আজ ৩১ ডিসেম্বর আমার দ্বিতীয় বিবাহ বার্ষিকী।
সে আমার মুখে হাসি ফুটানোর বদলে দিচ্ছে চিরচেনা সেই অশ্রুজল।
এখন ঝরাচ্ছি বিশ্বাস এর অশ্রু।
মুরুব্বীরা ঠিক বলে একজন সৎ(যে না বুঝে ভুল করে) মানুষকে দ্বিতীয় বার সুজোগ দাও।
কিন্তু একজন মিথ্যাবাদী(যে জেনে বুদ্ধি করে ভুল করে) তাকে নয়।
কিন্তু আমি সে কথা না মেনে যে ভুল করেছি তার দাম এখন প্রতিটা চোখের ফোটার বিনিময়ে দিচ্ছি।
.
২০১৫ সালের এ দিনেও চোখে পানি ছিলো।
সে পানি মা-বাবা পরিবারকে ছেড়ে অন্যের বাড়িতে চলে যেতে হবে সেই সাময়িক বিদায় বেলার অশ্রু।
এই সাময়িক অশ্রুটা যে আমার পিছু ছাড়েনি তা বুঝতে সময় লেগেছে তাও বুঝছি শেষ বিকালের অবেলার দিকে।
পারিবারিক ভাবেই বিয়েটা হয় আমার, ছেলে এমবিএ ফাইনাল ইয়ারে পড়ছে পাশাপাশি ব্যবসা করছে শহরে।
সে আমায় দেখে যাওয়ার পর থেকে ফোন করে করে মা কে বিশ্বাস এর সাগরে ডুবিয়ে দিলো।
মা’র বিশ্বাস যে ছেলে তার ব্যক্তিগত এবং পরিবারের সব ভালো-মন্ধ,দোষ-ত্রুটি জিজ্ঞাসা ছাড়াই অনায়াসে বলতে পারে সে ছেলে আর যাই হোক একজন দক্ষ সংসারি এবং বিশ্বাসের যোগ্য একটা ছেলে।
আল্লাহর ইচ্ছায় বিয়েটা হয়ে যায়, অনেক দোষত্রুটি প্রতিকূলতা পেরিয়ে।
.
বিয়ের পনের দিন পার না হতেই শাশুড়ি সংসারের সব কাজের দায়িত্ব গাড়ে তুলে দেয়।
কিন্তু খাবার বন্টনের দায়িত্ব না।
তবুও শাশুরি বেশ ভালো ছিলো তখন(মনের বিশ্বাস)।
বিয়ের তিন মাস এর মাথায় ছোট ননদ কে আমার প্রতিবেশী ছেলের সাথে বিয়ে দেয় যে আমার সম্পর্কে কাকা হয়।
বিয়ের চার মাসের মাথায় আমার পেটে বাচ্চা আসে তা শুনে আমার শাশুড়ি যেন মূর্চা যাওয়ার অবস্থা হয়ে গেলো।
আমাকে বলছে ছেলেটার কোন কান্ড জ্ঞান নেই এতো তাড়াতাড়ি বাচ্ছার কি দরকার ছিলো।
যে জায়গায় আমার শাশুড়ি খুশি হওয়ার কথা ছিলো। সে জায়গায় এমন মন্তব্য তবও চুপ করে ছিলাম। তাকে(স্বামীকে) কিছু বলিনি সে মা-বাবার বড় ছেলে এবং বড় সন্তান।
কিছু বললে সবাই বলবে বৌ এর কথায় ছেলে উঠবস করছে ।দুই দিন না হতেই তাদের ছেলেকে আঁচলে বেঁধে নিয়েছি।সব বাবা মা’র বড় ছেলের উপর আশা ভরসা বেশি থাকে তাই সহ্য করে নেই। মন কে এ বলে সান্তনা দেই কয়েক দিন পর সব ঠিক হয়ে যাবে।
.
সন্তান গর্ভে আসার পর এবং ননদের বিয়ের পর সে বাদে সবার অবহেলা পতক্ষ্য/পরোক্ষ দুই ভাবেই শুরু হয়ে যায়।
সারাদিন কাজ করার পর যখন খাবার টেবিলে খাবার পরিবেশন করার সময় শুনতে হয় কি বউ ঘরে তুললাম কোন কাজ জানেনা তখন কি আর খাবার গলা দিয়ে নামে।
আমি কাজের মেয়ের মতো সব কাজ করার পর পরিবেশন এর দায়িত্ব শাশুড়ির।
কাজ শেষে উনি যখন বাসায় ফিরে কাজে অকাজে ডাক দিয়ে নিয়ে যায় শাশুড়ি।
আর আমার নামে বিষিয়ে তোলে আমি কাজ করিনা।
সারাদিন দরজা লাগিয়ে শুয়ে থাকি এবং ফোনে কথা বলি আমার আগের প্রেমিকের সাথে।
কি সৌভাগ্য আমার স্বামীর তার জন্য সব ভালোবাসা রেখে দিলাম বহু যত্নে। সেই কৃতজ্ঞতায় হয়তো সরাসরি না বলে ঘুরিয়ে পেছিয়ে বলছে আলো তোমার সাথে কথা আছে।
<<আমি বললাম হ্যাঁ বলো।
–আজ একটা ছেলে ফোন দিয়েছে।
সে না কি তোমার পরিচিত।
<< হ্যাঁ নাম কি?
–বলা যাবেনা।তার কথা গুলা কিন্তু আমি বিশ্বাস করিনি।
<<তোমার কথা কিছু বুঝছি না পারলে বুঝিয়ে বলো।
–সে বলছে তোমার সাথে গভীর সম্পর্ক ছিলো তার এবং তুমি কুরআন শপথ করেছো তার সাথে, তাকে ছেড়ে যাবেনা তাকেই স্বামী হিসেবে গ্রহন করবে আর কাউকে না।
<< রাগ না দেখিয়ে শান্ত গলায় বললাম নাম্বারটা দাও।
কিন্তু দিলো না, সে না কি ঐ ছেলের সাথে ওয়াদা করেছে।
উনি যে মিথ্যা বলেনি তা প্রমান করতে আমাদের বাড়ি আসার পর না কি ঐ ছেলের সাথে দেখা করছে।
তখন ভেবে নিলাম হয়তো অজানা কোন শক্র ক্ষতি করতে চায়।
কিন্তু এখন বুঝছি এটা মায়ের ভার্সিটির একটা ক্লাস মাত্র।
.
প্রেগন্যান্ট এর দেড় মাসে ব্লাড ভাঙ্গতে শুরু হয় ।
প্রথম দিন কিছুটা কম রক্তপাত হলেও পরের দিন চাকা চাকা যেতে থাকে।
আমার স্বামী সময় করে উঠতে পারেনি বলে মায়ের উপর দায়িত্ব দেয়।
আমার শশুর সরকারি কর্মচারী হওয়ার সুবাদে আড়াই ঘন্টা বাসে জার্নি করে ত্রিশটাকা রিকশা ভাড়া বাঁচাতে আমাকে হাঁটিয়ে নিচ্ছে সরকারি মেডিকেল এর দিকে।
দশ পনের কদম যাওয়ার পর বললাম মা আর কতো দূর।
উনি বললো এইতো আরেকটু।
আরেকটু যাওয়ার পর অনুভব করলাম রক্ত রাস্তায় পড়ার উপক্রম তার উপর আর যে পা ফেলবো তার কোন শক্তি নেই দাঁড়িয়ে গিয়ে বললাম মা রিকশা নাও ভাড়া আমি দিবো তখন তিনি রিকশা ডাক দিলেন।
.
পাঠকদের একটা প্রশ্ন থাকবে আমার কাছে টাকা থাকা মানে উনার ছেলের টাকা।
কিন্তু তা না আমার মা প্রতি মাসে আমার খরচের জন্য কিছু টাকা পাঠাতো তার বিকাশে সে টাকা ও আমার হাতে পৌঁছায় নাই কখনো।
এমনি বলতো তোমার মা টাকা দিয়েছে তোমার যা লাগে বলবে।
ব্যাগের যে একশত টাকার জোরে রিকশায় উঠছি তা বিয়ের আগের ব্যাগের পাঁকে পড়ে আছে তা বেমালুম ভুলে যাই। এ বিপদের সময় ব্যাগ হাতিয়ে পেয়ে যেন আকাশের চাঁদ পাই।
.
সরকারি হাসপাতাল বলে কথা তার উপর দক্ষ কোন পরিচিত পুরুষ লোক নেই।
কোন রকম দেখে আলট্রা করালো।
পরের দিনও রিপোর্ট দিলোনা অসুস্থ শরীর নিয়ে আবার ফিরে আসি।
তখন আমার মা বললো সরকারি হাসপাতাল বলে গুরুত্ব দিচ্ছেনা ।
শাশুড়ির সাথে ফোনে বলছে তা নিয়ে তুলকালাম বাঁধিয়ে দেয় শশুর।
এভাবেই বাচ্ছাটা নষ্ট হয়ে যায়।
.
বাচ্চা নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর শরীর প্রচুর দুর্বল হয়ে পড়ে হাঁটতেও কষ্ট হতো তাও আমাকে বাবার বাড়ি যেতে দেয় নাই।
আমি খারাপ হয়ে যাবো।
এতো রক্ত গেল এ ছোট্ট শরীর থেকে একটু ভালো খাবার জোটে নাই কাপালে।
একদিন একটু বিশ্রামের ও সুজোগ দেয়নি সেখানে আমার স্বামী বোবা।
শাশুড়ির খোঁচানো কথা তো আছেই তার সাথে যোগ হলো শশুরের ও
সেখানে আমার স্বামী নিরব দর্শক।
আমার মা শশুরালয়ে আমাকে দেখতে আসে ।
আমার আদর্শ স্বামী তার পিতামাতার সাথে মা এর সমস্যা মিটানোর জন্য সন্ধ্যায় এক করলো।
যেখানে মায়ের সাথে মুখামুখি কোন কথা কাটাকাটি হয় নাই।
তাই আমি বললাম মা যদি আজ তোমার বাবা মা’র থেকে অপমানিত হয় তাহলে আমি মায়ের সাথে চলে যাবো।
এ কথা বলার একটাই কারন এ কয় মাসে তাদের ব্যবহারের সাথে অনেক দক্ষ ভাবে পরিচিত হয়ে যাই।
কথায় কথায় খোঁটা দিবে কি দিচে বাপের বাড়ি থেকে।
সাদা চামড়া ধুয়ে কি পানি খাবো না কি?
যেন রাস্তা থেকে মেয়ে তুলে আনছে আমার ছেলে।
তখন ইচ্ছা করতো মুখের উপর অনেক কথা শুনিয়ে দেই। কিন্তু পারতাম না সবার দ্বারা সব সম্ভব না সে রকম আমার দ্বারাও কাউকে কড়া কথা বলাও সম্ভব ছিলো না ।
আমি এমন একটা মেয়ে আমার অসুস্থতার কথা মা কে পর্যন্ত বলতে পারতাম না।
আমার পছন্দের খাবার গুলা মুখ খুলে কখনো মা কে বলিনি।মা তো তাই বুঝে যেত।
.
শেষে মা ঠিক অপমানিত হয়েছে মা যখন উনাদের মেয়ের কিছু বদ গুনের কথা তু্লে ধরলেন।
আমার মিথ্যা দোষ দিলো আর উনাদের মেয়ের সত্যটা শুনে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো।
প্রতিবেশী হওয়ার কারনে ননদের বদ গুন গুলা চোখে পড়ে মায়ের।
সত্য কথা অকপটে বলার করনে মায়ের সামনে আমার মা-বাবা তুলে গালি দিতেও মুখে একটুও আটকায়নি আমার শশুরের।
.
সকালে মা চলে যাবে আমিও বোরকা গায়ে দিয়ে তৈরি হয়ে গেলাম নিজের কথা রাখতে আর এমন মেরুদণ্ডহীন স্বামীর কাছ থেকে অপমান আর মা- বাবা তুলে কথা শুনা ছাড়া কিছু পাব বলে আশা করা যায়না।
আমার যাবার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াল শাশুড়ি অনেক জামেলার পর মা কিছু কড়া কথা শুনিয়ে চলে গেল।
তারপর শুরু হলো গোলবৈঠক আমার স্বামী এখনো চুপ।
জীবনের মায়া ত্যাগ করে আত্বহত্যার চেষ্টা করি সে আমাকে আত্বহত্যার মুখ থেকে বাঁচিয়ে নিয়েছে ঠিক।আবার নিজেই আর্ধমৃত করে দেয়।
তারপর আমাকে শর্ত দেয় স্বামী চাইলে নিজের পরিবার ত্যাগ করতে হবে।
সে মূহর্তে স্বামীর থেকে পরিবারকে গুরুত্ব দিয়ে রাগ অভিমান নিয়ে চলে আসি।
.
তার কাছ থেকে আসার দেড় বছর এর মাঝে শুধু একবার নিতে আসছে শশুর।
ঐ দিন যদি সে আসতো সব জামেলা মিটে যেত আমার রাগ অভিমান কমে যেত ।
তার চিন্তা বাদ দিয়ে নতুন ভাবে জীবন শুরু করে দিতে সাহায্য করলো পরিবারের সকল সদস্য।
আবার রাজকন্যার মত চালাতে শুরু করলো,সাথে স্বপ্ন পূরন করতে অনার্সে ভর্তি করাল বড় বোন নামক সহযোদ্ধা।
এ বোন এর কথা বলে শেষ করা সম্ভব না।
গ্রামের মেয়ে কিছু চিনিনা শহরের।
বোন মেয়ে বাসায় রেখে অসুস্থ শরীর নিয়ে হাতে হাত রেখে আমার সব প্রতিকূলতা সঙ্গী হয়ে থেকেছে।
উনার কাছ থেকে আসার পর নির্জন জায়গা খুঁজতাম কান্নার জন্য, না আমি কাঁদতে পারতাম না দুই মিনিট পর ঠিক হাসিয়ে ছাড়তো বোন।
এক মিনিটের জন্য চোখের আড়াল করতো না।
হাসি বাসার প্রতিটা কোনায় ছড়িয়ে দিতো বোন।
আর বোনের পুতুল মেয়েটা তো মামনি বলে অজ্ঞান।
মামনি ছাড়া গোসল করবেনা, মামনি ছাড়া জামা পরবেনা,মামনি ছাড়া ভাত খাবেনা,আসলে মামনির ফোন নেওয়ার ধান্ধা সব। পুতুলটা আমাকে মামনি বলতো।
সবাই খেতে বসলে বলবে আমার মামনি খেয়েছে।আপু ওর জন্য স্পেশাল কিছু তৈরি করলে বলবে মামনি না খেলে ও খাবে না।
এ নিয়ে ছোট বোনের হিংসার শেষ নাই আমার সাথে(সব মিষ্টি হিংসা)।
এত এত ভালোবাসার কাছে মাঝে মাঝে মনে হয় সব তুচ্ছ।
.
অতীতের সব ভুলে যেতে চেষ্টা করছি যদিও ভুলা সম্ভব না ।
সব কষ্ট ভুলতে পারলেও জীবনের প্রথম ভালোবাসা প্রথম পুরুষটাকে ভুলা কঠিন হয়ে পড়লেও বাস্তবতার কাছে হার মানলাম।
ভালোবাসার মানুষটা আমার নামে মিথ্যা ছড়িয়েছ।
সে অপমান সহ্য করতে না পেরে তাকে ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দিলাম।
উনি সই করেননি উনার চেতনা ফিরে আসে উনি আমাকে ছাড়া বাঁচবেনা।
মেসেজ এ তার বিরহ দেখে প্রথম প্রথম হাসি পেত।আমার কাছ থেকে তেমন সাড়া না পেয়ে বন্ধু ধরলো।তারপর আমাদের এলাকায় আসতে শুরু করলো।
প্রথমে গুরুত্ব না দিলেও পরোক্ষনে পুরানো আবেগটা জেগে উঠে।
কিন্তু আমার পরিবার এখন আর কিছুতেই দিবেনা তার কাছে।
তার একমাত্র কারন এ দেড় বছরে সে অনেক সুজুগ এর অপব্যবহার করেছে।
উনার সাথে যোগাযোগে মাঝে অন্য স্থানে বিয়ে ঠিক হয়ে যায়।
তখন মনে চেতনা জাগলো তাকে ছাড়া কাউকে স্বামী হিসাবে গ্রহন করা আমার পক্ষে সম্ভব না।
তাই সব ভুলে গিয়ে এখন শুধু ভালোবাসা ভেলায় ভাসছি।
এ মরিচিকার মতো ভালোবাসার কারনে পরিবারের সবার মনে কষ্ট দিতেও বাঁধেনি কেমন যেন স্বার্থপর হয়ে গেলাম।
তার কান্না আমার প্রতি আকুলতাকে বিশ্বাস করতে একটুও বিলম্ব করিনি।
তাকে নতুন করে বিশ্বাস করার করনে পরিবারে নেমে আশে শোকের কালো ধোঁয়া ।
.
কিন্তু তার ব্যাকুলতার কাছে সব কিছু তুচ্ছ মনে হয় তার সাথে দ্বিতীয় স্বামী গ্রহন করতে পারবোনা তা মাথায় গেঁথে যায়।
আমার এমন বেপরোয়া ভাব দেখে চিন্তার কারনে মা হার্ট বল্ক এর দিকে এগিয়ে যায়।
একদিন সন্ধ্যায় মা কান্না করতে করতে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে ।
তারপর থেকে নিজেকে সরিয়ে আনতে চেষ্টা করি কিন্তু পারিনি।
সে দিনের পর থেকে মা সহ পরিবারের সবার সাথে অভিনয় শুরু করি।
মা মোটামুটি সুস্থ হওয়ার পরে একদিন আসরের নামাজ পড়ার পর নামাজের বিছানায় থাকা অবস্থায় মাকে বুঝিয়ে সান্তনা দিয়ে চিন্তা মুক্ত করি।
কিন্তু উনার সাথে আমার যোগাযোগ বন্ধ হয়নি এবং উনার কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করি।
উনি বলেছে সবার সাথে আগের মত ব্যবহার তরতে হাসিখুশি ভাবে চলতে।
.
প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরিক্ষার পর উনি আমাকে সবার অজান্তে নিয়ে যাবেন এবং আমি যা সর্ত দিয়েছি সব মেনে চলবেন।
যে কোন কিছুর বিনিময় হোক উনি আমার সাথে সংসার করবেন।
উনি আমাকে বলেছে আমি চাইলে কি তুমি চলে যাওয়ার পর বিয়ে করে সংসার করতে পারতাম না।
আমি করিনি তা আমি শুধু তোমাকেই বৌ হিসাবে চাই।
তুমি ছাড়া এ হৃদয়ে কেউ ঠাঁই পাবেনা।আর কোন মেয়ের সাথে সংসার করা আমার পক্ষে সম্ভব না।
মা অনেক বুঝিয়েছে অন্য স্থানে বিয়ে করার জন্য তখন থেকে বাসায় ঠিক মতো যাই না বন্ধুদের বাসায় থাকি পালা করে।
আমি তোমাকে নিয়ে নতুন করে আলাদা ভাবে ছোট্ট সংসার করতে চাই।
এসব শুনার পর আমি যেন উনাকে আরো দ্বিগুণ ভালোবেসে ফেলি।
.
মায়ের মন কখনো মিথ্যা বলেনা সন্তান এর জন্য।
মা অনুমান করে বুঝতে পারে আমি উনার সাথে যোগাযোগ করি তাই মা বিশেষ সময়ে আমার ফোনে ফোন দিয়ে ট্রাই করতো আমি ওয়েটিং এ আছি কি না।
আমি রাগ দেখিয়ে মিথ্যটাকে সত্য প্রমান করতাম।উনার সাথে কথা বলতে বলতে সব সময় সত্য বলা আমিটা মায়ের সাথেও গুছিয়ে মিথ্যা বলা আয়ত্ব করে ফেলি।
এভাবেই মা আধো বিশ্বাস আধো অবিশ্বাস নিয়ে মুখে বেশ বিশ্বাস নিয়ে কোন কিছুতে ত্রুটি দিতো না।
.
আমি আমার দ্বিতীয় বার বিশ্বাস করা মানুষটার কথা রেখেছি।একবারো মনে আসে নাই মা’র কি হবে? ছোট বোনের সামনে এসএসসি পরিক্ষা ও তো আমায় ছাড়া ভেঙ্গে পড়বে।বড় বোন আমার এ কলঙ্কে স্বামীর বাড়িতে বড় মুখ ছোট করে থাকতে হবে।
আরিয়া মনি(আপুর মেয়ে) তো মাস শেষে তাকিয়ে থাকবে ওর মামনি ওর জন্য চকলেট, চকোচকো নিয়ে আসবে।
কিচ্ছু মনে হয়নি তখন মনে হচ্ছে ঘোরের মধ্যে ছিলাম।এ ঘোরের মধ্যে থেকেই ঢাকা শহরে নতুন বাসায় পা রাখি।
কিছুক্ষণ বিশ্রাম করার পর কাজী অফিসে গিয়ে নতুন করে বিয়ে করি দুজনে।
নতুন সংসারে মোহে মা নামক দুখিনীর কথা ভুলে গেলাম।ফোন অফ করে দিয়েছি প্রায় এক সাপ্তাহ পর খুলছি।উনি একদিন পর মায়ের কাছে ফোন দিয়ে বলছে আলো আমার কাছে আপনি চিন্তা করবেন না।আমার কাছে আলো সুখে থাকবে।
উনি এটা কথা দেননি আলো আমার কাছে শান্তিতে থাকবে।
হ্যঁ উনি আমাকে সুখে রেখেছে একমাসের সুখি ।
একমাস পর উনি চাপাচাপি শুরু করে দেয় ঐ নরকে ফিরে যেতে।
উনার বাবা-মা, ভাই-বোনের সাথে সংসার করতে।
এসব শুনে আমি নির্বাক।কি কথা দিয়েছে এখন কি করতেছে। এভাবে তার যন্ত্রনা দিনে দিনে বাড়তে থাকে।উনি আমার সাথে ওয়াদা বদ্ধ হয়েছে আমাকে পড়ালেখা করাবে।
ঐ বাসায় যাওয়ার পর পড়ালেখা দূরের কথা ঠিক মতো খেয়ে পরে বাঁচতে পারবো না।
.
এভাবে প্রতিদিন ঝগড়া লেগে থাকে আমাদের দুইজনের সংসারে।এখন আমিও ছেড়ে কথা বলিনা।
কেন বলবো না উনাকে বিশ্বাস করার জন্য কি শেষে এটাই প্রাপ্য ছিলো।
এখন আমার চোখের পানি নিত্য সঙ্গী।
আমি আমার পরিবারে বিশ্বাস ভেঙ্গেছি উনি আমার বিশ্বাস ভাঙ্গলো।আপনজনদের সাথে বেইমানি করার শাস্তি পাচ্ছি।
ছয় মাসের মাথায় আমার পেটে আবার বাচ্চা আসলো।এর মাঝে প্রথম বর্ষের রেজাল্ট দিলো।আমি ৩.৭৮ পাই।
ভালো রেজাল্ট করার পরও দ্বিতীয় বর্ষে ভর্তি হতে পারেনি।
আজ খুব আপুর কথাটা মনে পড়ছে।
যখন আমি উনার সাথে আবার নতুন করে সংসার করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠি তখন আপু অনেক বুঝাতো.
এ মিথ্যাবাদীর সাথে কখনো শান্তিতে সংসার করতে পারবিনা।পদেপদে অপমানিত হবি। দিনে শতবার তোর বিশ্বাস ভাঙ্গবে। তখন আপুর কথা গুলো বিপক্ষীয় মনে হতো।
আসলে সব এখন হাতে হাতে পাচ্ছি।
আমি প্রেগন্যান্ট হওয়ার পর থেকে জ্বর এর জন্য মাথা তুলতে পারতাম না। খাওয়া খেতে পারতাম না।উনি সুযোগ পেয়ে যায়।
আমাকে অসুস্থ অবস্থায় নরকে নিয়ে আসে।
.
পাঠকরা বলবেন উনি যা করেছেন আপনার জন্য ভালোর জন্য করেছে।তখন আপনার নিজের পরিবার তো পাশে ছিলোনা। যাদেরকে খারপ বলছেন তারাই তো বিপদে পাশে ছিলো।
মায়ের কাছে যেতে পারিনি।উনি দিবে না মায়ের কাছে।অনুরোধ করলে হয়তো দিতো।কিন্তু উনি যে হারে লোভী শেষে আমার জন্য মায়ের সাথে বাবার অশান্তি শুরু হতো।
উনি বিয়ের দুই মাসের মাথায় ভাইয়ার(আপুর স্বামী)কাছে টাকা চেয়ে বসে।বিয়ের চারমাসের ব্যবসায় খাটানোর জন্য মাথায় মায়ের কছে টাকা চায়।আমি যদি এখন আবার মায়ের সাথে যোগাযোগ করি।তাহলেতো উনি সাপের পাঁচ পা দেখবে।
সব খরচ মায়ের উপর ছেড়ে দিবে।আর আমাকে চাপ দিবে তারে টাকা এনে দেওয়ার জন্য।
.
আমি কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর আবার সংসার আমার মাথায় তুলে দিলো। সংসার বলতে শুধু কাজ গুলা ।
আসল সব দায়িত্ব শাশুড়ির হাতে।শাশুড়ির দুই বিবাহিত মেয়ে এবং মেয়ের জামাইরা পর্যন্ত শশুরালয়ে।
অনেক নির্যাতন এর ভিতরে আমার একটা ফুটফুটে রাজপুত্র জন্মায়।
তার মুখ দেখে অতীতের সব দুঃখ কষ্ট যেন এক নিমিষে হাওয়া হয়ে যায়।
ছেলে সন্তান হওয়াতে সবাই খুশি।কি অদ্ভুত ব্যাপার ছেলের বাবা হয়ে ছেলের কান্না সহ্য করতে পারতো না।
ছেলেকে কোলে নিয়ে সারারাত রুমের বাহিরে কাটিয়ে দিতাম।
ছেলের এক বছর পূর্ন হলো।আমার ছেলে এখন হেঁটে হেঁটে পুরো বাড়ি মাতিয়ে রাখে।আধো আধো কথা বলে । সব কষ্ট, লাঞ্ছনা, কলেজ শিক্ষিকা হওয়ার স্বপ্ন সব ভুলে যাই মা ডাকটা শুনে।
কতো মধুর কতো শান্তি লাগে আরশ এর মুখে মা কথা শুনে।
.
ছেলে এখন কম জ্বালাতন করে রাতে।ঘুমিয়ে গেলে আর সকালে উঠে।
রাত ১২টায় উনি দোকান বন্ধ করে আসে তাকে খাবার খাইয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।
সারাদিন কাজে কর্মে থাকার কারনে রাতের ঘুমটা গভীর হয় ।একবারে ফজরের সময় উঠি।আজ কেন যেন রাত ২টায় জেগে যাই।
পাশে হাত দিয়ে দেখি আরশের বাবা নেই।টয়লেটে গেছে মনে করে আবার ঘুমানোর চেষ্টা করি।কিন্তু কিছুতে ঘুম আসছেনা।তাই ছাদের দিকে যাই ।অনেক দিন রাতের আকাশ দেখা হয়না। ছাদের দরজা খোলা সন্ধ্যায় তো আমি নিজ হাতে লিগিয়ে গেছি।
এ নিয়ে আর চিন্তা না করে উঠে দরজা বরাবর গিয়ে ছাদের কার্নিশে ঠেক দিয়ে দাঁড়াই।
দুই মিনিট দাঁড়ানোর পর বুঝতে পারলাম কেউ ফোনে কথা বলছে।আগে পিছে না ভেবে মানুষটার পিছনে গিয়ে দাঁড়াই।
চাঁদের আলোয় দূর থেকে বুঝতে না পারলেও কাছে থেকে ঠিক চিনতে পারছি ।
এ যে আমার বিশ্বাস যোগ্য স্বামী।
পিঠে হাত রেখে বললাম ঘুমাবেনা। উনি ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো।কিছু না বলে আমার সাথে রুমে চলে আসলো।
.
অবশেষে খোঁজ নিয়ে জানা গেলো আমার স্বামী পরকীয়া করছে তাও নিজের কাজিন এর সাথে।
আমি তার সাথে কোন জামেলা করিনি।কোন ঝগড়া করিনি এ বিষয় নিয়ে।
শুধু ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতাম।
সব শেষে আমি উনাকে ছেড়ে চলে আসলাম,চিরদিনের জন্য ।
বঙ্গালি নারী সব দুঃখ কষ্ট সহ্য করতে পারে কিন্তু স্বামীর সাথে অন্য কাউকে সহ্য করতে পারেনা।
সতীনের সাথে সংসার করা আমার পক্ষে মৃত্যুর যন্ত্রনা থেকেও বেশি মনে হয়েছে।
আমি চাইনা আমার ছেলেটা তার বাবার কাছ থেকে আমার মতো বারবার প্রতারিত হয়ে বিশ্বাস শব্দটার উপর থেকে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে।
দূরে থেকে বাবাকে বিশ্বাস করে যাক।
…………………………………….(সমাপ্ত)………………………………………