প্লিজ আবার একটু হাসি দেও,তোমার হাসি দেখতে খুব মন চায়।
–
আমি হাসতে পাড়ি না,আর এত হাসি দেখতে মন চায় কেন শুনি?
–
সত্যি বলছি,তুমি যখন হাসো তোমার গালে একটু টোল পড়ে আর এই টোল পরে মেয়েদের দেখতে খুব ভালোলাগে আমার।
–
কি বললে তুমি যে মেয়েদের গালে তোমার টোল পড়ে তাদের তোমার ভালো লাগে?মানে আমি ছাড়াও অন্য মেয়েদের তোমার ভালো লাগে?এই তোমার ভালোবাসা?
–
আরে আরে আমি তাই বলছি নাকি,আমার কাছে শুধু তোমায় গালের টোল পড়াটাই ভালো লাগে।অন্য কাউকেই না।
–
হইছে জানি,আর বলা লাগবে না মুখ ফসকে বের তো হয়ে গেছে সত্যিটা।
–
সরি রাগ করো না,এই দেখ আমি তোমার গাল ধরে টেনে দিচ্ছি।
–
থাক আর সোহাগ দেখাতে হবে না,চলো এখন অনেক দেড়ি হয়ে গেছে।রুমে চলো,আজকে রুমে গিয়ে তোমায় মজা দেখাবো।
–
তুমি এমন কেন,আগে তো এমন ছিলে না,আগে কত আদর করতে আর এখন শুধুই শাসন করো কেন?
–
শাসন না করলে তুমি কি আর এত সোজা থাকতে,কবেও অন্য টোল পড়া মেয়ের কাছে চলে যেতে আমার জানা আছে।
–
–
আচ্ছা চলো,বলেই ছাদ থেকে রুমের দিকে যাচ্ছে নাঈম আর লাবণ্য।এই ৫মাসের মত তাদের বিয়ে হয়েছে।একে অপরকে এই ৫মাসেরই চেনা।তার আগে কেউ কাউকে চিনতো না।দুইজনে কোন দিন কল্পনা করেনি তারাই একে অপরের সাথে সারাটি জীবন কাটিয়ে দিবে।বাবা-মায়ের বাধ্য সন্তান নাঈম।গ্রাজুয়েশন শেষ করে বাবার ব্যাবসা দেখা-শুনা করেন।বাবা-মায়ের কথা মত ঠিক ৫মাসের একটু আগে দেখতে যায় লাবণ্যকে।লাবণ্যকে দেখে নাঈমের ভালোই লাগে কিন্তু তবুও বাবা-মায়ের উপর নিজের পছন্দটা ছেড়ে দেয়।বাবা-মায়ের ও পছন্দ হয়।
–
লাবণ্য মনে মনে চিন্তা করছে এই সুটেট-বুটেট একটা চার চক্ষু চশমা পড়া ক্যাবলা কান্ত হবে তার জামাই।যার জন্য কলেজের অনেক ছেলে পাগল ছিলো,যেই কিনা এলাকার বড় ভাইদের কাছে ছিলো রাজকুমারী সেই লাবণ্যের জামাই হবে এক ক্যাবলাকান্ত?ভাবতেও কান্না পাচ্ছে তার,কিন্তু তার বাবার জন্য কিছুই পারছে না।মুখ বুঝে সব সহ্য করে নিয়ে রাজি হয়ে গেলো।
–
বিয়ে ধুম-ধাম করেই হলো,বাসর ঘরে বসে আছে লাবণ্য,একটু পর দরজায় নক ভেতরে আসতে পাড়ি?লাবণ্য মনে মনে ভাবছে একি গাধা নাকি বাসর ঘরে আসবে তা আবার আমার অনুমতি চাচ্ছে,আসুন আসুন।নাঈম ভিতরে আসলে লাবণ্য খাট থেকে নেমে নাঈমকে সালাম করে।নাঈমের কাছে একটু লজ্জাই করতে ছিলো,তবুও…….নাঈম বলল দেখুন আমি আপনাকে ঠিক মত চেনার সময় টুকুও পেলাম না,আপনিও আমায় ঠিক মত জানার সময়টুকু পান নি তার জন্য দুঃখিত।আসলে বাবা-মায়ের ইচ্ছাতে সব কিছু এত তাড়াতাড়ি হয়ে গিয়েছে যে কিছুই ভাবার সময় পায়নি।
–
লাবন্যঃ আপনি কি জীবনে প্রেম করেনি?
–
নাঈমঃ না আসলে আমি এই টা কখনো ভেবে দেখি নি।আর তেমন কাউকে পাইনি যে…..ভালোবাসবো।
–
কথা গুলি শুনে হাসতে লাগলো লাবণ্য,আর লাবণ্যের হাসিটা দেখে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নাঈম।কারন লাগণ্য যখন হাসি দেয় তখন তার গালে টোল পড়ে।আর টোল পড়া মেয়েদের হাসি অনেক সুন্দর লাগে নাঈমের কাছে।লাবণ্য যতটা ক্যাবলা টাইপের ছেলে ভেবেছিলো নাঈম কে,ততটা খারাপ না।চলে একটু একটু ভালো লাগতে শুরু করেছে,কারন সেও যে আগে কাউকেই ভালোবাসেনি।লাবণ্য বলে কি আপনি কি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলবেন?বসুন…..
..বলতে না বলতেই কারেন্ট চলে গেল।নাঈম বলে আপনি দাড়ান আমি চার্জার অন করি।লাবণ্য বলে না চলেন ছাদে যাই,আজকে পূর্ণিমারাত চলেন এক সাথে জোছনা দেখি,আমার চাঁদের আলোতে সারারাত ছাদে বসে থাকতে ইচ্ছা করে।
–
নাঈম বলে এই চাঁদের আলো গায়ে লাগতে লাগতে বুঝি এতটা চাঁদের মত দেখতে হয়েছেন?লাবণ্য একটু লজ্জা পায় বলে চলুন তো ছাদে,এই বলে নাঈমের হাত ধরে লাবণ্য ছাদে নিয়ে যায়।দুজনে বসে আছে রাতের আকাশের নিচে,লাবণ্য আস্তে আস্তে করে গান গাইছে………নাঈমের একটু একটু হাসি পাচ্ছে।লাবণ্য জিজ্ঞেস করছে কি ব্যাপার আপনি হাসছেন কেনো।নাইম বলে না কিছু না,কিন্তু লাবন্য বলে আমার গান শুনে হাসি পাচ্ছে তাইনা,ঠিক আছে আপনি গান গাইবেন,দেখি কত সুন্দর গান গাইতে পাড়েন।নাঈম না বলে কিন্তু লাবণ্যের অনেক জোড়াজুড়িতে নাঈম গাইতে শুরু করে………..
–
–
” আঁধার রাতে বসে আছি,জোছনার ই নিচে………তোমায় নিয়ে ভেসে যাবো জোনাকিরি দেশে।
–
আলো আলো ছায়াতে,মেঘের রাজ্যে হারাতে মন চায় সারাটি ক্ষন………..
……..উড়ে যাবো সেখানে,ভালোবেসে রবো এক সাথে সারাটি জীবন।
–
যদি চাও তোমায় নিয়ে যাবো পরীর দেশে……….. সেইখানে রাখবো তোমায় পরীর ও বেশে।
–
সেই রাজ্যের রাজকন্যা বানাবো তোমায়…………..ভালোবেসে হারাবো দুজন সকল পরীর অজানায়।
–
ভালোবেসে ছুয়ে আসবো নীল দিগন্ত………
………তোমার জন্য হতে পারি সমুদ্র প্রশান্ত।
–
উওল সমুদ্রের ঢেউ হয়ে যাবে শান্ত……….
……….চিরদিন আমি থাকবো শুধু তোমারি জন্য।
–
তারাদের দেশে নিয়ে যাবো তোমায় ভালোবাসার নীল গালিচায়………………সুখের ও নীড় সাজাবো ওই আকাশের মেঘের ভেলায়।
–
আঁধার রাতে বসে আছি জোছনার ই নিচে………………..তোমায় নিয়ে ভেসে যাবো জোনাকিরি দেশে।।
–
–
নাঈমের মিষ্টি গলা শুনে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে লাবণ্য।এত সুন্দর করে গান গাইতে পারে এই ক্যবলা ছেলেটা।সত্যি ভাবতেও পাড়িনি।মানুষকে দেখেই বোঝা যায় না তার ভিতরে কি প্রতিভা লুকিয়ে আছে,নিজের কাছে ওকটু লজ্জা করে লাবণ্যের।কিন্তু ভালো ও লাগে কারন ক্যবলাটার গান যে এখন রোজ শুনতে পারবে।
–
গান শুনে অনেক প্রশংসা করে নাঈমের,পরে তারা রুমে চলে যায়।সকালে মায়ের সাথে কাজ করতে যায় লাবণ্য।তার শ্বাশুরী বাড়ন করে তবুও যায়।নাঈম লেট বাবু একটু দেড়িতে উঠে দেখে লাবণ্য নেই পাশে।কই গেলো,রাতেই তো সাথে করে এনেই ঘুম পড়েছিলো তবে কই গেলো।বিছানা ছেড়ে উঠে দেখে রান্নাঘরে মায়ের সাথে কাজ করছে।দূর থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে নাঈম।খুব ভালো লাগে তার,এক রাতের ব্যাবধানে কত আপন করে ফেলেছে।নাঈম ফ্রেস হয়,নাস্তা করে সবাই এক সাথে।
–
দিন গুলি ভালোই যাচ্ছিলো তাদের,ভালোবাসাটা পরিবারের মধ্যে বাড়তেই লাগে আস্তে আস্তে।আর লাবণ্যের উপর সবাই খুশি।শুধু নাঈম মাঝে মাঝে রাগ করে,কারন নাঈম যখন তার মিষ্টি বউকে একটু দুষ্টু হাসি দিতে বলে,নাঈমের গাল ধরে এক টান দিয়ে বলে এত হাসি দেখতে হবে না।দেখতে দেখতে ৩টা বছরে তাদের সংসারজীবনের বয়স হয়।একদিন লাবণ্য নাঈমকে জানায় নাঈম বাবা হতে যাচ্ছে।নাঈম অনেক খুশি।লাবণ্য অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।অপারেশন থিয়েটার এ নিয়ে যাবার পর কিছু সময় পড় জানায় তাদের মেয়ে হয়েছে।
–
সবাই অনেক খুশি, এত সুন্দর হয়েছে যে কেউ অবাক হয়ে যাবে।খুব সুন্দর একটা নামও দেয় “দৃষ্টি”। কিন্তু দিন গুলি যত যাচ্ছিলো দৃষ্টির মায়ের কেনো যেন মনে হতে লাগলো তার মেয়ের হয়ত কোন সমস্যা আছে।কেমন করে তাকায়,কিছু বুঝতে পাড়ে না তাড়া।ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায় তারা বলে আপনার মেয়ে অন্ধ না,কিন্তু তার জন্মের আগেই চোখের ভিতরে কিছু হয় তখন থেকেই তার চোখ দুইটা নষ্ট হয়ে যায়।সে শুধু এই চোখ দিয়েই দেখতে পারবে না।কিন্তু তার চোখে যদি অন্য কেউ চোখ দান করে তবে সে আবার দেখতে পাবে।তবে তার জন্য আপনাদের অপেক্ষা করতে হবে কমপক্ষে আপনাদের মেয়ের অপারেশন করার জন্য উপযুক্ত বয়স পর্যন্ত,আর সেইটা ১০বছরের আগে না।
–
ডাক্তারের কথায় কিছুটা আশ্বাস পেলেও কিন্তু চিন্তার বিষয় কে দিবে এই চোখ।পরে লাবণ্য ঠিক করে সে আর কত দিন বাঁচবে তাই সেই চোখ দান করবে,কারন তার রক্তের গ্রুপ এক।এদিকে নাঈম বলে না তুমি একা না আমি আর তুমি দুইজন মিলেই আমাদের মেয়েকে চোখ দিব।ডাক্তারের সাথে সব কিছু কথা বলে জানতে পারে হ্যা তারা পারবে দিতে।বাবা একটা আর মা একটা মিলে দুইটা চোখ দিবে দৃষ্টিকে।
–
দৃষ্টি আস্তে আস্তে এই ভাবেই বড় হতে লাগলো,দিন থেকে মাস মাস থেকে বছর,কথা বলতে ও শিখলো,কিন্তু সে যে দেখতে পায় না,তার বাবা তাকে গান শিখাতেন, খুব সুন্দর করেই শিখতে লাগল।তার বাবা তাকে বলত আর কিছুদিন পর সে দেখতে পাবে।সে সবাইকে দেখতে পাবে।
–
আজকে দৃষ্টির অপারেশন……..তার একার না তার বাবা-মা মোট তিন জনের।ডাক্তাররা অপারেশন পড় জানালো সব ঠিকঠাক আছে।দৃষ্টির কয়েক দিন পর ব্যান্ডেজ খুলতে হবে,তার আগেই তার বাবা-মায়ের টা খুলতে পারবে।তার মা দোয়া করতে লাগলো যেন তার মেয়ে দেখতে পায়।কিছুদিন পর মা-বাবার টা খুলা হলো,খুব খারাপ লাগছে আবার যখন চিন্তা করছে তাদের চোখ দিয়ে তাদের মেয়ে দেখতে পাবে তখন আর কষ্ট টা চলে যায়।তাদের ব্যান্ডেজ খোলার দুইদিন পর দৃষ্টির ব্যান্ডেজ খোলা হবে।
–
সবাই অপেক্ষা করছে,কখন তাদের দৃষ্টি সবাইকে দেখতে পাবে।যেখানে আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করছে কোন ত্রুটি রাখেনি,শুধু তার দৃষ্টিটাই দেয় নি।কিন্তু আজকে হয়ত সে দেখতে পাবে।যখন ব্যান্ডেজ খোলা হয় তখন দৃষ্টি সবাইকে দেখতে পায়,তার মা তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদে,বাবা ও আবেগে মুর্ছা যায়।দৃষ্টি যখন জানতে চায় মা-বাবা তোমাদের চোখে কি হয়েছে?তখন তাদের বাবা-মা বলে মা কিছুই হয়নি শুধু আমাদের চোখের আলো আমাদের দৃষ্টিকে দিলাম যাতে সে তার বাবা-মা কে দেখতে পাড়ে।
–
ডাক্তার সহ সকলের চোখে কোনে পানি,মা-বাবার এতটা ভালোবাসা দেখে।সত্যি এই জগতে বাবা-মায়ের ভালোবাসার কোন তুলনা হয়না,তাদের ভালোবাসা অসীম।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা