ভাবতে ভাবতে ডায়রি টা হাতে নিয়ে লিখতে লাগল প্রেম…….
–
→ প্রতিরাতেই স্বপ্ন দেখি কারো পায়ে পায়েল পড়িয়ে দিচ্ছি,কিন্তু তার মুখ দেখার আগেই স্বপ্ন ভেঙে যায়।ইচ্ছা করলেও স্বপ্নটাকে আর দেখতে পাইনা,আবার অপেক্ষা করি আর একটা রাতের।
–
মাঝে মাঝে ইচ্ছা করেও,চেষ্টা করেও দেখতে পাইনা মুখটা।সত্যি কি সে আমার স্বপ্নে কোনদিন দেখাই দিবে না?যদি দেখাই না পাই তবে কেন সে আমার প্রতি রাতে স্বপ্নে আসে।
–
নাকি তার পায়ে পায়েল পড়ানোর মত কেউ নেউ,নাকি আমার হাতেই সে পায়েল পড়তে চায় তাই আমার স্বপ্নেই আসে?প্রশ্নগুলি মনের মাঝে ঘুরপাক খায়,কিন্তু উত্তর দেবার মত কেই নেই।
–
আমি হয়ত,স্বপ্নে আমার এই “পায়েল কন্যাকে” পায়েল পড়াতে পড়াতে তাকে ভালোবেসে ফেলেছি,কিন্তু সে কি আমায় ভালোবাসে,নাকি সুধুই আমার কাছে পায়েল পড়তে আসে,এই পৃথিবীতে কি “পায়েল কন্যা” আছে?
–
আচ্ছা সপ্নকুমারী তুমি কেন সুধুই আমার স্বপ্নে আসো?আমায় ও কি তুমি ভালোবাসো?
–
কোনদিন পাবো কি আমি তোমার দেখা,নাকি সুধুই থেকে যাবে আমার পুরটা স্বপ্ন জুড়ে?
–
যদি কোনদিন তোমার মুখ দেখতে পাই,এই আশায় এখনো তোমায় প্রতিরাতে স্বপ্নে পায়েল পড়িয়ে যাই।
–
মাথার কাছে প্রতিদিন তোমার নিয়ে লেখা ডায়রিটা রাখি,যদি কোনদিন ভুল করে আমার মনের কথা গুলি দেখতে পাও তাই।
–
আচ্ছা তুমি কি বুঝতে পারো না আমি তোমায় অনেক ভালোবাসি,আমার প্রতিটা কল্পনা জুড়েই আছো তুমি?
–
মাঝে মাঝে স্বপ্নে তোমায় পায়েল পড়াতে গিয়ে ভাবি,যার পা দেখতে এত সুন্দর তার চাঁদমুখানি দেখতে কতই না অপরূপ,কিন্তু সেই অপরূপ মুখখানি আর দেখা হয় না।
–
অপেক্ষায় আছি,তোমার কবে আসবে আর আমি সত্যিকারের হাতে তোমার পায়ে পায়েল পড়াবো আমার “পায়েল কন্যা”
.
.
.কথা গুলি লিখে আবার ঘুমিয়ে পড়ল প্রেম।সকাল বেলা মায়ের ডাকে ঘুম থেকে উঠে দেখে কলেজে দেড়ি হয়ে গেছে,তড়িঘড়ি করেই বাসা থেকে বের হয়ে গেলো।
এক ফ্রেন্ডকে ফোন দিয়ে শিওর হলো তার ও কলেজে দেড়ি হয়েছে,তাই প্রেম আর দেড়ি না করে ওই বন্ধুর বাসায় গেল।গিয়ে দেখে প্রতিদিনকার রুটিন তার পরানের দোস্ত এখনো ঘুম।কি আর করা আজকে আর কলেজ যাওয়া হবে না,তাই কিছু সময় অপেক্ষা করার পর ফ্রেন্ড কে নিয়ে ঘুরতে গেল।দুইজনে সাইকেল চালাচ্ছে পাশাপাশি আর সারা দিনের গল্প করছে।একটা মেয়ে গেলে তাকে কেমন লাগলো,মেয়েটার ড্রেস দেখে বলে দিচ্ছি কোন স্কুলের পড়ে আবার ফ্রেন্ড এর জন্য প্রেম একজন কে পছন্দ করে সেই মেয়ের পিছু পিছু বাসা অব্দি যাওয়া।এমনি করে দুপুর হয়ে যায়,প্রেম বিদায় নেয় তার বন্ধুর কাছ থেকে।ঠিক হয় বিকালে ৫টার দিকে আসবে দুইজনে আবার ঘুরতে বের হবে।
–
প্রেম বাসায় চলে যায়,দুপুরে খাওয়া দাওয়া সেরে হালকা একটা ঘুম দেয়।বিকালে উঠে কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনতে লাগলো “Dheere dheere se meri zindagi mein aana”……
–
আর সাইকেল চালাতে লাগলো,সাইকেল তখন ২/৩ গিয়ারে চলছে,আস্তে আস্তে করেই যাচ্ছিলো প্রেম,কিন্তু হঠাৎ করে কই থেকে যেন একটা প্রজাপতি উড়ে এসে তার জামার সামনের দিক থেকে ভিতরে ঢুকে যায়।
–
প্রেম তাড়াতাড়ি সাইকেল থামিয়ে হাত দিয়ে দেখে একটা প্রজাপতি।হাতের মুঠের মধ্যে থাকায় ভাবছে মরে গিয়েছে।কিন্তু যখন ডান হাতের তারায় নিয়ে হালকা করে ফু দেয় উড়ে যায়।খুব ভালোই লাগছিলো প্রেমের কাছে।প্রেমের মনে পড়ে যায় পুড়ানো কথা,কোন এক নাটক বা সিনেমায় দেখেছিলো যে প্রজাপতি যদি উড়ে আসে তবে সাথে করে ভালোবাসা নিয়ে আসে।আর তখন যদি সামনে কাউকে দেখে ভালো লাগে তবে হয়ত সে ই হয় তার মনের মানুষ।প্রেম চিন্তা করছে এই রাস্তায় তার সাথে কি কারো দেখা হবে নাকি হবে না?
–
কিছু দূর যেতেই দেখে একটা প্রজাপতির মত রং এর অনেক গুলি ফুলের আঁকা কোন একটা পোশাক পড়ে একটা মেয়ে রাস্তার পাশ দিয়ে হেটে আসছে।তবে কি প্রজাপতি তার জন্য ভালোবাসা বয়ে নিয়ে এসেছে?প্রেম আস্তে আস্তে সাইকেল টা চালাতে লাগলো,দেখলো মেয়েটা একটু কাছেই একটা গেটের ভিতর ডুকে যায়।প্রেম ভাবে এই তাদের বাসা কিন্তু সব যদি ভালো হয় তবে কি আর প্রেম হয়?কোন মেয়ের মন জয় করতে গেলে একটা রাজ্য জয় করার মত যুদ্ধ করতে হয়।এই বাসা সে চিনে,অনেক দিন আসিফ কে এই রোডে নামিয়ে দিয়ে গেছে,ঠিক মনে নেই আসিফের বাসা কোনটা।কি আর করা এখানে দেড়ি করলে হবে না,তাড়াতাড়ি অভি তার জানের দোস্ত কে নিয়ে সেই মেয়েকে বাসার কাছে এসে আসিফ কে ফোন দিতে হবে।আসিফের নাম্বার টা প্রেমের কাছে নেই,নইলে প্রেম নিজেই এখন আসিফকে ফোন দিত।
–
অভিকে গিয়ে ঘুম থেকে তুলে নিয়ে তাড়াতাড়ি গেল সেই মেয়ের বাসার কাছে,আসিফ কে ফোন দিতেই আসিফ মেয়েটা যেই বাসা থেকে বের হয়েছে সেই বাসা থেকে বের হলো।
প্রেম অভির কানে কানে বলছে,এই আসিফের বোন নাকি আবার,তবে তো সমস্যা হবে?আসিফ ওদের দুইজনকে দেখে বলে তোরা কি মনে করে?দুইজনের গলা শুকিয়ে কাঁট।
কি বলবে ভেবে না পেয়ে বলে এই তো তোদের এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম চিন্তা করলাম তোদের বাসা টা চিনে যাই।আসিফ বলে আচ্ছা আচ্ছা আয় বাসার মধ্যে আয়।
আসিফ তাদের সামনের বারান্দা থেকে যখন নিয়ে যাচ্ছে,তখন প্রেম দেখে সেই প্রজাপতি মেয়েটা আর অন্য একটা মেয়ে আসিফদের বারান্দার টেবিলে বসে হয়ত প্রাইভেট পড়ছে।প্রেম ভাবে মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি।যাক এখন আসিফ কে জিজ্ঞেস করবে কে এই মেয়ে।আসিফ তাদের জন্য বিস্কিট নিয়ে আসল,কথা বলতে বলতে অভি জিজ্ঞেস করে কি রে ওই মেয়ে দুইজন কি তোর বোন?
–
আসিফ বলে আরে দুই জন না কালো ড্রেস পড়া যে সে আমার বোন,আর যে মেয়েটা আমার বোনের বান্ধবী।প্রেম তো মহাখুশি,এবার অভি আর প্রেম মিলে সব ঘটনা খুলে বলে তাকে।যে করে হোক ম্যানেজ করে দিতে হবে।আসিফ বলে ওকে ওকে আমি দেখছি।আসিফ তার বোনের সাথে ফ্রি থাকায় বোনের পড়ার শেষে তাকে ডাক দেয়,বলে তোর ফ্রেন্ড প্রেম করে কিনা কারো সাথে।আসিফের বোন বলে না করে না,তবে ওকে বলে লাভ নেই কারন ও কাউকেই ভালোবাসবে না,অনেকেই প্রপোজ করেছে আগে।তবুও প্রেমের জোড়াজুড়িতে আসিফের বোন তার বান্ধবীকে বলে,কিন্তু না করে দেয়।
প্রেমের খুব খারাপ লাগে তবুও এই ভেবে নিজেকে শান্তনা দেয় যে মেয়ে নাম পায়েল।তবে কি এই তার পায়েল কন্যা?
–
যাকে সে প্রতিরাতে স্বপ্নে দেখে,যার পায়ে সে পায়েল পড়িয়ে দেয়?প্রেম আসিফের বোনের কাছে জানতে চায় আচ্ছা পায়েল কি ওর পায়ে পায়েল পড়ে?আসিফের বোন বলে না পড়ে না কিসের জন্য যেন।আসিফের বোনের কাছ থেকে পুরা রুটিন নিলো পায়েল কখন কই যায়,কলেজ কখন ইত্যাদি আর সাথে পায়েলের নাম্বার টাও নিলো।পায়েল তাদের কলেজের পাশের মহিলা কলেজে ইনন্টার ফাস্ট ইয়ারে পড়ত।অভিকে নিয়ে পায়েল কে রাজি করানোর মিশনে নেমে গেল।পরের দিন পায়েলের কলেজের সামনে ছুটি দেবার আগেই গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রেম আর অভি।পায়েল আর তার বান্ধবী তাদের দেখে চিনতে পারে।পিছু পিছু যেতে যেতে থাকে প্রেম আর অভি।এমনি করে প্রতিদিন প্রেম দাঁড়িয়ে থাকত পায়েলের কলেজের সামনে,তার বাসার সামনে কিংবা মার্কেট এ কিছু কিনতে গেলে প্রেম খবর পেলে সেখানে হাজির হয়ে যেত।
–
প্রেমের এতটা কেয়ারিং,আর তার জন্য প্রতিটা সময় অপেক্ষা করার কাজ গুলি দেখে ভালো লাগতে শুরু করে পায়েলের প্রেমকে।একদিন রাতে প্রেম সাহস করে পায়েলকে ফোন দেয়,কথা বলে পরিচয় দেয়।পায়েল ও বাড়ন করে না,এক সময় প্রেম তার মনের সব কথা আবার পায়েল কে বলে।পায়েল প্রেম কে বলে কালকে বিকালে যেন মাঠের কোনে অপেক্ষা করে যেন কথা বলবে তার সাথে।প্রেম তো মহা খুশি,সারারাত ঘুম হয়না।দিনের বেলা একটা গিফট কিনে আনে অভি আর প্রেম,চিন্তা করে পায়েল যদি রাজি হয় তাকে দিবে।
–
বিকাল বেলা পায়েল আর তার বান্ধবী আসে প্রেম কে জিজ্ঞেস করে কেমন আছেন,কথা হয় দুজনের এর পর পায়েল প্রেম কে বলে তার এই ভালোবাসা স্বম্ভব না,সে প্রেম কে ভালোবাসতে পারবে না।প্রেমের চোখে জল ছলছল করে।তবুও কিছুই করার নেই,ভালোবাসা তো আর জোড় করে হয় না।প্রেম আবার জিজ্ঞেস করে সত্যিই কি আমায় ভালোবাসো না?পায়েল না বলে হাঁটা দেয়।প্রেমের চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ে,কিছুদুর পায়েল যেতেই হঠাৎ মনে পড়ে পায়েলের জন্য যেই গিফটটা কিনে এনেছিল তার কথা।প্রেম চিৎকার করে ডাক দেয় “পায়েল কন্যা”একটু দাঁড়াও।
–
পায়েল থমকে দাঁড়ায়,প্রেম ছুটে গিয়ে পায়েল কে বলে তুমিতো আমায় ভালোবাসোনি কিন্তু তোমার জন্য আনা এই পায়েল টা নিয়ে যাও।নইলে সারাজীবন আমি আর তোমায় পায়েলটা দিতে পারবো না,অনেক কষ্ট পেতে হবে।আমি প্রায় স্বপ্নে দেখতাম কাউকে পায়েল পড়িয়ে দিচ্ছি কিন্তু সেইটা আর স্বম্ভব না।কথাগুলি পায়েল কে বলতেছিল আর চোখেরকোন থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে।পায়েল আর সহ্য করতে পারলো না,প্রেম কে দৌড়ে এসে ঝাপটে ধরে,বলতে থাকে এত ভালোবাসো কেন আমায়?আমি কি এই ভালোবাসার মর্যাদা রাখতে পারবো?প্রেম বলে আরে পাগলী পারবে।পায়েলের হাতে প্রেমের কেনা পায়েলটা দিতে গেলে পায়েল বলে কি তুমি তোমার স্বপ্ন সত্যি করবে না?
–
তোমার পায়েল কন্যাকে নিজের হাতে পায়েল পড়িয়ে দিবে না?প্রেম পায়েলের পায়ের কাছে বসে,পায়েল নিজের পা বাড়িয়ে দেয়,প্রেম যখন পায়েলের পায়ে পায়েল পড়াচ্ছে তখন দেখছে এই পা আর তার স্বপ্নে দেখা পায়েলকন্যার পা হুবাহু এক।প্রেম আর ভুল করে না এবার তার পায়েল কন্যার মুখ দেখতে তাকে হবে,হুম তাকিয়ে দেখে তার স্বপ্নের পায়েল কন্যাকে।পায়েলের ডাকে ঘোর ফেরে প্রেমের পায়েল বলে আর কত সময় লাগবে পায়েল পড়াতে……..প্রেম বলে হয়ে গেছে পড়ানো “আমার পায়েল কন্যা”
-Rs Shepon
দুজনে হাতের আগুলটা আলতো করে ধরে হেঁটে যাচ্ছে,আর গোধূলীর আভা ছড়িয়ে যাচ্ছে চারিদিকে,এ যে তাদের ভালোবাসার রং যা প্রজাপতির পাখার রং এর মত
………………………………………………(সমাপ্ত)……………………………………………..