নিরব ব্রেকআপ

নিরব ব্রেকআপ

-তুমি আর কখনোই আমার সাথে যোগাযোগ করবে না।

-কেন???

-আমি চাচ্ছি না আর তোমার সাথে কোন সম্পর্ক রাখতে।

-এসব কি বলছো তুমি????

তোমার কি মাথা ঠিক আছে???

-হুম্মম্মম আমি ভেবে চিন্তে সুস্থ মস্তিষ্কেই বলছি তোমাকে।

অতঃপর মেয়েটির প্রস্থান।

ছেলেটি দাড়িয়েই ছিলো অবাক চাহনীর নিরব অশ্রু রোধনে…….।।

বুকের ভেতর কিসের যেন শব্দ হচ্ছে বুঝতে পারছে না রাজ।

অনুর বলে যাওয়া কথা গুলো ভালোবাসার বীণার তার গুলোকে করেছে অসংলগ্ন।

ভালোবাসার পটভূমিকে করেছে ছিন্ন ভিন্ন অনুর মাড়িয়ে যাওয়া পদক্ষেপ।

সেই অসংলগ্ন বীণার তারে কোন সুর বাজে না,পটভূমিও ছিন্নভিন্ন যাচ্ছেনা তাকে সাজানো।

রাজ কোন রকমে বাসায় গিয়ে ঢলে পড়লো বিছানায়।

চিৎ হয়ে শুয়ে শুয়ে একটার পর একটা সিগারেট টানছে আর ভাবছে কি থেকে কি হয়ে গেলো।

কেন এমন হলো??

যেই অনু আমাকে ছাড়া কিচ্ছু বুঝতো না সেই অনু আমার সাথেই ব্রেক আপ করে চলে গেলো!!!!!

কই তার তো দু’চোখের পাতা একটুও নড়তে দেখলাম না তার ভেতর ছিল অসীম দৃঢ়তা,ঠোটে ছিল কাঠিন্যতা,ফিরে যাওয়ার পদক্ষেপে ছিলোনা কোন ফিরে আসার আভাস তবে……….!!!

নাহহহ আর পারছি না…..।।

কি করবো?

কি করবো??

আত্মহত্যা….!!

নাহহহ কিছুদিন আগে ফেইসবুকে পড়েছিলাম সিলেটে নবম শ্রেনীর একটি ছেলে প্রান দিয়েছিলো,কি পেয়েছিলো বেচারা???

আর আমি যদি আত্মহত্যা করেই ফেলি তবে অনু যদি ভুল বুঝে ফিরে আসতে চায় তবে ও কার কাছে যাবে????

নাহহ তার চেয়ে বরং ধীরে ধীরে মরবো…….।।

পরের দিন।

খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠলো রাজ। উঠেই বন্ধু সিনহা কে ফোন করলোঃ

-হ্যালো

-দোস্ত একটু দরকার আছে দেখা করতে পারবি???

-কখন?

-এখন পারবি?

-তোর মাথা গেছে শালা??

কাল একটু বেশি হয়ে গেছে এখন পারবো না বিকালে।

-না দোস্ত আমার যে এখনই দরকার।

আচ্ছা আমি যদি তোর বাসায় আসি??

-এই তোর সমস্যা কি রে বলতো??

-দোস্ত একটা বোতল দিবি??

-রাজ!!! তুই না এসব খাওয়া ছাড়ছিলি কোথাকার কোন অনুর জন্যে??

-হুম্মম্মম আবার ধরছি এবং ধরবো।

-ওটা আমার বাসাতেই আছে তাহলে তুই আমার বাসাতেই আয়।

-ওকে।

সিনহা’র বাসায়।

সিনহার রুমে বসে আছে দুজন।

-আচ্ছা রাজ সমস্যা কি আমায় বলতো??

রাজ চুপ করে থাকে এই প্রশ্ন করলে।

-রাজ আমি তোকে একটা প্রশ্ন এই পর্যন্ত কয়বার করেছি??

তুই কি শুনতে পাচ্ছিস না??

-না আমি শুনতে পাচ্ছি না।

গতকালের পর থেকে আমি আর শুনতে পাচ্ছি না।

তুই কি আমাকে বোতলটা দিবি???

সিনহা কি যেন ভাবলো তারপর রাজকে বোতলটা দিয়ে বললোঃ

আস্তে আস্তে খাইস অর্জিনাল মাল একসাথে বা বেশি খাইলে কলিজায় ধরবে আর শোন তুই কি আমাকে কিছুই জানাবি না???

রাজ বোতলটা নিয়ে লম্বা পা ফেলে চলে যাচ্ছিলো হঠাৎ দরজার কাছে গিয়ে কি মনে করে ঘুরে দাড়িয়ে বললোঃ

-সিনহা অনু আমার কাছে ব্রেক আপ চেয়েছে।

ও আমার সাথে আর সম্পর্ক রাখতে চায় না।

কথাগুলা বলেই রাজ চলে গেলো।

রাজের কথা গুলোর মাঝে কেমন যেন শীতলতা ছিলো সিনহা’র বুঝতে বাকী থাকলো না কি হতে যাচ্ছে।

দেরী না করে সাথে সাথে ড্রেস চেঞ্জ করে বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।

অনুর বাসা খুজে পেতে কোন কষ্ট হলো না কারন এর আগেও রাজের সাথে এখানে এসেছে দুজন।

আসতে আসতে পথে আরো দুজন ফ্রেন্ডকে ফোন করে বলে দিলো রাজের বাসার সামনে অপেক্ষা করতে বাট ভেতরে যাওয়া নিষেধ।

সোজা গিয়ে অনুর বাসায় নক করলো সিনহা।

ঠক ঠক ঠক।

কিছুক্ষন পর দরজা খুললো অনু।

-আরে সিনহা ভাই আপনি??

-হুম্মম্ম একটা দরকারে এসেছি।

-কি দরকার? আসুন ভেতরে আসুন।

– না না ভেতরে যাবো না,আপনাকে একটু দরকার।আমার সাথে এখন একটু যেতে পারবেন??

-এখন??

-হুম্মম্মম প্লিজ।

-আচ্ছা আপনি অপেক্ষা করুন আমি আসছি।

-আমি বরং বাইরে চায়ের টং এর ওখানে বসে এক কাপ চা খেয়ে নিই,যা শীত পড়েছে!!

-আচ্ছা।

কিছুক্ষন পর…….,

অনু বেরিয়ে এলো ড্রেস চেঞ্জ করে হালকা একটু প্রসাধনীও মেখেছে বলে মনে হচ্ছে।

এইটুকুতেই কি দারুন লাগছে।

শালা রাজের পছন্দ আছে বলতেই হবে।

অনুকে নিয়ে সিনহা বাইক স্টার্ট দিলো…….।।

বোতলের ছিপি খুলে মাত্র এক পেগ নিয়েছে গ্লাসে মনে পড়ে গেলো অনুর বলা শেষ কথাঃ সুস্থ মস্তিষ্কেই বলছি আমি ব্রেক আপ চাই।

ভাবতে ভাবতেই গ্লাসটা নিয়ে মুখে দেবে এমন সময় কলিং বেলের শব্দ……..।।

সিনহা অনুকে নিয়ে এলো রাজের বাসার গেটে।

অনু জিজ্ঞেস করলোঃ

-সিনহা ভাই এখানে কেন?

-বাসাটা চেনেন তো তাই না??

-হুম্মম্ম চিনি।

-তাহলে আর কোন কথা না বলে চুপচাপ আমাদের সাথে উপরে চলুন।

অপেক্ষমান বন্ধুদের বললোঃ এই আয় তোরা।

কলিং বেলে চাপ দিলো সিনহা।

রাজ এসে দরজা খুললো।

কি রে তোরা?

-চলে এলাম বন্ধু তুমি একা একা মজা নিবা আর আমরা বুঝি বসে আঙ্গুল চুষবো?

-শালা বিষ খেতে বসেছিলাম তাও দিবি না? সিনহা তুই তো জানিস?

হুম্মম্ম আমরা সবাই জানি এখন তুই সর আমরা একটু ভেতরে যাই।

একে একে সবাই ভেতরে যাচ্ছে,

চার নম্বরে এসে লাগলো খটকা।

রাজ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে অনুর দিকে আর অনু তাকিয়ে আছে রাজের দিকে।

অনেক ঝামেলার পর দুজনকে আবার এক করে দিলো বন্ধুরা সবাই মিলে।

তারপর??

অনু সেই যে রাজের বাসা থেকে গেলো আর রাজের কাছে একটা ফোন বা এক টেক্সট পর্যন্ত দেয়নি।

এমনকি রাজ টেক্সট করলেও অনু তার দায়সারা রিপ্লাই করে।

কথা বলে না রাজের সাথে যোগাযোগে অনিচ্ছা।

রাজ এখন আরো দ্বিগুন যন্ত্রনায় ভোগে।এই “নিরব ব্রেক আপ” রাজকে মানসিক ভাবে অসুস্থ করে ফেলছে।

কি দরকার ছিলো এর চেয়ে কি ব্রেক আপই……. নাহহহ আর ভাবতে পারছে না রাজ। :'( :'(

রাজের মনে হয়ঃ

পৃথিবীতে আসলে ভালোবাসা বলে কিচ্ছু নেই সবই হচ্ছে মেয়েদের ব্রেক আপ ব্রেক আপ খেলা মাত্র।

………………………………………………সমাপ্ত……………………………………….

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত