অফিসের বসকে ফাইলগুলো জমা দিয়ে নিজের ডেস্ক এ আসলাম। আমি জুলফিকার আহমেদ। পড়াশুনা শেষ করে ৩ মাস হল
একটা কন্সট্রাকশন কম্পানিতে জয়েন করেছি। দেশের বাইরে থেকে BSC করেছি সিভিল ইন্জিনিয়ারিং নিয়ে। তাই দেশে এসে
জব পেতে বেশি কষ্ট করতে হয়নি। অফিসের বস আমার কাজকে বেশি প্রাধান্য দেন বলে তার সাথে সম্পর্কটাও অনেক ভাল।
তাছাড়া তিনি অনেক ভাল মানুষও বটে। কিছুদিন আগেই একটা বড় কাজ আমাদের হাতে আসে। অনেক সুন্দর ভাবে উপস্থাপন
করে ক্লাইন্টকে বুঝিয়ে কাজটি হাতে পেয়েছি। সেই কাজেরই সব ফাইল আজকে জমা দিয়ে আসলাম। তাই এখন একটু হালকা
লাগছে। বস আজ অনেক খুশি। তাই ভাবলাম বসের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে একটু নদীর ধারে ঘুরতে যাব। বসের কেবিনে আসলাম
কিন্তু বস ছুটি দিলনা। বলল আজকে নাকি উনার বাসায় ডিনার করতে হবে। আমিও ব্যাচেলর বলে আর না করতে পারিনি। সন্ধার
পর উনার গাড়িতেই আমরা বাসায় আসলাম। বসের বাড়িটি অনেক সুন্দর। উনার বাসায় ফ্রেশ হয়ে ড্রয়িং রুম এ অপেক্ষা করছি।
কিছুক্ষন পর বস আসলেন এবং উনার স্ত্রীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। কিছুক্ষন পরে ডিনারের সময় হয়ে গেল। খাওয়ার সময়
বুঝলাম বস এবং উনার স্ত্রী অনেক রসিক। তবে বাড়িতে আর কাউকে দেখছিলাম না। বস এবং ভাবি যথেষ্ঠ বয়স্ক এবং তাদের
বিয়ে হয়েছে ২৫ বছর হল। তবুও বাড়িতে আর কেউ নেই বলে একটু আশ্চর্য লাগলো। বস মনে হয় বেপারটি ধরতে পেরেছিলেন।
তিনি বললেন তার এক মেয়ে লন্ডন এ পড়াশুনা করছে। তবে এখানে উনাদের সাথে উনার এক ভাগ্নী থাকে। যে কারনে আমার
মনে হয়েছিল কেউ আমাকে আারাল থেকে দেখছে। আমি আর এসব নিয়ে কথা বারালাম না। বসের থেকে বিদায় নিয়ে আমি
আমার ব্যাচেলর ফ্লাট এ চলে আসলাম। সেখানে আরও অনেকেই আছে যাদের সাথে সারারাত কার্ড খেলে কাটিয়ে দেওয়া যায়।
এক বন্ধুর কারনেই এই ফ্লাট টা পেয়েছিলাম। তবে এখানে আমরা সবাই চাকরিজীবি। দুঃখের কথা হল এই ফ্লাট এ আমি ব্যতীত
সবাই বিবাহিত। সবাই যখন তাদের সদ্য বিবাহিত অর্ধাঙ্গিনীর সাথে রোমান্টিক কথা বলতে ব্যস্ত থাকে, আমি তখন রাতের
অন্ধকারে তারার সাথে চাঁদের মিল খুজতেই ব্যস্ত।
তবে আজ আর এসব কিছুই করলাম না। কারন পরেরদিন ঠিক সময়ে অফিসে যেতে হবে। তাই
নিজেকে ঘুমের জগতে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিছানায় পারি দিলাম। পরেরদিন অফিসে বসে সামনের প্রজেক্ট নিয়ে কাজ
করছিলাম। তখনি একজন কলিক এসে বলল অফিসে নাকি নতুন বস আসবে। আমি তখন চিন্তায় পরে গেলাম যে কে এই নতুন
বস। যদিও আমাকে স্যার অনেকবার প্রোমশনের কথা বলেছিল তবে আমি তা নিতে চাইনি। কারন আমি সবার সাথে কাজ করতে
স্বাচ্ছন্দ বোধ করতাম। এসব চিন্তা করতেই হটাৎ বস আমাকে ডেকে পাঠালেন। বসের দরজায় নক করলাম, আসব স্যার। আরে
জুলফি এসো এসো। বসো। শোন জুলফিকার তোমাকে অনেক বলার পরেও তুমি শুনলে না। তাই কাল এই অফিসের বস হয়ে
জয়েন করছে আমার ভাগ্নি। তুমি একটু তাকে ট্রেইন করবে। তাকে অফিসের সমস্ত কাজ বুঝিয়ে দেবে। কাজের বেপারে একটু
হেল্প করবে। আমি বসের কথার সম্মতি দিয়ে নিজের ডেস্ক এ এসে কাজে মন দিলাম। পরেরদিন অফিস খুব সুন্দর করে সাজানো
হয়েছে নতুন বস আসবে বলে। কিছুক্ষন পর আগের বস নতুন বসকে নিয়ে অফিসে আসলেন। সবাই দারিয়ে গেলাম। কিন্তু বস
হিসেবে যাকে দেখলাম তাকে দেখে আমার চক্ষু চরোকগাছে। এযে আফিয়া। আমার হাত থেকে ফুলের তোরাটি নিয়ে সে সামনে
এগিয়ে গেল। ভাবটা এমন ছিল যে আমায় চেনেই না। পরিচিতি পর্ব শেষে যে যার মত ডেস্কে গিয়ে কাজে নেমে পরলাম।
কিছুক্ষন পর বসের ডাকে আমি তার চেম্বারে গেলাম। বস নতুম বসের সাথে পরিচয়ে বলল এই হল জুলফি। ইনি তেমাকে তোমার
কাজে সাহায্য করবে। আমি ভদ্রতার খাতিরে বললাম হ্যালো ম্যাম। আফিয়া কিছু না বলে শুধু হাসল। তারপর আগের বস চলে
গেলেন। আমিও নিজের ডেস্কে ফিরে এলাম। কিন্তু কাজে মন বসাতে পারছিলাম না। আমি ঠিক মিলিয়ে নিতে পারছিলাম না।
কোথায় যেন গন্ডগোল মনে হচ্ছে।
সাত বছর আগের কথা। আমরা একই কলেজে পড়াশুনা করতাম। মেয়েদের সাথে খুব একটা মিশতে পারতাম না তবে সবার
সাথে হেসে খেলেই কথা বলতাম। বেশ কয়েকদিন থেকে খেয়াল করছিলাম আফিয়া আমার দিকে কেমন যেন চেয়ে থাকে। বেশ
কয়েকবার চোখাচোখি হয়েছিল। তখন শুধ ও মুচকি হাসত। সে দেখতে অনেক সুন্দর ছিল। অনেক ছেলেই তার জন্য পাগল
ছিল। আমিও তাকে অনেক পছন্দ করতাম। কিন্তু আমার পরিবার ওদের তুলনায় নিম্নমানের ছিল তাই বলার সাহস পাইনি। কিন্তু
তার ওভাবে চেয়ে থাকা যেন আমার শরীরে শিহরন বইয়ে দেয়। এভাবে কেটে গেল কিছুদিন। হঠাত একদিন আফিয়া আমাকে
ডাকলো। বলল যে এটমিক ফিজিক্স এ তার একটু সমস্যা আছে যদি আমি তাকে একটু হেল্প করতাম। আমি সেরকম কিছু না
ভেবেই তাকে কলেজে কাল সকালে দেখা করতে বললাম। পরদিন সকালে সে এসে আমাকে তার সমস্যাগুলো বলল এবং আমি
পড়াশুনায় ভালো ছিলাম পুরোটা সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিলাম। সে অনেক খুশি হয়ে আমাকে ফুচকা অফার করল। আমি তার
জোররজুরিতে আর না করতে পারলাম না। কিন্তু সেদিন ফুচকা খেতে খেতেই কিছু একটা হয়েছিল। সেই চোখ বন্ধ করে ফুচকা
খাওয়া, ঝালে লাল হয়ে যাওয়া গাল দুটি যেন অমায়িক ছিল। তার সেই মনোমুগ্ধকর হাসি দেখে না চাওয়া সত্যেও অনেক গভীর
ভাবে তার প্রেমে পরে গেছিলাম। কিন্তু সেদিন আমি কিছু বলতে পারিনি। কারন সে অনেক উচ্চপদস্থ পরিবারের মেয়ে। তাদের
সাথে আমার এই ভালবাসা বড্ড বেমানান। কিন্তু আল্লাহ হয়তবা অন্যকিছুই দেখতে চেয়েছিল। সেদিনের পরেরদিন সে আমার
কাছে আমার নাম্বার নিয়েছিল। আমিও দিয়েছিলাম, ভালবাসিত তাই না দিয়ে পারিনি। রাতে সে আমাকে ফোন দিল। প্রথমে
চিনতে না পারলেও পরে বুঝেছিলাম আফিয়া ফোন দিছে।
বোঝার পর মুখ দিয়ে আমার কথা বের হচ্ছিল না।
সে বলল কথা কেন বলছি না। আমি তখন কাপা কাপা গলায় বললাম এ.এ.এইতো কেমন আছ তুমি। সে বলল ভাল আছি, তুমি
কেমন আছ।
-এইতো আছি কোনরকম। তা হঠাত ফোন দিলে।
কোন প্রয়োজন ছিল??
– প্রয়োজন ছাড়া কি তোমাকে ফোন দেয়া যাবেনা।
– না তা কেন হবে অবশ্যই ফোন দেওয়া যাবে।
– হুম, তো কি করছিলে?
– এই কেমিস্ট্রি পড়ছিলাম। তুমি?
– ভাবছিলাম
– কি ভাবছিলে?
– তোমার কথাই। তুমি আমার জন্য এত কিছু করলে অথচ আমি তোমার জন্য কিছু করতে পারলাম না।
– এটা কোন কথা হল। তুমি তো আমার বন্ধু। তোমার জন্য এটুকু আমি করতেই পারি। তাছাড়া ফুচকা তো খাইয়েছই। আর কি……
– তুমি একটু বেশি কথা বল। আমি এত কিছু বলতে বলেছি তোমায়। বন্ধু বললে অথচ ফুচকা খাওয়ানোর বেপারটা এভাবে নিলে।
– সরি। আসলে আমি এভাবে বলতে চাই নি। তুমি কিছু মনে করনা প্লিজ।
– অন্য কেউ বললে হয়ত কিছু মনে করতাম না। তবে প্রিয় মানুষদের কাছে শোনা একটা ভিন্ন কথাই অনেক খারাপ লাগে
জুলফি।
– দেখো আফিয়া আমি সত্যি এরকম কিছু ভেবে বলিনি। তুমি শুধুই ভুল ভাবছো। দেখো ভুল বুঝিওনা আমাকে। আমি তোমার
কাছে ক্ষমা চাই। তবুও এসব বলনা আর।
– হাহাহা, হয়েছে হয়েছে আর বলতে হবে না। হাহাহাহা। আমি তো মজা করছিলাম তোমার সাথে। আর তুমি কেমন ভয় পেয়ে
গিয়েছো। তুমি একটা বোকার ডিম।
– এভাবে আর মজা করবানা আমার সাথে। আমি তোমার বেপারে সবসময় সিরিয়াস ছিলাম। ( সত্যি বলতে আমার মন অনেক
খারাপ হয়েছিল, যাকে ভালবাসি সে এভাবে মজা করবে তা আমি ভাবতেও পারিনি)
তাই তাকে আবারও দুঃখিত বলে ফোন কেটে দিয়েছিলাম।
পরেরদিন সকালে কলেজে গিয়ে ক্লাস শেষে লাইব্রেরীতে বই পড়ছিলাম। তখনি আমার সামনে আফিয়া আসল। বলল,
– কাল তুমি আমার ফোন কেটে দিয়েছিলে কেন?
– আমার ভাল লাগছিল না তাই।
– আমার সাথে কথা বলতে কেন ভাল লাগবে। আমি আর কে তোমার। তোমার তো ভাল লাগবে রিসার সাথে কথা বলতে।
– রিসা আমার ক্লাসমেট। তার একটা প্রব্লেম সল্ভ করছিলাম। আর কিছুই না। কিন্তু তুমি এসব বিষয় টানছো কেন।
– পড়া বুঝানোর জন্য টিচার আছে। তুমি কি সবার সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব নিয়েছ।
– একটা ছোট বিষয়কে এভাবে বড় করছ কেন।
– হ্যা এখন তো আমি খারাপ। সব কিছুর জন্য এখন আমি দায়ি তাইতো। আমি শুধু শুধুই তোমাকে ডিসটার্ব করি।
– দেখো আফিয়া আমি তোমার সাথে তর্ক করতে চাই না। আর এসব বেপারে কথা বলতে ভাল লাগছে না। তোমার অন্য কোন
কথা থাকলে বলতে পার।
– না আমার কিছুই বলার নেই। তবে তুমি আমাকে কখনও বোঝার চেষ্টা করনি। তুমি তোমার রিসাকে নিয়েই থাক।
আমি হতভম্ব হয়ে তার চলে যাওয়া দেখছি। কোথায় ভাবলাম কালকের জন্য হয়তবা সরি বলতে এসেছে। কিন্তু কি থেকে কি বলে
চলে গেল মেয়েটা।
আমি বুঝলাম মেয়েটা অনেক জেদি কিন্তু আমাকে এসব বলার মানে কি। আর রিসা তো তারই বন্ধু, তবে তার সমস্যা সমাধানে
এর কথায় জলল।
এসব ভাবতেই নিজে নিজেই কেন জানি হেসে উঠলাম। তবে কি আফিয়াও আমাকে……
তারপর বাসায় চলে আসলাম। বিকেলে কোথাও ঘুরতে বের হলাম না আজ। তবে রাতে পড়ার সময় বারবার আফিয়ার কথা মনে
হচ্ছিল। কেন জানি খুব কথা বলতে ইচ্ছে হল। তবে এসব আবেগ নিতান্তই আমাদের কাছে তুচ্ছ বলে নিজের চাওয়া টাকে মাটি
চাপা দিলাম। রাতে চাঁদ ছিল, ছিল জোৎ্স্নায় ঘেরা চাদর, ছিলনা শুধু তোমার আমার
ভালবাসার ছায়ায় ঘেরা মলায়েম সুপ্ত প্রহর। বুকের মাঝে একটা অদ্ভুত ব্যাথা অনুভব করলাম।
তবে সান্তনার পাহাড়গুলো যেন আজ মূর্ছাময়।
তবুও নিজেকে বুঝিয়ে পরেরদিনের শুরুর জন্য নিজেকে ঘুমের রাজ্যে নিয়ে গেলাম। আজ একটু দেরিতেই ঘুম ভাঙলো।
অনেক দেরি হয়ে গেছে তাই ফ্রেশ হয়ে তাড়াহুড়ো করে না খেয়েই কলেজে চলে এলাম। কিন্তু দেরি করেছি বলে স্যার ক্লাসে
ঢুকতে দিল না। তাই ক্যাম্পাসে বটতলায় বসে গান শুনছিলাম সাতে শেক্সপিয়রের হ্যামলেট পরছিলাম। কিছুক্ষন পর দেখলাম
আফিয়া একটা ছেলের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। একসাথে ক্যাম্পাস ঘুরে দেখছে। আমার কেমন যেন খুব খারাপ লাগছিল।
তাই বাসায় চলে আসব বলে মন স্থির করলাম। কখন যে হঠাত রিসা আমার সামনে এসে দারিয়েছে খেয়াল করিনি। তখন আফিয়া
এদিকে বারবার তাকাচ্ছিল। রিসার ডাকে ঘোর কাটলো।
– কি বেপার কি করছ। ( রিসা)
– এইত গান শুনছিলাম আর পড়ছিলাম। তুমি এখানে হঠাত?
– না এমনি আসলাম। দেখলাম একা বসে আছ তাই। তাছাড়া তোমাকে কিছু বলার আছে। ( রিসা)
– কি বলার আছে।
– তোমার এবং আফিয়ার মধ্যে কি কিছু হয়েছে। সেদিন লাইব্রেরীতে কথা হচ্ছিল তোমাদের মাঝে।
পাশেই ছিলাম বলে সব শুনেছি।তাই সরি। ( রিসা)
– আরে সরি বলার কি আছে। আর সব তো শুনেছই। কিন্তু তার ওভাবে রিয়েক্ট করার মানে বুঝলাম না। আর তাছাড়া আমাকে
নিয়ে তার সমস্যা কি।
– তোমার সাথে আমাকে সে এভাবে আশা করেনি হয়ত। আর তাছাড়া সে হয়তবা তোমাকে…..
– কথা শেষ না হতেই বললাম বাদ দাও এসব কথা। এত কিছু জেনেও তুমি এখানে এসেছ। আর একটু ঝেরে কাশ। তাহলে বুঝতে
পারব।
– না দেখলাম আফিয়া এক ছেলের সাথে গল্প করছে আর তুমি একা তাই ব্ন্ধু হিসেবে তোমাকে সঙ্গ দিতে আসলাম। ( রিসা)
– হাহাহা। আচ্ছা তোমার সেদিনের গনিতের সমস্যা কি সমাধান হয়েছে। সেদিন তারাহুড়োর মাঝে কি যে বুঝালাম।
– আরে না সমস্যা নেই। তুমি অনেক ভাল বোঝাতে
পার। তুমি হেল্প না করলে সেদিন পরিক্ষাটাই দেওয়া হত না। তোমার জন্য কিছু করতে পারলে ভাল লাগবে। আজ লান্চটা
একসাথে করি। ( রিসা)
– বন্ধু বললে আবার হেল্প করেছি আমাকে লান্চ অফার করছ।
– আমি আসলে এভাবে মিন করিনি। প্লিজ অন্য কিছু মনে কর না। ( রিসা)
– আরে না। চল তবে লান্চ টা আমি করাব।
– না না। এরকম তো কোন কথা ছিল না। ( রিসা)
– কেন আমি গরীব বলে কি লান্চ করাতে পারব না। নাকি আমার সেই অধিকার নেই।
– ছিছি তুমি এভাবে বলচ কেন। আচ্ছা ঠিক আছে চল। ( রিসা)
– হুম চল….
যখন যাচ্ছিলাম তখন আফিয়া আমাদের দিকে তাকিয়ে ছিল। যদিও আমার সেরকম কোন উদ্দেশ্য ছিল না। তবুও মনে হল ভালই
হয়েছে। আর তাছাড়া যেটা সম্ভব নয় সেটা নিয়ে চিন্তা না করাই ভাল। তবুও মনে বিশ্বাস ছিল, যে আমাকে ভালবাসবে সে আমার
বাইরে দেখে নয় বরং আমার ভেতরের মনটা দেখে ভালবাসবে।
রিসাকে সাথে নিয়ে একটা সাধারন হোটেল এ ঢুকলাম। তখন দেখলাম আফিয়াও এই হোটেলেই
আসছে। অথচ এরকম সাধারন হোটেলে আমি এর আগে তাকে আসতে দেখিনি। ওরা এসে ঠিক আমাদের বিপরীতে বসলো।
খাবার অর্ডার করতেই দেখলাম আফিয়া মাঝে মাঝে এদিকে তাকাচ্ছে। আমি ওকে দেখে অস্বস্তিতে পরে গেলাম। তাই এবার
যখন তাকালো তখন হাই বললাম। কিন্তু সে কিছু বলল না। আমরা খাওয়া শুরু করলে তারা উঠে চলে গেল। রিসা কিছু না বলেই
হাসলো। আমি লজ্জায় কিছু বলতে পারছিলাম না। খাওয়া শেষ করে বিলটা আমি দিলাম। তারপর বাড়ি চলে আসি। সেদিন রাতে
পড়ার সময় দেখলাম রিসা ফোন করেছে। ফোন ধরতেই রিসা বলল আফিয়ার অনেক খারাপ অবস্থা। সে আজ অনেক কান্না
করছে। ওর বাসা থেকে ফোন করেছিল। সে নাকি খাওয়া দাওয়া কিছু করছে না। আমার খুব খারাপ লাগলো। রিসা বলল ওর সাথে
একটু কথা বলতে। আমি ওকে হ্যা সুচক কথা বলে আফিয়াকে ফোন দিলাম। কিন্তু সে ফোন ধরল না। এভাবে বেশ কয়েকবার
দেওয়ার পর যখন ধরল না তখন আমি বেশ চিন্তিত হয়ে গেলাম। হাজার হলেও তাকে যে আমিও ভালবাসি। যদিও কাউকে সেটা
বুঝতে দেই নি।
পরেরদিন সকালে কলেজে গিয়েই দেখলাম আফিয়া হেটে আসছে। একটু অবাক হলাম, যে প্রতিদিন গাড়িতে আসে সে আজ
হেঁটে আসছে।
আমি এগিয়ে গেলাম তার সাথে কথা বলার জন্য কিন্তু সে আমাকে এরিয়ে গেল। আমি আবারও তার সামনে কথা বলার জন্য
গেলে সে আমাকে সবার সামনে অনেক জোরে একটা থাপ্পর মারল। কলেজের সবার চোখ তখন আমার দিকে। কয়েকজন এসে
আফিয়াকে ডিসটার্ব করার অপরাধে আমাকে অধ্যক্ষের রুমে নিয়ে গেল। সেখানে সব শিক্ষকরাই আমাকে অপমান করল।শুধু
জাকারিয়া স্যার আমাকে জানত বলে উনি সবাইকে শান্ত করলেন। আমার কাছে এসে সবটা শুনলে তিনি আফিয়াকে নিয়ে
আসলেন। সাথে রিসা এবং শাহিনও ছিল। কিন্তু আফিয়া বলল আমি ওর বেপারে কথা বলতে চাই না। পুরো বেপারটি আমার
বিপরীতে গেল। আমি হিতাহিত জ্ঞান শুন্য হয়ে গেলাম। আমি আর তাকাতে পারিনি তার দিকে। পরে জাকারিয়া স্যারের
অনুরোধে এবং বন্ধুদের রিকুয়েস্ট এ আমাকে কলেজ থেকে বের না করে আরেকটি সুযোগ দেওয়া হল। নিজের অপমানের সীমা
সেদিন ভালভাবে টের পেয়েছিলাম। যদিও তাকে অনেক ভালবাসতাম আমি তবুও আমাকে এভাবে অপমান করাটা আমি মেনে
নিতে পারিনি। সেদিন ক্লাস না করেই বাসায় চলে এসেছিলাম। এর পর বেশ কয়েকদিন আর কলেজে যাই নি। ভালমত
পড়াশুনাও করতে পারিনি এই কয়েকদিন। তাই পরিক্ষার কিছুদিন আগে জাকারিয়া স্যারের থেকে সব কিছু বুঝে নিয়েছিলাম।
দেখতে দেখতে পরিক্ষা চলে এলো। ব্যবহারিক পরিক্ষার শেষ দিনে আফিয়া কথা বলার চেষ্টা করলেও আমি সুযোগ দেই নি।
শেষবারের মত কলেজটা ঘুরে দেখছিলাম। তখন আফিয়া এবং রিসা সামনে এসে দারালো। আফিয়া কিছু বলার আগেই রিসাকে
বললাম ভাল থেকো। আর বললাম আমরা হতে পারি মধ্যবিত্ত পরিবারের কিন্তু মান সম্মানে উচ্চবিত্তদের থেকে পিছিয়ে নই। আর
কিছু না বলে নিজের প্রিয় বন্ধুদের সাথে কথা বলে বিদায় নিচ্ছিলাম। শাহিন আর আমি একসাথেই পড়াশুনা করতাম। সে আমার
অনেক ভাল একজন বন্ধু। সে সবকিছুই জানত। তাই বিদায় বেলায় সে একটা কথাই বলল যেখানেই থাক কোন সমস্যা হলে
জানাস। ছেলেটা অনেক রহস্যময়ী ছিল। সমস্যা হলেই কিভাবে যেন সমাধান বের করে ফেলত। কিন্তু সেও জানত না যে এরপর
আমি আর দেশেই থাকব না। বাইরে যাওয়ার কয়েক মাস পরেই একটা ই-মেইল আসলো যেখানে লিখা ছিল I am On….
বুঝেছিলাম এট শাহিন। ও আমাকে খুজে পেয়েছে। তারপর আর কোন কথা হয়নি। দীর্ঘ ৫ বছর পর যখন দেশে ফিরলাম তখন
পরিচিত সবকিছুই যেন অপরিচিত মনে হয়েছিল। কিন্তু পরোক্ষনের এক দীর্ঘ নিশ্বাস বুঝিয়ে দিল এটা আামারি জন্মভূমি।
স্যার আপনাকে মেডাম ডাকছে। পুরোন স্মৃতিতে এতোটাই ঢুকে গিয়েছিলাম যে পিয়ন বেশ কয়েকবার ডেকেছে বুঝতেই
পারিনি। তাকে বললাম আপনি যান আমি আসছি। কেন ডাকছে এসব চিন্তা আমার মাথায় খেলতে শুরু করল। তারপর মেডামের
চেম্বারে গিয়ে নক করলাম,
– মেডাম আসব।
– (ভ্রু কুচকে তাকিয়ে) জি আসুন। (আফিয়া)
– আমায় ডেকেছিলেন।
– হুম, অনেকক্ষন আগে। বসুন। আর আমাকে মেডাম না বলে নাম ধরে ডাকলেই খুশি হব।(আফিয়া)
– এটা কি করে হয় মেডাম। আপনি আমার বস। আপনাকে নাম ধরে ডাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
– আমি তো অনুমতি দিচ্ছি। তাও সমস্যা আপনার।নাম ধরেই ডাকবেন।(আফিয়া)
– আসলে আমি মেডাম ডাকটাতেই স্বাচ্ছন্দ বোধ করছি। তাই দয়া করে আর জোর করবেন না মেডাম। আপনি কি কাজে
ডেকেছেন সেটা আমাকে বলতে পারেন।
– (কিছুক্ষন চুপ করে থেকে) এই ফাইলের কাজটুকু শেষ করে কাল আমাকে বুঝিয়ে দেবেন।
ফাইলের ক্লাইন্ট পরশু আসবে তাই ভালভাবে প্রেজেন্টেশন করবেন।(আফিয়া)
– কিন্তু এতগুলো কাজ একাই করা তো সম্ভব নয়।
আর এত কম সময়ে তো প্রায় অসম্ভব।
– কাজ যখন দিয়েছি, কাজ করবেন। কিভাবে করবেন জানি না।(আফিয়া)
ঠিক আছে বলে আমি উঠতে যাচ্ছিলাম তখনি আফিয়া বলল আপনাকে তো যেতে বলিনি। একটু বসুন কফি আসছে খেয়ে যান।
(আফিয়া)
– সরি মেম, আমি ডেস্কে খেয়ে নিব।
– যেটা বলছি সেটা করুন। বেশি কথা বলার অভ্যাসটা রয়েই গেছে।(আফিয়া)
অগত্যা আমাকে মেমের সামনে বসেই কফি খেতে হল। তাকিয়ে দেখি আফিয়া মুচকি হাসছে। আমি এসব নিয়ে আর ভাবতে চাই
না তাই নিজের ডেস্কে এসে কাজের প্রতি মন দিলাম। অনেক কাজ তাই ফাইলটা কমপ্লিট করতে দেখি সবাই চলে গেছে। শুধু
পিয়ন আমার জন্য অপেক্ষা করে আছে কিন্তু কিছু বলতে পারছে না। তাই কাজ শেষ করে ফাইলগুলো নিয়ে বাসায় আসব বলে
অফিসের নিচে রিক্সার জন্য দারালাম। কিছুক্ষন পর পাশে তাকিয়ে দেখি আফিয়া দারিয়ে আছে। আমি কিছু না বললে আফিয়াই
বলল চল তোমাকে পৌছে দেই। আমি ভদ্রতা দেখিয়ে বললাম ইটস ওকে মেম। আমি যেতে পারব বলে রিক্সা ডাকলাম। আফিয়া
আমার দিকে করুন চোখে তাকিয়ে ছিল। সোডিয়াম নিয়নের আলোতে তাকে অনেক মায়াবী লাগলেও আমি এবার তার
ভালবাসাতে আসক্ত হতে চাই না বলে রিক্সা নিয়ে সোজা বাড়িতে চলে এলাম। বাড়িতে এসে অনেক চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিলাম
চাকরীটা ছেড়ে দেব। যদিও এই কম্পানি অনেক ভাল তাছাড়া আমার সুযোগ সুবিধাও বেশি তারপরও নিজের জন্য এটা ছেড়ে
দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। সারারাত বসে প্রেজেন্টেশন সাজিয়ে সকালে গোসল করে আবার অফিসে গেলাম। কিছুক্ষন পরে
মেমের চেম্বারে গিয়ে নক করলাম,
– মেম আসব।
– (অবাক হয়ে) জি আসুন।(আফিয়া)
– মেম কালকের জন্য প্রেজেন্টেশন এবং ফাইলগুলো।
– আজ রাতে কি ঘুমাওনি। তুমি কি সারারাত কাজ করেছ।(আফিয়া)
-মনে মনে ভাবছি হঠাত তুমিতে চলে এসেছে আফিয়া। ওটা আপনার না জানলেও চলবে মেম।
তারপর মেমকে সম্পুর্ন কাজ বুঝিয়ে দিলাম।
– সকালে খেয়ে আসনি তাই না। চল নাস্তা করে আসি।(আফিয়া)
– মেম এসব নিয়ে আপনার না ভাবলেও চলবে। আপনি চাইলে খেয়ে আসতে পারেন। আমার ডেস্কে কিছু কাজ আছে, ওগুলো
আমাকে শেষ করতে হবে। আমি আসি।
– এখনও রেগে আছ আমার ওপর?(আফিয়া)
আমি আর কথা না বাড়িয়ে ডেস্কে চলে এলাম।আজ নাহয় কিছুটা অবাধ্য হলাম। আর হয়ত এই অবাধ্য হওয়ার সুযোগ পাব না।
মনের অজান্তেই হেসে ফেললাম। জানি এ হাসি বড়ই নির্বোধ। এটা হাসি নয়, এটা ছিল বুকের গহিনে বাস করা এক সিমাহীন
কষ্ট। যেটার অস্তিত্ব শুধু আমাতেই সীমাবদ্ধ। পুরোন কাজগুলো গুছিয়ে একটা রিজাইন লেটার লিখে ফেললাম। আজ পরিচিত
কলিকদের দুপুরে লান্চ করিয়েছি। সবাই আজ অনেক খুশি। বিকেলে মেমের চেম্বারে এসে বললাম,
– মেম আসতে পারি।
– অনেকটা অবাক হয়ে বলল এসো।(আফিয়া)
– মেমকে রিজাইন লেটার দিয়ে বললাম আমার ব্যক্তিগত সমস্যার কারনে চাকরীটা করতে পারছিনা। আন্তরিকভাবে দুঃখিত
মেম। এসব বলেই আমি উত্তরের জন্য অপেক্ষা করছি।
– আমার ওপর রাগ করে চাকরীটা ছেড়ে দিচ্ছ। আমি কি খুব বেশি অপরাধ করে ফেলেছি। আমি কি ক্ষমার যোগ্য নই।(আফিয়া)
-আপনি আমাকে এসব কেন বলছেন আমি জানিনা। তবে আপনি যদি ভেবে থাকেন একদিন এর কাজের চাপ এ আমি চাকরী
ছাড়ছি তাহলে বলব আপনি ভুল ভাবছেন। আমি চাকরী ছাড়ছি আমার ব্যক্তিগত কারনে।
এরপর উত্তরের অপেক্ষা না করেই আমি ডেস্ক থেকে আমার জিনিসপত্র নিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে আসলাম। অনেক খারাপ
লাগছে। কাছাকাছি একটা পার্কে গাছের সাথে হেলান দিয়ে নিঃশব্দে চোখের জল নিঃসরন করছি। এমন সময় পিছন থেকে
আওয়াজ আসল এতদিন দুরে থেকেছিস কি এখন বসে কাঁদার জন্য। গলাটা পরিচিত মনে হল। পেছনে তাকিয়ে দেখি শাহিন
আর রিসা দারিয়ে। তখন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না। দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম শাহিন কে। পরেই রিসাকে স্বাগত
জানালাম। তিনজন মিলেই একটা রেষ্টুরেন্ট এ গিয়ে বসলাম। অনেকদিন পর অনেক কথা হল। শাহিন অনেক আফসোস নিয়ে
বলল দেশে এসে অন্তত যোগাযোগ করতে পারতি। অনেক কিছু বলে তার রাগ ভাঙ্গালাম। রিসার সাথেও অনেক কথা হল।
অনেক খুশি হলাম যখন শুনলাম দুজনে স্বামী-স্ত্রী। বিয়ের পর নাকি মা বাবার সাথে দেখা করেছিল তারা। তারপর দুজনেই
আমাকে বলল এভাবে আর কতদিন। আমি কিছু বলতে পারলাম না। সেদিন ওদেরকে বিদায় দিয়ে রুমে এসে শুয়ে পরি। জানালা
দিয়ে চাঁদ দেখা যাচ্ছে। আশ্চর্য হলেও চাঁদের আলোটাও যেন আজ বড্ড বিষাদময়। এসব ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে যাই।পরদিন
এক কম্পানির সাথে যোগাযোগ করলে তারা অনেক বেশি বেতনে চাকরির অফার করে। সামনের মাস থেকে জয়েন করার জন্য
কথা পাকা হল। তিনদিন পর সকালে কলিং বেল বাজছে। সকালে কেউই আসে না বরাবরে। আজ হঠাত কে এলো। দরজা
খুলতেই দেখি আফিয়া দারিয়ে আছে। কিছু না বলেই সে আমার রুম এ চলে এলো। চাকরিজীবী বলে সবাই সিংগেল রুম নিয়েই
থাকতাম। আমি বললাম, মেম হঠাত আপনি এখানে। আপনি বাসা চিনলেন কি করে। আর কিছু না বলে চলে এলেন যে। আমাকে
একবার ফোন করে জানাতে পারতেন।
– চুপ। এত বেশি কথা বলা বন্ধ কর আজ আমি বলব আর তুমি শুনবে। কি ভেবেছ তুমি।নিজেকে কি ভাব। মানুষকে কষ্ট দিতে
এত ভাল লাগে তোমার।(আফিয়া)
– মেম আপনি কেন এসব বলছেন। আর কেনই বা এভাবে রিয়েক্ট করছেন।
– চুপ। এখন আমাকে মেম বলা হচ্ছে তাই না। তুমি কি জানতে না আমি তোমাকে কতটা ভালবাসতাম। কিন্তু তুমি কখনোই
বোঝনি।(আফিয়া)
– আপনি তো আমাকে কখনও বলেন নি যে আপনি আমাকে ভালবাসেন। তাহলে বুঝব কি করে। তাছাড়া আপনি একটা ছেলেকে
নিয়ে ক্যাম্পাসে ঘুরছিলেন। আমি তো এর থেকেই বুঝে নিতে পারি অনেক কিছু।
– সেদিন তুমি রিসার সাথে কথা বলছিলে তাই তোমায় দেখানোর জন্য আমার এক কাজিনকে নিয়ে তোমাকে দেখিয়ে ঘুরছিলাম।
আর তুমিও তো কম যাওনি। সেদিন রিসাকে সাথে নিয়ে লান্চ করেছ আমার সামনে। তখন আমি কি বুঝব (কেদে কেদে)।
(আফিয়া)
– এখন তো বুঝেছেন যে সে শুধুই আমার বন্ধু ছিল। আর সবার মত আমাকে না ভাবলেই পারতেন। আর পরেরদিন সেই
অপমানের জবাব কি আছে আপনার কাছে। কি ভুল ছিল আমার। আমি তখন আপনার মত উচ্চবিত্ত ছিলাম না এটাই।
-…………..
– কি হল কথা বলছেন না কেন?
– আমি তোমার সাথে আর কাউকে সহ্য করতে পারব না বলে এমনটা করেছিলাম। (আফিয়া)
– তাই বলে অপমান করবেন। আপনি চাইলেই আমাকে
নিজের করে নিতে পারতেব তা না করে আপনি অপমান করেছেন আমায়। কেন আমি কি আপনাকে ভালবাসতাম না। কতবার
ফোন দিয়েছি আমি আপনাকে একটাও ধরেননি। পরেরদিন তার জবাব আপনি অনেক ভালভাবেই দিয়েছিলেন।
– আসলে বাবা আমায় কখনও কিছু বলেনি। সেদিন বাবা বকেছিল বলে অনেক রেগেছিলাম। তাই তোমাকে কিছু না ভেবেই….
(আফিয়া)
– থাক আর বলতে হবে না। অনেক বলেছেন। এবার আসুন আপনি। নিজের জন্য একটা মানুষের জিবন নিয়ে খেলা ঠিক না।
সেদিন স্যার না থাকলে আমার জিবনটাই নষ্ট হয়ে যেত।
এবার আবার কলিং বেল বাজলো। দরজা খুলে দেখলাম রিসা আর শাহিন দারিয়ে। তারাও কিছু না বলে ভেতরে চলে এলো। কি
হচ্ছে কিছু বুঝতে পারছি না। কিরে তোরা কি করে বাসা চিনলি,
– বন্ধুর বাসা আবার কে না চিনে। তাছাড়া রুমের ভেতর তো একজন ছিলই।তাহলে আর কি। আর রায়হানকে আমি বলেছিলাম
এই বাসা ঠিক করে দিতে।(শাহিন)
কিছুক্ষন পরে আবার বেল বাজলো। এবারও দরজা খুলে দেখি মা বাবা এবং আফিয়ার মা বাবা সাথে বস এসেছেন। আমার অবাক
হওয়ার পালা তো শেষ হচ্ছে না।তাদের সালাম দিতেই কিছু না বলে সবাই রুম এ আসলেন। বাবা আমাকে ডেকে একটা পান্জাবী
হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন পরে আসতে। আমি বুঝেছিলাম সবকিছুই প্লান করা।বাবার কথার কখনও অবাধ্য হইনি। তবে আজ
বললাম কি হচ্ছে বাবা। আমি তোমার ভয়ে একটা হ্র্দয়হীনা মেয়েকে বিয়ে করতে পারব না। যে আমার সম্মানহানি করেছে সে
আর যাই হোক আমার বউ হতে পারে না। আফিয়া এসব শোনার পর
কান্না শুরু করল। তখন শাহিন বলল তুই কাকে কি বলছিস জানিস। যে তোর বাবা মার সুবিধার জন্য ভাল ভার্সিটিতে না পরে সেই
কলেজ থেকে পড়াশুনা করেছে। তুইতো দেশে ছিলি না। আন্টির একবার হার্টের সমস্যা হলে সব ধরনের সেবা করেছিল যে
মেয়েটি তুই তাকে হৃদয়হীনা বলছিস। যার বাবার এত কিছু থাকা সত্যেও তোকে ভালবেসে তোর মধ্যম আয়ের বাবা মাকেই
আপন করে নিয়েছে তুই তাকে এসব বলছিস। মেয়েটি একটা ভুল করেছিল ৫ বছর আগে। তার শাস্তি তুই এখন দিচ্ছিস। ভেবে
দেখত এই মেয়েটাকে ভাল না বেসে তুই কি ভুল করছিস না। তাছাড়া তুইও তো ওকে অনেক ভালবাসিস। সেদিন পার্কের কান্নাই
তার প্রমান। তবু তুই কেন নিজের ইগোকে প্রাধান্য দিচ্ছিস। এসব শুনে বাবা বলল উত্তর পেয়েছিস এখন পান্জাবীটা পরে রেডি
হয়ে আয়। আমি কেমন যেন চুপ হয়ে গেলাম। ভাবলাম নাহ এই মেয়েকে কষ্ট দেওয়া অপরাধ। তাই কথা না বাড়িয়ে অন্য এক
রুম এ রেডি হতে গেলাম। রেডি হয়ে দেখি ফ্লাট এর সবাই এমনকি অফিসের সবাই এসেছে। খুব বেশি অবাক হলাম জাকারিয়া
স্যারকে দেখে। ইনি এখানে কি করে এলেন। দেখলাম আফিয়া উনার সাথে হেসে কথা বলছে। অথচ এরকম হওয়ার কথা ছিল না।
স্যার আমাকে দেখেই অনেক জোরে হেসে উঠলেন এবং আফিয়াকে বলললল পাত্র তো রেডি। পাত্রী এখনও বসে আছে যে।
একসময় আফিয়াও সেজে আসলো। নীল বেনারসীতে তাকে অমায়িক লাগছিল।এরপরে ভালভাবেই আমাদের বিয়ে হল। বাসর
ঘরে ঢুকার আগে শাহিনকে বললাম একটা সিগারেট খেলে কেমন হয়। ও বলল বউয়ের হাতে মাইর না খেলে জলদি রুম এ যা।
আমি বললাম কেন রিসা কি মেরেছিল তোকে। সে হেসে বলল আরেকদিন বলব আপাতত যা। তারপর কলিকদের অত্যাচারে
রুমে ঢুকতেই হল। আমি যে তাকে কতটা ভালবাসি এটা বলার জন্য মন বেকুল হয়ে ছিল। আর যে কারনে শরীর কাপছে আমার।
বিছানার সামনে যেতেই সে নিচে নেমে সালাম করল। আমি মাথায় হাত দিয়ে বললাম শান্তিতে সংসার করিস মা। তারপর ও মাথা
উঠিয়ে কিছুক্ষন মাথানিচু করে চুপ করে থাকল। হঠাত কান্না করে সে আমাকে জড়িয়ে ধরল। আমি তো ভ্যাবাচেকা খেয়ে চুপ
হয়ে আছি। আফিয়া বলল আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি যা করেছি ঠিক করিনি। প্লিজ ক্ষমা করে দাও।
ওকে বললাম আমি তোমাকে তোমার থেকেও বেশি ভালবাসি। আর যাকে ভালবাসি তার ওপর কি রাগ করে থাকা যায়। বলেই
পরম আদরে তার কপালে একটা ভালবাসার পরশ একে দিলাম। সে লজ্জা পেয়ে আমার বুকে মুখ লুকালো। তারপরে
দুইরাকাআত নফল নামাজ পরে আমরা নতুন জিবনে পা রাখলাম। ও আমার বুকে মাথা দিয়ে আছে। ও আমাকে বলল এভাবে
সারাজিবন ভালবেসে আগলে রাখবে তো। আমি বললাম হ্যা রাখব ইনশাআল্লাহ। কিন্তু প্রতিদিন তোমার সেই লজ্জামাখা মুখটুকু
কাছ থেকে দেখতে দিতে হবে মেডাম আর বিনিময়ে আমাকেও অনেক ভালবাসতে হবে। তখন সে আমার গালে একটা চুমু দিয়ে
বুকে মুখ লুকিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। তখন মনে হল পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি মানুস আমি। মা বাবা পাশে থাকলে আর
আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখলে নিয়তি কখনও খারাপ হয় না…….
প্রকৃতির উদ্দেশ্যে কিছু বলার আছে,
ইগোর থেকে ভালবাসার শক্তি অনেক বেশি।
ভালবাসাকে যাচাই করে নয়, অনুভুতি দিয়ে বুঝতে হয়।
আর ভালবাসাতে বিশ্বাস দৃঢ় থাকলে সেটা ডায়মন্ড এর বন্ড এর মত শক্তিশালী হয়।
ভালবাসার উর্দ্ধে কোন চাওয়া পাওয়া থাকতে পারে না।
ভুলত্রুটি মার্জনীয়……