ইফতারি করার পর আব্বু ক্লান্ত হয়ে ঘুমোচ্ছিলো,,,,,
আমি আব্বুর রুমে গিয়ে,
~আব্বু ২০০০ টাকা দিবা??
মনে হয় শুনতে পায়নি,,,
তাই আবারো বললাম,আর একটু জোরেই বললাম,,,,
~আব্বু দিবা??
~কি লাগবে??
~২০০০ টাকা,,,
~আমার পকেট থেকে নিয়ে নে,,,,
কিন্তু আব্বু কোন প্রশ্নই করলো না,,,কি করবি?কেনো লাগবে,,,,?
আম্মু হলে অবশ্যই বলতো, “কি করবি??”আর ২০০০ তো কখনোই দিতো না,,,,খুব বেশি হলে ২০০দিতো,,, কারণ একজন মায়ের তো অনেক কিছু হিসেব করেই চলতে হয়,,,,
:
অতঃপর আমি আব্বুর পকেট থেকে টাকা নিতে গেলাম,,,
কিন্তু টাকা নিতে গিয়েই আব্বুর পুরোনো মোবাইলটার দিকে নজর গেলো,,,,,
সেই ৩বছর আগের কেনা তাও আবার সেকেন্ডহ্যান্ড,,,,
মোবাইলটা একটু ঘাটাঘাটি করছিলাম,,,,
পুরনো সেই সাপ গেমটা খেলতে লাগলাম,,,
কিন্তু একি!!২বাটন টা তো কাজই করে না,,,তাই হেরে গেলাম,,,,
তাহলে আব্বু সবার সাথে কথা বলে কিভাবে??
অথচ সেই আব্বুই আমাকে কিছুদিন আগে একটা এন্ড্রয়েড ফোন কিনে দিলো,,,,কারণ, পুরনো মোবাইলে আমার চলবে না,,,,,তাহলে আব্বুর চলে কিভাবে????
তবুও আব্বুর কোন অভিযোগ নেই,,,,,
:
এসব ভেবে তবুও নির্লজ্জের মতো টাকা গুলো নিলাম,,,,
কারণ, বন্ধুদের আজ খাওয়াতে হবে,,,,
টাকা নিয়ে যেই বের হব, পায়ের জুতা টা পড়তে গিয়ে নজর পরলো আব্বুর জুতাটার দিকে,,,
দেড় বছর আগের ফুটপাত থেকে কেনা,তাও আবার তালি মারতে মারতে জুতাটার জীবনটা শেষ করে দিছে,,,,,
যদি আব্বুর ওই জুতাটা কথা বলতে পারতো তাহলে হয়ত বলতো, ” আমাকে এই অত্যাচারীর হাত থেকে কেউ বাঁচাউ,,,,,”
অথচ সেই আব্বুই আমাকে বছরে ২-৩জোড়া জুতা কিনে দেয়,,,,,,
এই তো কিছুদিন আগেও বাজারে নতুন আসা জুতা জোড়াও কিনে দিলো,,,,,,
তবুও আব্বুর কোন অভিযোগ নেই,,,,,,
:
বিশ্বাস করেন আমার চোখে তখন পানি চলে আসছে,,,,নিজেকে তখন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অত্যাচারী মনে হচ্ছিলো,,,,,,
আমি টাকা গুলো আবার আব্বুর সেই পকেটেই রেখে দিলাম,,,,,,,,
:
বাইরে বের হতে যাব এমন সময়,
~কি, টাকা গুলো রেখে দিলি!!(আম্মু)
~তুমি জানলা কিভাবে যে আমি টাকা নিতে আসছি??(আমি)
~আমি তোকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছিলাম,,,আর ভাবছিলাম,”দেখি আমার দুষ্টু ছেলেটা কি করে!,,,,”
:
আচ্ছা আম্মু,”আব্বু” হয়ে বেঁচে থাকাটা কি অনেক অপরাধের???
~নারে পাগল অপরাধের কেন হবে!!
~তাহলে আমি যে আব্বুকে সবসময় অত্যাচার করি??
~কেন অত্যাচার হবে কেন??(আম্মু)
~এই যে আমি সব সময় আব্বুর কাছে আবদার করতেই থাকি অথচ সেই আব্বুই নিজের কথা না ভেবে আমার সব আবদার পূরণ করে,,,,,,
~হঠাৎ আব্বু বলে উঠলো,”এটা অত্যাচার নয়রে পাগল!এটা তোর প্রতি আমার ভালোবাসা,,,,”
~আব্বু তুমি ঘুমাওনি??
~নারে পাগল তুই যখন টাকার জন্য আমাকে ডাক দিয়েছিলি,তখনই ঘুম ভেঙ্গে গেছে,,,তবুও ঘুমানোর ব্যার্থ চেষ্টা করছিলাম,,,,
:
~আমি আব্বুর ঘুম ভাঙলাম, তবুও আব্বুর কোন অভিযোগ নেই,,,,,,
:
~এই হলো,আব্বুর ভালোবাসা,,,
সন্তানের জন্য তিনি যে সব কিছুই করতে পারে,,,,
এখন তুই বুঝবি না,,,,যখন “বাবা” হবি তখই বুঝবি,,,,,
(আম্মু)
:
আসলে আমরা আব্বুর প্রতি এতো অত্যাচার করি যে নিজেকে সময় সময় পশু মনে হয়,,,তবুও “আব্বু” নামক মানুষটির একফোঁটাও অভিযোগ নেই,,,,,
আছে শুধু বুকভরা “ভালোবাসা”
আর আমরা???
আমরা তো সেই সহ্যকারী আব্বুর উপর অত্যাচার করা অত্যাচারী,,,,,
:
পৃথিবীতে মনে হয় এটিই একমাত্র অত্যাচার যার কোন বিচার এখন পর্যন্ত কোন কোর্ট ই করতে পারেনি আর কোনদিন করতেও পারবে না,,,,,,
:
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা