চোখে কালো চশমা,হাতে লাঠি,পা টিপে গুটি গুটি পায়ে গিয়ে রাস্তার পাশে থাকা একটা ফুচকা গাড়ির পাশে দাড়িয়ে আছি।।
এমন সময় কানে ভেসে আসলো কারো কান্নাজড়িতো কন্ঠে আমার নাম,
তুমি কেন করেছিলে এমন টা আমার সাথে।।
সেদিন এর ছোট্ট ভুলের মাশুল এভাবে দিতে হবে কোনোদিনও বুঝতে পারি নাই।বলেই কান্নার পরিমান আরো বাড়িয়ে দিলো।
চোখে না দেখলেও বুঝতে ভুল হলো না, এটা সুমির কন্ঠ।
১বছর আগের ঘটনা…….
আমার নাম আশিক,
মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে।
কলেজের ১ম দিন থেকে দির্ঘ ২বছর ধরে একটা মেয়েকে ভালোবেসে এসেছি
মেয়েটির নাম সুমি, দেখতে যেমন মায়াবী, তেমনি সুন্দরি।
কিন্তু কোনোদিনও আমার আড়ালে থাকা ভালোবাসাটার প্রকাশ করা হয় নি।
বন্ধুদের চাপে পড়ে সেদিন সাহস করে সুমিকে আমার ভালোবাসার কথা টি বলার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম।
অবশেষে বুকে সাহস নিয়ে, হাত একটা ছোট্ট লাল টুকটুকে গোলাপ নিয়ে সুমির সামনে হাজির হলাম।
:-এই সুমি তোমার একটু সময় হবে।
:(বিরক্তিকর মুখ নিয়ে) কি বলবেন?
:-এখানে না,একটু এদিকে আসবে।
:-না যা বলার এখানেই বলেন?
অবশেষে লাজ লজ্জার মাথা খেয়ে, বন্ধুদের চাপে পড়ে সুমির বন্ধু-বান্ধুবির সামনে সুমিকে সাহস করে
ভালোবাসার কথাটি বলে দিলাম।
কিন্তু সুমি তো আমার ভালোবাসাকে একসেপ্ট করলোই না, বরং আমাকে সবার সামনে অপমান করলো।
:-নিজেকে কখনো আয়নার সামনে দেখেছেন, নিজেকে কি ভাবেন সিনেমার নায়ক।।
আমার মতন মেয়েকে ভালোবাসতে এসেছেন আপনার কি যোগ্যতা আছেে আমাকে ভালোবাসার।
আপনার মতন ছেলেদের করুনা করা যাই ভালোবাসা যাই না।
কথা গুলো শুনে পায়ের নিচ থেকে যেন মাটি সরে যাচ্ছিলো।।
সুমির কথা গুলো মাথা নিচু করে শোনা ছাড়া কোনো উপাই ছিলো না।
সুমি ঠিকই তো বলেছে।
আমার কি যোগ্যতা আছে,তাকে ভালোবাসার।।
কোনোদিক থেকে আমি যোগ্য না,আমারই ভুল ছিলো নিজের যোগ্যতার কথা না ভেবে হুট করে কাওকে ভালোবাসতে গিয়েছিলাম।
তবে আমি যতদিন বাঁচবো সুমিকেই ভালোবাসবো।
তবে সেটা হবে আড়াল থেকে।
তারপর থেকে আর কোনোদিন ও সুমিকে আমার চেহারাটাও দেখাই নি।
তবে সবসময় সুমির আশেপাশেই থাকতাম।
একদিন কলেজে থেকে বাড়ি ফেরার পথে একটা গাড়ির সাথে এক্সিডেন্ট করলো সুমি।গুরুতর ভাবে আঘাত পেলো।
সেদিন আর নিজেকে আড়াল করে রাখতে পারি নি।
নিজে সুমির নিথর দেহটাকে বুকে জড়িয়ে হাসপাতালে নিয়ে গেছিলাম।
দু চোখের কান্না কিছুতেই থামাতে পারছিলাম না।
সুমি আমাকে কোনোদিন ও ভালোবাসে নি, তবুও ওর প্রতি ভালোবাসাটা আমার ছিলো আর থাকবে।
আমার শার্ট টা লাল হয়ে গেছে সুমির রক্তে।
সুমিকে হাসপাতালে নিয়ে গেলাম, ডাঃ ভালো করে সুমিকে দেখছে অটিতে নিয়ে গিয়ে।
কান্নাটা কিছুতেই থামাতে পারছি না।
দু চোখ দিয়ে নিজের অজান্তেই অস্রু ঝরে পড়েছে।
অনেক্ষন পরে ডাঃ অটিত থেকে বার হলো,
চোখের জ্বল মুছে ডাঃ এর কাছ ছুটে গেলাম।
:-কি হয়েছে ডাঃ,সুমি ঠিক আছে তো।
:-হুম,,,ঠিক আছে” তবে।।।।।
:-তবে,,কি ডাঃ?
:-মাথাতে প্রচন্ড রকমের আঘাত পাওয়ার কারনে তার দু চোখের দৃষ্টি শক্তি নষ্ট হয়ে গেছে।
ডাঃ এর কথা শুনে, নিজেকে আর সামলিয়ে রাখতে পারলাম না।
কেন হলো, ভাবতেই নিজের দু চোখ দিয়ে বহমান নদীর মতন অস্রু ঝড়ে পড়তে লাগলো।
এত সুন্দর রঙ্গিন পৃথিবীটা কে আর দেখতে পারবে না।
সব কিছু থাকার পরও অন্ধকারাচ্ছন্ন ভাবে জীবন যাপন করবে।
সুমির জ্ঞান ফিরে আসার আগেই তার দৃষ্টি শক্তি ফিরিয়ে দিবো আমি, তাকে কষ্ট দিতে চাই না কখনো।
এত সুন্দর একটা মেয়ে অন্ধ হয়ে যাবে।
অবশেষে ডাঃ কে বলার পরে রাজি করলাম।
আমার চোখ দুটি সুমির চোখে স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।
শেষ বারের মতন সুমির মায়াভরা মুখটা ভালো করে দেখে নিলাম।
আমি আজকে অনেক খুশি, কারন আমার চোখ দিয়ে সুমি আবারো রঙ্গিন পৃথিবীটা উপভোগ করবে।
আমার যখন জ্ঞান ফিরলো চোখের সামনে অন্ধ্যকার ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না।
ডাঃ এর হাতে একটা চিরকুট দিয়ে চলে আসলাম।
তারপর থেকে আর কখনো সুমির সামনে যাওয়ার মতন সাহস হয় নি, কারন একজনকে আলো দিতে গিয়ে নিজেই এখন অন্ধকার জগৎ এর পথিক আমি।
আমার নিঃসঙ্গতাপ্রিয় লাঠিটা ছাড়া আর কিছুই নেই।
কি ভেবে ছিলে, নিজের চোখ দিয়ে খুব বীরত্বের প্রামান দিতে চেয়েছিলে তাই না।
যখন ডাঃ তোমার দেওয়া চিরকুট টা আমার হাতে দিয়েছিলো তখন এক মুহুর্তের জন্য মনে হয়েছিলো, পাশে থাকা চাকুটা দিয়ে চোখ দুটোকে আবার নষ্ট করে ফেলি।
কিন্তু পারি নাই, কারন এ টা ছিলো তোমার দেওয়া ১ম এবং শ্রেষ্ঠ উপহার।
তোমাকে অনেক খুজেছি কিন্তু কোথাও পাই নি।
অনেক কষ্টে তোমার বাসার ঠিকানা জোগাড় করে, সেখানে গিয়েও তোমাকে পাই নি
:-কি করে পাবে, তুমি তো চেয়েছিলে আমার চেহারাটা কোনোদিনও যেনো তোমার সামনে না নিয়ে আসি।
তাই নিজের থেকে আড়াল হয়ে গেছিলাম।
:-খুব তো ভালোবাসতে তো কেন এতটা কষ্ট দিলে আমাকে।
:-তোমাকে কষ্ট দিলাম কি করে, বরং তোমার কষ্টের কারন হতে চাই না বলেই তো সরে এসেছিলাম,
আমি চেয়েছিলাম আড়ালে থেকে তোমাকে ভালোবাসতে,
আর সব ভালোবাসা যে পুর্নতা পাবে এমন টা তো নই।
ভালোবাসা শুধু পাওয়ার মাঝে নই, বরং ভালোবাসার মানুষটিকে সুখে রাখার নামই ভালোবাসা।
:-আর একটা কথাও বলবা না, তুমি চলো আমার সাথে।
:-কোথাই যাবো?
:-যে দিকে দি চোখ যাই সেদিকে যাবো।
:-কিন্তু এই অন্ধমানুষটিকে নিয়ে কোথাই যাবে তুমি?
:-কে বলেছে, তুমি অন্ধ। তোমার চোখে আমি দেখবো আর আমার হাত ধরে তোমাকে পৃ্থিবীটা দেখাবো আমি।
:-কিন্তু….
:-কোনো কিন্তু না, আর একটা কথা বললে তোমার খবর আছে।
বলেই সুমি আমার হাত টা শক্ত করে ধরে হাটতে লাগলো।
অচেনা কোনো এক পৃথিবীতে।
যেখানে দুজনে মিলে নতুন করে আমাদের নতুন জীবনে সুচনা ঘটাবো।
ভালোবাসা পাওয়ার থেকে ত্যাগের মাঝে প্রকৃত সার্থকতা পাওয়া যাই।
যদি সেটা হয় মন থেকে।
সত্যিকারের ভালোবাসা কখনো হারাই না, হয়তো দমে যাই।
কিন্তু কখনো শেষ হয়ে যাই না।
কোনো এক ঘুর্ণিপাকের খেয়াই ঠিকি একদিন মনের দুয়ারে এসে কড়া নাড়ে।
হয়তো সেটা একটু দেরি করে।