রাত বাজে প্রায় দশটা। এত রাতে ও বাস স্ট্যান্ড লোকে লোকারণ্য। সবার মনে একটাই আকাঙ্খা, প্রিয়জনের সাথে ঈদ উদযাপন করা। আগামী কাল ঈদ। আমি মানুষটা খুব বেশী চালাক চতুর নই। এজন্য দু-তিন দিন ধরে ঘুরেছি টিকিটের জন্য। আমার গন্তব্য খুলনা। প্রিয় খুলনা। ঢাকা শহরে থাকতে থাকতে একজন মানুষ যন্ত্র হতে বাধ্য হয়। আমার অবস্থাও অনেকটা সেরকম। অফিসে শুধু কাজ আর কাজ। ব্যাচেলর হওয়াতে বাড়ী ভাড়াও পাই না। তাই কয়েকজন মিলে মেস করে থাকি। আমারা যেখানে থাকি সেটাকে বাড়ী না বলে ঘুপচি ঘরই বলা যায়। মাঝে মাঝে ওই ঘরে আমার নিঃশ্বাসই বন্ধ হয়ে আসে।
আমি গাড়ীতে উঠে বসলাম। নারী-পুরুষ সবার চোখেই বাড়ী ফেরার উৎকন্ঠা। আমি আমার সিটে বসলাম। আমার পাশের সিটটি ফাঁকা। কারণ ওই সিটের যাত্রী এখনও এসে পৌছায়নি। আমার পাশের সিটের যাত্রী হচ্ছে আমার বন্ধু পলাশ। পলাশের অভ্যাসই হচ্ছে সব কিছু ভুলে যাওয়া। আজকে যে সাড়ে দশটায় গাড়ী ছাড়বে এটাও নিশ্চয়ই ভুলে গেছে। আমি পলাশকে ফোন করলাম। কিন্তু পলাশের মোবাইল অফ। আমার প্রচন্ড রাগ হলো। গত কালই আমি পলাশকে বলেছিলাম একসঙ্গে বাসষ্ট্যান্ড যাবো। কিন্তু পলাশ বলল ওর নাকি কোন এক মামার বাসায় যেতে হবে। সময় মতো ও বাস ষ্ট্যান্ডে চলে আসবে। অথচ পৌনে এগারোটা বাজে পলাশের দেখা নেই। বাসের সামনের দিকে কয়েকজন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। একজন মেয়েও আছে। তারা সম্ভবত দাঁড়িয়েই বাড়ী যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একেই বোধহয় বলে নাড়ীর টান। আমি কিছু বোঝার আগেই বাস ছেড়ে দিল। পলাশের উপর রাগটা বেড়ে চলল। হঠাৎ বাসের সুপারভাইজার আমার কাছে আসল। বলল “ভাই আপনার আপনার এ সিটটি মনে হয় ফাঁকা।” আমি বললাম “জ্বি, আমার বন্ধুর আসার কথা ছিল কিন্তু আসে নি।” লোকটি হেসে বলল “ভাই একজন ভদ্র মহিলা দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন, উনি এখানে বসলে আপনার কোন আপত্তি আছে?” আমি ভেবে বললাম, “না আপত্তি নেই।”
কিছুক্ষণ পর আমার পাশে কোন একজন মেয়ে এসে বসল। আমি চেহারাটা ঠিক লক্ষ্য করলাম না। অচেনা একজন মেয়ের দিকে হুট করে তাকানোটা ভালো দেখায় না। এজন্য আমি জানালার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
হঠাৎই পাশের মেয়েটি কাঁপা গলায় বলল,”আপনি কি নিলয়?” আমি মেয়েটির দিকে তাকালাম। ভালো করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে মেয়েটিকে চিনতে পারলাম। আমি ও কাঁপা গলায় বললাম “কে? মীরা?!!” আমার চোখে মুখে বিস্ময়ের ভাব জেগে উঠে।
মীরার দিকে তাকিয়ে প্রথম যে জিনিসটি লক্ষ্য করলাম ওর চোখে সোনালী ফ্রেমের চশমা। আগে ওকে কখনো শাড়ী পরতে দেখিনি। তবে এখন ও নীল রঙের একটা চমৎকার শাড়ী পরে আছে। শাড়ী পরার মধ্যে কোন এলোমেলো ভাব নেই। মনে হচ্ছে এখন মীরা নিয়মিত শাড়ী পরে। তাহলে কি ওর বিয়ে হয়ে গেছে? হওয়াটাই অবশ্য স্বাভাবিক। তবে মীরার চোখে প্রচন্ড বিষাদের ছায়া রয়েছে। সোনালী ফ্রেমের চশমা ও সে বিষাদকে ঢাকতে পারে নি।
আমি বললাম,”কেমন আছো মীরা?”
মীরা বলল, “বেঁচে আছি।”
আমি বললাম, “কেমন ভাবে বেঁচে আছো?”
মীরা হেসে বলল, “মনে হয় ভালো ভাবেই।”
: এখনও দেখি হেয়ালী ছাড়া কথা বলতে পারো না। মনে হচ্ছে আগের মতোই আছ?
: তুমিও দেখি আগের মতোই গম্ভীর কথাবার্তা বলছ। পুরু গোঁফটা তোমার চেহারার গাম্ভীর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। কোন কলেজের প্রফেসর হয়েছো নাকি?
আমি হেসে বললাম, “না। একটা বিদেশী কোম্পানীতে কাজ করছি।”
: বেতন কত পাও?
: মেয়েদের বয়স আর ছেলেদের বেতন জিজ্ঞাসা করতে নেই।
: আমার বয়স পঁচিশ এবার তোমার বেতন কত বলো?
আমি জোরে হেসে বললাম, পনের হাজার। বছর খানেকের মধ্যে আশা করি বিশ হয়ে যাবে।”
: তুমি কেমন আছো নিলয়?
: আমি ভাল আছি।
: নিশ্চয়ই বিয়ে করেছ? তোমার বউ নিশ্চয়ই খুব সুন্দর? ছেলে-মেয়ে আছে?
: না মীরা, বিয়ে করি নি।
: আশ্চার্য! কোন মেয়ে পছন্দ হয় না নাকি?
: ঠিক ধরেছ। তা তোমার হাজবেন্ড কি করে?
: কি করে বুঝলে আমার বিয়ে হয়েছে?
: তোমাকে দেখলেই বোঝা যায়।
মীরা একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, “আমার হাজবেন্ড একটা কলেজের লেকচারার।”
: ভালো। খুব ভালো। বিয়ে হয়েছে কতদিন?
: ছয় মাসের মতো হয়েছে।
: কেমন লাগছে দাম্পত্য জীবন?
মীরা শুস্ক স্বরে বলল, “ভালোই তো।”
: তা রাতে একা একা যাচ্ছ? তোমার হাজবেন্ড কোথায়?
: ঈদের সময় তো টিকিটই পাওয়া যাচ্ছিল না। তাই ও গতকাল খুলনা চলে গেছে। আজ আমি যাচ্ছি।
: তোমার শ্বশুর বাড়ী তা হলে খুলনায়?
: হ্যাঁ।
কিছুক্ষণ পরে মীরা বলল, “তুমি কি আমার জন্য বিয়ে কর নি নিলয়?
আমি স্পষ্ট গলায় বললাম, হ্যাঁ। তা বলতে পার।”
: আমাদের এত সুন্দর সম্পর্কটা কেন নষ্ট হলো নিলয়?
: তুমি তো কারণ ভালো করেই জানো। জিজ্ঞাসা করছ কেন?
: তুমি মোবাইলের সিম চেঞ্জ করেছিলে আমায় জানাও নি। খুলনা থেকে ঢাকায় এসে কোথায় উঠেছ তাও জানাও নি।
: তুমি যে ঘটনাটা বলছ তা ছয় বছর আগের। কিন্তু তার আগের দু’বছরের কথা কেন বলছ না। সেই দু’বছর তুমি আমার সাথে যোগাযোগ করো নি ।
: আমার অনেক সমস্যা ছিল।
: মীরা, তুমি ভালোবাসা ধরে রাখতে পারো না। তোমাকে আমি অনেক ভালবাসা দিয়েছিলাম বলেই হয় তো তুমি আমার প্রতি উদাসীন ছিলে। আমি অনেক কষ্ট পেয়ে তোমার কাছ থেকে সরে এসেছি। শুধু দু’বছরের কথা বলছি কেন এর আগেও তুমি এমন ভাবে চলতে যা মেনে নেওয়া বড় কঠিন ছিল। সবকিছু কি বলে বলে করানো যায়? কাউকে সত্যিকার ভালবাসলে যোগাযোগ করার কথা, দেখা করার কথা বলে দিতে হয় না। প্রকৃত ভালবাসলে মানুষ দায়িত্ব বোধ নিয়ে সব কাজ করে।
: নিলয় তুমি তো দায়িত্ববান ছেলে। তুমি তো চেষ্টা করলে আমার সাথে দেখা করতে পারতে। আর তুমি ভালো করেই জানো তখন আমার নিজস্ব মোবাইল ছিল না।
: হ্যাঁ, পারতাম। এখানে খানিকটা দায় আমারও আছে। আমি আসলে অনেক শক্ত একটা ছেলে। আমার মধ্যে কঠিন ভাবটা তীব্র। তবে তোমার সাথে সম্পর্কের শুরুতে আমি ভেবেছিলাম এই মেয়েটাকে আমি আমার কঠিন রূপ দেখাবো না। ওকে আমি শুধু ভালোবাসবো কিন্তু একসময় আমি বাধ্য হয়েছি।
মীরা দুঃখী গলায় বলল “নিলয় গত আটটি বছর আমার কেমন কেটেছে তুমি জানো না। আমাদের সম্পর্কটা অনেক গভীর ছিল। দুজন মানুষের যতটা কাছে আসা সম্ভব আমরা তার চেয়ে বেশী কাছে এসেছিলাম। কত মধুর সময় পার করেছিলাম। আমার অনেক সমস্যা ছিল। তাই তোমার সাথে দেখা বা যোগাযোগ কোনটাই করতে পারিনি। তবে আমার বিশ্বাস ছিল তুমি আমারই থাকবে।”
: তুমি যে কথাটা বললে সেটা একটু নিজের ক্ষেত্রে বিচার করোতো। আমি কিন্তু এখনো বিয়ে করিনি। কোন মেয়ে কে তোমার সমান ভালবাসতে পারবো না বলেই এমন করেছি। আর তুমি স্বামী সোহাগে সোহাগিনী।
: স্বামীর সোহাগ! ভালোই বলেছ। আমার স্বামী একটা অমানুষ নিলয়। প্রতিনিয়তই আমাকে শারীরিক, মানসিক যন্ত্রনার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। ও তোমার আমার সম্পর্কটা জানতো। তবু এ ব্যাপারটা নিয়ে দিনরাত আমাকে খোটা দেয়। হায় রে সোহাগ !!
: কি বলছ এসব?!!
: তোমার মীরা ভালো নেই নিলয়। পরিবারের চাপে পড়ে বিয়ে করেছি। আমার বিয়ে করার কোন ইচ্ছা ছিল না। আমার স্বামী যদি খুব ভালোও হতো তবু আমি সুখী হতে পারতাম না। কারন তোমার জায়গায় আমি আর কারও স্থান দিতে পারি না।
: তোমার ভালোবাসার যদি এতই টান তো আমাকে খুঁজে নিতে পারলে না।
: তুমি তো জান আমি অনেক বোকা। তবু চেষ্টা করেছি। তোমার পুরনো কিছু বন্ধুর সাথে যোগাযোগ করেছি। তারাও ঠিকমতো জানে না তুমি কোথায়। এমনকি পত্রিকায় দুবার বিজ্ঞাপন ও দিয়েছি।
: থাক বাদ দাও এসব। আমাদের দুজনের পথ এখন ভিন্ন। তুমি এখন অন্য একজনের স্ত্রী। পুরনো অতীত তোমাকে শুধু কষ্টই দেবে।
: তোমাকে কষ্ট দেয় না, নিলয়? সত্যি করে বলো তো।
আমি একটু হেসে বললাম,”কষ্ট কি তা ভূলে গেছি মীরা। আমি যন্ত্রের মতো জীবন- যাপন করি। যন্ত্রের জীবনে কি কষ্ট থাকতে পারে?”
: কোন জোৎস্না রাতে কি আমার জন্য তোমার বুক হাহাকার করেনি? কিংবা প্রবল বর্ষণে কি আমার হাত ধরে ভিজতে ইচ্ছা হয়নি? কিংবা নৌকার পাটাতনে বসে———
আমি মীরাকে থামিয়ে দিয়ে বললাম, “হ্যা মীরা, জোৎস্না রাতে আমার বুক হাহাকার করেছে। প্রবল বর্ষণে আমি একা একা অনেক ভিজেছি। আমার অশ্রুকণা আর বৃষ্টি একাকার হয়েছে বহুবার। আমার শুধু মনে হতো কেউ যেন খুব আস্তে আস্তে ছুরি দিয়ে আমার বুকটা চিরে হৃদয়টা নিয়ে গেছে। ”
মীরা কেঁদে উঠল। কান্নার স্রোত প্রবাহিত হচ্ছে ওর পুরো শরীরে। আমি আবিষ্কার করলাম সেই আগের মীরাকে। যে মীরা আমার কাছে থেকে একটু কষ্ট পেলেই কাঁদত আর বলত “তুমি একটা বদ, আমাকে কাঁদাতে খুব ভালো লাগে, না?”
আমার ইচ্ছা করছে মীরার চোখের জল মুছে দিতে। ওর কান্না বন্ধের সব কৌশলই আমার জানা আছে। যদি শক্ত করে ওর মুখটা ধরে কানের কাছে ফিসফিস করে বলি “ভালোবাসি শুধু তোমায়” তবে সব কান্না থেমে যাবে মীরার। আর পরক্ষণেই আমাকে জড়িয়ে ধরবে শক্ত করে। কিন্তু এখন আমি কিছুই করলাম না। একরাশ অস্বস্তি নিয়ে মীরার পাশে বসে রইলাম।
রাত একটা বাজে। বাসের সব লোকজন ঘুমন্ত। মীরা অনেকটা স্বাভাবিক হয়েছে। প্রচুর বকবক করছে মীরা। অতীতের অনেক স্মৃতির রোমান্থন ও করছে। হঠাৎ করে মীরা গম্ভীর হয়ে বলল, “নিলয়, আমার তোমাকে একটা কথা বলতে খুব ইচ্ছা করছে।”
: বলো কি বলবে?
মীরা বিড়বিড় করে বলল, “আমরা কি আর একটা চেষ্টা করতে পারি না?”
আমি হতবাক হয়ে বললাম, “চেষ্টা?!! কিসের চেষ্টা?”
: আমি আবার তোমাকে ফিরে পেতে চাই। রিয়াজের (মীরার স্বামী) সাথে সম্পর্ক শেষ করাটা তেমন কঠিন হবে বলে মনে হয় না। কিন্তু তুমি কি আমাকে মেনে নিতে পারবে?
: তুমি অনেক আবেগপ্রবণ হয়ে কথা বলছ। জীবনটা আবেগে চলে না, মীরা। আমার খুব ইচ্ছা করছে তোমার প্রস্তাবে রাজী হতে। কিন্তু পরিবার, সমাজ তা মানবে না।
: কি এসে যায় পরিবার, সমাজের মানামানিতে? আগে তো তুমি এসব নিয়ে এত ভাবতে না।
: সময় বদলে গেছে, মীরা।
: সময় নয়, নিলয় বদলে গেছে। তুমি কিন্তু বলতে আমি কখনও কোন ভুল করলে তুমি তা মেনে নেবে এবং চেষ্টা করবে শুধরে দিতে।
: অতীতে তোমার অনেক ভুল মেনে নিয়েছি, চেষ্টা করেছি শুধরে দিতে। কিন্তু এখন পরিস্থিতিটা পুরো ভিন্ন। তুমি অন্য একজনের স্ত্রী।
মীরা আমার হাত দুটো শক্ত করে ধরে বলল, ” নিলয় তুমি আমার সুখ, আকাঙ্খা, পূর্ণতা, ভালোবাসা সব। রিয়াজকে কখনই আমি স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পারিনি। আমি সবসময় তোমাকেই জীবনসঙ্গী হিসেবে কল্পনা করতাম। তোমাকে ছাড়া আমার জীবনটা ধূসর। থাক, তোমাকে এ বিষয়ে কোন কথা বলব না। তবে আমি তোমাকে আমার মোবাইল নম্বরটা দিচ্ছি। আমি এক সপ্তাহ খুলনায় আছি। এক সপ্তাহ পর আমি আবার ঢাকা চলে যাব এবং আমার এই সিমটা ফেলে দেব। আর এই এক সপ্তাহ আমি প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি ক্ষণ অপেক্ষা করব যে আমার নিলয় ফোন করবে। ফোন করে বলবে ” মীরা, তুমি চলে এসো। তোমাকে নিয়ে নতুন করে জীবন সাজাব।”
আমি অবাক হয়ে মীরার দিকে তাকিয়ে রইলাম। তাকিয়ে থাকতে থাকতে আমার চোখে নেমে এল এক রাজ্যের ঘুম। ঘন্টা দুয়েক পর বাসের ঝাঁকুনিতে আমার ঘুম ভাঙল। আমি লক্ষ্য করলাম মীরা আমার হাত দুটি শক্ত করে ধরে আমার কাঁধে মাথা রেখে পরম নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে। আহা! বেচারী, এরকম নিশ্চিন্তে হয়ত অনেকদিন ঘুমায় না। আমি ওকে আর জাগালাম না। আমিও অনেকটা নিশ্চিন্ত মনে ঘুমিয়ে পড়তে চেষ্টা করলাম। আমার মনে হতে লাগল আবার যদি অতীতে ফিরে যেতে পারতাম। সব ভুলের অবসান ঘটিয়ে মীরাকে কাছে টেনে নিতাম। আসলে আমারও অনেক দোষ ছিল। মীরাকে ধরে রাখার ব্যাপারে আমার আরও কিছু করার ছিল। কিন্তু আমার মনে হতো যে কেন আমি একাই সব করব, মীরার কি কোন দায়িত্ব নেই? অনেক কিছু ভাবতে ভাবতে আমার ঘুম এসে গেল। ঘুম যখন ভাঙল তখন চারিদিকে ঝলমলে আলো। আমি দেখলাম বাস দাঁড়িয়ে আছে। সকাল নয়টা মতো বাজে। অনেক জ্যাম পেরিয়ে অবশেষে আমরা খুলনা এসে পৌছেছি। আমি আর মীরা নামলাম। মীরা আমাকে ওর মোবাইল নম্বরটা দিল।
হঠাৎ মীরা কিছু বলতে গিয়ে থেমে গেল।
: কি হয়েছে মীরা?
: রিয়াজ আমাকে নিতে এসেছে নিলয়।
আমি একটা লোককে আমাদের দিকে হেঁটে আসতে দেখলাম। তাহলে এ লোকটিই রিয়াজ।
রিয়াজ : মোবাইল অফ ছিল কেন? কখন গাড়ী আসবে কিছুই জানিনা। ঈদের নামাজটাও পড়তে পারলাম না। যতসব রাবিশ।
মীরা : মোবাইলে চার্জ ছিল না।
: চার্জ দিয়ে বেরুতে পারলে না। নাকি ইদানিং চার্জ খাও?
কিছুক্ষণ পর রিয়াজ সাহেব আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, “ইনি কে?”
মীরা : উনার নাম নিলয়। হঠাৎ করেই বাসে দেখা।
: সময়টা তাহলে ভালোই কেটেছে।”
রিয়াজ সাহেব হাঁটতে শুরু করলেন। মীরাও হাঁটতে শুরু করল। মীরার হাতে দুটো বড় লাগেজ। রিয়াজ সাহেব কোন লাগেজেই হাত দিলেন না। মীরা মাথা নিচু করে হাঁটছে। হয়ত ভারী লাগেজের জন্য কিংবা জীবনযুদ্ধে পরাজিত হওয়ার শোকে। মীরা ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে। আমি কিছুক্ষণ মূর্তির মতো দাড়িয়ে রইলাম।
ঈদ শেষ। আমি আজ ঢাকা চলে যাব। সামনে অনেক কাজ। সবকাজই সুন্দরভাবে শেষ করতে হবে। আমি আজ রাতে বাসের দুটো টিকিট কেটেছি। আমি পলাশকে ফোন করে বলেছি যে করে হোক ঢাকায় একটা ছোট বাসা ভাড়া করতে।
আমি পকেট থেকে মোবাইলটা বের করলাম। ফোন করলাম মীরাকে। আমি জানি মীরা নামের মেয়েটি আমার ফোনের জন্য অপেক্ষা করছে। যে ফোনটি হয়ত আবার সব আগের মতো করে ফেলবে। হয়ত আবার নিলয় মীরা থাকবে অনেক কাছাকাছি।