:-আপনার সমস্যা কি?বলুন তো?(ম্যাডাম)
:-জ্বী ম্যাডাম।(আমি)
:-আমি খেয়াল করছি,আপনি অফিসের কোন কাজই গুরুত্ব সহকারে করেন না,কারণ কি?
:-ম্যাডাম,আমি কাজগুলো গুরুত্ব সহকারে না করলে কি আপনি করেন?আমার কাজগুলো আমিই সম্পন্ন করি।তাহলে আপনি আমাকে ডেকে এনে এই কথা বলার মানে কি?
জোর গলায় বললাম আমি।
:-মানে?আপনি যদি গুরুত্ব সহকারে কাজ করে থাকেন,তাহলে ফাইল গুলো অসম্পুর্ণ এবং এলোমেলো কেন?আর আপনি গলা নামিয়ে কথা বলেন।
:-গলা নামিয়ে কথা বলবো,কেন?অফিসের প্রতিটা কর্মচারীরই করা ফাইলগুলো অসম্পুর্ণ থাকে।আর অসম্পুর্ণ ফাইলগুলো দেখে ফাইলটা সম্পুর্ন করে সাইন করা আপনার দায়িত্ব।
:-আপনি আমাকে দায়িত্ব শিখাইতে আসছেন নাকি?আর আপনি আমাকে এমন করে কথা বলার সাহস কোথা থেকে পাচ্ছেন?
:-কথা বলতে সাহস লাগে না।কই,এতদিন যাবৎ তো আপনি কোন সদস্যের(কর্মচারী) করা অসম্পুর্ন ফাইলগুলোর ব্যাপারে কাউকে কিছু বলেন নাই।তাহলে শুধু আমার ক্ষেত্রে এমনটা কেন হবে?
:-মানে?আপনি ভুল করবেন,আর আমি আপনাকে কিছু বলতে পারবো না নাকি?
:-বলার ও একটা সীমা আছে।আপনি প্রতিনিয়ত আমার সাথে এমন করে কথা বলে আসছেন।তাই আমাকে এসব বলতে হচ্ছে।শুনেন ম্যাডাম,আমি আপনাদের অফিস থেকে এমনিতে মাইনে নিই না।কাজ করার বিনিময়ে নিই।আর আমি আপনার অফিসে কাজ করি বলে আপনি আমাকে কিনে নেন নাই।আপনি এমনভাবে কথা বলেন,আমি যেন আপনার একজন কেনা গোলাম।
:-………….(ম্যাডাম)
:-ম্যাডাম,আপনি চাইলে আমাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করতে পারেন?কিন্তু এটা মনে রাখবেন,আপনি যেমন একজন মানুষ আমিও একজন মানুষ।সুতরাং আপনি আমার সাথে,এমন আচরন করায় আমি তা মেনে নিতে পারছি না।তাই আপনার সাথে আমি এইভাবে কথা বলতে বাধ্য।আপনার যদি আমাকে কিছু বলার থাকে,তাহলে বলতে পারেন।তা না হলে আমি যাচ্ছি।
:-হুমম,আপনি এখন আসতে পারেন।
আমি আর কিছু না বলে,ম্যাডামের কেবিন থেকে বাহির হয়ে আসলাম।
বাহিরে এসে দেখি,অফিসের বাকি কর্মচারী গুলো আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
:-আপনাদের সমস্যা কি?আপনারা আমার দিকে এমনভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?
সকলের উর্দেশ্যয় বললাম আমি।
অমনি সকলে আমার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে কাজে মনোযোগ দিলো।
আমি আর দাড়িয়ে না থেকে,আমার কেবিনের ভেতরে চলে আসলাম।
কাজে কোনরকম মন বসাতে পারছি না।
কিছুসময় কেবিনে বসে থেকে,কেবিন থেকে বাহির হয়ে আসলাম।
অফিসের সবাই আমার দিকে আবারও মাথা তুলে তাকালো।
এবার আমি কিছু না বলে,সোজা ম্যাডামের কেবিনের দিকে রওয়ানা দিলাম।
ম্যাডামের কেবিনের সামনে এসে,আমি পেছন ফিরে তাকালাম।
দেখি সবাই অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
ম্যাডামের কেবিনের ভিতরে তাকালাম।
দেখি ম্যাডাম মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।
:-ম্যাডাম,আসবো?(আমি)
:-আপনি?আপনাকে তো আমি ডাকি নাই?
হকচকিয়ে উঠে বললো,ম্যাডাম।
:-আসলে ম্যাডাম..
:-ভেতরে আসুন।
আমাকে থামিয়ে বললো,ম্যাডাম।
:-সরি,ম্যাডাম।(আমি)
:-কেন?
:-ওইসময় আপনার সাথে আমি ওইরকম ভাবে কথা বলার জন্য।আসলে ম্যাডাম..
:-ওসব কথা বাদে আর কিছু বলার থাকলে বলতে পারেন।তা না হলে আপনি আসতে পারেন।
আমার কথা বলা থামিয়ে বললো,ম্যাডাম।
আমি আর কিছু না বলে কেবিন থেকে বাহির হয়ে আসলাম।
“চাকরিটা বোধহয় আর থাকবেই না।ম্যাডাম আমার উপর যেভাবে ক্ষেপে আছে।তা থেকে ভালো করেই বুঝতে পেরেছি।”
এই ভেবে কেবিনে ডুকে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে থাকলাম।
এছাড়া আর কি করবো বলেন?
এমন একজন ম্যাডামের অধীনে আমি কাজ করি,যে ছোট-খাটো ভুল হলেই আমাকে কেবিনে ডেকে নিয়ে আমাকে ঝাঁড়ি দেয়।শুধু আমার ক্ষেত্রেই এমনটা হয়।
আজকে আমাকে ডেকে নিয়ে এরকম ভাবে কথা বলার কারণটা হলো,আমি একটা ভুল করেছি।
যে ভুলটা আমি করেছি,ওই ভুলটা কিন্তু কোন ভুলের অধীনে পড়ে না।ভুলটা হলো,আমি ফাইলের কাগজপত্রগুলো গুছিয়ে নিয়ে যাইনি কেন?
শুধুমাত্র এই ভুলটা হয়েছে।এখন আপনারাই বলেন,এটা কোন ভুল হতে পারে?
আপনাদের সাথে আমার পরিচিত হওয়া দরকার।
আমি রাজু।
মা-বাবার দুই সন্তানের মাঝে আমি বড়।ছোটটা হলো আমার বোন ফারিয়া।পড়ালেখা বলতে
আমি এবার মাস্টার্স করতেছি।
এই পড়া-লেখার মাঝে আমি একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করি।
এখন আমি ওই কোম্পানির অফিসেই আছি।
কিছুক্ষন আগে আমার যার সাথে কথা কাটাকাটি হয়েছে সে হলো আমাদের অফিসের বস।
বস বলতে কোম্পানিটাই হলো তাদের।
ওর বাবা কিছুদিন আগে মারা যাওয়ায়,ও এই প্রতিষ্টানের বস হিসাবে জয়েন করে।
আমার প্রায় ২ বছরের ছোট হয়,ও।
যাইহোক,
ওহহ,আপনাদের তো বলতেই ভুলে গেছি,
আমাদের বস মানে ম্যাডামের নাম হলো শ্রাবনি।
যাইহোক,অফিস ছুটি হলে আমি সোজা বাসার দিকে রওয়ানা দিই।
সত্যি বলতে কি?
অফিসে আমাকে প্রতিদিন ম্যাডামের কেবিনে সাত-আট বার যেতে হয়।
আপনারা ভাবছেন কি?আমি নিজের ইচ্ছায় যাই?
আসলে তা না।ম্যাডামই আমাকে বিভিন্ন অজুহাতে উনার কেবিনে ডাকে।
রাতে…..
:-আম্মু,তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো।(আমি)
:-হুমম,বল।(আম্মু)
:-আমি চাকরিটা না করলে হয় না?
:-আমি তো আগেই বলেছি,তোকে চাকরিটা ছেড়ে দিতে।তুই ই তো ছাড়লি না।
:-………(আমি)
:-তোর আব্বু তো বলেই দিয়েছে উনার অফিসে তোর জন্য একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দিবে।
:-আচ্চা,দেখি কি হয়?
:-কি হয় মানে?
:-কিছু না।
:-আচ্ছা,রাত তো কম হলো না তুই শুয়ে পড়।
:-আচ্ছা।
অতঃপর আম্মু রুম থেকে বাহির হয়ে গেলে,আমি কিছু হাতের কাজ করে নিলাম।
তারপর,শুয়ে পড়লাম।
পরদিন,,,
:-স্যার,আপনাকে ম্যাডামের কেবিনে ডাকা হয়েছে।
কেবিনে বসে আছি।তখনই পিয়ন এসে কথাটি আমার উর্দেশ্যয় বলে চলে গেলো।
আমিও আর কিছু না ভেবে ম্যাডামের কেবিনের দিকে রওয়ানা দিলাম।
:-আসবো ম্যাডাম?
ম্যাডামের কেবিনের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে বললাম,আমি।
:-হুমম,আসুন।(ম্যাডাম)
অতঃপর আমি ভেতরে ডুকলাম।
:-দাড়িয়ে আছেন কেন?বসুন।(ম্যাডাম)
:-না ম্যাডাম,ঠিক আছে।(আমি)
:-ঠিক আছে,মানে কি?বসুন।(ম্যাডাম)
আমিও আর কিছু না ভেবে ম্যাডামের টেবিলের সামনে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসলাম।
:-আপনাকে আমি কিছু কথা বলার জন্য ডেকেছি।(ম্যাডাম)
:-সে আমি বুঝতে পারছি।তার আগে,
এই বলে আমি পকেট থেকে রিজাইন লেটারের পত্রটা বাহির করে টেবিলে রাখলাম।
:-এটা কি?
:-আমার চাকরির রিজাইন লেটার।আসলে ম্যাডাম,আমি চাকরিটা আর করছি না।
:-কেন?(অবাক হয়ে)
:-আসলে ম্যাডাম,আমি আমার আব্বুর অফিসেই চাকরি করবো।তাই,
:-ওহহ,এটাই কারণ?
আহত কন্ঠে।
:-হুমম।
:-নাকি আপনার সাথে আমার করা আচরনের কারণে আপনি চাকরিটা ছাড়ছেন।
:-আসলে ম্যাডাম,আপনি যেমনটা ভাবছেন তেমনটা নয়।
:-সরি।
:-কেন ম্যাডাম?(অবাক হয়ে)
:-আপনার সাথে এতদিন যাবৎ এমনটা করার জন্য।
:-আরে ম্যাডাম,সরি তো আমার বলা উচিত।আসলে ম্যাডাম গতকাল আমি রাগের মাথায় আপনার সাথে এমনটা করেছি।আসলে ম্যাডাম আমি একটু গরম টাইপের তো।তাই গতকাল আপনার সাথে আমি এমন আচরণ করে পেলেছি।
:-জানেন,আমি আপনার সাথে কেন এমনটা করেছি,এতদিন যাবৎ?
:-……..(আমি)
:-কারণ আমি আপনাকে ভালোবাসি যদিও আপনি আমার ভালোবাসাটা বুঝেন নাই।
:-মানে?
:-আমি আপনাকে বিভিন্ন অজুহাতে আমার কেবিনে ডাকি কেন?জানেন?
:-……(আমি)
না সুচক মাথা নাড়লাম।
:-শুধুমাত্র আপনার সাথে কথা বলার জন্য।কিন্তু আপনি তো আমার কেবিনে আসলে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে থাকেন।তাই আমি বিরক্ত হয়ে আপনাকে বিভিন্ন কাজের অজুহাতে ঝাড়ি মারতাম।
:-………(আমি)
:-ওহহ আরেকটা কথা,আপনাকে যখন আমি ঝাড়ি মারতাম,তখন আপনি মাথা নিচু করে আমার ঝাড়ি শুনতেন,তখন আমার না খুব হাসি পেত।
:-তো,আমাকে এসব বলার মানে কি?(আমি)
:-আসলেই তো,আমার আপনাকে এসব বলার মানে কি?সত্যি বলতে কি?গতকাল আপনার সাথে আমার এমন কথা কাটাকাটি হওয়ার পর আমি কোন কষ্টই পাইনি।রাতে আপনার কথা আমি অনেক ভেবেছি।আপনার মাঝে যদি আমার ভালোবাসাটা বোঝার ক্ষমতা থাকতো,তাহলে আপনি অনেক আগেই আমার ভালোবাসাটা বুঝে যেতেন।এতদুর পর্যন্ত আসা লাগতো না।
:-……(আমি)
:-পরিশেষে আমি শুধু এটাই বলতে চাই।আপনাকে আমি ভালোবাসি।আপনি যদিও আমাকে ভালো না বাসেন,আমি কিন্তু আপনাকে ভালোবেসেই যাবো।যেদিন আপনার মনে আমাকে ভালোবাসার অনুভুতি জাগবে,ঐদিন থেকে নাহয় আমাকে ভালোবাসবেন।
:-………(আমি)
:-আচ্ছা,ওসব বাদ।আপনি তাহলে চাকরিটা করছেন না।তাই তো?
:-……..(আমি)
আমি কিছু না বলে ম্যাডামের হাত থেকে রিজাইন লেটারের কাগজটা হাতে নিয়ে নিলাম।
অমনি ম্যাডাম অবাক চোখে তাকালো।
:-আপনি কি আমার সাথে কথা বলতে সংকোচ বোধ করছেন?(ম্যাডাম)
:-আপনি আমাকে ভালোবাসেন।তাই তো?(আমি)
:-হুমম,খুব ভালোবাসি।
:-আগামীকাল তো অফিস বন্ধ থাকবে।তাই না?
:-হুমম।কেন?
:-কালকে আমার আব্বু-আম্মু এবং আমি আপনাদের বাসায় যাবো।
:-কেন?
:-সে আমরা আগামীকাল গেলেই জানতে পারবেন।
:-……..(ম্যাডাম)
:-আমি কেবিনে যাচ্ছি।আর কিছু বলবেন?
:-আপনি চাকরিটা তাহলে করছেন?
:-হুমম।আচ্ছা,আমি তাহলে কেবিনে যাচ্ছি।
এই বলে আমি ম্যাডামের কেবিন থেকে বাহির হয়ে আসলাম।
রাতে,,,,,
আব্বু-আম্মুর রুমে গিয়ে দেখি উনারা কথা বলতেছেন।
আমি ভেতরে ডুকলাম।
:-কিরে কিছু বলবি?(আম্মু)
:-আব্বু-আম্মু,তোমাদের সাথে আমার কিছু কথা ছিলো।(আমি)
:-তো বল।(আব্বু)
:-তোমরা তো এতদিন যাবৎ বউমা চাই,বউমা চাই বলে আমার মাথা খেয়ে ফেলতেছিলে।তাই না?
:-হুমম।তো?(আম্মু)
:-তোমাদের বউমার ব্যবস্থা আমি করে ফেলেছি।(আমি)
:-মানে?তুই কি মেয়ে পছন্দ করে ফেলেছিস?(আব্বু)
:-না আব্বু,তুমি কি যে বলনা।আমি কেন মেয়ে পছন্দ করতে যাবো?মেয়েই আমাকে পছন্দ করে ফেলেছে।(আমি)
:-কিইই?
আব্বু-আম্মু একসাথে বলে উঠলো।
:-হুমম,তাহলে শুনো।আব্বু,আমি যে কোম্পানির অফিসে চাকরি করি সে অফিসের মালিককে তো তুমি চিনো।তাই না?(আমি)
:-হুমম,উনি তো কিছুদিন আগে মারা গেছেন।(আব্বু)
:-হুমম।উনার মেয়ে শ্রাবনি পরবর্তীতে আমাদের অফিসে আমাদের বস হিসেবে জয়েন করে।তারপর,,,
শ্রাবনি ম্যাডাম এতদিন যাবৎ আমার সাথে করা আচরনের কথা গুলো বললাম।
:-মেয়েটা তো আচ্চা ফাজিল।(আম্মু)
:-জানো আম্মু,গতকাল রাতে আমি কেনো চাকরিটা ছাড়ার কথা বলেছি?(আমি)
:-না তো।(আম্মু)
:-তাহলে শুনো,,,
এরপর আমার সাথে শ্রাবনি ম্যাডামের গতকালকের কথা কাটাকাটির ঘটনাটা বললাম।
:-তুই তো ঠিক কাজই করেছিস।তোর আর ওই অফিসে কাজ করার দরকার নাই।(আম্মু)
:-রাজু,তুই মূল কথাটা এখনো বলিস নাই।(আব্বু)
:-বলছি তো।তোমরা শুনো না।(আমি)
:-বল।(আম্মু)
:-তারপর আম্মু তুমি যখন বললে আমার আর চাকরিটা করার দরকার নাই।তখন আমি চাকরিটা ছাড়ার জন্য রিজাইন লেটার প্রস্তুত করে রাখি এবং আজকে অফিসে যাওয়ার সময় নিয়ে যাই।এরপর,,,
শ্রাবনি ম্যাডামের সাথে হওয়া আজকের আলাপনটা আমি বলি।
:-মেয়েটা তো এতদিন যাবৎ তোর সাথে এমন করে ঠিকই করেছে।কি বলো?
আম্মুকে উর্দেশ করে বললো,আব্বু।
:-আসলে,তাই তো।আর আমি কি না কি ভেবে বসেছিলাম।(আম্মু)
:-আচ্চা,তোমরা এখন মূল কথায় আসো তো।(আমি)
:-আবার কিসের মুল কথা।আমরা কালই তোর সাথে ওর বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে ওদের বাসায় যাবো।(আব্বু)
:-তোমরা যেটা ভালো মনে করো।(আমি)
:-রাজু,তুই রুমে যা।আমরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলবো।(আম্মু)
আমি আর কিছু না বলে রুম থেকে বাহির হয়ে আমার রুমে চলে আসলাম।
পরদিন,,,,
আমি,আব্বু আর আম্মু এখন বসে আছি শ্রাবনি ম্যাডামদের বাসায়।
:-নিন,নাস্তা নিন।
শ্রাবনি ম্যাডাম নাস্তার ট্রে নিয়ে এসে আমাদের উর্দেশ্য কথাটা বললো।
:-হুমম,মা তুমিও বসো।আর তোমার আম্মু কোথায়?(আম্মু)
:-ঐতো আম্মু আসতেছে।(শ্রাবনি ম্যাডাম)
অতঃপর শ্রাবনি ম্যাডামের আম্মু আসলে বিভিন্ন কথা-বার্তা বলার পাশাপাশি সবাই একসাথে নাস্তা করলাম।
:-আম্মু,তোমরা কথা বলো।আর আপনি একটু এদিকে আসুন তো।
আমাকে ডেকে নিয়ে কথাটা বললো,শ্রাবনি ম্যাডাম।
অতঃপর আমি আব্বু-আম্মুকে ইশারায় কথা বলতে বলে উঠে শ্রাবনি ম্যাডামের পিছন পিছন যেতে লাগলাম।
:-এবার বলুন তো,আপনি আপনার মা-বাবাকে নিয়ে আসার মানেটা কি?
বারান্দায় নিয়ে গিয়ে কথাটা বললো,শ্রাবনি ম্যাডাম।
:-আমি,আমার আব্বু-আম্মুকে নিয়ে আপনাদের বাসায় আসার মানেটা হলো,আজকে আপনার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করা হবে।
:-কিইই?(অবাক হয়ে)
:-হুমম।এখানে অবাক হওয়ার কি আছে?
:-সরাসরি বিয়ে?
:-হুমম।কেন,আপনি কি আমাকে বিয়ে করতে রাজি না?তা না হলে আমি আমার আব্বু আম্মুকে নিয়ে চলে যাবো।অসুবিধা নেই।
:-আসলে তা না।
:-তাহলে?
:-না মানে,আচ্ছা,আপনি আপনার মা-বাবাকে কি বলেছেন?
:-বলেছি,আপনি আমাকে ভালোবাসেন।আর আমিও আপনাকে ভালোবাসি।
:-আপনি আপনার মা-বাবাকে এই কথা বলেছেন।আর উনারাও রাজি হয়ে গেলো?
:-হুমম।আসলে আমার ছোট বোনের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর আম্মু বাসায় একলা হয়ে পড়ে।আব্বু চলে যায় উনার অফিসে আর আমিও চলে যাই অফিসে।তাই আম্মুর একাকিত্ব দূর করার জন্য,আব্বু-আম্মু আমার বিয়ে দেওয়ার জন্য আমার পিছনে উঠে পড়ে লেগেছিলো।কিন্তু আমি উনাদের বলে দিই যে,আমার পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব না।
:-তো?
:-আব্বু-আম্মু আমার জেদের কাছে হেরে,আমার পেছনে লাগা ছেড়ে দেয়।তো,গতকালকে আপনি যখন বললেন,আপনি আমাকে ভালোবাসেন।তখনই আমি সিদ্ধান্ত নিই,আপনাকে বিয়ে করার।তাই তো আমি বলেছিলাম,আজকে আব্বু-আম্মুকে নিয়ে আসার কথা।
:-ওহহ,আচ্ছা আপনি কি আমাকে ভালোবাসেন?
:-ভালোবাসি না।তবে বিয়ের পর ভালোবাসবো।
:-তাই বুঝি?
:-হুমম।
:-আচ্ছা,তাহলে এখন উনাদের কাছে যাওয়া যাক।
:-হুমম,চলুন।
অতঃপর আমি আর ম্যাডাম আমার আব্বু-আম্মু ও উনার মায়ের সামনে গেলাম।
:-তাহলে আর কি?বেয়াইন সাহেবা,আগামী সপ্তাহে শ্রাবনি আর রাজুর বিয়ের দিন ধার্য করা হলো।কি বলেন?(আম্মু)
:-হুমম।তার আগে ওদের কিছু জিগ্গেস করা দরকার।আচ্চা,শ্রাবনি তোর কিছু বলার আছে,এই নিয়ে?(শ্রাবনি ম্যাডামের,মা)
শ্রাবনি ম্যাডাম আড়চোখে আমার দিকে এক নজর তাকিয়ে নিলো।
:-না,আম্মু।আমার কিছু বলার নেই।(শ্রাবনি ম্যাডাম)
:-আর বাবা তোমার কিছু বলার আছে?
আমাকে উর্দেশ করে বললো,শ্রাবনি ম্যাডামের আম্মু।
:-না,আমারও কিছু বলার নেই।(আমি)
এরপর আরো কিছুসময় বিভিন্ন কথা বার্তা বলার মাধ্যমে আমার আর শ্রাবনি ম্যাডামের বিয়ের ব্যাপারেও আরো কিছু কথা বার্তা হয়।
বিকালে,,,,
ফোনে রিং হওয়ার শব্দে আমার ঘুম ভেংগে যায়।
ঘুম ঘুম চোখে ফোন রিসিব করলাম।
:-হ্যালো।(আমি)
:-আপনি কোথায়?(মেয়েলি কন্ঠে)
:-আপনি কে?
:-আমি কে মানে?আমি শ্রাবনি।
:-আরে ম্যাডাম,আপনি?আসলে ম্যাডাম দুপুরের খাবার খেয়ে আমি একটু শুয়েছিলাম।কখন যে ঘুম এসে গেছে টেরই পেলাম না।আপনি কোথায়?
:-আমি……..পার্কে আছি।
:-আপনি দশমিনিট বসেন।আমি আসতেছি।
:-হুমম।তাড়াতাড়ি আসেন।
অতঃপর আমি ফোন রেখে দিয়ে তাড়াতাড়ি করে ফ্রেশ হয়ে নিয়ে,রওয়ানা দিই,পার্কের উর্দেশ্যয়।
পার্কে গিয়ে দেখি ম্যাডাম একটা ব্যাগ হাতে বেঞ্চে বসে আছে।
আমি ভেতরে ডুকে সোজা ম্যাডামের পাশে গিয়ে বসলাম।
:-সরি ম্যাডাম।(আমি)
:-……..(ম্যাডাম)
:-সরি বললাম তো।
এই বলে ম্যাডামের হাতের উপর হাত রাখলাম। ম্যাডাম আমার দিকে তাকালো।
:-এইরকম ম্যাডাম ম্যাডাম করেন কেন?
:-ম্যাডামকে ম্যাডাম বলে ডাকবো না কি বলে ডাকবো?
:-কেন,নাম ধরে ডাকবেন।
:-নাম ধরে ডেকে আবার যদি বিপদে পড়ি।
:-বিপদ?
:-হুমম।
:-কিসের?
:-যদি আপনার ঝাড়ি খাই।তাই।
:-আপনাকে আমি আর ঝাড়ি মারবো না।
এরপর কিছুসময় নিরবতা।
:-এই রকম আপনি আপনি করে কথা বলেন কেন?
:-তো কি করে বলবো?
:-কেন,তুমি করে বলবেন।
:-আচ্ছা তা নাহয় বললাম।
:-আমিও নাহয় নাম ধরে ডাকলাম।
:-তুমিও আমাকে তুমি করে বলবে।ঠিক আছে?
:-হুমমম।
:-এখন চলো।
:-কোথায়?
:-আমি ঠিক করেছি আজ পুরো বিকাল আমরা রিক্সায় করে ঘুরবো।
:-এরপর?
:-এরপর শফিংমলে যাবো।
:-এরপর?
:-এরপরেরটা এরপর দেখা যাবে।এখন উঠো তো।
এই বলে আমার হাত ধরে টান মারলো,শ্রাবনি ম্যাডাম।
পার্ক থেকে বাহির হয়ে এসে ম্যাডাম একটা রিক্সা ডেকে নিলো।
অতঃপর আমি আর ম্যাডাম রিক্সায় উঠলাম।
:-এই,তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরেছো কেন?(ম্যাডাম)
:-তা না হলে তুমি পড়ে যাবে,,,
বাকিটা বলার আগেই রিক্সার ঝাঁকুনি খেয়ে ম্যাডাম আমার দিকে ঝুঁকে পড়লো।
:-দেখলে তো?
:-হুমম।আমায় আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরতো।
আমি কিছু না বলে ম্যাডাম না মানে শ্রাবনিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।
রিক্সার চাকাগুলো ধীর গতিতে চলতে থাকলো।
আর সেই সংগে চলতে থাকলো,আমাদের ভালোবাসাটা।
…………………………………………….((সমাপ্ত))…………………………………………..