:-Hi(আমি)
:- হ্যালো (অবনী)
:- কেমন আছেন? (আমি)
:- হুমম.. ভালোই, আপনি?
:- ভালো!
:- কি করছেন?
:- কিছু না,
:- ওওও…
:- হুম।
:- আচ্ছা!
:- বলেন…
:- আমি কি আপনাকে তুমি করে বলতে পারি।
:- জানি তো এটাই বলবেন, আপনারা ছেলেরা তো এমনি, দু’দিন
কথা বললে তুমিতে যেতে চায়, এরপর বলবে তোমায় দেখতে পারি, একটা পিক দেয়া যাবে এরপর তোমাকে খুব
ভালো লাগে ছেলেদের খুব ভালো করে চিনা আছে…
:- আমি একদমই সেই রকম না।
:- জানা আছে, এতো ভাব নিতে হবে না।
:- ধুর…
.
দিলাম মেসেজ ব্লক করে… ‘‘মাথাই খারাপ করে দিয়েছে নিজেকে বিশ্ব সুন্দরী মনে করে। যে দুনিয়াতে আর কোনো মেয়ে নাই সে-ই একজন, নিশ্চয় মাথায় কোনো গোন্ডগোল আছে, নাহলে এক লাইন বেশি
বুঝতো না’’সঙ্গে সঙ্গে আমার একটা পোষ্টে কষ্টেন্ট আসলো।
কমেন্টটা দেখলাম অবনী নামের মেয়েটা করেছে “””আপনি
আমাকে মেসেজে ব্লক করলেন কেনো?
:-এমনি(আমি)
:-আপনি এত ভাব নেন কেনো?
:-আমি আবার কোথায় ভাব নিলাম?আপনিইতো ভাব নিলেন আর বললেন সব ছেলেদের আপনার চেনা আছে।
:-এমনি বলেছিলাম।
:-এমনি কেনো বললেন?
:-আপনি এত ঝঘড়াটে কেনো?
:-দেখেন ভদ্র ভাবে কথা বলুন না হলে আপনাকে আমি একদম ব্লক করে দিবো।
আর কোন রিপ্লে আসলো না।আমিও আর কিছু না বললাম না।ও আপনাদেরতো পরিচয়ই দেওয়া হয়নি।আমি হুসাইন আর এতসময় যার সাথে ঝগড়া করলাম তাঁকে চিনিনা।চিনিনা বললে ভু্ল হবে কারণ
মেয়েটা আমার ফ্রেন্ড লিষ্টে আছে।ওর নাম অবনী।
—
ব্যস্ততার কারণে একদিন ফেবুতে যেতে পারিনি।ফেবুতে
ঢুকে দেখলাম অনেকগুলো কমেষ্ট সবগুলো অবনী নামের মেয়েটার।সব কমেন্টে একই লেখা আমাকে আনব্লক
করুণ।সেদিনের ব্যবহারের জন্য সরি””””
যেহেতু মেয়েটা সরি বলেছে তাই আনব্লক করলাম।আনব্লক করার সঙ্গে সঙ্গে মেসেজ আসলো—
‘‘পোলার ভাব
দেখে বাঁচি না’’ ‘‘লাইনে থেকেও রিপ্লে করো না কেন?’’ ‘‘আজাইরা’’
আমি রিপ্লে করলাম। ‘‘বাঁচতে না চাইল মরে যান কেউ ধরবে
না এমনিতে দেশের জণসংখ্যা প্রচুর বেড়ে গেছে’’ ‘‘লাইনে
ছিলাম না তাই রিপ্লে করিনি’’ ‘‘আপনি আজাইরা আমি ব্যস্ত মানুষ’’
রিপ্লে দিয়েও কোনো রেসপন্স পাচ্ছি না মনে হচ্ছে লাইনে নেই তারপরও একটু অপেক্ষা করলাম কিন্তু কোনো লাভ
হলো না। শিওর হলাম লাইনে নেই, ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে আবার ফেইসবুকে আসলাম।এসে দেখি রিপ্লেও দিয়েছে। ‘‘আমি তো কথার কথা বলেছি, আমি মরতে যাবো কোন দুঃখে’’
লাইনে ছিলো রিপ্লেও করলাম.
.
:- আমিও তো কথার কথা বলেছি..
:- ভালো করেছেন.. এখন বলেন আমাকে মেসেজ ব্লক কেন দিয়েছিলেন।
:- আপনার ভাবটা এক কেজি বেশি হয়ে যাচ্ছিল তাই ব্লক দিয়েছি।
:- আমি কিসের ভাব নিয়েছি?
:- নিজেই মনে করে দেখেন।
:- যেটা বলেছি সেটা কি মিথ্যে বলেছি?
:- আমিও তো মিথ্যে বলিনি,,, আপনি তো সোজা সবার সাথে আমাকে তুলনা কর বসলেন।
:- ঠিকই তো করেছি, ছেলেরা তো এমনি।
:- আপনি আচ্ছা ঝগড়াটে মেয়ে তো।
:- জ্বি না আমি মোটেও ঝগড়াটে না।
:- সেদিন থেকেই তো ঝগড়া চালিয়ে যাচ্ছেন।
:- আপনার কথার প্রসঙ্গে বলছি, এটা ঝগড়া না।
:- তাহলে এটা কি?
:- এটা হচ্ছে মেসেজিং…
:- একি কথা!! মেসেজে ঝগড়া..
:- এবার কিন্তু আপনি ঝগড়া করতেছেন… ওকে আমি অনুমতি দিলাম আপনি আমাকে তুমি করে বলতে পারেন। তারপরও আপনার জিএফের দোহাই ঝগড়া কইরেন না।
:- হা হা হা, আমার জিএফের দোহাই দিচ্ছেন?
:- তো আর কি করবো?
:- কেন আপনার বিএফের দিতে পারতেন তাহলে হতো, আমি মেনে নিতাম, কিন্তু আমার জিএফ নেই আপনি দোহাই দিলেও কিছু হবে না।
:- ওকে, কিছুর দোহাই দিতে হবে না আপনি আপাতত ঝগড়া না করলেই হবে।
:- আমি তো ঝগড়া করছি না।
:- আচ্ছা ঠিক আছে আপনি ঝগড়া করছেন না, আপনি আমাকে গীতাপাঠ করে শুনিয়েছেন।
:- না তো তাও তো করিনি।
:- আপনি কিছুই করেন নাই, আপনি আমার সাথে শুধু কথা বলেছেন এবার ঠিক আছে তো?
:- মোটামুটি.
:- তাও মোটামুটি, আচ্ছা আপনিই বলেন কি করেছেন।
:- হুম.. কি করেছি!
:- হুম, কি করেছেন?
:- কিছুই না শুধু মেসেজ করেছি।
:- ঐ হলো তো একি কথা।
:- একটু একটু আর কি.
:- আপনি ভালোই কথা প্যাচাতে পারেন,
:- কোথায় কথা প্যাচালাম…
:- কোথাও না.. আমি গেলাম বাইরে যেতে হবে।
:-তুমি কোন ক্লাসে পড়ে সেটাতো জানা হয়নি।
:-পড়ালেখা শেষ।এখন একটা চাকরী খুজছি।তুমি?
:-অনার্স প্রথম বর্ষ।
:- ওকে…
.
তারপর থেকে প্রায়ই মেসেজিং হয় অবনীর সাথে, এখন আমরা অনেক ক্লোজ বলতে গেলে একবারে বন্ধুর মতো।
সকাল গুড মর্নিং থেকে শুরু করে রাতে গুড নাইট দিয়েই কথা শেষ হয়।
অবনীর কাছে অনেকবার পিক চেয়েছি কিন্তু দেয়নি আমার কাছেও চেয়েছে আমিও দেয়নি শর্ত ছিলো ও দিলে আমিও
দিবো কিন্তু ও তো দিচ্ছে না তাই আমিও দেইনি।অবনী আমার
অনেক বেশি কেয়ার করে।ও কেনো আমাকে এত কেয়ার
করে আমি বুঝিনা।আমার মনে অবনীর জন্য একটু একটু জায়গা তৈঁরি
হচ্ছে।ওর সাথে মেসেজ না করলে এখন আমার ভালো লাগেনা।অবনী আর আমি পাশাপাশি থানাতে থাকি।
—-
রাতে ফেসবুকে ঢুকে দেখি অবনি মেসেজ দিয়েছে
:-কোথায় তুমি?সেইযে গেলে আর কোন খোজখবর নাই(অবনী)
:-এইতো আসলাম।কী করো?(আমি)
:-বসে আছি।তুমি?
:-আমিও।ডিনার করেছো?
:-করেছি।তুমি?
:-করেছি।অবনী তোমার ফোন নম্বরটা দেবে?
:-সরি।এটা আমি দিতে পারবো না।
:-কেনো দিতে পারবে না?
:এমনি।তবে তুমি চাইলে দেখা করতে পারি।
:-সত্যি দেখা করবে?
:-হ্যা।কালকে সকাল ১০টায়।
:-কোথায় দেখা করবে?
:-আমার কলেজের সামনে।
:-আমিতো তোমার কলেজ চিনিনা।
:-কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ।
:-আচ্ছা।অনেক রাত হয়েছে এখন ঘুমাও।
:-তুমিও।
কাল অবনীকে সামনা সামনি দেখবো এটা ভাবতেই অদ্ভুদ এক ভালোলাগা কাজ করছে।আচ্ছা অবনী দেখতে কেমন হবে?এসব
ভাবতে ভাবতে রাতে ঘুমিয়ে পড়লাম।
—–
সকালে ঘুম ভাঙ্গলো আম্মুর ডাকে।ঘুম থেকে ওঠে দেখি ৯টাবেজে গেছে। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে বেড়িয়ে পড়লাম।মনের মধ্যে একপ্রকার ভয় বাসা বাঁধছে।গাড়ি ছুটে চলেছে অবনীর
কলেজের দিকে।
১০টা বেজে ৭ মিনিট।
অনেকক্ষণ হলো অবনীর কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে আছি কিন্তু ওর দেখা নেই।অবনীর ফোন নম্বরও নেই যে ওকে ফোন দিবো।আচ্ছা অবনী আসবেতো??ধুর কি সব ভাবছি,ও আসবেনা কেনো!অব্যশই আসবে।
আপনি হুসাইন??
পিছন দিক থেকে কারো কথায় ঘুরে তাকালাম। জীবনের প্রথম ক্রাশটা খেয়েই গেলাম।মনে হচ্ছে কোন পরী আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।কপালে কালো টিপ,চোখে গাড়ো করে কাজল দেওয়া,ঠোটে লাল লিপিস্টিক।ঠিক আমার স্বপ্নে দেখা নায়িকার মত।
:-এভাবে হা করে তাকিয়ে থাকলে মুখে মাছি ঢুকবে।হি হি হি হি
ইস কি সুন্দর করে হাসছে মেয়েটা।মনে হচ্ছে মুক্ত ঝড়ে পড়ছে।
:-এইযে মিঃ এই রোদের মধ্যে এখানে দাঁড়িয়ে থাকবেন নাকি কোথাও বসবেন??(অবনী)
:-ও হ্যাঁ তাইতো।চলুন কোথাও বসি??(আমি)
:-সামনের ওই রেষ্টুরেন্টে চলুন।
:-চলুন।
আমি আর অবনী একটা রেষ্টুরেন্টে বসলাম।আমি বারবার আড় চোখে অবনীকে দেখছি।অবনী বুঝছে কিনা জানিনা তবে ওর মুখে এখনো হাসি লেগেই আছে।
:-কী খাবেন বলুন?(অবনী)
:-আপনার যা ইচ্ছে।(আমি)
অবনী ওয়েটারকে ডেকে ২কাপ কফির অর্ডার করলো।অবনীর চোখের নিচে একটা তীল আছে যেটা ওর সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি করে দিয়েছে।
:-এভাবে শুধু তাকিয়ে থাকবেন নাকি কিছু বলবেন?(অবনী)
অবনীর কথায় কিছুটা লজ্জা পেলাম।তবে অবনীকে বুঝতে দিলাম না।
:-কেমন আছেন?(আমি)
:-এতক্ষণে?(অবনী)
:-হুম।
:-আমাকে আপনি করে বলছেন কেনো?
:-আপনিওতো আপনি করে বলছেন।
:-ও তাইতো।তুমি করে বললে খুশি হবো।
:-আচ্ছা বলবো।তুমিও তুমি করে বলো।
:-মামা কফি।(ওয়েটার)
ওয়েটার কফি দিয়ে চলে গেলো।কফি খেতে অনেক গল্প করলাম অবনীর সাথে।
সেদিন অবনীর সাথে অনেক জায়গায় ঘুরলাম। বাসায় আসলাম বিকেলবেলা। বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে ফেসবুক লগইন করলাম। ফেসবুকে ঢুকে অবনীকে মেসেজ দিতে গিয়ে দেখি অবনীর আইডি ডিজএবল।হঠাৎ অবনী আইডি ডিজএবল করলো কেনো?আমার সাথে ঘোরার সময়তো ভালোই কথাবার্তা বললো।হঠাৎ করে কী হলো। অনেক রহস্যজনক মনে হচ্ছে সবকিছু।
রাতে ফেসবুকে ঢুকে দেখলাম অবনী আইডি একটিভ করেছে।আমি সাথে সাথে মেসেজ দিলাম
:-তোমার আইডির কী হয়েছিলো?(আমি)
:-আর বলোনা জুকার মামা আইডি লক করে দিয়েছিলো।(অবনী)
:-আমি ভাবলাম কি না কী হয়েছে।অনেক টেনশন হচ্ছিলো।
:-তাই?
:-হুম
:-আমাকে নিয়ে এত টেনশন হওয়ার কী আছে?
:-তুমি আমার ফ্রেন্ড তাই।
:-শুধু কী ফ্রেন্ড?
:-ডিনার করেছো?
:-আমার প্রশ্নের উওর কিন্তু পাইনি।
:-এই প্রশ্নের উওর আমি নিজেও জানিনা।
:-কেনো জানোনা?
আমার ফোনে কল আসায় অবনীর মেসেজের উওর দেওয়া হলোনা।ফোনে ভেসে ওঠা নম্বরটার দিকে কিছুক্ষণ এক দৃষ্টিয়ে চেয়ে থাকলাম।নম্বরটা আমার খুব চেনা।চেনা হবারই কথা কারণ এই নম্বরেই সারে তিনটি বছর কথা বলেছি।আমি এসব ভাবতে ভাবতে ফোন কল কেটে গেলো।কাটার ৫ সেকেন্ডের মাথায় আবার কল আসলো। আমার হাত কাঁপছে,সাথে বুকের ধুকধুকুনিটাও বাড়ছে।
কাঁপা কাঁপা হাতে ফোন রিচিভ করলাম।
:-কেমন আছো?(ওপাশের মেয়েটি)
আমার গলার স্বর কেমন জানি আটকে গেছে।গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছেনা।আমাকে চুপ থাকতে দেখে ওপাশের মানুষটি আবার জিঙ্গেস করলো
:-কেমন আছো?
:-যেমন থাকার কথা।(আমি)
:-জিঙ্গেস করবেনা আমি কেমন আছি?
:-জানি ভালো আছেন।কারণ ভালো থাকার জন্যই আমাকে ছেড়ে গিয়েছিলেন।
:-আমাকে আপনি করে বলছো কেনো?
:-তুমি করে বলার অধিকারটা যে আমার নেই।সে যাইহোক এতদিন পর কী মনে করে ফোন দিলেন?
:-হুসাইন আমি তোমার কাছে ফিরে আসতে চাই।প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও।
:-আমি ক্ষমা করার কেউ না।আর আপনার জন্য আমার মনে কোনো জায়গা নেই।তুমি একটা প্রতারক। আমার থেকে ভালো একজনকে পেয়ে আমাকে ছেড়ে দিয়েছে,আবার ছেড়ে যাবেনা তার কী গেরান্টি আছে।প্লিজ আমাকে আর ফোন দিবেন।
ওপাশের মানুষটিকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন কেটে দিলাম।বেশিক্ষণ কথা বললে আবার নীলার মায়ায় জরিয়ে যাবো।হ্যাঁ মেয়েটির নাম নীলা।
আবার নীলার নম্বর থেকে ফোন আসলো।এবার ফোন কল কেটে ফোনটা অফ করে রাখলাম।জানি আমি যতসময় ফোন না ধরবো ততসময় ফোন দিতেই থাকবে।
রাত ১২টার সময় ফোন অফ করে ফেসবুকে ঢুকলাম।অবনী অনেকগুলো মেসেজ করেছে।সবগুলো মেসেজ এক এক করে চে করলাম।শেষ মেসেজটা এমন ছিলো
:-এই হলো আমার নম্বর(০১৭৭৬৭৮৭—-)।রাতে যখনি ফেবুতে আসবে মেসেজটা দেখা মাএই আমার নম্বরে ফোন দিবে নয়তো আমি নিজেকে শেষ করে দিবো,এবং রাতের মধ্যেই ফোন দিবে। নাহলে আমি নিজেকে শেষ করে দিবো প্রমিস।
আমি তাড়াতাড়ি নম্বরটা নিয়ে ফোন দিলাম।প্রথমবার ধরলোনা,।পরেরবার রিং হওয়ার সাথে সাথে রিচিভ হলো।
:-অবনী এটা কেমন ধরণের পাগলামি? (আমি)
:-কেমন?(অবনী)
:-আমি যদি রাতে ফেসবুকে না আসতাম তখন কী হতো?
:-কী আর হতো কালকে সকালের খবরে দেখা যেত একটা মেয়ের লাশ ফ্যানের সাথে ঝুলে আছে।
:-একটা থাপ্পর দিয়ে সব দাঁত ফেলে দিবো।এমন পাগলামি আর কখনো করবেনা।
:-করবোনা তবে একটা শর্ত আছে!
:-কী শর্ত?
:-আমাকে ভালোবাসতে হবে।
:-এটা সম্ভব না।
:-কেনো সম্ভব না।
:-আমি সেটা তোমাকে বলতে পারবোনা।
:-বলতে তোমাকে হবেই।
অবনীর অনেক জোরাজুরিতে বলতে রাজি হলাম।
:-আমি তখন ইন্টার প্রথম বর্ষে পড়ি।ফেসবুকে নীলার সাথে পরিচয়।প্রথমে আমাদের ফ্রেন্ডশিপ এর হয়।ও আমাকে শুধু ফ্রেন্ড ভাবতো কিন্তু আমি ওকে ফ্রেন্ডের থেকেও বেশি কিছু ভাবতাম।একদিন আমি নীলাকে প্রপোজ করে বসি।নীলা প্রথমে রাজি হয়না কিন্তু আমার জোরাজুরিতে রাজি হয়।শুরু হয় আমাদের নতুন জীবন।আমাদের রিলেশনে অনেক ঝগড়া হতো কিন্তু কেউ কারো সাথে বেশিক্ষণ কথা না বলে থাকতে পারতাম না।দেখতে দেখতে আমাদের রিলেশনের ৩টি বছর কেটে যায়।এই ৩বছরে মাএ একটিবার সামনাসামনি দেখা হয়েছিলো দুজনের।আমাদের দুরুত্ব বেশি ছিলো বিধায় সামনাসামনি দেখা করা হয়ে ওঠতোনা,তবুও আমাদের ভালোবাসার কোনো ঘাটটি ছিলোনা।আমাদের রিলেশনের সারে তিন বছরের মাথায় নীলা আরেকটি ছেলের হাত ধরে চলে যায়।আমি অনেক চেষ্টা করেছিলাম ওকে ধরে রাখার কিন্তু পারিনি।নীলা যাবার আগে বলেছিলো আমি যেদিন অনেক টাকা বেতনের চাকরী পাবো সেদিন যেনো ওর সামনে যায় এর আগে না। এরপর কেটে অনেকগুলো মাস নীলা আর ফিরে আসেনি।(আমি)
:-একটা কথা বলবো?(অবনী)
:-হুম।
:-কাল আমার সাথে দেখা করতে পারবে?
:-আজইতো দেখা করে আসলাম আবার কালকে কেনো?
:-আমি বলেছি তাই আসবে।
:-যদি না যায়?
:-তাহলে আমাকে আর খুজে পাবেনা।
:-এত পাগলামি করো কেনো তুমি?
:-এটার উওর কালকেই পাবে।এখন ঘুমাও।
:-ঘুম ধরছেনা।
:-আমি গান বলছি তুমি শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে যাবে ওকে।
:-আচ্ছা।
—
তোর মন খারাপের দেশে যাবো প্রেমের খেয়ায় ভেসে,
তোর মনটা ভালো করে নিবো অনেক ভালো বেসে।
অবনীর গানের গলা খুব সুন্দর।যেকোনো ছেলেই ওর গানের প্রেমে পড়ে যাবে এটা নিশ্চিত।
সকালে ফোনের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো।রাতে অবনীর কাছে গান শুনতে শুনতে কখন ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম মনে নেই।ফোনের স্কিনে অবনীর নম্বর ভেসে আছে।ফোন রিচিভ করলাম
:-ওই ফোন ধরতে এত সময় লাগে?(অবনী)
:-ঘুমিয়ে ছিলাম।(আমি)
:-ঠিক আছে।এখন তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আমার কলেজের সামনে এসো।
:-না গেলে হয়না?
:-ঠিক আছে আসতে হবেনা।(রেগে)
:-আচ্ছা আসছি।
:-গুড বয়।তাড়াতাড়ি আসবা।রাখছি।
:-ওকে।
আমি বিছানা ছেড়ে ওঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম।খাবার টেবিলে গিয়ে দেখি আব্বু আম্মু আর ছোট ভাইয়েরা বসে আছে।আমিও বসলাম।
:-আর কতদিন এভাবে ঘাড়ের উপর বসে বসে খাবি?শুধু সারাদিন বাসায় বসে থাকবি আর খাবি।তোর বয়সী সব ছেলে মেয়েই চাকরী করছে শুধু তুই চাকরী পেলি না।(আব্বু)
ধুর মেজাজটাই খারাপ করে দিলো।আমিতো ঠিকই চাকরীর চেষ্টা করছি নাহলে আমি কী করবো!এখনকার যুগে মামা খালু ছাড়া চাকরী নাই।
পুরোটা না খেয়েই ওঠে চলে আসলাম।আম্মু পিছন থেকে অনেকবার বললো খেয়ে আসতে কিন্তু আমি বেড়িয়ে আসলাম।প্রতিদিন খেতে বসে এই একটা কথা শুনতে হয়।আর ভালো লাগেনা।আমার অনেক ক্লাসমেটদের যোগ্যতা না থাকার পরেও ওদের চাকরী হয়ে গেছে বাট আমার যোগ্যতা থাকার পরেও চাকরী হচ্ছেনা,কারণ আমার চাচা কিংবা মামা খালু নেই।
আমি আর অবনী পাশাপাশি একটা পার্কে বসে আছি।আজ অবনী সালোয়ারকামিজ পড়েছে।লাল রঙের সালোয়ারকামিজে অনেক সুন্দর লাগছে ওকে।সুন্দরী মেয়েরা যা পড়ে তাতেই ওদের ভালো লাগে।
:-চুপ করে আছো যে?(অবনী)
:-কী বলবো ভেবে পাচ্ছিনা।(আমি)
:-আমাকে বিয়ে করবে?
:-দেখো আমার মনটা এমনিতেই খারাপ আছে।প্লিজ ফান করোনা।
:-আমি ফান করছিনা সিরিয়াসলি বলছি।
:-আমাকে বিয়ে করলে তুমি সুখি হতে পারবেনা।আমি বেকার। কবে চাকরী হবে তাও ঠিক নাই।বাবা সব সময় চাকরী নিয়ে খোটা দেয়।বাসায় আমার জায়গা অনেকটা অনিশ্চিত এর মাঝে তোমাকে কোথায় রাখবো।
:-তোমার চাকরীর ব্যবস্থা আমি করে দিবো।
:-হা হা হা হা।
:-হাসো কেনো?
:-মানুষ যেখানে নিজের কাছের মানুষদেরই চাকরী দিচ্ছেনা সেখানে তুমি অপরিচিত একটা ছেলেকে চাকরীর ব্যবস্থা করে দিবে এটা হাস্যকর ছাড়া আর কী হতে পারে।
:-চলো আমার সাথে।
:-কোথায়?
:-গেলেই দেখতে পাবে।
অবনী আমার হাত ধরে টানতে টানতে রাস্তায় নিয়ে এলো।বাস্তায় এসে একটা রিক্সা নিয়ে তাতে দুজন চড়ে বসলাম।আমরা কোথায় যাচ্ছি সেটা আমি জানিনা।অবনী আমার হাত শক্ত করে ধরে আছে।অবনীর এইভাবে হাত ধরে রাখা দেখে মনে হচ্ছে আমি চোর আর ও পুলিশ।আমার হাত ছেড়ে দিলেই আমি দৌড়ে পালিয়ে যাবো।
একটা ২তলা বাসার সামনে এসে রিক্সা থামলো।বাড়িটা অনেক পুরাতন সেটা দেখেই বুঝা যাচ্ছে।অবনী রিক্সা ভাড়া দিয়ে আমার হাত ধরে বাসার মধ্যে নিয়ে এলো।
অবনী আমাকে নিয়ে একটা ড্রয়িংরুমে ঢুকলো।ড্রয়িংরুমে মোট ৩জন মানুষ বসা।দুজন মধ্য বয়স্ক পুরুষ আর একজন মধ্য বয়স্ক মহিলা।আমি কাউকেই চিনিনা।অবশ্য না চেনারই কথা।অবনী এখনো আমার হাত ধরে আছে।আমাদের দিকে সবাই এক অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
:-আব্বু এই হলো সেই ছেলে যাকে আমি ভালোবাসি।(অবনী)
অবনীর কথা শুনে আমার গলা শুকিয়ে গেছে।ওর বাবার সামনে দাঁড়িয়ে বলছে আমাকে ভালোবাসে।হুসাইন তুই আজ শেষ।আজই উপরের টিকিট মনে হয় কাটতে হবে।
:-তুই ভেতরে যা আমরা ওর সাথে কথা বলছি।(সম্ভবত অবনীর আব্বু)
অবনী আমার হাত ছেড়ে দিয়ে ভেতরে চলে গেলো।কী বদ মেয়ে আমাকে একা বাঘের মুখে রেখে নিজে পালিয়ে গেলো।
:-তুমি বসো বাবা।(ভদ্রমহিলা)
:-না ও দাঁড়িয়েই থাকবে।কত বড় সাহস আমার মেয়েকে ভালোবাসে।(অবনীর আব্বু)
:-আঙ্কেল আসলে আমি
আমার কথা শেষ হবার আগেই অবনীর আব্বু বললো
:-তোমার বাসার নম্বর দাও।আমি তোমার আব্বুর সাথে কথা বলবো।
:-আঙ্কেল আমি অবনীকে —-
:-তোমাকে নম্বর দিতে বললাম না?(ধমক দিয়ে)
আমি ভয়ে ভয়ে আব্বু নম্বর দিলাম।অবনীর আব্বু ফোন নম্বর নিয়ে কথা বলতে বলতে বাইরে চলে গেলো।সাথে আরেকটা লোক বসা ছিলো সেও গেলো।আজ মনে হয় বাসা থেকে আব্বু আমাকে বের করে দিবে।আমার জন্যই আজ তাদের সম্মানহানি হতে চলেছে।আমার মনে হচ্ছে এখনি মরে যেতে।মরে গেলে অনন্ত আব্বুর সম্মানহানি দেখতে হতোনা।
:-বাবা তুমি বসো, আমি তোমার জন্য চা দিচ্ছি।(ভদ্র মহিলা)
এই বাড়িতে মনে হয় এই একটাই ভালো মানুষ।আমি ভদ্রমহিলার কথামত সোফাতে বসলাম।অবনী আমাকে এভাবে বিপদে ফেলবে কখনো ভাবতেও পারিনি।
ভদ্রমহিলা আমাকে চা দিয়ে গেলেন।আমি চা হাতে নিয়ে বসে আছি।চা খাওয়ার কোনো ইচ্ছেই আমার নেই।শুধু চোখের সামনে একটা জিনিসই ভাসছে আজ আমার জন্য আব্বুকে অপমান হতে হবে।এই পৃথিবীর সবথেকে অযোগ্য ছেলে আমি।
:-কী বাবা তুমি এখনো চা খাওনি?(ভদ্রমহিলা)
:-এইতো খাচ্ছি আন্টি।(আমি)
আন্টি বলাটা ঠিক হলো কীনা জানিনা তবে ভদ্রমহিলা আর কিছু না বলে ভেতরে চলে গেলেন।
রাত ৯টার একটু বেশি বাজে।
আমি রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে আছি।আমার রুমে অন্য একটা মানুষ বসে আছে।সে আর কেউ নয় আমার বিয়ে করা বউ।হ্যা অবনীর সাথে আমার বিয়ে হয়েছে।অবনীর আব্বু আমার আব্বুকে ফোন করে তাদের বাড়িয়ে ডেকে নিয়ে যায় এরপর কাজি ডেকে আমাদের দুজনকে বিয়ে দিয়ে দিলো।সবকিছু আমার কাছে স্বপ্নের মত মনে হচ্ছে।আমার মত একটা বেকার ছেলের সাথে অবনীর আব্বু এত সহজেই অবনীকে তুলে দিলো?সবকিছুর মাঝে একটা রহস্যর গন্ধ পাচ্ছি।অবনীর কাছে জিঙ্গেস করতে হবে ও সবকিছু।যাই রুমে ঢুকি।
রুমে ঢুকে দেখি অবনী লম্বা একটা ঘোমটা দিয়ে বসে আছে খাটের উপর। আমি গিয়ে খাটের উপর বসতেই মুখের উপর থেকে ঘোমটা ফেলে ঝাঝালো কন্ঠে বললো
:-তোর আসতে এত সময় লাগলো কেনো হু?
অবনীর কথা শুনে অনেকটা অবাক হলাম।বাসর রাতে কোনো স্বামী তার বউয়ের কাছ থেকে তুই শব্দটা শুনেছে কীনা আমার জানা নেই।
:-এতক্ষণ কোথায় ছিলি?(অবনী)
:-আমাকে তুই করে বলছো কেনো?(আমি)
:-তো কী করবো?জরিয়ে ধরে চুমু দিবো।আমি সেই কখন থেকে উনার জন্য অপেক্ষা করছি আর এতক্ষণে উনি আসলেন।
:-অবনী একটা কথা জিঙ্গেস করবো?
:-না।
:-কেনো?
:-আমি জানি তুমি কী জিঙ্গেস করবে।(আস্তে করে)
:-সবকিছু না জানা পর্যন্ত শান্তি পাচ্ছিনা।প্লিজ বলো।
:-আমি কিছু করিনি।যা করার আব্বুই করেছে।কাল রাতে তুমি যখন তোমার অতীত বললে তখনি আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি তোমাকে আর কাঁদতে দিবোনা।তোমাকে আগে থেকেই ভালোবাসতাম।কালকে রাতে তোমার সবকিছু শোনার পর ভালোবাসা আরো বেড়ে যায়।আমার পরিবারের মানুষ ভালোবাসা পছন্দ করেনা।আমি যদি বলতাম তোমার সাথে আমার রিলেশন তাহলে উনারা এই সম্পর্ক মেনে নিতেন না।তাই সবাইকে মিথ্যা বললাম।
:-কী মিথ্যা?
:-আমি প্রেগন্যান্ট।
:-কী?
:-এত অবাক হবার কিছু নেই।এ ছাড়া আমার কিছু করার ছিলোনা।
:-যদি তোমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা করাতো তখন?
:-আরে গাধা এসব কথা মানুষের কানে গেলে উনাদেরই মানসম্মান যাবে তাই বাধ্য হলো বিয়েটা দিতে।
:-পরে যদি জেনে যায়?
:-জানলে জানবে।কারণ এখন বিয়ে হয়ে গেছে।চাইলেও আর আলাদা করতে পারবেনা।
:-এত ভালোবাসো আমায়?
:-হুম।
:-তোমার কোলে মাথা রাখবো?
:-মানা করেছে কে।
আমি অবনীর কোলে মাথা রেখে শুয়ে রইলাম।আর অবনী আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
……………………………………………সমাপ্ত…………………………………………….