হঠাৎ দেখা ভালবাসা

হঠাৎ দেখা ভালবাসা

বারান্দায় বসে বসে মুভি দেখছি ৷ রোমান্টিক সিন চলছে ৷ হটাৎ রাহাতের ফোন ৷ ব্যাটা ফোন দেওয়ার আর সময় পেলো না ৷
– হ্যালো সিহাব, কোথায় তুই? (রাহাত)
– বাসায় আছি, কি হয়েছে, তোর কন্ঠ এমন লাগছে কেন?
– রবি এক্সিডেন্ট করেছে, মেডিকেল হাসপাতলে নিয়ে আসছি ৷ রক্ত দেওয়া লাগবে ৷ তোর আর রবির গ্রুপ তো এক ৷
– আচ্ছা, তুই থাক আমি আসছি…
টি-শার্ট পরতে পরতে বেরিয়ে পড়লাম ৷ পনেরদিন আগে একবার রক্ত দিয়েছিলাম বলে ডাক্তাররা আমার রক্ত নিতে চাচ্ছিল না ৷ কিন্তু বন্ধুর জন্য এটুকু করবো না? ডাক্তারকে অনেক বুঝিয়ে রাজি করালাম ৷
বেডে শুয়ে আছি ৷ একজন নার্স আসলো ৷ দেখে মনেহলো মেডিকেলের ছাত্রী হতে পারে ৷ প্রথমে আমার দিকে একটু অবাক দৃষ্টিতে তাকালো, তারপর হাসলো ৷ কারনটা বুঝলাম না ৷ রক্ত নেয়া শেষ হলে আমাকে শুয়ে থাকতে বলে চলে গেল ৷
১০ মিনিট পরে কিছু ফল নিয়ে আসলো,
– এগুলো খেয়ে নেন, আপনার বন্ধু পাঠিয়েছে ৷ (নার্স)
– রবি কেমন আছে?
– এখন ভালো, বন্ধুকে খুব ভালবাসেন?
– সে তো সবাই বাসে ৷
– বেশি টেনশনের কোন কারন নেই ৷
– Ok
– তাহলে এবার ওই পাশে গিয়ে টি-শার্টটা সোজা করে পরে আসেন ৷
টি-শার্টের দিকে তাকিয়ে দেখি উলটো করে পরে আছি ৷ এবার বুঝলাম মেয়েটার আমাকে দেখে অবাক হওয়া ও হাসির কারন ৷
– মাথাটা ঘুরাচ্ছে, এখন উঠতে পারবো না ৷
– প্রথম রক্ত দিচ্ছেন?
– না, পনেরদিন আগে একবার দিছিলাম ৷
– কি??? তাহলে আজ দিয়েছেন কেন? এতে আপনার অনেক সমস্যা হতে পারে জানেন?
– জানি, তবে সেটা বন্ধুর চেয়ে বড় নয় ৷
মেয়েটা একটা মুচকি হাসি দিয়ে চলে যেতে যেতে বলল,
– ফলগুলো খেয়ে নেন ৷ আর এখানে শুয়ে থাকবেন ৷ আমি পরে এসে দেখে যাব ৷
:
সন্ধ্যার সময় রাহাত আসলো,
– তোর কোন সমস্যা হচ্ছে না তো? (রাহাত)
– Feeling in love…
– কি? হসপিটালে তুই কিসের প্রেমে পড়লি?
– হসপিটালে যার প্রেমে পড়া যায় ৷
– মানে?
– নার্স ৷
– কোন নার্স?
– রক্ত নিছিল যে, রক্তের সাথে মনটাও নিয়ে গেছে ৷
– তাহলে ফোন টা নিয়ে ফেলি?
– কার ফোন?
– আরে ফোন নাম্বার ৷
– দোস্ত তুই এতো ভাল কেরে?
– আসতে পারি? (সেই নার্স)
– আরে আসেন আসেন ৷ আচ্ছা দোস্ত, আমায় ওষুধ আনতে যেতে হবে ৷ তুই থাক ৷
বলেই উঠে গেল রাহাত ৷ আমি জানি ওর কোন কাজ নেই ৷ একটু সুযোগ করে দিয়ে গেল ৷
– উঠতে পারবেন? (নার্স)
– মনে হচ্ছে পারবো ৷
– চলেন বাইরে গিয়ে বসি ৷
– Ok, চলেন ৷
আমাকে ধরে নিয়ে বাইরে বসালো ৷ মনেহলো আমার অনেকদিনের পরিচিত আপন কেউ ৷ অনেকক্ষন কথা হলো মেয়েটার সাথে ৷ মেয়েটার নাম মিম, মেডিকেলে পড়ে, হোস্টেলে থাকে ৷ কথা বলার ফাকে সেই আমার ফোন নাম্বার চেয়ে নিল ৷
:
তারপর প্রায় এক বছর পার হয়ে গেছে ৷ মিম আর আমার সম্পর্কের অনেক উন্নতি হয়েছে, কিন্তু সেটা প্রেম পর্যন্ত পৌছায়নি ৷ আমার মত ছাপোষা ঘরের ছেলের সাথে এমন একটা সুন্দরী+ধনীর দুলালি রোজ ফোনে কথা বলে সেটাও তুমি করে, মাঝে মাঝে ঘুরতে যায় এটাই অনেক ৷ কিন্তু আমি আর পারছিলাম না নিজের ভালবাসাকে চেপে রাখতে, এদিকে প্রপোজ করার সাহসও পাচ্ছিলাম না ৷ তাই ফোনটা ওফ করে রাখলাম কিছুদিন, এটাই কাজের মেডিসিন ৷ এগারোদিন পর খুললাম ৷ সাথে সাথে মেসেজের বন্যা মিমের নাম্বার থেকে ৷ ফোন দিলাম,
– হ্যালো (আমি)
– কোথায় ছিলে তুমি, ফোন অফ ছিলো কেন, কেমন আছো, কোন সমস্যা হয়নিতো তোমার?
– এতো প্রশ্ন একসাথে করলে কি করে উত্তর দেব?
– Ok, তুমি এখনই আমার সাথে দেখা করো ৷
– তোমার তো আজ ছুটি না ৷
– সেটা আমি বুঝবো, তুমি দেখা করতে পারবা কি না বলো?
– হুম, কোথায় আসবো?
– নদীর ধারে পুলটায় আসো, আমিও আসছি ৷
– Ok
:
অনেকক্ষন ধরে দাড়িয়ে আছি দুজন ৷ কিছু বলছে না মিম। আমিও সাহস পাচ্ছিলাম না কারন মিম রেগে আছে কি না বুঝতে পারছিলাম না ৷ সন্ধ্যা হয়ে আসছে ৷ আমি বললাম,
– সন্ধ্যা হয়ে আসছে ৷
– (নিশ্চুপ)
– রাত হলে হোস্টেলে সমস্যা হবে তো?
– (নিশ্চুপ)
– চলো তোমায় দিয়ে আসি ৷
– তুমি ফোন বন্ধ করে রাখছিলে কেন?
– বোঝার চেষ্টা করছিলাম ৷
– কি?
– প্রথম দেখায় যার একটুকরো মুচকি হাসি মন কেড়েছিল, হারানোর ভয়ে যাকে ভালবাসিও বলতে পারিনি, মন যাকে সারাজীবনের সাথী করে নিয়েছে তার কাছে আমার অবস্থানটা কোথায় ৷
– কি বুঝলে?
– যা বুঝলাম তাতে তো এতক্ষণে বুক এক সুন্দরী নার্সের সাক্ষাৎ পেতো ৷ কিন্তু এখনো তো সে সৌভাগ্য…
কথা শেষ না হতেই বুক সেই সাক্ষাৎ পেয়ে গেলো ৷ একটু পরে খেয়াল করলাম, শার্টটা ভিজে লাগছে ৷ হুম, কাঁদছে মিম, তবে এটা দুঃখের কান্না মনে হলো না ৷ তাই চোখ মুছে দিতেও ইচ্ছা হলো না ৷ শুধু মনের ভিতর রবীন্দ্রনাথের কথাটা একবার উচ্চারিত হয়,
পাইলাম, আমি ইহাকে পাইলাম ৷

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত