শুধু তোমায় চেয়েছি

শুধু তোমায় চেয়েছি

:-ঠাসসসস,,,,

গালে হাত দিয়ে অবনীর দিকে তাকালো রাজু।
:-তোকে থাপ্পড়টা দিতে চাইনি।কিন্তু তুই সীমা ছাড়িয়ে গেছিস।তাই দিয়েছি।(অবনী)
:-………..(রাজু)
:-তোকে কতবার বলবো,আমি তোকে ভালোবাসি না।তারপরেও তুই আমাকে বার বার প্রপোজ করিস কেন?
:-হয়তো তোকে অনেক বেশী ভালোবাসি।তাই বার বার তোর কাছে ভালোবাসার দাবি নিয়ে ফিরে আসি।
:-দেখ রাজু,আমি জানি তুই আমাকে কতখানি ভালোবাসিস।সেই ছোটবেলা থেকে আমার পিছনেই লেগে আছিস।সত্যি বলতে কি রাজু,ছোটবেলা থেকে এই পর্যন্ত তোর জন্য আমার মনে কোনরকম ভালোবাসার অনুভূতির সৃষ্টি হয়নি।প্লিজ,তুই দয়া করে আর আমার কাছে ভালোবাসার দাবি নিয়ে আসিস না।
:-আচ্ছা,তা নাহয় আসবো না।কিন্তু তোর আমাকে ভালোবাসতে অসুবিধাটা কি?
:-রাজু,তুই হয়তোবা জানিস না,আমি আকাশকে ভালোবাসি।
:-আকাশ?কোন আকাশ?(অবাক হয়ে)
:-তুই ওকে চিনবি না।ও আমাদের পাশের গ্রামে থাকে।
:-ওহহ।
আহত দৃষ্টিতে অবনীর দিকে তাকিয়ে বললো,রাজু।
:-হুমম।
:-কবে থেকে তুই ওকে চিনিস?
:-মাস খানেক হবে।ও আমাদের ভার্সিটিতে পড়ে।আমার এক ক্লাস সিনিয়র।
:-ওহহ।
:-হুমম।তুই চাইলে আমি কালকে ওর সাথে তোর পরিচয় করিয়ে দিতে পারি।
:-থাক।তার আর দরকার নেই।আমি এখন আসি।
এই বলে রাজু অবনীর সামনে থেকে চলে যেতে লাগলো।

:-কিরে,তুই আমাকে একলা রেখে চলে যাচ্ছিস যে?
দৌড়ে এসে রাজুর সামনে দাড়িয়ে কথাটা বললো,অবনী।
:-…….(রাজু)
রাজু কিছু না বলে অবনীর পাশ কাটিয়ে যাচ্ছিলো।
অবনী রাজুর হাত টেনে ধরলো।
:-অবনী,হাত ছেড়ে দে?(রাজু)
:-না ছাড়বো না।এত তাড়া কিসের তোর?একসাথে চল।
:-আমাকে বাসায় যেতে হবে।
:-আমিও তো বাসায় যাবো।
:-আমি তো আমার চলে বাসায় যাবো।তাই এত তাড়া।
:-তুই তোদের বাসায় যাবি মানে?
:-মানে কিছু না।
এই বলে অবনীর হাত থেকে রাজু তার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে দ্রুত গতিতে পা বাড়ালো।
আর অবনী রাজুর এমন কথা বার্তার কিছুই বুঝলো না।
তবে অবনী রাজুর সাথে কথা বলার মাঝে লক্ষ্য করেছিলো,যে রাজুর চোখে পানি ছিলো।
যাইহোক,অবনী আর রাজুকে পেছন থেকে ডাকলো না।
সে ধীর পায়ে বাসার দিকে রওয়ানা দেয়।

অবনী আর রাজু একজন আরেকজনের ফুফাতো এবং মামাতো ভাইবোন।
একজন আরেকজনের সমবয়সী না হলেও তাদের কে দেখলে বুঝা যায় একে অপরের সমবয়সী।
তবে রাজু অবনীর থেকে এক বছরের সিনিয়র।
যাইহোক,রাজু সেই ছোটবেলা থেকে,ধরেন,তার বুঝার বয়স হওয়ার পর থেকেই অবনীর পেছনে লেগে আছে,ভালোবাসার দাবি নিয়ে।
কিন্তু অবনী কোন মতেই রাজি নয়,রাজুকে ভালোবাসতে।
আজকে সকালে রাজু অবনীদের বাড়িতে কিছুদিনের জন্য বেড়াতে আসে।
আসতো না,,,
একমাত্র অবনীর জন্যই তার আসা।
যাইহোক,সকালে অবনীদের বাসায় আসার পর রাজুর অবনীর সাথে একবার ও দেখা হয় নি।
কি করে হবে?
অবনী বাসায় ছিলো না।
ও ভার্সিটিতে গিয়েছিলো।
দুপুরের দিকে রাজু খাওয়া-দাওয়া শেষ করে বিশ্রাম নিতে যায়।
এর কিছুসময় পর অবনী বাসায় আসে।
বিকালের দিকে রাজুর ঘুম ভাংলে,অবনী আর রাজু একসাথে ঘুরতে বাহির হয়।
আর ঘুরতে আসার মাঝেই রাজু অবনীকে প্রপোজ করে বসে।
এরপরের কাহিনীতো উপরেই জানলেন।

যাইহোক,
অবনী বাসায় এসে পৌঁছানোর অনেক আগেই রাজু বাসায় এসে পৌঁছায়।
রুমে ডুকেই,রাজু তার কাপড়-ছোপড় গুছিয়ে নিয়ে,তারপর রেডি হতে লাগলো।

:-কিরে রাজু,তুই রেডি হয়ে কোথায় যাচ্ছিস?
রাজু রেডি হওয়া শেষ হতেই,অবনীর আম্মু রুমে ডুকলো।ডুকেই কথাটা বললো।
:-মামি,আমাকে এখনই বাসায় চলে যেতে হবে।
:-কেন?তুই না বললি তুই কিছুদিন থাকতে এসেছিস?
:-হুমম,তা এসেছিলাম।কিন্তু আম্মু ফোন দিয়ে বললো,আমি যেন তাড়াতাড়ি বাসায় যাই।
:-কেন?
:-সেটাতো বলতে পারতেছি না।
:-তাহলে আমি ফোন দিয়ে জিগ্গেস করি?
:-মামি তার আর দরকার নাই।
:-কেন?
:-আসলে আমি আম্মুকে বলে আসি নাই তো।তাই।
:-ওহহ,আচ্ছা কাল সকালে গেলে হয় না।
:-না।
:-অবনীর সাথে কি কিছু হয়েছে?দেখলাম তো দুইজন একসাথে ঘুরতে বাহির হয়েছিলি।
:-মামি।তুমি কি যে বল না।ওর সাথে আমার কি আবার হবে?আচ্ছা মামি,তাহলে আমি এখন আসি?
:-আচ্ছা,ঠিক আছে।সাবধানে যাস।
অতঃপর রাজু আর কিছু না বলে,অবনীদের বাসা থেকে বাহির হয়ে আসলো।

রাজু চলে যাওয়ার কিছুসময় পরে অবনী বাসায় আসলো।
বাসায় আসার পর,অবনী তার মায়ের কাছ শুনে যে রাজু চলে গেছে।
অবনী রাজুর চলে যাওয়ার কোন কারণই বুঝলো না।
হয়তো বা তার করা আচরণের কারণে রাজু চলে গিয়েছে।
এমনটাই ভেবে নিয়েছে,সে।
রাজু কে সরি বলার কথাটা মাথায় রেখে,ওসব চিন্তা মাথায় থেকে বাদ দিয়ে দিলো,অবনী।

সেই যে রাজু অবনীদের বাসা থেকে চলে এসেছে,এই পর্যন্ত টানা চার বছর অবনীদের বাসার দিকে পা মাড়ায়নি সে।
কেন যাবে সে ওখানে?
যার জন্য সে যেত,সেইই তো আর তার দিকে ফিরে চায়নি।
যাইহোক,
রাতের খাওয়া-দাওয়া সেরে,রাজু তার রুমে গিয়ে ল্যাপটপ চালাচ্ছিলো।
:-রাজু?
রাজুর আম্মু তার রুমে ডুকতে ডুকতে কথাটা বললো।
:-হুমম,বলো।
ল্যাপটপ বন্ধ করে,সোজা হয়ে বসতে বসতে বললো,রাজু।
:-কালকে অবনী আমাদের বাসায় আসবে।
:-কোন অবনী?
:-অবনী।তোর মামাতো বোন।
:-ওহহ।তা ও আসলে আমার কি?
:-তোর কি মানে?কালকে তুই গিয়ে ওকে স্টেশন থেকে নিয়ে আসবি।
:-আমার পক্ষে সম্ভব হবে না।
:-কেন?
:-কালকে আমাকে শহরে চলে যেতে হবে?
:-কালকেই?
:-হুমম।
:-কেন?
:-কেন আবার?আমাকে অফিসে জয়েন করতে হবে না?
:-তা তো হবেই।কিন্তু তুই যে বললি,তুই অফিস থেকে পনেরো দিনের ছুটি নিয়ে এসেছিস।আর সবে তো মাত্র চারদিন হলো
:-হুমম,তা এসেছিলাম।কিন্তু,,
:-অবনী আসছে শুনে তোর মত পাল্টে গিয়েছে,তাই তো?
:-আম্মু,তুমি কি যে বলো না?ওর কাছে আমার কি?ও আসতেছে,যেহেতু কিছুদিন বেড়িয়ে যাবে।
:-রাজু,তুই আমাকে কিছু বলতে হবে না।আমি তো আর কাঁছা মাছ খাই না,আমিও তো কিছু বুঝি।নাকি?
:-আম্মু,তুমি কি বলতে চাইছো,বলতো?
:-আমি বলতে চাইছি,তুই ছুটি শেষ হওয়া পর্যন্ত,বাড়িতে থাকবি।
:-তারপর?
:-তারপর আর কি?অবনী আসলে ওর সাথে মেলামেশা করে বুঝে দেখ,ওর মাঝে কি আদৌ পরিবর্তন আসছে কি না?
:-তারপর?
:-ও যদি তোকে ভালো বেসেই থাকে,তাহলে তো তুই বুঝেই যাবি।
:-তারপর?
:-ও যদি রাজি থাকে,তাহলে আমি আর তোর আব্বু, তোর মামা-মামীর সাথে তোর আর অবনীর ব্যাপারে কথা বলে বিয়ে ঠিক করবো।
:-হুহহ,আম্মু তোমার আদৌ কি মনে হয়?অবনী আমাকে ভালোবাসে?
:-হুমম।তাই মনে হয়।তা না হলে,অবনী অনেক আগেই অন্য কাউকে বিয়ে করে ফেল তো।এতদিন পর্যন্ত এভাবে পড়ে থাকতো না।
:-তোমার কথায় যুক্তি আছে।কিন্তু আম্মু ও তো বলেছিলো,ও নাকি আবির,না না আকাশ নামে একজনকে ভালোবাসে।তাহলে?
:-কবে বলেছিলো?
:-আমি যে শেষবারের মতো ওদের বাসায় গিয়েছিলাম।তখনই বলেছিলো।
:-তাই নাকি?
:-হুমম।
:-কিন্তু তুই তো কখনো আমায় ওই কথাটা বলিস নাই।
:-কি করে তোমায় আমি বলতাম।তখন তো আমার বলার মন-মানসিকতা ছিলো না।
:-ওহহ।আচ্ছা,আমি কি বলি,তুই কালকে অবনীকে স্টেশন থেকে বাসায় নিয়ে আসবি।তারপর আমি নাহয় ওর সাথে সব কথা-বার্তা বলে বাকিটা বুঝে নিবো।
:-আচ্চা আম্মু,তুমি যেটা চাইবে,সেটাই হবে।
:-হুমম,তাহলে আর কি?এখন তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়।
:-আচ্ছা।
অতঃপর রাজুর আম্মু রুম থেকে বাহির হয়ে গেলো।
রাজুও আর কিছু না ভেবে শুয়ে পড়লো।
শুয়ে শুয়ে অবনীর কথা ভাবতে লাগলো।
“কে জানে?অবনী এখন দেখতে কেমন হয়েছে?অবনী আদৌ তাকে ভালোবাসে কি না?”
এভাবে বিভিন্ন ধরনের চিন্তা ভাবনা করার মাধ্যমে রাজু কখন যে ঘুমিয়ে পড়লো,তা সে টেরই পেলো না।

বেশ কিছুসময় হলো,অবনী বাস থেকে স্টেশনে নেমে একটা বেঞ্চে বসে রাজুর জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।
কিন্ত রাজুর কোন পাত্তাই দেখতে পাচ্ছে না।
তাই মোবাইলটা বাহির করে রাজুর আম্মুর নাম্বারে ফোন দিলো।
রিং হওয়ার কিছুসময় পর রিসিব হলো।
:-হ্যালো,ফুফু?
:-হুমম,বল,,,
:-তোমার ছেলের তো কোন পাত্তাই নাই।আমি দশমিনিটের মত হবে।স্টেশনের বেঞ্চটায় বসে আছি।
:-কি বলিস?রাজু তো অনেক আগেই বের হয়ে গেছে।আচ্চা,তুই ওখানে বসে থাক।আমি রাজুকে ফোন দিতেছি।
:-আচ্ছা,তাড়াতাড়ি করো।
এই বলে ফোনটা রেখে দিলো,অবনী।

“হ্যালো,আম্মু?”

এমন শব্দ শুনে অবনী বেঞ্চের অপর পাশে তাকালো।
দেখে একটি ছেলে অপরদিকে মুখ করে বসে আছে।

:-আম্মু,আমিও তো বেঞ্চে বসে আছি।কিন্তু অবনী,
:-এই রাজু,
এমন শব্দ শুনে ছেলেটি মানে রাজু অবনীর দিকে ঘুরে তাকালো।
:-আম্মু,আমি বোধহয় অবনীকে পেয়ে গেছি।এখন রাখি।
এই বলে ফোন রেখে দিলো,রাজু।
:-তুমি রাজু না?
রাজুর সামনে গিয়ে কথাটা বললো,অবনী।
:-হুমম,কিন্তু আপনি কে?(ভাব নিয়ে)
:-আরে আমি অবনী।
:-ওহহ,তুমিই অবনী,তাহলে?
:-হুমম।
:-তাহলে আর কি?দাড়িয়ে না থেকে চল,বাসার দিকে।
:-হুমম,চলো।
অতঃপর দুইজন একসাথে রওয়ানা দিলো,বাসার দিকে।
কিছুসময় হাটার পর বাসায় পৌঁছে গেলো,রাজু আর অবনী।
পথিমধ্য তাদের মাঝে তেমন কোন কথাই হয়নি।

যাইহোক,দুপুরের খাবার খেয়ে রাজু তার রুমে গিয়ে শুয়ে রইলো।
এর কিছুসময় পর অবনীও রাজুর রুমে প্রবেশ করলো।
অবনীর আসার উপস্থিতি টের পেয়ে রাজু বিছানায় সোজা হয়ে উঠে বসলো।
:-কি হলো?তুমি আমার রুমে আসছো কেন?(রাজু)
:-আমার কি আসতে বারণ আছে নাকি?(অবনী)
:-তা নেই।তারপরেও এভাবে কারও রুমে প্রবেশ করা উচিত না।এখন কেন এসেছো,সেটা বলো।
:-তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিলো।
:-সেটা পরেও বলতে পারবে।এখন গিয়ে বিশ্রাম নাও।
:-আচ্ছা,ঠিক আছে।এবার এটা বলতো তুমি আমাকে এভাবে এড়িয়ে চলতেছো কেন?
:-কই?আমি তো তোমায় এড়িয়ে চলতেছি না।
:-এড়িয়ে না চললে,তুমি আমার সাথে এমন ভাবে কথা বলতেছো কেন?
:-কিভাবে?
:-যেভাবে তুমি আমার সাথে কথা বলো,যেন আমি তোমার অপরিচিত।
:-যেমন?
:-আগে তুমি আমাকে তুই করে বলতে।আর এখন তুমি করে বলো।
:-এরপর?
:-আজকে স্টেশনে এমনভাবে তুমি আমার সাথে কথা বলেছো,যেন তুমি আমাকে চিনোই নি?
:-এরপর?
:-বাসায় আসার পথেও তুমি আমার সাথে তেমন কোন কথাই বলনি।কারণ কি?
:-এবার আমি কিছু বলি,তুমিও বড় হয়েছো আমিও হয়েছি।তাই একে অপরকে তুই করে বলাটা শোভা পায় না।তাই আমি তোমাকে তুমি করে বলছি।স্টেশনে তুমি বোরকা পরা ছিলে,তাই আমি তোমায় চিনতে পারি নি।
তুমি জার্নি করে ক্লান্ত ছিলে,তাই আসার সময় আমি তোমার সাথে কথা বলিনি।
এবার তুমিই বলো,এখানে তোমাকে এড়িয়ে চলার কিছু হয়েছে?
:-হুমম।তোমার মাঝে আমি অনেক পরিবর্তনই দেখতে পাইতেছি।
:-আমিও তোমার মাঝে অনেক পরিবর্তন দেখতে পাইতেছি।এখন আমি বিশ্রাম নিবো।তুমি এখন আসতে পারো।
এই বলে রাজু শুয়ে পড়লো।
অবনীও আর কিছু না বলে রুম থেকে বাহির হয়ে গেলো।

সন্ধ্যা নেমে আসতেছে।সুর্যের রক্তিম আলো ছড়িয়ে পড়তেছে,চারিদিকে।
এই দৃশ্যটা রাজু ছাদ থেকে উপভোগ করতে লাগলো।
এর মাঝে অবনীও ছাদে এসে রাজুর পাশে গিয়ে দাড়ালো।
রাজু অবনী আসার উপস্থিতি টের পেয়েও চুপচাপ দাড়িয়ে রইলো।

:-আমার সাথে কথা বলবে না?
পেছন থেকে রাজুর ঘাড়ে হাত রেখে বললো,অবনী।
:-তুমি আবার কখন আসলে?
অবনীর দিকে ফিরে বললো,রাজু।
:-সেদিকেও তাহলে খেয়াল ছিলো না।
নাকি খেয়াল থেকেও খেয়াল না থাকার ভান করছো?
:-আশ্চার্য,আমি তোমাকে দেখলে তো আর ওভাবে দাড়িয়ে থাকতাম না।
:-ওহহ,আমি এখানে এসে দাড়িয়ে ছিলাম প্রায় দশ মিনিটের মত হবে।আচ্ছা,যাইহোক আমি তোমার সাথে কিছু কথা বলতে এসেছি।
:-হুমম,বলো।
:-বাসা থেকে আমাকে বিয়ের জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে।
:-তো?
:-আমি আব্বু-আম্মুকে তোমার কথা বলে দিয়েছি।
:-কি বলেছো?(অবাক হয়ে)
:-বলেছি,আমি তোমাকে ভালোবাসি এবং তুমিও আমাকে ভালোবাসো।যদি আমি বিয়ে করি তোমাকেই করবো।
:-মানে কি,অবনী?তোমার মাথা ঠিক আছে তো?
:-আমার মাথা ঠিকই আছে।চলো,ওখানটায় বসি।তারপর তোমায় আমি সবকিছু বুঝিয়ে বলতেছি।
:-আচ্ছা,ঠিক আছে।চলো।
এই বলে অবনী আর রাজু,ছাদে করা বসার জায়গায় গিয়ে বসলো।

:-আচ্ছা অবনী,তুমি তো আকাশকে ভালোবাসো।তাহলে তুমি বাসায় ওর কথা না বলে আমার কথা বলেছো কেন?(রাজু)
:-বলতেছি,
একটা স্বস্তির নিঃস্বাস ফেলে বললো,অবনী।
:-আকাশের সাথে আমার ব্রেকআপ হয়ে গেছে।
:-মানে?(অবাক হয়ে)
:-ব্রেকআপটা আমিই করেছি।
:-কেন?
:-কারণ ওর চরিত্র ভালো ছিলো না।তাই।
:-……….(রাজু)
:-আসলে আমি সত্যিকারের ভালোবাসাটা বুঝতে পারি নাই।তাই তো আমি তোমার ভালোবাসাটার মুল্য না দিয়ে ওই রকম একটা চরিত্রহীনের ভালোবাসার জালে আবদ্ধ হয়েছিলাম।
:-তুমি কি করে বুঝলে,আকাশ একজন চরিত্রহীন?
:-আমার এক বান্ধবিকে ও ধোঁকা দিয়ছিলো।সেই আমাকে বললো।
:-ওহহ,আচ্ছা তোমাদের ব্রেকআপটা কবে হয়েছিলো?
:-আমাদের ব্রেকআপটা হয়েছিলো,আমাদের রিলেশনের দুইমাস ছয়দিনের মাথায়।যেদিন তুমি আমাদের বাসা থেকে চলে এসেছিলে,সেইদিনের পরদিন।
:-ওহহ।
:-সরি।
:-কেন?
:-কেন আবার?তোমাকে ওইদিন থাপ্পড়টা দেওয়ার জন্য।আসলে আমি তোমার ওইরকম আমার পিছনে লেগে থাকার কারণে চরম বিরক্তিবোধ করেছিলাম।তাই,তুমি ওইদিন আমাকে প্রপোজ করায় থাপ্পড়টা দিয়ে পেলি।
:-………..(রাজু)
:-খুব লেগেছিলো,না?
রাজুর গালে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,অবনী।
:-এই গালে মারো নি।মেরেছো ওই গালে।(রাজু)
এই কথায় অবনী লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেললো।
:-তুমি ওইদিন আমার উপর রাগ করে চলে এসেছিলে,তাই না?
:-কোনদিন?
:-যেদিন তোমায় আমি ফিরিয়ে দিয়েছিলাম।
:-তোমার উপর আমি কেন রাগ করবো?তুমি আমায় ভালোবাসো না,তাই ফিরিয়ে দিয়েছিলে।আর আমি আমার ভালোবাসার মুল্য পাইনি তাই চলে এসেছিলাম।
:-তা তো বুঝলাম।কিন্তু তুমি আমার উপর রাগ করে না আসলে,এতদিন যাবৎ আমাদের বাসায় একটি বারের জন্যও যাওনি কেন?
:-কি করে যেতাম,বলতো?যার জন্য যেতাম,সেই যখন আমার দিকে ফিরে চায়নি,সেখানে আমার যাওয়ার কোন মানেই হয় না।তাই আমি যাইনি।
:-মানে?একটু বুঝিয়ে বলতো?
:-এখানে বুঝিয়ে বলার কি আছে?তুমি তো জানোই,আমি বরাবরই তোমাদের বাসায় যেতাম শুধুমাত্র তোমাকে দেখার জন্য।
:-তো?
:-তো আর কি?তুমি তো বলেই দিয়েছিলে তুমি আমাকে ভালোবাসো না।তুমি আকাশকে ভালোবাসো।এখন তুমিই বলো,এরপর থেকে আমার ওখানে যাওয়ার কোন মানে হয়?
:-হুমম,বুঝলাম।
:-কি বুঝলে?
:-বুঝলাম তুমি আমাকে কতটা ভালোবাসতে।
:-যাইহোক,এবার আসল কথায় আসো তো?(রাজু)
:-আসল কথা?সেটা আবার কি?(আশ্চর্য হয়ে)
:-সেটা হচ্ছে,তুমি কি আমাকে ভালোবাসো?
:-হুমম,খুব ভালোবাসি।
:-কবে থেকে?
:-যেদিন থেকে তোমার প্রতি আমার অনুভুতির সৃষ্টি হয়েছিলো,সেদিন থেকে।
:-তাই নাকি?
:-হুমম।জানো আমি তোমার জন্য কত কেঁদেছিলাম।
:-কি করে বুঝবো?
:-তুমি আমার আম্মুকে জিগ্গেস করতে পারো।জানো,আমি তোমার সাথে কতবার,কতভাবে যোগাযোগ করতে চেয়েছিলাম।কিন্তু তুমি তো আমার সাথে দেখা তো দূরে থাক,একটি বারের জন্যও কথা বলোনি।
:-হুমম,জানি।আম্মু আমাকে বলেছিলো।

এরপর কিছুসময় নিরবতা।

:-জানো,এই কয়েক বছরে আমার বিয়ের জন্য কতবার ছেলে পক্ষের লোক এসেছিলো?আমি প্রতিবারই তাদেরকে ফিরিয়ে দিয়েছি।
:-কেন?
:-কেন আবার?তোমাকে বিয়ে করবো বলে।
:-তাই নাকি?
:-হুমম।
:-তোমার আব্বু-আম্মুকে যখন আমার কথা বলেছিলে তখন উনারা কি বলেছিলো?
:-উনারা প্রথমে সরাসরি না করে দিয়েছিলো।
:-কেন?
:-কেন আবার?তুমি এতবছর যাবৎ আমাদের বাসায় না যাওয়ার কারণে।আব্বু দেশে ফিরার পরও তো তুমি উনার সাথে দেখা করতে না যাওয়ায়।তাই,
:-শুধু এইসব কারণে?
:-হুমম।আব্বু-আম্মু তোমার উপর বেশ অভিমান করে রয়েছে।
:-তাই বুঝি?
:-হুমম।তবে আম্মুকে আমি তোমার সাথে করার ব্যবহারের কথা বলেছিলাম।
:-তো উনি কি বললেন?
:-আম্মু আমার উপর বেশ রেগে গিয়েছিলেন।
:-কেন?
:-তোমার সাথে এমন ব্যবহার করার জন্য।উনি বললেন,তুমি নাকি আমার এই আচরনের কারনে আমাদের বাসায় যাও না।
:-আসলেই তাই।
:-কিইই?
:-হুমম,উনি তো ঠিকই বলেছেন।
:-তার মানে তুমি আমার উপর রাগ করে আছো।তাই না?
:-হুমম।
:-কেন?
:-জানো তুমি আমাকে থাপ্পড়টা দেওয়ায় অতটা কষ্ট পাইনি,যতটা কষ্ট পেয়েছিলাম,তোমার আকাশের সাথে করা রিলেশনের কথা শুনে।
জানো প্রতিরাতে তোমাকে হারানোর কথা ভেবে চোখের পানি ফেলতাম।চেয়েছিলাম তোমার কাছে ফিরে গিয়ে,আবারও আমার ভালোবাসার দাবি নিয়ে দাড়াই।
কিন্তু তোমার আমার প্রতি কোন অনুভূতি না থাকায়,আর ওসব নিয়ে ভাবি নাই।
:-এখনও আমায় নিয়ে ভাবো,তাই না?
:-না,
:-কেন?
:-মনটা আমার যে কঠিন হয়ে গেছে।
:-এখন একটু নরম করা যায় না?
:-………..(রাজু)
রাজু কিছু না বলে অপর দিকে মুখ ফিরিয়ে নিলো।
এরপর অবনী আর রাজুর মাঝে নেমে আসে নিরবতা।

:-তোমার হঠাৎ আমাদের বাসায় আসার কারণ জানতে পারি?
নিরবতা ভেংগে বললো,রাজু।
:-ফুফুর বাসায় আসতে কারণ লাগে?
:-তা লাগে না।তারপরেও হঠাৎ করে আসার কারণ তো একটা থাকতে পারে।
:-আমি আসতাম না,আম্মু যখন আব্বুকে গিয়ে,তোমার সাথে করা আমার আচরনের কথা বললো।তখন আব্বু নিজ থেকেই আমার কাছে এসে বলে,আমি যেন তোমার বাসায় এসে তোমার সাথে কথা বলে সবঠিক করে নিই।
:-“সবঠিক”কথাটার মানে বুঝলাম না?
:-আসলে আব্বু বলেছে,তুমি যদি আমাকে বিয়ে করতে রাজি থাকো,তাহলে ফুফুর সাথে কথা বলে সবঠিক করে নিবে।আর তা না হলে,
:-অন্য কোথাও তোমার বিয়ে দিবে,তাইতো?
:-হুমম।
:-আচ্চা,তুমি কি করে জানলে যে,আমি বাসায় আছি?
:-আব্বু বলেছিলো।
:-উনি কোথায় থেকে খবর ফেলেন?
:-কেন,ফুফু বলেছিলো।
:-ওহহ,আচ্ছা,এখন তোমার শেষ সিদ্ধান্তটা কি?
:-বুঝলাম না।
:-আমি যদি তোমাকে বলি,আমি তোমাকে বিয়ে করবো না।তখন তুমি কি সিদ্ধান্ত নিবে?
:-আমি কোন সিদ্ধান্ত নিবো না।যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার,সেটা আব্বুই নিবে।
:-আচ্ছা।
এই বলে রাজু আর অবনী চুপচাপ বসে থাকলো।

:-রাজু-অবনী,তোরা তাহলে এখানে?
ছাদে প্রবেশ করেই কথাটা বললো,রাজুর আম্মু।
:-দেখতেই পাচ্ছো।
এই বলে বসা থেকে দাড়িয়ে গেলো রাজু।
:-তোদের আমার কিছু কথা বলার আছে।(রাজুর আম্মু)
:-বলো,ফুফু।(অবনী)
:-অবনী মা,আমি জানি না,তুমি রাজুকে ভালোবাসো কি না?তবে রাজু তোমাকে অনেক ভালোবাসে।সেই ছোটবেলা থেকে ও তোমার পেছনেই লেগেই আছে।
:-আম্মু,তুমি এসব কেন বলছো?(রাজু)
:-এইই,তুমি থামো।ফুফু কি বলে সেটা শুনো।ফুফু তুমি বলো,(অবনী)
:-আমি আর আমার ভাই,মানে তোমার আব্বু মিলে একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে পেলেছি।
অবনীকে উর্দেশ করে বললো,রাজুর আম্মু।
:-কি সিদ্ধান্ত?ফুফু।
:-তোমার আর রাজুর বিয়ের সিদ্ধান্ত।আশা করি তোমার কোন আপত্তি নেই।কারণ আমি আমার ভাইয়ের কাছ থেকে সব জেনে নিয়েছি।তারপরেও তোমার কিছু বলার থাকলে বলতে পারো।
:-আমার কিছু বলার নেই।ওর বলার আছে কিনা?জিগ্গেস করুন।
এই বলে অবনী মাথা নিচু করে ফেললো।
:-রাজু তোর কিছু বলার আছে?আশা করি নেই।
:-না।
:-তাহলে আর কি?আগামীকাল অবনীর আব্বু-আম্মু আমাদের বাসায় আসলে আমরা উনাদের সাথে কথা বলে বিয়ের ব্যাপারে সবকিছু ঠিক করে ফেলবো।
:-আম্মু,মামা-মামি কি কালকে আমাদের বাসায় আসবে?
:-ওহ,আচ্চা।(রাজু)
:-তাহলে আর কি?রাত তো নেমে আসলো।তোরা কি আরো কিছুক্ষন থাকবি?
:-………(রাজু)
:-ফুফু তুমি যাও।আমরা আসতেছি।
:-আচ্চা,তাড়াতাড়ি আসিস।
এই বলে রাজুর আম্মু ছাদ থেকে নেমে যেতে লাগলো।
:-ওইই,(অবনী)
:-কি?(রাজু)
:-ভালোবাসি।
:-কিন্তু,আমি,
:-তুমিও আমাকে ভালোবাসো।
রাজুর মুখ চেপে ধরে বললো,অবনী।
:-তুমি কি আমাকে ভালোবাসো না?
এই বলে মুখ ছেড়ে দিলো,অবনী।
:-ভা..ল..বা..সি?হুম ভালোবাসি,তো?
অমনি রাজুকে আর কিছু বলতে না দিয়ে,তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো অবনী।
রাজুও অবনীকে দুহাতে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলো।
:-ওইই,
:-কি?
:-তুমি আমাকে যে থাপ্পড়টা মেরেছিলে,ওই থাপ্পড়টায় খুব লেগেছিলো।
:-তাই নাকি?
:-হুমম।এখন তুমি ওটার ক্ষতিপূরন দিবা।
:-ক্ষতিপূরণ?
:-হুমম।
:-কি দিতে পারি?বলতো?
:-আমি কি করে জানবো?
:-আচ্ছা,তুমি মাথাটা একটু নিচু করতো।
:-কেন?
:-আরেকটা থাপ্পড় দিবো।তাই।
:-না থাক।ক্ষতিপূরনের দরকার নাই।
:-দরকার আছে।তুমি মাথাটা নিচু করতো।
রাজু আর কিছু না বলে মাথাটা নিচু করলো।
অমনি,
:-ঠাসসস,,,
রাজু গালে হাত দিয়ে অবাক হয়ে অবনীর দিকে তাকালো।
:-এটা কি হলো?(রাজু)
:-কেন তোমাকে থাপ্পড় দিলাম।
:-কেন দিয়েছো?
:-কেন ক্ষতিপূরণ দিয়েছি।
:-ধ্যাত,তোমার সাথে কথা নাই।
এই বলে রাজু মুখ ঘুরিয়ে নিলো।
:-জানো,তোমাকে কেন থাপ্পড়টা দিয়েছি?
রাজুকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো,অবনী।
:-কেন?(অভিমানী কন্ঠে)
:-কেন আবার?থাপ্পরটা না দিলে তো আমাদের বিয়েই হবে না।
:-মানে?(অবাক হয়ে)
:-মানে হলো,একগালে থাপ্পর মারলে নাকি বিয়ে হয় না।তাই।
:-তোমাকে কে বললো,এই কথা?
:-আমি ছোট কাল থেকেি এইসব কথা শুনে এসেছি।
:-ও,তাই বুঝি?
:-হুমম।
অমনি রাজু অবনীকে ঘুরিয়ে সামনে আনলো।
এনেই,
:-ঠাসস,ঠাসস,,,
:-একি,তুমি আমাকে থাপ্পড় মারলে কেন?
গালে হাত দিয়ে বললো,অবনী।
:-কেন আবার?ঐসব কুসংস্কারে বিস্বাস করে আমাকে থাপ্পর দেওয়ায়।
:-ধুরর,তোমার সাথে কথা নাই।
এই বলে মুখ ঘুরিয়ে নিলো,অবনী।
রাজুও কিছু না বলে,অবনীকে তার দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে জড়িয়ে ধরলো।
:-সরি(রাজু)
:-আমিও সরি।
এই বলে অবনী,রাজুর বুকে মাথা রাখলো।
:-এই চলো।ফুফু আবার চলে আসবে।(অবনী)
:-হুমম।তার আগে একটা,,,,,
.

…………………………………………((সমাপ্ত))………………………………..

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত