রুমে ঢুকে সুপ্তিকে দেখে আমি একটু অবাকই হলাম।একটু না বেশ ভালই অবাক হলাম।
এই মেয়েটা এতদিন পর এখানে!
”
সুপ্তি আমাদের বাড়িওলার মেয়ে।
আমরা এই বাসায় ওঠার পর থেকেই সুপ্তির সাথে পরিচয়।মেয়েটা দেখতে বেশ ভালই আবার মিশুক ও।
‘
সারাদিন আম্মার সাথে কি কথা বলে সেটা সে আর আম্মা ছাড়া কেও বলতে পারবে না।আমার তো মাঝে মাঝে মনে হয় সুপ্তিই ওনার আসল মেয়ে আর আমি পালিত সন্তান।
‘
বাড়িওয়ালার নিয়ম অনুযায়ী ছাদে উঠা একদম নিষেধ।কিন্তু সুপ্তির জন্যে আমার কোন সমস্যা হয় না।যেকোন সময় ছাদে উঠতে পারি।বাড়িওয়ালার একমাত্র মেয়ে বলে কথা।যেটা বলবে সেটাই শুনতে হবে।
‘
ভালই চলছিল আমাদের।কিন্তু ইদানীং সুপ্তিকে একটু বেশিই আমাদের বাসায় দেখছি।আম্মার সাথে গল্প করা, বাইরে যাওয়া, আবার মাঝে মাঝে দেখি রান্না ও করে।
”
আহাদ।এই আহাদ।
‘
কারও ডাকে আমার ঘুমটা ভেঙে গেলো। উফ এত সকালে কে ডাকে।আমি চোখ খুলে তাকাতেই দেখি সুপ্তি চা হাতে দাঁড়িয়ে আছে।
‘
এই মেয়ে এত সকালে এখানে কি করছে।উফ বাড়িওলার মেয়ে বলে কি সব করবে নাকি।যখন তখন রুমে ঢুকে পড়বে।নাহ আজ কিছু বলতে হবে মেয়েটাকে।আমি যখনি কিছু বলতে যাব তখনি সুপ্তি বললো,
-এই নাও চা খেয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো।আমি টেবিলে নাস্তা দিচ্ছি।কথাটি বলেই মেয়েটা চলে গেলো।
আরে দেখে মনে হচ্ছে আমার ঘরের বউ।কেমন যেন অধিকার ফলানোর চেষ্টা করছে।
আমি আর কিছু বললাম না।কিছুদিন হল আম্মার শরীরটাও ভাল না।ফ্রিতে যদি কেও রান্না করে খাওয়ায় সমস্যা কি।
‘
আমি চা খেয়ে ফ্রেশ হয়ে বের দেখি টেবিলে নাস্তা হাজির।মেয়েটা পারেও।
বাহ রান্না তো বেশ ভালই পারে দেখছি।বেশ মজা।কিন্তু বাড়িওলার মেয়ে হয়ে আমাকে এত খাতির যত্ন কেন করছে। মতলবটা কি!
”
অফিস থেকে ফিরতেই ইতির ফোন এসে হাজির।অফিস থেকে বের হয়েও তো কথা বললাম আবার এখন ফোন দিতে হবে কেনো।
আমি ফোনটা ধরতেই ইতির রাগি কন্ঠ শুনতে পেলাম।আবার কি হলো।মেয়েটা অল্পতেই রেগে যায়।বাসায় এসে ফোন দেইনি এটাই আমার দোষ।
আরে বাবা মাত্রই তো বাসায় আসলাম।ফ্রেশ হই তারপর না হয় দেয়া যাবে।
‘
ইতি। আমার একমাত্র গার্লফ্রেন্ড। খুব রাগি কিন্তু ভালও বাসতে পারে।
”
আহাদ আমি তোমাকে ভালবাসি।
‘
রাতে খাওয়ার পর ছাদে উঠা আমার কেমন যেন অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজও রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে তারা গুনছিলাম।তখনি কেও কথাটি বলে উঠলো।আমি পেছনে তাকিয়ে দেখি সুপ্তি দাঁড়িয়ে।
‘
এই অন্ধকারে খুব একটা দেখা যাচ্ছে না তবে আবছা আলোতে সুপ্তিকে চিনতে ভুল হয় নি।
কিন্তু মেয়েটা এটা কি বললো।এখন বুঝলাম এত কেয়ার কেন আমার প্রতি।কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব।হুম মেয়েটা দেখতে বেশ তবে তার চেয়ে বড় কথা মনটা বেশ ভাল।আমি সুপ্তিকে বললাম,
-কিছু বললে?
-আমি তোমাকে ভালবাসি।
-কিন্তু এটা তো সম্ভব না।
আমার কথায় সুপ্তির মুখটা কেমন যেন মলিন হয়ে গেল।ও বললো,
-কেন?
-আমার গার্লফ্রেন্ড আছে।
এবার সুপ্তির চোখের পানি আমার চোখ এড়ালো না।আমি আর কিছু বললাম না।
“”
ওর সাথে ব্রেকআপ হলে আমাকে মেনে নেবে তো?
‘
আমি যখনি ছাদ থেকে নামতে যাব তখনি সুপ্তি কথাটি বললো।
বলে কি মেয়েটা।ব্রেকআপ!এটা তো আমি ভাবতেও পারি না।তারচেয়ে বড় কথা হলো ইতি কোনদিন ব্রেকআপের কথা মুখেও আনবে না।খুব বেশীই ভালবাসে আমাকে।আমি সুপ্তিকে বললাম,
-সেটা কখনও হবে না।
-যদি হয়।
-তখন দেখা যাবে।
-না।আমাকে কথা দিতে হবে।
উফ আবার কি ঝামেলায় পড়লাম। আমাদের ব্রেকআপ কোন দিনই সম্ভব না।তাই কথা দিতেও তো সমস্যা নাই।আমি বললাম,
-হুম ঠিক আছে।যদি কোনদিন এমন কিছু হয় তাহলে ইতির জায়গা তুমিই পাবে।কথাটি বলে আমি আর দাড়ালাম না।রুমে চলে আসলাম।
”
সেদিনের পর থেকে আমি আর সুপ্তিকে দেখিনি। বাড়িওয়ালার কাছে খোজ নিয়ে জানতে পারলাম ও ওর মামার বাসায় চলে গেছে।এখন থেকে ওখানেই থাকবে।
সুপ্তি চলে যাবার পর কেমন যেন একা হয়ে গেলাম।এখন আর কেও সকালে ডেকে দেয় না,নাস্তা বাইরে করতে হয়।আম্মার শরীরটাও ভাল না।
”
ইতির সাথে ভালই চলছিল কিন্তু কি যেন মিসিং ছিল।
”
আজ এতদিন পর সুপ্তিকে দেখে আমি অনেকটাই অবাক হয়েছি।মেয়েটা আগের থেকে অনেকটা শুকিয়ে গেছে।আমি সুপ্তিকে বললাম,
-তুমি এতদিন পর।
-হুম আমি।আজ তো আমাকে মেনে নিতে কোন বাধা নেই।
সুপ্তির কথায় আমি কিছু বললাম না।কিন্তু মেয়েটা সবকিছু জানলো কিভাবে!
‘”
ইতির ফোনটাও এখন ওয়েটিং থাকে।ফোন দিলে আবার কেটেও দেয়।ভালভাবে কথাও বলে না।
হঠাৎ ইতির এই পরিবর্তন কেমন যেন মেনে নিতে পারলাম না।এখন আবার খুব সন্দেহ প্রবন হয়ে গেছে।সবকিছুতেই সন্দেহ।
‘
অনেক চেষ্টা করেছি ইতির সাথে আগের মত হয়ে যেতে। কিন্তু আমি চাইলেও তার দিক থেকে ছিল শুধুই অবহেলা।
‘
তবে আমাদের এই রিলেশন টিকিয়ে রাখার জন্যে আমার থেকে মনে হয় মেহেদীই বেশি চেষ্টা করেছে।মেহেদী। আমার ফ্রেন্ড।সবসময় আমার পাশে থেকে সাপোর্ট দিয়েছে।কিন্তু তবুও ব্রেকআপ হয়ে গেল।
”
আমি সুপ্তিকে কি বলবো ভেবে পেলাম না।মেয়েটা আমার জন্যে এতদিন অপেক্ষা করেছে।যে মেয়ে আমার সবকিছু জেনে এতদিন পর ফিরে আসতে পারে আর যাই হোক তার ভালবাসা মিথ্যে হতে পারে না।ইতির মত তো নয় ই।
”
আমি সুপ্তিকে বললাম,
-ভালবাসো?
-হুম।অনেক।
-তাহলে দূরে কেন।
সুপ্তি এবার আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিল।এটা কোন দুঃখের কান্না। না এটা সুখের কান্না।
আমি সুপ্তিকে থামালাম না।কাদলে নাকি কষ্ট কমে যায়।কাদুক মেয়েটা।কাদুক।আর কোন দিন কাদতে দেবো না এটাই শেষ কান্না।শেষ কান্না।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা