আজকেও প্রহর দাঁড়িয়ে আছে কোচিং এর সামনে।কখন সন্ধ্যা ক্লাস শেষ বের হবে এই অপেক্ষায়।প্রায় ৩০মিনিট অপেক্ষার পরে সন্ধ্যা বের হলো।প্রহর একটু নড়েচড়ে দাঁড়ালো আজকে যে ভাবেই হোক কথা বলতেই হবে সন্ধ্যার সাথে।পাশ দিয়ে যখন সন্ধ্যা চলে যায় তখন বুকের মাঝের ধুকপুকুনি বেড়ে যায়য়।সাহস সব জলের সাথে মিসে যায়।
.
সন্ধ্যা একবার তাকিয়েও না তাকানোর মত চলে যায়।প্রহর নিজের বাইকটা নিয়ে পিছু পিছু যেতে লাগে।বাসার কাছে আসতেই প্রহর একটু দূরে দাঁড়িয়ে পড়ে।না আর সামনে এগোনো ঠিক হবে না।সন্ধ্যা যে মেয়ে রাগের মাথায় মাইর দিয়ে দেয় যদি।
.
এমনি ছিলো প্রহর আর সন্ধ্যার সপ্তাহের তিনটি দিনের রুটিন।যখন সে কোচিং এ যেত প্রহর তাকে ফলো করতো।কিন্তু কেউ কখনো কথা বলেনি।তবুও সন্ধ্যা বুঝতো প্রহর তাকে পছন্দ করে।কিন্তু গাধাটা ছেলে হয়ে বলতে পারছেনা আর মেয়ে হয়ে সে কি করে বলবে।ভালোবাসার কথাটি তো ছেলেদের দিক থেকেই আগে বলা হয়।
.
প্রায় দুই মাস পড়ে…….
.
প্রহর কোচিং ক্লাসে বসে আছে,একটু পর সবাই আসতে লাগল।কিন্তু যেই ক্লাসে ডুকে সবাই প্রহরের দিকে তাকাচ্ছে আর বিড়বিড় করে কিছু বলছে।প্রহর শুধু সন্ধ্যার জন্য এই কোচিং এ ভর্তি হয়েছে।খুব ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট বাসায় টিচার আছে অন্য কোচিং এ এর থেকে হাজার গুন ভালো সেখানে পড়া সত্ত্বেও এখানে ভর্তি হয়েছে শুধু সন্ধ্যাকে একটু কাছ থেকে দেখার আর তাকে ভালোবাসে এই কথাটি বলার আশায়।
.
কিন্তু কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছেনা সবাই তাকে দেখে এমন করছে কেন।একটু পড়েই সন্ধ্যা আসলো,এসেই দেখে তার যায়গায় সেই গাধা রাম ছেলেটা বসা কিন্তু আজকে রাস্তা রেখে ক্লাসে তাও সন্ধ্যার যায়গায় ব্যাপার কি।যাক একটু মজা করা যায় যেহেতু কোচিং এর ভাইয়া এখনো আসেনি।
.
সন্ধ্যা প্রহরের বেঞ্চের কাছে গিয়ে বলল এই ছেলে তুমি ক্লাসে নতুন?তুমি যান না এই ক্লাসের সবার যায়গা ফিক্সড করা।আর কেউ অন্যের যায়গায় বসলে শাস্তি ভোগ করা লাগে।যাও পিছনের সিটে গিয়ে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাক।
.
প্রহর বুঝতে পারে সন্ধ্যার চালাকি,এতটা বোকা সে নয়।প্রহর বলে কোথায় গিয়ে কান ধরবো।সন্ধ্যা পিছনের দিকে গিয়ে বলে এখানে এস।প্রহর ও পিছনের দিকে যায়।ক্লাসের সবাই এদের কাণ্ড দেখছে চুপচাপ।সন্ধ্যা বলে নাও এখন এখানে দাঁড়িয়ে থেকে কান ধরো।
.
প্রহর আর দেড়ি না করে তার সামনে থাকা মানুষটির দুই কান দুই হাত দিয়ে ধরে।একটু শক্ত করেই।সন্ধ্যা লজ্জায় লাল থেকে বেগুনী হচ্ছে।মজা দেখাতে গিয়ে নিজেই এখন মজা হয়ে গেলো।সন্ধ্যা বলে আমার কান না গাধা রাম নিজের কান ধরো।প্রহর আস্তে করে বলে আমি তো সারা জীবন হাতটি ধরেই থাকতে চেয়েছি তুমিই তো বললে কান ধরতে।
.
সন্ধ্যা: ছাড়ো বলছি লাগছে কিন্তু…….
.
প্রহর: ছাড়তে পাড়ি আগে বলো ভালোবাসি?
.
সন্ধ্যা: আচ্ছা ভালোবাসি……….
.
প্রহর কান ছেড়ে দিলো।সন্ধ্যা আবার বলে না বাসি না মুখ ফসকে বের হয়ে গেছে।এই বলেই নিজের যায়গায় চলে যায়।প্রহর ও আর কয়েকটা ছেলের সাথে বসে।অনেকের সাথে পরিচিত হয় ক্লাসের।চাচা এলাকার কমিশনার হওয়ার কারণে প্রহরের সাথে কেউ কখনো ঝামেলায় যাবেনা তা সে জানে।
.
সন্ধ্যা ক্লাসে বসে চিন্তা করে ঈশ ক্যানো যে বলতে গেলাম।আর গাধা রাম কান ধরে আমার কান দুটি লাল করে দিয়েছে।এর শাস্তি প্রেমের পরেই বুঝাবো।এই ধুর আমি আবার কি সব চিন্তা করছি।ওই গাধাকে ভালোবাসবো ক্যানো?কলম ঘুরাতে ঘুরাতে কথা গুলি মাথার মধ্যে চিন্তা করছে সন্ধ্যা।
.
ক্লাস শেষে সন্ধ্যা যাচ্ছে প্রহর আজকে সাহস করেই ডাক দেয়।সন্ধ্যা বলে দেখ আমি ব্যথা পেয়ে ওই কথা বলেছি আমি তোমাকে ভালোবাসি না।প্রহর বলল সত্যি ভালোবাসো না।আচ্ছা তোমার নাম্বারটা দেও যদি নাম্বার না দেও বুঝবো আমায় ভালোবাসো আর নাম্বার দিলে বুঝবো ভালোবাসো না।এখন ই পরীক্ষা হয়ে যাক।
.
সন্ধ্যা বললে আচ্ছা দিচ্ছি নাও তবে আমি তোমায় ভালোবাসি না এইটাই সত্য।প্রহর কে নাম্বার দিলো 01717….. প্রহর বলল কি আর করা যখন ভালোবাসো না চলেই যাচ্ছি তোমার নাম্বার নিয়ে।প্রহর চলে যায় সন্ধ্যাও বাসায় যায়।
.
রাত তখন ৮:১৪ এর একটু বেশি……..
.
সন্ধ্যার ফোনে এসএমএস এর রিংটোন বেজে উঠলো।বাংলাতে একটি এসএমএস লেখা ঠিক এমন।
.
আচ্ছা তুমিত আমায় ভালোবাসো না,সত্যি যদি ভালো না বাসো তবে এখন বেলকোনিতে আসবে আর ভালোবাসলে আসার দরকার নেই।
.
সন্ধ্যা বুঝলো আমি কাকে গাধা রাম বলি,এ দেখি মস্ত বড় পাঁজি সাহেব।আমাকে ব্ল্যাক মেইল করছে।ওকে বেলকোনিতে গিয়ে দেখি কি হয়।প্রহর দাঁড়িয়ে আছে।কিন্তু এত অন্ধকার যে রাস্তার ওপার দেখাই যায়না।সন্ধ্যা এসএমএস দেয় প্রহর কে।কই আমি বেলকোনিতে কি হয়েছে?
.
প্রহর এসএমএস দেয় ফোন দিচ্ছি পিক করো।এসএমএস টা পড়ার সাথে সাথেই প্রহরের কল আসে সন্ধ্যার ফোনে।একটু ভয় ভয় করছে ফোন ধরতে।রিসিভ করতে তবুও করলো।
.
প্রহর: আমাকে দেখা যায়?দেখতে পারছো রাস্তার এপারে।তোমাদের যে এলাকা একটুও রোড লাইটের ব্যবস্থা নেই।
.
সন্ধ্যা: এলাকার দোষ দিবে না নিজে যে কালো তা বলতে পারো না?
.
আমি কালো হুম ভালোই বলেছো।যাক দাড়াও তোমাকে আমাকে দেখানোর ব্যবস্থা করি।
.
একটু পরেই ১৪/১৫ টা ফোনে একবারে এসএমএস এর রিংটোন এর সাথে সাথে আলো জ্বলে উঠে।তার কয়েক মিনিট পরেই বাইক স্টার্ট এর শব্দ ডজন খানিকের বেশি বাইক এক বারে স্টার্ট দিলে যা হয় আর কি।বাইকের সামনের আলোতে সন্ধ্যাদের বাসার সামনের ঘুটঘুটে অন্ধকার রাস্তা একেবারে আলোকিত।
.
প্রহর ইশারা করে সন্ধ্যাকে নিচে আসতে কিন্তু সন্ধ্যা বলে না।তবুও প্রহরের জোড়ের কারণে নিচে যায়।মনে মনে যে সেও প্রহর কে ভালোবেসে ফেলেছে তা কি আর প্রহরের বুঝতে বাকি আছে?সন্ধ্যাদের বাসায় আজকে কেউ নেই সবাই চাচীর বাসায় গিয়েছে।এই জন্য ভয় কে জয় করে অন্ধকারের মাঝে বাইকের আলোয় আলোকিত রাত্রিতে দাঁড়িয়ে আছে জনমানব শূন্য গলির রাস্তার মাঝে সন্ধ্যা প্রহর।
.
প্রহরের সব বন্ধুরা চারিদিকে থেকে গোল হয়ে তাদের দিকে বাইকের আলো ছড়াচ্ছে।আর প্রহরের হাত পিছনের দিকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।একটু পড়েই হাঁটু ভাজ করে সন্ধ্যাকে প্রপোজ করে।সেই অন্ধকার রাতের মাঝে বাইকের আলোতে সন্ধ্যাকে সত্যি সন্ধ্যা পরীর মতই লাগছিলো।প্রহরের প্রপোজ স্টাইল আর বাইকের আলো দিয়ে তাদের চারিদিক থেকে ঘিরে রাখা।একটু পর পর আলো গুলি কমে আসা আবার বেড়ে যাওয়া সব কিছুই ভালো লাগে সন্ধ্যার।সব থেকে ভালো লাগে গোলাপ হাতে গাধা রামটাকে রাস্তার মাঝে বসিয়ে রেখে।
.
.
সন্ধ্যা একবার হাত দিয়ে গোলাপ নিতে যায় আবার হাত সরিয়ে ফেলে।ফাজলামি যখন খুব বেশি হয়ে যায় প্রহর দাঁড়িয়ে এক টানে সন্ধ্যাকে নিজের দিকে নিয়ে আসে।ঘার ঘুরিয়ে গোলাপ টা চুলের ভিতর গুজে দেয়।সন্ধ্যা ভয়ে কাঁপছে নাকি লজ্জা তা নিজেও জানেনা।এতটা লজ্জা পেয়েছে যে চোখ তুলে প্রহরের দিকে তাকাতেও সাহস পাচ্ছেনা।
.
প্রহর সন্ধ্যার গাল দুটি ধরে মুখটিকে উপরের আলতো করে তুলে জিজ্ঞেস করে?ভালোবাসো এইবার অন্তত একটু বলো?সন্ধ্যা প্রহরকে জড়িয়ে ধরে বলে হুম ভালোবাসি আমার গাধা রামটাকে খুব ভালোবাসি।এই বলেই কান্না শুরু করে দেয়…..এই চোখের জল যে শুধু ভালোবাসার কান্না।যেই কান্নার একটাই আশা দুইজন দুজনকে সারা জীবনের জন্য কাছে পাওয়ার।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা