অনুভবে লুকানো ভালোবাসা

অনুভবে লুকানো ভালোবাসা

দুনিয়ার খতিয়ান সামনে, কাজ করতে করতে শ্বাস ফেলবার সুযোগ নেই, এর মধ্যে জসিম এসে বলল,

——স্যার, একজন এসেছেন; অাপনার সাথে দেখা করতে।বলছেন, অাপনার সাথে একটু একা কথা বলতে চান।
——-পাঠিয়ে দাও।
——-স্যার ম্যাডাম বলেছেন, নিরিবিলিতে কথা বলতে চান।গুরুত্বপূর্ণ কথা। দরকার হলে উনি অপেক্ষা করবেন।

জসিমের মুখে বিস্মিত ভাব।

অামার অফিসে ম্যাডাম?

অামি ও তাজ্জব। মফস্বল উপজেলার এই ভূমি অফিসে মহিলা ক্লায়েন্ট অাসেন না বললেই হলো।

এসিল্যান্ড হিসেবে অামার এখানে চাকরির প্রথম পোস্টিং এবং এই দু-বছরে জমি সংক্রান্ত সমস্যায় কোনো মহিলাকে অাসতে

দেখিনি।

সেখানে অাবার পারসোনালি কথা বলা ম্যাডাম। অামি বিরক্ত মুখে বললাম,
——এড্রেস ডিটেল নাও, ওয়েট করতে বলো।কাজ শেষ হোক অামার।
——-স্যার ভি-অাই-পি মনে হচ্ছে, সাথে কর্মচারীও অাছে।
——-মানে? কি কারণে এসেছে কিছু বলেছে? জসিম মাথা নাড়লো।অামি ঘড়ি দেখলাম।লাঞ্চটাইম প্রায়, অফিস ফাঁকা হয়ে

যাবে, কিছুক্ষণের মাঝে।

——-দেখছোনা কাজ করছি? অামায় পানি দাও একগ্লাস!

জসিম চলে গেলো।অামার খটকা বাড়লো।কেই বা এই ম্যাডাম?মহিলা মানুষ বসিয়ে রাখা কি ঠিক হচ্ছে?

—-জসিম…..
——জ্বী স্যার!
——-কোথায় বসিয়েছো?

——বসেননি স্যার, বারান্দায় হাটছেন, বেঞ্চে প্রথমে একটু বসেছিলেন। অফিস ভর্তি লোকজন হা করে চেয়ে থাকে… উঠে তাই

কোণার ধারে চলে গেছেন।

——হাঁ করে চেয়ে থাকে মানে? ভিনদেশী নাকি? যাও ভেতরে নিয়ে অাসো……

অামি অাবার পেপারসে মনোযোগ দিলাম।নামজারী করার অনেক দলিল পেন্ডিং, দম ফেলতে পারছিনা…..

সেই অপরিচিতা ম্যাডাম দরজায় দাড়িয়ে বললেন,

——-গুড অাফটারনুন স্যার! অাসবো?

অামি তাকালাম, এবং যথারীতি অামার মুখও হাঁ হয়ে গেলো।এ কোনো মানবী নয়, পরী? না না হুর…….

২৪-২৫বছরের তরুণী,
লম্বা-সুন্দর গড়ন।

পড়নে সাদার মাঝে গোলাপী স্টেপ অার ফুলেল কাজের জামদানী শাড়ি, সাথে একটু গাড় গোলাপী ব্লাউজ, মিষ্টি

গায়ের রঙে অার শাড়ির রঙে একাকার।অাঁচল একটু করে ছাড়া, শাড়ি পড়ার ধরনেই বুঝা যাচ্ছে, শাড়ি পড়ে তিনি অভ্যস্ত!

কপালে একটা গোলাপী টিপ, চোখে গাড় করে কাজল, ঠোটে শাড়ির সাথে মিলে যায় এমন গোলাপী লিপস্টিক। কানে হীরের দুল,

গলায় ছোট্ট লকেটের প্লাটিনামের থিন চেইন। একপাশে সিঁথি করা

কাধ পর্যন্ত নেমে অাসা ঝলমলে চুলগুলো খোলা, বিভিন্ন স্টেপে কাটা বলে ছড়িয়ে অাছে মুখের চারপাশে।ডানহাতে বড় ডায়ালের

সোনালী ঘড়ি,সেই হাতেই একটা ছোট হোয়াইট পার্স ক্যারি করছেন।

বামহাতে সাদা-গোলাপীর মিশেলে কয়েকগাছা পাথরের চুড়ি, সেই হাতেই একটি সানগ্লাস ও মোবাইল ক্যারি করছেন।

এবং পায়ে নাইস পিংক বেলেনারী সু… সুন্দরী না বলে সুন্দরীশ্রেষ্ঠা বলতে হয় বোধহয় একে।পুরো চেহারায় যেনো অালাদা এক

অাভিজাত্য।এরকম মেয়ে বোধহয়, শুধু রূপকথায়ই অাছে, এমন নারীর কথা শুনেছি শুধু, বাস্তবে অামি অাজ প্রথম দেখলাম।

এই রূপবতী অামার সাথে অালাদা কথা বলতে চায়, এটা ভেবেই অামার হৃদয় কেঁপে উঠলো।

 

অামি বসা থেকে দাঁড়িয়ে পড়লাম, সেরকম কতক্ষণ দাঁড়িয়েছি বলতে পারবোনা, তবে সৎবিৎ ফিরলো, জসিমের কথায়!

—–স্যার, ম্যাডাম কে কি দিবো?চা- না কফি?

বেখায়ালি অামি তাড়াহুড়ো করে বসতে গিয়ে চেয়ারের হাতলে বসে পড়লাম, অারেকটু জোড়ে লাগলেই মরণ ছিল, ব্যাথার

অার্তনাদ কোনোরকম লুকিয়ে বললাম,

——–প্লিজ হ্যাভ এ সিট ম্যাডাম।

টেবিল ভর্তি অামার দলিল দস্তাবেজের বান্ডেল, অফিসও গুছানো নেই, সারাক্ষণ তো লোকের অাসা যাওয়া। নিজের দিকে

তাঁকালাম, ডানহাতের বোতাম খুলে হাতা ভাঁজ করেছিলাম, ঠিক করতে হবে। এক্সকিউজ মি বলে, ওয়াশরুমে এলাম।চুল ঠিক

করে নিলাম, মুখে চোখে পানি দিয়ে এসে বসলাম।হার্টবিট এত বেড়েছে যে হৃদয়টা না জানি এক্ষুণি টুপ করে বেড়িয়ে যায়??

গোলাপী শাড়ির ম্যাম নরম স্বরে বললেন,

——-অাপনার মেয়ে কেমন অাছে???

অামি কেশে উঠলাম। অামার মেয়ে? বিয়ে করলাম কখন? স্বপ্নে কি হয়েছে?

টেবিলের কাগজগুলো একসাইড করতে করতে যথাসাধ্য স্বাভাবিক গলায় বললাম,

——–অামার মেয়ে মানে?অামি তো বিয়েই করিনি।অাপনি অাসলে কে? অামি অাপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি ম্যাম?

রূপবতী এইবার চমকে উঠলেন।

——-অামায় চিনতে পারেননি বোধহয়? অামি ঢাকা থেকে অাসছি।

—–ওহ!ঢাকায় অামি চিনতাম নাকি অাপনাকে?

রূপবতীর এইবার মনখারাপ করা চেহারা হলো, চোখদেখে মনে হলো, কেঁদে ফেলবে। অামি না চেনায় কেঁদে ফেলতে পারে এমন

মেয়েবন্ধুও অাছে নাকি অামার?

একটু অবাক অার অবিশ্বাসী ভাবে জিজ্ঞেস করলাম

——–চিনতে পারার কি সত্যিই কোনো কারণ অাছে??

রূপবতী পার্স থেকে টিস্যু বের করলেন, খুব সাবধানে, চোখে অাসা পানিটা চেপে নিলেন তাতে। বাহ উনার দেখি চোখ মুছাটাও

শিল্পের মত।

জসিম চা রাখলো টেবিলে। জসিমের দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন,

——-অামি র-চা খাই।এটা নিয়ে যান। থেংক ইউ।

তারপর সোজা অামার দিকে তাঁকালেন অাবার! কি অপূর্ব মিষ্টি চাহনি, ও চোখে ডুবে গেলে কেমন হয়? ডুবে যেতে এত ভালো

লাগছে কেনো?

——-গত টেনথ ডিসেম্বর ঢাকা শিশুপার্কের সামনে অাপনার মেয়ে হারিয়ে যায়।অাপনি হন্য হয়ে খুঁজছিলেন….

ব্যস ব্যস অামার এবার মনে পড়লো।

——-নাইমা অামার বড় ভাইয়ের মেয়ে,অামাকে বাবাই বলে…..

পুরো ঘটনাটা অামি ভাবতে চেষ্টা করলাম।অামি অাচার কিনছিলাম, নাইমা সাথেই ছিলো।হঠাৎ করে পিছন ঘুড়েই দেখি নেই।

অামি চিৎকার করলাম।পাশ থেকে কোনো এক নারীকণ্ঠ বলল, ভাইয়া নীল ফ্রকের বাবুটা?হাত দিয়ে ডিরেকশান করে বলল,

‘ও তো ওদিকে গেলো’।

কোনদিকে কোনদিকে বলে, অামি সেই নারীকণ্ঠের হাত ধরে টেনে নিয়ে তাঁর ডিরাকশানে দৌড়াচ্ছি, ।অাশেপাশের

লোকজন কৌতুহল নিয়ে দেখছে। সামনে গিয়ে দেখলাম নাইমা বেলুনওয়ালার ধারে দাঁড়িয়ে কাঁদছে। অামি একমুহূর্ত দাঁড়ালাম না

অার। নাইমাকে কোলে করে সোজা গাড়ি করে বাসায়। অাল্লাহর অশেষ রহমত! কি অঘটনই না ঘটতে যাচ্ছিলো।উফ্। বাসায়

গিয়ে দেখি, অামার হাতে রক্ত, নাইমার ফ্রকেও লেগেছে।রক্ত কোথা থেকে এলো? কোথাও তো লাগেনি অামার…..

টেনশানে সেই রক্তের টেস্ট করালাম। বি পজেটিভ।উফ্! তাহলে অন্য কারো রক্ত! বাঁচা গেলো।

——-কি ব্যাপার? এখন চিনতে পেরেছেন??

——-জি মানে। অাপনি সেই মেয়েটি ছিলেন।অাপনার ব্লাডগ্রুপ কি?

অাসলে তখন দিশেহারা টেনশনে। অাপনার মুখটাই দেখিনি। বলতে বলতে অামি দাঁড়িয়ে পড়লাম, অামার অপ্রস্তুত ভঙ্গি দেখে

রূপবতী হাসলো,

——-সেদিন অাপনি অতজোড়ে অামার হাত ধরে টেনে নিয়ে দৌড়ালেন, সুতোয় মুড়ানো প্লাস্টিক চুড়ি ছিলো অামার হাতে। চুড়ি

ভেঙ্গে হাতে জখম হয়ে গেলো। রক্তারক্তি কান্ড। চামড়া কেটে চুড়ি বার করতে হলো।৫টা স্টিচ পড়েছিলো হাতে।এই দেখুন।

রূপবতী হাত বাড়িয়ে ধরলো সামনে। ফর্সা হাতে মিষ্টি দাগ। অামি দুঃখ ভারাক্রান্ত হয়ে পড়লাম। এই রূপবতীর হাতে কষ্ট দিয়েছি

অামি।রক্তাক্ত করেছি। কি অধম অামি; কি তুচ্ছ! সেদিন অামার কি হয়েছিলো? একবারও কেনো মনে হলোনা, যে নারীকণ্ঠ

অামায় নাইমাকে খুঁজে দিলো, তাঁকে ধন্যবাদ দিই-নি। অহো অাল্লাহ্! এখন কি বলা উচিত অামার? রূপবতী কি বলতে এসেছে?

হাতকাটার শোধ? তা নেও নাগো, শোধ! ও রূপবতী ;তোমার মত মেয়ে যদি অামার হৃদয় খুঁচিয়ে রক্তাক্ত করতে চায়, তাও অামি

হাসিমুখে রাজি!এই নাও তোমার হাতে রইলাম, কেটে রক্তাক্ত করো অামায়। নাকি অন্যকিছু, এসব ভাবতে ভাবতে অামি অামার

ডান হাতটা বুকের বামপাশে রেখে বললাম,

——-এই এখান থেকে সরি।অাসলে অত নার্ভাস হয়ে পড়েছিলাম।সব গুলিয়ে গিয়েছিলো। ওই অতলোকের ভীড় থেকে

নাইমাকে নিয়ে বাসায় অাসাটাই মাথায় ছিলো।

রূপবতী এবার মলিন হাসলো। এই হাসি, অামার যে হৃদয়ে বোমব্লাস্ট করছে, এক্ষুণি মারা যাবো অামি…….. টেবিলে রাখা গ্লাসের

পানিটা এক নিঃশ্বাসে খেয়ে নিলাম।

——-অামি সরি চাইতে অাসিনি। অন্য একটা বিশেষ দরকারে এসেছি। অাপনায় খুঁজতে অামার কত কষ্ট হয়েছে জানেন?

উইথঅাউট এনি ক্লু শুধু চেহারা বেইজ করে অামি অাপনাকে খুঁজে বের করেছি।৯মাস লেগে গেলো।পুরো এক সন্তানের

জন্মের মত….

অামার হৃদয়ে এবার অন্য সুর! বিশেষ কারণটি কি?মহান অাল্লাহ তাঅালা তবে পুরষ্কার দিচ্ছেন অামায়।এতদিনে সৎ থাকার

পুরষ্কার। মেয়েটি বোধহয় প্রেমে পড়ে গেছে অামার! নাহলে অমন করে কেউ কাউকে খুঁজে?

——-তাও তো খুঁজে পেলেন বলে, না হলে অামি তো কখনো জানতামই না, অামার উপকারী কেউ একজনকে এত কষ্ট দিয়েছি

অামি।কৃতজ্ঞতা স্বীকার পর্যন্ত করিনি।অামি খুবই লজ্জিত।অাপনি লাঞ্চ করবেন তো….?

গলার চেইনের লকেটটা হাত দিয়ে এপাশ-ওপাশ করতে করতে রূপবতী একটু জড়তাযুক্ত কণ্ঠেই বললেন,

——– যে কারণে এসেছি সেটা হোক! লাঞ্চ পরে হবে……

অামি সম্মতির হাসি হাসলাম।

——জোনাইদ সাহেব, অাপনাকে ছোট্টখাট্টো একটা কষ্ট করতে হবে অামার জন্য। সেদিন যখন অাপনি অাচমকা চেঁচালেন,

মামণি কই অামার? অামি পাশেই ফুচকা খাচ্ছিলাম।এর একটু অাগে অবধি অামি দেখলাম, অাপনার মেয়েটিকে নিয়ে অাপনি

ফোনে কথা বলতে থাকলেন অাচারওয়ালার সামনে দাঁড়িয়ে, অামি দেখলাম বাবুটা ওদিকে যাচ্ছে, অাপনি খুঁজতেই অামি সাড়া

দিলাম।অামার হাত টেনে ধরে দৌড়াতে শুরু করলেন অাপনি, অামার উড বি ছিলো সাথে সে দেখে তখন হতভম্ব।পরিবারের

অালাপে বিয়ে।সেদিনই অামরা প্রথম দেখা করতে যাই। কিন্তু ওইদিনের ওই ঘটনায় তিনি বিয়েটা ভেঙ্গে দেন।তাঁর ধারণা ছিলো,

ভালো মেয়েদের অমন করে কোনো অপরিচিত লোক হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় না, অার নিয়ে যেতে চাইলেও তারা যায়না।সন্তান

হারানোর মত অাপনার অত বড় ওই বিপদে অামি অাসলে চুপ করে থাকতে পারিনি।

অামার মাথায় বাঁজ পড়লো।একি কথা! সর্বনাশ! একে তো হাত কাঁটলো, তাঁর উপরে বিয়ে ভাঙ্গা! এই মেয়ে না জানি কেস করে

দেয় অামার উপর। কিন্তু রূপবতীর দুঃখ ভারাক্রান্ত চেহারা দেখে মনে মনে বললাম, ও তোমার জন্য যদি প্রাণ সংশয় করেও

কোনো কাজ করতে হয়; করবো অামি।ও মেয়ে, তুমি যদি কোনো বালিশ পেতে বলো, এক্ষুণি এই বালিশে শুয়ে মরে যাও। অামি

মরে যেতে পারি গো। এতো অনেক সোজা। তাও

এত অপরাধ অামি বইতে পারবো না….

——–অামি সরি, রিয়েলি সরি ;অাসলে অামি ঠিক বুঝতে পারছিনা, ওই এত কি করে যে? অাপনি বলুন অামায় কি করতে হবে?

কি করতে পারি??? অামি চেয়ার ছেড়ে উঠে গিয়ে এবার রূপবতীর পাশের চেয়ারটায় বসলাম। অফিসের সবাই লাঞ্চে। জসিম

দরজার পর্দা টেনে রেখেছে। অামি কি মেয়েটার পা ধরে ক্ষমা চাইবো? না না বিস্তর ছোট হবে অামার! হাত ধরেই চাই তাহলে…..

অামি কিছু বলবার অাগেই রূপবতী বলল,

——-অাপনি অত অানইজি হবেন না। বিয়ে ভাঙ্গা নিয়ে অামি মোটেই দুঃখিত নই।যেটা ঘটবার,সেটা ঘটবেই।এটা তো অামার

হাতে নেই।

অামার অাত্মগ্লানি অন্য জায়গায়। অামায় কেউ খারাপ কি মন্দ ভাবলো সেটা সম্পূর্ণ তারঁ নিজস্ব ব্যাপার, কিন্তু যা অামি নই তা

ভেবে রাখলে খারাপ লাগে! অামার উড বি সেদিন যা ভেবেছিলেন সেটা যে ঠিক নয়, অামি তাঁকে তা জানাতে চাই।

অামি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।বুকের ভেতর ভালো লাগা অার কষ্টের মেশানো অনুভূতি। মেয়েটা তাহলে নিজের ভাঙ্গা বিয়ে জোড়া

দিতে এসেছে! শেষ চেষ্টা। অামার জন্য নয়! উফ্…..

জীবনে কোনোমেয়ের দিকে ঠিক করে তাকাইনি অামি। জ্ঞানত কখনো কোনো খারাপ ব্যবহার করিনি।নারী ব্যাপারটাই অামার

কাছে, অালাদা পৃথিবী।কোনো মেয়েকে কষ্ট দেওয়া তো অনেক দুরে!

এমনকি বিসিএসের পর অামায় যখন এই অফিসে এপয়েন্ট করা হলো, সবাই তখন বলেছিলো, নারী নাহয় কাটিয়ে উঠলে; কিন্তু

টাকা!? ও চাকরিতে কেউ সৎ থাকতে পারেনা। টাকা অাপনা অাপনি উড়ে এসে গায়ে পড়ে যায়!নামই ভূমি অফিস, টাকার

জন্মভূমি।

কিন্তু অামার এই এত অল্পদিনের চাকুরিতে জ্ঞানত কোনো অন্যায় অামি করিনি।অামি জানি মানুষ যেটা মনে প্রাণে বিশ্বাস করে,

চায়; সেটা সে করতে পারে; ভরসা রাখতে হয় অাল্লাহর উপর শুধু।

এই এখানে ছোট্ট উপজেলায় সরকারি সব চাকুরিরতরা অামার সম্পর্কে বলে, হাসান মোহাম্মদ জুনাইদ স্যার, একটা পিস! বাপরে

বাপ!সততা, এবং কঠোরতার মিশেল।

অার সেই অামি কিনা একটি মেয়েকে রক্তাক্ত করে বিয়ে ভেংগে দিয়ে এতদিন ধরে কষ্ট দিচ্ছি। ছিঃ। এতবড় পাপ অামার দ্বারা?

মনে মনে বললাম, রূপবতী তোমার বিয়ে কিছুতেই ভাংবে না সব ঠিক করে দিবো অামি। বলবো তাঁকে, অাপনি কত ভালো।

——-তিনি কোথায় অাছেন এখন? অামি তাঁর সাথে দেখা করতে চাই; সম্ভব হলে অাজি।

অামার কণ্ঠে অাকুলতা ভেংগে পড়লো।

——অাপনি তো দেখি নার্ভাসই হয়ে পড়েছেন!

——না মানে ব্যাপারটা ক্লিয়ার হওয়া দরকার! এতদিন ধরে বিয়ে অাটকে অাছে।

নিজের মোবাইল ফোনটা সামনে এনে বলল রূপবতী

——বিয়ে অাটকে অাছে মানে? উনি তো বিয়ে করেছেনই। ভালো অাছেন তো।

অামার মুখ অারো হা হয়ে গেলো। বিয়ে করা লোকটার কাছে নিজের অনেস্টি কনফেস করার অাবার কি দরকার?ইশ্! মেয়েটার

কি পার্সোনালিটি। কত অাত্মসম্মানবোধ।গল্পের নায়িকাদের মত একদম।অামি হলে তো বলতাম।

যা-শালা ভাগ!তবে, এইবার অামার নিজের বুকের ভেতর শীতল হাওয়া!বিয়ে যেহেতু হয়নি অামার একটা চান্স অাছে। অামিও

দেখতে খারাপ কি।ছয়ফুট হাইট, মোটামোটি ফর্সা, চেহারাও ভালো। তাছাড়া অাম্মা তো প্রায়ই বলেন, লাল অার নীল শার্ট

পড়িসনারে জুনু, পরীরা তোরে তুলে নিয়ে পরীস্থান চলে যাবে।চাপদাড়ি রাখায় সেদিন তো অবনী অাপা বললেনই, তোকে তো

পুরো বলিউডের নায়ক লাগছে…

ভালো রেজাল্ট, ভালো চাকরি।

।তাছাড়া মেয়েটা যেহেতু এতদিন অামায় মনে করে খুঁজেছে, হোক না অন্য দরকারে; নিশ্চয়ই, মেয়েটার ও অামার জন্য সফট

কর্ণার অাছে। এক ফাঁকে বলবো কথাটা।

অাগে ও ব্যাটার ঝামেলা মিটুক!

মোবাইল প্যাডে নাম্বারটা ডায়াল করে রূপবতী অামার সামনে ফোন বাড়িয়ে দিয়ে বলল,

—–এই নিন ভিডিও কলে শুধু একটু কথা বলে নিন, অামি পাশে থেকে এক্সপোজ করবো সব….

তারপরে রূপবতী তাঁর বর্ণনা শুনিয়ে দিলো। লোকটার সাথে কথা বললাম অামি। ছেলেটার নাম প্রতীক। বেশ হ্যান্ডসাম! অামি

অান্তরিক হয়ে প্রতীক সাহেবের সাথে কথা বললাম।

তারপর রূপবতী চুপকরে বসে রইলো একটুক্ষণ।মুখে চোখে স্পষ্ট দ্বিধা!

মোবাইল স্ক্রিন স্ক্রল করছে। হয়তোবা অারো কিছু বলার অাছে, মনে মনে গোছাচ্ছে। অাচ্ছা এই একটা কারণেই কি রূপবতী

খুঁজতে এসেছে অামায়? অামার সিক্সথ সেন্স বলছে, অন্য একটা কিছু অবশ্যই অাছে। সেজন্যই এত কষ্ট করে অামাকে খুঁজে

বের করা।

অফিসের সবাই লাঞ্চব্রেকের পর চলে এসেছে। জসিম একটু পর পর উকিঁ ঝুকি্ দিচ্ছে। তাঁর মানে ক্লায়েন্ট এসে গেছে অনেক।

এসব এড়াতেই

অামি সাথে সাথেই বললাম,

——-চলুন ম্যাম ;এবার তো অন্তত লাঞ্চ করা যায় অামার সাথে।কাছেই বাসা অামার।

রূপবতী চমকালো একটু। মাথা নাড়লো।

অামি হাত জোড় করে বললাম,

——প্লিজ চলুন। ক্ষিদে পায়নি না এখনো অপরাধী অামি?

——-না না কি যে বলেন না অাপনি??

অামি রূপবতীকে পাশে নিয়ে বের হলাম। উপজেলার এই বিল্ডিং এ চারতলায় অামার অফিস। এই অসম্ভব রূপবতী মেয়েটিকে

পাশে নিয়ে বের হবার সময়, অফিসের সব লোকের চক্ষু ছানাবড়া! প্রতিটা সিড়িতেই যার সাথে দেখা হচ্ছে,সবাই শকড এবং

সারপ্রাইজড। অামার নিজেরই হাটু কাঁপছে। এত ভাগ্যবান অামি! এত সুন্দরী, মার্জিত, ব্যাক্তিত্বপূর্ণ মেয়েটি কিনা নিজে করে

অামায় দেখতে এসেছে। রাজার রাজ্যজয়ের খুশি অামার মনে।

অামার অফিস বেড়িয়ে বাসায় যেতে দশমিনিটের হাঁটা পথ। রূপবতী পাশেই হাঁটছে অামার।সেই সময়টাতেই হাটতে হাটতে কথা

বলছি। রূপবতী সানগ্লাস চোখে দিলো।তিনটার পরের রোদ, মাঝারি কড়া। তাও সানগ্লাস! সিনেমার স্টারদের মত লাগছে। কি

ফর্সা হাত! চিকন হয়ে উপরে বেয়ে যাওয়া কোমড়! অামার সব অাউলা -ঝাউলা।

——-অাপনি কি একাই থাকেন এখানে?

—–হুহঁ।অামি চমকে তাঁকালাম। জ্বী মানে একাই।একজন অবশ্য অাছেন। সলিম চাচা।তিনিই সব করেন, রান্নাবান্না, ঘরদোর

সামলান বুয়া দিয়ে তিনিই।অাপনি বলেছিলেন, ঢাকা থেকে, তা কিভাবে? ম্যাম..

——কাল রাতের ট্রেনে এলাম। ভোরে স্টেশনে পৌছি। এখানে বাবার রেফারেন্সে একটা চা-বাগানের বাংলোতে উঠেছি অাপাতত।

থাকবো ভেবেছিলাম। কাজটাতো হয়ে গেলো। চলে যাবো রাতেই, অামার লোক স্টেশনে অলরেডি চলে গেছে টিকেট কাটতে।

অার

ম্যাম বলার দরকার নেই তো। বর্ণা ডাকতে পারেন। ছোটো হবো অাপনার।

বর্ণা! অাহা কি মিষ্টি নাম।

অামার বুকের ভেতরে ভাংচুড়। বলতে পারলাম না, যাবেন না অাপনি। থাকুন অামার সাথে সারাজীবন। বুকের ভিতর রেখে

দিবো। মনকে বললাম, ধৈর্য্য ধরো মন। অাস্তে অাস্তে সব হবে। এই তো শুধু পরিচয়ের প্রথম।

কৌতূহল দমাতে না পেরে বললাম,

——-অাপনি কি করেন মিস বর্ণা?মানে দেখে মনে হয়….
——–কি মনে হয় দেখে??
——বড় চাকরি করেন।টিপটপ একদম!
বর্ণা হাসলো। শব্দ করে।
——-তাই নাকি? অত বড় চাকরি নয়, বাবা।টিচার! সোজা কথায় মাস্টারি।
——এত অল্পবয়সী টিচার। তা কোথায়?
——-এই তো শাবিতে। কেমিস্ট্রিতে।
——-শাবিতে মান? শাহজালাল ভার্সিটিতে???
—–হু….পাস করার পর, টিচাররা ছাড়লো না অামায়। পড়তে পড়তে জীবন তেজপাতা। অাবার

ডক্টরেট করতে যাচ্ছি! প্রসেসিং চলছে পেপারসের।

অামার গলা শুকিয়ে এলো। ও মা গো বলে একটা চিৎকার গলায় চলে এলো, থামালাম কোনো মতে।এই পুঁচকে সাঁজুগুজো মেয়ে

ইউনিভার্সিটির টিচার! তাও ক্যামিস্ট্রি! এই মেয়ের থাকার কথা ছিলো, কোনো বিউটি কনটেস্টের ক্রাউন মাথায় করে, হাতে সুন্দর

রকমারী বাহারী ফুলের বুকে।ক্যামেরা জ্বলবে, শাট, শাট শাট….. হাটবার সময় বর্না অামার অার তাঁর মাঝে খুব কম দুরত্ব রেখেই

হাটছে।মিষ্টি পারফিউমের গন্ধ নাকে এসে লাগছে। অামি নিজের শার্টের কলারটা এক ফাঁকে শুঁকে নিলাম। ঘামের গন্ধ নেই

তো… যাক বাবা বাঁচা গেলো। নিজেকে স্বাভাবিক রাখতেই কথা বললাম

——–এত কমবয়সী টিচারকে ছাত্ররা ভয় পায় তো? না খালি তাঁকিয়েই থাকে?
—–ভয় পায় মানে? কিযে বলেননা!
অামার দিকে তাকিয়ে পেছনের অাঁচলটা টেনে তুলে বললেন,
—–এখন দেখুন তো ভয় লাগে কিনা?
অামি হাসলাম।বর্নাকে অাঁচল টানায় বৌ বৌ লাগছে বরং!

——-একটা ইন্টারেস্টিং ব্যাপার শুনুন, এবার ইউনিভার্সিটিতে পহেলা বৈশাখে ছাত্ররা পাপেট শো করলো, ওখানে দুই ছাত্র

পাপেটের সংলাপ এরকম ছিলো, এক পাপেট অারেক পাপেটকে বিয়ের দাওয়াত দিয়ে, যেতে বলছে, তখন অন্য পাপেটটা

বলছে, এই রোববার তো যেতে পারবো নারে বন্ধু, বর্ণা ম্যামের ক্লাস অাছে।ক্লাস মিস করলে, ডিম ভেঙ্গে দিবে। তোর বিয়েটা বরং

একদিন পিছিয়ে সোমবার করে দে।

কথাটা বলেই খিলখিল করে বর্না ম্যাম হাসতে থাকলো।

—–বুঝলেন তো কত কঠিন অামি?

অামি অারও অভিভূত হয়ে গেলাম। বর্না কি চমৎকার গল্পও করতে পারে! অাহারে অামাদের বিয়ের পর অমন করে গল্প করে

কত রাতই না ভোর হবে!! অামি দ্রুত ছক করে ফেললাম মাথার ভেতর।কিভাবে অামি সিলেট বদলি হবো! কারণ বিয়ের পর তো

সিলেটেই থাকতে হবে অামার।বর্ণাকে ছাড়া এক রাত্তির ও তো অালাদা সম্ভব নয়! অাচ্ছা, বর্ণা ডক্টরেট যেনো কোথায় করবে?

৩বছর তো লাগবেই বোধহয়! তারপর অাবার পোস্ট ডক্টরেট। উফ বিয়েটা এর অাগেই সাড়তে হবে।

——বাসায় এসেও মন অস্থির অামার। বর্ণা ফ্রেশ হয়ে নিয়েছে। এর মাঝে। বাহ্!

—-চলুন, খেতে বসা যাক;
——খাবো না অামি!
——অাপনি বাসায় এলেন, অামি ভাবলাম অপরাধ ক্ষমা হলো এবার?
——কেনো? এমনি বাসায় অাসতে পারিনা বুঝি? নিজের পার্সটা থেকে ছোট একটা চৌকোণা কাঁচের বাক্স বার করতে করতে বর্ণা

বলল, অারও কিছু কথা বাকি অামার।একান্তে বলার জন্যই এখানে অাসা……

বর্ণার হাতের চৌকাণা বাক্সটা দেখে অামার ভেতরটা হাজারবার করে বলে উঠলো, না না এ ভুল দেখছি অামি। এ হতে পারে না,

কিছুতেই না।

কোনোরকম অস্পষ্ট অাওয়াজে বললাম,
——–অাপনি….
বর্ণালীর চোখের পূর্ণ অশ্রু অঝোরে ঝরছে এবার,
——-অামার নাম বর্ণালী দেবনাথ। শুদ্ধ সনাতন ধর্মাবলম্বী। এ অামার কৃষ্ণ। উনাকে সবসময় অামি সাথে রাখি। সেদিন যখন

অাপনি অামার হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন, এক দৃষ্টিতে শুধু অাপনার দিকে তাঁকিয়ে দৌড়িয়েছি অামি।কি মায়াময় মুখ!

অামি দুনিয়া ভুলে গেলাম। অামার হাত কেটে রক্ত ঝরছে, টেরই পাইনি অামি, অাপনি চলে যাবার পর, কেউ একজন বলল, ওমা

তোমার তো হাত কেটে গেছে মেয়ে….. তারপরের কিচ্ছু অামার মনে নেই!

অামার সেদিনই মনে হলো, অামার কৃষ্ণ অাপনাকে খুঁজে এনেছেন, নাহলে এমন হবে কেনো?

সবকাজে, সবজিনিসে উনি অামায় ভালোবেসে সফল করেছেন। অাপনাকে যখন অামি খুঁজি, অামি জানি উনিই অাপনাকে

খুঁজে দিলেন।যখন জানলাম অাপনি মুসলমান, তখন থেকেই উনার উপর অামার রাগ।দিন পনেরো পর রাগ ভাঙলো অামার।

অামাদের ধর্মে অামরা পুনর্জন্মে বিশ্বাসী। পরের সব জন্মে অামি অাপনায় চেয়েছি তাই।

অামি চুপচাপ শুনে গেলাম। কথা নেই অামার।বর্ণালী কাঁদছে।কাঁদুক।
—–জানেন, ভালো অার মন্দে যখন বাছতে বলা হয়, সেটা খুব সোজা! কিন্তু যখনি দুটো ভালো, দুটো মন্দে বাছতে বলা হয় তখনি কঠিন খুব। ভালোবাসা ও ধর্ম! দুটোই বড় পবিত্র! এ থেকে কি বাছা যায়? যায় না!
বর্ণালী চোখ মুছে, তাঁর কৃষ্ণকে মাথায় ঠেকিয়ে নিয়ে ব্যাগে ঢুকালো।
কি অাশ্চর্য ভক্তি! এই ভক্তিই অাজ তাঁর পরীক্ষা নিচ্ছে!?
ঘড়িতে সময় দেখে নিয়ে বলল,
—–উঠবো অামি। যাই?
অামি জবাব দিলাম।তোমার যাবার পারমিশন দেয়ার অামি কে, তোমাকে ধরে রাখবার মত অধিকারও কি অাছে অামার?
অামার নিজের মুহূর্তের ভালো লাগা সেদিনের পর বুকে পাথর হয়ে বসলো……
দরজার কাছে গিয়ে বর্ণালী ফিরে তাঁকালো,
শক্ত গলায় বললো,
——–অামার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলে অামি ভেবে নিবো, অামার ধর্মকে অাপনি সম্মান করেন না… অামি অাপনার ধর্মকে সম্মান করি বলেই… পরের জন্মে চেযেছি কিন্তু……

বর্ণালী বেড়িয়ে গেলো।তাঁর চলে যাওয়ার শূণ্য পথটার দিকে তাঁকিয়ে অাছি অামি…….

হুট করেই অামার মনে হলো, বর্ণালীর বিয়েটা ভাঙ্গার কারণ অামি, নাকি তাঁর ভালোবাসা???
হয়তো প্রতীককে চ্যালেঞ্জ করেছিলো খুঁজে নিবে অামায়??

পরিশিষ্ট!: তাঁর প্রায় বছর দশেক পরের কথা।অামি অধিদপ্তরে তখন।এক জাতীয় দিবসের বিশেষ অনুষ্ঠানে বর্ণালীর সাথে দেখা

হয়ে গেলো অামার!

তাঁকে দেখে অামি সেই দশবছর অাগের মতই হতভম্ব! অামি অবশ্য জানতাম এরকম একটা দেখা, অবশ্যই হবে অামাদের।

জড়তা ভয় কাটিয়ে অনেক সাহস করে বর্ণালীর সামনে গেলাম, মুখোমুখি হলাম,

——-একটা কথা জানতে চাই অার কিছুনা।বিয়ে করেননি কেনো অাপনি?

বর্ণালী হাসলো।এতো তাড়া কেনো? চুপ করে থাকলো মিনিট দশেক তারপর অাস্তে করে বললো,

—— বিয়ে করার চেয়ে সহ্য করা সহজ। অামি সহ্যই করতে চাই।অত মনের জোড় অামার কই?অামার পরিবার, অামার শিক্ষা

এসব অামি ডিঙোতে পারবো না।

অামার ভেতর গুটিয়ে গেলো।কি দরকার ছিলো সেদিন নাইমার হারিয়ে যাওয়ার? কি দরকার ছিলো অামার সাথে বর্ণালীর দেখা

হওয়ার?

বর্ণালী চোখ থেকে চশমা খুলে নিয়ে রেখে বলল,

——ধর্মের কি অাজব নিয়ম?মনে মনে ভালোবাসাকে ধর্ম কন্ট্রোল করতে পারে না, অাবার বিয়ে করলেই ধর্ম শেষ….অথচ এই

১০বছরে অামি কত দায়িত্ব নিয়ে অাপনাকে ভালোবেসে যাচ্ছি। এ এমন এক কষ্ট যা কাউকে বললেও অামার লজ্জা।

বর্নালীর চোখের ধারা অবিরত।যেনো এমন কান্নায় সে অভ্যস্ত হয়ে গেছে।
অামার এই প্রথম হাউমাউ করে কাঁদতে ইচ্ছা করলো; বললাম,
——-এর কি কোনো সলিউশান নেই? কেনো নেই?কেনো এমন হলো?
বর্ণালী ফিসফিস করে বলল,
——বড় সাঁধ ছিলো, ওই যে মাটিতে গড় করে প্রণাম করবো অাপনাকে।পায়ের ধূলি মাথায় নিয়ে বলবো, এই নিন অামার সমস্ত

জীবন পায়ের কাছে রাখলাম। ভালোবেসে দিন অামায়।অনেক তৃষ্ণার্ত অামি……..

অামি বর্ণালীকে খুটিয়ে দেখতে থাকলাম।এই এত বছরে কি বদলেছে তারঁ???

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত