানে ওর নাম শিফা। বাহ শিফা কি সুন্দর নাম,!বলতে তো জোশ লাগছে।
— ও এটাই তাহলে আপনার ছেলে ভাবি (আন্টি)
— আস-সালামুআলাইকুম আন্টি!
— ওয়ালাইকুম-আসসালাম বাবা! কেমন আছো?
— জ্বী ভালো আন্টি। আপনি?
— ভালো!তোমার মা তো রোজ তোমার কথা বলে। হুম সত্যিই তুমি অনেক ভালো,ভদ্র।
মা বলছে একথা, বলারই কথা ছেলে যতই খারাপ হোক না কেন মা রা ভালোই বলে।
— ওকে আন্টি আমি আসি আপনারা গল্প করেন।
— এই কোথায় যাস(মা)
— বাইরে, অনেকদিন হলো বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয় না।
— আড্ডা পরে দিস। এখন শোন
— কি?
— শিফার কালকে থেকে পরিক্ষা শুরু, আমাদের বাজারের কলেজটাই ভর্তি হয়েছে। তোকে ওকে নিয়ে যেতে হবে।
— বাবা তুমি যদি একটু কষ্ট করতে। ওর বাবা তোএখন নেই আর এলাকায় আমরা নতুন। মেয়েটাকে একা ছাড়ি কি করে বল?
*কি বলবো এখন। এই মেয়েকে যদি নিয়ে যায় তো আমি শেষ। হারামি বন্ধুগুলা যদি দেখে তাহলে তো তিল কে তাল বানিয়ে ছাড়বে।
এখন না বলি কি করে? না বললেও তো খারাপ দেখায়।
তাই বললাম আচ্ছা আন্টি নিয়ে যাবো। পরিক্ষা তো কাল থেকেই শুরু তাইনা?
— হুম বাবা তুমি অনেক বড় উপকার করলে।
— না না আন্টি কি বলছেন এসব? উপকার কেন হবে, এটা তো আমার দায়িত্ব। আর আমিতো আপনার ছেলের মতই।
(পুরোনো ডায়লক দিলাম)
— বলেছিলাম না আপনাকে আমার ছেলে না করবে না? ( মা)
বেরিয়ে যেতে যেতে মায়ের কথাটা শুনলাম। ধুর আবার কি ঝামেলায় পড়লাম রে?
.
রাতে খাবার খাচ্ছিলাম। তখন মাকে বললাম
মা ফুলগাছগুলোতে তো অনেক ফুল ধরেছে।
— হুম! সব শিফার জন্য!
— মানে?
— ওইতো তোর গাছে পানি দেওয়া, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা করা। সবই করতো
— ও তারমানে তুমি যত্ন করো নাই?
— করার সময় কোথায় বল?
বাড়ির কাজ করতে করতে দিন শেষ হয়ে যায়।
আশ্চর্য্য ওই মেয়েটাই তাহলে,,, এত কষ্ট করে আমার গাছগুলোকে দেখাশুনা করছে। আর আমিই তাকে কিনা অপমান করে ছাদ থেকে নামিয়ে দিলাম। নাহ আমি এটা ঠিক করি নি। একদমই না।(নিজে নিজে বললাম)
কাল ক্ষমা চেয়ে নিবি।
মাকে জিজ্ঞাসা করে আরো জানতে পারলাম।আমি যতদিন ছিলাম না ততদিন ওই মেয়েটাই মায়ের দেখাশুনা করছে।
ওর বাবা পুলিশ। প্রমোশন পেয়ে ,আমাদের এরিয়ার থানাতে ট্রান্সফার হয়েছে। কিন্তু কি যেন একটা কাজে এক মাসের জন্য বাইরে গেছে।
আর শিফা তাদের একমাত্র মেয়ে, ওর একটা ছোট ভাইও আছে। ক্লাস টু তে পড়ে।
শিফা এবার এইচ এস সি ক্যান্ডিডেট।
এসব ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি মনে নেই।
.
সকালে ঘুম ভাঙলো মায়ের ডাকে।
উঠে ফ্রেশ হতে যাবো তখন দেখি, মেয়েটা সোফায় বসে আছে।
নীল কালারের একটা ড্রেস পড়েছে। যা তাকে মোটেও খারাপ লাগছে না। দশটা নীল গোলাপের মধ্যে ও একটা।
আমার দিকে তাঁকিয়ে বলল –এই যে একটু তাড়াতাড়ি করবেন?আজ প্রথম দিন একটু আগে যাওয়া লাগবে।
প্রথমে ওর দিকে তাঁকালাম তারপর
ঘড়ির দিকে তাঁকিয়ে দেখি ৯টা ১০ বাজে
— হুম
মেয়েটাকে গতদিন ওইভাবে বললাম। তারপরেও আমার সাথে কথা বলছে যেন কিছুই হয়নি।
তারপর একটু নাস্তা করে বেরিয়ে পড়লাম।
— এই যে মামা যাবেন
অটোওয়ালাকে ডাক দিলাম।
— অটো কেন?
— তো কিসে যাবো?
— রিক্সায়?
— রিক্সা কেন? এখান থেকে অটো অথবা সিএনজিতেই যেতে হবে।
— না আমি রিক্সাতেই যাবো।রিক্সা ডাকেন।
এই মেয়েতো দেখছি আমাকে ফাসিয়েই ছাড়বে। কি করব এখন?
— কি হলো ডাকেন?
— ডাকছি
.
দুজনে রিক্সায় বসে আছি, শিফা যে আমার পাশে বসে আছে, এটা এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না ।
মাঝখানে অবশ্য মোটামোটি ভালোই গ্যাপ।
গতদিনের খারাপ ব্যবহারের জন্য এখনি ক্ষমা চাওয়ার উপযুক্ত সময়।
ও সামনের দিকে তাঁকিয়ে আছে। মাঝেমধ্যে আমার দিকে তাঁকাচ্ছে। চোখাচোখি হলে চোখ নামিয়ে নিচ্ছে।
আমি তখন শিফাকে বললাম,, শিফা
— জ্বী বলুন!
— গতদিনের জন্য আমি সরি
— মানে?
— ওই যে ছাদে।
— ও
— ও কি?
— আমি কিছু মনে করিনি!
–থ্যাংকস! থ্যাংকস
— দুটা থ্যাংকস কি জন্য?
— আমার বাগানের ফুলগাছ গুলোর এতদিন পরিচর্যা করার জন্য।
— এজন্য থ্যাংকস বলার কিছু নেই। । জাস্ট ফুল আমার ভাললাগে তাই করেছি।
আমি আর কিছু বললাম না। ওকে কলেজে নামিয়ে বাসায় চলে আসলাম।
এভাবেই কেটে গেল বেশ কয়েকদিন। প্রতিদিনই শিফাকে ওর কলেজে রেখে আসি আবার নিয়ে আসি।
আজও যাচ্ছি!
— একটা কথা বলবো? ( শিফা)
— হুম বলুন!
— আমিতো আপনার ছোট আমাকে তুমি করে বললেই বেশি খুশি হবো।
— হুম কিন্তু…
— কোনো কিন্তু না ? আজ থেকে তুমি করে বলবেন।
— আচ্ছা ঠিক আছে।
আমি একটা জিনিষ লক্ষ করলাম যে শিফা আগের তুলনায় এখন আমাদের বাসায় খুব ঘনঘন আসে। আমিও যাই ওদের বাসায় কিন্তু খুব একটা না। ছেলে হয়ে বারবার মেয়ে বাসায় যাওয়া যায় না।
.
বিকেলে ছাদে বসে আমার প্রান প্রিয় গিটারটা বাজাচ্ছিলাম। এটিই আমার একাকিত্বের সঙ্গি।
হঠাৎ দেখি শিফার আগমন! আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে।
— শিফা!
–……..(শিফা)
–এই শিফা!
–হুমম! (চমকে উঠে)
–কি হল?
— কিছু না। আপনিতো খুব সুন্দর গিটার বাজান।
— থ্যাংকস। তবে ওতটাও ভাল না।
— কে বলল?
— আমি জানি!
— কচু জানেন! হুহ
শিফা এসে আমার পাশে বসে পড়লো।
–তুমি কি সবসময় এরকম মুখ বাঁকিয়ে কথা বল
— হিহিহিহিহি
কই নাতো। শুধু আপনার সাথেই
— তাই বুঝি?
— হুম
অদ্ভুত মেয়ে! যা এ কয়দিনে বুঝতে বাকি নেই। ওর মধ্যে অদ্ভুত এক ধরনের ক্ষমতা রয়েছে, কাউকে খুব সহজে আপন করে নেবার।
— আমাকে গিটার বাজানো শিখাবেন?
— হুম শিখানো যায়।তবে?
— তবে কি?
— এটা শিখতে অনেক সাধনার প্রয়োজন পড়ে। আগে সাধনা কর তারপর।
— ওকে
এভাবেই চলতে থাকে আমাদের কথা। কাটতে থাকে দিন।
.
কলেজ ছুটির পর ওকে আনতে যাই ।
একদিন দুরে থেকে দেখি কয়েকজন ছেলের সাথে কথা বলছে। কাছে যাবো কি যাবোনা ভাবতে ভাবতেই ও বেরিয়ে আসলো।
— চলো (আমি)
— কোথায়?
— কোথায় আবার বাসায়
— পড়ে যাবো!!
— পড়ে যাবো মানে?
— আরে আসো তো বলি ( শিফা, এখন আমাকে তুমি করেই বলে)
এ বলেই আমার হাতটা ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেল। এই প্রথম ও আমার হাত ধরলো। কেমন জানি অন্যরকম লাগছে।
কোথায় যাচ্ছি এখন তো কে জানে। তারপর দেখি একটা পার্কে নিয়ে আসলো।
চারিদিকে শুধু কাপল আর কাপল। সে কি অবস্থা?
— এখানে কেন আসলে?
— কেন?
— জায়গাটা ভালো না চলো!
— ওমা এখনিতো আসলাম , একটু বসি! আর ভালোনা কেন?
ওর দিকে তাঁকিয়ে দেখি মুচকি মুচকি হাসছে।
— সেটা বলতে পারবোনা।
— ওকে বলা লাগবেনা। চলো ফুচকা খাই।
— হুম চলো
তারপর বিকেলটা ঘুরে বাসায় চলে আসলাম।
.
সকালে
ক্রিং ক্রিং বন্ধুর ফোন। এলাকারই
— হ্যালো দোস্ত
–……
…………..
……..
……
— কি? কি যা তা বলছিস তুই
— যা শুনলাম তাই বলছি
রাগে ফোনটা কেটে দিলাম।
ছাদে পায়চারি করছি। শিফার জন্য অপেক্ষা করছি।
মেয়েটার সাহস দেখে অবাক হচ্ছি। ইচ্ছে করছে…!
— কি হয়েছি মি. এর এত জরুরী তলব?
আমি ঘুরেই ঠাস করে একটা চর বসিয়ে দিলাম। ও গালে হাত দিয়ে বসে পড়লো। চোখে পানি টলমল টলমল করছে।
— তোমার সাহস কি করে হয় এসব বলার? আমি তোমাকে ভালবাসি। আর সেজন্য তোমাকে নিয়ে রিক্সায় ঘুরি পার্কে যাই। এসব কেন বলে বেরিয়েছো তুমি?
দুদিন ঘুরছি বলে কি আমি তোমাকে ভালবাসি? কক্ষনো না! আর সেটা কখনো মনেও করবা না
তারপর ছাঁদ থেকে নেমে নিচে চলে এলাম।
.
দুদিন হয়ে গেল শিফার সাথে কথা বলিনা। দেখাও হয়নি দুদিন। মেয়েটার সাথে কথা না বলে কেমন জানি লাগছে।মনে হচ্ছে আমার জীবন থেকে বড় কিছু হারিয়ে গেছে। আমি কি তাহলে শিফাকে ভালবেসে ফেললাম?
রোজ যে মেয়েটা বাড়িতে এসে বাড়িটা মাতিয়ে রাখতো সে মেয়েটা আর বাড়িতে আসেনা।
ইসস মেয়েটিকে সেদিন ঐভাবে চড়টা না মারলেও পারতাম। রাগের মাথায় কি যে করে বসলাম ধুর। ক্ষমা চাওয়া দরকার।
ছাদে গেলাম সেখানে নেই।
সিড়ি থেকে নিচে উঁকি মারলাম দরজা বন্ধ। নক করবো গিয়ে। না থাক।।
তারপর রুমে এসে মা কে বললাম
— মা শিফা বাসায় আসছিলো আজ।
— নাতো ! শুনলাম ওর নাকি জ্বর হয়ছে।
— জ্বর!! কখন!? কবে থেকে!!?
— গত দিন থেকে নাকি
— তো আমাকে জানাওনি কেন?
— ভুলে গেছি বলতে
দৌড়ে ওদের রুমে গেলাম। আন্টি দরজা খুলে দিলো।
— আন্টি শিফা কোথায়?
— ওই তো ওর রুমে শুয়ে আছে।
গিয়ে দেখি মেয়েটি গালে হাত দিয়ে, ডান কাত হয়ে ঘুমিয়ে আছে। চুলগুলো এলোমেলো উষ্ক খুষ্ক।চুলগুলো সরিয়ে কপালে হাত দিলাম মোটামোটি ভালোই জ্বর এখনো।
— দেখতো বাবা জ্বর হয়ছে, বলছি ডাক্তার ডাকি তো বলছে লাগবে না।
আবার কিছু মুখেই তুলছে না।
— কি বলেন শিফা না খেয়ে আছে।
— হুম! কিছু না খেলে ঔষধ খাওয়ায় কি করে? আমি কিছু বুঝতে পারছিনা বাবা। কিছু একটা কর?
আন্টি কেঁদে কেঁদে কথা গুলো বললো।
— শিফার জ্বর হয়েছে আমাকে আগে বলেন নি কেন?.
— বলতে তো চেয়েছিলাম কিন্তু শিফা মানা করলো।
— ও
তারমানে মেয়েটি আমার ওপর এখনো রাগ অভিমান নিয়ে বসে আছে। রাগ করারই তো কথা।
— আন্টি যান খাবার নিয়ে আসেন! আমি দেখছি
— আচ্ছা বাবা যাচ্ছি।
.
শিফার টেবিলের দিকে চোখ যেতেই দেখি একটা ডায়রি,কলম রাখা আছে মাঝ বরাবর।
ডায়রিটা হাতে নিয়ে, কলম বরাবর বের করলাম।
সেখানে লেখা.. আমার যে জ্বর, না খেয়ে আছি এ দুদিন ফাজিল হুনুমানটা একবারের জন্য খোজ পযর্ন্ত নিলো না। হুনুমানটা ঠিকই তিনবেলা পেট ভরে খাচ্ছে! ওর সাথে আরি আরি। আর কক্ষনও কথা বলবোনা।
.
লেখাটা দেখে বেশ অবাক হলাম। ডায়েরির প্রথম পাতায় গেলাম।
ওখানে ছোট করে একটা তারিখ দেওয়া। আর নিচে লেখা।
*কারো ছবি দেখে কি তার প্রেমে পড়া যায়?
* শুনলাম আজ নাকি আন্টির ভদ্র ছেলেটা আসবে, কতটুকু ভদ্র সেটাই দেখার বিষয়।
* আজ সিড়িতে একটা হুনুমানের সাথে দেখা হয়ে গেল। চারচোখ ওয়ালা হুনুমান। কেমন চোখ বড় বড় করে তাকাচ্ছিলো আমার দিকে। হুহ
ওটাই নাকি আন্টির ভদ্র ছেলে!
* প্রথম দিনই হুনুমানটা আমাকে ছাদ থেকে অপমান করে নামিয়ে দিলো। এর প্রতিশোধ আমি নিবোই। আজ না হয় কাল
* একটা প্ল্যান করছি হুনুমানটাকে জব্দ করার। আমাকে রোজ কলেজে নিয়ে যাবার। দেখি হুনুমানটা এ থেকে রেহাই পাই কি করে?
*এত বড় হুনুমানটা এখনো হাফ পেন্ট পড়ে। হাহাহা ওকে দেখে হাসি থামাতে পারিনি।
* হুনুমানটা আজ নীল পাঞ্জাবি পরেছে। এতে ওরে অনেক কিউট দেখাচ্ছে।
* হুনুমানটাকে যতটা খারাপ মনে করছিলাম, ও ততটাও খারাপ না। ও অনেক ভালো। অনেক ভালো!
আজ আমাকে নিয়ে ঘুরছে। আইসক্রিম, ফুচকা খাওয়াইছে। খুব মজা করছি। এ দিনটি আমার জীবনের শ্রেষ্ট একটা দিন।
* হুনুমানটা আজ কোন এক নাক বুচা মেয়ের সাথে হেসে হেসে কথা বলছিলো। ইচ্ছে করছিলো গিয়ে দুজনের নাকটা ফাটিয়ে দেয়। এত কিসের কথা হুহ? আমার সাথে তো এমন হেসে হেসে কথা বলেনা। ধুর
ও কথা বললো তো আমার কি? আমার তো কিছুনা।
* হুনুমানটা আজ আমার হাতটা ধরে রাস্তা পার করে দিয়েছে। এ প্রথম ও আমাকে সর্প্শ করলো। ইসসস
* আজ কেন জানিনা শুধু হুনুমাটার কথায় ভাবছি। আমি কি তাহলে সত্যি সত্যি প্রেমে পড়ে গেলাম হুনুমানটার। যাহ.. লজ্জা লাগছে।
*হুনুমানটাকে যে আমি ভালবাসি এটা কি ও বোঝে না। সারাক্ষণ ওর সাথে কথা বলার জন্য ছটপট ছটপট করি। ও কি বুঝে না।
* হুনুমানটা আমাকে ছাদে ডাকলো। ভাবলাম হয়তো ও আমাকে ভালবাসি কথাটা বলবে কিন্তু ফাজিল, ইতর শয়তান, হুনুমান টা আমাকে থাপ্পড় দিলো।
কোন কথায় আমার শুনালো না। চলে গেল।
কলেজের ছেলেগুলো রোজ আমাকে বিরক্ত করে তাই বলছি যে রাজ আমাকে ভালবাসে, আমিও তাকে ভালবাসি। এজন্য আমাকে নিয়ে ঘুরতে যায়। আমাকে যেন বিরক্ত করার কোন সাহস না পায়। ভুল কিছু কি বলছি আমি? আমিতো হুনুমানটাকে ভালোইবাসি।
.
পাগলি মেয়েটা আমাকে এত ভালবাসে। আমিও তো তোকে ভালোবেসে ফেলছি। তোর ওই মুখ বাকানো ফেস টার জন্য।
— তখন আন্টি খাবার নিয়ে এসে বলেন এই নাও বাবা। হুম দেন।
তারাতারি করে ডায়রিটা বন্ধ করে রেখে দিলাম।
— শিফা মামনি.. শিফা ওঠ দেখ কে আসছে?
(আন্টি শিফার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে ডাকছিলো)
— শিফা ওঠ মা কিছু খেয়ে নে
— খাবনা…..
— কেন? এই দেখ কে আসছে!
তারপর আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালো।
শিফা শুয়ে থেকে ওঠে বসতে লাগলো। আমি হাত দিয়ে তুলতে যাবো তখন আমার হাতটা বারি মেরে সরিয়ে দিলো।
তারপর পেচার মত মুখ করে ঘুরে থাকলো। রাগতো দেখছি এখনো কমেনি রাগকুমারীর।
— কাউকে আলগা দরদ দেখাতে হবে না! মামনি ওকে চলে যেতে বলো!(শিফা)
— কি বলছিস এসব? ও যাবে কেন ? (আন্টি)
— যা বলছি ঠিকই বলছি!
— আন্টি আপনি যান। আমি দেখছি।
–আচ্ছা বাবা
.
— শিফা খেয়ে নাও
–…….
— হা করো?
–…. …..
— সেইদিনের জন্য আমি দুঃখিত! আসলে সেদিন রাগের মাথায়। কি করে ফেলছি।সরি
–….
— অল্প করে খেয়ে নাও ঔষধ খেতে হবে তো,নয়লে জ্বর আরও বেশি করে বাঁধবে তো । কিজন্য না খেয়ে আছো বলতো? আমার ওপর এত রাগ তোমার?
–………….
— কি হলো কথা বলবানা আমার সাথে?
চলে যাবো আমি?
ওকে আজ থেকে আমিও তাহলে কিছু খাবোনা। না খেয়ে থাকবো, ভালো থেকো তুমি।
— এই কই যাও?
— চলে যাচ্ছি?
— তাহলে কে খাইয়ে দিবে আমায় ??
— হাহাহাহা,,,
— একদম হাসবানা খুন করে ফেলবো।
— ওকে চুপ। এবার তো হা করো
— এত বড় হা করতে বলিনি হুম
— ধুর ফাজিল
— শিফা?
— হুম!
— এ হুনুমানটার গলার মালা হবা
— তুমি আমার ডায়রি পড়ছো তাইনা ( চোখ বড় বড় করে)
— হুম!
… কি হলো হবেনা?
— হবো হবো হবো
— এতবার বলতে বলিনি।
— তোমাকে না…..গলা টিপে মারা উচিত। ফাজিল বানর, হুনুমান। আমাকে কষ্ট দিয়ে এখন মজা করা হচ্ছে তাইনা!
বুকের ওপর কিল ঘুসি চলছে,,, বুকে না জড়িয়ে ধরা পযর্ন্ত হয়তো চলতে থাকবে……।