বাসাটিতে নতুন এসেছে উদয়। উপরের চিলেকোঠায় থাকে সে। অনেক কষ্টে উদয় এই বাসাটি ঠিক করতে পেরেছে। ভারাও তেমন একটা বেশি না। ওর নাগালের মধ্যেই। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ওর রুমটি হচ্ছে ছাদের চিলেকোঠা। কিন্তু তবুও ও কষ্ট করে মানিয়ে নিবে। কারণ শহরে ব্যাচেলার দের বাসা ভারা দেয়না কেউ। এটাও দিতে চাচ্ছিলো না। একে উদয় ব্যাচেলার, আর দুই হচ্ছে এই বাড়িতে বাড়িওয়ালার উপযুক্ত মেয়ে আছে। তাই বাড়িওয়ালা ভারা দিচ্ছিল না। কিন্তু উদয় ওর এক বন্ধু মারফতে পায় বাসাটি। বন্ধুর চাচার বাসা। বন্ধু চাচার কাছে সুপারিশ করায় অবশেষে পাওয়া যায় বাসাটি।।তাছারা উদয় ও খুব ভদ্র ছেলে। উল্টা পাল্টা চলাচল নেই। কোন আড্ডা, নেশা, রাতে দেরি করে বাসায় ফিরা এসব কিছুই নেই উদয়ের মাঝে। উদয় যদিও ম্যাসেই থাকতে পারতো, কিন্তু ওর ম্যাস ভালো লাগে না। তাই এই বাসায় উঠা। এখানে থেকেই উদয় চাকরীর জন্য চেষ্টা চালাতে থাকে।
★
বেশ কিছুদিন হয়ে গেল উদয় এখানে থাকে। ভালো লাগছে বাসাটি ওর কাছে। প্রথমে ভেবেছিলো চিলেকোঠা তাই উঠবে না। কিন্তু উদয় এখন বুঝতে পারছে চিলেকোঠায় থাকার মজা। যখন খুশি ছাদে আসা যায়, ছাদে বসে বই পরা, দক্ষিণা বাতাস উপভোগ করা, রাতের আকাশ দেখা, চাঁদ মেঘের লুকুচুরি এই সব কিছু উদয় উপভোগ করতে পারছে এখন। যেটা হয়তো অন্য বাসায় পারতো না। তাই এই বাসাটা খুব ভালো লাগে ওর। মাঝে মাঝে ছাদে এসে কবিতাও আবৃত্বি করে উদয়। কিন্তু সেটা রাতের বেলা।
★
একদিন রাতে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছিলো। উদয় রুমের দরজায় বসে বৃষ্টি দেখছিলো। এমন সময় উদয় দেখতে পায় ছাদে আরও কেউ আছে। একটা মেয়ে.. উদয় বুঝে যায় এটা বাড়িওয়ালার মেয়ে। বাড়িওয়ালার মেয়েকে আগে কখনো দেখেনি সে। আজ মেয়েটি কে প্রথম দেখছে সে। বৃষ্টি তে ভিজছে মেয়েটি। হাত দুটু দুপাশে ছরিয়ে দিয়েছে। মুখটা কে আকাশের দিকে উপুর করে রেখেছে।
চমকানো বিদ্যুতের আলোতে দেখা যাচ্ছে মেয়েটির মুখে বিন্দু বিন্দু পানি জমে আছে। আর সেই পানিতে অসম্ভব মায়াবতী লাগছে মেয়েটিকে। অনেক্ষন তাকিয়ে থাকে উদয়। তারপর নিজের অজানতেই। নিজেও ভিজতে শুরু করে বৃষ্টি তে। পাশে গিয়ে দাঁড়ায় মেয়েটির। মেয়েটি তখনও আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলো। হঠাৎ জোরে একটা বাজ পরে। বাজের শব্দে ভয় পেয়ে চিৎকার দিয়ে মেয়েটি উদয় কে জড়িয়ে ধরে। উদয় কিছু বুঝতে পারে না। একটু পর মেয়েটি উদয় কে ছেরে দিয়ে একপাশে দাঁড়িয়ে থাকে। সে বুঝতে পারে না কখন উদয় কে ধরলো। চুপ করে নিচে চলে যায় মেয়েটি। ছাদে দাঁড়িয়ে মেয়েটির চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে থাকে উদয়। তখনও বৃষ্টি হচ্ছিলো। উদয় অনেক্ষন ভিজে, তারপর বৃষ্টি থেমে যাওয়াতে উদয় চলে যায় ওর রুমে। মেয়েটির কথা ভাবতে থাকে উদয়। কত মায়া মেয়েটির মুখে। মেয়েটির কথা ভেবেই সারারাত ঘুম হয়নি ওর।
★
পরদিন সকাল। উদয় ছাদে দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটির অপেক্ষায়। সে ভেবেছে হয়তো এখন মেয়েটি ছাদে আসবে। উদয়ের ভাবনা সত্যি করে একটু পরই মেয়েটি ছাদে আসে। মেয়েটি কে দেখে উদয় পানির ট্যাংক এর ওখানে লুকিয়ে থাকে। মেয়েটি ছাদে এসে উদয়ের ঘরের দিকে যায়। গিয়ে দরজায় উঁকি দিয়ে দেখে সে আছে কিনা। উদয়কে দেখতে না পেয়ে কি যেন একটা ছুরে দেয় ওর রুমের ভিতর। দিয়ে নিচে চলে যায় আবার। উদয় দ্রুত ফিরে আসে ওর রুমে। এসে দেখে বিছানার উপর একটুকরো নীল কাগজ পরে আছে। সেটাতে সুন্দর হাতে লেখা, “কাল রাতে হঠাৎ এমন অপ্রত্যাশিত ঘটনার জন্য দুঃখিত”।
চিরকুট টি পড়ে মুচকি একটা হাসি দেই উদয়। তারপর একবার নিচে থেকে ঘুরে আসে। চেষ্টা করে মেয়েটিকে দেখার জন্য। উদয় এখনও মেয়েটির নাম জানে না। নিচে গিয়েও মেয়েটি কে দেখতে পায়নি। মন খারাপ হয়ে যায় উদয়ের। আবার চলে আসে উপরে। হঠাৎ মনে পরে আজ ওর একটা ইন্টার্ভিউ আছে। সে তৈরি হয়ে চলে যায় ইন্টার্ভিউ দিতে।
★
ইন্টার্ভিউ শেষে বিকেলে বাসায় ফিরে উদয়। রুমে ঢুকেই আবারও বিছানায় আরও একটি নীল কাগজ দেখতে পায়। হাতে নেয় কাগজটি। কাগজটি তে লিখা ছিলো “স্যরি বলেছি তো। আবার নিচে খুঁজতে এসেছেন কেন? নিচে আমাকে খুঁজতে আসবেন না।”
এবার উদয় বুঝতে পারে যে সে নিচে খুঁজার সময় মেয়েটি ওকে লুকিয়ে দেখেছে।
.
.
বিকেলে উদয় ছাদে দাঁড়িয়ে আছে। একটা কবিতা আবৃত্তির চেষ্টা করছিলো। এমন সময় উদয় বুঝতে পারে ওর পাশে কেউ এসে দাঁড়িয়েছে। পাশে ফিরে তাকায় উদয়। দেখতে পারে সেই মেয়েটি কে। মেয়েটি রাগি রাগি মুখে উদয় কে জিজ্ঞেস করে…
–সকালে নিচে খুঁজতে গিয়েছেন কেন?
.
–আমার রুমে কেউ কিছু দিয়ে যাবে। সেটা কি আর কেন তা জানবো না? জানার জন্যই খুঁজেছি। কিন্তু লুকিয়ে ছিলেন কেন।
.
–আমি তো লিখেই দিয়েছিলাম কেন? আর লুকিয়ে থাকবো না? আপনি আমায় লুকিয়ে দেখেছিলেন আমি পারবো না কেন? আর খবরদার আর নিচে জাবেন না।
.
–কেন দেখবেন? আর আমি নিচে না গেলে বাহিরে যাবো কি করে? আমার তো পাখা নেই যে উঁরে যাবো।
.
–তা আমি জানি না। কিন্তু আবার যদি আমাকে খুঁজতে দেখি তাহলে আব্বুর কাছে নালিশ করবো।
বলেই মেয়েটি হাটা ধরে। উদয় পেছন থেকে ডাক দিয়ে নাম জিজ্ঞেস করে। মেয়েটিও নাম বলে “নিধি”। তারপর মুখ বাকিয়ে চলে যেতে থাকে। সিড়ির রুমের দরজার কাছে গিয়ে আবার ফিরে দাঁড়ায়। তারপর মুচকি একটা হাসি দিয়ে বলে..
“নিচে যেতে পারেন, আমাকেও খুঁজতে পারেন। কিন্তু আব্বু দেখলে খবর আছে”
বলেই চলে যায় নিধি। উদয় বুঝতে পারে যে নিধি গ্রিন সিঙ্গন্যাল দিয়েছে। খুশিতে লাফিয়ে উঠে উদয়। হঠাৎ মনে পরে মেয়েটির নাম। নিধি। কি সুন্দর একটা নাম। মেয়েটির মত মেয়েটির সব কিছুই সুন্দর।
★
তারপর থেকে রোজ ছাদে দেখা করতো দুজন। অনেক কথা বলতো দুজনে মিলে। নিধি একদিন ছাদে না আসলে উদয় নিচে গিয়ে ওকে খুঁজতো। আর উদয় নিচে না গেলে নিধি ছাদে এসে অভিমান করে বসে থাকতো। এভাবেই দুজনের খুব ভালো চলছিলো। দুজনই বুঝতে পারে দুজন দুজন কে খুব ভালোবেসে ফেলেছে। কিন্তু কেউ মুখ ফুটে বলছে না। নিধিও আর সহ্য করতে পারছে না। কিন্তু নিজেও বলছে না। তাই সে প্ল্যানিং করে যে করেই হোক উদয় কে দিয়েই বলেতে হবে। প্ল্যান মত নিধি বিকেলে ফোন নিয়ে ছাদে যায়। যাওয়ার আগে নিধি ওর এক বান্ধবী কে বলে গিয়েছিল যেন ওকে ঐ টাইমে কল দেয়।
.
.
নিধি বসে উদয়ের সাথে আড্ডা দিচ্ছে। এমন সময় নিধির নাম্বারে বারবার ফোন আসতে থাকে। কিন্তু নিধি কেটে দেয়। একসময় উদয় জিজ্ঞেস করে যে কে কল দিচ্ছে? নিধি বলে যে ওর বয়ফ্রেন্ড। কথাটা শুনে স্তব্ধ হয়ে যায় উদয়। ওর যেন কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। বেশ কিছুক্ষন চুপ করে থাকে উদয়। তারপর আস্তে করে জিজ্ঞেস করে
.
–কবে হলো? আগে তো কখনও বলোনি?
.
–আগে তো ছিলো না। নতুন হয়েছে। তাই এখনও বলি নি।
.
–ও… আচ্ছা তোমরা কথা বলো।
বলেই উদয় নিজের রুমের দিকে যাওয়ার জন্য উঠে…। কিন্তু নিধি পেছন থেকে উদয়ের হাত ধরে ফেলে।
.
–কোথায় যাচ্ছো?
.
–রুমে, একটু কাজ আছে। তুমি এখন বয়ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলো।
.
–আরে তুমি চলে গেলে বয়ফ্রেন্ড পাবো কই?
.
–মানে?
.
–আরে বুদ্ধু.. আমার অন্য কোন বয়ফ্রেন্ড নেই। আমি তোমাকেই ভালোবাসি। আর জানি তুমিও আমাকে ভালোবাস। কিন্তু বলছো না। তাই তোমাকে দিয়ে আগে বলানোর জন্য এই প্ল্যানিং। আর যে কল আসছিলো ঐটা আমার বান্ধবী দিচ্ছিলো। কিন্তু আমাকেই আগে বলতে হলো। গাধা একটা।
.
–হা হা হা, আমি জানি তুমি এমন কিছু করবে। তোমার ফ্রেন্ড আমাকে আগেই ফোন করে সব বলে দিয়েছে। তাই তো আমি ভাব নিচ্ছিলাম তোমাকে দিয়ে বলানোর জন্য।
.
বলেই হাসতে থাকে উদয়। আর তা দেখে নিধি রেগে গিয়ে তেরে যায় উদয়ের দিকে। উদয়ও দৌড়াতে থাকে নিধির কিলের হাত থেকে বাঁচার জন্য
………………………………………….The End………………………………………….










