গল্পের ছেলেটির নাম নিহাদ। বাংলাদেশ সুইডেন পলিটেকনিকে “ইলেকট্রিকাল টেকনোলজিতে” ৩য় বর্ষে পড়ে। বিভিন্ন প্রযুক্তি বিষয়ক সমস্যার সমাধান নিহাদের নখদর্পণে। সেই সূত্রে অনেকের মোবাইল/পিসি ইত্যাদি সমস্যা হলেই নিহাদের ডাক পড়ে। তেমনি এক কাজে বন্ধুর আত্মীয়ের বাসায় গিয়েছিল নিহাদ। ওদের পিসিতে প্রবলেম ছিল। বন্ধুর কাজিনের সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে নিহাদের চোখ পড়ে পাশের রুমের হিজাব পরিহিত মেয়েটির দিকে। অপরূপ সুন্দর মেয়েটি, আল্লাহ যেন জগতের সব রূপ তার মুখে ঢেলে দিয়েছেন। মাত্র ১০ সেকেন্ড তাকিয়েছিল নিহাদ আর তখনি মেয়েটির প্রেমে পড়ে যায়, যাকে Love At First Sight বলে। মেয়েটি নিহাদকে দেখেনি তার মনোযোগ ছিল বই পড়ার দিকে। তৎক্ষণাৎ মেয়েটির দিকে চোখ রেখেই নিহাদ আল্লাহর কাছে বলে, “হে আল্লাহ এই মেয়েটি যদি গার্লফ্রেন্ড হত? কতই না ভালো হত”
ওদের পিসির সমস্যা সমাধান করে নিহাদ তার রুমে চলে আসে, কিন্তু মন পড়ে থাকে সেই রুপকুমারীর কাছে।
কিছুদিন পর ওদের ক্যাম্পাসে ডিপার্টমেন্টের সামনে আবার সেই রুপকুমারীর দেখা পায়। চশমা পড়া মেয়েটি যখন হাসছিল তখন মনে হচ্ছিল যেন চারপাশে এক অপরূপ সৌন্দর্য বিরাজ করছে। এ যেন নিহাদের সেই “স্বপ্নে দেখা রাজকুমারী” যার ভাবনায় বিভোর থেকে সে এতদিন মনের মাধুরী মিশিয়ে কবিতা লিখেছে, গল্প লিখেছে। পুরনো প্রেম আবার নাড়া দিয়ে উঠে নিহাদের মনের রাজ্যে। বন্ধু শরীফের ডাকে নিহাদ ভাবনার রাজ্য থেকে বাস্তব জগতে ফিরে আসে,
– কি বন্ধু এত মনোযোগ দিয়ে কি দেখ?
– তেমন কিছু না।
শরীফ নিহাদের তাকানো দিকে চেয়ে চিৎকার করে উঠে,
-বুঝেছি মামা বুঝেছি। পড়েনা চোখের পলক……
-দোস্ত মেয়েটা কে রে?
-কোন মেয়েটা?
-ঐ যে চশমা পড়া মিষ্টি মেয়েটা।
-ওটা তো নুসরাত আপু।
-হোয়াট আপু?
-হে আপু, আমাদের সিনিয়র।
শরীফের কথা শুনে নিহাদের মুখটা কালো হয়ে যায়, আপন মনেই বলে উঠে, “হায়রে কপাল শেষ পর্যন্ত বড় আপুর প্রেমে পড়লাম”
কবিরঃ কিরে তুই কার দিকে তাকিয়ে ছিল?
নিহাদঃ হারিয়ে গেছে।
শরীফঃ মানে?
নিহাদঃ আমি আমার রাজকুমারীকে হারিয়ে ফেলেছি….
এরপর ক্যাম্পাসে আর নুসরাতকে দেখতে পায়নি নিহাদ। হয়তো ফাইনাল এক্সাম দিয়ে চলে গেছে। সময়ের স্রোতে একসময় নুসরাতকে ভুলে যায় নিহাদ। একদিন নিহাদের ইনবক্সে নুসরাত জাহান আইডি থেকে একটি মেসেজ আসে,
নুসরাতঃ নিহাদ, আমি তোমার ফ্রেন্ডের কাজিন, রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করো”
নিহাদঃ কোন ফ্রেন্ড?
-তোমার ক্লাসমেট শামিমের।
-ওহ! আপনি সেই নুসরাত আপু?
-হুম।
-সরি আপু প্রথমে চিনতে পারেনি, এখনি একসেপ্ট করছি।
– গুড বয়। তুমিতো ভালো ড্যান্স করো, তোমার Blue Eyes ড্যান্সটা অসাম হইছে।
-আমার ড্যান্স আপনি কোথায় দেখলেন?
-শামিমের মোবাইলে।
-ও আচ্ছা।
-হুম, তোমার ড্যান্স দেখে আমিতো ফিদা….. হা হা।
-এহেম। থ্যাংকস আপু।
-তোমার নাম্বারটা পেতে পারি?
-কেন আপু?
-যে এত ভালো লেখে, এত এত উপদেশ মূলক পোস্ট। তার সাথে একটু কথা বলতে ইচ্ছা হল। কেন কোন প্রবলেম।
-নাহ আপুকে নাম্বার দিলে আবার কি প্রবলেম? 01624 584 986
-আমি কাল কল দিব।
-ওকে।
এভাবেই আবার নতুন করে নিহাদ আর নুসরাতের পরিচয় হয়। পুরনো একটা অনুভূতি আবার নাড়া দিয়ে উঠে নিহাদের মনের কোণে, কিন্তু আবার স্মিত হয়ে যায় কারণ তাদের সম্পর্ক এখন অনেকটা ভাই-বোনের মত। পরদিন বিকেলে একটা অচেনা নাম্বার থেকে কল আসে। নিহাদ রিসিভ করে,
-হ্যালো, মিস্টার রাইটার, ড্যান্সার, কি খবর?
-কে বলছেন?
-আমি সেই যাকে আপনি গতকাল নাম্বার দিয়েছিলেন।
-নাম্বার তো প্রায় ১০ জনকে দিয়েছি।
-কি?? তাদের মধ্য থেকে বিশেষ কেউ ছিলনা?
-কয় নাতো?
– নিহাদ আমি তোমার নুসরাত আপু।
-আমি জানি। মজা করছিলাম। কেমন আছেন?
-আমাকে কি খুব বুড়ি বুড়ি লাগে?
-কেন বলুনতো?
-তাহলে আপনি আপনি করছো কেন?
-না মানে, আপনি তো আমার বড় তাই
-তোমার ডেট অফ বার্থ কবে?
-৫ ডিসেম্বর ১৯৯৪
-আমার ৯ মার্চ ১৯৯৪। মাত্র ৯ মাসের ব্যাবধান আমাদের। আমাকে তুমি করে বলবে।
-জি আচ্ছা।
-আবার আপনি?
-আসলে প্রথমবার তো তাই একটু প্যাচ লেগে যায়, ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে।
-হুম এখন একটা গান শোনাও।
-আমিতো গান গাইতে পারিনা।
-দেখ মিথ্যা বলবানা, ফেসবুকে গীটার নিয়ে যেভাবে পোজ দিয়ে ছবি আপলোড করো তোমাকে তো মিউজিশিয়ান মনে হয়।
-ঠিক আছে, শুনাবো একটা শর্তে
-কি শর্ত?
-গান শুনে হাসতে পারবেন না। সরি হাসবে না
-হি হি হি, ওকে হাসবো না।
-একি আপনি দেখি গান শুনার আগেই হাসছো?
-তোমার আপনি-তুমি বলার মাঝে গরমিল দেখে হাসছি। ওকে আর হাসবোনা, গান শুনাও।
নিহাদ গান শুরু করে,
[আমি আপন করে ভালবাসবো তোমায়,
বল তুমি ভালবাসতে দেবে আমায়
আমি আশায় ভালবাসায় আজ বাধবো,
সুখের ঘর তোমায় নিয়ে তুমি যেথায়
পৃথিবীর সব ভালবাসা এনে দেব আমি,
তোমার হাতের মুঠোয় বল তুমি নেবে
ঐ আকাশের রঙ নিয়ে সাজাবো আজ তোমায়,
আপন করে বল সাজাতে দেবে……… ]
-হ্যালো আপু, গানতো শেষ।
-ওয়াও। এত সুন্দর কণ্ঠ তোমার?
-থাক হাসতে মানা করেছি বলে পাম দিতে হবে না।
-না না পাম না, সিরিয়াসলি নিহাদ, তোমার গানের কণ্ঠ অনেক ভালো।
-থ্যাংকস…….
-কাল ১১ টার দিকে ক্যাম্পাস যাবো, তুমি আসবে?
-কেন?
-দেখা করবো।
-ওকে আসবো আপু।
– আর হে, তোমার কবিতার খাতাটা নিয়ে আসিও, এখন রাখি আল্লাহ হাফেজ।
সকালে নুসরাতের কলে ঘুম ভাঙে। নিহাদ ঘুম ঘুম চোখে রিসিভ করে কানে লাগায়।
-নিহাদ আমি ক্যাম্পাসে আছি, আসো।
-ওকে আসছি।
-একি তুমি এখনো ঘুমাচ্ছো?
-কয় নাতো।
-জলদি আসো, আর মনে করে কবিতার খাতাটা নিয়ে আসিও।
-ওকে।
নিহাদ তড়িঘড়ি করে উঠে ফ্রেশ হয়ে কবিতার খাতা হাতে ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে যায়, পাশের দোকান থেকে দুইটা Munch কিনে ক্যাম্পাসে ঢুকে। ক্যাম্পাসের বাগানের সামনে চশমা পড়া নুসরাতকে দেখতে পায়, চোখে চোখ পড়তেই নুসরাত মিষ্টি হেসে নিহাদকে ইশারায় কাছে আসতে বলে। নিহাদ এগিয়ে যায়।
নুসরাতঃ কি খবর মিস্টার রাইটার সাহেব?
নিহাদঃ ভালো, আপনার?
-আবার?
-সরি তোমার কি খবর?
-ভালো, তৃণা Meet Nihad…
তৃণা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে নুসরাতের দিকে তাকিয়ে বলে,
-কে ও?
-রাইটার, ড্যান্সার, কবি, শিল্পী আমার লাভার নিহাদ হি হি হি।
নুসরাতের জবাব শুনে নিহাদ পুরা স্ট্যাচু অফ লিবার্টি হয়ে যায়। নুসরাতের ডাকে ধ্যান ভাঙে,
-হা, করে কি দেখ?
-কিছুনা আপু।
-কবিতার খাতা এনেছো?
-হে, এই নাও।
খাতার সাথে দুইটা Munch নুসরাতের হাতে দেয় নিহাদ।
-এগুলা কার জন্য?
-তোমার জন্য।
-আমি কি বাচ্চা?
-নাহ, তুমি আমার স্বপ্নে দেখা রাজকুমারী। আমি যায় আপু। টাটা
নিহাদ চলে আসে, আর একটা মেসেজ পাঠায় নুসরাতের মোবাইলে,
“তুমি দেখতে অনেক সুন্দর নুসরাত, ঠিক আমার গল্পের চরিত্র রাহার মত, ঠিক আমার কল্পনা রাজ্যের রাজকুমারীর মত”।
তারপর প্রতিদিন ফেসবুক চ্যাট, মোবাইলে কথা বলা, সুযোগ পেলেই দেখা করা চলতে থাকে। এমন করে নিহাদ কখন যে নুসরাতকে ভালবেসে ফেলে তা সে নিজেও জানে না, কিন্তু কখনো বলতে পারেনি কারণ নিহাদ ভয় পেত যদি বন্ধুত্বের সম্পর্কটা নষ্ট হয়ে যায়, তাছাড়া নুসরাত কি ভাববে। কিন্তু সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে নুসরাত সেই রাস্তা সহজ করে দেয়। একদিন ফোন কলে কথা বলার এক পর্যায়ে,
নুসরাতঃ নিহাদ আজ তোমাকে একটা জিনিস ডাকতে ইচ্ছে করছে।
নিহাদঃ কি?
-তোমাকে……… যাহ আমার লজ্জা লাগে।
-আরে বাবা, লজ্জার কি আছে, বল।
-তোমাকে জান বলে ডাকতে ইচ্ছে করছে।
নুসরাতের কথা শুনে নিহাদ যেন ৪৪০ ভোল্টের শক খায়। জানুয়ারি মাসের তীব্র শীতেও সে ঘামতে শুরু করেছে।
-কি হল কিছু বলছো না যে?
-নুসরাত আসলে আমি তোমাকে ভালবাসি, সেই প্রথম দিন থেকে কিন্তু কখনো বলার সাহস পায়নি।
-তাই?
-হুম, তোমাকে অনেক ভালবাসি নুসরাত।
-আমিও…
এরপর থেকে এক নতুন পথচলা শুরু হয় তাদের। নিহাদ নুসরাতকে রাজকুমারী বলে ডাকতো, আর নুসরাত ডাকতো রাজকুমার বলে। নিহাদ সবসময় নুসরাতকে ফোন দিত, রাতে ঘুমাবার আগে একবার, সকালে ঘুম থেকে উঠে একবার, দুপুরে খাবার আগে একবার, সন্ধার নাস্তার সময় একবার, নিহাদ অনেক টেককেয়ার করতো নুসরাতের। এই অল্প সময়ে অনেক বেশী ভালবেসে ফেলেছিল সে তার রাজকুমারীকে। রাজকুমারীর জন্য কবিতা লিখতো, গান লিখতো, তারপর সেগুলো তাকে শোনাতো, আর রাজকুমারী অনেক প্রসংশা করতো। একদিন রাত ১ টায় কবিতা লেখার পর নিহাদ রাজকুমারীকে শোনাবে বলে কল দেয়, কিন্তু ফোন ওয়েটিং। ১০ মিনিট পর আবার কল দেয়, কিন্তু ওয়েটিং। এভাবে ১ ঘণ্টা ওয়েটিং থাকার পর নুসরাত কল রিসিভ করে।
-কি ব্যাপার, এতক্ষণ কার সাথে কথা বলছিলে?
-দুলাভাইয়ের সাথে।
-এত রাতে দুলাভাইয়ের সাথে কি কথা?
-আরে, তেমন কিছু না। কেন ফোন করেছো বল?
-রাত জেগোনা, ঘুমিয়ে যাও….
নিহাদ মন খারাপ করে কলটা কেটে দেয়। এরপর থেকে প্রায় এই সময়ে নুসরাতের নাম্বার ওয়েটিং পেত নিহাদ, জিজ্ঞেস করলে বলতো, বান্ধবীর সাথে/ বোনের সাথে কথা বলে। জবাবে নিহাদ শুধু ছোট্ট করে বলতো, “আমাকে কখনো ঠকিয়োনা রাজকুমারী, তোমাকে অনেক অনেক ভালবাসি, নিজের জীবনের মত করে ভালবাসি”
নুসরাতঃ কাল আমাদের Rag Day ক্যাম্পাস আসবে তো?
নিহাদঃ জানিনা।
-কি জানোনা। না আসলে কিন্তু খবর আছে।
-দেখা যাক।
(১২-০২-২০১৫) “Rag Day”
নিহাদের অনেক অভিমান জমে আছে নুসরাতের প্রতি। সকালে একের পর এক কল দিয়ে যাচ্ছে নুসরাত, নিহাদ রিসিভ করেনা। কিন্তু ভালবাসার মানুষটির উপর বেশিক্ষণ অভিমান করে থাকা যায়না। অবশেষে রিসিভ করে,
-কি হল তোমার? ক্যাম্পাসে আসোনি কেন?
-আসবোনা।
-কেন?
-জানি না।
বলে কেটে দেয় নিহাদ। আবার কল আসে,
-নিহাদ, ক্যাম্পাসে আসো।
-না।
-নিহাদ, আসবেনা তুমি? আমি বলছি আসো (চিৎকার করে উঠে নুসরাত)
-এখন আর আসবোনা। সকালে গিয়েছিলাম তুমি পাত্তা না দিয়ে চলে গেছ।
-তখন একটু কাজ ছিল। এখন আসো।
-পারবোনা।
-ঠিক আছে, আমি এখন বাসায় যাচ্ছি, বিকেলে যেন গেটে দেখতে পাই, আমি কালো শাড়ি পড়ে আসবো, আর তোমার চোখে চোখ রেখে সেই তিন ম্যাজিক্যাল ওয়ার্ড বলবো।
-হুম
কলটা কেটে যায়, নিহাদ মুচকি হেসে উঠে। রেডি হয়ে বিকেলে ক্যাম্পাসে যায় নিহাদ, আর গেটের সামনে তার রাজকুমারী নুসরাতের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। নুসরাতের কল আসে,
-কোথায় তুমি?
-ক্যাম্পাসের গেটে। তুমি?
-আমি কাছাকাছি এসে পড়েছি।
-ওকে আসো।
কিছুক্ষণ পর নুসরাত আসে, কালো শাড়ি চশমা চোখে মোহনীয় লাগছিল তাকে।
-আমাকে কেমন লাগছে?
-অনেক সুন্দর, ঠিক যেন ব্ল্যাক এঞ্জেল।
-চলো ছবি তুলি।
নিহাদের সাথে কয়েকটা ছবি তুলে নুসরাত। তারপর বান্ধবীদের সাথে চলে যায়। ঘণ্টাখানেক পর্যন্ত নুসরাতের কোন খবর না পেয়ে নিহাদ কল করে।
-কোথায় তুমি?
-এইতো ক্যাম্পাসের বাগানে।
-কি করো?
-বন্ধুদের সাথে বসে আছি, সরি নিহাদ তোমাকে সময় দিতে পারছিনা।
-It’s Okay.
-তুমি কোথায়?
-আমি মাঠে, অনুষ্ঠান দেখছি।
-বাগানের দিকে আসো।
-ওকে আসছি।
নিহাদ বাগানের দিকে যায়। বন্ধুদের মাঝ থেকে উঠে মুখে মিষ্টি হাসি নিয়ে টুকটুক করে নিহাদের কাছে হেটে আসে নুসরাত। আজ নুসরাতকে সত্যিই রাজকুমারীর মত লাগছে।
-রাজকুমারী আমি সকালের জন্য অনেক সরি।
-তার জন্য I love You…
নিহাদ মুচকি হেসে উঠে…
-তোমার Love u বলার মাঝে ফিল নেই।
-নিহাদ তাকাও। I love You রাজকুমার। ইয়েস চোখে চোখ রেখে বলতে পেরেছি।
-এখন ঠিক আছে। I love you too রাজকুমারী…
এই নুসরাত এই দিকে আয়….. নুসরাতের বান্ধবীরা ডাক দেয়।
-আসছি।
-যাও তোমার বন্ধুরা ডাকছে।
-না যাবোনা।
-ওদের সময় দাও, আজকের পরতো আর দেখা হবেনা।
-একটু পর আমি স্টেজে উঠবো, ড্যান্স পারফর্ম করার জন্য।
-ওকে আমি থাকবো।
-ওকে টাটা….
নিহাদ সেখান থেকে চলে এসে স্টেজে উঠে, এবং জমিয়ে পারফর্ম করে, এটি ছিল ওর জীবনের প্রথম স্টেজ পারফর্ম। অনেকগুলো হাততালি আর প্রসংশা পেয়েছে সে। বিশেষ করে, তার রাজকুমারীর মোবাইল থেকে ছোট্ট একটি মেসেজ, “আমি জানি তুমি আমার জন্য পারফর্ম করেছো, অনেক অনেক সুন্দর হয়েছে, এতোগুলা লাভ ইয়ু”।
(১৪-০২-২০১৫) “ভ্যালেন্টাইন ডে”
আজ “ভ্যালেন্টাইন ডে” নিহাদ সেদিন বাড়ি চলে যেত, কিন্তু রাজকুমারীর কারণে যায়নি। রাজকুমারী চায় নিহাদ যেন এই দিনটা তার সাথে কাটায়। সকাল ১১ টায় রাজকুমারী ফোন করে,
-নিহাদ, আমার বাসায় চলে আসো।
-বাসায় কেন? তুমি না বললে ক্যাম্পাসে আসবে?
-নাহ, প্রবলেম, তুমি বাসায় চলে আসো। কিছু হবেনা।
-Are You Sure?
-হুম আসো।
নিহাদ তাদের বাসায় যায়, নুসরাত দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে ছিল।
-এতক্ষণ লাগলো আসতে?
-কই আসলাম তো। রাজকুমারী এই নাও তোমার জন্য
রেপিং পেপারে মুড়ানো একটা প্যাকেট এগিয়ে দেয় নিহাদ..
-এটা কি?
-খুলে দেখ।
-Wow!! এতগুলা চকলেট আমার জন্য??
-হুম তোমার জন্য। হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন ডে রাজকুমারী।
– হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন ডে। (Smiley)
-বাসায় কেউ নেই নাকি?
-নাহ, ভাইয়া-আব্বু বাজারে, আর মা একটু বাহিরে গেছে।
– এহেম!! আমি যায় বাবা, সিরিয়াসলি ভয় লাগছে।
-কিছু হবেনা বসো।
-রাজকুমারী দেখতো ওইটা কি?
নুসরাত ঐদিকে তাকায়, আর এই সুযোগে নিহাদ তার গালে ভালবাসার রেখা একে দেয়। আকস্মিক ঘটনায় নুসরাত অবাক হয়ে যায়। ধীরে ধীরে ওর মুখ লাল হতে শুরু করে, লজ্জায় মুখ ঢেকে ফেলে নুসরাত। নিহাদ পাশের চেয়ারে বসে পড়ে, নুসরাত তার পাশে বসে। কিছুক্ষণ নীরবতা।
-নিহাদ তোমার হাতটা দাও।
– এই নাও।
-এত মনোযোগ দিয়ে কি দেখ?
-তোমার হাতের রেখা।
-তুমি এগুলো বিশ্বাস করো? এগুলো তো কুসংস্কার।
-তোমার হাত এত ঘামছে কেন?
নুসরাত পরম মমতায় ওড়না দিয়ে নিহাদের হাতের ঘাম মুছে দেয়। তারপর হাতে হাত রেখে শক্ত করে চেপে ধরে। পরদিন নিহাদ বাড়ি চলে আসে। সেদিনের পর নুসরাতের প্রতি নিহাদের ভালবাসা আরো বেড়ে যায়। অনেক ভালবেসে ফেলে সে তার রাজকুমারীকে। কিন্তু সেদিনের পর থেকে রাজকুমারী কেমন যেন বদলে যায়, প্রায় মোবাইল বন্ধ থাকে, নিহাদ ফোন দিলে ঠিকমত কথা বলে না। তারপর একদিন নিহাদের ইনবক্সে রাজ নামের একটি আইডি থেকে মেসেজ আসে,
রাজঃ তুমি নুসরাতকে চেন?
নিহাদঃ কোন নুসরাত?
-বিএসপিআই তে পড়ে, এবার ফাইনাল দিল।
-হে চিনি। কেন?
-ওর বড় ভাইয়ের নাম্বারটা আমাকে দিতে পারবে?
-পারবো কিন্তু কেন?
-দেখ নিহাদ, তোমাকে আমি ছোট ভাই হিসিবেই বলছি, নুসরাতের এতদিন আমার সাথে রিলেশন ছিল, কিন্তু হঠাৎ করে বলে ও আর রিলেশন রাখবে না। ও নাকি অন্য কাউকে ভালবাসে। একটা ব্যাপার চিন্তা করে দেখ, আমার সাথে রিলেশন থাকাকালীন ও কি করে আরেকটা রিলেশনে জড়িয়ে গেল?
-ভাই, আপনার কাছে কোন প্রমাণ আছে?
-হে আছে।
-গ্রেট। আপনাদের কনভারসেশনের একটা স্ক্রিন শট দিতে পারবেন?
-ওকে আমি দিচ্ছি। আর রেকর্ডও আছে, রেকর্ডগুলো শুনলে তোমার লজ্জা লাগবে।
রাজের কথা-বার্তায় নিহাদ পুরো অবাক। না না, আমার রাজকুমারী এমন করতে পারেনা, রাজ মিথ্যা বলছে। একটু পর তিনটা স্ক্রিনশটের মেসেজ আসে।
একটি স্ক্রিন শট ছিল ১২-০২-২০১৫ তারিখের যেদিন নুসরাত নিহাদকে শাড়ি পড়ে ভালবাসি বলেছিল। নুসরাত আর রাজের মধ্যে ১২ তারিখের চ্যাট গুলো এরকম।
রাজঃ হঠাৎ হাত দেখার ইচ্ছে হল কেন?
নুসরাতঃ আমি দেখব দাও। না হলে আমার মন ভালো হবে না।
-ওকে বাবু দিচ্ছি।
তারপর ১৩-০২-২০১৫ তারিখের গুলো ছিল
রাজঃ কি করো জান?
কি হল রিপ্লাই দাও না কেন?
নুসরাতঃ নেট প্রবলেম গো জান…
মেসেজগুলো দেখে নিহাদ যেন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। বার বার নিজেকে বলছে একি দেখছি আমি? আমার রাজকুমারী কি করে এমন করলো? আমিতো নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিনা। সাথে সাথে নুসরাতকে কল করে নিহাদ।
-রাজকুমারী, এগুলো কি?
-কোনগুলো?
-তুমি রাজকে ভালোবাসো, জান হাত দেখবো, এসবের মানে কি?
-তুমি কি বলছো এসব?
-তুমি রাজ নামের কাউকে চিনোনা?
-হে চিনি, আমাকে ভালবাসে কিন্তু আমি বাসিনা।
-তুমি আবার মিথ্যা বলতেছো? তুমি ওর হাত দেখতে চাওনি? ওকে জান ডাকোনি?
-হে চেয়েছি?
-তুমি ঐ ছেলের সাথে রিলেশন থাকা অবস্থায় আমার সাথে রিলেশন কেন করলে? যেদিন আমাকে শাড়ি পড়ে ভালবাসি বলেছিলে সেদিন রাতেই ওর সাথে এসব চ্যাটিং করেছো। আমার সাথে কেন এমন করলে রাজকুমারী? কেন ঠকালে আমাকে? কেন চিট করলে আমার সাথে?
কথাগুলো বলতে বলতে কেঁদে ফেলে নিহাদ।
-তুমি ঐ রাজের কথা বিশ্বাস করলে?
-কেন করবোনা, ও আমাকে প্রমাণ দেখিয়েছে।
কি ব্যাপার কিছু বলছো না কেন? হা হা কিছু বলার থাকলে তো বলবে। ভালো থেক। টাটা।
নিহাদ কলটা কেটে দেয়, চোখের জলকে থামাতে পারছেনা সে, নুসরাতের নাম্বারগুলো ডিলিট করে দেয়। তারপর অনেক রাগ-অভিমান ঝগড়া-ঝাটি, কান্না-কাটি। নুসরাত তার ভুল স্বীকার করে নিহাদ তাকে ক্ষমা করে দেয়। আর বলে, Past Is Past.. যা হবার হইছে, নেক্সট টাইম আর এমন করোনা রাজকুমারী, তাহলে হয়তো আমি মারা যাবো। তারপর থেকে নিহাদের প্রতি নুসরাতের টেককেয়ার যেন বেড়ে যায়, ঘণ্টায় ঘণ্টায় ফোন দিয়ে নিহাদের খোঁজ-খবর নিত। একদিন হঠাৎ করে সব বন্ধ হয়ে যায়। নিহাদ কল করে, কিন্তু নাম্বার অফ। ফেসবুকে নক করলে ঠিকমত কথা বলতো না। নিহাদের কাপ্তাই আসার দুইদিন আগে একবার ফোনে কথা হয়, তারপর আবার গায়েব। নিহাদ কাপ্তাই পৌঁছে সর্বপ্রথম চেয়েছিল তার রাজকুমারীর সাথে দেখা করবে, কিন্তু কল দিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। কাপ্তাই আসার পর প্রতিদিন নিহাদ কল করতো, কিন্তু চিরচেনা সেই নাম্বারটি বন্ধ। অতঃপর ফেসবুকে রাজকুমারীকে পাওয়া যায়…
-তোমার নাম্বার অফ কেন? আজ দুইবার তোমার বাসায় গিয়েছিলাম, কিন্তু তোমাকে পায়নি। আর আমাকে আনফ্রেন্ড করলে কেন?
-এখন আর এয়ারটেল সিম উইজ করিনা, রবি নাম্বার তো অন। এখন তেমন বাসায় থাকিনা একটা ট্রেনিং করছি তাই। আর আমি তোমাকে আনফ্রেন্ড করিনি, খোঁদার কসম।
-রাজকুমারী তুমি হঠাৎ বদলে গেলে কেন?
-তোমার সেদিনের ব্যাবহার আমাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে।
-আমিতো তোমাকে খারাপ কিছু বলিনি, তাছাড়া সেগুলো ছিল নিতান্তই রাগের মাথায় বলা, আমিতো মন থেকে বলিনি রাজকুমারী।
-তুমি আমাকে চিট, ছলনাময়ী বলেছো। আমার এক্সবয়ফ্রেন্ড ঠিক এভাবেই আমাকে বলেছিল।
-তোমার এক্সবয়ফ্রেন্ড!!!!!!!!!!!!!!!! তোমার বয়ফ্রেন্ড ছিল এটা আগে বলনি কেন?
-নিহাদ। সময় বদলে গেছে।
-সময় বদলায়নি রাজকুমারী। তুমি বদলে গেছো। এই ভালবাসার বাঁধন ছেড়ে চলে যেতে চাচ্ছো তো? ঠিক আছে যাও। তোমাকে মনের রাজ্যের রাজকুমারীর মত ভালবাসাতাম, আমার ভালবাসা বুঝলে না। ওকে ফাইন, তোমাকে আর বেঁধে রাখবো না, মুক্তো করে দিলাম।
-যা ইচ্ছা ভাবো, আমি কিছু বলবো না।
নুসরাতের এমন ব্যাবহারে নিহাদ ভিতর থেকে ডুকরে কেঁদে উঠে। চারপাশের সুন্দর পৃথিবীটা হঠাৎ করে অর্থহীন হয়ে যায়। আপন মনে বিড় বিড় করে উঠে নিহাদ,
“কত স্বপ্ন সাজিয়েছিলাম আমি রাজকুমারীকে নিয়ে।
সেই রাজকুমারী যাকে আমি আকাশের রঙ দিয়ে সাজাবো, রঙধনুর রঙে শাড়ি বানাবো, তাকে পরাবো। শাড়ি পরে, মিষ্টি হেসে, রাজকুমারী টুকটুক করে হেঁটে আসবে আমার কাছে, আর আমি দু হাতে জড়িয়ে ভালবাসার পরশে আগলে রাখবো।
সেই রাজকুমারী যার জন্য আমি কবি হবো, শিল্পী হবো, ভালবাসার বাতাসে এলোমেলো করবো তার চুল, হাতে হাত রেখে জগতের বিচিত্র নিয়ম গুলো ভেঙ্গে হারিয়ে যাব দূর অজানায় যেখানে নীল আকাশ হারায়।
সেই রাজকুমারী যাকে আমি কখনো হারিয়ে যেতে দেবনা, কাঁদতে দেবনা, শুধু আপন করে ভালবাসবো।
কিন্তু আজ একি হল আমার সাথে, নাহ এভাবে বেঁচে থাকার মানে হয়না। আমি নিজেকে শেষ করে দিব।
নিহাদ ফ্যানে রশি বাঁধে, তারপর ঝুলার অনেক চেষ্টা করেও পারেনি… কে যেন বাঁধা দিচ্ছিল তাকে। তার মনে হচ্ছিল জীবন তাকে শান্তিতে বাঁচতে দেবেনা, আবার মরতেও দেবেনা.. শুধুমাত্র কষ্ট দেয়ার জন্য বাঁচিয়ে রাখবে.. শেষমেশ ব্যর্থ হয়ে শুয়ে পড়লো সে, তখন মাথায় সুবুদ্ধির উদয় হল.. নিহাদের অবচেতন মন তাকে বলছে,
“নিহাদ কার জন্য তুমি এমন করছো? যে তোমাকে বার বার কষ্ট দেয়? যে তোমার ইমোশন নিয়ে খেলা করে? যে তোমাকে বুঝতে পারেনা? Come on NHD, You Are just Perfect, No one Like You, And No one Can’t Be Like you, Show Off And Cheer up….. Don’t Behave Like Emotional Frantic.. Think About Your Family, Think about your Mother Smile, If you Die Today What About Her Smile, What About Your Promise belongs to Her.. ”
নিহাদ চিন্তা করে দেখলো তার মন একদম ঠিক বলছে, “আমি কার জন্য কিসের নেশায় এমন করছি, আমি তো আসলেই পাগলামি করছি”
রশিটা খুলে পুড়িয়ে ফেললো , তারপর লম্বা একটা নিশ্বাস নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো.. কিন্তু রাজকুমারীর স্মৃতি আজো তাড়া করে বেড়ায় নিহাদকে, তখন নিহাদ কখনো আপন মনে কেঁদে উঠে, নিজেকে সান্ত্বনা দেয় আল্লাহ যা করে ভালোর জন্য করে।
নিহাদের মত ট্রু-লাভাররা সবসময় কষ্ট পেয়ে যায়, খুব কম মানুষের কপালে তার ভালবাসার মানুষটি জুটে। নিহাদ চেয়েছিল সবকিছু ভুলে নতুন করে একটা সম্পর্ক শুরু করতে, কিন্তু নুসরাত দেয়নি অজুহাত রেখে হারিয়ে গেছে।
আসলে যখন আপনার ভালবাসার মানুষটি যখন অন্যকারো সাথে রিলেশনে জড়াতে গিয়ে আপনার সাথে ব্রেক-আপ করতে চাইবে তখন আপনার প্রতিটি কথায় কাজে দোষ খুঁজে বেড়াবে অযৌক্তিক আবদার করবে যেকোন উপায়ে আপনার কাছ থেকে দুরে সরে যাবে। আর নিহাদের সাথে তেমনি হয়েছে।