– কিরে গুণ্ডি??
– আও… কুত্তা… তোরে বলছিলাম না আমার চুলে হাত দিবি না??? দে কাটা দে…
– ঐ চুপ। ছেলেদের মতো এত চেতস ক্যান?
জানস চুপচাপ থাকলে তোরে সেই লাগে কিন্তু..!!!
– হয়সে, আর পাম্প দিস না। কাটা দে,
আর দেখি অফসেট বের কর।
– কিসের অফসেট ? কি অফসেট ? তোর থেকে তো কোন অফসেট নিই নাই আমি।
– উফফ…
তোকে…
– এই এই থাম.. থাম…
আরে লাগছে তো।
– হুহ..
– আচ্ছা বাবা, ঠান্ডা মাথায় বল কিসের অফসেট?
– তুই কি বলছিলি???
ল্যাব রিপোর্ট টা তোকে করে দিতে হবে বলছিলি না???
– ওওও… শিট…
দোস্ত আমি তো ভুলে অফসেট আনি নাই। এখন কি হবে?
-হুম…
আমি জানতাম তুমি এমনটাই করবা?
হারামি, এই নে অফসেট। আমি কিনে আনছি তোর জন্যে।
– ওয়াও হাউ সুইট বেইবীটা আমার..
আর শোন তুই, মাঝে মাঝে আমাকে হঠাৎ তুমি করে বলিস ক্যান? অবশ্য ব্যাপারটা খুব ভাল লাগে আমার….!!!
– তোরে আমি..
– আ.. আ.. আচ্ছা বাবা আর বলবোনা…
– হি হি হি…
এবার রিপোর্ট লিখার প্রতি মনযোগ দিল রিয়া।
সাইফ তারদিকে হা হা করে তাকিয়ে আছে,
নিজের কোন কাজ নাই তাই লাইব্রেরীর চারপাশে একটু তাকালো সাইফ।
নাহ…
সেদিকে মন বসছেনা তার, কারণ ভার্সিটির সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েটা যে এখন তার পাশেই বসে আসে?
এদিকে রিয়ার অন্য কোথাও মন নেয়।
সে রিপোর্ট নিয়ে ব্যস্ত।
একটু পরে রিয়া চোখ ফেরাতেই সাইফের দিকে চোখ পরে।
– কি রে হাবলু?
এভাবে হা করে কি দেখস?
– না কিছুনা।
– আচ্ছা এই নে, লিখা শেষ…
আরেকটু হালকা বাকি, সেগুকা নিজে করিস।
আমার এখন উঠতে হবে। আজকে ছোট খালার বাসায় দাওয়াত আছে..
– আচ্ছা।
– ওকে বাই।
– এ এ এই শোন…
– হুম.. বল???
– থ্যাঙ্ক ইয়্যু..
– চুপ।
এসবে হবে না। কাল চকলেট নিয়ে আসবি আমার জন্যে।
– হাহাহা আচ্ছা বাবা ঠিকাছে, সাবধানে যাইস।
*****
রাত ১ টা বেজে ২০ মিনিট।
.
হঠাৎ মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠতেই সাইফ আঁতকে উঠে।
রিয়ার কল…
এতরাত পর্যন্ত তো সে জেগে থাকার কথা না।
কোন সমস্যায় পরলো না তো আবার??
– হ্যা, হ্যালো..
কিরে এত রাতে কল দিলি যে?
– না আ আ… এমনি, ঘুম আসছিলনা, বাসায় আমি আর ছোটবোন আছি শুধু।
আম্মু খালার বাসায় থেকে গেছেন আজকে।
– ও..
– একটু আগে একটা হরর মুভি দেখে ভয় লাগতেছে খুব, তাই তোকে কল দিলাম।
– ও আচ্ছা ভাল করেছিস।
আচ্ছা তোর ঠিক পেছনে আয়নাতে সাদা বোরকা পড়া, শুধু চোখ দেখা যাচ্ছে তাও কেমন বীভৎস লাল হয়ে আছে চোখ গুলো…
আচ্ছা জিনিশটা কিরে????
– কুত্তা আ আ আ আ!!!
আম্মুওওও…
তুই আমাকে উলটা ভয় দেখাচ্ছিস????
বাই, ঐ সাদা বোরকা ওয়ালিকে নিয়ে মর তুই…
– নাহ..
অত শখ নাই আমার।
আমি তো মরলে তোরে নিয়েই মরবো।
– আহারে কি শখ।
রাত দুপুরে আজাইরা স্বপ্ন দেখস তাইলে???
ভাল ভাল..
– আজাইরা হবে ক্যান? আমি কি দেখতে পারিনা?
– হ, দ্যাখ।
তোরে নিষেধ করছে কে?
ঘুমা তাড়া।
কাল এসাইনমেন্ট গুলো নিয়ে আসিস মনে করে, সকালে কিন্তু কল দিয়া মনে করাই দিতে পারবোনা।
নয়তো তোর খবর আছে..
বাই..
– হা, হ হ্যা হ্যালো… হ্যালো???
ধুর ফোনটা কেটে দিল?
ফান না করলে হয়তো আরো কিছুক্ষণ কথা বলা যেত।
ধ্যেত কি করলাম এটা আমি???
নিজের ওপর নিজের খুব রাগ হচ্ছে সাইফের..
এমা আ…
রিপোর্টের বাকি অংশ গুলো তো আমার নিজেরই লিখার কথা ছিল?
ধুর আমাকে দিয়ে কিছুই হবেনা।
বিড়বিড় করে বলতে বলতে লিখতে বসলো সাইফ..
কিছুই করার নাই, আজকের রাতে আর ঘুমানোর কোন সুযোগ নেয় তার…
*****
– সুইটি… ঐ শোন দাড়া…
নাহ, সামনে পেছনে আশেপাশে একবার তাকালো রিয়া। নাহ আর কেউ নেয়, তার মানে সাইফ রিয়াকেই এই নামে ডাকলো।
– কি বললি তুই??? হুম..
– ক্যান? সুইটি বললাম আরকি, তোকে তো আজ অস্থির সুন্দর লাগতেছে, তুই এত সুইট আগে কখনো খেয়াল করিনি।
– চোখ তো পকেটে নিয়ে হাঁটস আমার সামনে আসলে।
– এই নে..
– কি???
– প্যাকেটটা খুলে দেখ।
– ওয়াও…!!!
এত্ত গুলো চকলেট!!!
এগুলা সব আমার????
– পেছনে ফির,
– হুম ফিরলাম।
– কেউ আছে?
– নাহ তো।
– এবার সামনে এবং আশেপাশে একবার ঘুর।
– তো?
– তো আবার কি??? কেউ আছে???
– নাহ তো।
কিন্তু কেন???
– হুম প্রশ্নটা তো, আমারো কেন? তুই কেন আস্ক করলি চকলেট গুলো তোর জন্যে কিনা? তুই তো আমাকেও কনফিউজড করে দিলি তোর আশেপাশে কেউ আছে মনে করছিলাম, তাই তোকে দিয়েই শিওর হলাম আরকি।
– ত..তো..তোকে.. আমি…
– এ এ…. এই… থাম…
স্যরি, উফফ লাগছেতো।
– লাগুক। হারমি বললেই তো পারতি, আমার জন্যে আনছিস।
– এখন বলতেসি, সব তোর, শুধু চকলেট নয় আমি সহ তোর. এবার তো থাম।
– উফফ আবার???
– হাহাহা..
কিছুক্ষণ নীরব থেকে দুজনেই হাসছে…
সাইফ বার বার আড়চোখে রিয়ার হাসি দেখছে।
মনোমুগ্ধকর হাসি..
হাসার সময় রিয়ার মুখে পড়া টোলটা তার হাসির সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দেয়।
ক্ষণিকের জন্যে হলেও মনের সব কষ্ট ভুলে গিয়ে নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ ভাবার জন্যে এই হাসিটাই যথেষ্ট।
.
– কিরে তোর চোখ ফোলা ক্যান?
(নীরবতা ভেঙ্গে একটু পর বলে উঠলো রিয়া)
– ওহ.. আর বলিস না, কাল তো এসাইনমেন্ট লিখার কথায় ভুলেই গেছিলাম, পরে তোর কল আসার পর মনে পড়লো, কি আর করা রাত ২ টা থেকে লিখা শুরু…
নির্ঘুম রাত..
– আচ্ছা তাই??
– হুম।
– তা একটা কথা বলতো?
জীবনে কোন কাজটা আজ পর্যন্ত তুই ঠিক টাইমেই করেছিস???
পারবি একটা কাজ ও দেখাতে? যদি পারিস আজকে আমিই তোকে ট্রিট দিবো।
– হুম একটা কাজ ঠিক টাইমেই করেছি।
(বেশ কনফিডেন্টলি বলে উঠলো সাইফ)
.
কথাটা শোনে একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বসে রিয়া।
– এত কনফিডেন্স?
তো কি সেই কাজ?
– উম… কিভাবে বলি?
আচ্ছা তুই গেস করত?
– উহু বয়ে গেছে। সময় নাই আমার অত।
একটু পর ক্লাস আছে, বললে তুই বল।
– একটা মেয়েকে ভালবেসেছি, ঠিক সময়ে।
কথাটা শোনার জন্যে প্রস্তুত ছিলনা রিয়া।
হয়তো কিছু একটা ভুল শুনেছে সে। তাই শিওর হয়ে নিতে আবারো বললো।
– কি???
– হুম.. সত্যিই তো বলতেছি, ক্যান তুই তো ভাল জানার কথা। কারণ মেয়েটা তো তুই???
– হারামি, ফাইজলামি করার আর টপিক্স পাস না??
বলেই, অনেকটা রেগে গিয়ে বসা থেকে উঠে যায় রিয়া।
ক্লাসের দিকে পা বাড়াতেই পেছন থেকে ওর হাতটেনে ধরে সাইফ।
– শোনেছিলাম মেয়েরা নাকি সব আগে থেকেই বুঝতে পারে। তুই কি সত্যিই কিছু বুঝতে পারতিনা?
কন্ঠটা আগের তোলনায় অনেক নরম হয়ে আসে সাইফের,
এই কন্ঠটার সাথে রিয়া খুব পরিচিত।
সাইফের দাদু মারার যাওয়ার খবরটা যখন সে রিয়াকে ফোনে বলেছিল তখন সাইফের কান্নার ঠিক আগ মুহূর্তে এভাবেই কথা বলেছিল তার সাথে।
এরপর মাঝখানে আর কখনো এমনটি হয়নি।
.
তার মানে কি? সাইফ এক্ষুণি কান্না করে দিতে পারে???
রিয়ার পা গুলো যেন সামনের দিকে আর এগোতে চাচ্ছেনা।
নীরবতা ভেঙ্গে আবারো সাইফ বলে উঠলো।
– ” আচ্ছা আমরা কি তুই থেকে তুমিতে কনভার্ট হতে পারি??? ”
– এই টাইপের প্রপোজ কোন মুভিতে দেখছিলি না মানে দেখছো বলা যাবে???
– ইয়াহুউউউউউ।
তারমানে তুই না মানে তুমি রাজি ???
“আর এই ডায়লগ আমি কোন মুভিতে শিখিনাই,তবে অনেকদিন ধরে রিয়ার্সেল করেছিলাম বটে”
.
এবার সাইফের হাবলা মার্কা মুখের দিকে তাকিয়ে আর হাসি থামাতে পারলোনা রিয়া।
হা হা হা হা করে হেসে উঠে সে…
সাইফ তার হাসি যতই দেখছে ততই মুগ্ধ হছে,
আশেপাশের পরিবেশটা খুব সুন্দর ছিল, সবুজে ঘেরা সবকিছু, কিন্তু সেই সৌন্দর্যের রাণী যেন নিজেই ধরা দিলো আজ সাইফকে…
জীবনের কিছু মুহূর্ত থাকে যা মানুষ শুধু স্বপ্নেই ভাবতে থাকে, কিন্তু কখনো যদি তা বাস্তবে রূপ নেয় তাইলে তার অনুভূতি বলে বুঝানো যায়না smile emoticon
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা