মেয়েটা আট সদস্য বিশিষ্ট কিডন্যাপার গ্রুপের হাতে ধর্ষিত হয়েছিল। ধর্ষণ করিয়েছে তার আপন ফুপু। বাবা মায়ের মৃত্যুর পর মেয়েটি তার প্রেমিককে নিয়ে নতুন জীবন শুরু করতে চেয়েছিল। কিন্তু বিশাল সম্পত্তি হাতছাড়া হয়ে যাবে এই ভেবে ফুপা প্ল্যান করে তার আদরের ভাইপোর সাথে মেয়েটিকে বিয়ে দেবে। মেয়ে রাজি হয়নি। শুরু হয় নির্যাতন।নিজেরা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। আর সেদিন বিয়ে করার উদ্দেশ্যেই মেয়েটি ঘর থেকে বের হয়েছিল। কিন্তু পৌঁছাতে পারে নি। আটজন ছেলে তাকে রাস্তা থেকে চোখের পলকে চলন্ত মাইক্রোবাসে টেনে তুলে নিয়ে চলে যায়। আর কোন খোজ পাওয়া যায় নি। মেয়েটির জন্য অপেক্ষারত ছেলেটি তার ফোন বন্ধ পেয়ে বুঝতে পারে কিছু একটা হয়েছে। ফোন করে মেয়ের খালাকে। ওদের সমস্ত ঝামেলা জানতো আরেকটি মেয়ে।
যে ওদের দুজনের ভালো বান্ধবী ছিল। কোনরূপ ঝুট ঝামেলা জানাজানি করা যাবেনা মেয়েটির নিখোঁজ হবার ব্যপারে। কারণ মিডিয়ার মুখে মিডিয়া কর্মী পড়লে সেখানে কতটা বাজে পরিস্থিতি হয় তা বলে বুঝানোর কিছু নেই। তাছাড়া, ছেলের পরিবার যদি জানে মেয়ে উধাও তাকে ফিরে পেলেও ছেলের পরিবার গ্রহণ করবে না।
সমাজতো নারীকেই দোষ দেয়। সকল দিক চিন্তা করে খালা,বান্ধবী আর ছেলেটি মিলে খুব সতর্কতার সাথে খোজ নেয়ার কাজ শুরু করলো। অনেক লুকোছাপা, মিথ্যা বাহানা, গোয়েন্দাগিরি শেষে দশ দিনের মাথায় মেয়েটির খোজ মিলল। তাকে ঢাকায় এনে হাসপাতালে ভর্তি করা হলো। পনের দিন আইসিইউ বাস সহ প্রায় দুই মাস হাসপাতালে ভর্তি ছিল।
আটজন পুরুষ মিলে অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছে ওর উপর। কথা ছিল ওকে মেরে ফেলার। কিন্তু সৌন্দর্য্যের জন্য ধর্ষণ থেকে বিরত থাকতে পারেনি দুষ্কৃতি কারীরা।
মেয়েটি সুস্থ হবার পর আত্মহত্যার চেষ্টা করে। কারো সামনে দাঁড়াতে ভয় পেত। সারাক্ষণ নিজেকে এক কোনে গুটিয়ে রাখতো। ওকে যেই ছেলেটি ভালোবাসতো সেই ছেলের সামনে কোন ভাবেই ওকে আনা যেত না। ছেলেটি কিন্তু মেয়েটিকে ছেড়ে যায় নি। বরং সাইকিয়াট্রিস্ট এর কথা মত সে ওর স্বাভাবিক মানসিকতার অপেক্ষায় ছিল। এভাবে কেটে যায় আরো দুই মাস। ছেলেটি এই কষ্ট আর মেনে নিতে পারে নি। কারণ সে খুব ভালো করেই জানতো আজকের এই মেয়েটি সুস্থ অবস্থায় কতটা চঞ্চল আর ওকে ভালোবাসতে ব্যস্ত ছিল।
তাই এবার সে ডাক্তারের কথা না মেনে বান্ধবী আর খালাকে জানায় ওর সাথে কথা না বলে ওকে না দেখে থাকা আর সম্ভব নয়। যেহেতু মেয়েটি খালা বান্ধবীর সাথে কথা বলতে পারে সেহেতু ওর সাথেও পারবে।
মেয়েটি সেদিন বলে দেয় “এই রিলেশন আর সম্ভব নয়। সমাজ ওকে মানবে না, শ্বশুড় বাড়ি ওকে মানবে না, এমনকি ও নিজে তার প্রেমিকের সাথে ফ্রি হতে পারবেনা”। ছেলেটি এইসব কথা শুনে প্রকাশ্যে মেয়েটিকে চড় মেরেছিল। বলেছিল, ” আমাকে আর তোর কেন লাগবে? তুইতো **** পেয়েই গেছিস, তোর তো আর কিছুর দরকার নাই।
ভালোবাসার মর্ম তুই কি বুঝবি? আমি যে গত কয়েকটা মাস তোর আশায় ছিলাম সেটার কি হবে? আমি কার জন্য দৌড়াইছি? তুই ধর্ষিতা এইটা তুই বলতে হবে? আমি কিছু জানিনা? আরো অনেক কথা। শেষ কথা ছিল “তুই ধর্ষিতা হ..পাগল হ..যা খুশি হ..তুই শুধু আমার।
তুই যদি আমাকে ছেড়ে যেতে চাস খুন করে ফেলবো তোকে। আত্মহত্যা করতে চাস? তোর কবরে আগুন ধরিয়ে দেব আমি। তুই আমার সাথে থাকবি, আমার বউ হয়ে থাকবি। তুই শুধু আমার হয়ে থাকবি”।
খালামণির সাথে পরামর্শ করে, ছেলের পরিবারের কাছে ধর্ষণের ব্যাপারটা গোপন রেখে বিয়ে হয় ওদের। ছেলেটি খুব কৌশলে তার পরিবারকে মানিয়ে নেয়। বিয়ের পর মেয়ের ফুপু ধর্ষণের কথা ছেলের পরিবারকে জানালে উলটো তিনি নিজেই অপমানিত হন। কারণ উনারা জানতেন এই ফুপুই মেয়েটির জীবনের একমাত্র অশান্তি।
প্রমাণ জাহির করলেও যারা মেয়েটির ধর্ষণের কথা জানতো তারা সবাই বলেছিল “ও আবার কবে ধর্ষিত হলো?” সবশেষে সেই ফুপুকে আইনের আওতায় আনা হয়। মেয়েটির মনে ভয় ছিল যদি ছেলেটি কোনদিন কোন কারণে ওকে ধর্ষণের কথা বলে আঘাত করে। কিন্তু সেই ভুল ওর ভেঙ্গে গেছে বিয়ের পর।
আজ ওদের বিয়ের তিন বছর পুর্ণ হলো। মেয়েটি আজো হাসিমুখে বললো, ধর্ষিতা হিসেবে আমি বিব্রতবোধ করলেও ও আমাকে কাছে টানতে এতটুকু বিব্রত নয়।
যেখানে আমার বলার কথা “তুমি আমাকে আগের মতো ভালোবাসোনা, সেখানে ও বলে তুই আমাকে কম ভালোবাসোস কেন? আমি তোর জামাই না? ভালোবাসতে কিপটামি করবি না বউ?