বাসর ঘরে ডুকছি আর ভাবছি বউ কত সুন্দর করে সেজে গুজে বসে আছে আমার জন্য।
ইসসসসস…কত বছরের সাধনার রাত এটা।কত স্বপ্ন এই রাত নিয়ে।আর যাই হোক,জীবন আমি সাজাবো ঠিক গল্পের মতো করে।গল্পে কত সুন্দর করে গুছানো থাকে সংসার গুলো,কোন ঝামেলা নেই।শুধুই ভালোবাসায় পরিপূর্ন।
যদিও অনেকে বলে জীবন গল্প নয়,তবুও আমি সাজিয়ে দেখিয়ে দিবো জীবন থেকেই গল্প হয়।
ভাবতে ভাবতেই খাটের উপর বসে পড়লাম।
আমি বসাতেই বউ একটু নড়েচড়ে বসলো।
আমি একটু আগ্রহ নিয়েই ঘুমটাটা সরাতে গেলাম।
হুস ফিরলো ধমকে।
এই যে,মিঃ..
একদম ন্যাকামি করবেন না।এই স্বামী- স্ত্রী খেলা আমি পছন্দ করিনা।
তাই আপনার জন্য ও ভালো, আমার জন্যও ভালো আমার থেকে দূরে থাকুন।
..আজব!!!! তবে বিয়ে করেছি কি করতে??
তা আমি কি জানি??আপনাকে কে বলছে বিয়ে করতে??
..আপনি।
মানে,আমি আবার কখন বললাম,আপনাকে তো আমি চিনি ই না।
আপনি ই তো একদিন দেখে,বখাটেদের মতো পিছন পিছন গুড়গুড় করতেন।
..এই যে,এইবার কিন্তু বেশি হয়ে যাচ্ছে।
কি বেশি হয়ে যাচ্ছে শুনি??
…আমি বখাটে না।খুব ভদ্র বুঝলেন।আর বখাটে হলে প্রেম করতে চাইতাম,ঘুরতে যেতে চাইতাম।বিয়ে করতে চাইতাম না।
হুমম..বুঝলাম,তবে কতটা ভদ্র তা আস্তে আস্তেই প্রমান হবে।
এইবার আমার থেকে দূরে থাকুন।
…কোথায় যাবো??
তা আমি কি জানি??শুধু জানি দুজন এক রোমে থাকবো না।
হয় আপনি বাহিরে যান,না হলে আমি ই যাচ্ছি।
ওই না না,আপনি নতুন বউ, আপনি কোথায় যাবেন।আমি ই যাচ্ছি।
বলেই সব স্বপ্ন মাটিচাপা দিয়ে রোম থেকে বেড়িয়ে ছাদে চলে গেলাম।
ছাদে দাড়িয়ে দাড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছি।
তবে সচরাচর আমি সিগারেট খাইনা।
যখন কোন ব্যাপার নিয়ে খুব চিন্তা আর কষ্টে থাকি তখন খাই।
প্রথম সিগারেট খেয়েছিলাম,যখন অনার্স ১ম বর্ষে পড়ি।
–
অনিতা কে খুব ভালোবাসতাম।
অনেক দিনের প্রেম ও ছিলো।হঠাৎ ই বাবা মায়ের পছন্দে বিয়ে করে চলে গিয়েছিলো।
খুব কষ্ট পেয়েছিলাম।
সেদিনই প্রথম সিগারেট খেয়েছিলাম।
ডিশসন নিয়েছিলাম আর কখনই প্রেম করবোনা,তাই এইবার একদম বিয়েই করে ফেললাম।
কিন্তু বিয়ে করেই কি হলো, কপালে সুখ এলোনা।
ছাদের চেয়ার টাতে বসে ভাবতে ভাবতে কখন যানি ঘুমিয়ে পড়ছিলাম।হঠাৎই মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো।
কিরে রিয়ান তুই এখানে কেন ঘুমিয়ে আছিস??ঘরে কি হলো??
কি যে বলবো বুঝতেছিলাম না।আমি মাকে সত্যিটা জানাতে চাইনি।
ঘরের খবর ঘরেই থাক।তাই মাকে বললাম,
আসলে মা,রাতে হঠাৎ খুব গরম লাগছিলো,তাই একটু ছাদে আসছিলাম।
সত্যিই কি তাই??
হুমমম মা।কেন তুমি আমায় বিশ্বাস করোনা??
করি তো,তবে এইসব কি??
কোন সব মা??
তুই আবারো সিগারেট খেয়েছিস??
তাকিয়ে দেখি মা খেয়ে ফেলা সিগারেট গুলোর দিকে তাকিয়ে আছে।
সরি মা,রাতে খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো তাই দুইটা খেয়েছি।আচ্ছা আর খাবোনা।
বলেই ছাদ থেকে নিচে চলে গেলাম।
রোমে ডুকে দেখি রিনি এখনও ঘুমাচ্ছে।
অস্থির সুন্দর লাগছিলো।এমনিতেই অসম্ভব সুন্দর,এর মধ্যে আবারো ঘুমন্ত।
আমি শুধু তাকিয়ে দেখছিলাম।কেননা,সজাগ হয়ে গেলে তো আর সম্ভব নয়।
হঠাৎ ই চোখ মেলে তাকালো।
তাকিয়েই রেগে গেলো,
এই যে মিঃ লজ্জা করেনা,এমন চোরের মতো দেখতে।
নিজের বউ কে নিজে দেখবো,এতে লজ্জার কি আছে???
বউ??কে বউ?কিসের বউ?কার বউ??বলছিলাম না,বউ না বলতে।
তবে কি বলবো??
রিনি।আমি রিনি।আমাকে রিনি বললেই খুশি হবো।
ঠিক আছে।তবে আমাকে ও মিঃ না বলে রিয়ান বললেই খুশি হবো।
চেষ্ঠা করবো,বলেই বেড়িয়ে গেলো।
ফ্রেশ হয়ে খাবার খেতে গেলাম।
খাবার টেবিলে সবাই বসে আছি,কিন্তু রিনির আসার নাম ই নাই।
মা বলছে বিয়ের পরের দিন ই,নতুন বউ কে রেখে খেয়ে ফেলা টা ভালো দেখায় না।তাই
বাধ্য হয়েই ডাকতে গেলাম।
রোমে ডুকে দেখি সাজতেছে।
এইযে ম্যাডাম রিনি…
এত সেজে কি হবে??কাকে দেখাবেন বলেন??
এইবার খেতে আসুন।সবাই বসে আছে।
রেগে মেগে আগুন..এত সেজে কাকে দেখাবো মানে??মানুষ কেন সাজে হুমমম??
কেন আবার,কাউকে না কাউকে দেখাতে।
আমি এমনি সাজতে পছন্দ করি,সেই ছোটবেলা থেকেই।আর কাউকে দেখাতে সাজতে হয়না আমার,যখন মন চায় তখন ই সাজি।
আপনার দেখতে ইচ্ছে না হলে চোখ বন্ধ করে রাখুন বলেই মুখ বাঁকালো।
আমি ও কম যাই নাকি??একটু কাছে গিয়ে বললাম,সোনা রে,আমি দেখতেই চাই,শুধু অধিকার টা নাই।
ধাক্কা মেরে দূরে সরিয়ে বলল,এত রোমান্টিক হওয়ার কোন প্রয়োজন নাই।
মেজাজ টাই গেলো খারাপ হয়ে।মানুষ রোমান্টিক স্বামী চায়,আর আমার বউ পেয়ে ও তার কদর করে না।কত দুঃখ।
যাই হোক,বাদ দিন।খেতে চলেন।সবাই কে আর কত অপেক্ষা করাবেন??
অপেক্ষা করতে কে বলল,খেয়ে ফেলতে বলুন।আমার এখন খেতে ইচ্ছে করছে না।
ইচ্ছে করছেনা মানে??আপনার ইচ্ছা এখন আর কাজে দেবে না।এখন সবাই যা চায় তাই হবে বুঝলেন।কেননা ওরা আপনার শ্বশুর বাড়ির লোক।
শ্বশুর বাড়ি..(একটু হাস্যকর ভাবে উপস্থাপন করলো।)
যেখানে বিয়েটার ই কোন মূল্য নেই আমার কাছে, সেখানে শ্বশুর বাড়ি দিয়ে কি করবো??
হাতটা ধরে হেচকা টানে সামনে এনে বললাম,আপনার কাছে বিয়েটার মূল্য না ই থাকতে পারে,কিন্তু আমার পরিবারের কাছে আছে।
আমি বাবা মায়ের একমাএ সন্তান।আমার সুখ ই ওদের সুখ।
আর আমি যে ভালো নাই,তা আর আপনাকে ঢোল পিটিয়ে বলতে হবেনা।
তাই চুপচাপ নিচে চলে আসুন।
না গেলে কি করবেন হুম??
কি করবো না করবো তা সময় ই বলে দিবো।
আর কিছু বলার অপেক্ষা না করে এক প্রকার টেনে ই নিচে নিয়ে গেলাম।
রাগে তেমন কিছুই খেলোনা।
তবে সবার সাথে ভালো ব্যবহার ই করলো।
খাবার শেষ হতেই নিজের রোমে চলে আসলো।
আমি ও রোমে আসলাম।
আমাকে দেখে মুখটা এমন ভাবে ঘুড়িয়ে নিলো,যেমন কত জন্মের শএুতা আমার সঙ্গে।
কি আর করার বেলকুনিতে দাড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছি।এখন সিগারেট টাকে ই একমাএ সঙ্গী মনে হয়,যে একা সময়ে সঙ্গ দেয়।
হঠাৎই হাত থেকে সিগারেট টা নিয়ে ফেলে দিলো।
খুব রাগ চাপলো মাথায়, তাই মেজাজ দেখিয়ে বললাম,
এইটা কি হলো??
কি আবার,যা দেখলেন তাই।
সমস্যা কি আপনার?ডিশিসন নিয়েছেন আমার ইচ্ছা অনিচ্ছা গুলোকে কবর দিবেন??
ওরে বাবা তেমন কি করলাম,শুধু সিগারেট টাই তো খেতে দিলাম না।
আর কি কি করতে চান আপনি??
যা যা আমার পছন্দ না।শুনেন এই ঘরে সিগারেট খাওয়া যাবেনা।গন্ধ শুনলেই যে খায়,তারে মেরে ফেলতে মন চায়।
তো আর কি কি আপনার পছন্দ না শুনি??
সময় হলেই টের পাবেন।এখন বলার সময় নাই।
সময় নাই??একটু হেসে বললাম,কি কাজ করেন আপনি??আসার পর থেকে তো ঘরেই বসে আছেন।এই বাড়িতে কয়টা রোম আছে তা ই তো জানেন না।
তা জেনে আমার কোন কাজ নেই।
তা জেনেই আপনার কাজ।কারণ কিছুদিন পর থেকে ওই রোম গুলো ধুয়ে মুছে আপনিই পরিষ্কার করবেন।
কি…???
পাগল নাকি আপনি??আমি কি এই বাড়ির কাজের লোক নাকি হুমম??
আগেই বুঝে ছিলাম, আপনারা যে এমন।
কেমন??
বেশি সুবিধার না।
হা হা,এইটা বুঝেন আর এইটা বুঝেন না,কতটা স্বপ্ন নিয়ে আপনাকে বিয়ে করেছি??
আর বুঝবেন ই বা কেমন করে ভিতরে হৃদয় বলে কিছু আছে নাকি??
না, নাই,ঠিক সেদিন থেকে নাই,যেদিন থেকে আমার….
বলেই থেমে গেলো।
কি হলো বলো,কি বলবে বলো।
না কিছুনা।মাথাটা খুব যন্তনা করছে।দয়া করে আমায় একটু একা থাকতে দিন।
কি আর করার বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পড়লাম এক ফ্রেন্ডের বাসার উদ্দেশ্যে।
ভাবলাম,ওর সাথে সব কিছু শেয়ার করে নিজেকে কিছুটা হালকা করবো।
হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে গেলাম রিদিতার বাড়ি।রিদিতা আমার খুব ভালো বান্ধবী।আমাদের দুই পরিবার ই আমাদের ব্যাপারে জানে।তাই দুজনই দুজনের বাড়ি যাই। লাইফের সব কিছুই শেয়ার করি ওর সাথে।
আমার লাইফে ঘটে যাওয়া এমন কোন ব্যাপার নাই যা রিদিতা যানে না।দরজায় নক করতেই ওর মা দরজা খুলল।কৌশল বিনিময় করে রিদিতার রোমে গিয়ে দেখি বসে বসে ফোন টিপছে।
আমি ধপাস করে বসে পড়লাম ওর খাটে।গালে হাত দিয়ে বসে আছি,কোন কথাই বলছিনা।
তাই রিদিতা একটু মজা করেই বলল,
কি ব্যাপার নতুন জামাই আজ আমাদের বাড়ি??
…আর বলিস না দোস্ত…বউটা আমার মন মতো হয়নি।
তাই বলে কি তুই দেবদাস হয়ে যাবি নাকি??
কাধেঁ হাত দিয়ে বলল,জানু তুই একদম টেনশন করিস না,প্রয়োজনে আরেক টা বিয়ে করাবো।
আমি রেগে বললাম,আমি মরি আমার জ্বালায়,আর তুই করিস মজা।
সরি রে দোস্ত, আর মজা করবোনা।বল বউয়ের সমস্যা কি??
..অনেক সমস্যা রে জানু।বউ আমায় ১০০ হাত দূরে রাখে।কাল বাসর রাতটা কেটেছে আমার, রাতের চাদঁ আর সিগারেটের সাথে।
মানে কি তুই আবারো সিগারেট খেয়েছিস??
কি করবো বল,একদম ই সহ্য হচ্ছিলো না।যে বউ বাসর রাতে স্বামীকে ঘর থেকে বের করে দেয়,সে স্বামী জানে তার মনের অবস্থা তুই বুঝবিনা রে..
হইছে হইছে আর দুঃখ প্রকাশ করতে হবেনা।
চল এক মহূর্তের জন্য ভুলে যা,কাল রাতে কি হয়েছিলো।
..আরে চাইলেই কি ভুলা যায় রে???
আরে বোকা তাই বলে কি এখন তুই ওইসব ভেবে ভেবে কষ্ট পাবি নাকি??
তুই জানিস না,কষ্টের কথা ভেবে ভেবে কান্নাঁ করা, কষ্টের গান শোনা,এগুলোর মানে হইছে, একটা কষ্টের গাছ লাগানো। আর তাতে পানি ঢেলে পরিচর্যা করা।যাতে করে ওইটা ভালো ভাবে ডাল পালা ছড়িয়ে,শাখা-প্রশাখা বিস্তার করতে পারে।এতে বল তো কষ্ট বাড়বে না করবে??
…বাড়বে।
তাই তো ওই কষ্টের গাছ টাকে একদম শিখর সহ উঠিয়ে ফেলতে হবে।যাতে করে কষ্ট না বাড়তে পারে।
..কিন্তু এখন কি করবো বলতো??
শুন সহজে পাওয়া যায় যে ভালোবাসা,তার কোন মূল্য থাকেনা।সেজন্য ওইটা কষ্ট করে অর্জন করতে হবে।
..তা তো বুঝলাম,কিন্তু এখন কি কি করতে হবে বল।তুই তো জানিস কত খেটে খুটে রিনি কে বিয়ে করেছি।
আরে জানি রমরে…এখন তোকে এমন কিছু করতে হবে যা রিনি পছন্দ করে।
আরে কি কি পছন্দ করে তা ই তো জানিনা।আর জানবো ই বা কেমন করে,ঝগড়া বাদে তো এখন পর্যন্ত তেমন কথা ই হয়নি।
আরে ঝগড়া কেন করিস?? ঝগড়া করবিনা,এমন কিছু করার চেষ্টা করবে যা ওর মনে রেখা টানবে,তোর জন্য অন্য রকম অনুভূতি আসবে।
..ওই আমি ওর একটা পছন্দের কথা জানিরে..
কি??
ও না খুব সাজতে পছন্দ করে।
ওয়াও গুড।
তবে ওর জন্য সাজগোজ এর জিনিস পএ নিয়ে যাবি,তবেই দেখবি খুশি হবে।কেননা যত কিছুই হোক,মেয়েরা পছন্দের জিনিস পেলে খুব খুশি হয়।
ওকে ওকে।এখন যাই,পরে আবারো প্রয়োজনে হলে কল করবো।
বলেই রিদিতার বাসা থেকে বের হয়ে পড়লাম।
তারপর চলে গেলাম মার্কেটে। মার্কেটে গিয়ে কানের এক জোড়া দুল,একটা পায়েল আর একটা আলতা কিনে নিয়ে বাসায় গেলাম।
বাসায় পৌঁছেই দেখি রিনি মায়ের সাথে বসে টিভি দেখছে।এমন ভাবে দুজন বসে টিভি দেখছিলো,মনে হয় যেমন রিনি বিয়েটা নিয়ে কত খুশি।
বুঝেছি আমাকেই শুধু জ্বালিয়ে মারবে।আর কাউকে বুঝতেই দিবেনা।
যাই হোক ভালো ই হলো।না হলে তো আমার সাথে মা-বাবা ও কষ্ট পেতো।
আমি কিছুই না বলে সোজা রোমে চলে গেলাম।
ড্রেসিংটেবিলেররম সামনে জিনিসপএ গুলো রেখে শুয়ে পড়লাম।
শুয়ে শুয়ে ফোন টিপাটিপি করছিলাম,তখন ই রিনির প্রবেশ।
এইটা আবার কি,বলেই ড্রেসিংটেবিলে রাখা প্যাকেট টা হাতে নিলো।পরে নিজে নিজেই প্যাকেট খুলে পায়েল টা পায়ে দিয়ে বলল,দেখুন তো কেমন লাগছে।
খুব ভালো।
ধন্যবাদ।
আমি একটু ভাব নিয়েই বললাম,দেখতে হবে না এনেছে কে?
..কে এনেছে??
কে আনবে আবার,জানো না??জ্বীন পরী তো আর তোমায় পায়েল এনে দিয়ে যাবেনা।
..আপনার পায়েল পরবো না,বলেই খুলে রেখে চলে গেলো।
ধূর বলাটাই ভুল হয়েছে।
কিন্তু যে বেহাইয়া মেয়ে,পরে ঠিকই পড়বে।
–
দিন তো ভালোই কাটলো।কিন্তু রাতের বেলায় তো মহা ঝামেলা।
যখনই ঘুমাতে গেলাম, তখনই চেচিঁয়ে
এইযে মিঃ আপনি এখানে কেন??
…তো কোথায় থাকবো?
তা জানিনা,তবে এই রোমে না।
রোজ রোজ ঝগড়া ভালো লাগেনা।তাই একটু রেগে বললাম,এই যে শুনেন,প্রথমত রোম টা আমার,দ্বিতীয়ত আমার আপনার সাথে থাকতে কোন সমস্যাই নাই।
আপনার না থাকতে পারে,কিন্তু আমার আছে।
সমস্যা যেহেতু আপনার তাই আপনি ই রোম থেকে বেড়িয়ে যান।
আর হ্যা শুনেন,বিয়েতে যেহেতু আপনার এলার্জি,তবে বিয়েটা না করলেই পারতেন।তবেই আমাকে এত ভোগতে হতো না।
ইসসসসস..নিজে ভোগছে,আমাকে কি কম ভোগাচ্ছেন নাকি??
..আর আপনি কেন বার বার আমাদের বাড়ি, আপনার বাবা-মা কে পাঠিয়েছেন??সেজন্যই তো বাধ্য হয়ে আপনাকে বিয়েটা করতে হয়েছে আমার।
আচ্ছা বাধ্য হয়ে কেন বলছেন বার বার,আমাকে আপনার পছন্দ হয়নি??
নাকি চক্কর আছে অন্য কারো সাথে।
এই যে মিঃএকদম শার্টের কলার ধরে,ভালো করে কথা বলুন।আর শুনেন,এই প্রেম ভালোবাসায় না কোন ইন্টারেস্ট নেই আমার।ঘৃনা করি এই প্রেম শব্দটাকে।
তাই ভালো হয়তো,মাথা থেকে এইসব চিন্তা ঝেড়ে ফেলে দিন।
বলেই রোম থেকে বের হয়ে গেলো।
আমি ও রেগে চুপচাপ শুয়ে থাকলাম।
কিন্তু ঘুম আসছিলোনা কিছুতেই।রিদিতাকে কল করলাম,
কিরে দোস্ত বউ তো রেগে রোম থেকে বের হয়ে গেলো।কি করবো এখন??
কিছুই করতে হবেনা।শুধু রাগ মিটে গেলে, রোমে আসলে আর কিছুই বলিস না।
তাছাড়া তুরে না বললাম,ওর সাথে ঝগড়া করবিনা।
আরে তুই জানিস না,খুব বাড়াবাড়ি করে ফেলে।
..আরে তা তো একটু করবেই,যেহেতু বিয়েটা মেনে নিচ্ছে না।তুই একটু চুপ থাকলে কি হয় রে??
আচ্ছা তুর কথাই মেনে নিলাম।এইবার রোমে আসলে কিছুই বলবো না।
বলেই ক,ল কেটে যেই দরজার দিকে তাকালাম,দেখি বউ টা আমার রোমে ডুকছে।মনে হয় অন্ধকারে একা ভয় পায়।তবে আমার জন্য ভালোই হলো হি হি।
আমিও এমন ভাব করলাম,যেমন ঘুমিয়ে আছি।
আস্তে করে এসে আমার পাশে শুয়ে পড়লো।
তবে মাঝে দেয়াল হিসেবে দিয়ে রাখলো কোল বালিশ টা।
মনে মনে ভাবছি,এই দেয়ালটার আর কি দরকার ছিলো??
কি আর করার,মনের কষ্ট মনে রেখে ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি রিনি নামায পড়ছে।
দেখে তো পুরাই অবাক,মেয়ে আবার নামায ও পড়ে নাকি??
তবে মনে মনে এত সয়তানি কেন??আমাকে কেন সহ্য করতে পারেনা??
হয়তো এর ভিতরে ও কোন কারণ আছে।সময় হলেই জানতে পারবো।
নামায শেষ করে যখনি বাহিরে যাবে,পিছন থেকে ডাকলাম,এই মেয়ে শুনো…
কাছে এসে,একটা কথা কয়দিন বলবো??আমার নাম রিনি।তাই এই মেয়ে,ওই মেয়ে বলবেন না।
হইছে হইছে এত রাগার মতো কিছুই হয়নি।আর হ্যা নামায পড়েন আর এইটা জানেন না,প্রতি ভক্তি মহা ধর্ম.??
স্বামীকে খুশি না করতে পারলে জাহান্নামী হবেন হুমমম…
এই যে শুনেন,এই স্বামী শব্দটাতে না খুব এলার্জি আমার বুঝলেন??এই স্বামী গুলো না,বড়ই স্বার্থপর..
এএএ…কে বললো আপনায়??দেখেন না, আপনার স্বামীটা কত ভালো??
ইসসসস…কত ভালো তা সময় হলেই বুঝা যাবে।
বলেই রোম থেকে বেরিয়ে গেলো।
আমি শুধু তাকিয়ে রইলাম তার চলে যাওয়ার পানে.
এমন ই ঝগড়া খুনসুটিতে কাটছিলো দিন গুলো।
হঠাৎই একদিন মা-বাবা গ্রামে বেড়াতে গেলো।
কথা ছিলো অনেক দিন থাকবে।
আমি ও অফিস যাওয়া শুধু করে দিলাম।
একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে মোটামুটি উচু পদে ই চাকরি করতাম।
আমি অফিসে চলে গেলে রিনি একা বাসায় ই থাকতো।
আমি অফিস থেকে অনেক বার কল করতাম।মাঝে মাঝে ভালো ব্যবহার করতো,মাঝে মাঝে ঝগড়া ও করতো।
তবে এইটা সত্যি রিনি মেয়ে হিসেবে খুবই ভালো।
–
একদিন রাতের বেলা ঘুমানো নিয়ে খুব ঝগড়া হলো,তখন রিনি মায়ের ঘরে চলে গেলো ঘুমাতে।কিন্তু ও সম্ভবত একা ঘুমাতে ভয় পেতো।বিশেষ করে অন্ধকারে কখনই একা থাকতো না।
রাতে ঘুমিয়ে আছি।
হঠাৎই খুব ঝড় শুরু হয়ে গেলো।
খুব শীত লাগছিলো তখন।গায়ে চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছি।
রাতে কারো স্পর্শে ঘুম ভেঙে গেলো।
রিনি আমায় খুব শক্ত করে জড়িয়ে আছে।
আমি তো অবাক,মেয়ের আবার কি হলো??আজকে হঠাৎ এমন পরিবর্তন।যে কিনা ভালো করে আমার ছায়া টাকে ই সহ্য করতে পারেনা।আজকে সে হঠাৎ আমায় এমন করে জড়িয়ে আছে।রহস্য তো একটা আছেই।
তবে এত শত ভেবে কাজ নাই।এই চান্সটা হাত ছাড়া করতে চাই না।
তাই আমিও খুব শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছে।ওর মাথা টা ঠিক আমার বুকটাতে। খুব সুখের অনুভূতি।এতটাই ভালো লেগেছিলো সেদিন,যা বলে বুঝাতে পারবোনা।
ওইদিন তুমুল ঝড়,সাথে বর্জ্যপাত ও হচ্ছে।
বুঝতে আর বাকি রইলোনা,ঝড় টা কে খুব ভয় পায় রিনি।
তবে মনে মনে ভাবছিলাম,রোজ রাতে কেন ঝড় হয়না।তবে আর বউ কে রেখে একা ঘুমাতে হয়না।
কিন্তু দুঃখের কপাল,তা তো আর হবেনা।
ভাবতে ভাবতে কখন জানি ঘুমিয়ে পড়তেছিলাম জানিনা।
ভোরে ঘুম ভাঙলো রিনির ধাক্কায়।
…ওই আমায় এইভাবে জড়িয়ে আছেন কেন??ছাড়োন বলছি..লজ্জা করেনা,মেয়ে মানুষ পেলেই এমন জড়িয়ে ধরেন নাকি??
খুব রেগে রিনির দিকে তাকিয়ে বললাম,আপনার লজ্জা তখন কোথায় ছিলো,যখন ,আমার রোমে চুপিচুপি এসে, আমায় এমন শক্ত করে জড়িয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন??
ইসসসস…আমার বয়েই গেছে আপনাকে এমন জড়িয়ে ধরতে, বলেই মুখ বেকিয়ে নামায পড়তে চলে গেলো।আর বলে গেলো,নামায না পড়লে সকালে খেতে দিবোনা।
আমি ও নামায শেষ করে অফিসে যাবার জন্য রেডি হয়ে খাবার টেবিলে গিয়ে দেখি সব রেডি।
বললাম,আসেন দুজন একসাথে ই খেয়ে নেই।
না আপনি খেয়ে চলে যান।আমি একাই খেতে পারবো।
..বুঝেছি বুঝেছি..
কি বুঝেছেন হুমমম??
..আপনি যে,বেশি বেশি খান,তাই তো আমার সামনে খাচ্ছেন না।
খাবোই তো,একশো বার খাবো,খাওয়ার জন্যই এই বাড়ি এসেছি।
..হা হা,,শুধুই খাওয়ার জন্য এসেছেন,আর কিছুনা??
আপনার মাথা করতে এসেছি। বলেই আমার সামনে থেকে চলে গেলো।
একদম রেডি অফিস চলে যাবো।ডেকে বললাম,ভালো না বাসেন,অফিস যাবার সময় অনতত কাছে এসে বিদায় তো দিতে পারেন নাকি??
কথাটা বলাতেই সামনে এসে দাড়ালো।একটু মুচকি হেসে বলল,সাবধানে যাবেন।
হা করে তাকিয়ে ভাবছি ওরে বাবা…ভুতের মুখে আল্লাহর নাম।
হঠাৎই দিন ঘন অন্ধকারে ছেয়ে যাচ্ছে,মনে হচ্ছে খুব ঝড় হবে।
ইসসস.. মেজাজ টা ই গরম হচ্ছে, কি যে ঋতু এলো,যখন তখন ই ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়।
হঠাৎই রিনির আবেগি কন্ঠস্বর।দৌড়ে সামনে এসে বলল,আজকে অফিসে না গেলে হয়না??
..না তা কি করে হবে??অফিসে এখন কাজের চাপ।
ইসসসস…আরো একটু কাছে এসে বলল,বউয়ের চেয়ে কি কাজ বড়??
না,কখনই না।ওকে আজকে যাবোনা।খুশি এইবার??
..হুমমম।খুব খুশি।
একটু পর ঝড় শুরু হয়ে গেছে।
যতক্ষন পর্যন্ত ঝড় ছিলো,ততক্ষণ ই রিনি আমার একদম কাছাকাছি বসে ছিলো।
আমি রিনির হাট টা ধরে বসে ছিলাম।
তবে ঝড় থেমে যাওয়ার পর ই রিনি সত্যি রুপ দেখানো শুরু করলো।
হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,কি ব্যাপার আমাকে এমন ধরে আছেন কেন??
আর হ্যা,এখন অফিসে চলে যান।
মানে কি??এখন অফিসে যাবো কিভাবে??
অফিসটা কি আমার বাবার নাকি যে,যখন ইচ্ছে হয় যাবো??
আরো কিছু বলার আগেই আমার কাছ থেকে চলে গেলো।
মনে মনে ভাবছিলাম,কি সুবিধাভোগী মেয়ে রে বাবা..
আর কখনই এর কথায় ভুলবো না।
মেজাজটাই গেলো খারাপ হয়ে।
বাসা থেকে বের হয়ে পড়লাম।
ইচ্ছে ছিলো যতক্ষন কল না করবে,ততক্ষণ বাসায় আসবো না।
ঠিক তাই হলো,সন্ধ্যে ঘনিয়ে রাত হবে হবে ভাব বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম,তখনই রিনির কল আসলো।
রিসিভ করতেই খুব কাদঁছিলো আর বলছিলো কোথায় আপনি??এখনও কেন বাসায় আসেন না??তাড়াতাড়ি বাসায় আসুন প্লিজ..
আমি একা বাসায় ভয় পাই।
আরো দেরি করলে তো ভয়ে ভয়ে মরে ই যাবো।
..ওই মানে কি??পাগলের মতো কি বলছো এইসব??আমি থাকতে তোমার কিছুই হবেনা,এখনি চলে আসছি আমি।
ফোন রেখে বাসায় উদ্দেশ্যে হাটাঁ শুরু করলাম।
খুব দ্রুত হাটছিলাম।
১৫ মিনিটেই বাসায় পৌঁছালাম।
দরজায় একবার নক করতেই দরজা খুলে আমায় জড়িয়ে ধরে কান্নাঁ শুরু করলো।
খুব কাদঁছিলো। আমারো খুব কষ্ট হচ্ছিলো।
তাই শান্তনা দিয়ে বললাম,এই বোকা মেয়ে কাদছো কেন??এই তো আমি।আর কখনই লেট করে বাসায় ফিরবোনা।এই কান ধরছি,বলেই কান ধরে দাড়িয়ে রইলাম।
কান থেকে হাতটা নামিয়ে হাত দুটো ধরে বলল,আমি ও আর কখনই ঝগড়া করবো না।
–
রাতে দুজনই একসাথে শুয়ে আছি।তবে আজকে মাঝের দেয়াল মানে বালিশ টা আর নেই।
আচ্ছা রিনি তুমি ঝড়ে এত ভয় কেন পাও??
রিনি বলতে শুরু করলো,
–
তখন আমি খুব ছোট।মাএ ৭ বছর।
আমার বাবা মায়ের আমি ই একমাএ সন্তান।
খুব সুখি পরিবার ছিলো আমাদের।আমার বাবা ও তোমার মতো একটা কোম্পানিতে জব করতো।
প্রথম প্রথম কোন সমস্যাই ছিলোনা।
কিন্তু পরবর্তীতে রোজ রাতেই মা- বাবার মধ্যে ঝগড়া হতো।
আমি সজাগ থেকে ওদের ঝগড়া শুনতাম।
আমার মা খুবই সুন্দরী ছিলেন।তাও বাবা, মায়ের অগোচরে তার অফিসের কোন মেয়ের সাথে প্রেমে জড়িয়ে পড়ে।
তা নিয়েই মা-বাবার মধ্যে প্রতিদিন ঝগড়া হতো।বাবা মাকে খুব মারধর ও করতো।
–
প্রতিদিনের মতো সেদিন রাতে ও ঝগড়া হচ্ছিলো।সেদিন ও বাবা মাকে মারতে শুরু করলো।সেদিন ও খুব ঝড় হচ্ছিলো।ঝগড়ার এক পর্যায়
মা রাগ করে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়ছিলো।
আমি ও পিছন পিছন দৌড়ে গিয়েছিলাম।
কিন্তু বাবা যেতে দেয়নি।তবে মাকে ও আটকায়নি।সে দিন সারাটা রাত ঘুমাই নি।খুব কান্নাঁ করছিলাম।বাবা আমায় একা রেখে উনার মতো করে ঘুমিয়ে পড়তেছিলেন।আমি সারা রাত্রই ফ্লোরে বসে ছিলাম।
পরের দিন সকাল বেলা বাবার ফোনে একটা কল আসলো।
বাবা তাড়াতাড়ি বাসা থেকে বের হয়ে গেলো।
পায় ২ ঘন্টা পর,বাবা মায়ের মৃত দেহটা নিয়ে বাসায় ফিরছিলো।
আসলে রাতে ঝড়ের সময় মা, মায়ের মতো করে হাটঁছিলো,তখনই নাকি কোন এক বড় গাড়ি এসে মাকে পিছন থেকে ধাক্কা মেরে চলে যায়।সকালে কোন একজন মাকে দেখে চিনতে পেরে বাবা কে কল করেছে।হসপিটালে নেওয়ার আগেই মারা গেছে।
সেদিনই মা কে কবর দেওয়ার পর,নানা বাড়ি চলে আসছিলাম।
পরে আর কখনই বাবার কাছে যাইনি।
উনি নিতে ও আসেনি।
কিছুদিন পর শুনেছিলাম,বাবা নাকি ওই মেয়েকেই বিয়ে করেছে।
কথা গুলো বলার সময় রিনি অনেক কেদেঁছিলো।
সেদিন ই বুঝেছিলাম, রিনি কেন স্বামী শব্দটিকে এত বেশি ঘৃণা করে।
ওইদিনের পর থেকে আমাদের মধ্যে খুব ভাব হয়ে গিয়েছিলো।
রিনি ও বুঝে গিয়েছিলো সব স্বামীরা ওর বাবার মতো হয়না।
তাই পরে আস্তে আস্তে আমাদের স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কটাও আরো আট- দশটা স্বাভাবিক সম্পর্কের মতোই হয়ে গেলো।
দুজনই এখন খুব ভালো আছি ।
–
পরে একদিন…
বাবা মা ও ফোনে জানালো তাড়া আর শহরে আসতে চায়না।ওরা গ্রামে থেকেই ওইখানকার জমিজমা দেখা শুনা করবে।কারণ শহরে ফ্লাট নিয়ে তো আর সারাজীবন থাকা সম্ভব না।একদিন না একদিন তো গ্রামে ফিরে যেতেই হবে।তাই আমি ও হ্যা বলে দিলাম।
এখন এইখানে শুধু আমরা দুজনই থাকি।
–
আগে অফিসে গেলে আমি ই শুধু কল করতাম।কিন্তু এখন রিনি ই একটু পর পর কল করতো।দেখতে দেখতে কেটে গেলো একটা বছর।
–
আমাদের বিবাহ বার্ষিকীর দিন সকালে রিনি আমায় অফিস যেতে না করলো,কিন্তু অফিসে কজের অনেক বেশি চাপ ছিলো।তাই যেতেই হলো।
তাই মহারাণীর খুব রাগ হলো।ওইদিন আর সারাদিনে একটাও কল করলো না।
তাই রাগ ভাঙাতে ওইদিন সাজগোজের অনেক জিনিস কিনে সাথে কিছু গাজরা ও নিলাম।খুপায় গুজে দেওয়ার জন্য।
বাসায় পৌঁছে দরজায় নক করতেই,দরজা খুলে কোন কথা না বলেই সামনে থেকে চলে যেতে নিলো।আমি তখনি হাতটা ধরে হেচকা টাতে কাছে এনে বললাম,মহারাণীর কি খুব রাগ হয়েছে নাকি??
আজকে কি আর মাফ পাওয়ার চান্স নেই??
..জানিনা।ছাড়ো,আর ডং করতে হবেনা।
ছাড়বোনা।ডং তো বউয়ের সাথেই করবো নাকি??
..ইসসসসস..হইছে হইছে,সকালে মনে ছিলোনা এই কথা??কত করে বললাম,আজ অফিসে যেওনা।আজকে একটা বিশেষ দিন।
কেন গো,বাসায় বসে কি খুব বেশি মিস করে ছিলে নাকি???
..জানিনা ছাড়ো বলছি।
কেন না ছাড়লে কি করবে,বলেই আরো একটু কাছে টেনে নিয়ে কপালে আলতো করে একটা চুমু একে দিলাম।
এইবার কি মহারাণীর রাগ একটু হলেও কমেছে??
নাকি এত সহজে রাগ ভাঙবেনা।
..ভেঙেছে এইবার তো ছাড়ো,রান্না করতে হবেনা??না হলে খাবে কি???
আজ রান্না করতে হবেনা।
..তবে কি হাওয়া খেয়ে থাকবে??
না তোমাকে খাবো।
..কি??..সয়তান,কুত্তা বলেই মারতে শুরু করে দিলো।
মার থামিয়ে আরো শক্ত করে জড়িয়ে বললাম,আরে পাগলি, আজকে আমরা বাহিরে ডিনার করবো।
এইনাও নতুন শাড়ি, প্যাকেটের ভিতরে আরো অনেক কিছু আছে। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও।
..তোমার হাতে ওইটা কি??
গাজরার মালা।
..ওইটা দিবেনা??
না।
..কেন??
এইটা আমি নিজে খুপায় পড়িয়ে দেবো।
যাও তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে এসোতো।
আমি ও ফ্রেশ হয়ে আসছি।
..এই শোনো…
কি??
খাটের ওপর রাখা পাঞ্জাবী টা পড়ো কিন্তু।
ওকে ওকে।
যাও এইবার রেডি হতে যাও।না হলে তোমার সাজতে সাজতে রাতের খাবার টা সকালেই সারতে হবে।
..তার মানে আমি এতই সাজি??
হুমমম..খুব।
..যাও আর কখনই সাজবো না।
ওকে আর সেজোনা।
কারণ তুমি এমনিতেই অপূর্ব।হইছে হইছে আর বলতে হবেনা,
মুখ বেকিয়ে চলে গেলো।
–
সন্ধ্যায় বাহিরে গেলাম।
অনেকটা সময় পর খেয়ে বাসায় চলে আসলাম।
দুজন আবারো ফ্রেস হয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
–
সকালে নামায পড়ে শুয়ে শুয়ে রিদিতার সাথে ফোনে কথা বলছিলাম।রিনি ও রিদিতার কথা জানে।রিদিতা দু-একবার এসেছিলো এখানে।রিনির সাথে খুব ভাব হয়ে গেছে।
হঠাৎই কিছু একটা পরার শব্দ পেলাম।
রিনি রিনি বলে ডাকলাম,কি পরেছে তা জানার জন্য।
কিন্তু কোন সাড়া না পেয়ে দৌড়ে গেলাম।
গিয়ে দেখি রিনি কিচেনের ফ্লোরে পরে আছে।
তাড়াতাড়ি চোখে মুখে পানি দিলাম।
কিন্তু জ্ঞান ফিরছিলোনা।
তাই একটু ভয় পেয়ে গেলাম।
সাথে সাথে মা কে কল করলাম।মা বলল,বেশি করে মাথায় পানি দেওয়ার জন্য।
অনেকক্ষণ পানি দেওয়ার পর রিনি চোখ খুলো তাকাঁলো। সাথে সাথে রিনির মাথাটা বুকে টেনে নিলাম।
খুব কান্নাঁ পাচ্ছিলো।এক মিনিটের জন্য হলেও রিনিকে হারানোর কষ্টটা হাড়েহাড়ে অনুভব করেছিলাম।
রিনি একটু হাসি হাসি ভাবে বলল,এত ভয় পাওয়ার কি আছে??কাদছো কেন??এইতো আমি,কিছু হয়নিতো।
আসলে হঠাৎই মাথাটা একটু ঘুড়ে গিয়েছিলো।
তোমাকে ডাকতে চেয়েছিলাম।কিন্তু পারিনি।
পরে আমি কোলে করে নিয়ে খাটে শুয়িয়ে দিলাম।
এক ডাক্তার বন্ধুকে কল করলাম।
ও বাসায় এসে যা জানিয়ে গেলো,তা শুনে তো আমি বউকে কোলে নিয়ে নাচতে শুরু করলাম।
রিনির নাকি বাচ্চা হবে।১মাসের অন্তঃসত্ত্বা ও।
সাথে সাথে সবাই কে জানিয়ে দিলাম।
–
এখন থেকে রিনিকে আর বাসার তেমন কাজ করতে দেইনা।আমিই সব কাজ করি।
তবে ও রাগারাগি করতো আর বলতো,দুনিয়ায় কি আর কারো বাচ্চচা হয়না নাকি??আর ওরা কি কাজ করেনা??
হুমমম..অনেকের ই বাচ্চা হয়,তবে তাদের স্বামীটা তোমার স্বামীর মতো এত বউ পাগল হয়না।
বলতেই হেসে ফেললো।
অফিসে গিয়েও সারাক্ষণ ই কল করে খুঁজ খবর নিতাম।মনটা সারাক্ষণ ই রিনির কাছে পরে থাকতো।
একদিন দুপুরে হঠাৎই ঝড় হওয়ার সম্ভবনা।
তখনই রিনির কল।
এই তুমি তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আসো।খুব ভয় লাগছে আমার।
ওকে বাবু।তুমি ভয় পেয়োনা।
আমি খুব তাড়াতাড়ড়ি ই চলে আসছি।
কল কেটে ছুটি নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।তখনই ঝড় শুরু হয়ে গেলো।
তাই রাস্তায় কোন গাড়ি ই পেলাম।
তাই আসতে আসতে একটু লেট হয়ে গেলো।
ততক্ষনে ঝড় থেমে গেছে
বাসায় গিয়ে দরজায় নক তরবো,তখনই দেখি দরজা খুলা।
হাতের ব্যাগ টা মেঝেতে রেখেই।রিনি রিনি বলে চেঁচাতে লাগলাম।কিন্তু কোন সাড়া শব্দ নেই।
খুব ভয় ভয় লাগছিলো,তাড়াতাড়ড়ি খুঁজতে লাগলাম রিনি কে।
সাড়া বাড়ি খুঁজলাম কিন্তু কোথাও পেলাম না।
মেঝেতে বসে পড়লাম।
খুব কান্নাঁ পাচ্ছিলো।এইটা ভেবে পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম যে,কোথায় গেলো ও??
ভয় পেয়ে আবার কোথাও চলে গেলো নাতো??
তবে কোথায় যাবে ,এখনকার তেমন কিছুই তো চিনে না।
ফোনে কল দিয়ে দেখলাম,ফোনটা ডাইনিং টেবিলেই বেজে উঠলো।
কি করবো কিছুই বুঝতেছিলাম না।
তাই মেঝেতেই বসে রইলাম।আর ভাবছিলাম,কি করবো এখন।
সারা বাড়ি খুজেঁ না পেয়ে যখন মেঝেতে বসে আছি,তখনই চাপা কণ্ঠে কান্নাঁর শব্দ শুনতে পেলাম।
কান্নাঁর শব্দটাকে অনুসরণ করে এগুতে এগুতে বুঝতে পারলাম,শব্দটা ওয়াশরোম থেকে আসছে।
তাড়াতাড়ি দরজা ধাক্কাতে লাগলাম আর রিনি বলে ডাকতে লাগলাম।
তবুও দরজা খুলছেনা।
নানা ভাবে বুঝাতে লাগলাম,
বাবু ভয় পেয়োনা,এই তো আমি চলে এসেছি।
একটু পর দরজাটা খুলেই আমায় জড়িয়ে কান্নাঁ শুরু করে দিলো।
অনেকক্ষণ কান্নাঁ করার পর জিঙ্গাসা করলাম,এত ডাকলাম শুনোনি তুমি??জানো কত চিন্তা হচ্ছিলো আমার??নিঃশ্বাস টা প্রায় বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম।
আর এত জায়গা থাকতে তুমি ওয়াশ রোমে কেন??
আরে জানোনা,খুব ভয় লাগছিলো আমার।
তোমার জন্যই দরজা খুলে অপেক্ষা করছিলাম।হঠাৎই জোরে ঝড় শুরু হয়ে গেছে।
তাই দৌড়ে রোমে চলে এসেছি।
এত বড় বাড়িতে একা একা আরো বেশি ভয় লাগছিলো।
কারণ রোম যত বড়,একাকিত্বটা ও ততটাই বেশি লাগে।তাই ওয়াশরোমে দরজা আটকে বসে ছিলাম।আগে বলো,
তুমি কেন এত লেট করলে??বলেই মারতে শুরু করে দিলো।
জানো কতটা ভয় পেয়েছিলামম আমি??
মনে হচ্ছিলো একা রোমেই হয়তো মরে পরে থাকবো।
কথাটা বলতেই মুখটা চেপে ধরলাম,কি বলছো পাগলের মতো??
তুমি মারা গেলে আমার কি হবে??
জানো কতটা ভালোবাসি তোমায়?? তোমাকে ছাড়া বেচেঁ থাকার কথাটা চিন্তা ও করতে পারিনা আমি।বলেই বুকে জড়িয়ে রাখলাম।
একটু পর ছাড়ো আর ধরবেনা আমায়।
যদি আমার কিছু হতো?এত লেট করলে যে??
আরে পাগল,আমি তো তোমার কল কেটে সাথে সাথেই বাসার উদ্দেশ্যে বের হয়ে পড়েছিলাম।
কিন্তু ঝড়ের জন্যই গাড়ি পাইনি।দৌড়ে দৌড়ে আসছি জানো তুমি??শুধুমাত্র তোমার জন্য।
–
রাতে রান্না শেষ করে রোমে গিয়ে দেখি রিনি ঘুমিয়ে পড়েছে।
কি ব্যাপার,না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েছো যে??
..আমি এখন খাবোনা।
তবে কখন খাবে??
..সকালে।
সকালে মানে??রাতের টা কে খাবে??
..তুমি।
মানে কি??রাতে না খেয়ে থাকলে তুমি অসুস্থ হয়ে পড়বে,আর বাচ্চাটা ও ঠিক মত বাড়বে না।
…মায়া কি আমার জন্য নাকি বাবুর জন্য??
দুজনের জন্যই।
..মিথ্যা কথা।তুমি আমায় একটুও ভালোবাসো না।
আরে বোকা,তুমি আমার জীবনসঙী।আর বাচ্চাটা হলো আমাদের পবিত্র ভালোবাসার নিদর্শন।
আমার দুজনকেই একদম সুস্থ অবস্থায় চাই।হঠাৎই বলল,
….এই শুনোনা।
কি??
..অনেকেই তো বাচ্চা হওয়ার সময় মারা যায়,যদি আমি ও মারা যাই।তবে কি তুমি আবার বিয়ে করবে??
একটু রাগ দেখিয়ে বললাম,এইসব কি কথা রিনি???
..বলোনা প্লিজ।
করবো না।
..ওকে।করবেনা কিন্তু।কারণ আমি মৃত্যুর পরেও তোমার ভাগ কাওকে দিতে পারবোনা।
আরে বোকা তুমি যেমন আমার ভাগ কাউকে দিতে পারবেনা,তেমনি আমি ও তোমার জায়গায় কাউকে বসাতে পারবোনা।
বলেই বুকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।
–
তারপর থেকে প্রায় রাতেই ২-৩ টায় সজাগ হয়ে যেতো।আর বলতো ওর সাথে গল্প করতে।আমাকে ও তাই করতে হতো।
কারণ আমি বুঝতাম ওর হয়তো ঘুমাতে কষ্ট হয়।তাছাড়া একটা বাচ্চা তো আর এমনি এমনি হয়না,অনেক কষ্ট সহ্য করার পর ই ভুমিষ্ট হয়।খেতে শান্তি দেইনা,ঘুমাতে না,হাটা চলায় না।তাইতো যথাসাধ্য ওর সঙ্গ দেওয়ার চেষ্টা করতাম।যেনো ওর কষ্টটা একটু হলেও কম হয়।
প্রায় রাতেই ওর সাথে গল্প করতে করতে ফজরের আযান দিতো।
একদিন বলছিলো,এই আমাদের বাচ্চার নাম কি হবে গো??
….তুমিই ঠিক করো।
না তুমি।
..আরে তুমি ঠিক করলেই বেশি ভালো হবে।
ভালো হবে বলছো তো??
…হুম গো।
..তবে শুনো,মেয়ে হলে নাম দেবো তোয়া,আর ছেলে হলে নাম হবে আরিয়ান।
..খুব সুন্দর নাম।এইবার প্লিজ ঘুমাও। না হলে দিনের বেলায় মাথা ব্যথা হবে তোমার।
ইসসসস..কত ভাবো গো আমায় নিয়ে??আর আমি তোমাকে সেই প্রথম থেকে কষ্ট ছাড়া কিছুই দিতে পারলাম না।
..ধূর বোকা,এত ভালোবাসা,আর বাচ্চাটা?? তা কম কি??ভাবতেই ভালো লাগে সারা বাড়িতে আমাদের বাবু দৌড়াবে,খেলবে।
আমি কত মজা করবো, তুমি শুধু দেখো।
রিনি হেসে দিলো।আর বলল,এই যে মিঃ বাবুকে পেয়ে কিন্তু বাবুর মা কে ভুলে যেওয়া।
..আরে কি যে বলোনা,প্রাণ ছাড়া কি দেহ চলে নাকি???
এই আমি তোমার প্রাণ নাকি??
..শুধুই কি প্রাণ??সোনা, ময়না, জান ,কলিজা,নিঃশ্বাস আর কত কি।
হইছে হইছে আর বলতে না।
চলো এইবার ঘুমিয়ে পরি।
সেদিনের মতো ঘুমিয়ে পড়লাম।
–
একদিন অফিসে যাওয়ার পর হঠাৎই মায়ের কল আসলো।
রিসিভ করতেই মা বলল,রিনি নাকি পা পিছলে সিড়ি থেকে পরে গেছে।এখন পেটে খুব ব্যথা তাই রিনিকে এখনি হসপিটালে নিতে হবে।
ওইদিন ছুটি নেওয়ার প্রয়োজন মনে করিনি।
সোজা বাড়ির পথে দৌড় শুরু করলাম।
অন্যদিন তাও গাড়ি পাই কিন্তু আজ একটাও গাড়ি পাচ্ছিনা।কথায় আছেনা,বিপদ যখন আসে,সবদিক দিয়েই আসে।
আমার অবস্থাও এমন ই হলো।দৌড়াতে দৌড়াতেই বাসায় চলে আসলাম।
পরে তাড়াতাড়ি রিনি কে হসপিটালে নিয়ে গেলাম।
একটু পর রিনির বাড়ির সবাই হসপিটালে চলে এসেছে।
রিনিকে এখনই সিজার করে ফেলতে হবে,না হলে খুব সমস্যা হয়ে যাবে।
রিনি ব্যথায় খুব কাদঁছিলো। আমি ও কাদঁছিলাম।
সারাক্ষণ ই আমার হাত টা ধরা ছিলো।
অপারেশন থিয়েটারে নেওয়ার সময় ও হাতটা ছাড়তে চায়নি।
বার বার বলছিলো,তুমি ও আসো আমার সাথে।আমার একা খুব ভয় লাগছে।
কিন্তু কি আর করার ওখানে তো আর সাথে যাওয়া যাবেনা,তাই বাধ্য হয়েই রিনির হাতটা ছাড়তে হলো।
তবে আমি একদম দরজাটার সামনেই বসে ছিলাম।
অনেকক্ষণ পর ডাক্তার বেরিয়ে এলেন।
নার্স কোলে করে একটা বাচ্চা নিয়ে বেরিয়ে এলেন।খুব কাদঁছে।
আমার মা এসে নার্সের কোল থেকে বাচ্চাটা নিলো।মেয়ে বাচ্চা হয়েছে।
সবাই খুব খুশি।তবে আমার মনোযোগ শুধু রিনির দিকে।ভিতর থেকে রিনির কোন শব্দ আসছেনা।দৌড়ে গেলাম রিনির কাছে।প্রথমে মনে করেছিলাম,রিনি এমনিতেই হয়তো এমন ভাবে পরে আছে।কারণ সিজার করলে অনেকক্ষণ মানুষের কোন হুশ থাকেনা।
তাই আমি হাতটা ধরে অপেক্ষা করছিলাম কখন রিনি চোখ খুলে তাকাবে।
হঠাৎই লক্ষ করলাম রিনির নিঃশ্বাস পরছেনা।
তাই সিউর হওয়ার জন্য আমার বাবা কে ডাকলাম।
উনিও বললেন নিঃশ্বাস পড়ছেনা।
চেচিঁয়ে ডাক্তার কে ডাকতে লাগলাম।
ডাক্তার, ডাক্তার….
ডাক্তার দৌড়ে আসলেন জ্বি বলুন।
আমার রিনির নিঃশ্বাস কেন পড়ছেনা??
আসলে..
আসলে কি ডাক্তার তাড়াতাড়ি বলুন।
আসলে আমি আপনার স্ত্রীকে বাচাঁতে পারলাম না।সরি…
বলেই চলে গেলো।এই কথাটা শোনার জন্য মানসিক ভাবে একদমই প্রস্তুত ছিলাম না।
একটু পর নার্স আসলো।
কিভাবে কি হলো নার্স??
আসলে আপনার বউকে অপারেশন থিয়েটারে আনার পর,ডাক্তার ভালোভাবে দেখে বুঝতে পারলেন,উনার পরে গিয়ে খুব চোট লেগেছে।বাচ্চার অবস্থা খুব সংকট জনক।
এখন হয় বাচ্চা কে বাচাঁতে হবে না হয় মা।
তাছাড়া একটা অপারেশনের কারণে উনার ভবিষ্যৎ এ বাচ্চা হওয়ার চান্স মাএ ২০%।না হওয়ার সম্ভবনাই বেশি।
একথা শুনার পর আপনার বউ ডাক্তারের হাতে পায়ে ধরে বলে বাচ্চাটা বাচিঁয়ে দিতে।
আপনার নাকি বাচ্চার খুব সখ।
তাছাড়া বিয়ের পর নাকি আপনাকে কষ্ট ছাড়া সুখ দিতে পারেনি।
আমরা উনার অভিভাবকের সাথে কথা বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু উনি দেননি।তাই এছাড়া আমাদের হাতে আর কোন উপায় ছিলোনা।তবে ডাক্তার দু জন কে বাচাঁতে অনেক চেষ্টা করেছিলেন।কিন্তু শেষ রক্ষা হলোনা।
কথাগুলো শেষ করেই নার্স চলে গেলো।
আমার সামনে পরে রইলো রিনির প্রাণহীন দেহটা।
কি করবো এখন এইটা দিয়ে আমি।
বাচ্চাদের মতো হাউমাউ করে কাদঁতে লাগলাম।
আর বলতে লাগলাম,কেন একা করে বেঈমানের মতো চলে গেলে??একটা বার ও কি ভাবোনি তেমাকে ছাড়া আমার বেঁচে থাকাটা হবে প্রাণহীন একটা প্রাণীর মতো।
কি করে থাকবো এখন আমি।
হয়তো বাচ্চাটা আমার দরকার ছিলো,কিন্তু তোমাকেও যে এখন বিষন প্রয়োজন।
আমার বাবা-মা, ওর মামা মামিরা সবাই অনেক কান্নাঁ করছিলো।
এর মধ্যে আমাকেও শান্তনা দিচ্ছিলো।
পরে সহ্য করতে না পেরে কখন যে অজ্ঞান হয়ে গেছি জানিনা।
জ্ঞান ফিরতে ফিরতে ততক্ষনে রিনিকে রঙিন কাপড় খুলে সাদা কাপড়ে মুরিয়ে ফেলেছে।
সবাই বলল শেষ বারের মতো একটা বার দেখে দাও।
কিন্তু সাহস হচ্ছিলো না।
এই তো কিছুদিন আগে একটা বেনারসি পরে বসে ছিলাম আমার সামনে,কি করে এখন সাদা শাড়িতে দেখবো ওরে।
পরেও অনেক কষ্টে সামনে গেলাম।
কেন জানি মনে হচ্ছে রিনি বলছে,এই এমন করে দেখার কি আছে??আজকে তো সাজিনি আমি।আর এত কান্নাঁ করার ই বা কি আছে,জানোনা তোমার কান্না আমার সহ্য হয়না??স্মৃতি হিসেবে রেখে গিয়েছিতো আমাদের মেয়েকে।
খুব যত্নে বুকে আগলে রাখবে কিন্তু।
আমি কান্নাঁ করতে করতে বললাম,আমার জীবনের শূন্যস্থান টা পূরন করে দিয়েছিলে তুমি।তবে আবার কেন ওইটা শূন্য করেই চলে গেলে।
তুমি কি জানোনা,তোমার শূন্যস্থান পৃথিবীর কোন কিছুতেই পূর্ন হওয়ার নয়।
মেয়েটাতো বুকের অন্য জায়গায় থাকবে,তোমার করে দেওয়া শূন্য স্থান টা আজীবন শূন্যই থাকবে।
পিছন থেকে মা এসে ধরে বলল,কি পাগলের মতো বিরবির করছিস কেন??
তুই ও বউ মার সাথে মরে যাবি নাকি??
বাচ্চাটার কথাটা অনতত ভাব??
মা কে জড়িয়ে বললাম,বাচ্চা তো দিয়ে গেলো মা,তবে আমাকে কোন ভুলের শাস্তি দিলো এভাবে?
ও কেন বুঝলনা এই বাচ্চাটাকে সামলাতে হলেও ওরে দরকার??
আরে বোকা এইটা প্রকৃতির নিয়ম সবাইকেই একদিন মরতে হবে।
জানি মা,তবে বেছে বেছে আমাকেই সবাই একা করে চলে যায় কেন??যারেই ভালোবেসে কাছে টানি,সে ই আমায় একা করে চলে যায়।
আর কখনও কাউকে ভালোই বাসবো।
সারাটা জীবন কাটিয়ে দেবো আমার মেয়েটাকে নিয়েই।
আর এই মেয়েকে বাচাঁতেই এতকিছু,এখন এই মেয়েকে অযত্ন মানেই রিনির দেওয়া আমানতের খিয়ানত।যা আমি কখনই করবোনা।
–
রিনির মৃত্যুর তিন বছর হয়ে গেছে।মেয়েটা ও বড় হয়ে গেছে অনেক টুকু।খুব পাকাপাকা কথা বলে।সারা বাড়ি দৌড়ায়। রিনি মারা যাওয়ার পর বাবা মা ও এখানে চলে আসছে।
এখন ও রিনির জায়গা টা কাউকে দেইনি।আর দিবো ও না।
ওই শূন্যস্থান টা শূন্য ই রাখতে চাই আজীবন।