–রাত প্রায় ১টার কাছাকাছি বাসার ছাদে বসে আছি..! হঠাৎ করে চোখের কোন থেকে আচমকাই দু ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো ! একটা সিগারেট ধরিয়ে টানছি। আজ খুব মনে পড়ছে অহনার কথা…! এক বছর আগে ওর সাথে আমার ব্রেক-আপ হয়েছে । অহনা খুব ভাল নিখুঁত অভিনয় করতে জানে ঠিক যেমনটা আমার সাথে করেছিলো। ফিরে গেলাম অতীতে একবছর পূর্বের কথা ! আমার সকালে ঘুম থেকে উঠে ফেসবুকে না ডুকলে দিনটাই যেন অপূর্ণতা রয়ে যায়। লগইন করেই দেখলাম ”অহনা খান” Want to be your friend .. আমার খুব ফ্রেন্ড বাড়ানোর সখ তাই ফেইক না আসল না ভেবেই রিকুটি এক্সেপ্ট করি.! অতঃপর ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে অফিসে যাওয়ার জন্যে রেডি হলাম …। সেদিন রাতে খাওয়াদাওয়ার পর ফেসবুকে লগইন করে News feed এ স্টোরি পড়ছি হঠাৎ অহনা নক করলো ।
–হাই” কেমন আছেন?
–ভালো’ আপনি ?
–উমম” ভালো আছি.. আচ্ছা আপনার আসল নাম কি?
–কেন দেখতেই তো পাচ্ছেন ”রায়হান” সাথে আছে একটি জলজ্যান্ত প্রফাইল পিক। আপনি কি কানা নাকি? ডাক্তার দেখান॥(সাথে একটা হাসির ইমু দিলাম)
–স্যরি ! আসলে আজকাল অনেকেই তো ভার্চুয়াল লাইফে নিজের আত্মপরিচয় গোপন রাখে তাই বললাম।
–হুমম আপনার এ্যাবাউটে দেখলাম আপনার বাসা ঢাকা আজিম পুর ১০ নাম্বার এইটা কি রিয়েল..? আমি থাকি ঢাকা মিরপুর ১০ নাম্বার নো ফ্লপ ।
–(ওপাশ থেকে অহনা একটি হাসির ইমু দেয়) হুম আমার বাসা আজিম-পুর নো লাই। কেন মিট করতে চান নাকি…?
–হুম না আপনার সাথে আজই প্রথম পরিচয় দেখা করতে চাইবো কেন..? জেনে রাখলাম ভবিষ্যতে কাজে আসবে ।
–হুম ভালো কিসে পড়েন আপনি .? আমি ঢাবিতে অনার্স সেকেন্ড ইয়ার স্টুডেন্ট ।
–আমি মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি এখন একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে ছোট খাটো জব করি এই আর কি..!
.
এইভাবেই চলতে থাকে তাদের ফেসবুক চ্যাট দুজনেই এখন আপনি থেকে তুমিতে চলে গেছে ! হঠাৎ একদিন রায়হান অহনার ছবি চাইলো অহনা দিতে নারাজ সে বলে..!!
–ওরে বাবা মাফ চাই ! আমি দেখতে পেত্নীর মত একবার দেখলেই এক সপ্তাহ আর বিছানা থেকে উঠতে পারবে না জ্বর আসবে তোমার ।
–ও তাই নাহ ? কিন্তু আমি ভূত পেত্নী ভয় পাইনা একবার দিয়েই দেখোনা। অতঃপর অহনা বাধ্য হয়েই তার কয়েকটি ছবি দিলো ! হুম মেয়েটি দেখতে তেমন একটা ফর্সা নয় শ্যাম- বর্ণের চোখ দুটো টানা টানা মায়াবী চেহারা ।
–ওয়াও অহনা তোমার মত এমন কিউট পেত্নী তোঁ আমি জীবনেও কোনদিন দেখিনি আজ প্রথম দেখলাম আমি সত্যি মুগ্ধ তোমার রূপে … তুমি সেই রূপ কথার কিউট পেত্নী।
–বাব্বা পাম তো ভালোই মারতে পারো। কাছে থাকলে তোমার কান দুটো টেনে ছিঁড়তাম ।
–এ্যামা ছিঃ ছিঃ পাম দিব কেন.? যা বললাম সত্যি এক বিন্দু ও মিথা নয় । আচ্ছা একটা কথা বলি রাখবে.?
–কি কথা বলো……
— আমি তোমাকে ভার্চুয়াল লাইফে নয় রিয়েল লাইফের ভাল একজন বন্ধু হিসেবে পেতে চাই, তোমার ফোন নাম্বারটা দিবে প্লিজ..?
–ওকে পাগল দিবো । অহনা তার ফোন নাম্বার দেয় শুরু হয়ে যায় দুজনের ফোনালাপ । পাগল করা মিষ্টি কন্ঠের অধিকারী অহনা রায়হান যত শুনছে ততই মুগ্ধ হচ্ছে । সেদিন রাতে বার বার শুধু অহনার ছবি গুলো আর ওর কথা ভাবতে ভাবতেই পুরো রাত শেষ হয়ে যায় এক মূহুর্তের জন্যেও দু চোখ এক করতে পারেনি । তবে কি আমি অহনার প্রেমে পড়ে গেছি হবে হয়তো । ধ্যাৎ কি যা তা ভাবছি । এইসময়ে মা এসে জানালার পর্দাটা সরাতেই সকালের সোনালী রোদ এসে চোখে পড়ে । মায়ের সামনে বসে রায়হান বিড়বিড় করে বলতে লাগলো ……
–অহনা আই লাভ ইউ ..! আমি তোমার প্রেমে পড়ে গেছি লাভ ইউ সোঁ মাচ । মা বাম পাশের কান ধরে জোরে মুচর দিলো আমি বাস্তবে ফিরে আসলাম। লজ্জায় বিছানা ছেড়ে এক লাফে উঠে চলে গেলাম বাথরুমে । সেদিন বিকেলে আবার ফোনে কথা হলো অহনার সাথে ওর কন্ঠ যত শুনছি ততই পাগল হয়ে যাচ্ছি ।
–অহনা তোমার সাথে দেখা করতে চাই প্লিজ না করবা না ।
–আমার ও তোমার সাথে দেখা করতে ইচ্ছে করছিলো । তবে এই ব্যস্ত শহরের কোনো কফি শপ বা রেস্টুরেন্টে নয় । আমার নদী দেখতে খুব ভাল লাগে সেখানে নিয়ে যাবে..?
— হুম অবশ্যই নিয়ে যাবো তুমি আগামীকাল চলে এসো পরে আমি তোমাকে ফোনে সব বলে দিবো ।
.
শহরের অদূরে নদীর পারে রায়হান ২ ঘন্টা ধরে বসে অপেক্ষায় আছে অহনার আসার নাম গন্ধ নেই । পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেটটি বের করে একটি সিগারেট ধরানোর সাথে সাথেই অহনা এসে হাজির। কালো রঙের সালোয়ার কামিজ পড়া বেশ সুন্দর লাগছে ওকে ।
–ওয়াক থু ছিঃ ছিঃ ছিঃ রায়হান তুমি সিগারেট খাও ।
–আরে বাবা স্যরি স্যরি মাঝে মধ্যে খাই । ভীষন রাখ উঠলে .. তুমি লেট করেছো তোঁ তাই আর কি!
–কিইই আমি লেট করেছি এইটুকু ই সহ্য করতে পারোনা.. ( চোখ মুখ লাল করে )
–ওকে ওকে কান ধরলাম আর হবেনা ।
অহনা ফিক করে হেসে দিলো নদীর পারে ঠান্ডা হিম বাতাস বৈছে রায়হান এমনেই একটু নার্ভাস লাগছিলো ঠান্ডা বাতাসে শরীরে কাপুনি ধরে গেলো। শুধু অহনার চোখের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রায়হান কিছুই বলছেনা। অহনা বিরক্তির সুরে বলে উঠলো…..
–ঐ গাধা এইভাবে তাকিয়ে কি দেখো ? তুমি না বলেছিলে কি যেন বলতে চাও বলো..
–না ইয়ে মানে … তোমার কাছে পানি আছে শ্যাম বালিকা..?
–অহনার ব্যাগ থেকে পানির বোতল টি বের করে দিতেই ডকডক করে পুরো হাফ লিটার পানি রায়হান শেষ করে ।
–এইবার বলো কি বলবে..?
–কথাটা শুনে গলা শুকিয়ে শক্ত কাঠ । রায়হান আবার পানি চাইলো । শ্যাম বালিকা পানি দাও ।
–( অহনা রেগে গিয়ে) তোমাকে আর পানি দেওয়া হবেনা যা বলতে চাও এক্ষুনি বলো নইলে কিন্তু খবর আছে..!!
–আচ্ছা তোমার চোখ দুটো এত মায়াবী কেন..?
— ( অহনা চেচিয়ে বললো) ঐ গাধা উল্লুক কোথাকার কথা কাটানোর চেষ্টা করবানা । যা বলবার বলো নইলে কিন্তু গেলাম ।
–না মানে (পকেট থেকে একটি লাল গোলাপ বের করে) আ.. আ.. আই লাভ ইউ অহনা..!
— (কথাটা শুনে ফুলটা হাতে নিয়ে খিলখিল করে হেসে উঠে অহনা) লাভ ইউ টু গাধা । এই কথাটা বলতে এতক্ষণ লাগে..! আমি ও তোমাকে ভালবাসি বাট আমি চেয়েছিলাম তুমিই আমাকে প্রথম বলো ভালবাসি ।
–কথাটা শুনে অনেকটা প্রশান্তি ফিরে পেল রায়হান । তারপর অনেকটা সময় দুজনে বসে গল্প করে সন্ধ্যা হয়ে যায় । রায়হান অহনাকে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে আসে । আর এইভাবেই প্রতি মাসে দুই একবার দেখা হয় ওদের । তাদের দুজনের ভালবাসা হয়ে উঠে গভীর থেকে অতি গভীর । রায়হান একটু পাগল আর চঞ্চল টাইপের ছেলে অহনা ও রায়হানের চেয়ে কোনো অংশে কম যায়না । একমাস পর অহনার মধ্যে পরিবর্তন দেখা গেলো রায়হানের ফোন সে রিসিভ করেনা ঘন্টার পর ঘন্টা অনলাইনে থেকেও রায়হানের sms এর কোনো রিপ্লাই করেনা । রায়হান কেঁদে বালিশ ভিজায় কিন্তু এই কান্নার সুর ওপাশের অহনার কানে পৌঁছায়না । শেষমেষ ওর ভার্সিটিতে গিয়ে অহনার সামনে দাড়িয়ে রায়হান…
— (রায়হানকে দেখে অবাক হয়ে) তুমি এখানে কেন?
–তুমি আমাকে এইভাবে ভুলে থাকতে পারলে অহনা..?
— কিসের জন্য ভুলে থাকবো.. তুমি এখন যাও প্লিজ ।
–না আমি যাবো না আজ তোমাকে বলতেই হবে আমার কি অপরাধ !
–ঠিক আছে ভার্সিটির পেছন দিকটায় চলো । মাথাটা নিচু করে অহনা রায়হানের সামনে দাড়িয়ে কেঁদে দিলো ।
— স্যরি রায়হান আমি তোমার সাথে এমনটা করতে চাইনি .. আমার এংগেইজমেন্ট হয়ে আছে আর এক মাস পরেই আমার বিয়ে । আমি ভেবেছিলাম তুমি আমার সাথে কিছুদিন টাইম পাস করে অন্য আরেকটি মেয়েকে বেছে নিবে গার্লফ্রেন্ড হিসেবে কিন্তু আমার সে ধারণাটা ছিলো ভুল । তুমি যে আমাকে এতটা ভালবাসবে তা আমি কল্পনায় ও ভাবিনি কোনোদিন । স্যরি রায়হান পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও বাই বলে চলে যাচ্ছে অহনা একবারও পিছন ফিরে তাকায়নি ।
–কথাটা শুনে মাটিতে বসে পড়ে রায়হান আকাশটা যেন ভেঙ্গে পড়ছে তার মাথায় । দু চোখে সব অন্ধকার চারদিকটা যেন অন্ধকারে ঢেকে যাচ্ছে তার সর্গমত্ব পৃথিবীটা যেন আজ নরকে পরিণত হলো । বাড়িতে এসে বিছানায় শুয়ে পড়ে এক সপ্তাহ সে সূর্যের আলো দেখেনি শুধুই কাঁদে আর কাঁদে । বাবা মায়ের শান্তনায় কিছুটা শক্ত করে নিজেকে । আজ অহনা স্বামীর ঘরে দিব্যি সুখে আছে শুধু সুখী হতে পারেনি রায়হান প্রচুর ঘুমের ঔষধ খায় আর সিগারেট তো তার নিত্য সঙ্গী। রায়হান আরেকটা সিগারেট ধরিয়ে টানছে আর চোখের কোনে থেকে অশ্র কণা গুলো টপটপ করে মাটিতে পড়ছে !! নিজে নিজেই আচমকা অট্টহাসি দিয়ে বলতে লাগলো…….
.
নিকোটিন সামান্য সময়ের জন্য হলেও ভুলিয়ে দেয় “তুমি কোন কালেই আমার ছিলে না”…..!
“আর কোন কালে হবে ও না”……!
দূরে ছিলে দূরেই রয়ে গেলে….!
হঠাৎ করেই এসেছিলে আমার জীবনে অভিনেত্রী হয়ে কিছুদিন অভিনয় করে, কিছু ভুলতে না পারা কষ্ট উপহার দিয়ে হঠাৎ দূরে সরে গেলে ।
হঠাৎ করেই বিদ্যুত্ চমকে মুষুল ধারে বৃষ্টি নামলো ! বৃষ্টির জলের সাথে সাথে রায়হানের চোখের জল গুলো মিলিয়ে যাচ্ছে ॥
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা