চেয়েছিলাম আমি তোমারই দিকে,
অপূর্ব তোমার মুখখানা,
তোমার জন্য পাগল আমি
আমায় ছেড়ে যেওনা।
.
গল্পটার শুরু অনেক আগে থেকেই।নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলে রফিক।তার জীবনে শখ বলে কিছুই নেই।ছোট থেকেই কষ্টকে খুব কাছে থেকে দেখেছে সে।কষ্টগুলো তার কাছে এতটাই আপন হয়ে গেছে যে সে আনন্দ শব্দটা শুনলেও যেন তার এখন অদ্ভূত লাগে।
.
রফিক এবার অনার্স ২য় বর্ষে পড়ে।অনেক বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে সে আজও পড়ালেখায় টিকে রয়েছে।তার ইচ্ছা সে ভালো পড়ালেখা করে একদিন অনেক বড় হবে।কিন্তু দুর্ভাগ্য যেন রফিকের নিত্যদিনের সঙ্গী।বিভিন্ন রকম সমস্যা প্রতিদিন তার সাথে লেগেই থাকে।
এভাবেই কাটছিল রফিকের দিনগুলো।
.
সাধারনত তেমন কোন অনুষ্ঠানেই যায় না রফিক।কারন, তার হৈহুল্লোড় ভালো লাগে না।এর অবশ্য একটা বড় কারনও আছে।
যাইহোক, প্রতিদিনের মত আজও রফিক সকালের কাজকর্ম সেরে ভার্সিটিতে যায়।ভার্সিটিতে গিয়ে সে তার প্রয়োজনীয় ক্লাসগুলো করে।ক্লাস শেষে বাসায় যাওয়ার জন্য রওনা দেয় রফিক।তখন পিছন থেকে ডাক দেয়,
এই দাঁড়া….
.
পিছনে ফিরে দেখে তার বন্ধু মনির তাকে ডাকছে মনির তার সবচেয়ে ভালো বন্ধু।রফিকের সব বিপদে আপদে মনির সবসময় তার পাশে থাকে।বলতে গেলে এই মনিরই রফিকের একমাত্র বন্ধু।সময়ের চলমান গতিতে সবাই রফিকের কাছ থেকে চলে গেলেও মনির রফিককে ছেড়ে যায়নি।
.
.
রফিক : কিরে মনির তুই না কোথায় বেড়াতে গিয়েছিলি?আসলি কবে?
মনির : আজ ভোরেই আসলাম।ইম্পরট্যান্ট একটা ক্লাস ছিল।আর তোকেও নিতে এসেছি।
রফিক: আমাকে? কোথায়?
মনির : আমার ভাইয়ের বিয়েতে।
রফিক : দোস্ত কিছু মনে করিস না।আমি এসব বিয়ে টিয়ে তে যাই না তাতো তুই জানিস।
আমার ভালো লাগে না যেতে।তুই যা দোস্ত।
মনির : আমার আন্টির ছেলের বিয়ে আর তুই যাবি না?এটা কোন কথা?
আমি সবই জানি।কিন্তু পুরোনো কথা মনে রেখে কি লাভ বল?
ভূলে যা সব।আমার সাথে চল।সবকিছু ভূলে কিছুদিন রিলাক্স করতে পারবি।
রফিক : দোস্ত আমার ভালো লাগছে না রে।তুই যা প্লিজ।
মনির : না।তোকে ছাড়া আমি যাব না।তোকে যেতেই হবে।তোকে নেয়ার জন্য আমি এসেছি।আর তুই বলছিস যাবি না।এটা হইব না।তুই যাবি।
রফিক : আচ্ছা ঠিকাছে।তুই যা শুরু করছিস। যেতে তো হবেই।
.
এরপর মনিরের সাথে রফিক আন্টির বাড়িতে চলে এল।
কালই বিয়ে।
রফিক এর আগে কোনদিন মনিরের আন্টির বাড়িতে আসেনি।তাই একটু নার্ভাস ফিল করছে।
রাতের খাবার খেয়ে কোনরকমে রাতটা পার করল সে।
.
পরেরদিন সবাই ব্যাস্ত।কারন,আজ বিয়ে।
সময়মত সবাই মেয়ের বাড়ির দিকে রওনা হল।
প্রায় ৩ ঘন্টা পর পর সবাই মেয়েদের বাড়িতে পৌঁছাল।
.
সবাই নেমে যে যার মত ব্যাস্ত হয়ে গেল।মনির কিছুক্ষণ রফিকের সাথে থেকে সে ও একটু কাজে জড়িয়ে গেল।
অবশ্য এতে রফিকের কোন মনে কষ্ট নেই।কারন, ওর ভাইয়ের বিয়ে।কিছু দায়িত্ব তো আছেই।
.
রফিক একা একা ঘুরতে থাকে এদিক সেদিক।ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ রফিক থমকে দাঁড়ায়।
.
রফিক দেখতে পায় তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে কালোটিঁপ পরা একটি মেয়ে।যেন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না সে।তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে মিতু।
কিন্তু মিতু এখানে কেন?
এরকম অনেক ভাবনা ভাবতে ভাবতেই সেখান থেকে চলে যায় রফিক।
.
খাওয়া দাওয়া শেষ করে বাড়ির এককোনে দাঁড়িয়ে আছে রফিক।
হঠাৎ মিতু দেখতে পায় রফিককে।রফিককে দেখে অনেক অবাক হয়েছে মিতু।এগিয়ে আসে রফিকের দিকে।
.
– তুমি এখানে?
– বন্ধুর ভাইয়ের বিয়ে।
– ও। আমাকে দেখে অবাক হওনি?
– প্রথমবার হয়েছিলাম।এখন আর হইনি।
– কেমন আছ?
– যেমন থাকার।
– রাগটা এখন আছে?
– হয়ত।
– আমার ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করলে না?
– নতুন কিছু জানার ইচ্ছে নেই।
– অনেক বদলে গেছ তুমি রফিক।
– বদলানো দরকার নয় কি?
– ভালো থেকো।পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও।
চলে যাচ্ছে মিতু….
(চুপ করে থাকে রফিক।নিজের ভেতরের কষ্টগুলোকে সে শান্ততা দিতে চায়।কিন্তু কষ্টগুলো যেন পানি হয়ে চোখ দিয়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে।
মনে পড়ে যায় সেই ১ বছর আগের কথা।সামান্য একটা কারনে ভূল বুঝে মিতু চলে গিয়েছিল রফিকেকে ছেড়ে।
কতই না ভালোবাসতো রফিক মিতুকে।কিন্তু কেন যে মিতু তা বুঝতে পারল না।
আজ আবার হঠাৎ মিতুকে দেখে রফিকের সেই ভালোবাসাটা জেগে উঠেছে।কিন্তু মিতুর উপর অনেক অভিমান জমে আছে তার।একবার অনেক কষ্ট পেয়েছে রফিক।এখন অাবার কষ্ট পেতে চায়না সে।কিন্তু এভাবে কি মিতুকে চলে যেতে দিবে সে।
মিতুকে তো সে এখনো ভালোবাসে।তাহলে কেন যেতে দিবে।
সব কথা ভেবে রফিক বলল,
.
– কালোটিঁপে তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে।
– লাগলেই বা কি?
– আর ছেড়ে যাবে না তো আমায়?
– ছেড়ে যেতে দিওনা।
.
এরপর…
.
আবার দুজন দুজনের ভালবাসার পরশ পায়।পূর্ণতা পায় আরেকটি ভালোবাসা। ♥