অথৈই জল

অথৈই জল

নিধি যখন আমায় জিজ্ঞেস করলো, “তুই এখানে ক্যবলার মতো বসে আছিস ক্যান?” আমি গরম করা চাহনি দিয়ে তাকিয়ে বললাম, “তোমাকে না তুই করে কথা বলতে বারণ করেছিলাম” নিধি মুখটা পিছনে ফিরিয়ে বললো, “বারে, আমরা এখন বন্ধুনা বুঝি?” আমি আর কথা বাড়ালামনা ! আজ থেকে সাত দিন আগে এই মেয়েটা কোথা থেকে এসে জুড়ে বসলো কপালে ! সে আমাকে বন্ধুত্বের আবদর পাঠালে তিনদিন ঝুঁলিয়ে রেখে গত পরশু গ্রহণ করি ! কিন্তু আজ এসে হঠাৎ তুমি থেকে একেবারে তুইতে নেমে এলো ! ব্যপারটা আমার কাছে মোটেও ভালো লাগেনি ! আমি বিরক্তির ভঙ্গি করে বললাম, “এখন কি চাই?” নিধি বললো, “চলেন ফুসকা খাইতে যাই?” আমি বললাম, “সম্ভবনা, তুমি এখন আসতে পারো” !
মেয়েটা একরাশ কষ্ট নিয়ে বিদায় হলো ! আমি আমার মতো ফাও চিন্তা নিয়ে আবার ডুব দিলাম ! দুপুরে যখন বাসায় গিয়ে খাবার খেয়ে একটু রেস্ট নিবো বলে গাটা এলিয়ে দিলাম বিছানায় ঠিক তখন মা এসে বক বক শুরু করলো ! আমি বললাম, “মা, শরীরটা ভালোনা আমি এখন যেতে পারবোনা” আমার কথা শুনে মা বললেন, “থাবড় দিয়া গালের বত্রিশটা দাঁত ফেলায় দিমু” আমি গলার স্বর নিঁচু করে বললাম, “আচ্ছা আমি যাইতেছি”..
আমি রেডি হয়ে এয়ারপোর্টের দিকে রওনা দিলাম ! আসলে আমার আসার কোনো ইচ্ছাই ছিলোনা কিন্তু এও জানি না এলে মা আমার রাতের খাবার হারাম করে দিবেন ! ছোট থেকেই মাকে অনেক ভয় পাই আমি ! আমি এয়ারপোর্টে এসে অপেক্ষা করতে লাগলাম ওয়ারিজার জন্য ! তার নাকি অনেক দিন হলো বাংলাদেশ ঘুরার শখ তাই আন্টিকে বলে সূদুর আমেরিকা থেকে চলে আসছে ! ওয়ারিজার সাথে ছোট বেলায় অনেকটা সময় কেটেছিলো আমার ! আমি ছোট বেলায় অনেক পেটুক ছিলাম…ঘরে মেহমান আসলে আমি মায়ের অগচরে ফিরিজ থেকে কিছুক্ষণ বাদে বাদে মিষ্টি চুরি করে খেতাম ! আর ওয়ারিজার কাজ ছিলো আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখে তা মাকে জানিয়ে দেয়া ! এর জন্য ছোট বেলাটায় আমি অনেক প্যারার মধ্যে ছিলাম ! কিন্তু ওয়ারিজা আমাকে কেনো যেন সহ্য করতে পারতোনা তবে আমার তাকে ভালো লাগতো, কেন লাগতো জানিনা…নয় মার্চ, আমার সপ্তমতম জন্মদিনে যখন ওয়ারিজা অনেক সুন্দর করে সেঁজে আমার সামনে আসছিলো তখন আমি মাথা নিঁচু করে তাকে জানাইছিলাম তাকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে ! ওয়ারিজা তখন আমায় ভেংচি কেটে বলেছিলো, “এ্যাই কি বললা তাহসান, তোমার হাব ভাব কিন্তু আমার কাছ ভালো ঠেকছেনা” !
ছোট কালে আমার একটা বড় ধরনের বদ অভ্যাস ছিলো ! আমার সাথে কেউ ন্যাকামি করলে আমি তার চুল ধরে একটা টান দিয়ে পালাতাম সে যেই হোক ! কিন্তু সেদিন প্রথম আমি ওয়ারিজার চুল ধরে টান মেরে এক দৌড়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা আটকাই দিই…এরপর টানা দুই দিন ওয়ারিজা অমার সাথে কথা বলেনি ! আমার তখন অনেক খারাপ লাগতো ! ওয়ারিজা কথা না বললে আমার কাছে পুরো দুনিয়াটা তখন অন্ধকার মনে হতো…আমি সেদিন রাতে ওয়ারিজার সামনে গিয়ে একশবার কান ধরে উঠবস করি…এরপর ওয়ারিজা আমার সামনে এসে মিষ্টি করে হেসে বলেছিলো, “অ্যাই আর যেন কখনো এমন ভুল করোনা” বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা এরপরেও আমার সাথে ওয়ারিজার অনেক ঝগড়া লেগেছিলো কিন্তু আমি তাকে কিছু বলতামনা…ওয়ারিজা আমাকে মারলে, কামড়াইলে,খামছাইলে যাই করতো আমি মুখ বুজে সহ্য করে একটা হাসি দিতাম মফিজের মতো ! একটা সময় ওয়ারিজাও কেমন যেন হয়ে গেলো, আমার সাথে আর ঝগড়া করতোনা…এরপর থেকে আমি যখন তার সামনে গিয়ে দাঁড়াইতাম ওয়ারিজা গাল ফুলিয়ে বলতো, “অ্যাই তাহসান, তুমি প্লীজ এখন থেকে আমার সামনে আইসোনা আমার কেমন যেন লাগে” আমি ওয়ারিজার কথা শুনেও না শুনার মতো করে তার সামনে বসে থাকতাম !
ওয়ারিজা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থেকে এরপর নিজেই চলে যেত ! আমি আমার মতো করে অনেকটা সময় বসে থাকতাম…ওয়ারিজ
া যেদিন বিদায় নেওয়ার জন্য আমার সামনে আসে আমি তার সাথে একটা কথাও বলিনি…ওয়ারিজা যাওয়ার আগে শুধু একবার আমার সামনে এসে বলছিলো, “আমি গেলাম, ভালো থেকো” ! আমি যদি তখন ওয়ারিজাকে বুঝাতে পারতাম আমার ভিতর দিয়ে কি বয়ে যাচ্ছে কিন্তু না, আমি খুব স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছিলাম…আমি নিজেই চাইনি আমার কষ্টটা কেউ দেখতে পাক ! তারপর অনেকটা বছর কেটে গেলো…আমি এখন আবার অপেক্ষা করছি ওয়ারিজার জন্য !
আমি যখন ওয়ারিজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম তখন তাকে কেমন যেন মনে হলো ! ওয়ারিজা বোধ হয় এখানে আমাকে আশা করেনি…পুরো রাস্তায় আমাদের মধ্যে খুব একট কথা হয়নি ! আর কেন যেন কথা বলার খুব একটা তাগিদও অনুভব করিনি আমরা…বাসায় এসে মাকে ডাক দিয়ে আমি রুমে চলে যাই ! এরপর ধুমসে একটা ঘুম দিলাম…যখন মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙ্গে তখন রাত দশটা…আমি ডায়নিং টেবিলের কোণার দিকের একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লাম…মা কিছুক্ষণ বাদে বাদে গরম করা খাওয়ার গুলো টেবিলে এনে রাখছিলেন ! কিছুক্ষণ বাদে ওয়ারিজা এসে যোগ দিলো আমার সাথে…
আমার কেমন যেন অস্বস্থি লাগতে আরম্ভ করলো ! আমি আড় চোঁখে একবার ওয়ারিজার দিকে তাকালাম, সে আমার দিকে বিরক্তির ভাব নিয়ে তাকাই আছে…মা এসে আমায় বলতে লাগলেন, “কিরে ঘরে এমন থম থম পরিবেশ ক্যান? মেয়েটা কত বছর পর আসলো কোথায় একটু কথা বলবি তা না এখন মুখ গম্ভীর করে বসে আছিস” আমি মায়ের কথা শুনে ওয়রিজার দিকে তাকাই বললাম, “কেমন আছো ওয়ারিজা?”
খাওয়া শেষ হতেই আমি আবার রুমে চলে আসলাম ! পরের তিন দিনে আমার সাথে ওয়ারিজার অনেক বার দেখা হলেও একদম কথা হলোনা…আমার সামনে যখন পড়তো সে আমি আস্তে করে মাথা নিঁচু করে পাশ কাটিয়ে চলে যেতাম ! সেদিন রাতে যখন আমি মন দিয়ে শরৎচন্দ্রের উপন্যাস পড়ছিলাম ঠিক তখন ওয়ারিজা আমার সামনে এসে দাঁড়াল…আমি বইটা পাশে রেখে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম ! আমি বললাম, “কিছু বলবা?”
ওয়ারিজা কোনো কথা না বলে আমার পাশে এসে বসলো ! এরপরে কি হতে পারে বা ঘটতে পারে তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম…
ওয়ারিজা বললো, “তুমি অনেক চেঞ্জ হয়ে গেছে, তা কি তুমি জানো?” আমি এই কথার কোনো উত্তর দিলামনা…ওয়ারিজা আমায় আবার বললো, “কাল কি তোমার সময় হবে?”
আমি বললাম, “হ্যাঁ” ওয়ারিজা আর কোনো কথা বললোনা, উঠে চলে গেলো ! আমার কাছে বিষয়টা কেমন যেন লাগলো ! আমার কি উচিত ছিলোনা তাকে সময় দেওয়া যদিও সেটা আমি করিনি ! এখন যখন ওয়ারিজা এসে বললো আমার সময় হবে কিনা তখন নিজেকে কেমন যেন ছোট মনে হলো নিজের কাছে…সকালে যখন আমরা ঘর থেকে বেড় হলাম তখন ঘড়িতে এগারোটা বেজে সাত মিনিট…ওয়ারিজা কিছুক্ষণ বাদে বাদে তার কেনন কোম্পানির ডি.এস.এল.আর টা দিয়ে কিসব ছবি যেন তুলছিলো ! হঠাৎ নিজের ভিতরে আজ কেমন যেন একটা পরিবর্তন লক্ষ করছিলাম হয়তো ওয়ারিজাকে অনেক দিন বাদে খুব কাছে থেকে দেখতে পাচ্ছি বলে কিংবা তার পাশে হাটতে পারছি বলে ! আমরা যখন লালবাগ পার্কের ভিতরে ঢুকলাম তখন সেখানে হাতে গোণা কয়েকজনের বেশি কাউকে দেখতে পেলামনা…ওয়ারিজা কিছুক্ষণ বাদে সিড়ি দিয়ে পার্কের লেগটার দিকে চলে গেলো ! লেগটায় তখন প্রচুর মাছ ! ওয়ারিজা খুব আগ্রহ নিয়ে দেখতে লাগলো কালো, বাদামী আর কমলা রঙের মাছগুলো ! স্কুল জীবনে ইভান আর আমার প্রায় এই জায়গাটায় আসা হতো…তাও প্রায় পাঁচ কি ছয় বছর আগের কথা !
ওয়ারিজা আমায় জানালো ক্যালিফোর্নিয়ায় তার বাসা থেকে দুমিনিট বাদে যে নদীটা আছে সেখানে প্রায় বিকেলে তার হাটা হয়…কথাটা বলার পর তাকে কেমন অন্যমনষ্ক মনে হলো আমার কাছে ! আমি জিজ্ঞেস করলাম, “তোমাকে দেখলে এখন অবাক হই?” ওয়ারিজা আমার দিকে ফিরে ড্যাব ড্যাব করে কিছুটা সময় তাকিয়ে রইলো !
“তোমার এমন মনে হলো কেন?”
আমি বললাম, “তোমার মনে পড়ে, আমার সপ্তম জন্মদিনে আন্টি আমায় একটা ঘড়ি গিফট করছিলেন?”
ওয়ারিজা “হ্যাঁ” বলে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো ! আমি আবার বললাম, “কেন যেন তুমি আমায় ছোট বেলায় খুব একটা সহ্য করতে পারতেনা, আন্টি যখন ঘড়িটা আমায় গিফট দেয় তখন তোমার চোঁখ দিয়ে পানি পরছিলো” ! ওয়ারিজা বলে উঠলো, “আর আমি তখন তোমায় দেওয়া গিফটটা টান দিয়ে নিয়ে ফেলি তাইতো?”
আমি এবার কিছুটা হেসে বললাম, “সেই তুমি আর এখনের তুমির মধ্যে কত পার্থক্য তাইনা?”
ওয়ারিজা আমায় বললো, “তুমিও অনেক বদলে গেছো” আমি ওয়ারিজার কথা শুনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম !
বিকেলের হালকা রোদে যখন টমি মামার দোকানে ফুসকা খাচ্ছিলাম ওয়ারিজার নাক, মুখ দিয়ে তখন অনবরত পানি ঝরে যাচ্ছিলো ! দেখে মনে হচ্ছিলো পাঁচ-ছয় বছরের কোনো মেয়ে আমার সামনে বসে আছে ! টমি মামাও আমার মতো খুব আগ্রহ নিয়ে ওয়ারিজার এই পাগলামী দেখছিলো…টমি মামা বললো, “মামণি পানি দিমু?”
ঝালে ওয়ারিজা তখন কথা বলতে পারছিলোনা…ঝাল কমলে আমি বললাম, “ঝাল সহ্য করতে না পারলে এতো ঝাল দিতে বললা কেন?” ওয়ারিজা আরেক গ্লাস পানি ডক ডক করে খেয়ে বললো, “আমি কি করে বুঝবো ফুসকা নাকি কি বলে যেন এগুলোতে এতো ঝাল হবে” আমি একটু অবজ্ঞার সুরে বললাম, “ইউ.এস.এ তে ফুসকা পাওয়া যায়না?”
আমরা যখন মাঝ রাস্তায় তখন আকাশটা কেমন গর্জে উঠলো ! মনে মনে বললাম ঘটনাতো খারাপ…আমি ওয়ারিজকে বললাম, “চল বাসায় ফিরে যাই এবার, মা হয়তো চিন্তা করছেন”… ওয়ারিজাকে আমার কথায় খুব একটা কান দিছে বলে মনে হলোনা…
বৃষ্টি আরম্ভ হতেই আমরা রাস্তার ধারের বটগাছটার নিচে গিয়ে দাঁড়ালাম ! আশে পাশে কোনো দোকান ছিলোনা যে সেটাতে গিয়ে আশ্রয় নিবো ! আর যদি রিক্সার কথা বলি তাহলে আরো পাঁচ মিনিট হাটতে হবে আর এই কয়মিনিটে বৃষ্টি যা করার করে দিবে ! ওয়ারিজা বললো, “তোমার বৃষ্টি কেমন লাগে?”
আমি জানালাম যদিও বৃষ্টি ভালো লাগে কিন্তু এই মুহূর্তে বিরক্ত লাগছে ! ওয়ারিজা আমার কথা শুনে ফিক করে হেসে দিলো ! আমরা দুজন যখন বৃষ্টির সাথে খেলা করছি তখন কোথা থেকে নিধি এসে আমার সামনে দাঁড়ালো ! হঠাৎ নিধির আগমনে আমি সত্যি কিছুটা ভড়কে গেলাম…নিধি তার ছাতাটা জোর করে আমার হাতে দিয়ে বললো, “নতুন গার্লফ্রেন্ড জোগাড় করছো আগে জানাইলেই পারতা”
কথাটা বলেই নিধি বৃষ্টির ভিতরে ভিজতে ভিজতে চলে গেলো ! আমি হা হয়ে গেলাম ! এদিকে ওয়ারিজার হাসি কিছুতেই থামছেনা…আমার খুব বিরক্ত লাগছিলো তখন !
বৃষ্টির তোপে রাতেও ইলেকট্রিসিটি ছিলোনা…আমি টেবিল লেম্প নিয়ে যখন টেবিলে গিয়ে বসলাম তখন রাত প্রায় এগারোটার মতো ! আমার হঠাৎ করে খুব ছবি আঁকতে ইচ্ছে হলো কিন্তু কেনো হলো জানিনা…টেবিল লেম্পের আলোটা খুব বেশি গাঢ় ছিলো বিধায় আমি সেটা নিভিয়ে মোমবাতি নিয়ে আসলাম ! পুরো অন্ধকার একটা রুমে মোমবাতির আধো আধো আলো কেমন যেন অদ্ভুদ একটা সৌন্দর্য আছে ! তার ওপর কিছুক্ষণ বাদে বাদে বাজ পড়ার একটা বিকট আওয়াজ কানে এসে লাগছিলো…আমি আঁকতে শুরু করলাম…খুব সাদামাটা একটা ছবি ! একজন বদ্ধ মহিলা হাতে লাঠি ভর দিয়ে কুঁজো হয়ে রাস্তার ঠিক মাঝ বরাবর দাঁড়িয়ে আছে আর অকাশ থেকে ঝড়ছে গুড়ি গুড়ি মধুর বর্ষণ ! হয়তো অপেক্ষা করছেন কারো জন্য…
আঁকা যখন প্রায় শেষের পর্যায়ে ঠিক তখন আমার মনে হলো আমার পিছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে ! আমি আঁকা বন্ধ করে দিলাম…পিছন থেকে বলে উঠলো,
“আহা ! আকাঁ বন্ধ করলে কেন?”
আমি জবাব না দিয়ে আবার আঁকতে আরম্ভ করি ! কিন্তু কিছুক্ষণ আগে যেভাবে আঁকতে পারছিলাম এখন কারোর উপস্থিত জনিত কারণে ঠিক হয়ে উঠছেনা…একটা পর্যায়ে আঁকা শেষ হলো !
ওয়ারিজা আমার পাশে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসলো ! আমি তার দিকে তাকিয়ে রইলাম কিছুটা সময় ! কি জিজ্ঞেস করা যায় তাই ভাবতে লাগলাম…ওয়ারিজার একটা চাহনি আছে যেটা চোঁখে পড়লে ঠিক বুঝে উঠতে পারিনা তাকে কি বলা যায়…ওয়ারিজা বললো, “তুমি এতো সুন্দর করে আঁকতে পারো জানতামনাতো?” আমি কণ্ঠটা বিলাইয়ের মত করে মৃদু স্বরে বললাম কখনো জানতে চেয়েছো তবেইতো জানবে ! ওয়ারিজা ভ্র কুঁচকে বললো, “কি বললা কিছুইতো শুনিনি?” আমি বললাম “কিছুনা ! এত রাতে আমার রুমে এলে, ঘুম আসছেনা?” ওয়ারিজা বললো, “ঠিক তা না, কেন যেন ঘুম আসছিলোনা তাই বারান্দা নিয়ে হাটছিলাম, তোমার রুম থেকে আলোর ছটা দেখতে পেয়ে ছুটে এলাম, এসেই দেখতে পেলাম মন দিয়ে ছবি আঁকছো” ! আমি একটু সময় নিয়ে বললাম, “তোমার চেহেরা অন্য কিছু বলছে আমায়” !
ওয়ারিজা চুপ করে রইলো কিছুটা সময়…আমি কিছু বলতে গিয়েও কেন যেন থেমে গেলাম ! ওয়ারিজা বললো, “আমি তোমায় ছোট বেলায় দেখতে পারতামনা, আসলেই পারতাম না?”
আমি কিছু বললাম না..
ওয়ারিজা আবার বললো, “খুব ছোট বেলায় পিকনিকের নাম দিয়ে আমরা পাহাড়ে বেড়াতে গিয়েছিলাম, মনে পড়ে?”
আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লাম…
“সেদিন আমি যখন তাড়াহুড়া করে পাহাড়ে উঠছিলাম এবং হোচট খেয়ে পড়ে যাচ্ছিলাম সেসময় দ্রুত এসে তুমি যদি আমার হাত না ধরতা তাহলে আজ আমি কই থাকতাম?”
আমি হঠাৎ থমকে গেলাম ! এ কথাগুলো কেন বলছে আমায় ! ওয়ারিজা আবার বললো, “জানো সেদিন একটা প্রতিজ্ঞা করছিলাম”
আমি বললাম, “কি প্রতিজ্ঞা?”
ওয়ারিজা কিছু না বলে কান্না করতে লাগলো ! আমার সে মুহূর্তে তাকে কি বলা উচিত ছিলো জানিনা আমি হঠাৎ খুব সাহস করে ওয়ারিজার হাতটা নিজের হাতে তুলে নিলাম ! আমার হাতগুলো তখন কাপছিল ! ওয়ারিজা চোঁখের পানি মুছে হা করে তাকিয়ে রইলো ! ওয়ারিজা বোধহয় চিন্তাও করেনি আমি তার হাতটা এভাবে ধরতে পারি ! আমি বললাম, “তুমি যেদিন চলে যাচ্ছিলা সেদিন বিশ্বাস কর আমাকেও নিয়ে গেছিলা ! তুমি যাওয়ার পর প্রতি রাতে আমি তোমার অগচরে যে ওড়নাটা চুরি করছিলাম তার দিকে তাকাই থাকতাম ! ওড়নাটা বের করে গন্ধ নিতাম…আমার কাছে তখন মনে হত তুমি আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছো !” এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে থামলাম ! আমার সত্যি বিশ্বাস হচ্ছিলোনা কথাগুলো আমি নিজের মুখে বলেছি…ওয়ারিজা তেমন কিছুই বললোনা শুধু তার বাম হাত দিয়ে তার ডন হাতটা ছুটাই নিয়ে সাথে সাথে রুম থেকে চলে গেল ! আমি একটা আবার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম !
পরের কয়েকটা দিন কেমন ভাবে যেন কাটছিল…কেউ কারো সাথে কথা বলছিলাম না খুব একটা !
ওয়ারিজা প্রায় সময় দরজা বন্ধ করে রাখতো ! আমি ভার্সিটিতে গিয়ে নিধিকে বললাম, “পাগলামি গুলো বাদ দাও?”
নিধি বললো, “আমি কি করলে তুমি বিশ্বাস করবা আমি তোমায় অনেক বেশি চাই !”
আমি বললাম, “আমাকে তোমার মাঝে কখনো খুঁজে পাবানা, এটা সত্যি অসম্ভব !”
আমি উঠে চলে আসলাম ! গতরাতে নিধি আমায় টেক্সট পাঠালো যা আমায় আজ ভার্সিটিতে নিয়ে আসতে বাধ্য করলো !
যাই হোক আমি যখন গেট দিয়ে বের হতে যাবে তখন খেয়াল করলাম ওয়ারিজা দাঁড়িয়ে আছে ! হলুদ ড্রেসে রৌদ্রের আভাটা লেগে যেন চোঁখে এসে লাগছিল ! আমি তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম…
ওয়ারিজা মিষ্টি করে হেসে বললো, “মেয়েটার সাথে এমন না করলেও তো পারো?”
আমি মেকি একটা হাসি দিলাম ! যে হাসিটায় হয়তে কিছু লুকাই ছিল…
ওয়ারিজা আবার বললো, “আমি আসলাম বলে রাগ করলা?”
আমি বললাম, “না”
“আচ্ছা একটা প্রশ্ন করবো?”
আমি হ্যাঁ বললাম…
“তোমায় একদিন জানাইছিলাম আমার মন খারাপ থাকলে আমার বাসার থেকে কিছুটা দূরে যে নদী আছে সেখানে চলে যেতাম…এভাবে প্রায় যাওয়া হতো বলে কোন একদিন এক আমেরিকান তরুনের সাথে পরিচয় হয় আমার ! তার সাথে পরিচয় হওয়ার একটা বড় কারণ ছিল আমার ছোট খাটো অনেক বিষয় তার সাথে মিলে যেত ! খুব অল্প দিনের ভিতরে সখ্যতা গড়ে উঠে তার সাথে ! ও হঠাৎ এমন ভাবে আসলো আমি তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে আরম্ভ করলাম কিন্তু আমি কখনো বিষয়টা সেভাবে প্রকাশ করিনি… আমি জানিনা তার ভিতরে আমার জন্য ভালোবাসা ছিলো কিনা তবে আমার শরীর সে প্রায় টার্চ করতো, আমি কিছুই বলতাম না…একদিন সে হারাই গেলো… আমার ভিতর দিয়ে ঝড় বয়ে যাচ্ছিলো ! কিন্তু আমি মানি নিতে পারিনাই ! আমি এদেশে আসলাম কিছুটা সময় ঐ সমস্ত চিন্তা থেকে দূরে থাকবো বলে”
ওয়ারিজা কিছুটা সময় নিল ! আমি মাথা নিঁচু করে বসে রইলাম…ওয়ারিজা বললো, “জানো, আমি না আমার প্রতিজ্ঞা ধরে রাখতে পারিনি ! আমি একটা নষ্ট মেয়ে ! আমাকে নিয়ে আর স্বপ্ন দেখবা?”
আমি আবুল মার্কা একটা হাসি দিয়ে বললাম, “চল বিয়া করি?”
ওয়ারিজা হেসে বললো, “তুমি বোধ হয় সিরিয়াস না তাহলে ভেবে দেখা যেত !”
আমি একটু সময় নিয়ে বললাম, “তোমার সত্তাটাকে আমি কখনো হারাইতে চাইনি, জানো আমি সবসময় নিজের ভিতরে তোমার সত্তাটাকে আগলাই রাখছিলাম…তুমি হয়তো চলে গেছিলা কিন্তু বিশ্বাস কর আমি তোমাকে আমার মাঝ থেকে কখনো হারাইতে দিইনি ! আমি যখন বেড়ে উঠছিলাম তখন আরেকটা সত্তাকে আমি মেনে নিছিলাম ! আজ তুমি আমার পাশে দাঁড়িয়ে কিন্তু……!”
আমি আর কথা বলতে পারছিলাম না…আমি আসছি বলে হাটা দিলাম… ওয়ারিজা আমায় থামতে বললো ! আমি দাঁড়াই রইলাম তার থেকে কিছুটা দূরে ! ওয়ারিজা বললো, “আমার বোধহয় আর থাকা হবেনা, আমি আমেরিকায় ফিরে যাবো !” ওয়ারিজা আমার উত্তরের অপেক্ষা করতে লাগলো ! আমি কিছু বললামনা হাটা দিলাম…
রাতে যখন লাইট অফ করে হেলান দিয়ে বসে রইলাম আমার মা আমার পাশে এসে বসলেন ! আমি লাইটটা অন করলাম…মা বললেন, “তোর কি হইছে বাবা?”
আমি বললাম, “মা, দুনিয়াটা অন্ধকার লাগে ! তুমি এখন যাও আমার ভালো লাগছেনা !” আমার মা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে পড়লেন…
রাতের দুটোর দিকে ছাদে উঠে একের পর এক বেনসন টানতে লাগলাম….চারপাশটা ধোয়ায় কেমন যেন একটা পরিবেশের সৃষ্টি করলো !” আমি অন্ধকারের ভিতরে চাঁদটাকে খুজতে আরম্ভ করলাম ! মেঘের আড়াল লুকিয়ে থাকায় তা আর সম্ভব হলোনা !
ওয়ারিজা হঠাৎ করে এসে আমার হাত থেকে সিগেরেট এবং সাথে প্যাকেটটা কাড়ি নিয়ে ফেলায় দিলো ! আমি অসহায়ের মত তাকিয়ে রইলাম ! কি জিজ্ঞেস করা যায় তা চিন্তা করতে লাগলাম ! ওয়ারিজা আমায় বললো, “পাগলামি করছো কেন?”
আমি আকাশের দিকে তাকাই বললাম ! ওয়ারিজা বললো, “যে শরীরে অন্য কারো স্পর্শ আছে, তা জানার পরও কেন? এটা কি পাগলামি না?”
আমি তার দিকে মাথা ঘুরাই বললাম, “আজ থেকে দশ বছর আগে তুমি যেমন ছিলা, আজও তুমি আমার কাছে ঠিক তেমনি ততটাই পরিত্র”…ওয়ারিজার চোঁখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছিল !
ওয়ারিজা বললো, “জানো তাহসান, আমি যখন প্রতিজ্ঞা করছিলাম তখন আমার বিশ্বাস ছিলো তুমি আমার বিশ্বাস কখনো ভঙ্গ করবানা কিন্তু দেখ আমি তোমার বিশ্বাস ভেঙ্গে বসে আছি ! জগৎতের নিয়ম কত অদ্ভুদ তাইনা?”
আমি কিছু চিন্তা না করেই ওয়ারিজার চোঁখের পানি মুছে দিতে লাগলাম…ওয়ারিজা হাতটা সরিয়ে নিলোনা…চুপ করে দাঁড়াই রইল ! হঠাৎ চারপাশটা আমার কাছে খুব স্হির মনে হচ্ছিলো ! আরো মনে হচ্ছিলো যেন সময়টা থমকে গেছে ! আমার হঠাৎ খুব ঠান্ডা লাগতে আরম্ভ করলো ! কিন্তু পরিবেশটা দীর্ঘস্থায়ী হলোনা, ওয়ারিজা চলে গেল…আমি আবার একটা দীর্ঘ দীর্ঘশ্বাস ফেললাম !
এর তিনদিন পর ওয়ারিজা যখন আমার সামনে এসে দাঁড়ালো বিদায়ের জন্য আমি তখন আগের বারের মত এবারও কোনো কথা বললাম না ! ওয়ারিজা বললো, “তোমার সত্যিই কিছু বলার নাই?” আমি মাথা নিঁচু করে বললাম, “ভালো থেকো, নিজের যত্ন নিও !” আমি খেয়াল করলাম ওয়ারিজার সারা চোঁখ লাল হয়ে আছে ! আমি তাকাই থাকতে পারছিলাম না…ওয়ারিজা বিদায় নিলো, যাওয়ার আগে আমার আম্মুকে জরাই ধরি অনেক্ষণ কান্না করলো ! আমি বেশ কিছুটা সময় পলকহীন ভাবে তাকিয়ে রইলাম সেদিকে ! ওয়ারিজা যখন বিদায় নিলো আমি তখন তার রুমে গিয়ে কিছুটা সময় তাকাই রইলাম…আমি ওয়ারিজাকে গত রাতে বলছিলাম, “তার পছন্দের একটা ওড়না ফেলায় যাইতে !” ওয়ারিজা তেমন কিছু না বললেও আমার বিশ্বাস ছিলো ওয়ারিজা তার পছন্দের কোনো ওড়না অবশ্যই ফেলায় যাবে আমার জন্য ! আমি ভার্সিটিতে গিয়ে একটা গাছের নিঁচে মাথাটা হেলান দিয়ে বসে রইলাম ! আমারে ঘাড়ে কারো স্পর্শ পাওয়ায় মুখটা উপরের দিকে তাকালাম ! নিধি দাঁড়াই আছে তবে অন্যান্য দিনের চেয়ে কিছুটা আলাদা মনে হচ্ছে তাকে ! আমি তার দিকে তাকাই বললাম, “কিছু বলবা?”
নিধি বললো, “মন খারাপ?”
আমি জানালাম আজ আমি সুখী, অনেক বেশি সুখী…আমি কিছুটা অবজ্ঞার সুরে আবার বললাম, “মনে আছে তুমি কোন একদিন ফুসকা খাইতে চাইছিলা আমার কাছে? চল আজ অনেক ঝাল দিয়ে খামু”
নিধি আমার এমন হাব ভাবের কিছুই বুঝলোনা…আমি তাকে জোর করে টমি মামার দোকানে নিয়ে গেলাম ! আমি আমারটায় ঝাল বাড়াই নিয়ে খাইতে লাগলাম…নিধি তখনের মত এখনো তাকাই আছে ! আমি তাকে শুনাই বললাম, “খুব মজা, তুমি খাওনা ক্যান?”
আমার খাওয়া শেষ হলো তবে কোনো পানি খেলাম না…আজ নিজেকে খুব কষ্ট দিতে ইচ্ছা হলো আমার ! আমি যাওয়ার আগে বললাম, “আমি তাড়াহুড়ায় টাকা আনিনি, তুমি দিয়ে দিয়ো হ্যাঁ?”
আমি চলে আসলাম ! ঝালের চোটে কান গরম হয়ে যাচ্ছিলো আমার ! আমার হঠাৎ কেন যেন খারাপ লাগছিল খুব….আমার মাথাটা ভন ভন করছিলো ! যতদূর মনে পড়ে আমি তখন রাস্তা পার হচ্ছিলাম…এরপর আর কিছু মনে নাই ! রাতে যখন আমার জ্ঞান ফিরে তখন আমি নিজেকে সাদা রঙের বেডে আবিষ্কার করি ! আমি চারপাশটায় একবার চোঁখ বুলালাম তবে তেমন কাউকে দেখতে পেলামনা…
কিছুক্ষণ পর ডাক্তার এসে পালসরেট চ্যাক করে চলে গেলেন ! তরও কিছুক্ষণ বাদে আমর মা কাছে এসে আমায় জরাাই ধরে কান্না করতে লাগলেন ! আমি বললাম, “আমার কি হইছে মা?”
আমার মা কান্না থামাই জানাইলেন আমার এক্সিডেন্ট হইছিল ! কথাটা শুনে আমার কাছে কেমন যেন লাগলো ! আমার শরীরের কোথায়ও আমি তেমন ব্যাথা অনুভব করছিলাম না…আমি বললাম, “মা এক্সিডেন্ট হইলে মরলাম না ক্যান?”
আমার মা কিছু বললেননা কিন্তু চোঁখে পানি নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলেন…আমার নিজেকে কেন যেন অনুভূতিহীন মানুষ মনে হল সেসময়…কিছুক্ষণ বাদে আরো কেউ রুমে প্রবেশ করলো ! আমি তাকালাম সেদিকে, নিধি এবং ওয়ারিজা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ! তারা দুজন আরো কাছে এগিয়ে আসলো ! আমি বাকরুদ্ধের মত তাকিয়ে রইলাম…ওয়ারিজা তখনের মত এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে কিন্তু নিধির চোঁখে পানি টলমল করছে…অবশ্য নিধি দাঁড়ালোনো চোঁখে পানি নিয়ে বের হয়ে গেলো…এখন শুধু আমি আর ওয়ারিজা ! হঠাৎ করেই অস্বস্থিটা আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো…আমার শরীরটা ঘামতে আরম্ভ করলো যদিও রুমে কিছুক্ষণ আগে এসির বাতাস আমায় গ্রাাস করছিলো ! ওয়ারিজা আমার পাশে এসে বসলো ! কিছুক্ষণ নিরবতার পর বললো, “তুমি এমন পাগলামি কেন করছো?” হঠাৎ আমার মনে হলো এক্সিডেন্ট বোধহয় সত্যি হয়েছে…আমার শরীরের ব্যাথাগুলো যেন ক্রমশই প্রসারিত হতে লাগলো ! ওয়ারিজা কিছু একটা আঁচ করতে পেরে যেন থেমে গেল…আমি বললাম, “তুমি এখানে কি করছো?” ওয়ারিজা হাসলো ! আমি বললাম, “হাসছো কেন?”
ওয়ারিজা বললো, “চোঁখের পানি শুকায় গেছে তাই হাসতে ইচ্ছা হলো !” আমি তার কথার কিছুই বুঝলাম না…ওয়ারিজা আবার বললো, “তাহসান?”
আমি বললাম হ্যাঁ…ওয়ারিজা বললো, “আমার আর যাওয়া হচ্ছেনা !” আমি বললাম, “কেন?” ওয়ারিজা বললো, “কিছুদিনের ভিতরেই বুঝতে পারবা !” আমি চুপ করে রইলাম এবং ওয়ারিজা রুম থেকে চলে গেল…আমি আবার একটা ঘুম দিলাম !
আমার আবার যখন ঘুম ভাঙ্গে তখন নিজেকে মেডিকেলে মনে হলোনা ! আমি আমার মোবাইটা খুঁজতে লাগলাম তবে পেলামনা কোথায়ও…আমি উঠে বসলাম এবং চারপাশটায় চোঁখ বুলালাম একবার কিন্তু সব কিছু অপরিচিত লাগছে ! আমার যতদূর মনে পড়ে আমি কোন একটা মেডিকেলে ঘুমিয়ে ছিলাম কিন্তু আমি এখন কোথায়?
না ! সত্যি কিছু মনে পড়ছেনা…আমার মনে হচ্ছিলো যেন আমি কোনো ডুপ্লেক্স বাড়িতে অবস্হান করছি ! আমার অবাকের রেশ কাটতে না কাটতেই হঠাৎ পাঁচ কি ছয় বছরের একটা ছেলে এসে আমায় জরাই ধরলো ! এসেই বললো, “বাবা, আজ আমাকে আর মাকে ঘুরতে নিয়ে যেতে হবে?” আমি ছেলেটিকে কোল থেকে নামিয়ে বললাম, “তুমি কি বলছো এসব?” ছেলেটা হা করে তাকিয়ে রইলো যেন কি বলবে বুঝতে পারছেনা…এত সব অবাকের মধ্যে আমি যখন জর্জরিত তখন আবার ওয়ারিজা কোথা থেকে চুল মুছতে মুছতে আমার সামনে এসে বললো, “এতো বেলা করে কেউ ঘম থেকে উঠে?”
আমি হা হয়ে গেলাম ! ও এখানে কি করছো? আমি বললাম, “আমি এখানে কি করে আসলাম”..
ওয়ারিজা আমার কথা শুনে রেগে গেল তবে তেমন কিছু বললোনা শুধু ওয়াশ রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে আসতে বললো তাড়াতাড়ি ! ওয়ারিজাকে আমার আগের মত মনে হলোনা মনে হলো যেন বয়সের একটা ছাপ পড়েছে তার মুখে ! আমি যখন ওয়াশরুমে গিয়ে পানি দিয়ে মুখ ধুচ্ছিলাম এবং আয়নাতে হঠাৎ চোঁখ গেলো ! আমার বিশ্বাস হচ্ছিলোনা কিছু… আমি আর আগের মতো নেই… আমি আর কিছুই চিন্তা করতে পারছিলাম না…কি হচ্ছে এসব ! আমি নিজের গায়ে জোরে একটা চিমটি দিলাম এবং দিয়েই যেন মনে হলো বেশি জোরে দিয়ে ফেলেছি ! তার মানে এটাকে স্বপ্নও বলা যাচ্ছেনা…
তাহসান আর বেশি দূর ভাবতে পারলোনা…তার মাথাটা হঠাৎ প্রচন্ড ভাবে ঘুরতে লাগলো এবং ঘুরতে ঘুরতেই তাহসান মাটিতে পড়ে গেল ! এরপর যখন আবার জ্ঞান ফিরে তখন আবার সব স্বাভাবিক ! আবার নিজেকে মেডিকেলের বেডে আবিষ্কার করে তাহসান…কিছুক্ষণ বাদে ওয়ারিজা আসলো ! আমায় জিজ্ঞেস করলো, “এখন শরীরটা কেমন লাগছে?” আমি বললাম, “ভালো !” ওয়ারিজা বললো, “আরিন তোমায় দেখতে চাচ্ছে?” আমি বললাম, “আরিন কে?”
ওয়ারিজা বললো, “তুমি আমার সাথে ফাইজলামি কর? নিজের ছেলেকে চিনতে পারছোনা” আমি চোঁখ বড় করে বললাম, “মানে?”
ওয়ারিজার দিকে তাকিয়ে মনে হলো সে খুব অবাক হয়েছে…ওয়ারিজা বললো, “আচ্ছা হয়েছে আর ফাযলামি করতে হবেনা, আমি আরিনকে নিয়ে আসছি” আমি চুপ করে থাকলাম তেমন কিছুই বললামনা…অপেক্ষা করতে লাগলাম ওয়ারিজা কাকে নিয়ে আসে দেখার জন্য ! কিছুক্ষণ বাদে ওয়ারিজা যখন ছেলেটিকে নিয়ে আসলো আমি আবার হা হয়ে গেলাম…আরে একেতো আমি দেখেছি আগে ! তখনোর মত ছেলেটি আবার এসে আমায় জরাই ধরলো ! তবে এবার আর কোলে থেকে নামালাম না…তবে আমি আমার চিন্তার জগৎটাকে আর প্রসারিত করতে চাইলামনা কিংবা কেন যেন ইচ্ছা হলোনা…
জগতে অনেক কিছুই ঘটে তবে স্বচক্ষে দেখার অনুভূতিটা সত্যি কেমন যেন…কোন সংজ্ঞা কিংবা বৈজ্ঞানিক ব্যাক্ষা দিয়েও তা হয়তো বুঝানো অসম্ভব, সত্যি তাই…………

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত