আয়নার সামনে দাড়িয়ে শাড়ির আঁচল ঠিক করছি ৷ সবাই তাড়া দিচ্ছে, তাড়াতাড়ি বরযাত্রীতে যাওয়ার জন্য ৷ আজ আমার এক্স ক্রাশের বিয়ে, বিয়ে কথাটা শুনলেই বুকের বাম পাশটায় ঠকঠক করে টোকা দেয় ভালবাসা নামক বদটা ৷ হঠাৎ রুমার কথা শুনে থমকে দাড়ালাম ৷ ইয়েন ভাইয়ের হবু বউ পালাইছে ৷ নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছি না ৷ বাড়িতে হট্টগোল শুরু হয়ে গেছে, কেনো জানি খুশি খুশি লাগছে ৷ ইশশ!! পন্ডিতের বউ হারা চাঁদবদন মুখখানা দেখার লোভ সামলাতে ইচ্ছে হলো না ৷
রুমে ঢুকতেই দেখি পন্ডিত মাথা নিচু করে বসে আছেন ৷
— এই নিন টিস্যু তবু কাইন্দেন না, লোকে দেখলে কি বলবে?
— বেলা তুমি যাও এখান থেকে ৷
— আচ্ছা ভাইয়া, মেয়েদের স্বামী না থাকলে হয় বিধবা তাহলে ছেলেদের বউ না থাকলে তাদের কি বলে?
— তুমি যাবে নাকি ঘাড় ধরে বের করে দিবে?
— তা আপনি দিতেই পারেন, তবে লোকের কানাকানি কি করে বন্ধ করবেন?
— কি বলে?
— আসার সময় শুনলাম বলতেছে, আহারে ইয়েন পোলাডা কত ভালো, কখনো কারো কাচা ধানে মই দেয়নি সবসময় পাকা ধানে মই দিছে ৷ তার কপালে বউ জুটলো না?
— যাবা নাকি (চুল ধরে)
— উ… চুল ছাড়েন
— ছাড়লে কি করবে?
— রুমার কাছে যাবো
অবশেষে চুল ছাড়লো বউ হারা বিধবা ছেলে ৷
— হুহ !! আমাকে তো তাড়িয়ে দিচ্ছেন, একটু পরে কাকিমনি তার মূল্যবান বক্তব্য পেশ করবেন ৷
— কি বলবে ৷
– বলবে আজকের মধ্যে আমি আমার বাবুকে বিয়ে করাবো ৷ তোমরা যেখান থেকে পারো মেয়ে খুজে দাও ৷
— কি বলো যাকে তাকে বিয়ে করবো নাকি?
— পন্ডিত মশাই ওই দেখো, মুখের কথা মুখেই রয়ে গেলো, কাকি মনি তার ছেলের জন্য বউয়ের অর্ডার দিয়ে দিচ্ছে
— কি হবে রে বেলা একটা বুদ্ধি বের করো ৷
— হাত চুলকায় টাকা লাগবে, টাকা না দিলে বুদ্ধি বের হবে না ৷
— উফফ!! তোমার এই অভ্যাস গুলো এখনো যায় নি?
— যতো কথা বলবেন ততোই সময় যাচ্ছে ৷
— এই নাও তোমার টাকা ৷
— আল্লাহ!! এইটা আপনি কি দিলেন? ২০০০ টাকা লাগবে ৷ আপনি জানেন আপনার বিয়ের জন্য কত টাকা খরচ করছি তার সোধ নিতে হবে না?
— বউ চলে গেছে তার উপর এতগুলো টাকা নেওয়া ঠিক হবে?
— টাকা গেলে টাকা পাবেন কিন্তু একবার যাকে তাকে বিয়ে করলে সারাজীবন পস্তাবেন ৷ এখন আপনি ভেবে দেখেন কি করবেন?
১০০০ টাকার দুইটি কচকচে নোট হাতে পেয়ে, ঘ্রান শুকতে শুকতে দরজার দিকে পা বাড়াতেই হাতটি খপ করে ধরে ফেলল,
— কোথায় যাচ্ছো বুদ্ধি না দিয়ে ৷
— আমি ছোট মানুষ কি বুদ্ধি দিবো, নিজের বিয়ে নিজে সামলান ৷
— আমার টাকা দিয়ে বিদায় হও ৷
— আল্লাহ কি বলেন, কে বলছে বুদ্ধি নেই, একটা কাজ করেন আমাকে বিয়ে করেন ৷ আমি মাশাল্লাহ অনেক সুন্দরী ৷
— এ্যাঁ?? কি বলছো?
— হ্যাঁ, তাইলে তে যাকে তাকে বিয়ে করতে হবে না ৷
— তোমার মাথা থেকে এগুলা এখনো বের হয় নি?
— নেমে গেছিলো, কিন্তু যখন শুনলাম, আপনার হবু বউ পালাইছে তখন আবার ভর করলো ৷
— তুমি কি কখনো সিরিয়াস হবা না?
— হুহ!! কত সুন্দর বুদ্ধি দিলাম তাতেও দোষ? যান আপনি আপনার নিজের বিয়ে সামলান ৷ দরজার দিকে পা বাড়াতেই কাকিমনির আগমন৷
— এই ইয়েন এলিজাকে (রুমার খালাতো বোন) তোর কেমন লাগে?
— ভালো, কেন বলো তো?
— এলিজার সাথে তোর বিয়ে ৷
— মানে?? আমি কিছুতেই বিয়ে করবো না এলিজাকে, আমি ঢাকায় যাবো আজই ৷
— কেনো ভাইয়া বিয়ের স্বাধ মিটে গেছে? (শাড়ি ঠিক করতে করতে বললাম)
— মা বেলাকে যেতে বলো এখান থেকে ৷
— যাচ্ছি হে পন্ডিত মশাই, আপনার বউ যাবে না তো কার বউ যাবে, বেশ হইছে বউ গেছে ৷ শোনেন কাল থেকে সাদা পাঞ্জাবি আর সাদা লুঙ্গি পড়ে থাকবেন ৷ বলেই চলে আসলাম ৷
হুহ!! আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে, শয়তান ছেলে আমারে কত বড় ছ্যাকা দিছে ৷ এখন বুঝো মজা, উফফ!! ক্ষুধা লাগছে, বিয়ের টেনশনে আমার কথা সবাই ভুলে গেছে ৷ বান্ধবী রুমাকে বললাম,
— এই মুটি ক্ষুধা লাগছে খাইতে দে, তোর ভাইয়ের বিয়ে আর খাওয়া লাগবে না ৷
— চুপ কর রাক্ষসী, ভাইয়ের বউ দেখবি না?
— সে কি করে দেখবো সে তো পালাইছে ৷
আরাম করে মুরগীর রানের হাড্ডি খাচ্ছি, ঠিক তখনি রুমার পিচ্চি চাচাতো বোন এসে বলল, রুমা আপু জানো আজ রাতে ইয়েন ভাইয়ের সাথে বেলা আপুর বিয়ে ৷
কথাটা শুনে রুমা আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে আমি রুমার দিকে ৷ কতক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম জানি না ৷ কাকিমনির ডাকে ঘোর কাটলো ৷ সামনে এসে বলল,
— এই শাড়িতে চলবে, শুধু আরেকটু সাজলেই হবে ৷
ইশারায় কাকিমনিকে বললাম মানে কি?
— শয়তান মেয়ে তুই এখনো হাড্ডি খাচ্ছিস? তোর কথা তো আমি ভুলেই গেছিলাম ৷ যাই বলিস আমার ইয়নের পছন্দ আছে ৷
তার কথায় যা বুঝলাম, পন্ডিতকে যখন এলিজাকে বিয়ের জন্য জোর করছিলো তখন নাকি বলেছিলো, এলিজার বিয়ের বয়স হইছে নাকি?? তার থেকে তো বেলাই ভালো ৷
এই ছেলে এতো বয়স নিয়ে পরে আছে কেনো বুঝি না ৷ ৩ বছর আগে যখন বলেছিলাম, এই বেলার সাথে হাজারটা বেলা কাটাবেন? উত্তরে মাথায় একটা গাট্টি মেরে বলেছিলো, যাও পড়তে বসো এইটুকু মেয়ে আসছে ভালবাসার কথা বলতে ৷ কি আজব ছেলে, ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি আর আমার নাকি ভালবাসার বয়স হয় নি ৷ দিলো আমার ভালবাসার ১৩ টা বাজিয়ে ৷ সেদিন থেকে ভালবাসা নামক জিনিসটা বুকের বাম পাশে দরজা বন্দি করে রেখেছি ৩ বছর যাবত ৷ যেদিন রুমা এসে বলল, দোস্ত আগামী সপ্তাহে ভাইয়ের বিয়ে ৷ তখনি বুকের বাম পাশটা দরজার করা নক করে ভালবাসা বলেছিলো, বেলা ছেড়ে দে আমায় আর কত বন্দি করে রাখবি? বুকে হাত দিয়ে বলেছিলাম, চুপ থাক বদ ভালবাসা এতদিন যখন চুপ করে থাকতে পারছো সামনেও থাকতে পারবে, তাছাড়া তোর ভালবাসার বয়স হয় নি রে পাগলী ৷
স্বপ্নেও ভাবি নি যে এই পন্ডিতের সাথে আমার বিয়ে হবে ৷ শয়তান ছেলে আপনি আমার মন ভাঙছেন আজ আপনার পালা ৷ পালাতে হবে এখান থেকে, ইশশ!! পালিয়ে গেলে পন্ডিতের মুখের অবস্থা কেমন হবে দেখতে ইচ্ছা করে ৷ কি আর হবে বিধবা বিধবা ভাব আসবে আর কি ৷ ঘর থেকে এগোতেই দেখি পন্ডিত মশাই সামনে হাজির ৷
— কোথায় যাচ্ছো?
— একজনকে বিধবা করতে যাচ্ছি, তা আর হলো কই সে সামনে এসে হাজির ৷
— মানে?
কিছু বলতে যাবো ওমনি রুমা এসে বলল, যা বলার বিয়ের পর বলিস, বলেই হাত ধরে অন্য রুমে চলে গেলো ৷ মা বাবা আত্মীয়-স্বজন সবাই আসছে ৷
নিজের হাতে সাজানো বাসর ঘরে বসে আছি, আগে জানলে আরো সুন্দর করে সাজাতাম ৷
পন্ডিত মশাই রুমে ঢুকেই দরজা লাগিয়ে দিলো ৷ পাশে বসতে বসতে বলল,
— তোমাকে একদম বউ বউ লাগছে
– বউয়ের মত সেজেছি তা বউয়ের মতো লাগবে না তো খালার মতো লাগবে?
— না তা না, তুমি অনেক বড় হয়ে গেছো ৷
— এতো দিনে চোখে পড়লো?
— মানে?
— এতো মানে মানে করেন কেনো?
— ইয়ে মানে
— বাদ দিন আমার একটা স্বপ্ন পূরন করবেন?
— কি?
— আমার না খুব সখ পালিয়ে বিয়ে করার ৷
— তা কি করে হবে বিয়ে তো হয়ে গেছে?
— তো কি চলেন পালিয়ে যাই ৷
হাটতে হাটতে অনেক দুর চলে আসছি, দুইজনের মাঝখানে অনেকটা দুরত্ব, দূর থেকে শিয়ালের ডাক ভেসে আসছে ৷ ভয় লাগছে, দুজনের মাঝখানের দুরত্ব কমে আসছে ৷
— ভয় লাগে? (ইয়েন)
— হুম,
হাত ধরে বলল,
— ভয় পাবার কিছু নাই
অবশেষে বাসে উঠলাম, বাসের লোকজন হা করে তাকিয়ে আছে ৷ মনে হয় আমরা কোনো জোকার দলের সদস্য ৷ এক বুড়ো লোকের তো হা করে আছে, সাথে মুখও হা হয়ে আছে ৷ সামনে গিয়ে তার থুতনি ধরে মুখ বন্ধ করে বললাম, কি হলো জুয়ান কালের অভ্যাস এখনো পাল্টাতে পারেন নি? আরো কিছু বলতে যাবো তখনি পন্ডিত জানালার পাশে সীট দিয়ে বলল, কি হচ্ছে এসব চুপ করে বসে থাকো ৷ এতো রাতে বউ সেজে যাচ্ছো, মানুষ তো উল্টোপাল্টা ভাববেই ৷ আর খাবার কিছু নিয়ে আসছি, একটু পর বাস ছাড়বে ৷
চুপ করে ভদ্র মেয়ে হয়ে বসে আছি, ওমনি একটি ছেলে এসে বলল,
— আপনার পাশের সীটে বসতে পারি?
— না
— তাইলে পিছনের সীটে বসি?
খুব ইচ্ছা করছে বলতে, বইলে বইবেন হ্যাতে জিগানের কি আছে?
ওমনি পন্ডিত মশাইয়ের আগমন, বলতে গিয়েও বললাম না ৷ দুজনেই বসে আছি, উদ্দেশ্যে ইয়েন ভাইয়ার বাসা ৷ বাসায় যেতে যেতে প্রায় রাত তিনটা বেজে গেছে ৷ পন্ডিত মশাই ফ্রেশ হয়ে এসে বলল, ওই রুমে গিয়ে তুমি ঘুমাও ৷
কি বদ ছেলে আমি তো তার বউ নাকি? আমার কি তার রুমে ঘুমানোর অধিকার নেই? কাকিমনিকে ফোনে জানিয়ে দেয়া হয়েছে ৷ বেশ ভালই যাচ্ছিলো আমাদের টোনাটুনির সংসার ৷ হঠাৎ একদিন পন্ডিত বলল,
— বেলা একবছরের জন্য আমার অফিসের কাজে বিদেশ যেতে হবে ৷
— কবে যাবেন?
— এইতো আগামী সপ্তাহে, আর তুমি বাড়িতে থাকবে ৷ একবছরের জন্য বিদেশ চলে গেলে রাগি পন্ডিত ৷ একদম একা হয়ে গেলাম আমি, মাঝরাতে ঘুম ভাঙে কিন্তু জোর করে ছাদে নেয়ার মানুষটি নেই সাথে ৷ সন্ধায় যখন অফিস থেকে ফিরতো, সাথে খাবারের কিছু না আনলে, ৩০ মিনিট দরজার ওইপাশে থাকতে হতো ৷ খুব মনে পরে ওই দিন গুলো, যেদিন পন্ডিতের কলিগদের সাথে পিকনিকে গেছিলাম ৷ হাতে হাত রেখে হেটে যাওয়া, কাধে মাথা রাখা, খাইয়ে দেওয়া ৷ যদিও ছিলো অভিনয় হ্যাপি কাপলের মতো অভিনয় করতে হয়েছিলো, তার কলিগদের দেখানোর জন্য ৷ তবে আজও বুঝতে পারি নি সে আমায় ভালবাসে কি না ৷ কিন্তু যখন রান্না করতে গেলে চুল খুলে যেতো ৷ চুল সরানোর বৃথা চেষ্টা করতাম ৷ে তখন সে পিছন থেকে এসে চুল বেঁধে দিতো ৷ সেই ছোয়ায় ছিলো কত্ত ভালবাসা ৷ আবার পরক্ষণে রাগ দেখিয়ে বলতো চুল বেঁধে রান্না ঘরে ঢুকতে পারো না ? মনকে বলি,ওইরকম ভালবাসার ছোয়া পেলে হাজার বার চুল খুলে রান্না ঘরে যেতে রাজি ৷ ইদানিং পন্ডিতের ভাবনায় সারাক্ষন ডুবে থাকতে ইচ্ছা করে ৷
দেখতে দেখতে পার হয় গেলো ৬মাস ৷ ভার্সিটি থেকে ফিরে এসে খাটের উপরে বসতে যাবো ওমনি চারপাশ অন্ধকার হয়ে গেলো ৷ চোখ মেলে তাকাতেই দেখি বাসার সবাই আমাকে ঘিরে রেখেছে ৷ ডাক্তার বলল, খুশির খবর, সে মা হতে যাচ্ছে ৷
এ কি শুনছি আমি? মা হবো? আমি মা হবো? তা কি করে সম্ভব? পন্ডিতের সাথে আমার সেরকম সম্পর্ক তৈরী হয় নি যে আমি মা হবো ৷ শাশুড়ি মায়ের দিকে তাকালাম, সবার চোখে ঘৃনার ছাপ ৷ কি করবো বুঝতে পারছিনা, প্রিয় বান্ধবী রুমা এখন আমার সাথে কথা বলে না ৷
ওদের রাগ করাটা স্বাভাবিক পন্ডিত বাড়ি নেই ৬ মাস আর এইদিকে এরকম অবস্থা ৷ এখন কেউ আমার সাথে কথা বলে না ৷ পন্ডিত এই তিন দিনে মধ্যে একবার শুধু বলেছিলো, এগুলো কি সত্যি? শুধু বলেছিলাম এইটুকু বিশ্বাস রাখতে পারেন ৷ তারপর থেকে আগের মতো ফোন দেয় নি ৷ শাশুড়ি মা তো সবসময় বাসা যেতে বলে,তবে পন্ডিত কি মনে করে যেনো বাসা থেকে বেরিয়ে যেতে বলে নি ৷ সে এসে যা করার করবে, নিজেকে অন্ধকার ঘরে বন্দি করে রেখেছি পাঁচ দিন যাবত ৷ কত ইচ্ছে ছিলো পন্ডিত আসবে ৷ খুব করে বকবো, কিভাবে পারলো আমাকে ছাড়া এতদিন থাকতে ৷ সকালে পন্ডিত বাসায় এসেছে ৷ সকাল থেকে আমার শশুড়-শাশুড়ি, রুমা মিলে মিটিং চলছে আমাকে নিয়ে ৷ পাশের রুম থেকে শুনতে পাচ্ছি মা বলে, তুমি তোমার বউকে কি করবে জানি না, তবে এই নষ্টা মেয়ের সাথে আমি কিছুতেই থাকবো না ৷ মন খারাপ হলেও মানিয়ে নিয়েছি, এরকম অবস্থায় সবাই এরকম বলতো ৷ তারা যে আমায় ঘর থেকে বের করে দেয় নি এটাই বড় কথা ৷ দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চলল, সে একবারের জন্য কথা বলে নি আমার সাথে ৷ কোন মুখে ওর সামনে গিয়ে দাড়াবো ৷ পাশের রুম থেকে পন্ডিতের ডাক শুনতে পেলাম ৷ রুমার কাছ থেকে আমার ডাক্তারি রিপোর্ট গুলো নিয়ে হন হন করে বেরিয়ে গেলো ৷ রাত ১১টা বাজে পন্ডিতের আসার নাম নাই ৷ বারেন্দায় বসে রইলাম, কিন্তু আসেনি, হয়তো আমার সাথে থাকতে রাজি না ৷ রুমে এসে শুয়ে আছে রাত কয়টা বাজে জানি না, কারো হাটার শব্দ শুনে উঠে বসলাম ৷ পন্ডিত বারেন্দায় বসে সিগারেট খাচ্ছে ৷ একটার পর একটা খেয়ে যাচ্ছে ৷ পাশে গিয়ে দাড়ালাম,
— পন্ডিত
— কেনো এমন করলে?
কি বলবো বুঝতে পারছি না, কিছু বলার সাহস নেই ৷
— বিশ্বাস করেন আমি এমন কিছু করি নি ৷
— একটা ডাক্তার ভুল রিপোর্ট দিতে পারে তাই বলে চার জন ডাক্তার মিথ্যে কি করে বলে?
আর কিছু বললাম না, শুধু বলেছিলাম কাল আমায় বাড়ি পৌছে দিয়েন ৷ আমি আগেই চলে যেতাম, শুধু আপনার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম ৷ ভেবেছিলাম আপনি হয়তো ভরসা করবেন আমায় ৷ কিন্তু, যাক গে ঘুমাতে আসুন ৷
এতো চিন্তা করে কি হবে আপদ কাল বিদায় হবে ৷
ঘুরে রুমে ঢুকতে যাবো তখন পন্ডিত হাতটি ধরল ৷
— বেলা তুমি ভুল বুঝো না, আমি কি করবো কিছু বুঝতে পারছি না ৷
— আমি কিছু বলবো না, শুধু একটা কথাই বলবো ৷ আমি কোনো অন্যায় করি নি পন্ডিত ৷
আস্তে আস্তে পন্ডিত একদম কাছে চলে আসল, তার দুহাত দিয়ে গাল চেপে ধরলো ৷ তার চোখের দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারলাম না ৷ দুজনেই চোখ বন্ধ করে ফেললাম, পন্ডিত তার কপাল আর আমার কপাল একসাথে করে বলল,
— ভালবাসি রে সব থেকে বেশিই ভালবাসি, আমি কি করবো কিছু জানি না ৷ নিজের থেকে বেশি বিশ্বাস করি তোমায় ৷ এই বিশ্বাস শেষ হতে দিও না,
বলেই শক্ত করে জড়িয়ে নিলো তার দুই বাহুর মাঝে ৷ সকাল সকাল চলে আসলাম এখানকার নামকরা ডাক্তারের কাছে ৷ ডাক্তার বলল,
— কিছু বলা যাচ্ছে না, তাবে আসা করি আপনি মা হতে যাচ্ছেন ৷ তবুও কয়েকটা টেষ্ট দিচ্ছি দেখি রিপোর্টে কি আসে ৷
ওয়েটিং রুমে বসে আছি আমি আর পন্ডিত, খুব ভয় লাগছে শক্ত করে ধরে রাখছি পন্ডিতের হাত ৷
আমার হাতের উপর হাত রেখে ইশারায় বলল, ভয় পেয়ো না আল্লাহকে ডাকো ৷
কিছুক্ষণ পর রিপোর্ট আসল ডাক্তার রিপোর্ট দেখে বলল,
— আমাদের ধারনা ভুল ছিলো, আসলে আপনার জরায়ুতে টিউমার ধরা পরেছে ৷ যতদ্রুত সম্ভব অপারেশন করাতে হবে, তা না হলে টিউমারে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি ৷
পন্ডিতের দিকে তাকালাম, ওর মুখে বিজয়ের হাসি ৷ এই হাসির মাঝে আছে এত্তগুলা কষ্টের পর সুখের ছোয়া, কত অভিমান বোঝা হালকা হওয়া, আর আছে কিছু অনুশোচনা ৷
কিছুুদিন পর,
অপারেশন শেষে ডাক্তার এসে বলল, ৩ বছরের মধ্যে বাচ্চা নেয়া যাবে না ৷
পন্ডিতের দিকে তাকালাম, আমার এই চাহনির মানে, আমি তিন বছর অপেক্ষা করতে পারবো না ৷ এর আগেই আমার কথা মনিকে চাই ৷ আর পন্ডিত তার চাহনি দ্বারা বুঝিয়েছে, মাইর চিনো, আগে নিজে সুস্থ হও বুঝছো?
হাসপাতাল থেকে বেড়োতে যাবো, ওমনি একজনের সাথে ধাক্কা লাগলো পন্ডিতের ৷
— সরি সরি
— আরে আপনি ইয়েন সাহেব না?
— হ্যা আর আপনি নিপা তাইতো??
— হুম তা এই আপনার সেই ভালবাসার মানুষ বেলা ?
— হ্যা
— ধন্যবাদ আপনাকে, আপনার জন্যই আমার ভালবাসার মানুষটাকে ফিরে পেয়েছি ৷
তাদের কথার মাথা মন্ডু কিছু বুঝি না, পন্ডিতকে বললাম কে উনি?
তাদের কথায় যেটা বুঝলাম এই হলো সেই মেয়ে যে কিনা বিয়ের দিন পালাইছে ৷ আর তাকে পালাতে সাহায্য করছে আমার এই পন্ডিত ৷
— কি বদ আপনি, নিজের বিয়ে কেউ এইভাবে ভাঙে নাকি?
— তোমার জন্যই এত কিছু করলাম ৷
— মানে?
— এতো মানে বুঝে লাভ নাই, থাক না কিছু কথা অজানাই ৷ শুধু তোমার চোখে আমার ভালবাসা দেখতে চেয়েছিলাম বাবুই ৷ আর সেটা আমি পেয়ে গেছি ৷
— বদের হাড্ডি একটা ৷
— তোমার বাম পাজরের হাড্ডি তো তাই ৷
— তাইলে তে বলতে হয় ভালো মেয়ের হাড্ডি একটা ৷ হি হি হি
পন্ডিতের দুহাতের আঙুল দিয়ে আমার হাত ওর হাতের মধ্যে নিয়ে নিলো ৷ আমার বিশ্বাস মিথ্যে হয় নি রে পাগলী ৷
কিছু বলার মতো ভাষা আমার নেই, তবে এইটুকু বুঝেছি বিশ্বাস হলো এমন একটা জিনিস, যেখানে সম্পর্ক টিকে রাখতে সাহায্য করে ৷ হয়তো কেউ কেউ সেই বিশ্বাসকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে ৷ মাঝে মাঝে বিশ্বাস ভালবাসার কাছে পরাজিত হয় ৷ কখনো কখনো ভালবাসা বিশ্বাসের কাছে পরাজিত হয়ে উপাধি পায় ছলনা অথবা ছলনাময়ী ৷
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা