ভালোলাগা গেরান্টেড

ভালোলাগা গেরান্টেড

ভাইয়া একটা হেল্প লাগবে,,
.
আমি চায়ের কাপে চুমুক দিতে গিয়েও দিলাম না।
চায়ের কাপ টা টেবিলে রেখেই কুমুর দিকে তাকালাম। মেয়েটার মুখ দেখে মনে হচ্ছে খুব বড় কোন বিপদে পরেছে। ফরসা গাল দুটা টসটসে লাল হয়ে গেছে।চোখ গুলোও লাল যে কোন সময় কান্না কাটিও করতে পারে।
-হুম, বলো কি সমস্যা?
-এখানে সবার সামনে বলা যাবেনা?
-ও,
-একটু সাইডে চলেন !
.
আমি আবার কুমুর দিকে তাকালাম।এই মেয়ে বিপদে পড়া মানে আমিও বিপদে পড়া।
গত বার হেল্প করার কথা খুব ভাল ভাবে মনে আছে আমার।
.
সেবার ও কুমু এভাবেই এসে বলেছিল ভাইয়া একটা হেল্প লাগবে।কুমু আমাদের পাশের বাসায় থাকে,,ছোট থেকে প্রায় একসাথেই বড় হইছি।
এক সময় একটু খানি প্রণয় ছিল,যদিও সেটা একটু খানি। আর এমনিতেও খুব ভাল সমর্পক তাই হেল্প করাই যায়।
জিজ্ঞেস করলাম,
-কি হেল্প?
-একটা ছেলে কলেজে ডিস্ট্রাব করে,,
-নাম দিয়ে যেও,,মেরে তক্তা করে দেবো,,
-না ভাইয়া মারা মারি চাইনা,
-তাহলে? তুমিও পছন্দ করো নাকি?
-না না,, মারামারি হলে কলেজে প্রবলেম হবে,,
-ও আচ্ছা,তাহলে কি চাও?
.
কুমু একটু ভেবে বলল,
-ভাইয়া, আপনি আমার সাথে কলেজে গিয়ে বলবেন আপনি আমার বয়ফ্রেন্ড,,
-কিহ? না না বাসায় শুনলে আমারে মেরেই ফেলবে,ছোট বেলার কথা মনে আছে তো?
.
ছোট বেলায় কুমুর সাথে আমার প্রেম ছিল,, মাস দুয়েকের প্রেম। এটা কিভাবে যেন দুই পরিবার জেনে যায়। বাবা আমাকে বেধরম পিটায়। কুমুকেও বাসা থেকে শাস্তি দেওয়া হয়।
শাস্তি সরুপ ও আমাকে ভাইয়া বলা শুরু করে। কিছুদিন আগেও মেয়েটাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতাম কিন্তু এখন ওর মুখে ভাইয়া শুনতে শুনতে নিজেকে ওর ভাইয়াই মনে হয়।
.
কুমু হাত জোড় করে বলল,
-প্লিজ ভাইয়া কেউ কিছু জানবে না,,
.
কুমুর অনেক জোড়াজুড়ির পরে গিয়েছিলাম ওর কলেজে।বয়ফ্রেন্ডের জায়গায় ও কলেজে সবার কাছে আমার পরিচয় দিল আমি নাকি ওর বর। ওর সব বান্ধবীদের সাথেও পরিচয় করিয়ে দিল।সবাই দুলাভাই দুলাভাই করে মাথা খারাপ করে দিল।
.
ইদানিং এখনও প্রতিদিন রাস্তা ঘাটে বেরোলেই কেউ না কেউ দুলাভাই ডাকে। দুলাভাই ডাক শুনে দু একবার প্রবলেমেও পরতে হয়েছে,,
সেদিন দুটা বান্ধবীর সাথে রেস্টুরেন্ট এ বসে কফি খাচ্ছিলাম তখনি এক মেয়ে এসে বলল,
-দুলাভাই কেমন আছেন?
.
আমি সহ আমার বান্ধবীরা সবাই অবাক, বিয়ে না করতেই দুলাভাই।বান্ধবী দুইটা ভেবেই নিলো যে আমি ওদের না জানিয়ে বিয়ে করছি। অনেক কষ্টে ওদের বোঝাতে পারলাম যে ওরা ভুল ভাবছে।।
.
আমি দোকানে চায়ের বিল দিয়ে কুমুর পিছন পিছন চললাম,একটা ফাঁকা যায়গায় এসে ও বলল,
-ভাইয়া আজকে আমাকে ছেলে দেখতে আসবে,,পছন্দ হলে বিয়েও করতে পারে আজই,,
-তো?
-আমি এই বিয়েটা করতে চাচ্ছিনা,,
-তো আমি কি করব?
-বিয়ে,,
-না না, বিয়ে করতে পারবোনা।তোমার বাবা আমাকে খুব একটা পছন্দ করেনা,,
-বিয়ে করতে হবেনা,
.
আমি একটু রাগ হয়ে বললাম,
-কিসব হেল্প এর জন্য আসো,,গতবারেও হেল্প করে বিপদে পরছিলাম,
.
আমি কিছুক্ষন চিন্তা অকরলাম।তারপর কুমুর চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম,
-এবার কোন সমস্যা হবেনা তো?
-না ভাইয়া,প্রমিস,,
-আচ্ছা,ঠিকাছে। কি করতে হবে?
-শুধু আব্বুকে বলবেন আমি একটা ছেলেকে বিয়ে করে ফেলছি।
-শুধু এই টুকু?
-হুম,,
-আচ্ছা, ঠিকাছে।
.
কুমু ওর বাবাকে কল দিয়ে লাউডস্পিকার অন করে আমার হাতে ফোন দিল।কুমুর বাবা ফোন ধরেই জিজ্ঞেস করলেন,
-যা শুনলাল সব সত্য?
(অন্য ছেলের সাথে রিলেশন এর ব্যাপার টার কথা বলছে হয়ত)
আমিও উত্তর দিলাম,
-হ্যাঁ,সব সত্যি।
-কাজটা মোটেও ভাল হয়নি,,
-হ্যাঁ,কিন্তু কি আর করার,,
-আমি এর শেষ দেখে ছাড়বো,
-সব মেনে নেওয়াই ভাল,
-দ্বারা আমি তোর বাবার সাথে কথা বলছি,,
.
এটুকু বলেই উনি ফোন কেঁটে দিলেন।
আমি কুমুকে জিজ্ঞেস করলাম,
-আমার বাবাকে কি বলবে?
.
আমার প্রশ্ন শুনে কুমু কেমন যেন করল। তারপর বলল,
-আরে আপনি সব জানতেন তাও যে বাঁধা দেন নি তাই আর কি,
-ও আচ্ছা,, ঠিকাছে।
-অনেক ধন্যবাদ,,আরেক টা হেল্প করবেন?
-হুম, আপনার বাইকে করে আমার খালার বাসায় একটু রেখে আসবেন?
-আচ্ছা,,
.
টিউশনি বাদ দিয়ে কুমুকে ওর খালার বাসায় রেখে আসলাম।এতে অবশ্য একটু সময় লাগলো। এটুকুর মধ্য হুট করে বাবার ফোন। বাবা আমাকে সচারাচর ফোন করেনা।
ফোন ধরার পর বাবা শুধু এটুকু বলল,
-বাসায় আয় জলদি,,
.
আমার মনে হলো বাসায় খুব বড় বিপদ হয়েছে, আমি কুমুকে রেখে খুব জলদি বাসায় গেলাম।বাসায় ঢুকে বুঝলাম বাসার পরিবেশ থমথমে।ড্রয়িং রুমে কেউ নেই।
প্রথমে ছোট বোনের রুমের দিকে গেলাম।
ওই রুমে না ঢুকতেই বাবা ডাক দিল,
-এ দিকে আয়,,
.
আমি বাবার ঘরে ঠিকমত না ঢুকতেই বাবা বিছানা থেকে উঠে এসে এক থাপ্পড়।আমার মনে হল আমি ধান্দা দেখছি। বাবা আরো একটা থাপ্পড় দিবে তার আগে মা এসে বলল,
-এত বড় ছেলেকে কেউ মারে নাকি?
.
আমি শুধু জিজ্ঞেস করলাম,
-কি হয়েছে?
.
বাবা বিছানায় গিয়ে বসে শান্ত হয়ে বলল,
-জীবনে আমাকে কেউ এত অপমান করেনি আজ তোর জন্য এত অপমানিত হতে হলো,,
-মানে কি? কে করছে?
.
মা পাশ থেকে বলল,
-কে আবার? কুমুর বাবা।এমন ভাব করতেছিস মনে হয় কিচ্ছু জানিস না,,
-আমি সত্যি কিছু জানিনা,,
.
বাবা জিজ্ঞেস করল,
-কত দিন হয় করছিস?
-কি?
-আবার কি? বিয়ে?
.
বিয়ের কথা শুনে আমি অবাক হলাম,আকাশ থেকে পরলাম।
-কিসের বিয়ে,কার বিয়ে?
-তুই নাকি কুমুকে বিয়ে করেছিস,,,
-কে বলল?
-কুমুর বাবাকে নাকি ফোন করে বলেছিস,,, কুমুর বান্ধবীরাও এসে বলল।ওরা নাকি সাক্ষী।
.
এবার আমার মাথায় সব কিছু ঢুকল।
এত বড় একটা ব্যাপার ঘটিয়ে ফেলেছে মেয়েটা বুঝিনাই।
এরকম একটা কাজ কেন করলো মেয়েটা?
.
আমি বাবার কাছে গিয়ে বললাম,
-বাবা একটা ভুল হইছে,,
-কোন ভুল হয়নাই,, কুমুকে কই রেখে আসছিস?
-ওর খালার বাড়ি,,
-যা এক্ষুনি নিয়ে আয়,,
-কিন্তু বাবা আমার কথা তো শোনেন,
-কিচ্ছু শুনবো না, আগে ওকে নিয়ায়।ওর মুখে বাকী টা শুনবো।
.
আমি কুমুকে নিতে বের হলাম।
যেতে যেতে চিন্তা করলাম এ মেয়েটার গালে একটা থাপ্পড় মারবো সবার আগে। কুমুকে ওর খালার বাড়ি থেকে বের করে এটা জিজ্ঞেস করতেই ও চোখে পানি এনে বলল,
-অন্য ছেলের কথা বললে জোর করে বিয়ে দিত তাই এমন বলেছি,,
-আচ্ছা,ঠিকাছে। আমার বাবার সামনে সত্য বলবা,
-আচ্ছা,,
.
কুমু আমার বাবার সামনে গিয়েও আমাকে ফাঁসিয়ে দিল।বাবা যখন জিজ্ঞেস করলো ক মাস হয়েছে বিয়ের?
তখন ও বলল,
-তিন মাস,,
-কাগজ আছে?
.
কুমু আমার দিকে দেখিয়ে দিয়ে বলল,
-ওর কাছে আছে,, কিন্তু চাচা আপনার ভয়ে ও কিছু স্বীকার করবে না,,,
.
আমার এত্ত টা রাগ উঠলো মনে হল এই মেয়েরে মেরেই ফেলি।বাবা কি বুঝল কে জানে,,শুধু বলল,
-হারাম জাদা আজ তোর ব্যাবস্থা করতেছি,,
.
ততক্ষনাৎ বাবা কাজী ডাকলেন আমাদের বিয়ে পড়ানোর জন্য।তিনি কোর্ট ম্যারেজ এ বিশ্বাসী নন।কিন্তু আমি তো কোর্ট ম্যারেজ ও করিনি।
আমি অনেক চেষ্টা করেও বাবাকে বোঝাতে পারলাম না। আর কুমুর বাবার প্রতিও আমার বাবার একটা জেদ চেপে গিয়েছিল তাই উনি বিয়ে দিয়েই ছাড়লেন।।
.
বিয়েতে কোন মানুষ হল না,,কুমুর খালা আর চাচার ফ্যামিলি ছিল তার সাথে আমার চাচার ফ্যামিলি।
.
আমি পুরোপুরি হতাশ হয়ে গিয়েছিলাম কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না।
কুমুর উপর এত রাগ উঠল,, আমার মনে হলো ওকে আমি একলা পেলে মেরেই ফেলবো। ভেবেছিলাম এ কাজটা প্রথম রাত্রেই করবো, ও আমার কাছে শুতে এলেই করবো।
কিন্তু ও এলোনা।ও ওই রাত আমার ছোট বোনের রুমেই রইলো। আমি শুধু ভাবছিলাম কদিন ওই রুমে থাকবে এটাই দেখবো।ওকে মারার জন্য একটা সুযোগ ওই যথেষ্ট।
.
বিয়ের পর আমাদের দুই ফ্যামিলির যেখানে খুব ভাল সমর্পক ছিল সেটা প্রায় শত্রুতায় পরিণত হল।মুখ দেখাদেখি বন্ধ।
কথা বলা বন্ধ।
.
কুমুর এ নিয়ে কোন অনুশোচনা ছিল না।
বিয়ের পর ওর সব কাপড় চোপড় আমাদের বাড়িতে চলে এল,, বাড়ি বলতে আমার ঘরে।
ওর সব কিছু আমার ঘরে থাকলেও ওর নিজের জায়গা হত না আমার ঘরে।
আমি বাসায় থাকাতে ও আমার ঘরে ঢুকত না, কথাও কম বলত।প্রয়োজন ছাড়া কথা হত না।
তবে দুই দিন যেতেই ওকে মেরে ফেলার প্লান বাদ দিয়ে,, ওকে ইগ্নোর করা শুরু করলাম।
বাসার কেউ আমার কথা বোঝার চেষ্টা করেনা, বাহিরের কাওকে বলবো তারো কোন উপায় ছিল না।
এ অবস্থায় কুমুকে মেরে ফেলা ঠিক হবেনা।
.
আমার সাথে কুমুর খুব অল্পই কথা হতো। সেটাও খুব প্রয়োজনীয়।
ও আমাকে এখন তুমি করে বলা শুরু করছে। কি অদ্ভুত যে মেয়েটা দুদিন আগে ভাইয়া আর আপনি বলত সে আজ তুমি বলে?
নাম ধরে ডাকে? যদিও হ্যাজবেন্ডকে কেউ ভাইয়া বলেনা।তবুও ব্যাপার টা কেমন জানি।
.
ওর সারাদিন কোন কাজ থাকেনা,,সেজে গুজে থাকা ছাড়া।ইদানিং শাড়ি পরাও শুরু করেছে।
গতকাল ওকে বললাম,
-ব্যাপার কি শাড়ি পড়ো কেন?
-বাড়ির বউ শাড়ি পড়ব না,,
-ও আচ্ছা,,
-ভাল লাগেনা?
-না খুব বাজে লাগে,,
.
তবে কুমুকে সুন্দর লাগত।
শাড়ি বেশ মানিয়ে যেত ওকে।
মেয়েটা আমাকে সরাসরি ভালবাসি বললে কিছু একটা ভেবে দেখতাম তাই বলে এ ভাবে?
.
কুমুকে কিছু একটা বললেই সেটা বাবা মায়ের কানে চলে যেত। এই যে শাড়িতে ওকে বাজে বলেছি এটাও মায়ের কানে চলে গেলো।
খেতে বসে মা আমাকে কথা শুনিয়ে দিল।
বললো,
-প্রেম করে বিয়ে করেছিস,এখন আবার এমন করিস কেন?
-কি করেছি?
-কুমুর সাথে খারাপ ব্যাবহার করিস,,এত ভাল একটা মেয়ে।আমাদের কোন কথাই ফেলেনা।
আর খারাপ ব্যাবহার করবিনা।
-আমি কারোর সাথেই খারাপ ব্যাবহার করিনা,,
.
আমার কোন কথাই মা বাবা বুঝত না।
যে কোন কিছু হলেই ভাবত সেটা আমার দোষ।
.
সমস্যা শুধু বাসাতে তা নয় ক্যাম্পাসেও হলো।
যখন সব বন্ধু বান্ধবীরা জানলো বিয়ে করেছি, সবাই আমার উপর মন খারাপ করলো।
অনেক কষ্টে ওদের বোঝালাম সব হুট করে হয়েছে।সবাই কুমুকে দেখতে চাইলো।
এটা অবশ্য খুব একটা প্রবলেমের ছিলনা।
কুমুর কলেজ আর আমার ভার্সিটি প্রায় এক খানেই ছিল তাই একদিন কুমুকে ডাক দিয়ে দেখিয়ে দিলাম।
সবাই কুমুকে দেখে কুমুর প্রশংসা করল।এত মিষ্টি মেয়ে।তুই কিভাবে বিয়ে করলি?
তোর ভাগ্য ভাল। ওদের কথা শুনে মনে হয়েছিল ওরা কেউ আমার বন্ধু না সব মিষ্টির বন্ধু।
.
এরপর থেকে যত দিন যেতে লাগল কুমু আমার উপরে অধিকার খাটানোর চেষ্টা করতে লাগলো। সেদিন বিছানায় শুয়ে ছিলাম, হুট করেই দেখি কুমু আমার রুমে ঢুকে এলো।
-কি ব্যাপার? অনুমতি ছাড়া?
-কিসের অনুমতি,, আমারো ঘর এটা,,
-কি কারণে ঢুকছ?
-কলেজ যাবো,,
-তো যাও,, অনার্স এ পড়ো,, সাথে করে যাইতে হবে নাকি,,
-বাবা বলছে তোমায় রেখে আসতে,,
-পারবো না,, আর তুমি আপনি করে বলবা আমাকে,,
-কিসের আপনি? আর পারবানা কেন?
-বাইকের তেলের টাকা কে দিবে?
-আজব তো,, বিয়ে করছ।আমার পিছনে খরচ করবা না তো কার পেছনে করবা?
বিয়ের আগে হেল্প চাইলে তো করতা,,
.
আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই ঘরের বাহির থেকে বাবা বলতেছে,
– চিৎকার হয় কিসের? যা কলেজ নিয়ে যা,,
.
বাবার মুখের উপর না বলার সাহস তখনো হয়নি তাই বাধ্য হয়ে কুমুকে নিয়ে বের হতে হলো।একবার ভাবলাম মেয়েটাকে নিয়ে ট্রাকের নিচে ফেলে দেই,, পরে মনে হলো এইভাবে নিজেও মরবো।
.
কুমুকে বাইকে নিয়ে আরেক অসুবিধা এই মেয়ে এত চেপে বসে কেন?
একবার বলেই ফেললাম,
-কুমু এভাবে কেন বসো?
-কিভাবে?
-আগে যে ভাবে বসতে সেভাবে বসো,,
–আগে তো আমরা স্বামী স্ত্রী ছিলাম না তাইনা?
এর পর আমি আর কিছু বললাম না।
খুব দ্রুত কুমুকে কলেজে পৌছে দিলাম। সেখানে গিয়েও আরেক প্রবলেম। বাইক ঘুরিয়ে ফিরে আসার সময় কুমু বলল,
-টাকা দাও কিছু?
-কেন?
-কেন আবার? আমার হাত খরচ লাগবেনা?
-আমার কাছে কেন?
-উহু তুমি ছাড়া কে দিবে? কার কাছে চাইবো,,
.
কলেজের সামনে কথা বাড়ানোর কোন ইচ্ছাই ছিলনা।তাই বাধ্য হয়ে পাঁচশ টাকার একটা নোট বের করে ওর হাতে দিতে হল।
.
কুমুকে কলেজ থেকে আনতে যাওয়ার কথা ছিল অবশ্য কিন্তু আমি আর গেলাম না।
সেদিন সারাদিনে বাসায় ও ফিরলাম না।কুমু দুবার ফোন করেছিল ফোন ও ধরিনি।রাত্রে বাসায় এসে শুনি অনেক কিছু হয়েছে।
কুমুর বাসা থেকে সব মেনে নিয়েছে। একটাই মেয়ে মেনে নেওয়া ছাড়া অন্য কোন উপায়ও ছিল না।
আমার অবশ্য এ বিষয়ে কোন ইন্ট্রারেস্ট ছিল না।
.
তবে সেদিনের পর থেকে কুমুর খবর দারী বেড়ে গেল।এটা কেন করি?
ওটা কেন করি?
ঠিকমত খাচ্ছিনা কেন? এই কাপড়ে ভাল লাগেনা। ওখানে যাবানা ইত্যাদি।
.
ওর এসব কাজ কর্মের বিরুদ্ধে আমি কিছু বলতেও পারতাম না। বাবা মা দুজনেই ওর পক্ষে ছিল।আমি শুধু সব মুখ বুজে সহ্য করে নিতাম।
.
তবে আজ কুমু অতিরিক্তই করে ফেলল।
রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে নিজের রুমে এসে পিসিতে বসেছিলাম। ইদানিং কিচ্ছু লেখা হয়না মন মেজাজের অবস্থা চূড়ান্ত রকমের খারাপ।
.
কিছুক্ষন যেতেই দেখি কুমুর প্রবেশ।
এই মেয়ে রাতে আমার ঘরে কি করে?
-তুমি এখানে কেন?
-কেন আবার? সারাজীবন তোমার বোনের ঘরে থাকব নাকি,,
.
আমি ওর কথা বাদ দিয়ে নিজের কাজ করতে লাগলাম।কুমুকে কিছু বলে লাভ নাই।বাবা মা সবাই এখন ওর পক্ষে চলে গেছে।কিছু বললেই বলে,
-বউ হয়না তোর,,
কেউ আমাকে সামান্য একটুও বোঝার চেষ্টা করেনা।
.
কিছুক্ষন যেতে ই কুমু সাজতে বসে গেল,, আমি তাই দেখে বললাম,
-ঘুমানোর আগে সেজে কি করো?
.
ও ঠোঁটে লিপস্টিক দিতে দিতে বলল,
-পরে বুঝবা,,
.
ওর সাজগোজ শেষ হলে ও আমার কাছে এসে বলল,
-কেমন লাগছে?
.
আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,
-এমনিতেই তুমি এত সুন্দর তাও সাজো কেন?
-তোমার জন্যই,, কি করো?
এত সুন্দর বউ থাকতে কষ্ট করে গল্প লিখে মেয়ে ইম্প্রেস করে কি করবা,,
-আমি মোটেও মেয়েদের ইম্প্রেস করার জন্য লিখিনা,,
-জানি তুমি কেমন,, জলদি শুতে আসো,,,
লাইট জালানো থাকলে ঘুম আসেনা।।।
.
কুমু গিয়ে শুয়ে পরলো।
কুমুর কথা শুনে মনে হলো ও আমার বউ হয়ে গেছে,,পুরোপুরী রকমের বউ।
.
ও শুয়ে পড়ার পর আমি এখনো বিছানার দিকে যাইনি।তবে আমার এখান থেকে ওর সুন্দর মুখ টা দেখা যাচ্ছে।
এই মেয়ের সাথে আজ রাত এক সাথে থাকলে আমি নির্ঘাত এই মেয়ের প্রেমে পরে যাবো।
ঘরের বাইরে থাকাও যাবেনা,,বাবা দেখলে আরেক প্রবলেম।
এক প্রকার বাধ্য হয়ে বিছানার দিকে গেলাম।
কুমু কে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখতে কি সুন্দরই না লাগছে। ভাবলাম ওর কপালে একটা চুমু খাব কিনা।
অনেক কষ্টে নিজেকে সংযত করে ঘুমিয়ে পরলাম।
.
তবে মাঝ রাতে যখন ঘুম ভাংলো তখন দেখি কুমু আমাকে জরিয়ে ধরে শুয়ে আছে। অনেক চেষ্টা করেও ওর হাত থেকে নিজেকে ছাড়াতে পারলাম না।
কি আর করা ওই ভাবেই কিছুক্ষন শুয়ে রইলাম আর মাঝে মাঝে কুমুকে দেখছিলাম।
মেয়েটা এত সুন্দর কেন?
ও যখন প্রথম বার আমাদের পাশের বাসায় এসেছিল,সেদিন মনে হয়েছিল কোন পরী আকাশ থেকে নেমে এসে আমাদের পাশের বাসায় থাকা শুরু করেছে।
.
ও আমার এত কাছে ছিল যে, ওর নিশ্বাস আমার মুখের উপর পরছিল।
আমার রুম দোতলায় হওয়ায় ঘরের জানালা দিয়ে ভালই বাতাস আসে। বাতাসে ওর মাথার চুল গুলো উড়ছিল।কিছু চুল এসে ওর কপালের উপর পরেছিলো, আর ওগুলা আমার মুখেও লাগছিল। তাই আমি হাত দিয়ে ওগুলো সরিয়ে দিতে লাগলাম।
চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে কুমুর দিকে তাকাতেই দেখি,,
কুমুর চোখ খোলা। আমাকে দেখে কুমু হাসতে হাসতে বলল,
-কি করো?
-না কিছুনা,, সত্যি কিছুনা,,
-আচ্ছা, শুয়ে পড়ো,,
-হুম,
-আসো কাছে আসো,
.
আমি মেয়েটার কাছে না গিয়ে পারলাম না,, কিসের আকর্ষণ বুঝলাম না।
তবে কি কুমুকে ভালবেসে ফেলেছি?
প্রেম হচ্ছে আমাদের? হোক না?
তাতে খারাপ কি?

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত