এক নতুন অধ্যায়

এক নতুন অধ্যায়

>> বন্ধু তুই একটা বিয়ে কর। দেখ তোর দায়িত্ব আমি আর কত নিব। আমারও চাকরী আছে। এসব রান্নাবান্না করতে আমার ভালো লাগে না। (বন্ধু)
>> তুই কি বলতে চাস। আমি বিয়ে করে বউ এর আচল ধরে বাসার মধ্যে বসে থাকি? (আবির)
>> ঠিক তাই। দেখ আমার কাছে একটা ভালো মেয়ে আছে। তুই এক কাজ কর ওই মেয়েটাকে বিয়ে করে পেল।
>> তুই আমাকে না জানিয়ে মেয়েও দেখে ফেলছত। তুই সব পারস বন্ধু। আমার এই সুখের দিন তুই সহ্য করতে পারস না।
>> হিহিহিহিহি।
আমি মেয়ের বাবার সাথে কথা বলে তোর বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে ফেলব। তুই তোর বিয়ের জন্য তৈরী হয়ে থাক।
.
বড় লোক বাপের বড় লোক মেয়ে শিশির। টাকা পয়সার অভাব কি সেটা কোনো দিন বুঝে নি। সব কিছু নিজের আবেগ দিয়ে করত। বড় লোক মেয়ে তো তাই। এই পৃথিবীতে এখন চলতে গেলে টাকা পয়সা লাগে। টাকা ছাড়া বাসা থেকে বের হবার কথা ভাবাই যায় না। শিশিরদের গাড়ি আছে। সুন্দর একটা বাসা আছে। বাসার মধ্যে খুব সুন্দর সুন্দর জায়গা আছে। শিশির সেখানে বসে বসে দিনরাত বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়। বলতে গেলে খুব সুখের দিন কাটায় শিশির । কিন্তু মেয়েরা যত বড় হয় ততই তাদের জীবনের সুখের দিন চলে যায়। কারণ বড় হলেই তাদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। পরে তারা অন্যর সংসার নিয়ে ব্যস্থ থাকে।
.
শিশির বিয়ে করতে চায় নি। কিন্তু শিশির কে তার বাবার মুখের দিকে থাকিয়ে বিয়ে করতে হয়। শিশিরের বাবা আবিরকে অনেক কথা বলেন।
শিশির তার অনেক আদরের মেয়ে। আবির যেন তাকে কোনো কষ্ট না দেয়। কোনো কাজকাম শিশির করতে পারে না। তাকে কেউ কোনো দিন কাজ করতে বলে নি। কোনো অপরাধ করলে আবির যেন শিশিরের বাবাকে বলে। এসব কথা বলে শিশিরকে আবিরের হাতে তুলে দেন। আবিরও কথা দেয় সে কিছুতেই শিশির কে কোনো কষ্ট দিবে না।
.
আবির রাত ১১ টার আগ পযর্ন্ত তার বন্ধুর কাছে ছিল। আবির শিশিরের বাবার সব কিছু কথা তার বন্ধুর সাথে শেয়ার করেছে। তার বন্ধুও সব কিছু কথা বুঝতে পারল। তারপর তার বন্ধু আবির কে শিশিরের কাছে চলে যেতে বলে।
আবির বাসরঘরে ঢুকতেই অবাক হয়ে যায়। শিশির ঘুমিয়ে আছে। আবির বুঝতে পারছে না সে কি করবে। আবির কি বেশি দেরী করে আসল। নাতো ১১ টা বাজে। বেশি রাত হয় নি। শিশির কে কিছু না বলে তার শরীরের মধ্যে একটা চাদর দিয়ে আবির ঘুমিয়ে পড়ে।
আবির শিশিরের দিকে চেয়ে আছে। শিশির খুব সুন্দর মেয়ে। শুধু শিশিরের একটু আবেগ বেশি। বড় লোক বাপের বড় লোক মেয়ে তো। মা-বাবার খুব আদরের ছিল। বড় লোক বাপের মেয়ের আবেগ থাকা টা ওই সাধারণ বিষয়।
.
সকাল বেলা আবির দেখতে পায় শিশির ঘুমিয়ে আছে। আবির শিশির কে কিছু সময় ডাকাডাকি করে। কিন্তু শিশির ঘুমের মধ্যে থাকায় শুনতে পায় নি। আবির ফজরের নামাজ পড়ে কিছু সময় বাহিরে হাঁটাহাঁটি করে। তারপর তার জন্য ও শিশিরের জন্য কফি বানায়। শিশির ঘুম থেকে উঠতেই আবির তার কাছে কফি নিয়ে যায়। শিশিরের মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে আবিরের প্রতি বিরক্ত।
>> আপনি আমাকে এতো সকাল সকাল ডাকাডাকি করলেন কেন? আমি কি আপনার মতো এতো সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠি নাকি।
>> নামাজ পড়ার জন্য আপনাকে ঢেকে তুলতে চেয়েছিলাম। আচ্ছা আপনার ঘুম ভেঙে দেওয়ার জন্য আমি দুঃখিত।
>> আচ্ছা ঠিক আছে। আপনাকে একটা কথা বলব। আমি আপনাকে স্বামী হিসাবে মেনে নিতে পারব না। আমার সংসার করার কোনো শখ নাই।
>> তাইলে আপনি আমাকে বিয়ে করলেন কেন? এই কথা তো আপনি আমাকে বলতে পারতেন।
>> বাবার মুখের দিকে থাকিয়ে আমি কিছু বলতে পারি নি। আমি আপনাকে এতো কথা বলছি কেন। একদম বলে দিচ্ছি অধিকার দেখানোর চেষ্টা করবেন না। তাইলে খবর কিন্তু ভালো হবে না।
>> আমি অধিকার আর কাটাব না।
.
>> আপনি এখন কোথায় যাবেন? (আবির)
>> জ্বী।
বন্ধুদের সাথে যাব। কেন বলুন তো?
>> আপনি এভাবে যেতে পারবেন না। আপনাকে হিজাব পড়ে যেতে হবে। কারণ আপনি একজন মুসলমান বাপের মেয়ে।
আর একজন মুসলিম মেয়ে হয়ে এসব পোশাক কেন পড়বেন? কোথায় লেখা আছে এসব পোশাক পড়ে বাহিরে যেতে হবে। আপনি দেখাতে পারবেন?
>> আমি এইটা পড়লে আপনার সমস্যা কি?
>> আমার সমস্যা মানে? আপনি আমার বউ। আপনি আমার সম্পদ। আপনি আমার সব কিছু।
>> বললেই হলো। আমি আপনাকে স্বামী মানতে পারব না।
>> তা মানতে হবে না। তবুও আপনি এসব পোশাক পড়ে যেতে পারবেন না। যদি যেতে চান হিজাব আর মুখোশ পড়ে যেতে হবে।
শিশির অনেক চেষ্টা করল হিজাব আর মুখোশ সে পড়বে না। কিন্তু সে কিছুতেই এসব না পড়ে বাহিরে যেতে পারে নি। এসব পড়েই তাকে বাহিরের বের হতে হয়েছে।
শিশির ও তার বান্ধবী মিলে তারা যেখানে আড্ডা দেয় সেখানে অনেক বাজে ছেলে আছে। তারা অন্য দিন শিশিরের দিকে চেয়ে থাকত। কিন্তু আজ একটুও থাকায় নি। এতে অনেক ভালো লাগে শিশিরের । শিশিরকে তার বান্ধবী বলে কি রে জামাই পেয়ে আমাদের ভুলে গেলি। শিশির হাসি দিয়ে সব কিছু কথা উড়িয়ে দিয়ে অন্য কথা বলে মজা করতে থাকে।
শিশির আজ খুব খুশি। বাজে ছেলেগুলা তার দিকে থাকায় নি।
.
শিশির শুয়ে আছে। আবির বাসায় ছিল। আজ অফিস যাই নি। শিশির ও আবির বেশি প্রয়োজন ছাড়া কথা বলে না। আবির কথা বলতে চায় কিন্তু শিশির কথা বলতে চায় না। যোহর এর আযান হয়েছে। শিশির বসে বসে গল্পের বই পড়ছে।
>> একটা কথা বলব?
>> বলেন।
>> গল্পের বই পরেও পড়তে পারবেন। এখন যোহর এর আযান হয়েছে। আপনি ওযু করে নামাজ পড়েন। এতে দেখবেন আপনার মন এমনিতেই ভালো হয়ে গেছে।
>> আপনি পড়েন। আমি একটু পরে পড়ছি।
>> না। পরে না। এখনি আপনি ওযু করে আমার সামনে নামাজ পরেন। দু’জনে একসাথে নামাজ আদায় করব।
.
শিশির অনেক ভেবে ওযু করতে গেল। ওযু করে দু’জনে নামাজ পড়ল। শিশিরের অনেক ভালো লাগা কাজ করতে লাগল। শিশির বুঝতে পারল নামাজ পড়লে মন অনেক ভালো থাকে।
শিশির এখন প্রতিদিন নামাজ পড়ে। শিশির কিছুতেই নামাজ পড়া বন্ধ দেয় না। সব কাজ ফেলে নামাজ আদায় করে।
.
শিশিরদের বাসায় শিশিরের মা-বাবা এসেছেন। শিশিরকে দেখে আবার চলে গেলেন। শিশির সব সময় বাসায় একা থাকে। আবির অফিসে থাকে। আবির আজ কিছু টা আগে অফিস থেকে এসেছে। এসেই দেখতে পায়। শিশির রান্না করছে। আবির শিশিরকে বিয়ে করার আগে অনেক রান্না করেছে। এখন আর করতে হয় না। শিশির রান্না করে। শিশির আবির কে সহ্য করতে পারে না ঠিক আছে। কিন্তু সব সময় ঝগড়া করে না।
>> একটু তাড়াতাড়ি রান্না করেন। আমি সব কিছু আপনার ধারে এগিয়ে দিচ্ছি। আজ অনেক খিদা লাগছে। বাহিরে খেতে চায় নি। আপনার হাতের খাবার মিস করব বলে।
>> বাহিরে খেলে আমার হাতের খাবার মিস করতে যাবে কেন?
>> পেটটা ভরে যাবে তো। পরে কি খেতে পারব।
>> হিহিহিহি।
পাগল একটা।
>> আপনি আমাকে পাগল বলেন।
>> হিহিহিহি।
আপনি তো পাগল একটা ছেলে।
>> আপনার মুখে পাগল শব্দ টা মানিয়েছে।
>> তাই।
.
আবির সকাল বেলা ঘুমিয়ে আছে। আজ সকালে ঘুমানোর কারণ হলো আজ শুক্রবার তাই সিয়াম ঘুমিয়ে আছে। কিন্তু শিশির কিছুতেই ঘুম থেকে উঠছে না। সিয়াম বঝুতে পারল না শিশিরের ঘুম থেকে না উঠার কারণ। সিয়ামের কেন বার বার শিশির কে জিজ্ঞাস করতে মন চাইল। সিয়াম আপনার কি হয়েছে জিজ্ঞাস করতেই….
>> আমার তেমন কিছু হয় নি। মনে হয় জ্বর উঠছে।
>> জ্বর উঠছে। আর বলেন তেমন কিছু হয় নি? দাঁড়ান আমি ডাক্তার নিয়ে আসছি।
আপনি শুয়ে পড়েন।
.
তারপর আবির ডাক্তার আনতে গেল। ডাক্তার এসে শিশির কে দেখে কিছু দিন আরাম করতে বললো। কারণ শিশিরের প্রচণ্ড জ্বর উঠেছিল।
এরপর থেকে আবির অফিস থেকে ছুটি নিয়ে নেয়। বাসার সব কাজ করে। শিশির কে ঠিকঠাক ভাবে ওষুধ খাওয়ায়। শিশিরের সব কাজ করে। শিশির যখন ঘুম থেকে উঠে তখন শিশির কে কফি বানিয়ে দেয়। শিশির অনেক সময় বারান্দায় গিয়ে আকাশ টা দেখতে চায়।
আবির শিশিরকে সেখানে ধরে ধরে দিয়ে আসে। শিশির সেখানে বসে বসে বাহিরের দৃশ্য দেখতে থাকে। শিশিরের খুব ভালো লাগে। বাহিরের দৃশ্যটা দেখতে।
শিশির এক সপ্তাহের মধ্যে একেবারে সুস্থ হয়ে যায়। এখন আগের মতো করে সব কিছু করতে পারে।
.
একদিন আবির অফিস থেকে খুব তাড়াতাড়ি চলে এসেছে। এসেই শিশির কে বলে এই নেনে আপনার শাড়ী। আপনি এক কাজ করেন আপনি তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে যান। আপনাকে নিয়ে আজ ঘুরতে যাব। শিশির অবাক হয়ে আবিরের কথা শুনে তৈরী হয়ে যায় । শিশিরও প্রায় অনেক দিন হলো বাহিরে ঘুরতে যায় না।
ঘুরতে এসেই শিশির দেখতে পায় একটা ছেলেকে সবাই মিলে বিভিন্ন প্রশ্ন করছে।
ছেলেটার বয়স ৬ বছর হবে। কেউ কেউ আবার মারার জন্য এগিয়ে আসছে। কেউ কেউ ধমক দিয়ে ছেলেটার পরিচয় জানতে চাইছে। কিন্তু কাউকে ছেলেটি কোনো কিছু বলছে না। শুধু কান্না করতাছে। এক সময় আবির ছেলেটির কাছে যায়। ছেলেটি এক দৃষ্টিতে আবিরের দিকে চেয়ে আছে। আবিরের খুব মায়া হয় ছেলেটিকে দেখে। আবির ছেলেটিকে
হাতে ধরে একটা নিরব জায়গায় নিয়ে যায়। সাথে শিশিরও আছে। আবির ছেলেটি কে অনেক গুলো চকলেট কিনে দেয়। আর কপালে একটা চুমু দেয়। ছেলেটি চকলেট পেয়ে অনেক খুশি। তারপর আবির তার পরিচয় জানতে চায়। ছেলেটি সব কিছু বলে দেয়। কে তার বাবা কে তার মা। পরে আবির এই ছেলে কে নিয়ে একটা নিউজ দেয়। ছেলেটির মা-বাবা ছেলেটিকে এসে নিয়ে যায়। আবির কে অনেক ধন্যবাদ দিয়ে যায়। বাসায় যাওয়ার জন্য দাওয়াতও দিয়ে যায়। শিশির অবাক হয়ে আবিরের দিকে চেয়ে আছে। আবির শিশির কে যতই দেখছে ততোই প্রেমে পড়ছে।
.
আবির অফিসে বসে মনোযোগ সহকারে কাজ করছে। আবিরের এক কলিগ এসে আবির কে বলে…..
>> আবির ভাই আমার সাথে এক জায়গায় যাবেন?
>> কোথায় যাব? আমার হাতে এখন অনেক কাজ।
>> ভাই কোথায় যাব না। শুধু একটা দোকানে যাব। একটা জিনিস কিনব। আপনি সাথে থাকলে কিছুটা সাহস হয়।
>> আচ্ছা কিছু সময় অপেক্ষা করেন। আমি কাজটা শেষ করে আপনার সাথে যাচ্ছি।
>> আচ্ছা আমি বাহিরে যাচ্ছি। আপনি তাড়াতাড়ি চলে আসেন।
.
>> আপনি কি নেকলেস কিনবেন?
>> জ্বী ভাই। আমার অনেক শখ হলো নেকলেস কিনব।
>> আচ্ছা আপনি নেকলেস কিনেন। আমাকে একটা সুন্দর নেকলেস কিনে দিবেন।
>> কেন ভাই?
ও ভাবীর জন্য।
>> জ্বী (একটা মুচকি হাসি দিয়ে।)
>> আচ্ছা আমি পছন্দ করে দিচ্ছি।
ভাই এইটা কিনতে পারেন।
>> আপনার পছন্দ হয়েছে?
>> জ্বী ভাই।
.
আবির বাসায় এসে দেখতে পায় শিশির শুয়ে আছে। মোবাইলে কি দেখছে। আবির তখন শিশির কে বলে….
>> আপনি কি শুয়ে আছেন?
>> হ্যা। ভালো লাগছিল না। তাই শুয়ে আছি। কিছু বলবে?
>> হ্যা। না কিছু না।
>> কি হ্যা। না বলছ?
>> না আসলে। আমি আপনার জন্য একটা জিনিস এনেছি। আপনি যদি আমার উপহার টা নিতেন। আমি খুশি হতাম।
>> কি এনেছ?
>> নেকলেস।
>> হিহিহি।
আমার জন্য আবার নেকলেস কিনে আনতে গেলে কেন?
নেকলেস টা খুব সুন্দর হয়েছে।
আমার গলায় পরিয়ে দিবে না?
>> সত্যি বলছেন?
>> হ্যা। আমাকে পরিয়ে দেন।
.
আবির এই প্রথম শিশিরের খুব কাছে গেল। শিশিরকে খুব ভালো লাগছে।
যদি চুলের মধ্যে কিছু বেলিফুলের মালা পরিয়ে দেওয়া হতো। তাইলে প্রজাপতি এসে তার চুলের মধ্যে আলতো করে ছুঁয়ে দিয়ে যেতে। ভালবাসার আদরে তাকে গ্রহণ করত। কিন্তু আবির নিরুপায়। শিশির তো আর তাকে ভালবাসে না।
>> আমাকে কেমন লাগছে?
>> আপনাকে খুব সুন্দর লাগেছে। শীতের মাঝে কুয়াশা চারদিকে ঘিরে রেখেছে। তার মধ্যে রোদ উঠেছে। আর সে রোদ টা হলেন আপনি।
>> আপনি দেখি খুব সুন্দর ছন্দও পারেন।
>> ছোট বেলায় শিখেছিলাম। কিন্তু কাউকে বলার মতো সুযোগ পাই নি। তাই বলতেও পারি নি।
>> এখন তো আমাকে বলছেন।
>> হিহিহি।
মনে হলো। তাই আপনাকে বলে ফেললাম। আপনি কিছু মনে করবেন না।
>> আরে না। আমি কিছু মনে করে নি।
.
আবিরের মুখটা কালো হয়ে গেল। আবির মনে মনে বলে আমি তো মনে করার জন্য ওই বলেছিলাম। কিন্তু আপনি কেন মনে করেন নি। আমি তো আপনাকে ভালবাসি। মেয়েরা এমন কেন কোনো কিছু সহজে বুঝতে চায় না। আঙুলে ধরে বুঝাতে হয়। দ্যাত ভালো লাগে না।
কিন্তু আপনারা কি ভাবছেন।
শিশির আবিরকে কি ভালবাসে?
হ্যা। এখন মনে মনে শিশির আবির কে অনেক ভালবাসে। শিশির সকাল বেলা পাখির কলকাকলি না শুনে আবিরের গলার আওয়াজ শুনে জেগে উঠতে চায়।
তার সাথে ঝড়তুফানের দিনে একসাথে বসে গল্প করতে করতে কফি খেতে চায়।
বারান্দায় বসে বসে শেউলী ফুলের মতো জীবন টা সাজাতে চায়। আবিরের জন্য রান্নাকরা করা শিখতে চায়। আবির খেতে খেতে রান্নার প্রশংসা করবে আর শিশির লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে মুচকি মুচকি হাসি দিবে। শত লজ্জার পরও শিশির মাথা তুলে থাকিয়ে থাকবে আবিরের দিকে। ফুলের পাপড়িযুক্ত হয়ে শিশির আবিরের সাথে সারাজীবন মিশে থাকতে চায়।
.
আবির আজকের দিনের জন্য অনেক সময় উপেক্ষা করেছে। কারণ আজ শিশিরের জন্মদিন। আবির কিছু গোলাপ ফুল ও একটা কেক নিয়ে বাসায় আসে। বাসায় আসার পর আবিরকে কিছুটা চিন্তিত লাগছে। চিন্তিত লাগার কারণ আবির কিছুতেই বুঝতে পারল না। শিশির কে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে আবির কি ভুল করবে?
অনেক বুঝাপড়ার পর আবির শিশিরের রুমে যেতেই আবিরের সাজানো স্বপ্ন এক নিমিষে শেষ হয়ে যায়। একটা ঘূর্ণিঝড় এসে তার বুকের ভিতর ধ্বংস করে যায়।
নিজে কে আবির দুর্বল করতে থাকে।
শিশির যখন বলল……….
>> তুমি কাজী অফিসে তাড়াতাড়ি এসো। আমিও তাড়াতাড়ি আসবো।
.
তখন ফুলগুলো টেবিলে রেখে দিয়ে একটা চিরকুট লিখে আবির।
প্রিয় শিশির.
জানি আপনি খুব ভালো থাকবেন। আপনি আজ আপনার পছন্দের মানুষ কে বিয়ে করতে যাচ্ছেন। তাইতো আমাকে আপনি স্বামী হিসাবে মেনে নেন নি। আমিও চাই আপনি সুখে থাকেন। কারণ আপনি খুব ভালো একটা মেয়ে। আমার সব কথা শুনে আপনি সাধারণ ভাবে জীবন করতে শুরু করেছেন। এই ভাবে কয় জন্যের জীবন চলতে পারে আপনি ওই বলেন?
আচ্ছা ছেলেটি কি করে? ছেলেটি কি খুব ভালো। ছেলেটা যদি নামাজ পড়ে তাইলে ছেলেটা কে বিয়ে করবেন। ছেলেটার সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে আপনি ছেলেটা কে বিয়ে করবেন।
আমি আর আপনার জীবনে আসবো না । কোনো দিন আর বিরক্ত করব না। খুব দূরে চলে যাব। হ্যা। একটা কথা বলি। আপনার বাবা আপনাকে খুব ভালবাসতেন। আপনার বাবা কে আপনি একটুও কষ্ট দিবেন না। আপনার বাবা আমার কথা বলবেন আমি জানি। আপনি বলবেন আমি আপনাকে ছেড়ে চলে গেছি। সেখানে আপনার কোনো দোষ নাই। সুন্দর জীবনযাপন করেন।
.
শিশির কাজী অফিস থেকে এসে আবির কে ডাকাডাকি করে। কিন্তু কোথাও পায় নি। শুধু কিছু ফুল পায়। আর আবিরের লেখা গুলো কথা। শিশির চিরকুট টা পড়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে আর বলতে শুরু করে আমি আপনাকে অনেক ভালবাসি। এইটা আমার বিয়ে ছিল না। এইটা আমার ভাইয়ের বিয়ে ছিল। শিশিরের কান্নামাখা মুখটা হঠাৎ হাসিতে পরিণত হয়।
সারাবাসা হঠাৎ করে আলোতে ভরে উঠে কোথায় থেকে জেনে আওয়াজ আসছে শুভ জন্মদিন।
শিশির সারাবাসা পাগলের মতো করে খুঁজাখুঁজি করেছে। কিন্তু আবির কে কোথাও পায় নি। আর পাবেও না।
হয়তো আবির অভিমান করে কোথাও চার দেওয়ালের মাঝে লুকিয়ে আছে।
যেখানে সে শুধু একা থাকে আর তার সাজানো স্বপ্ন।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত