ঝগড়া যখন সায়েন্স ফিকশানে

ঝগড়া যখন সায়েন্স ফিকশানে

– বাসা থেকে বেরিয়ে পরেছি। ঝগড়া আর ভালো লাগে না।
বাসা থেকে বের হওয়ার সময় বউয়ের মুখের ভাব দেখে বুঝলাম,
সে বলতে চাচ্ছে “তুই জাহান্নামে যা”
জাহান্নামে কি আমি চা খাবো?? অবশ্য জাহান্নামের চা অনেক গরম হবে যা এই শীতে উপযোগী।
জাহান্নামে না আমার উদ্দেশ্য দোকানে যাব। থাকব না এই বাসায়। সারা দিন ঝগড়া আর ভালো লাগে না।
আজকের ঝগড়া টা খাবার নিয়ে। আমি ওই সব খাই না, জানার পরেও ওই গুলো রান্না করে।
ইচ্ছা করছিল আছার দিয়ে খাবার বাটি ভেঙে দিই। তা হলে রাগটা ভালো দেখাত। তা পারলাম না বাটি ভেঙে দিলে আমাকে কমে ছাড়বে না। যাকে বলে এক হাতে দেখে নেওয়া।
সে ইচ্ছে করলে আমার জন্য একটা ডিম ভাজি করে দিতে পারত। দিল না। মেজাজ চরমে। তাই না খেয়েই উঠে পরলাম।
বউটাও জানি কি রকম সারা দিন শুধু ঝগড়া করে।
আমি কি মানুষ না??
রাতের অন্ধকারে হাটছি এই রাস্তা টা আমার ভালো ভাবে চেনা। ১০ বছর ধরে যাতায়াত করছি এই রাস্তা দিয়ে। চোখ বেধে ছেড়ে দিলেও যাইতে পারব। ৫ মিনিটের রাস্তা।
,
এই বছর খুব শীত পরেছে। হাত মোজা মাফলার কিছুই কাজে দিচ্ছে না। রাতের বাতাসে আমার শরীর বরফের মত ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে।
বউয়ের মায়া নাই একটুও। থাকতেও বলে নি। আমি বের হওয়ার পরে আরো দরজা ভালো ভাবে লেগে দিয়েছে।
দরজায় প্রচণ্ড জোরে লাত্তি মেরেছি এতে রাগ কিছুটা কমেছে।
,
খুব ক্ষুধা লেগেছে। মনে হচ্ছে ভুল করলাম, না খেয়ে। বিকালে নাস্তাও করার সময় পাইনি।
দোকানে এক চাচা থাকে। আমার দোকানের কর্মচারী নাম রহিম।
রহিম চাচা। ওকে দিয়ে খাবার এনে খাওয়া যাবে।
থাকার জায়গার অভাব নেই। দোকানের গোডাউনে ২টা বেড আছে। একটাতে রহিম চাচা থাকে, আরেকটা আমার জন্য। আমি মাঝে মাঝে রেস্ট করি।
দূর থেকে দেখলাম দোকানে বাতি জ্বলছে। নীল বাতি। আমার দোকানেতো কোনো নীল বাতি নেই!!!
মনে হয় রহিম চাচা নিয়ে এসেছে। আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন ৬ বাট্যারির টর্চ ছিল। এখন এগুলো আর দেখা যায় না। কালের বিবর্তনে সব কিছু হারিয়ে গিয়েছে।
,
না আজতো রহিম চাচা ছুটি নিয়েছে মেয়ের বাসায় যাবার জন্য। নাকি সে যায়নি?? কে জানে হয়ত যায়নি আমার বেডে শুয়ে আছে। তার বেড থাকার পরেও সে আমার টাতে শুয়ে থাকে তার প্রমান বিড়ির গন্ধ। হাতেনাতে ধরা লাগবে। এই বুড়া বয়সে বিড়ি খাওয়া আমার চোখে ভালোলাগে না।।
হঠাৎ সেই নীল বাতি আমার চোখের সামনে জ্বলে উঠলো। কিছু সময়ের জন্য চোখের কিছুই দেখতে পারলাম না।
না রহিম চাচা নাই। দোকানে নীল বাতিও জ্বলে নাই। চোখে কি ভুল দেখলাম। শীতের রাতে ভুল দেখাও কোনো বেপার না।
,
না খেয়েই শুয়ে পরেছি। সামনে মাসে চুলা কিনবো। রাতে তাহলে না খেয়ে থাকা লাগবে না।
আবার সেই নীল চোখ ধাধানো আলো। এমন সময় দরজায় টোকা দিলো।
বললাম কে?
ওপাশ থেকে কোনো শব্দ পেলাম না। ভাবলাম রহিম চাচা। নাকি আমার বউ? ভাবতে ভাবতে দরজা খুলে দিলাম কিন্তু এগুলা কে?
২টা মেয়ে দাঁড়িয়ে। পোশাক দেখে মনে হয় আমাদের দেশের না। পায়ে বুট জুতা তবে গায়ে শীতের পোশাক নাই। ঠাণ্ডা লাগছে না নাকি?
নাকি ভুত। শীত কালে ভুতের আনাগোনা বেশি দেখা যায়। একবার শুনেছিলাম ভুতে নাকি সাইকেল চালাচ্ছে। তবে চাকা মাটিতে না থেকে ২-৩ ফিট ওপরে। আয়াতুল কুরসি পাঠ করতে পারলে ভালো তবে আমার ওটা মুখস্থ নাই। আল্লাহর উপর ভরসা করতে হবে।
,
– কে আপনারা?
– আমি “নায়া” আর এ “ফিহা”
– ও।
– আপনি কি আমার কথা বুঝতে পারছেন?
– জ্বি।
– স্পষ্ট বুঝতে পারছেন।
– হ্যা। বাংলা ভাষা না বুঝার কি আছে।
– আমি বাংলা বলছি না। এমনকি কনো কথাই বলছি না। আমার চিন্তা ভাবনা সরাসরি আপনার মাথায় দিচ্ছি আর আপনার গুলি আমরা নিচ্ছি। এর জন্য আমরা এক যন্ত্র ব্যবহার করেছি নাম SFH3,
– (আস্তে বললাম) জ্বি,
,
নায়া:– আপনি কি আমাদেরকে ভয় পাচ্ছেন?
আমি :– না।
( আমি ভয় পাচ্ছি। মেয়েগুলোর ঠোট নড়ছে না, তবে কথা বলছে ভয় পাবার জন্য এটাই অনেক)
নায়া :– তাহলে আয়াতুল কুরসির বেপারটা?
আমি- এটা আল্লাহপাকের কালামের দোয়া। পড়লে ভয় দূর হয়।
ফিহা:– তার মানে আপনি আমাদের ভয় পাচ্ছেন?
আমি :– জ্বি না।
ফিহা:– আপনি মনে মনে সাথী নাম ভাবছেন এই সাথী কে?
আমি :– আমার স্ত্রী।
নায়া :– আপনার স্ত্রী আছে? কি আশ্চর্য!!!
আমি :– কেনো অবাক হওয়ার কি আছে? যে ফকির তারও এক ফকিরানী থাকে। আর আমার থাকবে না এটা কেমন কথা??
ফিহা:– আমরা আপনার স্ত্রীর সম্পর্কে জানতে চাই।
আমি :– দয়া করে ভিতরে আসুন। বাহিরে যে ঠান্ডা আমি দরজা খোলা রাখতে পারছি না।
(আমি কি ভুল করলাম। দরজা খোলা রাখলে হয়ত দৌড় দিতে পারতাম। এখন ওই উপাই নাই)
নায়া :– আপনি কি আপনার স্ত্রীর ওপর কোনো কারনে বিরক্ত?
আমি:– জ্বি, সিস্টার। সেই জন্যই এতো রাতে একা একা দোকানে বসে আছি।
ফিহা :– কারনটা কি জানতে পারি?
,
আমি:– জ্বি সিস্টার। আজ যে গুলো রান্না করছে ওই গুলো আমি খাই না। সব কিছুই যদি খাওয়া যায় তাহলে আমরা দুধ দিয়ে খাসির গোশত খাই না কেনো বা লাউ দিয়ে করলার ঝোল???
ফিহা :– খুব ইন্টারেস্টিং। আপনার কথা গুলি SFH3 নোট করেছে। এটা আমরা আগামী সায়েন্স সভায় তুলে ধরবো।
নায়া :– আশা করি আপনার কোনো প্রব্লেম নাই।
আমি:– জ্বি না ম্যাডাম।
নায়া :– আপনি একবার ম্যাডাম ডাকছেন আরেকবার সিস্টার কেনো??
আমি :– সিস্টার ডেকে শান্তি নাই। সিস্টার ডাকের মাঝে হাসপাতালের গন্ধ আছে। হাসপাতাল মানেই আবার অসুখ বিসুখ। তাই ভাবলাম ম্যাডাম ডাকটাই আপনাদের জন্য বেস্ট।।
নায়া :– তা যাই হোক। আপনি কি সাথীর সাথে ঝগড়া করে সব দিন এখানেই থাকেন??
আমি:– না ম্যাডাম। গতকাল ঝগড়া করার পরেও বাসায় ছিলাম।
ফিহা :– গতদিনের ঝগড়াটা কি নিয়ে??
আমি :– চা নিয়ে। আমি চা চাইলাম সে দিল, তবে ঠান্ডা। ঠান্ডা খাবো তাহলে শরবত চাইতাম, চা নয়।
নায়া :– চা কি?? আমরা এই বস্তুর সাথে পরিচিত না।
আমি:– বলেন কি ম্যাডাম? সামনে বার আবার আসবেন খাওয়াব। চা, চিনি, দুধ, পানি সবই থাকে।
নায়া :– আমরা আর আসবো বলে মনে হয় না।
আমি :– কেনো ম্যাডাম?
ফিহা :– আমরা আসেছি ভবিষ্যৎ পৃথিবী থেকে তাই আর আসার সুযোগ পাব কি না জানি না।
নায়া :– আমরা আগের কথাই ফিরে যাই। সাথীর সাথে ঝগড়া কি শুধু খাবার নিয়ে?
আমি :– জ্বি ম্যাডাম। তবে মাঝেমাঝে আমি যা বলি তার বিপরীত কাজ করে।
নায়া :– শেষ প্রশ্ন। আপনাদের মাঝে কি ভালোবাসা বলে কিছু আছে?
আমি :– আছে। ঝগড়া তো একটু হবেই। আপনারা কি চলে যাবেন??
নায়া :– হ্যা।
আমি :– আপনাদের ঠিক ভাবে আদর আপ্যায়ন করতে পারলাম না কিছু মনে করবেন না।।
ফিহা :– তার কোনো প্রয়োজন নেই। আপনি অনেক ভদ্র এতেই আমরা খুশি। আপনার সাথে কথা বলে ভালো লাগলো। আমাদের যন্ত্র SFH3 তে আপনার কথা রেকর্ড থাকবে।
আমি:– ধন্যবাদ ম্যাডাম।
নায়া :– আপনাকে একটি সুসংবাদ দিয়ে যাই।
আমি:– বলুন ম্যাডাম। দুঃসংবাদ শুনে শুনে কান ঝালাপালা হয়ে গেছে। দেখি সুসংবাদ শুনে কি রকম লাগে।।
নায়া:– আপনার ভালো লাগবে। সুসংবাদটা হচ্ছে, আমরা যে ভবিষ্যৎ পৃথিবী থেকে এসেছি সেখানে কোনো ছেলে নেই।
আমি:– (এর ভিতর সুসংবাদটা কি আমি বুঝতে পারলাম না। মুখটা হা হয়ে গেল। আমার ভিতর থেকে আমার সত্তা ‘সে’ নাড়া দিয়ে উঠল। যদি বলত ভবিষ্যৎ পৃথিবীতে মেয়ে থাকবে না তাও এক কথা ছিল!!)
ফিহা :– আপনার কি কিছু বলার আছে?
আমি:– আমরা ছেলেরা কি এতোটাই খারাপ, যে ভবিষ্যৎ পৃথিবীতে আমরা থাকব না??
ফিহা :– একক ভাবে খারাপ না। তবে ছেলে-মেয়ে একত্রে বসবাস করলে তখন খারাপ।
তাই আমাদের কাছে “পুরুষ শুন্য পৃথিবী আর্দশ পৃথিবী”
নীল আলো আবার চোখ ধাধিয়ে দিল।
এখন আমার সামনে কেউ নেই। আর দোকানে থাকা ঠিক হবে না। আবার বাসায় যাওয়াটা অপমান জনক। রাগ দেখিয়ে আসলাম মান থাকবে না। কি আর করার চলে গেলাম বাসায়।
সাথী বসে আছে তার চোখ লাল হয়ত এতোক্ষন কান্না করেছে। ইচ্ছা করছে কথা গুলা সাথীকে বলি কিন্তু বললাম না।
– বউ ভাত খেয়েছ?
– না।
– এসো তোমাকে খাইয়ে দেই।
– ঢং করবে না. তোমার ঢং অসহ্য লাগে।
এই রকম ঢং আমি প্রায়ই করি মেয়েগুলোকে এই গুরুত্বপূর্ণ কথা বলাই হয় নি।
খাওয়া শেষ এমন সময় সে বলল,
– কাল তোমার জন্য শিং মাছ দিয়ে লাউ-করলার ঝোল রান্না করব।
– মাইয়া বলে কি?? মেজাজ চরমে!!!

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত