শুভ্র ও রোদেলা দুজন দুজনকে খুব ভালোবাসতো। প্রায় অনেক বছর রিলশনের পর তারা বিয়ে করে। খুব ভালোই কাটছিলো ওদের দিনগুলো। হাসি,
ঝগরা, রাগ, অভিমান, খুনসুটি লেগেই থাকতো। শুভ্র বিজনেস করতো আর রোদেলা ছিল ডাক্তার। তবুও হাজারো ব্যস্ততার মাঝে তারা দুজন দুজনকে ঠিকই সময় দিত।
এভাবে কেটে গেল একটি বছর………
ধীরে ধীরে শুভ্র কেমন পরিবর্তন হতে লাগলো। রোদেলাকে দেখতে পারতো না। অবহেলা করতো। রোদেলা এর কারণ জানতে চাইলে বলতো, ব্যস্ত থাকার কারণে তেমন সময় দিতে পারেনা। রোদেলাও তাই বিশ্বাস করে নেয়।
শুভ্রের ফোন প্রায় ওয়েটিং পেতো, ঘরে খেতোও না, কথাও বলতো না রোদেলার সাথে। রোদেলার আর বুঝতে বাকি রইলো না তার স্বামী এখন আর তাকে নয় অন্য কাউকে ভালোবাসে। তবুও রোদেলা কিছু বলেনা এই আশায় যে, একদিন শুভ্র ঠিক তার ভূলটা বুঝতে পারবে। অন্ধ বিশ্বাস ছিল ছেলেটার প্রতি।
হ্যাঁ একদিন ঠিকই শুভ্র রোদেলাকে অন্ধ প্রমাণ করে দিলো…
একদিন রাতে শুভ্র, রোদেলাকে ডেকে যা বললো তা শোনার জন্য রোদেলা প্রস্তুত ছিলনা। তবে অস্বাভাবিক ও কিছু ছিলনা।
:- দেখো রোদেলা, আমি আর তোমার সাথে থাকতে পারবোনা। এই সম্পর্কটাকে আমি আর টেনে নিয়ে যেতে পারবোনা। তাই আমি ডিভোর্স চাই। (শুভ্র)
রোদেলা কিছুই বললোনা শুধু কৃত্রিম একটা হাসি দিলো।
পরেরদিন,,
:- ডিভোর্সের আগে আমি তোমার কাছে একটা জিনিস চাই, দেবে? এইটাই শেষ চাওয়া। (রোদেলা)
:- কি চাও (শুভ্র)
:- বেশি কিছুনা। শুধু একটা দিন, কিছু সময় চাই।
শুভ্রও কি ভেবে যেন রাজি হয়ে যায়। হয়তো শেষ চাওয়া তাই!
পরেরদিন তারা সেই চিরচেনা জায়গাটিতে যায়, যেখানে তারা প্রতি সপ্তাহে ঘুরতে যেতো। সেখানে কিছুক্ষণ ঘুরে তারা সন্ধ্যার সময় বাড়িতে রওনা দিল। রিক্সা হাসপাতালের সামনে যেতেই রোদেলা, শুভ্রকে বললো..
:- তুমি একটু দাঁড়াও আমি আসছি
:- কোথায় যাও?
:- হাসপাতালে
:- কেন?
:- একটা পেশেন্টকে দেখেই চলে আসবো।
:- আচ্ছা যাও
কিছুক্ষণ পর রোদেলা হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসে। বাসায় পৌঁছানোর পর খেয়ে দেয়ে শুভ্র ঘুমিয়ে পড়ে। আর রোদেলা বেলকোনিতে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছে আর কি যেন ভাবছে! প্রায় ১ ঘন্টা পর রোদেলা রুমে গিয়ে শুভ্রের পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। ড্রিমলাইটের আবছা আলোয় শুভ্রকে দেখছে। খুব কষ্ট হচ্ছে রোদেলার। চিৎকার দিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে কিন্তু পারছেনা, যদি শুভ্রের ঘুম ভেঙ্গে যায়!
রোদেলা শুভ্রের কপালে, গালে, ঠোঁটে আলতো করে চুমু দেয়। এরমধ্যে রোদেলার অসস্তি লাগা শুরু হয়ে যায়। কেমন যেন তার দম বন্ধ হয়ে আসছে। রোদেলা শুভ্রের পাশে শুয়ে পড়ে। শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে আর কাঁদতে থাকে। কান্নার শব্দে শুভ্রের ঘুম ভেঙ্গে যায়। বুঝতে পারে রোদেলার কান্নার কারণ। কিন্তু কিছুই বলতে পারছেনা।
তখন রোদেলাই বললো,,
:- আমি কি তোমার বুকে শেষবারের মত মাথা রেখে ঘুমোতে পারি?
:- হুম
রোদেলা শুভ্রের বুকে মাথা রাখে আর শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। কিছুক্ষণ পর রোদেলার নিঃশ্বাস আর শোনা যাচ্ছে না। কেমন নিঃস্তেজ হয়ে গেছে শরীরটা ছেড়ে দিয়েছে।
শুভ্র রোদেলাকে অনেক ডাকে, কিন্তু ততক্ষণে মেয়েটি না ফেরার দেশে চলে যায়। শুভ্র কি করবে বুঝতে পারেনা। হাসপাতালে নিয়ে যায় রোদেলাকে। কিন্তু ততক্ষণে রোদেলা তো আর নেই! হাসপাতালে ভর্তি করে শুভ্র বাসায় আসে টাকা নেওয়ার জন্য। হঠাৎ শুভ্রের চোখ যায় বেলকোনিতে। সেখানে অনেকগুলো ওষুধের খোসা আর পানি দেখতে পায়।
শুভ্রের আর বুঝতে বাকি রইলো না, রোদেলার হাসপাতালে যাওয়ার কারণ। বুঝতে পারে ঘুমের ওষুধ খেয়েছে।
টেবিলে একটা চিঠি পায়, সেখানে লেখা ছিল,
শুভ্র,
তুমি আমাকে এতটা স্বার্থপর কি করে ভাবলে বলো তো? তোমাকে ছাড়া আমি কি করে বেঁচে থাকতাম। আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসোনা। কিন্তু কি করব বলো, আমি তো তোমাকে ভালোবাসি। তুমি ডিভোর্স চেয়েছো কিন্তু এইটা তো আমার পক্ষে সম্ভব না। তুমি আমার সাথে সুখি নও। তাইতো তোমায় চিরদিনের জন্য সুখী করে আমি না ফেরার দেশে চলে গেলাম, যেখান থেকে আমি চাইলেও আর ফিরে আসতে পারবোনা। তোমাকে আর জ্বালাবোনা। অনেক ভালো থেকো তুমি অনেক।
আমি তোমাকে সত্যিই অনেক ভালোবাসি।
চিঠিটা পড়ার পর, শুভ্রের বুকে মনে হয় কেও তীর ছুড়ে মারলো, চোখ দিয়ে পানি পড়ছে! কিন্তু কেন? শুভ্রের তো এখন ভালো থাকার কথা। কিন্তু কেন পারছেনা? খুব কষ্ট হচ্ছে তার, গায়ে যেন শক্তি পাচ্ছেনা।
অনেক কষ্টে শুভ্র হাসপাতালে পৌছায় আর রোদেলাকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কান্না করে আর বলে, কেন চলে গেলে এভাবে? একটা সুযোগও দিলেনা আমায়! প্লিজ ফিরে এসো। ভালোবাসি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা