সন্ধায় রুমে বসে টিভি দেখছি এমন সময় করিংবেল বেজে উঠলো দরজা খুলে দেখি জেনিফা।
:- খুব খুদা লেগেছে তারাতারি খাবার দাও (জেনিফা)
:-তুমি ফ্রেস হয়ে আসো আমি খাবার দিচ্ছি। (আমি)
:-ফ্রেস হবার সময় নেয় আগে খেসে দাওতো।
আমি জেনিফার কথা শুনে অবাক হলাম কেননা ও দিন দিন আমার মতন ব্যাবহার করছে আগে আমি অফিস থেকে আসলে আগে খেতে বসতাম। আর জেনিফা আমাকে এই জন্য কতো বকা যে দিতো। জেনিফার কথায় ঘোর কাটলো।
:- কি হলো খেতে দাও।
:- তুমি ফ্রেস হয়ে এসো যাও।
:- আমার খুব খিদা লেগেছে লক্ষিটা এমন করে না। তারা তারি খেতে দাও।
আমি আর কিছু বলতে পারলাম না জেনিফা খাচ্ছে আর আমি ওর খাওয়া দেখছি এমন ভাবে খাচ্ছে যেনো অমৃত খাচ্ছে। কিন্তু আমি খাবার মুখে দিতে পারিনি এতোটা বাজে হয়েছে।
:- তোমার হাতের রান্না এতো সুন্দর হয় কেনো বলতো।
আমি কিছু বলছি না সুধু ওর খাওয়া দেখছি আর মিথ্যা কথা শুনছি।
:- বাবু সত্যি আমি কখনো এতো ভালো খাবার আগে খাইনি। তোমার রান্না করা খাবার খেয়ে আমি অনেক খুশি হয়েছি।
আমি সুধু জেনিফার মিথ্যা কথা শুনছি আর অবাক হচ্ছি আমিও জেনিফাকে এমন মিথ্যা কথা বলে খুশি করতাম তখন সে অনেক অনেক খুশি হতো কিন্তু আমি খুশি হতে পারিনি।
:- আচ্ছা তুমি আমার জন্য এতো ভালো রান্না করেছো তোমাকে তো পুরষ্কার দেওয়া দরকার। কি দেওয়া যায় কি দেওয়া যায় আজ রাতে আমি তোমাকে রান্না করে খাওয়াবো।
আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি খাবার ভালো হয়নি এই জন্য আমাকে এমন বলছে।কারন আমি ভালো খাবার ছাড়া খেতে পারিনা এটা জেনিফা খুব ভালো করে জানে
ভাবছি আগে আমাদের কতোটা সুখছিল দুই বছর প্রেম করে বিয়ে করেছিলাম আমরা আমাদের বাসা একই গ্রামে কিন্তু পড়াশুনার জন্য আমাদের দুই জনকে শহরে আসতে হয়েছিল তবে জেনিফা আমার থেকে ২ ইয়ার ছোট ছিল।একই গ্রামে বাসা হওয়াতে আমাদের ভিতরে আলাদা ভাব ছিলো পরে সেটা ভালবাসার রুপ নিলো। পড়াশুনা শেষ করে বাসায় আমাদের ভালোবাসার কথা বলেছিলাম সবাই খুশি হয়েছিলো।বাবা বলেছিলো চাকরি পাও তার পরে বিবাহ এর আগে না। কপাল ভালো ছিলো বলে একটা ভালো চাকরিও পেয়ে গেলাম আমাদের বিবাহ হলো চাকরির সুবাধে শহরে চলে আসা লাগলো একদিন সকালের ঘটনা।
:- এই উঠো বলছি।
:-.. . . . .
:- কি হলো উঠো বাজারে যাও।
:- আজ ছুটির দিন প্লিস ঘুমাতে দাও।
:- আমি লক্ষি সোনা বাজার থেকে এসে ঘুমাবে এখন বাজরে যাও।
আমি জেনিফা কে চিনি ও যেটা বলবে সেটা আমাকে দিয়ে করিয়ে ছাড়বেই যতো সময় না উঠবো ঘ্যান ঘ্যান করবে তাই উঠে গেলাম।
:- আজ বাজারে যেতে মন চায়ছে না।
:- আমার বাবু খুব ভালো সে আমার সব কথা শুনে। ( উম্মা যাও এবার যাও)
কেন জানিনা আজ বাজারে যেতে মন চাইছিল না তার পরেও বাজারে গেলাম বাজার করে আসার সময় পা পিছলে পড়ে গেছিলাম ঠিক তখনি একটা গাড়ি আমার দুই পায়ের উপর দিয়ে চলে গেছিলো আমি ব্যাথা সইতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম যখন জ্ঞান ফিরলো আমি হসপিটালে ছিলাম আমার আমার পাশে সবাই ছিলো আমার আব্বু আম্মু জেনিফার আব্বু আম্মু কিন্তু জেনিফা ছিলোনা আমি আম্মু কে বল্লাম।
:- জেনিফা কই।
তখন সবায় আমার ডান পাশ থেকে সরে গিয়েছিলো। আমার ডান পাশের বেডএ জেনিফা শুয়ে আছে আমি আবার বল্লাম।
:- আম্মু জেনিফার কি হয়েছে।
:- তোকে এমন অবস্থায় দেখে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে। এই বার দিয়ে ৫ বার অজ্ঞান হয়েছে। জ্ঞান ফিরলে কান্না করছে আর বলেছে সব কিছু আমার জন্য হয়েছে আমি নিজের হাতে করে ওর পা নষ্ট করেছি।
আমি আর কিছু বলতে পারলাম না। আমি জানি জেনিফা আমাকে কতোটা ভালো বাসে। একবার আমাকে জোর করে বৃষ্টিতে ভিজিয়ে ছিলো আমার বৃষ্টি সহ্য হয়না যা হবার হলো জ্বর আসলো আমার আর জেনিফার সেকি কান্না। আর বলছে আমি নিজে হাতে করে এমন করেছি সব দোশ আমার। আমার জন্য তোমার কষ্ট হচ্ছে না আমি খুব পচা বলো। রাতে আম্মু রা আমাদের বাসায় থাকবে ঠিক করেছে আর জেনিফার আম্মু রাতে আমাদের সাথে থাকবেন। এখন অনেক রাত সবায় ঘুমিয়ে আছে সুধু আমি জেগে আছি জেনিফার কখন ঘুম ভাংবে সে জন্য।জেনিফা ঘুমিয়ে আছে কি মায়াবী লাগছে তাকে নিষ্পাপ একটা মুখ। কিছু সময় পরে জেনিফার জ্ঞান ফিরলো কিছু বলতে চাইলো আমি ইশারায় চুপ করতে বল্লাম। জেনিফা চুপ হয়েগেলো আমি বল্লাম।
:- আমার কাছে আসো।
সে আসলো আমার পাশে বসলো আবার আমি বল্লাম।
:- আমার পাশে শুবে একটু।
সে আমার পাশে শুয়ে পড়লো। আমি জেনো কোন এক রোবট জেনিফার সাথে কথা বলছি যা বলছি তাই করছে আমার জেনিফা এমন ছিলোনা। কখনো একবার বলে কোন কাজ করাতে পারিনি আর এখন একবার বল্লেই সেটা করছে।
:- আমাকে একটু জড়িয়ে ধরবে কি।
আমার কথা শুনে জেনিফা এবার জোরে কান্না করে দিলো। আমি থামাতে চাইলাম কিন্তু থামাতে পারলাম না জেনিফার আম্মু ঘুম থেকে উঠেগেলেন আমি তাকে ইশারায় ঘুমিয়ে যেতে বল্লাম জেনিফার আম্মু আর কোন কথা বল্লেন না। কিন্তু পাগলিটাকে নিয়ে আর পারলাম না কান্না করতেই আছে। ১৫ দিন পরে বাসায় আসলাম এই কইদিন হসপিটালে থেকে আমি একটু মোটা হয়ে গিয়েছিলাম কিন্তু জেনিফা কেমন হয়ে গিয়েছে। বাবার কাছে আর কতো দিন থাকবো আমি চাইতাম কিছু একটা করতে। জেনিফা একটা চাকরি নিলো আগের বাসাতে আবার আসতে হলো। জেনিফা চাকরি করে আর আমি বাসাতে থাকি জেনিফার ডাকে বাস্তবে ফিরলাম।
:- বাবু খেতে আসো আজ সব কিছু আমার পছন্দের রান্না করেছি।
:- কেন আমার পছন্দের খাবার কেন রান্না করলে না।
কথা বলতে বলতে ডাইনিং টেবিলের কাছে আসলাম এসে দেখি সব খাবার আমার পছন্দের খাবার। আমি বল্লাম।
:- সব খাবার তো আমার পছন্দের তুমি মিথ্যা বল্লে কেন।
:- আমার বাবুটার যে খাবার পছন্দের আমারতো সেই খাবার পছন্দের তাইনা।
আমি কিছু বলতে পারলাম না কারন কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।জানিনা জেনিফার এই মিথ্যা অভিনয় আর কতো দিন দেখতে হবে।