আমি প্রকৃতি… বাবার খুব আদরের কন্যা… এক কথায় বাবার রাজকন্যা… আমি মা ছোটো বোন আর বাবাকে নিয়ে আমাদের ছোট্টো একটা হ্যাপি ফ্যামিলি….আমি ইন্টারে পরি ..আর আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু হলো রাজু…
ছোটো বেলা থেকেই আমরা খুব ভালো বন্ধু ….দুজনে একসাথে হলে আমাদের আর কিছু চাইনা… সেই ছোটোবেলা থেকে আমরা একসাথে … আর কারো কখনো প্রয়োজন পরেনি আমাদের লাইফে….দুজনেই দুজনের জন্য যথেস্ট ছিলাম… এভাবেই হাসি মজা আর আনন্দে চলছে আমাদের জীবন….
-> দোস্ত কি করিস রে….(রাজু)
-> তেমন কিছু নারে তুই..(আমি)
-> আমিও বসে আছি ……. চল আজ বিকেলে একটু দেখা করি…(রাজু)
-> সকালে না ক্যাম্পাসে দেখা হলো.. (আমি)
-> ধুরো হোক তুই আসবি কিনা তাই বল ….(রাজু)
-> ওকে আসবো কিন্তু কই মিট করবি???(আমি)
-> কই আবার নদীর পারে ….(রাজু)
-> তো বাসায় আয় একসাথে যাই….(আমি)
-> ওকে রেডি থাকিস বিকেলে…… (রাজু)
-> হুম.. আচ্ছা রাখি তাহলে…..(আমি)
-> হুম …আর শোন …
-> হুম বল ….
-> তোর ঐ নীল রংয়ের ড্রেসটা পরে আসিস….
-> আচ্ছা …
-> হুম ওকে দোস্ত বাই বিকেলে দেখা হচ্ছে …
-> হুম.. বাই..
এতোক্ষন যার সাথে কথা বললাম এই হলো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড রাজু…ওর মাথায় হঠাত হঠাত এমন অদ্ভুত খেয়াল চাপে….. আর ওর এই পাগলামো গুলোকেই আমি খুব ভালোবাসি ওকেও ভালোবাসি কিন্তু কখনো বলতে পারিনি…..আমি জানি রাজুও আমাকে ভালোবাসে কিন্তু বলেনা….. সব সময় সব কথা অবশ্য মুখে বলতে হয়না এমনি বোঝা যায়….
বিকেলে ওর কথা মতো নীল রংয়ের জামাটা পরলাম… সাথে মেচিং দুল ……হাতে হালকা কয়টা চুরিও দিলাম…. হালকা গোলাপি রংয়ের লিপস্টিক.. আর কপালে ছোট্ট একটা নীল টিপ….. রেডি হয়ে বসে আছি পাগলটার জন্য …. কিছুক্ষন পর রাজু আসলো…… তারপর বেরিয়ে পরলাম দুজনে মাকে অবশ্য আগেই বলে রাখছিলাম ….. ওর সাথে কোথাও যেতে চাইলে বাড়ি থেকে কখনো বাধা দেয়নি ….তারপর রাজুর বাইকে করে চলে আসলাম নদীর পারে আমাদের দুজনরেই এ জায়গাটা খুব প্রিয়… দুজনে বসে আছি নদীর পারে…..
-> ঐ তোকে না বলছি আমার সাথে বের হলে চুল বাধবি না……(রাজু)
-> কেন না বাধলে তো তোর বাইকের হাওয়ায় চুলের বারোটা বাজবে…..(আমি)
-> বাজলে বাজুক তবুও বাধতে পারবি না….(রাজু)
-> ইস আমার এতো শখের চুল নস্টো হয়ে গেলে ….(আমি)
-> উফ আচ্ছা বাইকে যাওয়ার সময় বাধিস এখন খোল..(রাজু)
-> আচ্ছা বাবা খুলছি….. (আমি)
-> এইতো এখন কত্ত সুন্দর লাগছে আর এতোক্ষন মাথাটারে কাকের বাসা বানায় রাখছিলি….
-> হুম বলছে তোরে ….
-> হুম বলছেই তো…
-> ছাই…….
-> ছাই না যেদিন হারিয়ে যাবো সেদিন বুঝবি…..
-> কি বললি তুই আবার বলে দেখ খুন করে ফেলবো….
-> আচ্ছা আমার ভুল হইছে এবার তো গলাটা ছার মরে যাবো তো…
-> হুম যা ছারলাম…
তারপর দুজনে আরো কিছুক্ষন ওখানে বসে আড্ডা দিলাম সন্ধ্যার সুর্যাস্ত দেখলাম তারপর ফুচকা খেয়ে দুজনে বাড়ি ফিরলাম….
বাসায় ফিরে যা শুনলাম তাতে তো আমি পুরো বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি আমার বিয়ে তাও সামনে সপ্তাহের 25 তারিখ …… বাবার কোন বন্ধুর ছেলে বিদেশে থাকে বিয়ে করার জন্য দেশে আসছে ….. বিয়ে করে আবার চলে যাবে ……চিনি না জানি না এমন একজনকে কিভাবে জীবন সঙ্গী করবো তাছারা রাজুকে ভালোবাসি আমি…. কি করবো কিছু বুঝতে না পেরে রাজুকে কল দিলাম ……
-> হ্যা আমি পৌছে গেছি ঠিকমত (রাজু)
-> দোস্ত আমার তো সর্বনাস হয়ে গেছে..(আমি)
-> কেন কি হইছে….
-> আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলছে বাবা
-> কি বলিস কবে এটাতো সুখবর
-> 25 তারিখ
-> ওহ ভালোই হলো জমিয়ে খাওয়া যাবে ..
-> কি তুই থাক তোর খাওয়া নিয়ে …….
অনেকটা রাগ করে ফোনটা কেটে দিলাম…কি করবো কিচ্ছু বুঝতে পারছিলাম না ….এভাবেই কেটে গেলো আরো কয়েকটা দিন …….দেখতে দেখতে আমার বিয়ের দিন চলে আসলো …..এর মধ্যে রাজুর সাথে আর কথা হয়নি …..
বিয়ের দিন আমাকে খুব সুন্দর করে সাজানো হলো ….আমি কনের সাজে বসে আছি কিন্ত মনে শান্তি নেই কিছুক্ষনের আমার ভেতরের অস্থিরতা বাড়ির সবার মধ্য দেখতে পেলাম ….শুনলাম যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছিলো সে নাকি বিদেশ থেকে বউ নিয়ে ফিরেছে….বাবা পরিবারের সম্মানের জন্য একজনের সাথে বিয়ে দিচ্ছে আমি আর কাউকে কিচ্ছু জিগেস করিনি….
যথা সময়ে বিয়ে শেষ হয়
আমি আমার বাসর ঘরে বসে আছি..কিন্তু ঘরটা খুব চেনা লাগছে .. আরে এটা তো রাজুর ঘর ..
-> কিরে সাজানো পছন্দ হয়েছে…
-> তুই …তারমানে আমার তোর সাথে বিয়ে হয়েছে…
-> হুম …কত কাঠখর পোরাতে হলো তোর বিয়েটা ভাঙতে…
-> মানে সব তোর কাজ….কিন্তু কেনো করলি এমন
-> ভালোবাসি যে…
-> আগে বলিস নি কেনো ?
-> ভয়ে
-> আজ ভয় করেনি
-> না আজ ভয় করলে তো চিরোদিনের মত হারিয়ে ফেলতাম..খুব ভালোবাসি তোকে
আমি রাজুকে জরিয়ে ধরে আছি আজ আমাদের অব্যক্ত ভালোবাসা পুর্নতা পেলো….