আজ বৃহস্পতিবার আগামীকাল সরকারি ছুটিরদিন।
তাই তড়িঘড়ি করে বের হচ্ছি বাড়ি যাওয়ার ট্রেন ধরবো বলে।
আমি রিফাত ঢাকাতে থাকি একটা ছোটখাটো জব করি গ্রামের বাড়ি নরসিংদী।ঢাকা হতে নরসিংদী বেশি দূরে না,,,
তাই ছুটির দিনটা পরিবারের সাথেই কাটাই আনন্দ উল্লাস
করে।দিনকাল খুব ভালোই যাচ্ছে যা রোজগার করি তা দিয়ে পরিবারসহ খুব ভালোভাবেই চলে।
বৃহস্পতিবার ট্রেন চলাচলে লোক সমাগম অনেক বেশি হয়।যারা নিয়মিত ট্রেনে চলাচল করেন তারা নিশ্চই বুঝবেন।
মাঝে মাঝে দু একটা ট্রেন মিস হয়ে যায় কেননা ট্রেনের প্রায় সব বগিরই দরজা বন্ধ থাকে। দু একটা বগির দরজা খোলা থাকে কিন্তু সেগুলো দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করাই কথা।বিমানবন্দর রেলওয়েতে এসে টিকিট হাতে দাঁড়িয়ে আছি প্রায় অনেকক্ষণ হলো কিন্তু ট্রেন আসার নাম নেই।ঢাকা হতে ছেড়ে আসা চট্টগ্রাম অভিমুখী চট্রলা এক্সপ্রেস ট্রেনটি আর কিছুক্ষণের মধ্যে ১নাম্বার লাইনে প্রবেশ করবে[গায়েবী আওয়াজ শুনতে পারলাম]।
কথাগুলো কানে আসা মাত্রই প্রস্তুত হয়ে গেলাম ট্রেনে চরবার জন্য।অনেক চাপাচাপির মধ্যে দিয়ে ট্রেনে উঠে গেলাম।ভাগ্যিস আজ ট্রেন মিস করতে হয়নি,নাহলে ১-২ঘন্টা লেট হয়ে যেতো।
সিট পড়েছে ড এর ৮ নাম্বার এ।
.
সবাইকে ঠেলে-ঠুলে অনেক কষ্টে সিটের কাছে পৌঁছালাম।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে যেই সিটে আমার বসার কথা সেখানে একটি মেয়ে এবং মধ্যবয়স্ক একজন পুরুষ বসে আছে।
মেয়েটার বয়স ১৮-১৯ এর মধ্যে আর পুরুষ লোকটার ৪০-৪৫।
সিটের সামনে গিয়ে খপ করে দাঁড়িয়ে গেলাম,কাকে কি বলবো বুঝতে পাড়ছিলাম না।কেননা চট্টলা এক্সপ্রেস ট্রেনে যে সিট গুলা আছে সেগুলো কোন চেয়ার সিস্টেম সিট না।এই সিটগুলো লম্বাটে প্রকৃতির এবং ছোটখাটো।তাই একেকটি সিটে সর্বোচ্চ দুজন বসা যাবে।এখানে যেহেতু একটি সিট আমার জন্য বরাদ্দ,,তাহলে দুজন তো বসে থাকার কথা নয়?একজন হয়তোবা এমনিতেই বসে আছে,,,, কিন্তু দুইজনের মধ্যে কে সে?? পাশ থেকে একজন ২০-২২ বছরের একটি যুবক বললো ভাই আপনার টিকিট টা দেখি?? অতঃপর আমার
টিকিট টা তাকে দিলাম যুবকটি বললেন আপনার সিট তো এইটা ৮ নাম্বার।
থ্যাংকইউ ভাইয়া বলে ব্যাগটা উপড়ে রাখলাম।
–আপনারা এখানে দুজন বসছেন কেন।একজন উঠে যান এটা তিনজনের সিট নয়।(যে যুবকটি আমার কাছ থেকে টিকিট নিয়েছে)
–আমি সিট পাইনাই ভাই।টিকিট কাটছি কিন্তু কোন সিট দেয়নায়।(মধ্যবয়স্ক লোকটি)
ট্রেনের সবগুলো সিট বুক হয় যাওয়ার পর শুধু ট্রেনের যাত্রী হিসেবে একধরণের টিকিট দেয়া হয়।যে টিকিটে কোন সিটের উল্লেখ থাকনা।
–সিট নাই তাহলে উঠে যান অন্য জনের সিটে বসে আছেন কেন???(টিকিট হাতে লোকটি)
মধ্যবয়স্ক লোকটি কথাটা কানেই তুললেন না।
আমি বললাম থাক আপনি বসেন আমি বরং দাঁড়িয়ে যাই।
.
একঘণ্টা হলো দাঁড়িয়ে আছি কিন্তু এখন আর পারছি না।
মাথা ঘুরাচ্ছে, প্রচণ্ড রকমের খারাপ লাগছে। আর সহ্য হচ্ছে না।
এখন মনে হচ্ছে কি দরকার ছিলো পরোপকার করার, এখন তো নিজের অবস্থায়ই বেহাল।
যে যুবকটি আমার কাছ হতে টিকিট নিয়েছিলো সে হয়তোবা বুঝতে পেরেছে আমার কষ্ট হচ্ছে।
তাই আমি না বলা সত্ত্বেও বললো আপনার টিকিট টা দিন দেখি কিভাবে আপদ সরাতে হয় আমি দেখছি।এই বলে টিকিট টা হাতে নিয়ে বললো…
–এইযে এবার সিট ছাড়ুন তো দেখি।অনেক তো আরাম আয়েশ করে বসে যাচ্ছেন এদিকে একজনকে যে দাড় করিয়ে রেখেছেন সে খেয়াল আছে আপনার??(টিকিট হাতে ঐ লোকটি)
–উনি যে বইতে চাইতাছে না আপনি তা বুঝতাছেন না??(মধ্যবয়স্ক লোকটি)
–আপনার জন্যই তো বসতে চাচ্ছে না,আপনি বুঝতে পারছেন না যে উনার কষ্ট হচ্ছে??এবার সিট ছাড়ুন(টিকিট হাতে ঐ লোকটি)
মধ্যবয়স্ক লোকটি উঠে না গিয়ে বরং আরো শক্ত হয়ে বসলেন আর বলতে থাকলেন..
–তাহলে এইখানে বইসা পড়েন (মাঝখানে একটুকু ফাঁকা যায়গা দেখিয়ে)।
–আংকেল এখানে তিনজন বসা যাবেনা তাছাড়া সবাই ছেলে হলে একটা কথা ছিলো।কিন্তু একটা মেয়ের সাথে এভাবে বসা টা ঠিক হবে না।আমরা বরং একটা কাজ করি পার্টটাইম করে নেই কিছুক্ষণ আপনি বসবেন কিছুক্ষণ আমি বসবো।(আমি)
–না আংকেল এইখানেই বহেন।(মধ্যবয়স্ক লোকটি)
–সমস্যা নেই ভাইয়া বসেন কোন প্রব্লেম হবে না।(পাশে বসে থাকা মেয়েটি)
এতোক্ষন পর অবাক করে দিয়ে প্রথমবারের মতো মুখ খুললো।এর আগে একটাও কথা বলেনি।আর আমাদের মাঝে কথা চলাকালীন সময়ে শুধু এদিকওদিক তাকিয়ে থেকে আমাদের কাণ্ডকারখানা উপভোগ করছিলো।
যাইহোক কোনভাবে বসে গেলাম ঐ টুকু জায়গাতে।
ট্রেনের ঝাঁকুনিতে মেয়েটির শরীরের সাথে আমার শরীর বার বার ধাক্কা খাচ্ছিলো।বুঝতে পারছিলাম মেয়েটি বেশ অস্বস্তিবোধ করছে।
.
–আই অ্যাম রেলি সরি। (আমি)
–সরি কেন??? (পাশে বসা মেয়েটি)
–আমার জন্যে আপনার অনেক সমস্যা হচ্ছে তাই।(আমি)
–আরে না না ঠিক আছে।তাছাড়া এটা আপনার সিট আপনি তো বসবেনই।এতে সরি বলার কি আছে?আপুনিও একজনকে সাহায্য করছে আমিও না হয় আপনাকে সাহায্য করলাম।(পাশে বসা মেয়েটি)
বুঝতে পারলাম মেয়েটি অনেক সহজসরল।
অনেক ভালো হবে নিশ্চই। তাছাড়া এখন যে সময় কেউই এরকম কোন সেক্রিফাইজ করে না।
.
–তা নাম কি আপনার???(পাশে বসা মেয়েটি)।
প্রশ্নটা শুনে চমকে উঠলাম যে মেয়ে দির্ঘ এক ঘন্টা যাবৎ একটা কথাও বলেনি সে আমার নাম জিজ্ঞেস করছে?
–কি হলো বলছেন না যে?
–আজ্ঞে আমার নাম রিফাত। আপনার????
–রাইসা তাবাসসুম
–ওয়াও অসাধারণ নাম।আপনার নামের সাথে আমার নামের অনেকটা মিল আছে দেখছি??
–হুম দুটো নামেরই প্রথম অক্ষর “র”।
–হুম।তা কি করেন আপনি???(আমি)
–লেখাপড়া করছি এবার উচ্চমাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষ ।আপনি??( পাশে বসা মেয়েটি)
–তেমন কিছুনা ছোটখাটো একটা জব করছি।(আমি)
–ওহ খুব ভালো।(মেয়েটি)
ততক্ষণে পিছনের সিট খালি হয়ে যাওয়াতে
পাশে বসা মধ্যবয়স্ক লোকটি সরে গিয়ে পিছনে বসছেন।
–আচ্ছা আপনি এতো বোকা কেন???( মেয়েটি)
–মানে, কি বুঝাতে চাচ্ছেন???(আমি)
–না তেমন কিছু না।এই যে আমি বয়সে আপনার ছোট হওয়া সত্ত্বেও আপনি আমাকে আপনি আপনি বলে সম্ভধন করছেন???(মেয়েটি)
–আমি প্রথমেই কাউকে তুমি করে বলি না। বলতে সংকোচ বোধ করি। তা এতে বোকার সাথে সম্পর্ক কি??
–আছে যারা অনেক ভালো তারা তো বোকাই হয় তাইনা???
–আমি অনেক ভালো তা আপনাকে কে বললো???
–তাহলে কি আপনি খুব খারাপ????
–না ঠিক তা নয়। কিন্তু বেশি ভালোনা।
–বেশি ভালো না হলে,কেউ কি নিজের সিট ছেড়ে দিয়ে হা করে দাঁড়িয়ে থাকে??
–ইয়ে মানে…
–হুম বুঝতে পেড়েছি আপনার মানে মানে।
–আচ্ছা এখন থেকে তুমি করে বলবো ঠিক আছে?তাও বোকা বইলেন না।
–হুম ঠিক আছে চাইলে নাম ধরেও বলতে পারেন।
–ওকে আপনাকেও বলতে হবে।
.
তারপর পাঁচ মিনিটের নিরবতা। কেউ কারো সাথে কথা বলছিনা।
নিরবতা ভেঙ্গে মেয়েটিই বললো আচ্ছা আপনার নেক্সট প্ল্যান কি???
–পর্দা সরিয়ে গোপন জিনিস দেখা।
–মানে??
–মানে আপনার সাথে কথা বলছি প্রায় অনেক্ষণ হলো।কিন্তু আপনার মুখটা দেখার সৌভাগ্য আমার এখনো হয়ে ওঠেনি।তা ছাড়া আপনি দেখতে বেশ সুন্দরীই হবেন, অপ্সরী বললেও মনে হয়না ভুল হবে।
–ওয়াও এতো ট্যালেন্ট!তা কি করে বুঝলেন যে আমি কোন সুন্দরি,অপ্সরী হবো।
–আপনার কথা শুনেই বুঝেছি যার গলার সূর এতো মিষ্টি ।এরকম সহজসরল মনোভাবের একটা মেয়ে কখনওই অসুন্দর,কুৎসিত হতে পারে না।
–বাহ্।আপনাকে ভেবেছিলাম খুব বোকা।কিন্তু আপনি তো বোকা নন।আচ্ছা এই দেখেন নিজের চোখেই দেখে নেন আমি কেমন দেখতে।
.
অতঃপর বালিকা তাহার গোপন যায়গা অর্থাৎ মুখের উপর থেকে পর্দাখানা সরিয়ে নিলো। তার সেই সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করতে গেলে আমায় কবি হয়ে জন্মগ্রহন করতে হবে শতবার শতবার।বিজ্ঞানী হয়ে তার সৌন্দর্য পার্সেন্টেন্সে আবিষ্কার করতে গেলে আমি সেই পার্সেন্টেন্সেই পরে থাকবো হাজার হাজার বছর।ডাক্তার হয়ে নির্ণয় করতে গেলে নির্ণয় কাকে সেটাই হয়তোবা ভুলে যাবো।
আর আমার পক্ষে তা কখনওই সম্ভব না।
তার ফর্সা গালে একটু আঘাত
করলেই মনে হয় সেখান থেকে টপটপ করে রক্ত ঝরবে।
.
কিন্তু নিজেকেই বিশ্বাস করতে পারছি না
যে এরকম একজন সুন্দরি আমার পাশে বসে আছে।
এরকম সহজসরল দেমাক ছাড়া সুন্দরি মেয়ে আজকাল আর অহরহ পাওয়া যায় না।এরকম কোন মেয়েকে যে বিয়ে করবে সে নিশ্চই অনেক
লাকি হবে।
–কি হলো কি এতো কি ভাবছেন কথা বলছেন না কেন??
ভাবনার জগত থেকে বাস্তবে ফিরলাম মেয়েটির কথায়।
–নাহ কিছু না।আপনি সত্যিই আকাশ থেকে নেমে আসা কোনা অপ্সরী।
–শুধু শুধু মিথ্যা বলছেন।
–মিথ্যে কেন বলবো বলেন??দিব্যি খেয়ে বলছি আমার লাইফে দেখা মেয়েদের মধ্যে আপনিই সবচাইতে সুন্দরী নারী।
–সত্যি??
–হুম সত্যি।
–আচ্ছা ঠিক আছে।আপনি কিন্তু আমাকে এখনো আপনি করে বলছেন??
–আপনিও তো আপনি করে বলছেন।
–আচ্ছা এখন থেকে দুজনই দুজনকে তুমি করে বলবো।
.
আর কিছুক্ষণের মধ্যেই নরসিংদী জাংশনে পৌঁছে যাবো।এখন মনে হচ্ছে গন্তব্য টা যদি আরেকটু বড় হতো এক বা দু দিনের হতো তাও কোন সমস্যা হতো না??
আচ্ছা আমি এতো কিছু ভাবছি কেন??আমি কি মেয়েটার প্রেমে পড়ে গেলাম গেলাম?হ্যা প্রেমেই পড়ে গেছি।তা নাহলে মেয়েটার কাছে থেকে আমার দূরে সরে যাওয়ার কথা ভাবতেই আমার মাঝে এরকম অনুভূতি কাজ করছে কেন?আর প্রেমেই বা পড়বো না কেন!আমি তো সব সময় এরকমই একটা মেয়েকে আশা করে আসছিলাম।যে সুন্দরি হওয়া সত্ত্বেও তার মাঝে কোন দেমাক থাকবেনা।
নিজেকে একজন সাধারণ মেয়ের মতই মনে করবে।সহজসরল স্বভাবের হবে।আমি সেই সব গুলো গুণই পেয়েছি গেছি এই মেয়েটির মাঝে।আমি যখন প্রথম ভার্সিটি জীবনে পা রাখি,,,তখন একটা মেয়ের সাথে ভালো বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্ক হয়।এভাবে চলতে থাকে কিছু সময়।তারপর আমরা ধীরেধীরে একে অপরের প্রেমে হাবুডুবু খেতে থাকি।ভালোই চলতে থাকে আমাদের সম্পর্কটা।জান্নাতুল ছিলো অসম্ভব সুন্দরী একটা মেয়ে।হ্যা ওর নাম জান্নাতুল ই ছিলো।সম্পর্ক চলাকালীন সময়ে আমি জান্নাতুলকে অনেকবার বলেছি কখনো দেমাক দেখাবানা আমি এটা একদমি পছন্দ করি না।
তোমার দেমাক দেখানো মানে আমাকে ছোট করে দেখা আর তুমি নিশ্চই চাও না যে আমি কোন কারণে ছোট হয়ে যাই?
কিন্তু একটা সময় সেই দেমাকটাই কাল হয়ে দাঁড়ায় আমাদের সম্পর্কে।ইতি টানতে হলো আমাদের ১ বছরের সম্পর্কের।তাই আর কোন সুন্দরী মেয়েকে পছন্দ করতে ইচ্ছা করে না।কেননা সেও যদি জান্নাতুলের মতো দেমাকি হয়!
কিন্তু এই মেয়েটির সাথে কথা বলার পর মেয়েদের উপর থাকা আমার সব ভ্রান্ত ধারণা ভুল প্রমাণ হলো।অচেনা হওয়া সত্ত্বেও মেয়েটি আমার সাথে কোন প্রকার সংকোচনশীল হয়ে কথা বলছে নাহ!
আর বলবেই বা কেন?,,,,সবাই তো আর জান্নাতুল নয়।
.
–এই তুমি কি পাগল হুম???মাঝে মাঝে কোথায় চলে যাও।
এই হ্যালো শুনতে পাচ্ছো??
–হুম মানে হ্যা শুনতে পারছি বলো।
তুমি যাবে কোথায় সেটাই তো বললে না??
–নরসিংদী।তুমি??
–বাহ।আমিও তো নরসিংদী যাবো। নরসিংদী জাংশনের কাছেই আমাদের বাসা।জাংশনে নেমে যে কাউকে বললেই হবে যে রাশেদ সাহেবের বাসায় যাবো।তাহলে দেখবে তোমাকে ঠিক দেখিয়ে দিবে।
চলো না আমার সাথে আমাদের বাসায়?
–না।আজ না অন্য কোনদিন অবশ্যই যাবো কথা দিলাম।
তাছাড়া আমি যদি তোমার সাথে তোমাদের বাসায় যাই
সবাই যখন আমার পরিচপয় জানতে চাইবে তখন সবাইকে কি বলবে??
–কি আবার বলবো!বলবো আমার ফ্রেন্ড ঢাকা থেকে আসছে।
–আচ্ছা ধন্যবাদ। কিন্তু আমি আজ যেতে পারবোনা তবে কথা দিচ্ছি একদিন আসবো কিন্তু সেদিন তোমাকে নিয়ে যেতে।
–মানে!কোথায় নিয়ে যাবে আমাকে?
–আমাদের বাসায়!আমি তোমাদের বাসায় যাবো আর তুমি আমাদের বাসায় যাবেনা সেটা কি করে হয়
বলো??
–ওহ আচ্ছা। অবশ্যই যাবো।
যাক আমার কথার মানেটা হয়তো বুঝতে পারেনি।
.
তারপর মিনিট দশেক পর মেয়েটিকে (অর্থাৎ রাইসাকে)বিদায় জানিয়ে আমার গন্তব্যস্থান নিজ বাসভবনের দিকে যাত্রা শুরু করলাম।
বাসায় এসে ফ্রেস হয়ে রাতের খাবার শেষ করে একটা সুন্দর ঘুম দিলাম।
ঘুম ভেঙ্গেছে সকাল ৯:০০টায়।
–কিরে বাবা ঘুম ভেঙ্গেছে!তোর জন্য পিঠা তৈরি করেছি। হাত-মুখ ধুয়ে খেতে আয়।(মা)
–হুম মা তুমি যাও আমি আসছি (আমি)
–বাবা তোকে একটা কথা বলার ছিলো।(মা)
–হুম মা বলো(আমি)
–আচ্ছা তুই কি অফিস থেকে দু-তিনদিনের জন্য ছুটি নিতে পারবি বাবা? (মা)
–কেন মা কি হয়েছে?(আমি)
–আসলে আমার শরীরটা তেমন ভালো যাচ্ছেনা
তাই আমাকে যদি একটু কষ্ট ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যেতিস।(মা)
–আচ্ছা মা আমি আজই ছুটি নিয়ে নিচ্ছি(আমি)
সারাদিন বন্ধুদের সাথে ঘুরাঘুরি, আড্ডা,গল্প করে ভালোই কাটলো আজকের দিনটা।
.
রাতে খাবারদাবার শেষ করার পর মা সেই কথা গুলো আবার বলতে শুরু যা আমাকে গত একবছর ধরে শুনতে হচ্ছে,,,
–বাবা লেখাপড়া তো শেষ করলি। ভালো একটা চাকরিও পেয়েছিস।
তোর ভাইও একটা ব্যবসা করছে।মেয়েটার জন্যেও অনেকচভালো ভালো ঘর থেকে সম্বন্ধ আসছে।সবই তো হলো এখন শুধু তোর বিয়েটাই বাকি।কতবার বললাম ভালো একটা মেয়ে দেখে বিয়ে করে নে।নাহ আমার কথা তো কানেই নিচ্ছিস না। কোন একটা মেয়ে নাম টা যেন কি? ওহ হ্যা জান্নাতুল।
মেয়েটাকে ওয়াদা দিয়েছিলিস তাকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করবি না। আর সেই ওয়াদা নিয়েই পড়ে আছিস।
দেখ বাবা তোকে কতবার বলেছি!
যেই মেয়েটা তোকে দেয়া ওয়াদা নিজেই ভঙ্গ করে বিয়ে করে স্বামী সংসার নিয়ে ব্যস্ত। আর সেখানে তুই কিনা মেয়েটির দেয়া ওয়াদা রাখতে ব্যস্ত।
বাবা সেতো তোকে দেয়া তার কথা রাখেনি? তাহলে তুই কেন রাখবি তার কথা।
তার চেয়ে বরং একটা ভালো মেয়ে দেখে বিয়ে করে নে দেখবি সুখী হবি।(মা)
–হুম মা তুমি ঠিকই বলেছো।তাই আমি ডিসিশন নিয়েছি বিয়ে করবো।(আমি)
–সত্যি বলছিস বাবা!আমি কাল ই তোর জন্য মেয়ে দেখবো।(মা)
–নাহ মা তোমাদের কোন মেয়ে দেখতে হবে না।আমি একটা মেয়েকে পছন্দ করি।
–ও তা ভালো কথা।নাম কি?কোথায় থাকে?বাবার নাম কি?মেয়েটার কোন ছবি আছে?(মা)
–মা তুমি সবকিছুতেই ব্যস্ত হয়ে পড়ো।ওর সাথে গত পরশুই পরিচয় হয়েছে।
অতঃপর মাকে সব কিছু খুলে বললাম।
.
–তারপর দুই পরিবারের মধ্যে কথা পাকাপাকি হওয়ায় শেষপর্যন্ত আমাদের বিয়েটা হয়েই গেলো।
এখন যাচ্ছি বাসরঘরে মহারাণী হয়তোবা আমার জন্য অপেক্ষা করছে,,,,
বাসরঘরে ঢুকতেই মহারাণী এসে আমার পা ছুঁয়ে সালাম করে আবার খাটে গিয়ে বসে পড়লো।তারপর আমি খাটে গিয়ে পাশে বসে মুখের উপর থেকে ঘোমটা টা সরিয়ে নিলাম,,,,
–কেমন লাগছে আমায়?(রাইসা)
–আরেকটু সুন্দর হলে মনে হয় ভালো লাগতো…!(আমি)
–কিইইইইই আমি সুন্দর নই?তাহলে ঐ দিন কেন বলছিলে আমার লাইফে দেখা সবচাইতে সুন্দরী নারী তুমি।(রাইসা)
–ঐ দিন তো আর জানতাম না যে তোমাকে বিয়ে করতে হবে তাই বলেছিলাম।[(আমি)
মনে মনে খিলখিল করে হাসছি]
–তা এইযে মিস্টার তাহলে আমাকে বিয়ে করার জন্য
জন্য আমার বাবার কাছে প্রপোজাল নিয়ে গিয়েছিলো কে তুমি নাকি আমি???(রাইসা)
–আজ্ঞে আমার বাবা।(আমি)
–আচ্ছা আমি কি সত্যিই দেখতে সত্যিই অসুন্দর??(রাইসা)
–আরে না আমার বউয়ের মতো এতো সুন্দরী আর কেউ হতেই পারেনা।ওটাতো এমনি বলেছিলাম তোমাকে রাগানোর জন্যে।
–হুম জানি।নাহলে কি আর প্রথম দেখায় আমাদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠাতে??
–তুমি কি ভাবছো আমি শুধু তোমার সৌন্দর্যের প্রেমে পড়েই তোমাদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছি!
নাহ,,,তোমাকে আজ আমি কিছু বলতে চাই।আমি একটা মেয়েকে ভালোবাসতাম আমার নিজের থেকেও বেশি,,
ওর নাম ছিলো জান্নাতুল। অসম্ভব সুন্দরি একটা মেয়ে।
ও শুধু আমার গার্ল্ফ্রেন্ড ই ছিলোনা ও ছিলো আমার হৃদস্পন্দন।
হৃদস্পন্দন ছাড়া যেমন কেউ বাঁচেনা তেমনি জান্নাতুলকে ছাড়াও আমার বাঁচা ছিলো প্রায় অসম্ভব।
কিন্তু সেটা সম্ভব হয়েছে কেন জানো!!পিছুটান,,, আমার পরিবারের প্রতিপিছু টানি সম্ভব করেছে এই অসম্ভবকে,,
যারা আমার জন্য এতো ত্যাগ শিকার করেছে,,আমাকে পড়ালেখা শিখিয়ে আজ নিজের পায়ে দাঁড়াতে সাহায্য করেছে,,আমি কিভাবে একটা মেয়ের জন্য তাদের ঠকাই বলো?তাদের কথা না ভেবে স্বার্থপরের মতো কিভাবে চিরনিদ্রায়???
তাই আজ আমাকে তোমার সামনে দেখতে পাচ্ছো।না হলে হয়তো…..,,,,,
আচ্ছা থাক সেসব কথা,,জান্নাতুলের সাথে সম্পর্কটা শেষ হয়ে যাওয়ার পর আর কোন সুন্দরি মেয়েকেই ভালো লাগতো না।
কেন জানো,,,,কারণ ভেবেছিলাম সৌন্দর্যের অহংকার হয়তোবা প্রত্যেকটি সুন্দরীর অন্তরীয়।
কিন্তু তোমার দেখার পর আমার পুরো ধারণাটাই পালটে গেলো,,,,।নয়তো আমায় চিরকুমার হয়েই থাকতে হতো আজীবন।
.
–আচ্ছা জান্নাতুল কি আমার থেকেও বেশি সুন্দরী ছিলো???
–হলেও বলবো না,,কেননা এখন তুমি আমার অর্ধাঙ্গিনী।আমার বাম পাঁজরের হার।তাই তোমার সমতুল্য অন্য কোন স্বার্থপর মেয়ে হতে পারেনা।
.
[কথা বলতে বলতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি তা আমার অজানা]
মাঝরাতে হঠাৎ ইইই ঘুম ভেঙ্গে যায়।জেগে দেখি বউ [মানে রাইসা]আমার বুকে জড়িত অবস্থায়।
ঘুমানো অবস্থায় একদমই নিষ্পাপ দেখাচ্ছে মেয়েটাকে। ঘুমালে যে মেয়েদের এতো অসাধারণ দেখায় তা আমার জানা ছিলো না।মনে হচ্ছে আমিও জরিয়ে ধরলে মন্দ হয়না।তাই কাল বিলম্ব না করে আমিও রাইসাকে শক্ত করে জড়িয়ে নিলাম,,,,,গালে আলতোভাবে হাতটা রেখে বলতে থাকলাম।
–তুমি কি পারবে আমাকে সেই পুরনো দিনের অসমাপ্ত গল্পের সৃতিগুলোকে মুছে দিতে??পারবে কি আমাকে আবার সেই আগের রিফাত গড়ে তুলতে।ভুলে যেতে চাই আমি সেই কালো অতীতের কথা।যে অতীত আমাকে তোমার মতো সব নিস্পাপ মেয়েদের স্বার্থপর ভাবতে বাধ্য করেছে।চাইনা আমার বেধনায় সহমর্মিতা প্রকাশ করে কষ্ট পাক আমার জন্মদাত্রী মা। পারবে কি তুমি!
–হ্যা অবশ্যই পারবো।আমাকে পারতেই হবে।ভুলিয়ে দিতে চাই আর যাইহোক সবাই জান্নাতুল না।
–এই তুমি না ঘুমিয়েছিলে!
–হুম ছিলামই তো কিন্তু তোমার স্পর্শে ঘুম ভেঙ্গে গেছে।তোমার স্পর্শটা অন্য সবার স্পর্শ থেকে একদম আলাদা। এ যেন এক অন্যরকম ছোঁয়া।
–হবেই তো,,কেননা এই স্পর্শ হচ্ছে ভালোবাসার হাতছানি।যা তোমাকে বুঝাতে চায় আমি তোমাকে কতটুকু ভালোবাসি।আর তুমি সেটা তোমার হৃদয় দিয়ে অনুভব করছো,,,,তাই এই স্পর্শ তোমার কাছে অন্য সবার স্পর্শ থেকে আলাদা মনে হয়েছে।আর এভাবেই আমাকে সবসময় তোমার হৃদয় দিয়ে ফিল করো কেমন??
–হুম। কথা দিলাম সবসময় এভাবেই ফিল করবো।
.
তারপর রাইসা,বউ,পাগলিটাকে আবার শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে গেলাম।যাতে করে এতদিনে মেয়েদের প্রতি জমে থাকা রাগ অভিমান আর দুঃখ কিছুটা হলেও উপশম হয়।আর মনে পড়ে গেলো আমাদের সেই প্রথম দেখে ট্রেনের কথা।যে দেখা থেকে শুরু হয়ে গেলো দুজনের একসাথে পথ চলার যাত্রা।যে পথের যাত্রা অন্তহীন।এর কোন অন্তিম নেই।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা